নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবাহূত

রবাহূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার শৈশব এবং জাদুর শহর (৮)

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৫৮

সেই শীতটা ছিল নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সুন্দরতম সময় গুলির একটা।
আমরা ভাই বোনেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি তখন, ঢাকার বাসায় থাকে মেজ ভাই আর ফুলদি আর আমরা ছোট তিনজন বিমাতা ভয়ঙ্করী আর উনার এক ছেলে সহ কিশোরগঞ্জ,এখানে আসবার পথে শীতটা কাটাচ্ছিলাম গ্রামে। আর বাবা আজ ঢাকা তো কাল কিশোরগঞ্জ। রোগী দেখা, রাজনীতি, দাবা ফেডারেশন আর চীন মৈত্রী সমিতি তাই ব্যাস্ততা অপরিমেয়। সেই সুযোগে আমাদের এই দীর্ঘ ছুটি। এর আগে গ্রামে আসলেও অত ছোট ছিলাম বলে খুব বেশী ভালো লাগতো না কিন্ত সেবারের সেই স্মৃতি আমার সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে গেলো। আমার বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল বাংলা ঘড়ের সামনের দরজার চৌকাঠ, বেশ চওড়া সেই চৌকাঠে বসে দীর্ঘ সময় আমার কেটে যেত। সামনে সবুজ উঠান, উঠান পেরিয়ে গহীন দীঘি, তারপর শীতের নিঃসঙ্গ বিষণ্ণ খেত তারপর খাল, খাল পেরিয়ে কিছু দোকান পাঠ তারপর বিশ্ব রোড। লালচে ধূলা উড়িয়ে চিনি কলের ট্রাকটর গুলি যেত, খেলনা গাড়ির মত, ধুঁয়ার মত উড়ত ধূলা, পিছে পিছে দুষ্টু ছেলের দল সেই ট্রাকটর থেকে টেনে টেনে আখ বের করার চেষ্টা করে যেত নিরলস। ধূলা থিতিয়ে এলে দূর থেকে দেখতাম দুটো কি একটা আঁখ নিয়ে চলত কাড়াকাড়ি।
তারপর ফাঁকা পথ! কি এক বিষণ্ণ নীরবতা! শীতের মেঘহীন আকাশ ঝিকিয়ে উঠা রোদ্দুর, মাছরাঙ্গা হেন ধ্যানে থাকতাম নিমগ্ন প্রহর কি পল থাকত না সময়ের হিসেব। আমার এখনও রোদ বড় প্রিয় শীতের কোমল রোদ এর মত মিষ্টি আর কি হয়। আমার বৃষ্টিও প্রিয়, প্রিয় মেঘ মেদুর আকাশও, আসলে এই বেঁচে থাকাই এক আনন্দঘন যাত্রা, নিরন্তর স্থান, কাল পাত্রের এই আসা যাওয়া, নানা রসে বৈভবে কি অভাবে জীবনের এই যে এক এক রূপ, এর সবই সুন্দর। আর হারানো দিন সব সময়ই রঙ্গিন। সেই চৌকাঠে বসে কত সময় যে যেত পেরিয়ে, তার ঠিক নেই। আমার আরেকটা খুব প্রিয় সময় ছিল তখন শেষ বিকেল কি ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তটা। কুয়াশা গুলো ধোঁয়ার মত জমে জমে থাকতো দূরে দূরে, নিরন্ন নিঃসঙ্গ মাঠে। বাজার মুখি মানুষেরা সন্ধ্যার বাজার করতে কি আড্ডা মারতে বাজার এর দিকে যেতে থাকত, বাঙ্গালির হাসির গল্পের ইলাস্ট্রেশনের চাষির মত লোক গুলো, হাতে বোতল কি শিশি ঝুলিয়ে, নাছোড় বান্দা শিশুটি পিছে পিছে ঢলঢলে সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে, কেউবা লুঙ্গিখানা দু ভাঁজ করে গলায় গিঁট মেরে সুপারম্যানের কেইপের মত নাকে সিকনি গড়িয়ে চলছে বাপের পিছে পিছে। আর ঘরে তখন রাত্তিরের প্রস্তুতি কাজের বুবু কিংবা ঝিয়েরা হ্যারিকেনের চিমনী সাফ করছে, তেল ভরছ , শহর থেকে আসা আমরা দুয়েক লেয়ার গরম জামা গায়ে চাপিয়ে চায়ের অপেক্ষা করছি। সে কি শীত! রাতে বিছানার এক কাঁত থেকে আরেক কাঁতে গেলে মনে হয় কেউ বুঝি ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে। সেই সন্ধ্যা গুলো আমার বিভূতিভূষণের “আরন্যকের” সন্ধ্যার মত লাগতো। আরন্যকে এমন সন্ধ্যার একটা ছবি আছে, ভাই বোন ঘরে মুরগি কিংবা এমন কিছু তুলছে এর মাঝে একটা বুঝি ভেগেছে বোনটা তখন ব্যাকুল হয়ে ভাইকে বলতে থাকে “ভাগ্লুয়া হইরে ছনিয়া”... কবে পড়া সে বই তবু সে ছবি এখন রয়ে গেছে। বিভুতিবাবু নবেল পাননি এ নবেলেরই লজ্জা। সে ঝুপ্পুস অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে নামে শীত। ভাইবোনেরা সব্বাই লেপের ভিতর পা ঢুকিয়ে অবান্তর আড্ডায় কেটে যেত সন্ধ্যা একসময় ঘুম ঘুম চোখে খেয়ে না খেয়ে শুয়ে যেতাম, শীতের দীর্ঘ রাত। কুয়াসার টুপ টাপ ঝরে পড়া, রাত জাগা পাখিদের ডানা ঝাপটানো, প্রহ্রান্তে শিয়ালের ডাক।
এর মাঝে কোন এক সন্ধ্যায় হই চই লেগে গেলো, মাটির হাড়ি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি! কি! কামলা মুনিসরা বলছে “উলি উটসে”, “উলি উটসে”! কি ব্যাপার কিছুই বুজ্জছি না। ওরা শূন্য থেকে কি যেন ধরে ধরে মাটির হাড়িতে ঢাকা চাপা দিচ্ছে। ভয়ে ভয়ে কাছে গিয়ে দেখলাম একরকম পোকা ফিনফিনে ডানা ওয়ালা, ও উই পোকা। বুঝলাম উই যাকে ওরা উলি বলছে, তা কি হবে এ দিয়ে। কেউ একজন বুঝিয়ে বল্ল আর খুশিতে আমিও লেগে গেলাম “উলি ধরতে” দু পাঁচটা ধরি কি ধরি না কি উতসাহের কমতি নাই। যেন “ উৎসাহেতে উঠল মেতে ষণ্ডা হাতির বুক”। এ খুব প্রিমিটিভ পাখি ধরার কায়দা, বাঁশের ছাঁচ দিয়ে ত্রিশূলের মত একটা খাপ বানানো হয় যার নাম “কাম্পি” তার মাঝের ছোট বাহুটিতে লাগানো হয় উই পোকা আর দুই পাশের বাহুতে লাগানো হয় কাঁঠালের আঠা, পিরিতির মত। তারপর সেই কাম্পি জঙ্গলে কি বাঁশঝাড়ে গাছের পাতায় পাতায় আটকে দিতে হয়। দূর থেকে পাখি দেখে পোকা উড়ছে, আর ডানা ঝাপ্টে খেতে আসলেই কাঁঠালের আঠায় ডানা আটকে যায় আর কেউ তখন দৌড়ে পাখিটাকে ধরে ফেলে। আর আমিও এত দিনে বুঝলাম ঘরের চৌকাঠে কেন এক দলা আঠা থেবড়ে লেগে ছিল। খুব সকালে সে আঠা ছুড়ি দিয়ে চেঁছে তুলে জাল দিয়ে কাজে লাগানো হবে।
পরদিন খুব সকালে উঠে গেলাম, প্রবল উত্তেজনা! আমার করবার মত কিছুই নেই তবু কি আনন্দ কারণ সমস্ত আয়োজন আমাকে ঘিরেই আর যথারীতি কাকিমাই নির্দেশ দাতা। সব কাজ শেষে ঢুকলাম বাড়ীর পিছের জঙ্গলে ছেলে পুলেরা ফাঁদ গুলো লাগিয়ে দিলো গাছের পাতায় পাতায় দূর থেকে দেখতে লাগলাম। পাখি উড়ে আসছে, বউ কথা কউ, কি ছ্যতারে ( গ্রামে বলতো খ্যাচখ্যেইচ্চা), ডানা উড়ছে পাখির, নিষ্ঠুর চঞ্চু বধিবে এখনি মুক অন্ধ পোকাটিরে, অপেক্ষার প্রহর বড় দীর্ঘ! কিন্তু হায় বিঁধি বাম! পোকা সব খেয়ে যাচ্ছে পাখিরা কেউ সে মায়ার বাঁধনে ধরা দিচ্ছে না, কাঁঠালের আঠা মোটেও পিরিতের মত স্টিকি না! ব্যর্থ মন রথে বাড়ী ফিরে আসি আমাদের আঠা আমাদের সাথে বেঈমানি করেছে, পলাশীর ভিজে গোলা বারুদের মত। তবে কাকিমা ঠিকি কারুর কাছ থেকে একটা পাখি কিনে খাইয়েছিলেন। বেশ গোটা গোটা পেঁয়াজ দিয়ে ঝালে নুনে কষিয়ে। আর কোন দিনই আমার পাখি শিকার হল না, বড় হওয়ার পর দু একবার গিয়েছি বটে কিন্তু ছড়রা গুলি ছুড়ে পাখিদের মারতে ইচ্ছে আর জাগেনি। কাকিমা বেশ একখান গুলতিও বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার ছেলেদের কাছে স্লিং শট নামেই যা বেশী চেনা।