নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পালাকার-এর নতুন নাটক \'রং লেগেছে\'র প্রিমিয়ার শো ছিল হাউজফুল!

২৯ শে জুন, ২০১৯ রাত ২:৩৬

শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি'র স্টুডিও হলে পালাকার-এর নতুন স্টুডিও প্রযোজনা 'রং লেগেছে' নাটকের প্রিমিয়ার শো। কলকাতার 'দি রয়েল বেঙ্গল থিয়েটার'-এর প্রযোজনা 'পৌরাণিক পঞ্চরং' অবলম্বনে নাটকটি নতুনভাবে রোমান্টিক কমেডি হিসেবে পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল নাট্যকার ও নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুল। 'রং লেগেছে' নাটকটির প্রিমিয়ার শো'র শুভ উদ্ভোধন করেন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান।

পালাকার নতুন সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধনে স্টুডিওভিত্তিক নাট্য নির্মাণের ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচিত নাট্যধারা 'রং লেগেছে' একটি রোমান্টিক কমেডি। প্রায় একশো বিশ বছর আগে কলকাতার 'দি রয়েল বেঙ্গল থিয়েটার'-এর দলগত প্রযোজনা ছিল 'পৌরাণিক পঞ্চরং'। দীর্ঘকাল পরে সেই প্রযোজনাটির কিছু চরিত্র বিয়োজন করে, পাণ্ডুলিপি'র মূল ভাবনাটি ঠিক রেখে, সমকালীন সময়ের দায় মেটাতে কিছুটা পরিবর্তিত সুরে নতুনভাবে নাটকটি 'রং লেগেছে' নামে উপস্থাপন করেছে পালাকার।

নাটকের গল্পটা এরকম- দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করে স্বর্গ থেকে মর্তে আসেন কামদেব মদন আর তার ভৃত্য বসন্তদেব। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য সিংহলের সেনাপতি রণবীর সিংহ ও তার সন্দুরী স্ত্রী মেঘমালার প্রেমের গভীরতা পরিমাপ করা। সিংহল সেনাপতি রণবীর সিংহের ছদ্মবেশ ধারণ করলেন কামদেব মদন। আর রণবীরের চাকর শশী'র ছদ্মবেশ ধারণ করলেন বসন্তদেব।

এক পর্যায়ে তারা সিংহল সেনাপতি রণবীর সিংহের বাড়িতে এসে সেনাপত্নী মেঘমালার সাথে ভাব করতে শুরু করলেন। কিন্তু তাদের এই কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো মেঘমালার দুই দাসী চাঁপা ও কাতি। মেঘমালার দুই দাসীর অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে ছদ্মবেশী দেবতা মদন ও বসন্তদেবের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই যুদ্ধ শেষে সিংহলে ফেরত আসেন স্বয়ং সেনাপতি রণবীর সিংহ ও তার চাকর শশী।

স্বাভাবিকভাবেই তখন সিংহল সেনাপতি রণবীর সিংহের বাড়িতে একইরকম দেখতে দুই রণবীর ও দুই শশীকে নিয়ে মহিলা মহলে উঠলো নানারকম গুঞ্জন। একদিকে চললো আসল রণবীর আর শশীকে আবিস্কার করার পালা, অন্যদিকে চললো মেঘমালা ও রণবীরের খাঁটি প্রেমের পরীক্ষা। মেঘমালা কিছুতেই চিনতে পারছে না আসল রণবীরকে। রণবীরের ছদ্মবেশী কামদেব মদনের প্রেমেই তখন হাবুডুবু খাচ্ছে মেঘমালা।

এক পর্যায়ে আসল রণবীর কে, তা যাচাই করার জন্য মেঘমালার দুই দাসী চাঁপা ও কাতি দুই রণবীরের উপর নানান কৌশলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। কিন্তু সেই পরিক্ষা-নিরীক্ষায়ও আসল রণবীর কে, তা মেঘমালা নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়। তখন সিংহলের আসল সেনাপতি রণবীর সিংহ স্ত্রী মেঘমালার প্রতি রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে ছদ্মবেশী রণবীরকে হত্যা করতে উদ্যত হন। কিন্তু তখন সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্বয়ং মেঘমালা। সিংহলের সেনাপতি রণবীর সিংহ তখন নিজের তরবারিতে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।

