নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'হরিবোল\' বিহাইন্ড দ্য স্টোরি- ১

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ রাত ৩:০১

সিনেমা বানাতে প্রথম যে জিনিসটি লাগে সেটি হলো একটি গল্প। একটি গল্পকেই প্রথম প্রয়োজন পড়ে সিনেমার। 'হরিবোল' বানাতে এসে প্রথমে আমি গল্পের সন্ধানে লোকেশান দেখার ভান করে বাড়িতে গেলাম। ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি মা মারা যাবার পর, আমি আর বাড়িতে যাইনি। দীর্ঘদিন পর ২০১৭ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি বাড়ি যাই। বাড়িতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কিছু লোকেশান আবারো দেখলাম।

এর আগে ২০০৯ সালে যখন মা মারা যায়, তখনও আমার গ্রামের নানান জায়গায় ঘুরে ঘুরে লোকেশান দেখেছিলাম। তখন আমাকে সঙ্গ দিয়েছিল বাপি। বাপি সিংহ। অনীলদা'র ছোট ছেলে বাপি। বাপি আমার ছোট ভাই শিপুলের ক্লাশমেট। বাড়িতে গেলে বাপি আমার সাথে ঘুরতে যায়। বাপি জিজ্ঞেস তখন করেছিল, কাকু লোকেশান দেখে কী করবা? সিনেমা বানাবা নাকি?

তখন বাপিকে বলেছিলাম, লোকেশান দেখে রাখি। কিছু একটা তো বানাবো। দেখা যাক। তারপর দীর্ঘ ৮ বছর আর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। বাপিকে সাথে নিয়ে দেখা লোকেশানগুলো আমার অন্তরপুরে স্থায়ী চিত্রপট হয়ে রয়ে গেল। পুনরায় ৮ বছর পর বাড়িতে গিয়ে আগের দেখা সেই জায়গাগুলো আবার ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এবার আমাকে সঙ্গ দিল এমদাদ ভাই, মনোজ কাকু, রণজিৎ কাকু, বন্ধু স্বপন, বন্ধু সুনীল, বিধানদা, জীবনদা, অমলদা, সমেশ প্রমুখ।

চা খেতে খেতে মনোজ কাকুকে বললাম, গ্রামে আমি যদি কোনো কাজ করতে চাই, তোমরা কী সময় দিতে পারবা? জবাবে মনোজ কাকু কইলো, বাবা তুমি যা মনোস্থ করছো, আগে শুরু করো। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি। তুমি কিছু একটা করো। জবাবে বললাম, তোমাদের সবার কিন্তু অভিনয় করতে হবে। মনোজ কাকু জবাবে কইলো, বেটা অভিনয় নিয়া চিন্তা করিস না। কেমনে কী করবা, তাই আগে ঠিক করো।

অমলদাকে বললাম, ঢাকা থেকে ক্যামেরা, লাইটসহ কিছু আর্টিস্ট নিয়া আসবো। সবার থাকার বন্দোবস্ত যদি আমাদের বাড়িতে না হয়, কী করবো? অমলদা কইলো, থাকা খাওয়া নিয়া তুমি কোনো চিন্তা কইরো না ভাডি। তুমি আর কয়জন নিয়া আসবা? থাকা খাওয়ায় আর কী এমন ঝামেলা? মেজোভাই না পারলি আমরা তো আছি। ভাডি তুমি দলবল নিয়া চলে আসো। কোনো সমস্যা নাই।

জীবনদাকে বললাম, শুটিংয়ের সময় অনেক নগদ টাকার ব্যাপার আছে। এত টাকা কোথায় পাবো? জীবনদা কইলো, শোন ভাডি, এখন আমি রাজমিস্ত্রী'র কাজ করি। দুই-চার লাখ টাকা আমিই তোরে দিতে পারবানি। তুই আগে আয়। বিধানদাকে বললাম তুমি কী দিবা কও? বিধানদা কইলো, আমার তো টাকা পয়সা নাই। তোর যখন লাগবে আমারে পাবি। কিছু দিতি না পারলিও গতর খাটনি তো দিতি পারবানি।

অনীলদাকে বললাম, দাদা সিনেমা বানাতে চাই। আপনার কিন্তু অভিনয় করা লাগবে? আমার কথা শুনে দাদা হেসে দিয়ে বললেন, আমি তো সারাজীবন মাস্টারি করলাম। কখনো অভিনয় করি নাই। তোমরা যখন যাত্রা করতা, তখন প্রোমোট করে দিতাম। এখন তো গ্রাম থেকে যাত্রাও উঠে গেছে। তুমি শুরু করো। দেখা যাক।

রণজিৎ কাকুকে বললাম, সিনেমা বানাবো, তুমি কও কী কী দিতে পারবা? জবাবে রণজিৎ কাকু কইলো, এমদাদ না পারলি থাকা-খাওয়ার ব্যাপারটা তুই আমার উপর ছেড়ে দিস। আর টাকা লাগলে তুই প্রকাশকে বল? সুনীলকে জিজ্ঞেস করলাম, তুই কী কী দিতে পারবি বল? জবাবে সুনীল কইলো, আর কিছু দিতি না পারলিও তোদের চা তো খাওয়াতি পারবো। তুই আগে আয়!

