নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচনী কিচ্চা-১!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:২৮

পাঁচ বছর ঘুরে নির্বাচন আসলেই আমাদের আবুবকর নানার ঘুম হারাম হয়ে যেত। না, জাতীয় নির্বাচন নয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। একদল লোক আবুবকর নানাকে কী কৌশলে যেন পটিয়ে পাটিয়ে ইলেকশানে দাঁড় করিয়ে দিতেন। আর আবুবকর নানাও এটা খুব এনজয় করতেন। আমাদের এলাকায় সবার আগে ইলেকশন ক্যাম্পেইন শুরু করতেন আবুবকর নানা।

শুরুতে আবুবকর নানার পেছনে অনেককে ক্যাম্পেইন করতে দেখা যেতো। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনে হতো এবার বুঝি আবুবকর নানা ফার্স্ট মেম্বার হবেন। সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হতো আবুবকর নানার পেছনে। নমিনেশান পেপার জমা দেবার দিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি করা অপর প্রার্থীরাও আবুবকর নানার সাথে নমিনেশান পেপার জমা দিতেন। তারা হয়তো তাদের অল্পকিছু সমর্থক নিয়ে কাজটি করতেন।

কিন্তু সবাই একটা বিষয়ে খুব উৎসাহী থাকতেন- কখন আবুবকর নানা নমিনেশান পেপার জমা দেন, তা দেখার জন্য। তখন অন্য প্রার্থীরা তাদের সমর্থকসহ আবুবকর নানার সাথে যোগ দিয়ে নমিনেশান পেপার জমা দিতেন। আবুবকর নানাকে ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে বিশাল একটা বাহিনী তারপর তার নমিনেশান পেপার জমা দিতেন।

উপস্থিত জনতা-সমর্থক দেখে আবুবকর নানা ভাবতেন এবার আর ঠেকায় কে? কিন্তু ভোট শেষে দেখা যেতো সবচেয়ে কম ভোট পেয়ে আবুবকর নানার জামানত বাজেয়াপ্ত। ব্যাপার কী? আসলে নির্বচনে সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী থাকতেন আবুবকর নানা। তাই তার চেয়ে জুনিয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও মুরব্বি'র নমিনেশান পেপার জমা দেবার সময় কৌতুহল নিয়ে সঙ্গে থাকতেন। একটু কৌতুক বা রসিকতা করার জন্য!

মুরব্বিকে সাহস যোগাতে সবাই এই রসিকতাটা এতটা দক্ষতার সাথে করতেন যে আবুবকর নানা এই কৌশলের নারী-নক্ষত্র কিছুই বুঝতেন না। সবার মুখেই তখন একটাই কথা। তিন ভোটের একটা এবার আবুবকর নানারে দেবো। আবুবকর নানা তাদের সেই কুটিল কথা সহজ-সরলভাবেই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ভোট শেষে ফলাফলে দেখা যেতো সবচেয়ে কম ভোট জুটেছে তার কপালে।

আবুবকর নানার ছোট ছেলের নাম টিপু সুলতান। আমরা নানা-নানীর সামনে তারে আমরা ডাকি টিপু মামা। টিপু মামা আমাদের ক্লাশে পড়তেন। আমরা ক্লাশ ফ্রেন্ড। কিন্তু বাড়ির বাইরে গেলেই ডাকতাম টিপু দুদু। কারণ আমাদের মামাতো ভাই স্বপন, যে কিনা আমার ক্লাশে পড়তো। সম্পর্কে টিপু মামা স্বপনের সত্যি সত্যি টিপু দুদু। কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা কেন টিপু দুদু ডাকি? তারও একটা কারণ আছে।

ঘটনা হইল আবুবকর নানা নির্বাচনে প্রায়ই মার্কা নিতেন কুঠার। কিন্তু আমরা কই কুড়াল। তো ভোটের ন্যাক্কারজনক রেজাল্টের পর স্বপন একদিন টিপু মামারে দুষ্টামি করে কইলো 'কুড়ালের আছাড়ি'। অমনি টিপু মামা গেলেন চটে। তখন স্বপন যতই তার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগলো ততই টিপু মামা অ্যাকশানে থাকলেন। আর স্বপন তখন টিপু দুদু, টিপু দুদু, আর কবো না, আর কবো না, ও টিপু দুদু, টিপু দুদু এবারের মত মাফ করো, এসব আহাজারি করতো।

ঘটনার পর আমরা যারা দুষ্টু পোলাপান স্বপনের স্টাইলে 'ও টিপু দুদু' কইলেই টিপু মামা যেতেন ক্ষেপে। টিপু মামার এই ক্ষেপার কারণেই আমরা সুযোগ পেলেই তারে কুড়ালের আছাড়ি বা টিপু দুদু ডাকাতাম। আর সাথে সাথে টিপু মামা যেতেন ক্ষেপে। এমনও হতো টানা দু'তিন দিন টিপু মামা আমাদের সাথে গোস্যা করে কথা বলতেন না। পরে আমরা মাফ টাফ চেয়ে টিপু মামার সাথে আবার খাতির পাতাতাম।

