নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হইচই, হট্টগোল এড়িয়ে চুপচাপ, নিরিবিলিতে লুকিয়ে থাকতে ভাল লাগে।

রিম সাবরিনা জাহান সরকার

যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/

রিম সাবরিনা জাহান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ও মাগো, সান ডিয়াগো!-৪

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৪৪


আগের পর্ব ৩ পড়ুন
৪.
এরই মাঝে একদিন কনফারেন্সের ইচিং বিচিংয়ের ফাঁকে মিলে লাঞ্চে বেড়িয়েছি কয়েকজন। কাছেই রালফস্ নামের বড়সড় একটা সুপারমার্কেট আছে। স্যান্ডুইচ কিনে চিবোতে চিবোতে ফেরত যাচ্ছি। হঠাৎ চোখে পড়ল, ফুটপাথে এক উশকো খুশকো লোক কম্বল টম্বল বিছিয়ে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। তার কোলে হেলান দেয়া কাগজের সাইনবোর্ডটায় লেখা, ‘আমাকে রালফস্ থেকে চিকেন উইংস কিনে দিয়ে যাও’। গেরিটকে ইশারা করে বললাম, ‘বস তো দেখছি সেই রকম’। খঁচে থাকা গেরিট গাঁক গাঁক করতে করতে বলল, ‘কেন, অসুবিধা কি? যা খেতে চায়, পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে।‘ একটু দম নিয়ে যোগ করল, ‘আর ওর জায়গায় তুমি হলে তো ঠিকই লিখে রাখতে, ‘আমাকে বাসমতি চালের এক থালা ভাত দিয়ে যাও। নইলে চিকেন উইংসগুলো দিয়ে তাড়া করবো’। বলেই মুখ টিপে মশকরার হাসি হাসলো ল্যাবের বাঁজখাই মেজাজের পোস্টডক গেরিট। গালে বিশাল এক কামড় স্যান্ডুইচ থাকায় ঠা ঠা করে হাসতে পারছে না। হায়, আলুখেকো জার্মান এই বাঙ্গালকে ভাতের খোঁটা দেয়!

সেদিন বিকালেও আমরা চরম খোশ মেজাজে ছিলাম। চার কি পাঁচ তারা এক হোটেলে আফটার পার্টি হবে। ডিজে সহ। আগ্রহ নিয়ে এসেছি। এসে দেখি ডিজে ফিজে ঘোড়ার ডিম। লবিতে এক ছোকরা গিটার বাজিয়ে অনুরোধের গান গাইছে। ওদিকে যাদের জন্যে পার্টি সেই বিজ্ঞানীদের দঙ্গল ওয়াইন হাতে নিয়ে আমশি মুখে নিঃশব্দে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেন মুখ খুললেই জ্ঞান উবে গিয়ে কলসি খালি হয়ে যাবে। গিটারওয়ালা ছেলেটা খুব আড়ষ্ট ভঙ্গিতে নিচু স্বরে বলে যাচ্ছে, পরের গানে শ্রোতারা কি শুনতে চায়। ভেবে দেখলাম, আরে মওকা তো দারুন! উড়া ধুরা ঢিশটিং ঢিশটিং গান হাতড়াচ্ছি মনে মনে। কিন্তু দেরি হয়ে গেল। গেরিট ততক্ষনে পিঙ্ক ফ্লয়েডের একটা ক্লাসিকের নাম চেঁচিয়ে ছুড়ে দিয়েছে। উৎসাহী শ্রোতা পেয়ে ছোকরাও বাজালো জান প্রান দিয়ে। এদিকে আমি তক্কে তক্কে আছি। গান পেয়েছি। গানস ‘ন রোজেস। সুইট চাইল্ড ও’মাইন। ছেলেটা প্রশস্ত হাসিতে জানিয়ে দিল, অনুরোধ তার মনে ধরেছে। এক মুহূর্ত কি ভেবে সে হাওয়াই গিটার নামিয়ে পাশে রাখা ইলেক্ট্রিক গিটারটা প্লাগ-ইন করে নিল। বয়সে বছর সাত-আষ্টেকের বড় গেরিট অবাক হয়ে বলল, এ্যাই, তুমি আমাদের সময়ের গান টান শোনা শিখলে কোত্থেকে? তোমার তো পুরানো গান বলতে বড় জোর ব্যাক স্ট্রিট বয়েজ আর ব্রিটনি স্পিয়ার্স শোনার কথা। বাঁকা হেসে বললাম, তোমার সমান আমার একটা ভাই আছে। সেই সুবাদে টিনেজ পপ না শুনে ক্লাসিক রক শুনে বড় হয়েছি। শুনে গেরিটের কিছুটা হলেও তাক লেগে গেল। বেশ আমোদ পাচ্ছি। সায়েন্টিফিক আফটার পার্টি ব্যাপারটা একেবারে খারাপ লাগছে না। চলে। পরের ঘন্টা দুয়েক কলিগদের ওয়াইন গ্লাসের সাথে আমার কোল্ড কফির চিয়ারস চিয়ারস ঠোকাঠুকি আর গান বাজনা-দু’টোই চলল সমান তালে।

