নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসঙ্গায়িত

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু!!!!

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

Messages (1)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৪

প্রথম পর্ব...


[বি: দ্র: গল্প বুঝার ক্ষেত্রে কনভারসেশনগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো]


আজাদের ফোনে কল হচ্ছে। ফোন ভাইব্রেটিং মুডে থাকার ফলে বেঞ্চে শব্দ হতে থাকে! ক্লাসরুমে এমন শব্দ ম্যাডামের চোখ এড়িয়ে গেলেও কান এড়িয়ে যেতে পারলো না! ম্যাডাম চেঁচিয়ে উঠে বললেন, "ক্লাসে মোবাইল আনা নিষেধ তারপরও কার এত বড় সাহস যে মোবাইল নিয়ে এসেছো?" ম্যাডামের হুংকারে প্রচণ্ড অমনোযোগী ছাত্রটিও হঠাৎ মনোযোগী হয়ে উঠল! এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দিল যেন সে কতকাল ধরে ম্যামের লেকচার মনোযোগ দিয়ে শুনছিল! ফোনের ভাইব্রেশন চলতেই থাকলো। ম্যামও তার তীক্ষ্ণ কানের জোরে খুঁজে পেল আজাদকে। ধমক এবং অপমান করে ক্লাস থেকে বের দিল। ক্লাস থেকে বের হয়ে ফোন বের করে দেখলো শাকিলের কল! শাকিল নায়মার জন্য আজ কলেজে আসে নি! সারাদিন ঘুরার প্লান। তারা হল নয়াজুগল! তাই মনে সর্বদাই বসন্ত লেগে থাকে! সে দেরি না করে কল করলো, রিসিভ করতেই বললো,
- ওই তুই সাগরের লাস্ট স্ট্যাটাস দেখছিস?
একটু ভেবে আজাদ বললো গতকালেরটা নাকি? জবাবে শাকিল জানালো সাগর কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে তাড়াতাড়ি দেখে নে।
কল কেটে আজাদ সোজা কমন রুমে চলে গেল। ফেসবুকে লগ ইন করেই নিউজফিড খোজা শুরু করল। কয়েকবার "See more stories" এ ট্যাপ করার পর সাগরের স্ট্যাটাসটি পাওয়া গেল! লেখা ছিল, "সাদা কালো এই জীবনে হয়তো নতুন দিন শুরু হতে যাচ্ছে!!!"
লেখাটা বিরবির করে পরল আজাদ! যাক, সাগরের জীবনেও কেউ আসছে হয়তো। বিজয়ের ঠাট্টা মার্কা হাসি দিল সে যার অর্থ কেউ বুঝলো না। সেও বুঝে নিয়েছে কেন সাগর আজ কলেজে অনুপস্থিত। রাত জেগে চ্যাটিং করার ফলাফল ছাড়া অন্যকিছু আন্দাজ করাও বোকামি!


গরগর করে নওশীন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে! গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে এমনভাবে নাক ডাকে সে। সারা রাত জেগে ফেসবুকিং আর চ্যাটিং এর কারণে ভোর ৫টার দিকে ঘুমিয়েছে! সে রাত জাগায় এতটাও অভ্যস্ত হয়নি যে ভোর ৫টায় ঘুমিয়ে সকাল সাড়ে আটটার ক্লাস সময়মত করবে! দুপুর অব্দি ঘুমানোর পর অলসভাবে চোখ খুলে দেখে তার বড় ভাই কানন দারিয়ে আছে! মুহূর্তের মধ্যে ঘুম আর অলসতা গুম হয়ে গেল।
- গুড মর্নিং, ভাইজান! দাত বের করে দুষ্টুমি মাখা হাসি দিয়ে বললো।
- গুড ইভেনিং, তাড়াতাড়ি আয়, তোর জন্য বসে আছি, খাই নি এখনও...
নওশীন জানে ওর বড় ভাই ওকে কতটা ভালবাসে! বকা ঝকা করে মাঝে মাঝে কিন্তু আদরটাই বেশি। নওশীন ওর ভাইয়ের সাথে সব কথাই শেয়ার করে। মা বাবার চেয়ে কানন নওশীনকে বেশি ভালবাসে যার ফলে নওশীনের অনেক ভুল ত্রুটি লুকিয়ে রাখে কানন। এই যেমন আজ কলেজে না যাওয়া, কানন জানে কি কারণে নওশীন যায় নি কলেজে তবুও শেষ বারের মত লুকিয়ে রাখে নওশীনের দোষগুলো। কানন যতই বলুক এবারই শেষ কিন্তু বারবারই সে ভুলে যায় কতবারে শেষ হবে। মেসেঞ্জারে আরেকবার গিয়ে চোখ বুলিয়ে এল যে কিছু মেসেজ এল কিনা! তার আগে ফোন সাইলেন্ট রাখা উচিৎ। নেট কানেকশন অন করলেই প্রায় ১০/১২টা মেসেজ এল যার মধ্যে আটটা মেসেজ সেই ছেলেটির! শেষ মেসেজ এল, ঘুমালেন নাকি? নওশীন একটু করে হাসে আর ভাবে এখন রিপ্লাই করবে নাকি পরে দেবে।
- কিরে নওশীন, আসিস না কেন? ভাইয়ের ডাকে রিপ্লাই না দিয়েই চলে গেল!


