নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মহুয়া গাছটা!

২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:১৯

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম ছিল একটি শিমুল গাছের সঙ্গে। আর আমাদের আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের প্রেম ছিল মহুয়া গাছের সাথে। সায়ীদ স্যারের বয়স যখন দশ বছর, তখন স্যারের বাবা ভারত থেকে একটি মহুয়া গাছ এনে লাগান পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ প্রাঙ্গনে। দশ বছরের বালক সায়ীদ তখন থেকেই সেই মহুয়া গাছের সাথে প্রেম শুরু করলেন। এডওয়ার্ড কলেজের মহুয়া গাছটির বয়স এখন ৭০ বছর। গতকাল সায়ীদ স্যারের বয়স ৮০ বছর পূর্ণ হয়েছে। অর্থ্যাৎ সায়ীদ স্যারের প্রেমিকার বয়স স্যারের চেয়ে দশ বছর কম।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর সায়ীদ স্যারের খুব একটা পাবনা যাওয়া হয় না। আসলে সময় করতে পারেন না। ওদিকে পুরনো প্রেমিকার স্মৃতি স্যার কিছুতেই ভুলতে পারেন না। সারাক্ষণ নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের পেছনে সময় ব্যয় করেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বয়স যখন দশ বছরে গড়ালো, সায়ীদ স্যারের বয়স তখন পাক্কা পঞ্চাশ। হাফ সেঞ্চুরি। স্যারের আবার শখ হলো প্রেমিকাকে কাছে পাবার।

এডওয়ার্ড কলেজের পুরনো প্রেমিকাকে তো আর উঠিয়ে আনা যায় না। তাই বাংলা মটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে আবারো একটি গাছ লাগালেন। এটিও মহুয়া গাছ। নতুন প্রেমিকা বয়সে নবীন কিন্তু সেই নবীনে ভর করে স্যার আরো কর্মঠ, আরো পরিশ্রমী হয়ে উঠলেন। ধীরে ধীরে কেন্দ্রের প্রাঙ্গনে লাগানো এই মহুয়া গাছটির সাথেও সায়ীদ স্যারের একদম মাখামাখি প্রেম হতে লাগলো।

মানুষ যখন প্রেমে থাকে তখন তাকে প্রতিরোধ করার সাধ্য কারো নাই। সায়ীদ স্যার আর তাঁর এই নবীন প্রেমিকা মহুয়া গাছটির প্রেমও ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে বংশবিস্তার করলো। সুযোগ পেলে আমরাও প্রেমিকা নিয়ে এই মহুয়া গাছের তলায় জড়ো হতাম আড্ডা দিতে। কেন্দ্রের মহুয়া গাছটির সাথে আমাদেরও দীর্ঘদিনের প্রেম হয়ে গেল। স্যারের মহুয়া গাছটির সাথে আমরাও যে প্রেমে ভাগ বসিয়েছি, এটা দেখে স্যার বরং আরো খুশি হলেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আমাদের মত যারাই আসেন, তাদের প্রায় সবার কোনো না কোনো প্রেমের স্মৃতি আছে এই মহুয়া গাছকে ঘিরে।

আজ ২৬ জুলাই ২০১৯, সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে সায়ীদ স্যারের প্রিয় মহুয়া গাছটি হঠাৎ ধপাস করে পরে গেল। মাটিতে আছড়ে পরেই মহুয়া গাছটি মারা গেল। মহুয়া গাছটির হঠাৎ এভাবে মৃত্যুতে আজ আমি প্রথম সায়ীদ স্যারের চোখে অশ্রু দেখলাম। মহুয়া গাছটির জন্য স্যারের ভীষণ ভীষণ মন খারাপ। যৈবতী প্রেয়সীর জন্য স্যারের চোখে জল!

গতকাল ছিল সায়ীদ স্যারের ৮০তম জন্মবার্ষিকী। আর মাত্র একদিন পরেই ত্রিশ বছর বয়সী যৈবতী মহুয়া গাছটির এভাবে হঠাৎ দেহত্যাগ করায় স্যারের মন খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। স্যার আজ আমাদের সাথে আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে গাছটির পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির দরজা খুলে অনেকক্ষণ প্রেয়সী গাছটিকে দেখছিলেন। স্যারকে স্বাভাবিক করার জন্য উজ্জ্বল, নয়ন, নাজলাদের সাথে আমিও স্যারকে নতুন কী গাছ লাগানো যায়, তাই নিয়ে কথা বলছিলাম।

স্যার বললেন, 'এখানে একটা বকুল গাছ লাগিয়ে দাও। যদিও বকুল গাছ বড় হতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু জায়গাটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের বিল্ডিংয়ের সৌন্দর্য অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে। শুধুমাত্র এই গাছটির জন্য আমি এখানে একটা সবুজ চত্বর রেখেছিলাম। মহুয়া গাছটি দেখে আমার নয়ন জুড়িয়ে যেত। খুব খারাপ লাগছে। সামনের দিকে আরেকটা শেফালি গাছ লাগিয়ে দিও। যাতে জায়গাটা কভার করে। সেই দশ বছর বয়স থেকে মহুয়া গাছের সাথে আমার সম্পর্ক। ভুলবো কেমনে'।

-------------------
২৬ জুলাই ২০১৯

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১:৩৮

মা.হাসান বলেছেন: এ মুহূর্তে ঢাকার বাইরে না থাকলে যেয়ে দেখে আসার চেষ্টা করতাম। ওই গাছটাকে নিয়ে আসলে আমাদের অনেকেরই অনেক স্মৃতি আছে। ভেঙে পড়ার খবরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমরা এক সময় থাকবো না। বকুল আর শেফালীগাছদের নিয়ে নতুনদের অনেক স্মৃতি গড়ে উঠুক এই কামনা রইলো।

২| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ২:২২

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: গাছটা ভেঙ্গে পড়ার খবর জেনে খারাপ লাগছে। চোখের সামনে থাকা কোনো গাছ, কোনো মানুষ, পশু হঠাৎ নাই হয়ে গেলে বা মারা গেলে মন খারাপ হয়। আর সেটা যদি প্রিয় হয় তাহলে তো.....

৩| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: মহুয়া গাছের বদলে বকুল গাছও মন্দ নয়।

৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৩

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সাঈদ স্যারের মহুয়া গাছটার জন্য আপনার লেখার পড়ে আমারও মন খারাপ হল, আসলে ভালবাসার কোন জিনিস হারালে এভাবেই মন খারাপ হয়।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ১১:২৬

বিজন রয় বলেছেন: বেশ তো!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.