তারপর এক সকালে বহু অপেক্ষার সেই দিন চলে আসল। ঠিক হল উদেশ্যবিহীন ঘুরে ফিরে তারপর সোজা চলে যাব সাগর পাড়ে। বেশ খানিকটা দূরে নাকি দারুন একটা সৈকত আছে। ভাড়া করা বিশাল গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সবাই। গাড়ির কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দেখি বাইরেটা। দক্ষিন এশীয় আন্টিরা বেজায় রঙ্গিন সালোয়ার কামিজের সাথে ধবধবে সাদা কিংবা কটকটে গোলাপি কেডস পরে অলি গলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। শহর ঘেষা সাগর পাড়ে অলস সীল মাছ বড় পাথরের গায়ে পেট ভাসিয়ে রোদ পোহাচ্ছে। কি অদ্ভূতই না দেখাচ্ছে দৃশ্যগুলো। দেখতে দেখতে বড় রাস্তায় এসে পড়লাম। আট লেনের হুলুস্থুল চওড়া পথঘাট। আমেরিকা যেন বিশালতার আরেক সংজ্ঞা।

বড় সৈকতটা খুঁজে পেয়ে আমরা হই হই করে নেমে পড়েছি। কি ভেবে চপ্পলজোড়া আঙ্গুলে ঝুলিয়ে নিলাম আমি। বালি ওম ওম গরম। এক ধরনের কুসুম কুসুম উষ্ণতায় মনটা ছেয়ে যাচ্ছে। দলের মেয়ে দুটা খুব দ্রুত হেঁটে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে এর ভেতর। টম আর গেরিটও যে যার মত হেলেদুলে ঘুরছে। একা পড়ে যাওয়াতে আমি এক রকম খুশি। বার কয়েক পানিতে পা ভিজিয়ে ক্ষান্ত দিয়ে বালির ওপর কায়দা করে ডান হাতে ভর রেখে বাম দিকে এমনভাবে কেৎরে বসেছি যেন সৈকত, সাগর আর ঢেউয়ের একটা আনুভূমিক ছবি পাওয়া যায়।

ছবিটা প্রায় তুলে ফেলেছি, আর দুম্ করে গেরিট ফ্রেমে ঢুকে পড়ল। তাও আবার আদুল আদুল খালি গায়ে। শর্টস বাদে বাকি সব সে ঢেউয়ের ডগায় আল্লাহর ওয়াস্তে রেখে এসেছে। যে কোন মুহূর্তে সেগুলো জলের পেটে চলে যেতে পারে। সেদিকে থোড়াই কেয়ার করে বলল, সাগর পাড় থেকে সে স্লো মোশনে দৌড়ে আসবে আর আমি যেন পটাপট ক’টা ফটো খিঁচে দেই। অনিচ্ছাভরে আড়মোড়া ভেঙ্গে আলসেমির বিশাল কুমির হাই তুলে বললাম, ‘এটা তো টমকে বললেই পারতে। আমাকে জ্বালানো কেন?’। কিন্তু টমের দিকে তাকাতেই দেখা গেল তার প্রাগৈতিহাসিক দুই বাই তিন ইঞ্চি ফিচার ফোনটা হাতে নিয়ে সে অপরাধী হাসি হাসছে। এই দিয়ে আর যাই হোক ছবি খেঁচা যাবে না। অগত্যা, আরামের কেৎরে বসা বাদ দিয়ে হাতের ফোনটায় টোকার পর টোকা মেরে গেলাম। পার্টনারকে পাঠানোর জন্যে তোলা ছবিগুলো কেমন হয়েছে দেখার আর ফুসরৎ মিলল না গেরিট মিয়ার। উল্টো দিকে রাম দৌড় লাগিয়েছে। কারন পাগলাটে একটা ঢেউ বেসামাল ধেয়ে আসছে। সমুদ্দুরে জামাকাপড় গিলে ফেললে তাকে আদুল গায়েই ঘরে ফিরতে হবে। কারো কাছে জ্যাকেট নেই। সান ডিয়াগোর আবহাওয়া আজকে খারাপ রকমের ভাল। (চলবে)

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ২:১৮

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: চলবে...... তার অপেক্ষায় রইলাম,আবার দেখা হবে আমাদের সান ডিয়াগোর ফেলে আসা ৩ য় পর্বে।

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ, কষ্ট করে খুঁজে নিয়ে পড়ছেন।

২| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ৩:২৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
গানস ‘ন রোজেস? গ্রেট!

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আসলেই। এপিক!

