নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ছোট মানুষ .... বুঝি কম

আর.হক

আর.হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিটাগাং টু বরিশাল ভায়া চাঁদপুরঃ কিন্তু লঞ্চ মিস….

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮





জীবনে কিছু ঘটনা থাকা উচিৎ যা স্মরনে থাকবে সবসময়। যা হবে স্বাভাবিকতা থেকে কিছুটা ভিন্ন। ভ্রমনের ক্ষেত্রে কিছুটা কষ্ট, নতুনত্ব, এডভেঞ্চার ইত্যাদি থাকালেই সে ভ্রমন হয় স্মরনীয়। সেরকমই একটি মনে রাখার মতো বিষয় চিটাগাং টু বরিশাল ভায়া চাঁদপুরঃ লঞ্চ মিস।



জরুরী কাজে চিটাগাং গিয়েছিলাম। তিন দিনের চিটাগাং সফরে প্রচন্ড ব্যস্ততার ফাঁকে শ্বাস ফেলাই দুরুহ হয়ে গিয়েছিলো। আগেও বেশ কয়েকবার চিটাগাং গিয়েছি, মোটামুটি ঘুরেছিও তবুও ঘুরার খুব ইচ্ছা থাকলেও ঘুরার মতো সময়ও পাবো কিনা সন্দেহে ছিলাম। ফলাফল তাই হলো, দুই দিনের কাজ শেষ করতে তিন দিন লেগে গেলো ফলে কখন আর ঘুরবো?



যেহেতু ঈদে বাড়ী যাই না তাই চিটাগাং হয়ে বরিশাল ঘুরে আসার প্লান বানিয়েই চিটাগাং গিয়েছিলাম। ২৫ আগষ্ট কাজ শেষ করে ২৬ তারিখ লক্ষীপুর মজু চৌধুরীর হাট হয়ে সী ট্রাকে যাওয়ার প্লান তখন হাতে। আগেও এ পথে চিটাগাং গিয়েছি তাই রাস্তা পরিচিত কিন্তু প্লান যে সময় মতো কাজে দিলো না। কাজের চাপে প্রথম প্লান বাতিল করতে হলো।



ঢাকা ঘুরে বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছাও নাই তাই বিকল্প পথ খুজতে হলো। সাথের আমার বাবার বন্ধু মানে আমার চাচা আছেন। তিনিও যাবেন বরিশাল অতঃএব চাচা ভাজিতা মিলে প্লান বানানো হলো। তার অভিজ্ঞতার আলোকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল। কিন্তু সমস্যা হলো বরিশালের বড় লঞ্চগুলো চাঁদপুর থামে না বরগুনা, ঝালকাঠি বা অন্য কোন রুটের লঞ্চের টিকেট কাটতে হবে কিন্তু চাঁদপুর থেকে কেবিন পাওয়া সম্ভবনা নাই তাই ঢাকা থেকে কেবিন না করলে লঞ্চে উঠে ঝামেলায় পড়ার সম্ভবনাই বেশী।

ঢাকায় ফোন দিয়ে এক বন্ধুর মাধ্যেমে কেবিন করালাম বরগুনার এম.ভি. বন্ধন লঞ্চে। সময় দেয়া হলো রাত ১০ টা থেকে ১০.৩০ মাঝে লঞ্চে থাকতে হবে। আমরা তো চিটাগাং, লঞ্চ ধরতে হবে চাঁদপুর এসে। অনেক রাস্তা তাই ৫ টার মাঝে চিটাগাং থেকে রওয়ানা হওয়ার চিন্তা করলাম কিন্তু বেরুতেই দেরী হয়ে গেলো একঘন্টা।



সন্ধ্যা ৬ টা। চিটাগাং এর আলো আধারীর শহর থেকে ড্রাইভারসহ আমরা ৫ জন রওয়ানা হলাম চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। চিটাগাং শহরের আলো আধারীর খেলা দেখে মনে হলো শহরটা সময় করে ঘুরে দেখতে আসতে হবে একবার। পাহাড় টিলার মাঝ দিয়ে গড়া উচু নিচুর শহরটাকে বেশ মনোরম লাগছিলো। মনে হচ্ছিল বরিশাল যাওয়ার প্লান স্থগিত করে থেকে যাই আরো একটি দিন চিটাগাং শহরে শুধু ঘুরার জন্য কিন্তু মনটা তখন নিজের শহরে চলে গিয়েছিলো তাই আর পিছনে ফেরার সুযোগ নাই। স্টেডিয়াম, নিউমার্কেট, খুলশী, অলংকার, সিটি গেট পার হয়ে বের আসলাম শহর থেকে কিন্তু জ্যাম তখনো আমাদের পুরোপুরি ছাড়েনি।