এই পর্যায়ে প্রেমের পরীক্ষায় মেঘমালা দ্বিধান্বিত হলেও আসল সেনাপতি রণবীর সিংহ যখন সুইসাইড করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তখন তাঁকে বাঁচাতে ছদ্মবেশী রণবীর কামদেব মদন তাকে বাঁচানোর জন্য তাদের ছদ্মবেশ ধারণ করার কথা স্বীকার করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের নির্দেশে তারা যে এই ছদ্মবেশ ধারণ করেছে, তা সব একে একে খুলে বলেন। এরপর ভাস্কর পণ্ডিতের উপস্থিতিতে সিংহল সেনাপতির বাড়িতে সবাই আনন্দযজ্ঞ মেতে ওঠেন। এখানেই নাটকটি শেষ হয়।

'রং লেগেছে' নাটকটির নাট্যনবায়ন ও নির্দেশনা দিয়েছেন আমিনুর রহমান মুকুল। কলকাতার 'দি রয়েল বেঙ্গল থিয়েটার'-এর 'পৌরাণিক পঞ্চরং' নাটকটিকে কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে সমকালীন সময়ের সাথে সুরব্যঞ্জনায় নতুনভাবে উপস্থাপন করায় নাট্যকার ও নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুল দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে মলিয়ের ও শেক্সপিয়রের জনপ্রিয় ধারার বিয়োগাত্বক নাটকের বিপরীতে মৌলিক রোমান্টিক কমেডি সৃজনে 'রং লেগেছে' অবশ্যই একটি নতুন প্রয়াস।

নাটকে দেবরাজ ইন্দ্র ও ভাস্কর পণ্ডিতের চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন রিয়াজ হোসেন। কামদেব মদনের চরিত্রে অনন্য অভিনয় করেছেন বাবর খাদেমী। সেই তুলনায় সিংহল সেনাপতি রণবীর সিংহের চরিত্রে মিশকাতুর রহমান মুরাদকে আরো পরিশ্রম করতে হবে। বিশেষ করে দেহভঙ্গি ও এক্সপ্রেশানে আরো চরিত্রঘনিষ্ট অন্তরঙ্গ হবার দাবি রাখে। মেঘমালা চরিত্রে ফাহমিদা মল্লিক শিশির কিছুটা একঘেয়েমি অভিনয় করেছেন। মেঘমালা চরিত্রটি সেই তুলনায় আরো স্বতঃস্ফুর্ততা দাবি রাখে।

বসন্ত দেব চরিত্রে আসাদুজ্জামান শুভ ও শশী চরিত্রে শাহাদাত সাব্বির সুন্দর অভিনয় করেছেন। তবে দেহভঙ্গি যতটা উপযোগী সেই তুলনায় মুখভঙ্গি বা এক্সপ্রেশানের কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। মেঘমালার দুই দাসী চাঁপা চরিত্রে তামান্না ইয়াসমিন স্বর্ণা ও কাতি চরিত্রে শাহনাজ আঁখি চমৎকার অভিনয় করেছেন। দু'জনে চরিত্রের সাথে নিজেদের একাত্ত করতে পেরেছেন।

তবে প্রিমিয়ার শো দেখে অভিনয় সম্পর্কে মন্তব্য করা একদম ঠিক না। আরো কয়েকটি শো'র পর এই জায়গাগুলো ধীরে ধীরে আরো উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করি। বিশেষ করে নকল রণবীর (মদন) ও নকল শশী যতোটা স্বতঃষ্ফুর্ত, সেই তুলনায় আসল রণবীর ও আসল শশী কিছুটা যেন পিছিয়ে ছিল। আবার মেঘমালা ও আসল রণবীর যেন আরো ধীর গতির ছিল। এই জায়গাটা আরো স্বতঃস্ফুর্ততা ও গতি আসলে নাটকটি আরো উপভোগ্য হবে। দুই দাসী চাঁপা ও কাতি বরং সে তুলনায় ভালো করেছেন।

