নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা' মনের কথা-রফিকুল কাদের

সব ভাল কথাই ভাল নয়...........

কে এম রফিকুল কাদের

আমি দিক্ষণা বাতায়ন খুলে রাখি, বাধ ভাঙা মুক্ত বাতাসের অনুপ্রেবেশ ............

কে এম রফিকুল কাদের › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্তমান প্রেক্ষিত রাজনীতি ও একটি রাজনৈতিক দলের বিপর্যয়

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪২

ছেলেবেলায় রাগ করে খাবার খেতে না চাইলে মা বা পরিবারের সদস্যরা আমাকে খাবার খেতে পীরাপিরি করত। আমি এতই তেজী ও একঘুয়ে ছিলাম যে তাদের একাধিকবার পীরাপিরি করা সত্ত্বেও আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। তারা আমার একান্ত আপনজন ছিল বলে খাবার ডাইনিংয়ে রেখে আমাকে অবহেলা ছলে যার যার কাজে চলে যেত। আমার যখন খুব ক্ষুধা পেত তখন আমি সেই খাবার খেতাম। আমার ভেতরের গোড়ামিগুলো আমি আবিস্কার করতে পারি কিন্তু তা থেকে অতিক্রম করতে একটু সময় লেগে যায়।

একজন মানুষ রাস্তা পেরুচ্ছে। সে যদি চলন্ত গাড়ীর গতিবিধি হতে দূরে না গিয়ে বলে- “দিক না ধাক্কা দেখব ওর কত বড় সাহস।” সেটা কোন সুস্থ্য মানুষের বিবেক বর্জিত ব্যাপার-স্যাপার নয় কি? একটি সমাজে রক্ষণশীলতা গড়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যায়। মানুষের সুস্থ বিবেকগুলোর অনুভূতিই হচ্ছে রক্ষণশীলতা। সেটা সমাজ হয়ে রাষ্ট্র তথা বিশ্ব অতিক্রম করে। আর সমাজ একটি অসমন্তরাল রোড। যেখানে একি সময়ে সকলকে লেভেলফিল্ড করা সম্ভব নয়।

আমি যা বলতে চাই এখনো তার ধারে কাছে যাইনি। এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের রাজনৈতিক সংকটগুলো সামাজিক জীবনে চরমভাবে বিপর্যয় ঘটায়। সাথে পুঙ্গ হয় অর্থনীতি। কিন্তু সময়ের রাজনীতি যদি এ দুটোকে অতিক্রম করে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তখন সেটাকে মহা বিপর্যয় বলা চলে। যার স্বীকার সাধারণ মানুষ, ছাত্র-পেশাজীবি, ব্যবসায়ী সহ সকলের জনজীবন। দেশের রাজনীতি বার বার কার কল্যানার্থে কাজ করছে সেটা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত জানুয়ারী ছিল দেশ ও মাঠ উত্থাল। ঠিক একি সময়ে ২০১৫ সালের পরিস্থিতি ছিল আরো ভয়াবহ।

আমরা কি এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি? আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠির কল্যানার্থে যদি রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয় তবে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সাধারণ জনজীবনে কেন হামলা করবে। আমি শুধু ১ মাসের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কথা বললে বলতে হবে যে- “আমাদের অর্থনীতিতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিগত ৫৮ দিনে এসকল রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় ১৩শ যানবাহনে আগুন ও ভাংচুর করা হয়। আর জনজীবনে আঘাত আসে আরো নির্মম ভাবে। এপর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪ জন। যার ৬১ জন হলো পেট্রোল বোমায় দগ্ধ। বন্ধুকযুদ্ধে ৩৬জন, সংঘর্ষ ও সড়ক দূর্ঘটনায় ১৭ জন। আর এই ঘটনায় যারা আহতাবস্থায় রয়েছে তাদের তাদের জীবন প্রায় বিপন্ন। এসকল ঘটনা শুধু সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করেই ঘটছে। নামমাত্র রাজনৈতিক কর্মী সেখানে বলী হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা এই জানুয়ারী থেকে মার্চের উত্থাল রাজনৈতিক সহিংসতায় বড় বিপর্যয় যোগ হয়েছে দেশের সকল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলছে। যেখানে ২রা ফেব্রুয়ারী ২০১৫ থেকে শুরু করে ১০ই মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেখানে আজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তার অর্ধেক পরীক্ষাও শেষ করতে পারেনি। একাত্তোর সদ্য স্বাধীনতা লাভের পর নতুন রাষ্ট্রের পথরুদ্ধ হয় ৭৫ সালে। এতবড় একটি রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও ১৫-১৬ দিনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল। আজ স্বাধীনতার এতো বছর পর এসএসসি পরীক্ষার্থীরা যা দেখল তা আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করে গেল এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পথে পরবর্তী ১২ লাখ এইচএসসি শিক্ষার্থী।

