নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবাহূত

রবাহূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কোভিড 19 পজেটিভ রোগী এবং অসহায় আমরা

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৩



বুয়েটের এক ছোট ভাই ধরে নিলাম নাম আরমান (কাল্পনিক নাম) আমাদের ফোরামে জানালো তাঁর বাবা ও কাকা মহাখালী একটি মেসে থাকেন, এপ্রিলের এক তারিখ থেকে তাঁরা দু’জন জ্বরে পড়েন, তাঁর বাবা ভালো হয়ে গেলেও তাঁর কাকার জ্বর না সারায় তাঁরা BSMMUতে তাঁর কাকার টেস্ট করান, এবং রাতের বেলা এসএমএস এর মাধ্যমে জানতে পারে তাঁর কাকা জনাব আব্দুর রহমান (বয়স ৩৯) করোনায় আক্রান্ত। আরমান তাঁর গ্রামের বাড়িতে রয়েছে।

এখান থেকেই শুরু ঘটনার। মুহূর্তে সেই পোষ্টে নানা রকম উপদেশ দেয়া শুরু হল, জেনে না জেনে, কি করতে হবে, কিংবা এই অসুখ আসলে কিছুই না, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এডমিন হওয়ায় তাড়াতাড়ি কমেন্ট বন্ধ করে আরমানের সাথে যোগাযোগ করি। সব জেনে আমার চেনা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের এক ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করি। উনি জানান BSMMU এর রেফারেন্স লাগবে ভর্তি হতে ওইখানে। তাহলে উনারা আবার রিকশা দিয়ে করোনা ভাইরাস ছড়াতে ছড়াতে যাবেন বিএসএমইউতে ?

BSMMU এর এক চেনা ডাক্তারকে ফোন দিলাম, এর মাঝে রাত এগারটার মত বেজে গেছে, উনি বললেন উনাদের টিকেট এবং এসএমএস দেখালেই কুয়েত মৈত্রী ভর্তি নিবে। আমি আবার কুয়েত মৈত্রীর ডাক্তার কে কল দিলে উনি জানান উনাদের ওখানে সীট খালি নাই।

কি করবো আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটা জরুরী এম্বুলেন্স সার্ভিসের নাম্বার পেয়ে সেখানে কথা বললাম উনি বলল একদম অসহায় লোকদের তাঁরা সাহায্য করেন, তবে উনি সব শুনে বললেন ৯৯৯ এ কল করতে। আমি আরমান কে সেটি জানালে, ৯৯৯ সে কল করে, তাঁরা তাকে আরেক নাম্বারে কল করতে বলে, সেখানে কল করলে তাঁরা আরেকটি নাম্বার দেয় যা বন্ধ। আরমান আমাকে জানায়, এখন কি করব?! উনারা কি মেসেই থাকতে থাকবেন?! ভয় এর কারণ উনারা ঘন বসতি পূর্ণ এলাকায় আছেন, রোগটা আরও ছড়াতে পারে, উনাদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। আর এমন পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট ছেলেখেলা নয়, এলাকা লক ডাউন হতে পারে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। কিন্তু কোথাও থেকে কোন সাহায্য আসছে না।

বুয়েটের এক ছোট ভাই যিনি পুলিশে আছে, সে জানালো রেজাল্ট পজেটিভ হবার সাথে সাথে সেন্ট্রাল কনট্রোল রুমে চলে গেছে ২৪ ঘণ্টার মাঝে তাঁরাই ব্যবস্থা করবে। তারপরও আমাকে সে IEDCR এ কল করার বুদ্ধি দিল। আমি নেট থেকে হট নাম্বার নিয়ে কল করলাম, এক মেডিক্যাল অফিসার ধরলেন। উনি সব শুনে বললেন যেহেতু শ্বাস কষ্ট নেই তাহলে বাসায় থাকুক, আর আইসোলেটেড থাকুক, আমি উনাকে বুঝালাম আবার শুরু থেকে উনারা মেসে থাকেন, উনাদের পরিবারের সবাই টাঙ্গাইল, তাই আইসোলেটেড করা বা রোগীর যত্ন নেয়া সম্ভব না, তাঁর উপর উনারা নিজেরা রান্না-বারা করে খান, এই অবস্থায় উনারা রোগটাকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারেন। তখন উনি আমাকে কুরমিটলার কনট্রোল রুমের নাম্বার দিলেন, আর কুয়েত মৈত্রীর সুপারেন্টেন্ডেন্টের নাম্বার দিলেন, তবে উনিও জানালেন কুয়েত মৈত্রী ফুললি অকুপাইড। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে আপনাদের রেস্পন্সিবিলিটি কি? উনি বললেন সাস্পেক্টেড রোগীর স্যাম্পল কালেকশান, পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট নয়।

