নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন! চোখ ছল ছল করে ওগো মা !!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৭

চোখ ছল ছল করে ওগো মা, কী ব্যথা অন্তরে ওগো মা, ভাঙনের যে খেলা চারিধার, নেই গান আজ একতার, চোখ ছল ছল করে ওগো মা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এখন একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়। একজন হেভিওয়েট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব জনাব আসাদুজ্জামান নূর এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ বর্তমান মন্ত্রীর নের্তৃত্বেই হবার মত প্রত্যাশা নিয়ে গোটা জাতি যখন আশাবাদী, ঠিক তখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড ও চেহারায় এখনো যেনো রহস্যময় কারণে পুরানো কাসুন্দিই বেজে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে খুব কৌতুহল নিয়ে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট http://moca.portal.gov.bd/ ভিজিট করে আমার সেই আগ্রহে এখন আরো গুড়েবালি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রিপ্রেজেন্ট করার কথা। অথচ এর ওয়েবসাইটে তার কোনো নিদর্শন বা নমুনা কোথাও খুঁজে পেলাম না। এত বড় হেভিওয়েট একজন সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমেই কোনো ভিজিটর কিছুটা রুচিশীল উপস্থাপনা দাবি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখলে যে কারোর বমি উদ্রেগ হবার আংশকা আছে! রুচির এই বাহাদুরী রাখব কোথায়!!!

একটি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে প্রথম পরিবেশনা নোটিশ বোর্ড। আহা মরি মরি। কী আছে সেই নোটিশ বোর্ডে? নোটিশ বোর্ড: ১. ইরানের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত। ২. বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষর। ৩. জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম'এর ১১৫ তম জন্মবার্ষিকী ২০১৪ ব্যয় নির্বাহের অর্থ বরাদ্দ। ৪. বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে 'সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম' স্বাক্ষর। ৫. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৩তম জন্মবার্ষিকী ১৪২১/২০১৪ উদযাপনের ব্যয় নির্বাহ।

এরপর রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রধান খবর সরবরাহের একটি ছোট্ট স্ক্রল। তার নিচে তথ্য ও সেবা, নীতিমালা ও প্রকাশনা, ফরম এবং বিবিধ নামে চারটি বিভাগ। মূল পাতার সূচিক্রমগুলো দেখলে এই মন্ত্রণালয়ের রুচিবোধের সর্বোচ্চ সীমানা যে কারোরই নজরে আসবে। আহা দেখার মত রুচি বটে! প্রথম পাতা, মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, আমাদের সম্পর্কে, উন্নয়ন কার্যক্রম, সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তি, ফরম ডাউনলোড এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এই নামে মোট আটটি আলাদা হেড। এর ভেতরে ঢুকলে রুচির আরো মহা বিস্ফোরণ আপনার চোখ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ।

ওয়েব সাইটের একেবারে ডানপাশে শোভা পাচ্ছে মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর ও সংস্কৃতি সচিব জনাব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, এনডিসি'র ছবি। তার নিচে সকল নামে তিনটা হেড। একটার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ই-সেবা, একটার মধ্যে কেন্দ্রীয় ই-সেবা এবং আরেকটার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লিংক। আহা তথাস্তু। আর একেবারে পাতার প্রধান হেডলাইনে পাঁচটি ছবি কিছুক্ষণ পরপর দেশের সংস্কৃতির প্রধান পরিচয় তুলে ধরছে। আহা মরি মরি।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব, সেই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের এমন করুণ দশা থাকবে কোন দুঃখে? দেশে কি রুচির অভাব মহাশয়রা? নাকি আপনাদের সময় হয় না নিজের মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, যা সারা বিশ্বে ভার্সুয়াল জগতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি উপস্থাপন করছে, তাকে একটু রুচিশীল করার? একটু যত্ন নেবার? সংস্কৃতি নিয়ে এতো হৈ চৈ, তার বাস্তব নমুনা কী তাহলে এই? ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তত দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে আমরা আরো রুচিশীল উপস্থাপনায় দেখতে চাই, যা দেখাতে এখন পর্যন্ত জনাব আসাদুজ্জামান নূর পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ ওই সাইটে আপনার ছবি শোভা পাচ্ছে। কি লজ্জার কথা!!!

