নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের মন থেকেই লিখি। কাউকে হেয় করার জন্যও না কাউকে উদ্দেশ্য করেও না। মানুষ মাত্রই ভুল, ভুল হলে শোধরিয়ে দিবেন; আশা করি।

রেযা খান

রেযা খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারিয়ে যাচ্ছে মকতব , হারিয়ে যাচ্ছে ইসলামের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র

২০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০৮

ভোরে ঘুম থেকে উঠে মকতবে যেতাম। যাদের নামাজ পড়ার অভ্যাস ছিলো তারা আদায় করতো। অন্যরা অজু করেই মকতবে চলে আসতো। যারা প্রশ্রাবের পর পানি ব্যবহার করতো না তারা কোমর পর্যন্ত ধোয়ে নিতো কেনানা এক্ষেত্রে হুজুরের সতর্কতা ছিলো, পানি ব্যবহার না করলে কিংবা কোমর পর্যন্ত না ধোলে কঠোর শাস্তি দেয়া হতো। এখনতো ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ে সকালের নাস্তা করে। আমাদের সময় তেমন ছিলো না। ১/২ বেলা বিস্কুট কিংবা দু মুটো মুড়ি পকেট কিংবা কাপড়ের কোণায় নিয়ে খেতে খেতে দল বেঁধে পায়ে হেঁটে মকতবে চলে আসতাম। শীতকালে মাঝে মাঝে বিস্কুট/মুড়ির পরিবর্তে পেতাম সিদ্ধ আলু।

মকতবে মাথা সম উঁচু স্থানে কোরআন রাখার তাক ছিলো।যারা কোরআন পড়তো তাদের তাক ছিলো উপরে, আর যারা কায়দা পড়তো তাদের তাক ছিলো অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানে। মকতবে প্রবেশ করে হুজুরকে সালাম দিয়ে তাক থেকে কোরআন / কায়দা নিয়ে নিজ নিজ স্থানে বসে যেতাম।। হুজুর একে একে সবাইকে সবক (পড়া বাতলিয়ে দেয়া) দিতো। সবক দেয়ার পর, হুজুর মকতবের এই প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বেত নিয়ে হাঁটতো, আমরা উচ্চস্বরে পড়তাম। কেউ কথা বললে কিংবা অমনযোগী হলে অমনি পিঠে বেতের বাড়ি! সবক আদায় হলে হুজুরকে সবক দিয়ে, নতুন সবক নিতাম। আর না পাড়লে পুনঃরায় বাতলিয়ে নিতাম। আমাদের মকতবের পড়া অনেক দূর থেকেও শোনা যেতো। সবার পড়া শেষ হলে, ১৫-৩০ মিনিট মাসালা মাসায়েল শিখানো হতো। কালেমা ,নামাজ, রোজা,মৃত ব্যক্তির গোসল,কাফনের কাপড় পড়ানো, দাপন করার নিয়ম এসব বিষয়ের কুটি নাটি সব দেখিয়ে দেয়া হতো। এখনতো উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীকে পাঁচ কালেমা জিজ্ঞেস করলে আমতা আমতা করে। কেউ মারা গেলে হুজুরের সরনাপন্ন হতে হয় গোসল দেয়ানোর জন্য,কাপন পড়ানোর জন্য লোক খোঁজতে হয়, দাফন করানোর জন্য মানুষ ভাড়া করে আনতে হয়। অথচ এই সব বিষয় তখন মকতবেই শিক্ষা দেয়া হতো।
হুজুর শিখিয়ে দেয়ার পর কেউ একজন উচ্চ আওয়াজে বলতো, আমরা সবাই উচ্চস্বরে মুখে মুখে পড়তাম। বিষুদবার সকলের মনে খুশি থাকতো কেননা সেদিন কোরআন/কায়দা পড়ানো হতো না। পুরো সপ্তাহে যে মাসায়ালা শিখানো হয়েছে তার প্রেক্টিক্যাল ক্লাস হতো।

একজনে নামাজ পড়াতো, হুজুর তা দেখতেন ঠিকভাবে আদায় হচ্ছে কিনা ! ভুল হলে শোধরিয়ে দিতেন। আমাদের মকতবে উপরে ফ্যান ছিলো না, নিচে টাইলস বিছানো ছিলো না। প্রকৃতির আলোতে নিচে ছাটাই বিছিয়ে ছোট ছোট রেহাল/ব্যাঞ্চ এর উপর কোরআন/কায়দা রেখে বেশ মজা করেই পড়েছি।


