নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।\nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।\nধন্যবাদ\n

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও বিজয় দিবস পালন প্রসঙ্গে কিছু কথা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯



ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল ফরহাদ মজহারের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখার মাধ্যমে। এরপর সারাদিন ধরেই উত্তেজিত এবং উৎকণ্ঠিত ছেলেমেয়েদের বক্তব্য দেখলাম ফেসবুকের বিভিন্ন ফোরামে। এদের মূল বক্তব্য হচ্ছে “ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়, ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অথবা বিজয়ের ক্রেডিট চুরি করেছে, এবং এই বিজয় দিবস উদযাপন করা ঠিক না”।
ফরহাদ মজহারের মত ধাড়ি বুড়ো কেন কি বলে সেটা আমরা ভালোই বুঝি, তবে আমার খারাপ লাগে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা যখন এরকম জ্ঞানপাপীদের বয়ানে অথবা ভারতীয়দের ১৬ই ডিসেম্বরে ‘বিজয় দিবস’ পালনের একতরফা ন্যারেটিভ পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় এবং স্বাধীনতা নিয়ে এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে।
ফরহাদ মজহার এবং এর সমগোত্রীয়রা ইনিয়ে বিনিয়ে যে বলতে চায় তা হল, পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের কাছে সারেন্ডার করেছে, সারেন্ডার সেরিমনির ছবি দেখিয়ে বলতে চায় যে এখানে বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল না, সারেন্ডারের ডকুমেন্টে বাংলাদেশি কারো স্বাক্ষর নাই, অতএব ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়। ভারতীয়রা আবার অন্য দিকে ১৬ই ডিসেম্বর ‘বিজয় দিবস’ পালন করে পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় স্মরণ করে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা বলে ফেলে যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে এই পাক-ভারত যুদ্ধের ফসল হিসেবে।
দুটি দাবীই সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অসম্পুর্ন তথ্যের ভিত্তিতে বলা অর্ধ সত্য।
৭১ সালে কি পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে কোন যুদ্ধ হয়েছিল যেখানে ভারত পাকিস্তানকে পরাজিত করে? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর বিকালে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের এগারটি বিমানঘাঁটিতে বিমান হামলা করে তের দিন ব্যাপী এই যুদ্ধের সূচনা করে, এবং সেই যুদ্ধ কার্যত শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে। অতএব, আমার মতে ভারতীয়রা ১৬ ডিসেম্বর ‘পাক-ভারত’ যুদ্ধের বিজয় উদযাপন করতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সেটা তাদের ‘পাক-ভারত’ যুদ্ধ, যেটা আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় হওয়া একটা আলাদা যুদ্ধ, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এই যুদ্ধে ভারতের প্রচেষ্টা ছিল নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করা। এখানে কমব্যাটান্ট ছিল ভারতীয় এবং পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনী; বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিজেদের যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, করে গেছে বাংলাদেশে অবৈধ দখলদারিত্ব করে রাখা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে, সেই ২৫ মার্চ রাত থেকে শেষ পর্যন্ত। ৩ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে অফিশিয়াল যুদ্ধ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের (নিয়মিত বাহিনী এবং গণবাহিনী) সাথে যুদ্ধে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী এবং দুই দেশের বাহিনীদের এক করে গঠিত হয় মিত্র বাহিনী অথবা ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ফোর্সেস’। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সম্মতিতে এই সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ড দেয়া হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল অরোরার কাছে। কমান্ড অরোরার কাছে দেয়া হয় দুই কারনে, এক বাংলাদেশের নিয়মিত বাহিনীতে এত উঁচু পদের কোন অফিসার ছিলেন না, এবং ভারতের ট্যাংক, আর্টিলারি সহ হেভী আর্মারড কোরগুলোকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা দেবার জন্য একজন ভারতীয় অফিসারকেই দরকার ছিল।
জেনারেল অরোরা নেতৃতে মিত্র বাহিনী প্রায় সমগ্র বাংলাদেশ দখল করে নেয় এবং ঢাকার দখলের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। সম্মুখে পরাজয় ছাড়া কিছুই নেই দেখে পাকিস্তানি বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে ১৬ ডিসেম্বর, এবং সেইদিন পুর্ব রনাঙ্গনে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হবার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় ১৩ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধ এবং আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ। অর্থাৎ আলাদা ভাবে শুরু হওয়া দুইটা যুদ্ধ একসাথে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শেষ হয়