দেশের রাজনীতিতে একটি বড় দলের কৌশলগত রাজনীতির কারণে নিজেদের বিপর্যয় ডেকে এনেছে আমি মনে করি। ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে এককভাবে তারা ক্ষমতা পেয়েছে বর্তমান সরকারে অধিষ্ঠিত দলটি। যেখানে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল কিংবা জোট নেই। কিছু রাজনৈতিক দল দিয়ে সেখানে পুতুলের মতো সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা এড়াতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সেই রাজনীতি আমাদের আর কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় সেটা এখনো আমার দৃষ্টিশক্তির বাইরে। একক নিয়ন্ত্রণে কোন কিছু চলতে থাকলে সেখানে জনমুখী কল্যাণ উপেক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। ফলে নিয়ন্ত্রক যদি স্বেচ্ছাচারের ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয় তখন তা রাষ্ট্রের হিতবিমুখতা তরান্বিত করে।

একটি রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক ভাবে পরাজয় আর রাজনীতি থেকে নির্মূল করা দুটোর অনেক ফাড়াক। অন্যদিকে ধ্বংসের রাজনীতিতে যারা এগুচ্ছে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি বলে আরো কোন বিষয় সেখানে রয়েছে কিনা সেটাও আমাদের বিবেচ্য বিষয়। দেশের কিছু বাম রাজনৈতিক দল সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব বহন করতো। তারাও আজ দ্বিধা বিভক্ত। কেউ একটি ক্ষমতাসীন দলকে আখড়ে ধরে বসা। অন্য অংশটি যার যার মতো একলা চলো নীতিতে বসে আছে। ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল ও প্রতিনিধিত্বের একটা বড় সংকট যে সৃষ্টি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।
দেশের বড় একটি দল ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনে নিজের সাথে রাগ করে ক্ষুধা মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ছিল। তারচে বড় ভূল ছিল যুদ্ধাপরাধীর মতো একটি দলের সঙ্গ ত্যাগ না করা। বিরোধীদলের ভূমিকায় আন্দোলন করা আর শূণ্যের ভূমিকায় আন্দোলন দুটোর অনেক পার্থক্য।

সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। ভবিষ্যতে যদি এমন কোন সংকট সৃষ্টি হয় তবে আমরা কি সেই জাতীয় ঐক্যের কোন সূচনা বা চেইন তৈরী করতে সমর্থ হবো। আমাদের দেশের রাজনীতি সবসময় জনমানুষকে কোন একটা জায়গায় আইওয়াশ করে বড় বড় ক্ষতিগুলো করে যায়। ফলে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক ধারাকে ত্বরান্বিত করে। যা ১/১১ এর মতো নতুন নতুন রাজনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যায়। আমরা জাতিগতভাবে এখনো ঐক্য সচেতনতা কতোটা অর্জন করতে সমর্থ তা অনাগত সংকটগুলো বলে দিবে। তবে আশার কথা এই যে- “কোন একটা চেতনাকে ধারন করে হলেও বহুদিন পর আমরা গণজাগরণের মতো একটা জনমঞ্চ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি।”

জাতীয় স্বার্থে সাধারন মানুষের আরেকটি সমন্বয় কি অদূর ভবিষ্যতে হাতচানি দিচ্ছে? তার প্রয়োজন হোক বা না হোক চেতনাগুলোকে লালন করে জাতির সংকটময় মুহুর্তে তা প্রয়োগ করার সাহস রাখুন, দেশ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে।


লেখক : ব্লগার ও সমাজকর্মী।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

হাসানুর বলেছেন: সবাই গনতন্ত্র চায় । দেখেন্না লিবিয়াতে গাদ্দাফিকে মেরে জনগন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে...এখন সবাই গনতন্ত্রের ফল ভগ করছে !
জাতি হিসাবে আমরা অনেক নিছে নেমে গেছি। আমাদেরকেই সব ফল ভগ করতে হবে...

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩০

টুতৃদগ বলেছেন: "জাতীয় স্বার্থে সাধারন মানুষের আরেকটি সমন্বয় কি অদূর ভবিষ্যতে হাতচানি দিচ্ছে?" ...................অদ্ভূত নিয়মে রাজনৌতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের গতিপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সব দলই কোনো না কোনো ভাবে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় আকড়ে থাকা অথবা ক্ষমতায় যেতে চাইছে। "ভয়" জয় করে সামনে এগোনোর পথ কোনো রাজনৌতিক দল দেখাবে না, সাধারণ মানুষকেই এই অন্ধকার থেকে পথ খুঁজে বের করতে হবে।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.