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ১৭টি দপ্তর বা সংস্থা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটি। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই ১৭টি দপ্তরের কোনো লিংক বা আলাদা কোনো ওয়েবসাইটের কথা কোথাও নাই। আমার আগ্রহের বিষয় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। আলাদাভাবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কোনো ওয়েবসাইট না থাকায় বাংলাপিডিয়ার স্মরণাপন্ন হয়ে দেখলাম যে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের একটি বিশাল পরিচিতি রয়েছে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচয় সম্পর্কে লেখা হয়েছে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬০ সালের ২৯ জুলাই ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার অব পাকিস্তান’ বা ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে এটি ছিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। করাচিতে ছিল এর প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া লাহোর ও ঢাকায় ছিল এর দুটি শাখা অফিস।

পাকিস্তান আমলেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ঢাকা শাখা থেকে গ্রন্থজগতের নানা খবর নিয়ে বই নামে একটি মাসিক বাংলা পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শিশুতোষ গ্রন্থের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ষাটের দশকে প্রায়শ খ্যাতিমান লেখকদের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হতো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কার্যালয়ে। স্বাধীনতার পর ইংরেজি ‘ন্যাশনাল বুক সেন্টার’-এর পাশাপাশি বাংলায় ‘জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র’ নামটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ বইমেলায় দেশের বিশিষ্ট প্রকাশকদের সাথে ভারতের ‘বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস অংশ নেয়।

দেশে প্রকাশনার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিতভাবে গ্রন্থ রূপায়ন ও চিত্রণ, রচনা সম্পাদনা ও অনুবাদ, পুস্তক মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা, পুস্তক বিক্রয় ও প্রুফ সংশোধনের উপর প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বইমেলায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র নিয়মিত অংশ নিচ্ছে এবং সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ভারতের বুকট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার ভারতীয় বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করেছিল। একইভাবে ভারতের কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশি বইয়ের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

একসময় ইউনেস্কোর সহায়তায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র একটি ট্রাক ভাড়া করে দেশে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা চালু করে। পরে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিনিবাসের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। নানা ধরনের প্রতিকূলতার কারণে ভ্রাম্যমাণ মেলা কিছুকাল বন্ধ ছিল। তবে ২০০৮ সালে তা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে অনুদান ও বই দেওয়া হয়।

গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি বিক্রয়কেন্দ্র। দেশের নামকরা প্রকাশকের নানা ধরনের বই এখানে বিক্রি হয়। এখানে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বই কেনার সুযোগ রয়েছে। ‘মহানগর পাঠাগার’ নামে গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে একটি নিজস্ব সমৃদ্ধ পাঠাগার।

বই উপহার দেওয়ার বিষয়টিকে একটি সামাজিক রীতিতে পরিণত করার মতো গ্রন্থকেন্দ্রের রয়েছে ‘প্রিয়জনকে বই উপহার দিন’ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে স্টিকার ও পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই-পাঠকে উৎসাহিত করতে গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ‘আমার প্রিয় বই’ শিরোনামে বই পড়া ও নানা ধরনের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে বইয়ের পাঠক সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং আগের তুলনায় মানসম্পন্ন প্রকাশনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা ও অবদান। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এই পরিচয়টুকু লিখেছেন কবি ইকবাল আজিজ। বাংলাপিডিয়া এই কাজটুকু না করলে তাও জানা যেতো না।

যেটুকু বুঝলাম, দেশের গ্রন্থের উন্নয়ন, প্রকাশনা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি এটি দেশে বইমেলা আয়োজনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমিতে আমাদের অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রধান আয়োজক এই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এছাড়া এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি, ঢাকা বইমেলা ও জেলায় জেলায় বইমেলা আয়োজনের সরকারি আয়োজকের দায়িত্ব পালন করে। বলতে গেলে দেশের বই সংক্রান্ত সকল প্রধান কর্তৃত্বই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের দায়িত্বের মধ্যে। সারা দেশের পাঠাগারের জন্য কি বই কেনা হবে, কোন প্রকাশকের কয়টি বই কেনা হবে, কিভাবে কেনা হবে, কত সংখ্যায় কেনা হবে, এসব এই কেন্দ্র নির্ধারন করে।

