নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের মন থেকেই লিখি। কাউকে হেয় করার জন্যও না কাউকে উদ্দেশ্য করেও না। মানুষ মাত্রই ভুল, ভুল হলে শোধরিয়ে দিবেন; আশা করি।

রেযা খান

রেযা খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সঠিক নিয়মে যাকাত দিই!

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:১৭

যাকাত হল ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। এটা হল মুসলমানদের উপর অর্পিত আর্থিক ইবাদত এবং ইসলামী রাষ্ট্রের রাজেেস্বর অন্যতম উৎস। এটি সঠিকভাবে আদায়ের মাধ্যমে যেমন অফুরন্ত সাওয়াব অর্জন করা যায় তেমনি দারিদ্র দূরীকরণও সম্ভব।

যাকাত হল মূলত আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য সম্পদ পবিত্র করণের উদ্দেশ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার কারণে কোন অভাবী বা মিসকীনকে নগদ অর্থ বা সম্পদ দান করা। আল্লাহ তা’আলা কেবল উম্মতে মুহাম্মদীর উপর যাকাত ফরজ করেছেন তা নয় বরং তিনি পূর্রবর্তী নবীগণের উপরও যাকাত ফরজ করছেন। এই প্রসঙ্গে সূরা আম্বিয়ার ৭৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে “আমি তাদের ইমাম বানিয়েছি, তাঁরা আমারই বিধান অনুযায়ী মানুষকে পরিচালিত করে; আমি ওহীর সাহায্যে তাদের সৎ কাজ করার, নামায় কায়েম করার ও যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছি।” এই রূপ আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদী তথা আমাদের উপরও যাকাত ফরজ করছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৪৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে “ তোমরা নামায আদায় কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” এভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে ৮২ বার যাকাতের কথা বলছেন।

আল্লাহ তা’আলা যাকাতকে এতো গুরুত্ব দেয়ার পেছনে একটা উদ্দেশ্য নিহিত। তা হল- যাকাত আদায়ের মাধ্যমে বান্দাহ মাল (সম্পদ) পবিত্র করবে এবং দারিদ্র দূরীকরণে সঠিক ভূমিকা পালন করবে। দারিদ্র হলো আমাদের দেশের প্রধান শত্রু। সমাজের জন্য এটা একটা অভিশাপও বটে। দারিদ্রের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি। এই দারিদ্রের হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করার জন্য রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আদেশে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিককে আটটি খাতে যাকাত প্রদানের আদেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, নিসাব বলতে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপ্য অথবা ৩০ টি গরু বা ৪০ টি ছাগল বা ৫ টি উট কিংবা ২৬ মন ১০ সের শস্যের সমপরিমান সম্পদ পূর্ণ এক বৎসর মালিকানায় থাকাকে বুঝায়। আর যাকাতের খাত গুলো হলো-
১.ফকির,
২. মিসকীন,
৩.যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী,
৪.নও মুসলমানদের মন জয় করার জন্য,
৫. অন্যের দাসত্ব হতে মুক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ,
৬. ঋণগ্রস্থের ঋণ পরিশোধের জন্য,
৭. আল্লাহর রাস্তায় এবং
৮. মুসাফির।

আমরা উল্লেখিত আটটি খাত পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই এর মধ্যে ছয়টি খাতই দারিদ্র দূরীকরণে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। এই কথা প্রতীয়মান হয় যে, দারিদ্র দূরীকরণে যাকাত হলো প্রদান হাতিয়ার।

কিন্তু এতদ:সত্ত্বেও আমাদের দেশে দারিদ্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি সঠিক নিয়মে যাকাত প্রদান না করা। অন্তত্য দুঃখের বিষয় যে, বর্তমানে যাকাত প্রদানের যে প্রথা চালু হয়েছে; বলতে গেলে তা লোক দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়। যাকাত দেয়ার আগে প্রচারনা চালিয়ে, সরাদিন রোজাদার গরীব লোকদের খাঁ খাঁ রোদে দাড় করিয়ে রেখে ৫০ টাকা ১০০ টাকা যেমন দিতে দেখা যায়। বাজারে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি নামের নিকৃষ্ট পন্যও বিক্রি করতে দেখা যায়, যা ক্রয় করে যাকাতদাতারা বিলি করেন। হতবাক হয়েছি! যাকাত নিতে গিয়ে , পদদলিত হয়ে মানুষ মরা যেতে দেখে! এই নিয়ম গুলোর সংস্কার চাই!!

আমাদের দেশে যে নিয়মে যাকাত আদায় করা হয় তাতে কোন পরিবার বা লোক স্বচ্ছল হতে পারে না। অথচ যাকাত এমনভাবে দেওয়া উচিত পরবর্তী বছর যাতে যাকাত গ্রহীতা লোক বা পরিবার নিজেই যাকাত আদায় করতে পারে। এই প্রসঙ্গে হযরত ওমর ফারুখ (রা.) বলেন- “ যখন তোমরা ফকির-মিসকীনদের কোন কিছু দেবে, তখন তাকে ধনী বানিয়ে দাও”। ইমাম নব্বী বলেন- “ফকির বা মিসকীনদের এতটুকু পরিমাণ সম্পদ দিতে হবে যাতে তারা অভাবের গ্লানি হতে মুক্তি পায় এবং ধনী ব্যক্তির পর্যায়ে এসে উপনীত হয়।” এই মতের উপর সকল ইমাম ঐক্যমত হয়েছেন।

ছোট্ট একটি উদাহরণ দিতে চাই, ধরা যাক কোন ইউনিয়নে ১৫ জন যাকাত দাতার মোট যাকাতের পরিমাণ ৫,০০,০০০/= (পাঁচ লক্ষ টাকা)। তারা যদি সবার টাকা একটি ফান্ডে রেখে অত্র ইউনিয়নের সবচেয়ে গরীব ৫টি পরিবার বাছাই করে প্রতিটি পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে দান করে তাহলে উক্ত পরিবারগুলো দাদিদ্রের অভিশাপ হতে মুক্তি পাবে। কেননা একলক্ষ টাকা দিয়ে অবশ্যই কোন আয়ের পথ বের করে স্বচ্ছল হওয়া যায়। এভাবে প্রতিবছর একটি ইউনিয়নের ৫টি পরিবার দারিদ্রতা হতে মুক্ত হলে সারাদেশে ২২,৭৭০টি পরিবার দারিদ্রতা হতে মুক্তি পাবে (দেশে ইউনিয়ন সংখ্যা ৪,৫৫৪টি)। প্রতিবছর ২২,৭৭০টি পরিবার দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলে খুব অল্প সময়ে আমাদের দেশ হতে দারিদ্রতা দূর করা সম্ভব হবে। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং সঠিক নিয়মে যাকাত প্রদান।
আসুন আমরা সঠিক নিয়মে যাকাত প্রদান কির, দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়ি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.