নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন অসুস্থ,ছন্নছাড়া ও বিকারগ্রস্ত প্রেমিক!

রিয়াজ হান্নান

So I believe, someday I will be happy.

রিয়াজ হান্নান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- লাশকাটা ঘর ( চতুর্থ পর্ব)

২৬ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৬

রফিক চাচার সাথে অনেক্ষন কথা হল। রফিক চাচার সেদিনের কান্নার কথা জানতে চাইলে তিনি কোন রকম ইতস্ততা ছাড়াই গড়গড় করে বলেই যাচ্ছিলো তার জীবন কাহিনীঃ-

ছোটবেলা থেকে গায়ের স্কুল,নদীতে সাতার,পাখির বাসা ভাঙা,ঝড়বৃষ্টি তে আম কুড়িয়ে কেটে গিয়েছিলো প্রায় সতেরোটি বছর। বাবার হাত ধরেই শহরে আসা হল,বাবা একটা বাড়ির দারোয়ান ছিল,আমি বাসায় থাকতাম।

একুশ বছরে পা দেয়ার পর কোন এক মাসের দিকে গ্রাম থেকে মা আর দুই ছোট বোন এসেছিলো আমাদের কাছে বেড়াতে। এক সপ্তাহ পর সে মাসের বারো তারিখে গ্রামে ফেরার পথে একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মা বাবা ছোট দুই বোন মারা যায়। আমি তখন ও জানতাম না,প্রায় দুই সপ্তাহ পর যখন বাসা ভাড়া না দেয়াতে বাসা থেকে আমাকে বের করে দেয়া হল তখনই গ্রামে ফিরে গেলাম। সেখানেও বাবা মা বোনদের না পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। পরে এক চাচা এসে জানালো বাবা মায়ের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর একজন নাকি বাবার পকেটের মানিব্যাগ থেকে গ্রামের ঠিকানা বের করে চাচাকে জানিয়ে গেছে তাদের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছে।

যাদের কেউ খোজ করেনা,যারা গরিব তাদের লাশ ও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এমন শত শত লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়। আমি নিজেও এমন কয়েকটা বেওয়ারিশ লাশের জানাজার নামাজ পড়েছি। অদ্ভুত লাগে!!

যে লোকটা জানিয়ে গেছিলো বাবা মায়ের মৃত্যু হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় তাকে যদি পেতাম বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষন উচ্চ হাসি দিতাম। আমি খুব বেশি হাসতে পারিনা। বাবা মা ও বোনদের মৃত্যু হয়েছে তাও সড়ক দুর্ঘটনায়,যাক খবরটা তো জানতে পারলাম যে তারা আর বেঁচে নেই। এর চেয়ে দারুণ আর কি হতে পারে? এমন অনেকে তো আছে যারা এখনো কোন খোজ পায়নি। এই দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছিলো খুব।

সকল কষ্ট গুলো বুকের মাঝে মুড়িয়ে ফিরে আসলাম এখানে,একুশ থাকতেই। পকেটে কোন টাকা পয়সা নেই। এভাবেই বেশ কয়মাস কেটে যায়। মায়ের দূরসম্পর্কের এক ছোট ভাইয়ের সাথে এখানে পরিচিত ছিলো আমার। উনি লাশকাটা ঘরে চাকরি করত। উনার সাথে কথা বলে একটা চাকরীর ব্যবস্থা হল লাশকাটা ঘরে।

এভাবে লাশকাটা ঘরে লাশ কাটতে কাটতে কেটে গেলো প্রায় পঁচিশটি বছর। এর মাঝে নিজের বিয়েটাও করতে পারিনি। যে মানুষের হাতে মৃত লাশ রক্তাক্ত হয় সে মানুষের বিয়ে করা উচিৎ না। সংসার করা যেনতেন ব্যাপার না। যারা লাশ কাটে তারা স্বপ্নেও বোধহয় লাশ কাটার স্বপ্ন দেখে পার করিয়ে দেয় দীর্ঘ হওয়া রাত গুলো। রোজ রাতে নিয়ম করে স্ত্রীর ছোঁয়া নিয়ে সকালে উঠে লাশকাটা বোধহয় কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.