ঘটনা ধীরে ধীরে নানীর কান হয়ে আবুবকর নানার কানেও একসময় পৌঁছালো। ততদিনে আবুবকর নানাও আমাদের সাথে ঘটনায় অভ্যস্থ হয়ে গেছেন। ছেলের উপর কোনো কারণে ক্ষেপে গেলেই আবুবকর নানাও হাঁক ছাড়তেন- কুড়ালের আছাড়ি গেল কোই! শুনে আমরা হেসে গড়াগড়ি যেতাম। আর আবুবকর নানা তখন বেশি করে ডাকতেন। আসলে আমরা যারা তার নাতী, তাদের একটু হাসাতেই কৌশলে আবুবকর নানাও ইচ্ছে করেই টিপু মামাকে কুড়ালের আছাড়ি ডাকতেন।

আবার কখনো নানীর উপর আবুবকর নানার মেজাজ খারাপ হলে টিপু মামার ডাক পড়তো। ঘটনার সুরাহার জন্য। অথবা ঘটনার কারণ হয়তো টিপু মামা। তখনো আবুববকর নানা নানীর উপর ক্ষোভ ঝাড়তেন এই বলে- তোমার কুড়ালের আছাড়ি গেল কোই!

এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের টিপু মামা টিপু দুদু থেকে কুড়ালের আছাড়িতে পরিণত হয়েছিল। অথচ নির্বাচনে দাঁড়াতেন আবুবকর নানা। আর ভোটে তার হারার জন্য সব নির্যাতন যেতো টিপু মামার উপর দিয়ে।

একসময় টিপু মামা কেঁদে কেটে আবুবকর নানার কাছে আবদার করলেন, তুমি ভোটে খাঁড়াইলে খাঁড়াও কিন্তু আর কুড়াল মার্কা নিও না। ঘটনাক্রমে আবুবকর নানারও মন গলে গেল। সেবার নির্বাচনে আবুবকর নানা মার্কা হিসেবে নিলেন ইলিশ মাছ। যথারীতি ভোটের রেজাল্টে আবুবকর নানার জামানত বাজেয়াপ্ত। এবার টিপু মামারে ক্ষেপানোর নতুন অস্ত্র হইলো জাটকা।

ওইটা ছিল আমাদের কামরুল মামার আবিস্কার। কামরুল মামাও আমাদের ক্লাশে পড়তো। কী ঘটনায় যেনো টিপু মামার সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছিল। সেই সুযোগে কামরুল মামা কইলো ইলিশের ছাও মানে তো জাটকা। টিপু মামারে উদ্দেশ্য করে কইলো- তুই একটা জাটকা। তারপর কিছুদিন টিপু মামা জাটকা নামে পরিচিতি পেল। কিন্তু এবার আর আবুবকর নানা বিষয়টা সহজভাবে নিলেন না।

কেউ যদি ভুলে আবুবকর নানাকে জিজ্ঞেস করতো- তোমার জাটকা কোই গেল? অমনি আবুবকর নানা ক্ষেপে গিয়ে বলতেন, খাঁড়া জাটকা তোর পোঙ্গার মদ্দি ভইরা দেবো।

আবুবকর নানার ওরকম রিয়াকশনে কাজ হয়েছিল। টিপু মামার মানে আমাদের দুষ্টামির টিপু দুদু'র কুড়ালের আছাড়ি যতটা জনপ্রিয় হয়েছিল তার চেয়ে জাটকা ততটা ফ্লপ করেছিল। যেরকম ফ্লপ করতো আবুবকর নানার ভোটের রেজাল্ট। তবে ভোটের রেজাল্ট যা-ই হোক না কেন, আবুবকর নানা ইলেকশানে দাঁড়ালে রোজ সন্ধ্যায় আমরা বিস্কুট খাবার লোভে টিপু মামার নেতৃত্বে নানার নামে মিছিল করতে কোনো ভুল করতাম না।

একথা হলোপ করেই বলা যায় যে, আমাদের এলাকায় সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী মিছিল হতো আবুবকর নানার নামে। কিন্তু আবুবকর নানা নির্বাচনে কখনোই পাশ করতে পারেন নাই। আফছোস!
-------------------------
৬ নভেম্বর ২০১৮





মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: টিপু দুদু :D

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২২

খাঁজা বাবা বলেছেন: মজা পাইছি
কিন্তু নানার জন্য আফসোস হচ্ছে

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: শিমুল কাঠই হোক আর সেগুন কাঠই হোক, আগুনের চেহারাটা একই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.