বন্ধু ডাক্তার নিশিকে বললাম, আমার সিনেমায় তুই কী কী দিতে পারবি বল? নিশি কইলো, আগে তুই আয়। তুই তো গ্রামে আসাই ছাইড়া দিছিস। তোরে দিয়া ভরসা পাই না। আগে তুই আয়। তারপর যা লাগে দেবানি।

এভাবে কয়েকদিন গ্রামের নানান জায়গায় ঘুরলাম আর লোকেশান দেখলাম। পকেটে কোনো টাকা নাই। কিন্তু সিনেমা বানানোর ভূত চেপেছে মাথায়। মেজো দুলাভাই আর মেজো আপাকে কইলাম, সিনেমা বানাবো, তোমরা টাকা দাও? মেজো আপা কইলো, তুমি বাড়ি আসলি আমি দিতি পারি। দুলাভাই কইলো, না না, দাদাকে আগে তোমার প্লান বলো। তারপর দাদা যদি অনুমতি দেয়, টাকার ব্যবস্থা একটা হবে।

আমার ফুফাতো ভাই শহীদকে বললাম, সিনেমা বানাবো টাকা দাও। শহীদ ভাই কইলো, তোর মাথা খারাপ! তোর বাংলাদেশ ব্যাংক তো ঢাকায়। আর তুই গ্রামে আইসা আমার কাছে টাকা চাইস! এ তোর কী মাথা টাথা নষ্ট হইয়া গেল! শহীদ ভাই আমার সাথে খুব দুষ্টামি করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলতে শহীদ ভাই বোঝালেন আসলে উত্তরার ভাবীকে। ভাবী মানে আনু ভাবী। ভাতিজা পলাশের মা।

ছোটভাই জাকিরকে বললাম, তোর কথায় আমি বাড়ি আসলাম। এখন বল টাকা কীভাবে দিবি? জবাবে জাকির বললো, টাকা আমি দিতে পারি, যদি সব ভাইবোন তোমার কাজে সায় দেয়। আমি একা কোনো ডিসিশান দিতে পারবো না। জবাবে বললাম, তুই জমির হিসাব বের কর। আমি যেটুকু পাবো, ওইটুকুর একটা দাম ধর। আমি টাকা দিতে না পারলে তুই জমি নিয়ে নিস।

'জমি বিক্রি করে সিনেমা বানাবো' এই সমীকরণটি শুরুতে কেউ ভালো ভাবে নিল না। ঢাকার আমার প্রায় সকল বন্ধুই বললো, রেজা এটা চরম বোকামি হবে। জমি বিক্রি করব- এমন কথাটা গ্রামে প্রায় মুহূর্তে রাষ্ট্র হয়ে গেল। এবার দুটো পক্ষ হয়ে গেল। একপক্ষ বললো, তোর মাথা নষ্ট হইছে। তুই এখন থাম। আরেকপক্ষ বললো, তুই যদি মনে করিস, এটা দিয়ে কিছু হবে, তাহলে ট্রাই কর।

লোকেশান দেখার ছলে আমি পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব গ্রামের শুভাকাঙ্খী সবার এক ধরনের মতামত পেয়ে গেলাম। কিন্তু মাথা থেকে সিনেমা বানানোর ভূত আর যায় না। রাতে আমি ঘুমোতে পারি না। জাকিরের মোবাইলে কিছু লোকেশানের ছবি তুললাম। ঢাকায় ফিরে জাকিরকে বললাম, ছবিগুলো মেইল কর।

ছবিগুলো দেখি আর একটা একটা সিকোয়েন্স আমার মাথায় খেলে যায়। আমি ছটফট করি। ঘুম আসে না। কোনো গল্প আমার মাথায় আসে না। সিনেমা কীভাবে বানাবো বুঝতে পারি না। কম্পিউটার অন করে সারা রাত আমি জাকিরের মোবাইলে তোলা স্টিল ছবি দেখে দেখে রাত কাটাই। কোনো গল্প ধরা দেয় না। রাত যায় দিন আসে। ক্লান্তিতে দিনের বেলায় আমি ঘুমিয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে মেজো আপাকে ফোন করি। আলাপ বেশিদূর আগায় না। জাকিরকে ফোন করি। আলাপ বেশিদূর আগায় না। জীবনদাকে ফোন করি। কিছুটা আশা পাই। অমলদাকে ফোন করি। কিছুটা ভরসা পাই। মনোজ কাকুকে ফোন করি। কিছুটা ভরসা পাই। রণজিৎ কাকুকে ফোন করি। কিছুটা ভরসা পাই।

এভাবে আশা-দুরাশার দোলাচলে ২০১৭ সালের মার্চ মাস শেষ হয়ে যায়। সিনেমার গল্প তখনো রেডি হয় না। টাকারও কোনো খবর পাই না। ধীরে ধীরে আমি হার্ডলাইনে হাঁটা শুরু করলাম। জাকিরকে সরাসরি বলে দিলাম- আমি জমি বিক্রি করব। তুই না রাখলে আমি অন্য কাউকে বলি! কী করবি চিন্তা-ভাবনা করে আমাকে শিগগির জানা। আমি কিন্তু আগামী সপ্তাহে দলবল নিয়া বাড়ি আসতেছি।

---------------- চলবে--------------------

৪ জুলাই ২০১৯

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: পেছনের গল্পটাও অতি চমৎকার।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: পেছনের গল্পটাও অতি চমৎকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.