উনি যে নাম্বার গুলি দিলেন সেখানে ট্রাই করলাম কাউকে পেলাম না। একটু পরে উনিই আমাকে কল করলেন রোগীর ডিটেইল আমার কাছ থেকে নিলেন, আমি জানতে চাইলাম এখন কি হবে, উনি বললেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি! আমিও আরমানকে জানালাম। এবং নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে গেলাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল ছয়টায় আরমানের মিসড কল, সাথে সাথে কল দিলাম কি ব্যাপার জানতে।

হতাশার কথা! তখন পর্যন্ত কেউ কোন যোগাযোগ করেনি এমনকি কোন ফোন ও না। উনারা দুই ভাই, এক ডাক্তার এর সাথে কথা বলে, রিকশা করে কুরমিটলা হাসপাতালে যেয়ে ছোট ভাইকে ভর্তি করে দিয়ে এসেছেন। তারপর উনি আবার রওয়ানা দেন বিএসএমইউ এর পথে নিজের টেস্ট করবার জন্য জন্য। কি অসহায় অবস্থা!

এ লেখা শেষ করবার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এই যে, উনারও কোভিড 19 পজেটিভ এসেছে, পুলিশ উনাদের মেস লক ডাউন করে দিয়েছে। শুরু হল সেকেন্ড চ্যাপ্টার; এতক্ষন থানা, এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আরমান, আরমানের বাবার সাথে কথা বলাবলি শেষ হল। থানা বলছে এ্যাম্বুলেন্স আসলে তালা খুলে দেয়া হবে, রোগীকে নিয়ে যেতে পারবে এ্যাম্বুলেন্স।

এখন আশা করছি বাকী কাজটুকু হবে। তবে শেষ পর্যন্ত উনি হাসপাতালে না পৌঁছানো পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না!

আমরা সবাই শুনছি, দেশ প্রস্তুত, সবাই প্রস্থুত, এখন আমি জানতে চাই এ কেমন প্রস্তুতি, একটা রোগীর দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না কেন? তাঁকে নিজে কেন হাসপাতালে যেতে হবে রিকশায় করে? আর এই ঘুরাঘুরিতে আর কেউ ইনফেক্টেড হয়ে গেছে কিনা কে জানে!
অসহায়ের মত চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নাই!

ধন্য হে স্বদেশ আমার!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: রোগে শোকে ভুখে মরবো আমরা

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

রবাহূত বলেছেন: আল্লাহ্‌ আমাদের ভরসা ভাই! তবে আশার কথা প্রচুর লোক সাহায্য করছে।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: দরিদ্র দেশে, দুষ্টলোকদের দেশে ভালো কিছু আশা করা ভুল।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০০

মা.হাসান বলেছেন: ধন্য হে স্বদেশ আমার।

মন্ত্রীরা বলেছেন উন্নত বিভিন্ন দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থা ভালো। ওনার কি আর মিথ্যা বলছেন? খবর নিলে দেখা যাবে বিলাত-আম্রিকা-সিঙ্গাপুরের চেয়ে আমাদের অবস্থ আসলেই ভালো।

সাবধানে থাকবেন।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৯

কহেন কবি কালীদাস বলেছেন: যেকোনো কাজের হ-জ-ব-র-ল এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হোলও আমাদের এই প্রিয় স্বদেশ।
একটা দেশে বেশীরভাগ যদি এতো দুর্নীতি পরায়ন হয়, কিছু করার থাকে না। কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না।
একা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কতদুর সামলানো সম্ভব?
এখনো আশা আছে হয়ত একদিন আমাদের দেশের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.