শুধু তাই না কাদা মাটি দিয়ে গোল্লা গোল্লা করে গুলি বানিয়ে মাটির চুলায় শুকিয়ে গুলিও বানিয়ে দিয়েছিল কাকিমা আর আমার এক চাচাত বোন। সেই বোনটি কঞ্চি চেঁছে সরিষার তেল মেখে একটা বেশ তৈল চিক্কণ লাঠিও বানিয়ে দিয়েছিল। অন্ধের যষ্টির মত সে লাঠি গাছা সাথেই থাকত সব সময়। কি নির্মল আনন্দে কেটে যাচ্ছিলো দিন। শুধু মাঝে মাঝে কলের পারের কোনাকুনি কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে তাকালেই মনটা কেমন করে উঠত! কোমল দুটি হাত, জগতের সব মায়া ভরা দুটি চোখ দেখতে চাইত মন আমার, সে আনাস্বাদিত এক আঁখরের শব্দটি ব্যাকুল হয়ে ডাকতে চাইত মন।
সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটি হয়েছে আজ অনেক বড়। শাখা- প্রশাখা পল্লবে পুষ্পে সুশোভিত। চিরল চিরল পাতায় তার মায়ের স্নেহ। ফুল ফুটবার সময় যাওয়া হয়নি কখন সেখানে। দেখিনি কি তার বর্ণ কি তার শোভা! মাকে হারানোর ব্যাথা আমার নেই, না কেন, পাইনি তো অতটুকুও ডাকবার আগেই যে চলে গেছেন কিন্তু না পাওয়ার ব্যাথা বুঝি আরো করুন দিন দিন যা গাঢ় থাকে গাঢ়তর হচ্ছে। রবি ঠাকুর আমাদের লিখবার কিছুই বাকি রাখেন নি, তবে আমি বড় সুখি ছিলাম আমি এ লিখায় রবি বাবুর কিছুই কোট করিনি কিন্তু মা এর কথা মনে আসলেই আমার এ লাইন ক’খানা মনে পড়বেই...
“মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে
একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে-
মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়েনা মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে।
কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে-
পূজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে,
জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে-
মনে হয় মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে।
কোলের পরে ধরে কবে দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।“
জানি না মা দেখছে কিনা আমায় অনিমিখে, কিন্তু আমি দূর থেকে দেখতে পাই, সেই কৃষ্ণচূড়ার নিচে মা শুয়ে আছেন, কমলা ফুলে ফুলে ভরে আছে সে বৃক্ষের সারা গা, যেন মধুর আমার মায়ের হাসি! মা এর কোন স্মৃতি নেই আমার, তবে শুনে শুনে হয়ত মানুষের স্মৃতি তৈরি হয় কিংবা কে জানে অদ্ভুত নিয়মের বাইরে বুঝি নিউরনে কিছু স্মৃতি জমা কিংবা বিভ্রম তৈরি হয়েছে। যেমন নীল রবিন্সন বার্লির একটা কৌটোয় মা সুপারি রাখতেন, এটা আমার এত স্পষ্ট মনে হয়, ভাবতে অবাক লাগে। মা’র একটা কমলা রঙের শাড়ি ছিল কোন একদিন মা সে শাড়িখানা পরে বারান্দা দিয়ে পাকঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তখন বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি ছিল, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মা ছোট্ট একটি লাফ দিয়েছিলেন, জানিনা এ কোন কুহক নিউরনে, এ কোন মায়ার খেলা? এক বছরের কম বয়সের স্মৃতি মানুষের থাকে কি? সায়েন্স বলে থাকার কথা না, সাবকন্সাসে থাকলেও থাকতে পারে। এই ছবিগুলি এত স্পষ্ট তাই