টেনশনে পড়ে গেলাম মাত্র ৩.৩০ থেকে ৪ ঘন্টায় চাঁদপুর গিয়ে লঞ্চ ধরতে পারবো কিনা? দক্ষ ড্রাইভার জ্যাম কাটিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মিরশরাই পর্যন্ত থেমে থেমে জ্যাম লেগেই ছিলো চেষ্টা থাকলেও খুব বেশী এগুনো যায় নাই। রাস্তার উভয় পাশে ট্রাকের বিশাল সাড়ি গলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের গাড়ী কিন্তু পথ যেন শেষ হয় না। ফেনী পার হয়ে যখন কুমিল্লায় প্রবেশ করলাম তখন ৯ টা বেজে গেলো। গাড়ীতে সিএনজি লোড করে আবার শুরু হলো যাত্রা, রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা কিন্তু ট্রাকের লম্বা সিরিয়ালে বারবারই গতি স্লো করতে হচ্ছে গাড়ীর।



তখনো অনেক পথ বাকী, এতো লম্বা পথ কম সময়ে পার হয়ে যথাসময়ে লঞ্চে উঠতে পারার ব্যাপারে সন্দেহে পরে গেলাম আমরা। চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর দক্ষিন পার হয়ে আমরা যখন কুমিল্লা বিশ্বরোড গিয়ে পৌছলাম তখন ঘড়ির কাঁটা ১০.০৮ এর নির্দেশ করছে। চাঁদপুরের রাস্তায় প্রবেশ করেই আবার ঘন্টায় ৬০ কি.মি এ ছুটে চলছিলো আমাদের ছোট্ট গাড়ীটি। কিন্তু অপরিচিত সরু রাস্তায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও গতি স্লো করতে হচ্ছিল ড্রাইভারকে বারবার। হাতে তখন ৩০ মিনিট সময় কিন্তু রাস্তার পাশের মাইল মিটার বলে পথ পাড়ি দিতে হবে আরো ৫২ কি.মি। কুমিল্লা বিশ্বরোড থেকে চাঁদপুর শহরে ৫৭ কি.মি।



ড্রাইভার বেশ চেষ্টা করছিলেন টাইম মতো লঞ্চ ধরার, আমরাও ইচ্ছা করছিলাম যাতে লঞ্চ ধরতে পারি কারণ, এই রাতে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল গামী অন্য কোন লঞ্চ বা ভিন্ন পথ নাই আবার লঞ্চের কেবিন করা। বাবার বন্ধু মানে চাচা পরদিন গিয়ে কলেজ ধরবেন আর আমি দীর্ঘ দিন বরিশাল না যাওয়ায় বরিশাল যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। চাচা আর আমার কারোরই এখান থেকে ঢাকা ফেরার কোন ইচ্ছা নাই তাই যাই হোক শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলছিলো।তারচেয়ে বড় কথা…. এতোদূর পথ পাড়ি দিয়ে যদি লঞ্চ ধরা না যায় তবে তা হবে সবার জন্য খুব কষ্টদায়ক।



আরো ৪৫ কি.মি পথ বাকী সে সময় কথা বললাম লঞ্চের সুপার ভাইজারের সাথে। লঞ্চ আরো বেশ কিছু সময় আগে ঘাটে এসে অপেক্ষা করছে, দ্রুত আমাদের যেতে বললেন উনি। অপেক্ষার দুটি কারণ ১. আমরা পৌছি নাই আর ২. মেঘনা ট্রেনটার যাত্রী নিয়ে তারা যাবে। লঞ্চে আমাদের উঠার কথা ১০ থেকে ১০.৩০ মাঝে কিন্তু তখন ১১ টা ছুই ছুই করছে। মেঘনা ট্রেন তখনো এসে পৌছায় নি বলে লঞ্চ ধরার কিছুটা আশা ছিলো। লঞ্চের সুপার ভাইজারও তাগাদা দিচ্ছিল দ্রুত যাওয়ার জন্য।কিন্তু তখনো ৩০ কি.মি পথ বাকী। মাঝখানে লঞ্চ কিছুটা ওয়েট করার জন্য চাঁদপর শহরে পরিচিত এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে ঘাটে যেতে বললাম, সে যাতে কিছুটা সময় লঞ্চ ওয়েট করাতে পারে।



ইতিমধ্যে মেঘনা ট্রেন চলে আসছে, আমাদের পথ তখনো ১৫ কি.মি ঘড়ির কাটায় তখন ১১.১৫ বাজে। লঞ্চের সুপার ভাইজারকে ফোন দিলাম আর কিছুটা সময় অপেক্ষা করা যায় কিনা? লোকটা ভালো মানুষ…. আমাদের জন্য অপেক্ষা করেছেন আর ৫ মি. ওয়েট করবেন এর মাঝে পৌছতে পারলে হবে, আর ওদিকে চাঁদপুরের বন্ধুও তার দুইজন বন্ধু নিয়ে চেষ্টা করলো কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম লঞ্চ ধরা খুব কঠিন হবে। তবুও পেছনে ফেরার আপতত কোন ইচ্ছা নাই তাই ছুটে চললাম লঞ্চঘাটের দিকে।যখন বুঝলাম লঞ্চ পাওয়ার আর সম্ভবনা কম তখন আর সুপার ভাইজার আর বন্ধুর সাথে কথা বললাম না , দেখি ঘাটে গিয়ে কি অবস্থা দাড়ায়।