- ঘুমালেন নাকি?
ভাইব্রেশনে টের পেল মেসেজ এসেছে! সাগর সাথে সাথে রিপ্লাই দিল, "আরে না। দেরি আছে। ভোরের দিকে ঘুমাবো, আপনি?
অপর পাশের ফিরতি রিপ্লাই আসলো, আপনি যখন ঘুমাবেন তখন ঘুমাবো।
- আমার ঘুমের সাথে আপনার জেগে থাকার সম্পর্ক কি?
- বারে! আপনি জেগে আছেন আর আমি ঘুমাবো তা কি করে হয়?
সাগরের মন হয়তো কিছু একটা অনুভব করছে, এক অজানা আকর্ষণ! হয়তো প্রেমে পড়ার লক্ষণ!
- আচ্ছা ঠিক আছে। অন্য কিছু নিয়ে গল্প করি?
- কি নিয়ে?
- এই ধরে নিন, পছন্দ অপছন্দ!
দুজন দুজনের সাথে অনেক কিছু শেয়ার করতে থাকে! রাত গভীর হতে থাকে, অনেক কথাও জমতে থাকে যা টাইপের মাধ্যমে বলা যায় না! এভাবে ভোর হতে থাকে। পূর্ব আকাশে আলো চোখ মিলে তাকালে সাগরের ঘুমানোর সময় হয়! যার ফলে কলেজ মিস হয়। এক বেলা মেসেজ না দিলে সময় যেতে চায় না সাগরের। বারবার Messages (1) এর অপেক্ষায় থাকে, কখন সেই কাঙ্ক্ষিত মেসেজ আসবে। মোবাইলের চার্জগুলোও এভাবে ফুরাতে থাকে।