কেউ যদি একটু সময় করে পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের দলিলটা দেখেন, দেখবেন সেখানে জেনারেল অরোরার ডেজিগনেশন লেখা হয়েছে এভাবে, ‘জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলা দেশ (হ্যাঁ, তখন বাংলাদেশের নাম এভাবে আলাদা করে বাংলা দেশ লেখা হতো)ফোর্সেস ইন দ্য ইস্টার্ন থিয়েটার’, অর্থাৎ পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ড সেদিন ভারতের সেনাবাহিনীর কাছেও না, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাছেও আত্মসমর্পন করেনি, তারা সেদিন আত্মসমর্পন করেছিল ভারত এবং বাংলাদেশের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে, সেই সম্মিলিত বাহিনীর শীর্ষ অধিনায়কের কাছে। এই সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক ভারতের সেনাবাহিনীর তৎকালীন সেনাধিনায়ক ফিল্ড মার্শাল মানেকশও ছিলেন না, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল এমএজি ওসমানীও ছিলেন না, ছিলেন জেনারেল অরোরা। জেনেভা কনভেনশনের আওতায় নিরাপত্তা পাবার আশায় পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাছে সারেন্ডার না করে মিত্র বাহিনীর কাছে করে, যদিও তাদের সারেন্ডার করতে রাজী করানো হয়েছিল এই বলে যে সারেন্ডার না করলে তাদেরকে জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষর না করা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর হাতেই তুলে দেয়া হবে।
বটমলাইন, ১৬ ডিসেম্বরে আমরা পালন করি ৯ মাসব্যাপী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, আর ভারত পালন করে ১৩ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধে তাদের বিজয়। তবে এটা মনে রাখতে হবে, পাক-ভারত যুদ্ধ (এবং সেই সুত্রে ভারতের হাতে পাকিস্তানের পরাজয়) কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরই একটা অংশ এবং কোনক্রমেই পাক-ভারতের এই তের দিনের যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের জন্ম নয়।
আশা করছি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে ইচ্ছুক নতুন প্রজন্ম সম্পুর্ন সত্যটাই জানবে, কোন একদিকের বায়াসড ন্যারেটিভ না। আসা করি তারা এরকম অর্ধসত্য দিয়ে সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে অযথাই উত্তেজিত হবে না, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ইনভল্ভড সকল পক্ষের কর্মকান্ড সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁড়ে বের করে আনা শিখবে এবং যার যা প্রাপ্য, সন্মান অথবা অসন্মান, তাকে ঠিক মত সেটা দিতে শিখবে।
সর্বোপরি, আশা করছি বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে সকল হীনমন্যতার অবসান ঘটবে, সবাই আমরা প্রান খুলে আত্মমর্যাদার সাথে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা এবং বিজয় উদযাপন করবো। ফরহাদ মজহারের মত জ্ঞানপাপী গড়াগড়ি খেতে থাকুক তার স্বরচিত হীনমন্যতার বয়ানে। স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করেও পরাধীনতার মানসিক শেকল পরে, ১৬ ডিসেম্বরে সারা বাংলাদেশের আনন্দের সময় পাকিস্তানিদের মত শোকে মুহ্যমান থাকাই এদের শাস্তি।
আসুন আমরা বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের গৌরবে গর্বিত হতে শিখি।

#কুড়ানো

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: অনেক ক্ষেত্রেই তারা বলে ফেলে যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে এই পাক-ভারত যুদ্ধের ফসল হিসেবে।

সম্প্রতি ইন্ডিয়া এই বিষয়টা নিয়ে গুন্ডেয় সিনেমা তৈরী করেছে।

সেখানে দেখবেন উনারাও একই কথা বলেছেন।

তাহলে কি ধরে নিবো যে ওখানেও ফরহাদ মাজহারের হাত অাছে

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: তবে অাসল কথা হচ্ছে বাংলার সর্বসাধরনের অান্দোলনের ফসল হচ্ছে অামাদের স্বাধীনতা। অামাদেন বিজয়।

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: X(( ভারত তাদের নিজেদের লাভের জন্যে এই যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল। যাওয়ার সময় পাকিদের কিছু অস্ত্রসস্ত্র ও আমাদের দেশের কিছু সম্পদ চুরি করে নিয়ে গেছে।

তাদের এই উপকারের দায় জাতি ৪৫ বছর ধরে মিটাইতেছে। এখন তারা কার বাল ফালাছে ফালাকগা, এ দেখার টাইম নাই। তারা হিরো আলম নিয়ে মাতামাতি করে এটাই তাদের জন্য বেস্ট।

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংগালী হিসেবে আপনি যদি নিজের ইতিহাস বুঝেন, সেটাই বড়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.