কাজের বহরে দেশের পুস্তক প্রকাশকদের সঙ্গেই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের একটি প্রধান যোগসূত্রতা রয়েছে। সারা দেশের সরকারি পাঠাগারে বা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের বই যাবে, তা এই প্রতিষ্ঠান ঠিক করে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বটে। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি জাতীয় কমিটিও আছে। সেই কমিটির যারা সদস্য, তাদের কিভাবে নির্বাচন করা হয়, কোন যোগ্যতায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানে তারা কিভাবে কত ন্যাক্কারজনকভাবে দেশের রাষ্ট্রীয় কাজে কত অবহেলার পরিচয় দিচ্ছে, সেই ফিরিস্থি এই ছোট্ট লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বলা যায়, যে সকল প্রকাশকদের সঙ্গে এই কেন্দ্রের সম্পর্ক ভালো, তাদের বই কেবল জাতীয়ভাবে ক্রয় করার একটি ওপেন সিক্রেট পদ্ধতি এখানে দীর্ঘদিন চালু আছে। সেই অনিয়মের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাইরে ঢাকা বইমেলা ও জেলায় জেলায় বইমেলার বিষয়ে জানা যায় যে, প্রতিবছর ঢাকা বইমেলা নামে যে বইমেলাটি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ঢাকায় আয়োজন করে, সেটি এখন পর্যন্ত খোদ ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করতেই ব্যর্থ হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে প্রকাশকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চরম বহিপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন। আর জেলায় জেলায় বইমেলার আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়, প্রতি বছর দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি বইমেলা কেন্দ্রের আয়োজন করার কথা। কারণ, ৬৪ জেলায় বইমেলা আয়োজন করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে প্রতি বছরই বাজেট আসে। প্রতি জেলার জন্য বাজেট ৬০ হাজার টাকা। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যতগুলো জেলায় বইমেলা আয়োজন করতে পারে, সেগুলো বাজেট থেকে খরচ হয়। যতগুলো বইমেলা করতে ব্যর্থ হয়, সেগুলোর প্রতিটির জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ হাজার টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে বছর শেষে ফেরত যায়।

এ বছর জেলায় জেলায় বই মেলার আয়োজনের পরিবর্তে মাত্র চারটি বিভাগীয় সদরে বইমেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্কৃত মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দুটি বই মেলা করতে সক্ষম হয়। তাহলে বইমেলা আয়োজনের জন্য সরকারি বরাদ্ধের অর্থ কোথায় খরচ করা হবে? যেহেতু অন্য কোনো খাতে এই অর্থ খরচ করার সুযোগ নাই, তাই চলতি বছরে দুটি বিভাগীয় বইমেলার হিসবাও এই নির্দিষ্ট বাজেটের বাইরেই থাকার কথা। প্রচলিত বিধি ও আইন তাই বলে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের কাছে প্রথম প্রশ্ন, একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তিত্ব হিসেবে আপনার দায়িত্বে যেখানে বইমেলা জেলায় জেলায় এর বদলে উপজেলা এবং ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে যাবার কথা, সেখানে আপনি কার স্বার্থে প্রচলিত রীতি ভেঙ্গে কেবল চারটি বিভাগীয় বইমেলা করার ইচ্ছে পোষণ করলেন? চারটি করতে না পেরে দুটি করলেন, সেই দুটি বইমেলা বা কতটুকু স্বার্থক? কিভাবে স্বার্থক? ৬৪ জেলায় ৬৪টি বইমেলা হল না কেন? কার স্বার্থে, কাদের স্বার্থে ৬৪ জেলায় বইমেলা হল না?

জনাব নূর, আপনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হবার পর নতুন পাঠক সৃষ্টিতে কি কি অবদান রেখেছেন? এই বিষয়ে আপনার অনাগ্রহের রহস্য কী? জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে এভাবে অব্যর্থ করে রাখায় কার কার স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে? দেশ কী পাচ্ছে এই কাজে? নতুন প্রজন্ম বা কী পাচ্ছে?