স্কুল লাইফ শেষ করে কলেজের শুরু। রাহাত, সজীব, সাগর, আজাদ, শাকিল ও নওশীন একই কলেজে পড়ে এবং ক্লাসমেট! নায়মা পরে মহিলা কলেজে। রাহাত, সজীব, আজাদ, শাকিল ওরা চারজন স্কুল জীবনের বন্ধু। নওশীন ও সাগর নতুন। সাগরের বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। তিনি একজন কমান্ডর। কিন্তু তিনি চান না তার ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিক! কারণ ট্রেনিং এ যে পরিশ্রম করতে হয় সেটা সাগরের দ্বারা সম্ভব না। সজীবের বাবা এবং আজাদের বাবা ছোট বেলার বন্ধু এবং দুজনেই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন। শাকিলের বাবা ব্যবসায়ী এবং নওশীনের বাবা ডাক্তার।
বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় ক্লাসে নওশীনের পিছনে বসেছিল সাগর। সাগরের পাশে বসেছিল আজাদ এবং শাকিল। আজাদ এবং শাকিল কথাবার্তা বেশি বলছিল যেটা নওশীনের খুব বিরক্ত লাগছিল!শাকিল খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে। ব্যাগ থেকে কাগজ বের করে এদিকে ওদিক ঢিল ছুড়ছিল। আজাদ বললো, "একটা কাজ কর, একটা কাগজ ফ্যানে মার, দেখি কার লাগে সেটা!"
যেই ভাবা সেই কাজ! স্যারের ক্লাস ভাল লাগছে না সাগররের তাই খাতায় কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছে! ভাল লাগছে না এমন বকবকানি। কাগজ ছিড়ে দলা মোচড়া করতে লাগলো সাগর! শাকিল কাগজটি ফ্যানের দিকে ছুড়ে মারলো এবং পাখায় লেগে সরাসরি নওশীনের নাকে লাগে! সে পিছনে ফিরে দেখে সাগরের হাতে আরেকটা কাগজ! রাগে সে স্যারের কাছে বিচার দিল! স্যার শুরু করলেন যা তা বকাবকি! ছাত্রীর বিচার বলে কথা। আজাদ আর শাকিল একদম চুপ হয়ে গেল। সাগরকে বের করে দেয়া হল এবং উপহার হিসাবে প্রেসেন্ট মিস! পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হল। এ ঘটনায় আজাদ শাকিল দাত চেপে হাসছে! কারণ একটা মোরগ পেয়েছে তারা। নওশীনের চোখে সাগর খারাপ হওয়া শুরু করল! কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে সেই দলামোচড়া করা কাগজ খুব ছোট ছোট টুকরা করে ছিঁড়ছে। বিনা অপরাধেই সে অপরাধী হল। চুপচাপ বসে আছে, ভাবছে মেয়েটা যদি সরি বলতো! এমন সময় আজাদ আর শাকিল এল সাগরের কাছে,
- কি নাম তোর? শাকিল একটু গম্ভীর স্বরে বললো।
- সাগর, আবরার নবী সাগর।
- হুম, বাসা কোথায় তোর?
- পশ্চিমবাজারে, রহুল নায়েকের মেসে থাকি!
- ওহ আচ্ছা! ওই মোটা বুইড়ার মেসে থাকস? আজাদ লাফিয়ে সামনে এসে বললো।
- শোন, মেসে সমস্যা হইলে বলিস। আর গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি তর?
- না।
- তারমানে তুই প্রেমের ভার্জিন কুমার! এই বলে শাকিল আর আজাদ জোরে জোরে হাসতে লাগলো! শাকিল আবার বললো, শোন গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ডেটের ব্যবস্থাও করে দেব, রুম লাগলে বলিস।
সাগর থতমত খেয়ে বললো, না না সেসব কিছুই লাগবে না।
- তুই তো বিরাট ভদ্র ছাওয়াল রে!!! বাদ দেই, আমি শাকিল আর ও আজাদ।
ছোট পরিচয় পর্ব শেষ করে শাকিল আর আজাদ উঠে গেল সেখান থেকে।


বাসায় ফিরে নওশীন ম্যাসেঞ্জারের টুং টাং আওয়াজ এর জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকে। গতকালের মেসেজ ছাড়া অন্য কিছু সে দেখতে পাচ্ছে না! ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু মেসেজ আসে না। উদাস মনে বসে ম্যাসেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ খেয়াল করলো সে নেট কানেকশন চালু করে নি! নিজেকে হাজারটা গালাগাল দিয়ে নেট চালু করল। কিছুক্ষণ পর আবারও পাঁচ ছয়টা মেসেজ এল এবং সব ওপাশের অপরিচিতর মেসেজ! ধীরে ধীরে সব মেসেজ গুলো পরলো। সবকিছুর রিপ্লাই দিল কিন্তু ওপাশ থেকে মেসেজ আসছে না। অপরিচিত ১০ মিনিট আগে একটিভ ছিল। নওশীন লিখে পাঠালো, মেজাজ ভাল না। কিছুই ভাল্লাগছে তার! অপেক্ষা করতে থাকলো সেই অপরিচিতর জন্য। খাওয়ার টেবিলে বসেছে কিন্তু একটু পরপর নজর দিচ্ছে ফোনের দিকে।


মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশনে দেখল অপরিচিতার, তিন চারটি মেসেজ! তারমধ্যে শেষটি ছিল তার অনেক মন খারাপ! কিছুটা কৌতুহল নিয়ে সাগর জিজ্ঞেস করলো, কেন? কি হয়েছে? কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই এল,
- এত দেরিতে রিপ্লাই করলেন যে?
- বৃষ্টি ছিল তাই বাসায় আসতে দেরি হল।
- কি করেন?
- চ্যাটিং, আপনার সাথে। আপনি?
- সেম।
- মন খারাপের কারণ কি? বললেন না যে!
- একটা ছেলে খুব ডিস্টার্ব করেছে, ইচ্ছা হচ্ছিল চড় দিয়ে দাত ভেঙে দিই!
মেসেজটি দেখে একটু সন্দেহ হল কলেজের মেয়েটার উপর! সাগর আরেকটু গভীর সন্দেহ নিয়ে বললো, কি করেছে ছেলেটা?
- ক্লাসে বসে ছিলাম, পিছন থেকে কাগজ ছুড়ে মারছিল! একটা তো আমার মাথায় লেগেছে!
সাগর বুঝতে পারছে না এটা কি ওই মেয়েটার আইডি কিনা! আর মেয়েটার আসল আইডি তো মাঝে মাঝে সাজেসটেড লিস্টে দেখা যায়! কি যেন নাম মেয়েটার আইডির, ভাবতে ভাবতে মনে পরে যায় আইডির নাম "মেঘবরণ নওশা"
- ব্যস্ত নাকি? রিপ্লাই দিতে লেট হচ্ছে যে?
- আরে না না, নেট প্রবলেম করছে!
ধীরে ধীরে সন্দেহ বেড়ে যাচ্ছে! মনে আরেকটা প্রশ্নও জেগে উঠে যে সাগরের আইডিতে সে নিজের ছবি দিয়ে রেখেছে। আর নওশীন তাকে ভাল করে চিনেছে ক্লাসে তাতে কোনো সন্দেহ নেই! তাই যদি হয় তবে নওশীন কেন ওর সাথে মেসেজিং করছে! আর মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হিসাবেও পরিচিত কেউ নেই।
- আচ্ছা বাই, রাতে কথা হবে, টেক কেয়ার।
অপরিচিতার শেষ মেসেজ পেল সাগর। থাম্বস আপ দিয়ে চ্যাট অফ করে রাখলো সাগর। শুয়ে শুয়ে ভাবছে নওশীন কি সরি বলতে চাচ্ছে নাকি বলতে পারছে না দেখে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে! হয়তো একটু হেজিটেড ফিল করছে!


ক্লাসের এক বেঞ্চে বসে আছে সাগর। আগামীকাল রসায়ন পরীক্ষা কিন্তু তার কিছু পড়া হয় নি। গতকাল যে বইটায় পড়া দাগিয়েছিল সেটা সাইকেল থেকে ড্রেনে পরে যায়! ক্লাসে পরিচিতদের মধ্যে শাকিল আর আজাদ আছে। শাকিল, আজাদ, রাহাত ও সজীব আড্ডা দিচ্ছে। সাগর যেয়ে বললো আগামীকালের পরীক্ষার সাজেশন লাগবে। ওর মুখ থেকে সাজেশন শোনার পর তারা একে অপরের দিকে তাকায়!
- আমার কাছে নাই, তবে ফোন নাম্বার নিয়ে যা, রাতে কল দিস। সজীব তার ফোন নাম্বার সাগরকে দিল। রাতে বাসায় ফিরে পুরানো এক রসায়ন বই নিয়ে বসে পরলো সাগর। কল করল সেই নাম্বারে, একটু পর রিসিভও হল,
- আসসালামু আ'লাইকুম, কে বলছেন?
- জ্বী আংকেল আমি সাগর, সজীবের ক্লাসমেট। সালামের উত্তরটা সে মনে দিয়েছে।
- সজীব কে আর সাগরকে?
সাগর নাম্বারটা আরেকবার দেখে নিল, খাতার নাম্বারের সাথে মিলিয়েও নিল। সে তো সঠিক নাম্বারেই কল দিয়েছে কিন্তু সজীবকে পাচ্ছে না!
- তুমি কে? নাম কি তোমার?
- জ্বি আমি সাগর, ডি. এল কলেজে সায়েন্সে ইন্টারে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।
- ডি. এল কলেজে.... সায়েন্স নিয়ে পড় তাও আবার ইন্টার ১ম বর্ষে! লোকটি ঠেকে ঠেকে সন্দেহ নিয়ে কথা বলছে!
- জ্বি জ্বি, থাকি পশ্চিমবাজারে।
- এক মিনিট..
এই বলে সে নওশীন বলে ডাক দিল! সাগরের বুক হঠাৎ ধক করে উঠল। এই নওশীন আবার কে? লোকটি বললো, "সাগর বা সজীব নামের তোর কোনো ক্লাসমেট আছে?"
- হ্যালো কে?
- আমি সাগর!
নওশীন অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে পারলো এটা সাগর! "আব্বু তুমি যাও আমি কথা বলে আসছি।"
- তোমার তো সাহস কম না! সোজা আব্বুর ফোনে কল দিছো? লোডের দোকান থেকে নাম্বার দিছে? নাম কি দোকানের? আর কে দিছে নাম্বার তোমাকে? দরজা বন্ধ করে রেগে কথাগুলো শুনিয়ে দিল সে!
- না ইচ্ছা করে দিই নাই।
- অনিচ্ছা করে দিছো তাহলে? মেয়েদের সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা হয় তোমার?
- আমি সত্যিই..
আর কিছু বলতে দিল না নওশীন! ইতর, বদমাশ বলে কল কেটে দেয় সে! সাগর ভাবছে সজীব এমন করলো কেন ওর সাথে? নাম্বার না দিতে চাইলে মানা করতো বা স্যারের নাম্বারটাই দিত কিন্তু নওশীনের নাম্বার কেন দিল। সেদিন আর পড়ায় মন বসল না সাগরের। ক্ষণেক্ষণে দমকা হাওয়া এসে রসায়ন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দিয়ে যায়। বসে বসে গালে হাত দিয়ে পেপার ওয়েট ঘুরাচ্ছে সাগর। আজ যা হয়েছে তা একদমই অনাকাঙ্ক্ষিত! ফেসবুকের জগতে যাওয়ারও ইচ্ছা হচ্ছে না তার।

