নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ রোকনুজ্জামান খান রোকন।পেশাঃ মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট।রোগীদের সেবা দানে দৃঢ় প্রত্যয়।অল্পতেই বিশ্বাসী, প্রতিটি মানুষকেই মন উজাড় করে ভালবাসতে চেষ্টা করি?নতুন লেখক।

রোকনুজ্জামান খান

আমি একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট। তিতাস শিশু ও জেনারেল হসপিটালে কর্মরত আছি। রোগীদের সেবা করতে ভালবাসি। রোগ নির্ণয়ে এক্স রে,সিটি স্ক্যান,এম আর আই করে থাকি । রেডিয়েশনে মারাত্তক ঝুকি নিয়ে রোগীদের সেবা করছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে সারা জীবন এভাবেই রোগীদের সেবা করতে পারি।

রোকনুজ্জামান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের প্রয়োজন পর্ব ১

০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১



কিছুদিন আগে সংবাদ সংগ্রহের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে গিয়েছিলাম। ক্যাম্প-কমান্ডার ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। সেই ব্যস্ততার মুহূর্তে আমার দিকে একটা খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনি বসুন। এই খাতাটা পড়ুন বসে বসে। আমি কয়েকটা কাজ সেরে নিই। এরপর আপনার সঙ্গে আলাপ করব।খাতাটা হাত বাড়িয়ে নিলাম।লাল মলাটে বাঁধানো একটা খাতা। ধুলো, কালি আর তেলের কালচে দাগে ময়লা হয়ে গেছে এখানে-ওখানে খাতাটা খুললাম।মেয়েলি ধরনের গোটা-গোটা হাতে লেখা।মাঝেমধ্যে একটু এলোমেলো। আমি পড়তে শুরু করলাম।

প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে, তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই। পরক্ষণে ভুলে যাই।রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই। সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম। খবর এসেছে ওখানে ঘাঁটি পেতেছে ওরা। একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজন বোধে ঝগড়া করেছি।

ভালোবেসেছি। আজ তাদের দেখলে শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। চোখ জ্বালা করে ওঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুড়ি। মারার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি। ঘৃণার থুতু ছিটাই মৃতদেহের মুখে।
সামনের ধানক্ষেত। আলের উপরে কয়েকটা গরু। একটা ছাগল। একটানা ডাকছে। একঝাঁক পাখি উড়ে চলে গেল দূরে গ্রামের দিকে। কী যেন নড়েচড়ে উঠল সেখানে। মুহূর্তে দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। ক্যাম্প-কমান্ডারকে খবর দিলাম।

স্যার, মনে হচ্ছে ওরা এগুতে পারে।তিনি একটা ম্যাপের ওপরে ঝুঁকে পড়ে হিসাব কষছিলেন। মুখ তুলে তাকালেন। একজোড়া লাল চোখ। গত দু-রাত ঘুমোননি। অবকাশ পাননি বলে। তিনি তাকালেন। বললেন, কী দেখেছ?
বললাম, মনে হলো একটা মুভমেন্ট।ভুল দেখেছ। আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন তিনি। ওদের দু-একদিনের মধ্যে এগোবার কথা নয়। যাও ভালো করে দেখো।চলে এলাম নিজের জায়গায়। একটানা তাকিয়ে থাকি। মাঝেমধ্যে তন্দ্রা এসে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। হয়তো তাই ভুল দেখি।কিন্তু বুড়িগঙ্গার পাশে লঞ্চঘাটের অপরিসর বিশ্রামাগারে যে-দৃশ্য দেখেছিলাম সেটা ভুল হওয়ার নয়। শুনেছিলাম, বহুলোক আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে। যখন গেলাম, দেখলাম কেউ নেই।
দেখলাম।

মেঝেতে পুডিংয়ের মতো জমাট রক্ত। বুটের দাগ।অনেক খালি পায়ের ছাপ ছোট পা। বড় পা। কচি পা। কতগুলো মেয়ের চুল।দুটো হাতের আঙুল।একটা আংটি।চাপ চাপ রক্ত।কালো রক্ত। লাল রক্ত। মানুষের হাত। পা। পায়ের গোড়ালি। পুডিংয়ের মতো রক্ত।
খুলির একটা টুকরো অংশ।এক খাবলা মগজ।রক্তের ওপরে পিছলে-যাওয়া পায়ের ছাপ। অনেক ছোট-বড় ধারা। রক্তের ধারা। একটা চিঠি।
মানিব্যাগগামছা।
একপাটি চটি।
কয়েকটি বিস্কুট।
জমে থাকা রক্ত।
একটা নাকের নোলক।
একটি চিরুনি।
বুটের দাগ।
লাল হয়ে যাওয়া একটা সাদা ফিতে। চুলের কাঁটা।
দেশলাইয়ের কাঠি।
একটা মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ছাপ।
রক্তের মাঝখানে এখানে-ওখানে অনেকগুলো ছড়ানো।
পাশের নর্দমাটা বন্ধ।

রক্তের স্রোত লাভার মতো জমে গেছে সেখানে।দেখছিলাম।দেখে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়েছিলাম সেখান থেকে।আমি একা নই। অসংখ্য মানুষ।অসংখ্য মানুষ পিঁপড়ের মতো ছুটছিল।মাথায় সুটকেস, বগলে কাপড়ের গাঁটরি। হাতে হ্যারিকেন। কোমরে বাচ্চা।চোখেমুখে কী এক অস্থির আতঙ্ক।কথা নেই। মৌন সবাই।সহসা কে যেন বলল, ওদিকে যাবেন না। মিলিটারি। নৌকায় করে করে লোকজন সব ওপারে পালাচ্ছিল। মিলিটারি ওদের ওপরে গুলি করেছে। দু-তিন শ লোক মারা গেছে ওখানে। যাবেন না।মনে হলো পায়ের সঙ্গে যেন কয়েক মণ পাথর বেঁধে দিয়েছে।