অথচ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান আপনার নের্তৃত্বে আরো গতিশীল হবার কথা। সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ে কোথায় সেই গতি? জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সম্পর্কে নানা অনিয়মের খবর পত্রিকায় আসে। সেই অনিয়মগুলো আপনি মন্ত্রী হিসেবে এড়িয়ে যেতে পারেন না। দেশে সংস্কৃতি বিকাশে একজন হেভিওয়েট সংস্কৃত ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের এই যদি হয় নমুনা, তাহলে দেশের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের কথা আর কোথায় বলা সম্ভব? আদৌ বলা সম্ভব কিনা?!!

দেখে তো মনে হচ্ছে, আপনার নের্তৃত্বে দেশে সংস্কৃতির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। বই পাঠে শিশুদের উৎসাহিত করায় আপনার ভূমিকা কোথায়? তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় অন্য মন্ত্রীদের তুলনায় আপনার আলাদা বৈশিষ্ট্যের নমুনা কোথায় কিভাবে পাব? কিভাবে পাব?

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়েছে। গত বছর একুশে বইমেলায় ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি ছিল, প্রচুর অব্যবস্থাপনা ছিল। ছুটির দিনে বইমেলায় ঢোকা ও বের হওয়া ছিল রীতিমত কষ্টসাধ্য। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জায়গা বাড়লেও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায়, এটি আরো হযবরল পাকিয়েছিল। একুশে বইমেলার সময় বারোয়ারি জিনিসের মেলা ঠেকাতে মন্ত্রণালয় কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন? মেলায় প্রবেশ ও বাহিরের জন্য কার্যকর গেইট ও শৃঙ্খলা কী এবার আমরা আশা করতে পারি? একুশে বইমেলায় লেখকদের আড্ডার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কি এবারো অনুপস্থিত থাকবে?

দেশের যে কোন ধরনের সরকারিভাবে বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব যেহেতু জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের। তাই প্রতিটি বইমেলাকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যেই পরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে জনাব নূর সাহেব এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। আমরা আশা করব, আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সংস্কৃত মন্ত্রণালয় বিশেষ করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আরো সচেতন হবে, কার্যকরী ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেবে, এবং একুশের বইমেলাকে বারোয়ারি মেলা থেকে মুক্ত করায় প্রয়াসী হবে। নইলে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা ধীরে ধীরে অমর একুশের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব দুটোই হারাবে।

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশে আপনার দক্ষতা এবং রুচিবোধকে আরো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করে আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আপনি আরো সফল ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেই আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে বিদ্যমান জটিলতা ও অনিয়মগুলো দূর করতে আপনি আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহন করবেন বলেই আমরা এখনো আশাবাদী। বইমেলা শুধু ঢাকায় বা বিভাগীয় শহরে নয়, জেলায়, উপজেলায় এমন কি গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন প্রজন্মের শিশুদের বইপাঠে আগ্রহী করতে আপনি আরো যত্নবান হবেন বলেই আমি বিশ্বাস রাখতে চাই। নতুবা আপনি কোন হনু রে!!!

................................
২১ ডিসেম্বর ২০১৪
ঢাকা


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০০

খেলাঘর বলেছেন:


আপনি লিখেছিলেন যে, লেখা ইত্যাদি থেকেই আপনার জীবিকা আসে, বোধ হয়; আপনি কি রকম করছেন?

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৮

শরীফ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেছেন: একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমরা উনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিলাম।

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হস্তির অশ্বডিম্ব প্রসবের মতো গোলক ধাধায় পুরা জাতি!!!

ষংষ্কৃতির রুপরেখা কই? ভারতীয় সংষ্কৃতিতে দেখী তাদের ধর্মই প্রধান উপজিব্য। অথচ আমাদের এখানে রিভার্স! ধর্মকে প্রায় নাই পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে!
সংস্কৃতি কি শূধু নাচ আর গান?
জীবন যাপন, জীবন বোধের যে সাম্রগীকতা তার প্রতিফলন কই?

চমৎকার একটা বিষয়ে সাহসী জ্বলন্ত প্রশ্ন করায় ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।


অ.ট:
এই লাইনটাতে আমি কনফিউড! আপনি লিখেছেন-
"গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে এভাবে অব্যর্থ করে রাখায়......."

এটা কি "ব্যার্থ" হবে না? নাকি অথর্ব টাইপ কিছূ হবে যা নিক্রিয়তা বোঝায়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.