শহরের সম্ভবতঃ একদম শেষ প্রান্তে লঞ্চঘাট, নিস্তব্দ শহরটা পাড়ি দিয়ে যখন ঘাটে গিয়ে পৌছলাম তখন ঘড়ি ১১.৪২ এর সংকেত দিচ্ছে। নাহ…….. আর পারলাম না। এতো লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ধরতে পারলাম না বরিশালের পথে যাত্রার বাহনটি। ভীষন কষ্ট লাগছিলো সবার, ড্রাইভার এতো কষ্ট করেও লঞ্চ ধরাতে পারলো না। আমরা কেউই প্রথমে নামলাম না গাড়ী থেকে। চাঁদপুরের বন্ধুরা গাড়ী কাছে আসার পর নেমে তাদের জড়িয়ে ধরলাম, অনেকদিন পর দেখা তাদের সাথে। যাক লঞ্চ ধরতে পারি নাই তাতে দুঃখ করেও লাভ নাই কিন্তু তাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।



যেহেতু ঢাকা ফেরার কোন ইচ্ছা ও সুযোগ আমাদের দুজনেরই নেই তাই বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করলাম। ঘাটে খবর নিয়ে জানা গেলো বিকল্প উপায়….. ঢাকা থেমে আরেকটি লঞ্চ আসবে রাত ১২.৩০ থেকে ১ টার মাঝে, যদিও সেটা বরিশাল পর্যন্ত পৌছবে না তবুও কাছাকাছি গেলে ভিন্ন পথে বরিশাল পৌছা যাবে অতএব আর দেরি নয় সিদ্ধান্ত নিলাম দেরি হলেও এ লঞ্চেই যাবো। চাচা চা আর পান খেলেন আর আমার বন্ধু পাশের হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসলেন যাতে লঞ্চে উঠে রাতের খাবার খেতে পারি।

নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটে বসে চাচা আমি আর দুইজন বন্ধু মিলে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম ১ ঘন্টা। বেশ কয়েকটা লঞ্চ এসে কয়েকজন যাত্রী উঠা নামা করিয়ে আবার প্লাটফর্ম ত্যাগ করে গন্তব্যে ছুটে চললো কিন্তু আমাদের লঞ্চ যে এখনো আসলো না…… আবার সন্দেহে পড়ে গেলাম শেষ পর্যন্ত কি যেতে পারবো?



১.০৫ বাজে তখন, অন্ধকার নদীর পানি কেটে কেটে এগিয়ে আসলো আমাদের কাংখিত লঞ্চ।বন্ধুদের বিদায় দিয়ে আমরা দুজন লঞ্চের কেবিনে গিয়ে উঠলাম। যাত্রী তুলনামুলক কম তাই কেবিন পেতে ঝামেলা হয়নি।

ফ্রেস হয়ে খাবার দাবার শেষ করে লঞ্চের হাওয়া খাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম প্রিয় শহরে প্রিয় মানুষদের কাছে যেতে কতই না কাঠখর পোড়াতে হচ্ছে, তবুও সান্তনা পরদিন তাদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবো।



লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে লঞ্চ মিস করে আবার গন্তব্যে পৌছার চেষ্টার ফলে একটা ব্যবস্থা হলো যাতে কষ্ট ছিলো, ঝামেলা ছিলো, উৎকন্ঠা, অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিলো কিন্তু তবুও নতুন কিছু অভিজ্ঞতাকে ধারন করার ফলে সেসব কিছু নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। যদি গন্তব্যের পথে যাত্রা করতে না পারতাম তাহলে হয়তো এ কষ্ট আরো বেড়ে যেতো কিন্তু এতো কিছুর পর যখন যাত্রা করতে পারলাম তখন আর কোন কষ্টই কষ্ট রইল না।

এখানেই হলো স্বার্থকতা,,,,,,,,,,,,,,,,,, সকলের পথ চলা শুভ হোক।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আকরাম বলেছেন: শুভ হোক পথ চলা।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪

আর.হক বলেছেন: শুভ হোক পথচলা

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২০

একজন আরমান বলেছেন:
ম্যা বাই সামনের ঈদে বরিশাল গেলে ডাক দিয়েন কোলোম।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪

আর.হক বলেছেন: অবশ্যই ম্যা বাই

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

শুভ কামনা রইল

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৫

আর.হক বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: আপনি মেঘনা ট্রেনে কষ্ট করে আসলেই আর এরকম হত না। :(

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৩৬

আর.হক বলেছেন: মেঘনা ট্রেন যে আসবে তাই তো জানতাম না। ঐ খানে এসে শুনলাম মেঘনা নামক ট্রেনের অপেক্ষা করঝে লঞ্চ

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪০

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: ওইটা বিকাল ৫ টায় চিটাগাং হতে ছাড়ে, ১০-১১ তার মধ্যে চাঁদপুর আসে।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৫

আর.হক বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.