নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার লেখা আপনাদের কথার সাথে মিলবেনা এটাই সত্য। কারন কেউতো একজন থাকা চাই যে আলাদা ভাবে দুনিয়াকে দেখবে। আপনি পজিটিভ ভাবে আমার লেখা পড়লে আপনাকে স্বাগতম। আর নেগেটিভ ভাবনা নিয়ে পড়লে আমার কিছু করার নাই। ভালো চিন্তা করুন। দেশ, জাতি, আর ধর্মকে ভালোবাসুন।

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগের দিন এখন নাই, দিন বদলে গেছে

০১ লা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:০৬

আজ ১০ বছর পর দেশে ফিরছে সালাম। সেই দশ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে প্রবাশে চলে গিয়েছিলো। চাকরির খুজে, একটা ভালো জীবনের আশায়। মধ্যপ্রাচ্যে চলে গিয়েছিলো সে। অনেক দিন দেশে আসে না। সে বাবা মার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলো।আর পরিবারের বড় সন্তান। বাবা মারা যাওয়ার পর যখন সংসারে টানাপোড়েন শুরু হল। তখন ঘরে সে শিক্ষিত বেকার, বেকারত্বের অভিশাপ তাকে কূরে কূরে খাচ্ছে।আর ছোট বোন লেখা পড়া করে তার খরচ৷ আর সংসার সামলাতে সে চলে গিয়েছিলো সেই পরবাসে। আজ দশ বছর পর গ্রামের মাটিতে পা রেখেছে৷বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, । এর মাঝে তার মা ও চলে গেছে না ফেরার জগতে। সে আসতেও পারেনি কবর দিতে। আজ যেনো সে কথা মনে করে সালামের বুকের বা পাশে টান দিয়ে উঠে। কেউ যেনো কাটা দিয়ে বুকে আঘাত করে দিয়ে গেলো। দশ বছর পর, অনেক কিছু বদলে গেছে। অনেক মানুষ চলে গেছে, যারা এই গ্রামেই বাস করতো।
আজ গ্রামটাকে বড্ড অচেনা লাগছে তার কাছে, আসার আগে বোনকে মোবাইল করেনি সে৷ নাহলে হয়তো তার মা বাবা মরা এতিম বোনটি তাকে নিতে বিমান বন্দরে আসতো। এই ভেবে সে দেখলো তার চোখে জল চলে এসেছে৷ কি করে বলবে সে? সেই দশ বছর আগে ভুয়া আদম বেপারির মারফতে সে মধ্যপ্রাচ্যে যায়৷ তারপর প্রথম কিছু বছর লুকিয়ে কাজ করেছে। আর কিছু টাকাও পাঠিয়েছিলো সে তারপর সে পুলিশের হাতে ধরা পরে৷ তারপর কেটে গেলো অনেক বছর। বোনের কোন খোজ খবর নিতে পারেনি। না বোনের সাথে তার কোন যোগাযোগ হয়েছে। আজ এই মুহুর্তে সে নিজেকে খুব একা ভাবতে শুরু করলো।
গ্রামের রাস্তায় রিক্সা চলছে। তার কোন কিছুই পরিচিত মনে হচ্ছে না। আগের মতো আর সেই ইটের ভাংগা রাস্তা নেই। আর এখন গ্রামের সেই বিল, খালও দেখতে পাচ্ছেনা সে। তার স্থানে দেখা যাচ্ছে বড় এলাকা জুড়ে বিশাল কারখানা।, যেখানে একটা বড় পুকুর ছি। সেখানে একটি সিরামিক কারখানা গড়ে উঠেছে। আর আগের গ্রাম আর গ্রাম নাই৷ এইখানে স্কুলের পাশে বড় একটা বাজার হয়ে গেছে । আগে এইখানে কোন মানুষই আসতোনা। ভয়ে আসতো না। কারন চারদিকে কোন বাড়ি ঘর ছিলোনা। তবে কৃষি জমি গুলো দখল করে এখন হয়ে গেছে কারখানা। কারখানা কি কৃষি এলাকায় করে? প্রশ্ন জাগলো সালামের মনে। আর সামনে আসতেই সে দেখতে পেলো বিশাল এলাকা জুড়ে একটা ইটের ভাটা, উপরে কালো ধোঁয়া উড়ছে। পাশেই কারখানা হতে ড্রেন দিয়ে কালো পানি বের হচ্ছে আর এসব পানি গিয়ে খালটাতে মিশেছে। আর কৃষি জমিতে নেমে গেছে।