৩| ২০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৪:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:



এবারের লেখাটাতে প্রাণ আছে

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। উৎসাহ পেলাম।

৪| ২০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৪:৪৮

কলাবাগান১ বলেছেন: "দক্ষিন এশীয় আন্টিরা বেজায় রঙ্গিন সালোয়ার কামিজের সাথে ধবধবে সাদা কিংবা কটকটে গোলাপি কেডস পরে অলি গলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন"
ভারতীয় রা কেয়ার করে না....স্হান কাল পাত্র

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১৯

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: দারুন বলেছে। কিন্তু কে বলল যে তার ভেতর আমাদের মা খালারা নেই? আর দাপিয়ে বেড়ানোটাই তো ভাল।

৫| ২০ শে মে, ২০১৯ সকাল ১১:৩৬

মা.হাসান বলেছেন: ভেবেছিলাম ১,২ এর মতো ৩,৪ এক করে পোস্ট দেবেন আর ফাঁকি দিয়ে একটা মন্তব্যে সেরে দিব, তা আর হলো না।
আট লেনের রাস্তা মানে কি দু দিকে ৮+৮=১৬, নাকি ৪+৪=৮?
আপনি যখন কনফারেন্সে ছিলেন তখন ছেলে কি বাবার কাছে ছিল? না কি এটা ছেলের জন্মের আগের ঘটনা?
প্রথম পর্বের মন্তব্যে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমার বড় অর্ধেক যদি কোন কনফারেন্সে যেতে চায়, কোন ফান্ড না থাকলে আমি প্রয়োজন হলে লোন করেও যাবার ব্যবস্থা করে দিব এবং তার ব্যাগ গুছানো থেকে শুরু করে দরজার বাইরে পা ফেলা পর্যন্ত অনবরত জর্জ মাইকেলের ফ্রিডম শুনতে থাকবো।

লেখা খুব ভালো চলছে। ++

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৩

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা। ছেলে হবার আগে। তারপর কনফারেন্সে যাওয়া লাটে উঠেছে। তবে শীগগিরি সামনে যাচ্ছি। তবে ন্যাশনাল লেভেলের। আহামরি কিছুই নয়।
চার-চার আট বুঝিয়েছি।
বউ তাড়ানোর বুদ্ধিতে আপনারা এক জন আরেক জনের চেয়ে সেরা দেখছি।
শুভ কামনা (তবে অবশ্যই বউ তাড়ানোর জন্যে নয়)।

৬| ২০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:১৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার এই সিরিজটা চমৎকার হচ্ছে, কিন্তু কিছু ছবি যে কেন দিচ্ছেন না......বুঝলাম না। :(

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৪

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: কিছুটা আলসেমি আর ছবির স্বল্পতায়। এবার দিয়েছি। সামনের পর্বেও দেবো আপনার কথা মত। ধন্যবাদ।

৭| ২০ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮

বলেছেন: বেশ গুছানো লেখাটা

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ল ভাই, সালাম নেবেন আর ধন্যবাদ জানবেন।

৮| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আমার প্রকাশনী থাকলে আপনার এই ধারাবাহিকটা বই আকারে বের করতাম।

২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৬

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: তাহলে তো আমার মত মাঝারি মানের মৌসুমি লেখকদের জন্যে ঈদ ;)

৯| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:৪০

মা.হাসান বলেছেন: ৪+৪=৮ লেনের রাস্তা? ও আমাদের দেশেও আছে। তাইলে আর আমেরিকা গেলাম না কষ্ট করে। তাহলে আর দশ বছর না আরো আগেই আমরা আমেরিকাকে ধরে ফেলবো, অথবা এখনই হয়তো ধরে ফেলেছি। :-B
ভালো থাকবেন।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৩৮

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: যে শহরে থাকি, তার হাইওয়ের চেয়ে চওড়া রাস্তা দেখে চোখে পড়ছিল আর কি। আমেরিকার চাইতে আমাদের বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। ডিজিটালি, ম্যানুয়ালি দু'দিক থেকেই। হোম সিকনেস ধরিয়ে দিলেন তো আবার। দেশের সবকিছু মিস করছি।

১০| ২০ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ছবি টা সুন্দর !
আপনার লেখা তো সব সময় ই ভালো।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ১:৪০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা আপু। সময় বের করে গুনী মানুষ আপনি আমার লেখা পড়েছেন।

১১| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:২৬

করুণাধারা বলেছেন: চমৎকার আগাচ্ছে, সাথেই আছি। শেষের ছবিটা দেখে মুগ্ধ হলাম।

২৩ শে মে, ২০১৯ রাত ২:২৫

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: জেনে খুব খুশি হলাম প্রিয় ব্লগার করুনাধারা। ছবিটা আসলেই সুন্দর।

১২| ২২ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আপনার লেখাটা অত্যান্ত হৃদয় মোহিত।

২৩ শে মে, ২০১৯ রাত ২:২৭

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: সালাম, আপনার কথায় উৎসাহ পেলাম। আর আপনার উপস্থিতি সামনেও আশা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.