আজো সে পড়া মনে আছে। মকতবের কেউ যেদিন কায়দা শেষ করে কোরআনের সবক নিতো সেদিন আনন্দে সবাইকে চনাচুর আর মুড়ি খাওয়ানো হতো।ছুটির সময় সবাই লাইন ধরে দাড়াতো, ছেলেরা টুপিতে আর মেয়েরা আঁচলে নিয়ে খেতে খেতে বাড়ি ফিরতো। যাদের সামর্থ ছিলো জিলাপী অথবা খেজুর খাওয়াতো। এসবে দিব্যি চলেছে আমাদের। সে মকতব এখন হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে ইসলামের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র।


[ছবিগুলো গুগলের সাহায্যে পাওয়া]

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:২৪

পিকো মাইন্ড বলেছেন: হুম। চিন্তার বিষয় ।

২| ২০ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:৪২

কাইকর বলেছেন: ঠিক বলেছেন।খুবই চিন্তার বিষয়।

৩| ২০ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৫৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সব কিছুই এক সময় হারিয়ে যাবে...

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২২

রেযা খান বলেছেন: ...... হারিয়ে যাবে ভালা লাগা আর ভালোবাসা

৪| ২০ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:১৬

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আমি মক্তবে যাইনি, তবে বাচ্চাদের পড়া কানে আসলে খুব ভাল লাগে। :)

ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকুক।

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২২

রেযা খান বলেছেন: ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকুক

৫| ২০ শে মে, ২০১৮ ভোর ৫:৩১

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আমি গেছি মক্তবে। তবে আমিসহ গ্রামের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের কাছে মক্তব ছিলো একটা ভয়াবহ আতংকের নাম। নুরানী চেহারার হুজুর পড়া না পারলে প্রকান্ড এক বেত নিয়ে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের পিটিয়ে চলতেন যতক্ষণ পর্যন্ত না ছেলেমেয়েরা মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। ঐ রকম পিটানোটা বাদ দিলে মক্তবের উপকারিতা আছে।

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৩

রেযা খান বলেছেন: এটা কখনো কাম্য নয়, ছোট ছোট কোমল মতি শিশুদের ক্ষেত্রে এই রকম ব্যবহার অনুচিত।

৬| ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয়। ছায়ার মতো শান্ত হতে হয়। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না। তারা শুধু আকাশ হতে চায়।
___ রুদ্র গোস্বামী

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৪

রেযা খান বলেছেন: ভালো বলেছেন দাদা।

৭| ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এখনকার অভিভাবকরা সন্তানদেরকে আরবি শিক্ষার ব্যাপারে খুবই উদাসীন।

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২১

রেযা খান বলেছেন: এখন আরবী পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়, তারপরও কেন জানি অপূর্ণতা রয়ে যায়।

৮| ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

ক্স বলেছেন: আমি কোনদিন মক্তবে যাইনি। কিন্তু আমার পরিবার আমার দ্বীনি শিক্ষার ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। তাই ইসলামের বেসিক জ্ঞানে ঘাটতি হতে দেননি কখনো।

২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২০

রেযা খান বলেছেন: হামমমম। তা তো অবশ্যই। পরিবারই তো মূল শিক্ষা কেন্দ্র, কিন্ত গ্রামের পরিবার তো তেমন শিক্ষিত লোক ছিলো না যার কারণে মকতবই প্রধান ছিলো।

৯| ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:১০

সুমন জেবা বলেছেন: রেযা খান ভাই,
আপনার লেখাটা পড়ছিলাম আর চোঁখের সামনে ভাসছিল সেই ছেলেবেলাটা..
আমাদের এই "মকতব" গুলো আসলেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ।
ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকুক এই কামনা ..

২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

রেযা খান বলেছেন: আমাদের এই "মকতব" গুলো আসলেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ।
ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকুক এই কামনা , ....... ভালো লেগেছে দাদা।

১০| ২০ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬

কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: ছোট বেলায় মক্তবে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আপনার লেখা পড়ে সেই স্মৃতি গুলো মনে পরে গেল। এখনকার ছেলে মেয়েরা সকাল বেলা ঘুম ভেঙ্গে আর মক্তবে যায়না, ঘুম ঘুম চোখে স্কুল এ যায়।

২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬

রেযা খান বলেছেন: হামমমম। তাই তো উচ্চ মাধ্যমিম শেষ হয়ে গেলেও আমরা ইসলামের মৌলিক জ্ঞান রাখি না। মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য তা লজ্জার বিষয়।

১১| ২০ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: স্মৃতি জাগানিয়া পোস্ট।

২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬

রেযা খান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.