আজ অনেক দিন পর। রিকশা চলছে। গ্রামের ভিতরে ঢুকেছে। তাদের বিদ্যালয় টা এখানেই ছিলো। কেন যেনো চিনতে পারছেনা এলাকাটাকে, রিকশা ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা স্কুলটি ছিলো, কোথায়,? সে সালামকে দেখিয়ে দিলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়টা এখন দু তলা বিশিষ্ট ভবনে রুপান্তর হয়েছে। আর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যেখানে সে পড়েছে সেই বিদ্যালয়টি কাজ হচ্ছে, তিন তলা বহুতল ভবন আছে একটি। আরো ভবনের কাজ হচ্ছে। সে মনে মনে বলতে লাগলো অনেক উন্নত হয়েছে আমাদের বিদ্যালয়,
রিকশা চালক বললো ভাইজান এখন আর আগের দিন নাই, দিন বদলে গেছে। গ্রাম বদলে শহর হয়ে গেছে।
সে দেখলো তাদের মসজিদটিও তিন তলা বহুতল ভবন। তারপর রিকশা থেকে গ্রামের বিদ্যালয় মাঠে নামলো সে৷ সে অনেক দিন আগের কথা এই মাঠেই কতো খেলা করেছে সে৷ কত স্মৃতি আছে তার এই মাঠে। ।

পাশেই দূরে তার বাল্যবন্ধু কে দেখতে পেলো। তার নাম আমিন। অনেক দিন পর দেখেছে, হয়তো চিনতে পারেনি। সালাম কাছে গিয়ে পরিচয় দিলো৷ তার পর সে কি কান্ড। আমিন তাকে জরিয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করলো। অনেক দিন পর যেনো তার মনে শান্তি পেলো সে৷ এটা যে সুখের কান্না। তার বন্ধুর মা মারা গেলো। আর এতোদিন পর ফিরে এলো সে। তাদের বন্ধুত্ব ছিলো সেই ছোট কাল হতে। একজন আরেকজন কে ছেড়ে কখনো কোন কাজ করেনি৷ আজ অনেক দিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে বড্ড আবেগী হয়ে উঠলো আমিন।

একসাথে সালাম তার নিজের দোকানে গল্প করতে লাগলো। সালাম দেখতে পেলো, তার বন্ধুর ভালোই উন্নতি হয়েছে। আর সুখেই আছে সে। খুব বড় দোকানের মালিক সে। সব ধরনের মালপত্র বিক্রয় হয়৷ আর সে ভুল করেছে ১০ টি বছর জীবনের নষ্ট করে৷ আজ তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে। বয়স হয়েছে ৩৮। ধন সম্পদ কিছুই আয় করতে পারেনি তেমন একটা৷ তবে অনেক দিন পর গ্রমে এসে, বন্ধুর সাথে দেখা করতে পেরে খুব একটা শান্তি পেলো সালাম৷যেনো সে বেহেশতে এসেছে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে।।

তার বন্ধুর সংসার করার কথাও জানালো তাকে। একটি কণ্যা সন্তান আছে আমিনের। শুনে বড্ড ভালো লাগলো সালামের৷ কিভাবে সে এতোদিন ছিলো সেই গল্প করতে করতে, বললো, বন্ধু চল, বাড়িতে যাই৷ অনেক দিন পর এসে। নিজের বাড়ির পথ মনে হয় ভুলেই গিয়েছি৷ আমিন তাকে বললো৷ চল, আমাদের বাড়িতে খাওয়া শেষ করে, একটু আরাম করবে৷ তারপর না হয় নিজের বাড়িতে যাবে।