একা নই। অসংখ্য মানুষ। সহস্র চোখ। হতবিহ্বল মুহূর্ত। কোনদিকে যাব। পেছনে ফিরে যাওয়ার পথ নেই। মৃতদেহের স্তূপের নিচে সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে।সামনে এগিয়ে যাব। ভরসা পাচ্ছিনে। সেখানেও হয়তো মৃতের পাহাড় পথ অবরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
কোনদিকে যাব?পরমুহূর্তে একটা হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পেলাম। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছুটতে লাগলাম আমরা। যে যেদিকে পারছে ছুটছে। কাঁচকি মাছের মতো চারপাশে ছিটকে যাচ্ছে সবাই।
হেলিকপ্টার মাথার ওপরে নেমে এলো।
তারপর।
চলবে ....।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন, চালিয়ে যান।

০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: সব আপনাদের অনুপ্রেরনায় ।
দোয়া রাখবেন।

২| ০১ লা জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: খুব সুন্দর লেখনী, প্লট সুন্দর হয়েছে।

০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
প্রান্তর ভইয়া

৩| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩

একদম_ঠোঁটকাটা বলেছেন: নিচের প্যারাটা ২বার হয়েছে। এডিট করে নিন।

০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪০

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: হুম করে নিয়েছি ।
@ধন্যবাদ

৪| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭

সনেট কবি বলেছেন: ভালো লিখেছেন

০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আপনাদের অনুপ্রেরনাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
@ধন্যবাদ

৫| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

কিশোর মাইনু বলেছেন: ভাই গল্পটাকি আপনার নিজেরই লেকা গল্প?!?!?

০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আমি নিজেই লিখেছি সিনিয়র একজন লেখকের সাহায্য নিয়ে।
আপনাদের অনুপ্রেরনাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

৬| ০২ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সবার প্রিয় চলচিত্রকার, লেখক জহির রায়হান সম্ভত ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে নিখোঁজ হন। তার লেখা সময়ের প্রয়োজনে একটি সুন্দর গল্প। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের বাংলা বইয়ে ছিল। খুব সুন্দর।

০২ রা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: জহির রায়হান স্যার আমার প্রিয় চলচিএকার । তার লেখা সব কয়টি বই আমার কাছে আছে ।
সময় পেলেই তার লেখা মুগ্ধ হয়ে পড়তে থাকি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
@সাজ্জাদ ভাইয়া

৭| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: গতকাল পথের প্যাচালি দেখলাম আর মুগ্ধ হলাম।
আপনি ভালোই লিখেছেন।
লিখতে থাকুন সাথেই আছি।
প্রচুর পড়ুন, প্রচুর লিখুন।

০৩ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: লিখা ও পড়ার প্রতি আমার প্রেম অঢেল ।
এখন প্রয়োজন শুধু ব্লগার ভাইদের একটু অনুপ্রেরনা ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
@ভাইয়া

৮| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: কি টেকনোলজিস্ট?
খবর ভালো?

@"রোগীদের সেবা দানে দৃঢ় প্রত্যয়।"
-সুন্দর ইচ্ছে!;)


লেখা পড়লাম!
আসলেই সুন্দর হয়েছে!
#"রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই। সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম।"-- দারুন বর্ণনা! তবে এমন লেখা কোথায় যেন পড়েছি??:(

পুনশ্চঃ রক্ত শব্দটি একটু বেশী ব্যবহৃত হয়েছে!
ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

০৩ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১৬

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: মেডিকেল টেকনলজিষ্ট ডিপাঃ রেডিওলজী & ইমেইজিং।
অনেক অনেক ধন্যবাদ নিজাম ভাইয়া ।
আপনাদের অনুপ্রেরনাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে?

৯| ০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:০৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: #"রাইফেলটা কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট টিলাটার ওপরে এসে দাঁড়াই। সামনে তাকাই। বিরাট আকাশ। একটা লাউয়ের মাচা। কচি লাউ ঝুলছে। বাতাসে মৃদু দুলছে। কয়েকটা ধানক্ষেত। দুটো তালগাছ। দূরে আরেকটা গ্রাম।"........ এ অংশটি বিখ্যাত লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের 'সময়ের প্রয়োজনে' লেখাটির মিল আছে। এছাড়া বাকী লেখায়ও এর ছাপ স্পষ্ট। বিষয়টি হয়তো কাকতালীয়। তবে, ভাল হয় একটু মিলিয়ে দেখলে।

লেখার প্লট খুব সুন্দর, চালিয়ে যান। কাউকে অনুকরণ না করে নিজের মত লেখেন, ভাল হবে। শুভ কামনা রইল, রোকনুজ্জামান ভাই।

০৩ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৭

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: ঠিক বলছেন আপনি,,, বিখ্যাত লেখক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের 'সময়ের প্রয়োজনে' গল্পটির সাথে এই পর্বে কিছুটা মিল থাকছে । তবে দ্বিতীয় পর্বে অন্যভাবে লিখা হচ্ছে । নিজের মত লিখতেই আমার ভাল লাগে ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাদের অনুপ্রেরনাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.