নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতিটি কবিতাই কবির শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত এবং প্রত্যেক শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত এক করলেই সৃষ্টি হয় কবির জীবন। আপনি প্রেমে পড়ুন সেই শ্রেষ্ঠ মূহুর্তের। সত্যি কোরে একবার প্রেমে পড়ে দেখুন, কবিতার কাছে মাথা নত হয়ে আসবে আপনার; আপনি দায়গ্রস্ত হয়ে পড়বেন শব্দের কাছে।

রিকেল

রিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৯



স্মৃতিময় বোন আমার,

নিশ্চই জানতে চাচ্ছিস স্মৃতিময় লিখে সম্বোধন করেছি কেন? উত্তর এই— তোকে স্মৃতির মূহুর্ত করে রাখতে ভাল লাগে বলে, তোর দেয়া স্মৃতিগুলো বড় ভালোবাসি বলে। এখন নিশ্চয় চোখ বড় বড় করে আর চিঠির দিকে তাকিয়ে থাকবি না? ওহ্! তোরতো এখন চোখ নেই, শরীর নেই। আছে আত্মা— আছে দুঃখ! আত্মা দিয়ে দেখিস— দুঃখ মেখে পড়িস।



দুজনে একই ক্লাসে পড়তাম বলে প্রথম প্রথম তোর একটু আধটু লজ্জা হত। আমি চাইতাম না— ক্লাসে তুই লজ্জাবতি হয়ে থাকিস, মেঘ করে বসে থাকিস বান্ধবীর সাথে। চাইতাম— খেলতে খেলতে তুই স্কুলে যাবি, খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরবি, সবুজ মাঠে খেলবি— ধুলোর উঠোনে খেলবি। কিন্তু, তুই খেলতিশ না। আমার বড় ইচ্ছে হত তুই খেলবি। আমি যদিও ছোট তবে আমার চাওয়ারা ছোট ছিল না। অনেক অনেক বড়— দীর্ঘ— প্রশস্ত। খুব বেশি গভীর ছিল— যেন আকাশ ছুঁতে চাইতো, নীল ধরতে চাইতো; যেন সাগর হতে চাইতো, মুক্তো কুড়োতে চাইতো।



এখন গ্রামে প্রচন্ড শীত পড়ছে। সরল মানুষ গুলো এখন খেতের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই পুব আকাশে চাঁদ উঠতে শুরু করেছে। এখন সূর্য আর চাঁদের মাঝ বরাবর আমি দাঁড়িয়ে আছি আমাদের মামা বাড়ির ছাদে। আমার মনে হচ্ছে সূর্যটা আমাদের হাই স্কুলের পাশে জলকদরের জলে ডুবে যাচ্ছে আর আমাদের পুরনো বিহারের একটু দূরে যে পাহাড়টা ছিল তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে ধবধবে শাদা চাঁদটা। তোকে ভুল লিখছি না তো !
তুই বলতিস— রিকেল, চাঁদ কি আকাশে দাঁড়াতে পারে? চাঁদের কি পা থাকে?
আমি জানতাম, তুই রম্য করে আমার সাথে কথা বলতিস। আমি তোর রম্য প্রশ্নের উত্তর করেছিলাম ঠিক তোর মত রম্য করে।
বলেছিলাম— পা বিহীন মানুষ যদি দৌড়াতে পারে, তবে পা ছাড়া চাঁদও নিশ্চিত দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।


আমি এখন ভাবছি আর তোকে মনে করে করে লিখছি। লিখার শুরুতে মনে মনে বলছিলাম—
'সূর্য তুমি অস্ত যাও, জ্যোৎস্না আসুক নেমে।'

এখন পুরোপুরি জ্যোৎস্না। চাঁদটা যে তরুণ বয়সে মারা গেল তার জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। শুধু চাঁদের জন্য কেন, অসময়ে ঝরে যাওয়া কোন জীবনের জন্যও খুব বেশি সময় মানুষের চোখে জল জমে থাকে না। আমি চাঁদ নিয়ে ভাবছি, একটি চাঁদনি রাতের সময় নিয়ে ভাবছি তা কিন্তু সত্যি নয়। ভাবছি একটি শীতদুপুরের বিকেল। যেটা নয় বিকেল, নয় দুপুর; এমন একটি খামখেয়ালি সময়ের ভিতর আমি ডুবে আছি ....



'তোর মেহেদী গাছটার নিচে বলব না, মেহেদী গাছটার ডান পাশে বসেই চুল শুকোচ্ছিস তুই। তোর পাশের ফুলদানিতে ফুটে আছে, না না ফুটে নেই ঝরে আছে; না না ফুটেও নেই, ঝরে নেই এমন একটি রুগ্ন অবস্থা সকালের ফোটা নয়নতারার। তার পাশেই বেড়ে উঠছিল লাউগাছের ডগা আর কেমন যেন ধীরে ধীরে আঁকড়ে ধরছিল ছোট্ট মেহেদী গাছের ডালগুলো ।
ঘরের গন্ধ শুঁকে বুঝলাম, আজকে তুই শ্যাম্পু করেছিস। আমার ভালো লাগত তোর শ্যাম্পু করা চুল, তাই তুই আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতিস। যদি হিংসে করে তোর গন্ধময় চুলে ময়লা মাখিয়ে দিই!


সারা ঘর উঁকি মেরে খোঁজলাম, তোকে পাইনি। ছাদে এসে দেখি,
কালো কোঁকড়ানো চুলগুলো খুলে দিয়ে শুকোতে বসেছিস। আমি তোকে দেখে দরজার আঁড়ালে লুকিয়ে রইলাম। তুই মেহেদী পাতাকে কি যেন বলছিস, নয়নতারার পাপড়িতে হাত বুলোচ্ছিস, আর লাউয়ের কোমল ডগাকে খুব মন করে বকছিস। তোর এই পাগলি কান্ড দেখে আমি কি আর না হেসে পারি, বল?
আঁড়ালে হাসছিলাম, কিন্তু সে হাসি আর গোপন রইল না। বুঝতে পেরেছিস আমি এসেছি।
আমার ডাক পড়ল— রিকেল একটু আয় তো, লাউ গাছের দুষ্টু ডগা গুলো একটু খুলে দিই, মেহেদীর কঁচি ডাল গুলো মুক্ত করে দিই, লাউগাছের গোঁড়ায় দুটো শক্ত খুঁটি পুতে দিই, একটু পানি দিই ফুলদানির তৃষ্ণার্ত মাটিতে।


এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে চাঁদ পাহাড় হতে মাথার উপর এসে দাঁড়াল বুঝতেই পারিনি। আমাদের ছাদটা এখন আর তোর মত নেই রে! মেহেদীর চারা নেই, লাউয়ের ডগা নেই, ফুলদানিতে নয়নতারা নেই; কেবল একটি শিমলা মরিচের গাছ আর জ্যোৎস্না জুড়ে হা হা কার!


ইতি
তোর ছোট্ট ভাই
লকেরি

[পুনশ্চ : তুই আমার নাম উল্টো করে ডাকতেই
ভালবাসতি ]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২

মাধব বলেছেন: অপূর্ব চিঠি। কতদিন হলো চিঠি লেখা হয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.