সালাম নাছোড়বান্দা, না সে আগে নিজের বাড়িতেই যাবে। তারা দোকান বন্ধ করে একসাথে চলতে শুরু করলো৷
আগের সেই পুকুর পার নেই। এলাকায় অনেক গুলো মাছের খামার গড়ে উঠেছে। জমি গুলো নেই। সব মাছের খামার আর মুরগীর খামারে ভরে গেছে৷ এইখানে না অনেক জমি ছিল? ধান চাষ করা হতো? আমিনকে জিজ্ঞাস করলো সালাম। হ্যা, আমিন উত্তর দিলো৷ এখন ধানের জমিতে দখল নিয়েছে, ফার্মের সাদা মুরগী আর মাছ৷ তোদের বাড়ির যে রাস্তা সেইখানে দুই দিকে এখন শুধুই সাদা মুরগীর ফার্ম বললো আমিন৷
তারা হাটতে হাটতে একটা বাড়ির সামনে থামলো। সালাম চিনতে পারলো, এটাই তার বাড়ি। চারদিকে ঘাস জন্মে গেছে। বাড়ির উঠানে বড় বড় ঘাস জন্মে গেছে৷
আমিন বললো, খালাম্মা মারা যাবার পর তোর বোন আসতো এই বাড়িতে। এখন আর আসেনা, আসলেও খুব কম। তারোও ব্যাস্ত সংসার,
দুটি ছেলে মেয়ে আছে। তাদের লেখা পড়া। অনেক বড় সংসার মেয়েটার, আসতে পারেনা। তাই তোমার বাড়ির এই অবস্থা।
সালাম বাড়ির উঠোনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ যেনো শুনতে পেলো কেউ তাকে ডাকছে, খোকা বাড়ি এলি? খোকা? খোকা? সালামের দু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। দেহটা যেন ভারী হয়ে এলো। এই বুঝি মাটিতে পরে যাবে তার দেহ। চারিদিকে শুধু স্মৃতি, তাকে ডাকছে, । সে আমিনকে জড়িয়ে ধরে কান্না আরম্ব করলো। সে কি কান্না, । আকাশ বাতাস সব যেন তার কান্না দেখে আজ ব্যথিত।

পশ্চিমে সূর্যটা হেলে পরেছে। সন্ধ্যা হয়ে যাবে এখনি। দূর থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। আর সালামের কান্নার আওয়াজ মিশে গেলো চারদিকে।

তারা দুজনে হাটতে লাগলো, সেই পথ ধরে।যে পথে হেটে গেছে তার পিতা, মাতা, আপনজন। তারা আর ফিরবেনা৷

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছু বদলে যায়। বদলে যাওয়াই নিয়ম।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৮:০১

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: বদলে যায়। মানুষ চলে যায়। মরে যায়। আবার নতুন কেউ আসে। এই জগতে রাজত্ব করে।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: রাজত্ব সব্বাই করতে পারে না। অল্প কিছু লোক রাজত্ব করে। বাকি সবাই দাসত্ব করে।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:২৭

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: আজকে আপনি, আমি যে ঘরে বাস করি।যে জমিতে বাস করি, গত কাল বা গত যুগে এইখানে অন্য কেউ বাস করতো।
আবার আমাদের চলে যাওয়ার পর এই ভূমিতে, এই বাড়িতে অন্য কেউ বাস করবে। অন্য কেউ হবে এই বাড়ির মালিক।

সেটাই কি কম। সেটাও তো রাজত্ব। আপন আলয়ে আপনি (নিজে) রাজা।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:২৮

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: প্রতিটা ঘরেই বাবা হয় রাজা, মা রাণী। আর সন্তান হয় রাজকন্যা, রাজপুত্র

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৯

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: আপনার আজকের ডাইরি আর ছবি ব্লগ পড়লাম।

আপনার লেখা গুলোতে কিছু লিখতে গিয়েই সামনে আসে, আপনি মন্তব্য করতে পারবেন না। ব্যান হয়ে আছেন৷ আজব,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.