অবাক মানি। যতই বয়স বাড়ছে ততই বুঝি এই ব্যাথাটা হচ্ছে গাঢ়। বোনেদেরই দেখেছি মাতৃ রুপে শৈশব কৈশোরে, ভাগ্য নেহাতই মন্দ ছিল না পাঁচ পাঁচটি ছিল বোন আমার। ক্রমেই তাদের সংসার, সন্তান ব্যস্ততায় যতই না দূরে থাকি আমার সমস্ত আকাশ জুড়ে তারাই ছিল। কিন্তু হায় হারাবার জন্যি বুঝি কারো ভালবাসার রঙ বেশী রাঙ্গা হয়। সব চেয়ে যে ছোট সেই গেল সব চেয়ে আগে। ছায়ার মত আমরা ছোট দুজন বেরে উঠেছি, সংসারের তাপ উত্তাপ সামলেছি। হাসি কান্না ঝগড়া ঝাটি আনন্দে দুঃখে কেটে গেছে মুহূর্ত জীবন। হারায়ে বুঝি আজ কতটা একা আমরা। কিছু গান, কিছু টুকরো হাসির সহসা আগমন অবিবেচক কান্না হয়ে যখন তখন চলে আসে। ব্যস্ত সড়কে রেডিওতে হঠাত পুরনো গান, রোদ চশমা আর কতটা কান্না আড়াল করবে? ঘর সংসার গৃহস্থালির সহজ চর্চায় হঠাৎ ঝাঁপিয়ে আসা স্মৃতিমালা ঝাপসা করে দেয় সব। হয়ত মাছের কাঁটা ভাতের পাতেই রাখা, পরম যত্নে সরিয়ে দিচ্ছে পাছে আমার গলায় ফুটে। এখন হয়ত মাছের কাঁটা পাতে রাখলে সেই ছবিটি চোখে আসে ভেসে। এমনি কত হাহাকার নিয়ে এই যাপিত জীবন। কত টুকরো কথা কত গপ্প কত গান। হয়ত লিখছি কোন কবিতা কাঁচা আবেগে সেই তো প্রথম বিমুগ্ধ পাঠক। হয়ত বেয়াড়া নখ কেটে দিচ্ছে যত্নে আর বলছে আমার ভায়ের হাতটা কি সুন্দর! কি মায়া এ ভালবাসা। আমার বোনেরা কখনও আমাকে নাম ধরে ডাকেনি এখনো না “ভাই” ছাড়া কোনদিন ডাকেই নি কেউ! এ ভালবাসার তুল্য বুঝি আর কিছুই নয়। নিজের সন্তান হওয়ার পর বুঝতে পেরেছে কতটা কষ্ট তারা সয়েছে। বিশেষ করে সব চেয়ে বড় যে জন। হিংসুটে মন এখনো ভাবি আমি বুঝি তার সন্তানেরও অধিক। হয়ত তাই এখন সেই জায়গাটি হারাতে হল নাতি নাতনীদের কাছে। এই তো নিয়ম। ছেড়ে দিতে হয় স্থান, চির চেনা স্পর্শ, বর্ণ, গন্ধ!
এক সময় সব ফুরায়!
ছুটি ফুরায়! নতুন জীবন হয় শুরু।
বাবা এসে বাসা ভাড়া করেন শহরে, আমাদের চলে আসতে হয় এখানে। বাবা আবার ঢাকার বাসায় ফিরে যান, বিমাতা ভয়ঙ্করী তার পিত্রালয়ে, কাকার জিম্মায় নতুন বাসায় জীবন শুরু। নতুন স্কুল নতুন পরিবেশ, নতুন প্রতিবেশ। হলুদ দোতলা বাড়ীর দোতলায় আমরা উঠি। খোলা সিঁড়ি দিয়ে উঠলে চওড়া বারান্দা। আমাদের রুমের জানালা খুললে সারি সারি সুপুরি গাছ। ফ্যাকাসে নীল জেড বাটামের জানালা। ঘুলঘুলিতে চড়াই পাখির বাসা। নতুন নতুন সব বন্ধু জোটে, স্কুলে আর পাড়ায়। কত নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রতিদিনই। স্কুলের প্রথম বন্ধুটি অজয় বর্ধন বাবার বন্ধুর ছেলে, কাছাকাছি বাসা আমাদের তাই একসাথে স্কুলে যাই আর ফিরি। শান্ত মিষ্টি একটি শহর। রিক্সার ঘন্টি কি গ্রুর গাড়ির ক্যাঁচকোঁচ শব্দ, দিনমান নেই কোন ছুটোছুটি। আর সন্ধ্যা হতেই পাড়ায় পাড়ায় পড়ার শব্দ আর ধূপের গন্ধে ভরপুর চারিদিক। নীল আকাশ দেখেছি তখন ঝকঝকে, রাতের আকাশ দেখেছি কি বিশাল। গাছেদের ছায়া দেখেছি কি শীতল! আজ শহরের ঘিঞ্জি ফাঁকে নিঃশ্বাস নিতেও হয় কষ্ট। সে এক অন্য শহরের গল্প। এই তিলোত্তমার মত নাহউক সে সুন্দর কিন্তু গাঁয়ের কিশোরীর লাজুক নথের মত বড় ঝলমলে। এ এক নতুন রোমাঞ্চ! এ এক নতুন জাদুর শহর!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.