'রং লেগেছে' নাটকটির সহকারী নির্দেশনা ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন বাবর খাদেমী। আলোক প্রক্ষেপণে সহযোগিতা করেছেন আরমান আলী অপু ও প্রণব দাস। নাটকের সেট ও কোরিওগ্রাফি পরিকল্পনা করেছেন অনিকেত পাল বাবু। সেট নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন সেলিম হায়দার, সাজ্জাত হোসেন নিসাদ ও মিশকাতুর রহমান মুরাদ। সংগীত পরিকল্পনা ও সুর সংযোজন করেছেন অজয় দাশ ও সুমন নরম্যান কাম্পু। গানের কথা লিখেছেন আমিনুর রহমান মুকুল। সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন অপর্ণা আহমেদ, সুমন নরম্যান কাম্পু, অজয় দাশ ও টাবিথা ময়ুস্মিতা সরকার। সংগীত প্রক্ষেপণে ছিলেন সাজ্জাদ হোসেন নিসাদ, শতাব্দী সানজানা ও মাহমুদুল হাসান শুভ।

নাটকটির সেট, লাইট ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এককথায় চমৎকার। সেট নির্মাণে অনিকেত পাল বাবু নেট (জাল)-এর চমৎকার নান্দনিক ব্যবহার করেছেন। এমন সাদামাটা এনালগ সেটে লাইটের ব্যবহারও ছিল দৃষ্টিনন্দন। গানের কথা অসাধারণ হলেও সুর সংযোজনে বৈচিত্র্যের কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে যন্ত্রসংগীত ব্যবহারে কিছুটা চমক ছিল। এমনিতে সংগীত প্রক্ষেপণ ছিল দারুন। তবে নাটকের এক ঘণ্টা পনেরো মিনিটের ডুরেশানের তুলনায় সংলাপ যতটা আকর্ষণীয় ও ক্যালকুলেটিভ, তারচেয়ে গানের আধিক্য যেন নাটকের মূল ভাবকে কিছুটা বিদ্রুপ করেছে বলে মনে হয়েছে।

নাটকটির কস্টিউম পরিকল্পনা করেছেন শামীম সাগর। সহযোগিতায় ছিলেন শতাব্দী সানজানা। প্রপস পরিকল্পনায় ছিলেন চারু পিন্টু। সহযোগিতায় ছিলেন আসাদুজ্জামান শুভ। লোগো ও প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন আমিনুর রহমান মুকুল। প্রচ্ছদের ড্রইং করেছেন বিপ্লব সরকার। মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাহাদাত সাব্বির ও শাহনাজ আঁখি। প্রচার ও প্রকাশনায় ছিলেন কাজী ফয়সল, চারু পিন্টু ও শতাব্দী সানজানা। অর্থ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মিশকাতুর রহমান মুরাদ। বক্স অফিস দায়িত্ব পালন করেছেন আয়ুশী ঘোষ ও নভেম্বর টুয়েসডে রোদ। নাট্য অধিকর্তা ছিলেন অনিকেত পাল বাবু।

নাটকটির কস্টিউম পরিকল্পনায় আরো বৈচিত্র্য আনতে পারলে হয়তো সিংহল সেনাপতি'র অন্দরমহল আরো সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হতো। বিশেষ করে প্রপস পরিকল্পনায় আরো অনেক কিছু সংযোজন করা যেতো। এমনিতে কমেডি নাটকে দর্শকের চিত্ত আকর্ষণ করার কাজটি সত্যিই কঠিন। কুশীলবদের দেহভঙ্গি ও এক্সপ্রেশান এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই জায়গাটি নিয়ে ধীরে ধীরে আরো কয়েকটি শো'তে হয়তো উন্নতি করার সুযোগ থাকবে। রোমান্টিক কমেডিতে এটি আরো বেশি দাবি করে।

তবে স্টুডিও প্রযোজনা হিসেবে 'রং লেগেছে' নাটকটি পালাকার-এর এক নতুন সংযোজনা। বিশেষ করে রোমান্টিক কমেডি হিসেবে এটি সমকালীন ব্যঙ্গ-ঠাট্টা ও ক্লেশে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আশা করি নাটকটি ধীরে ধীরে আরো উন্নতি করে বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পাবে। জয়তু পালাকার। জয়তু বাংলা থিয়েটার।

---------------------------------
'রং লেগেছে' নাটকের প্রিমিয়ার শো দেখার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৯ সকাল ৭:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: নাটকের কাহিনী টা সুন্দর। এরকম একটা সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.