কলেজে এসে দেখে ক্লাসের সবাই গতকাল রাতের ঘটনা বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে পাল্টেভাবে উপস্থাপন করছে। ইচ্ছা করছে সাগরকে চড় থাপ্পড় দিয়ে অপমান করা হোক। বান্ধবীদের কানাকানি পরে গেল। রাগে আবারও সাগরের দিকে এগিয়ে গেল নওশীন। অল্প স্বল্প কথা বলে নিজ আসনে বসে পরল। সারাটা সময় মুখ বন্ধ করে ছিল সে। নওশীনের কথার একটা উত্তরও দেয় নি। একসময় ক্লাসে স্যার ঢুকলেন, এসেই তিনি খাতা দিলেন সবাইকে। ২০ মার্ক্সের প্রশ্ন পেয়ে সাগর হাত গুটিয়ে বসে আছে। কিছুই তার কমন পরে নাই, টুকটাক যা জানতো সেটাও লিখতে ইচ্ছা করছে না তার। সম্পূর্ণ সাদা খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেল ক্লাস থেকে। চাইলে দেখাদেখি করতে পারতো কিন্তু মন নেই লেখাতে। এই পরীক্ষার নাম্বার ইয়ার ফাইনালে কোনো কাজে আসবে না ঠিকই কিন্তু স্যারের নজরে খারাপ গেল সাগর! কলেজ শেষে সজীবকে শান্ত গলায় সাগর বললো,
- এমনটা না করলেও পারতিস সজীব, শুধুশুধু আমাকে সারের সামনে কালার করলি।
- আরে এটা শুধু মজা করার জন্য, সিরিয়াসলি নিস না।
সাগর আর কিছু না বলে হাটা শুরু করলো। মন মানসিকতা খুবই খারাপ সাগরের। বাসার কারো ভাল কথাও গায়ে কাটা কাটা লাগে।


- আচ্ছা, আপনাকে ইদানিং ফেসবুকে দেখা যায় না কেন?
নওশীন ফিরতি মেসেজের অপেক্ষায় আছে।
- কেন? আপনি কি আমার অপেক্ষায় থাকেন?
অপরিচিত হয়তো আচ করে ফেলেছে নওশীন তার অপেক্ষায় থাকে। অনেক কিছু টাইপ করে সে কিন্তু ব্যাকস্পেস নামক বাটনের সাহায্যে সব মুছে যায়।
- এমন কি টাইপ করছেন যে এত টাইপিং দেখাচ্ছে?
নওশীন ভেবে পায় না কি লিখবে সে! খুঁজে পাচ্ছে কিছুই, বোধ হয় পৃথিবীর সকল বর্ণমালা হারিয়ে গেছে! অনেকক্ষণ পর ভেবে চিন্তে বললো,
- নেট কানেকশন ডিস্টার্ব করতেছে
- ওয়াও অপরিচিতা! আমার ডায়ালগ আমাকেই দিচ্ছেন? ব্রেভ!!
- আপনার কাছ থেকেই শিখলাম। আচ্ছা আপনার নাম কি?
- সেটা না হয় অজানা থাক, যদি কখনও দেখা হয় তখন জেনে নিয়েন!
- খুব চালাক তো আপনি?
- আপনার নাম কি আমাকে বলবেন নাকি সেম ডায়ালগ শুনিয়ে দিবেন?


- আপনি তো নাম দিয়েই দিলেন!
- কোনটা?
মনে মনে সাগর ভাবছে সে আবার কবে নাম দিল!
- ওই যে অপরিচিতা বললেন না, সেটাই ডাকতে পারেন।
- এই নামে ডাকার জন্য তো একটা মাধ্যম দরকার!
ওপাশের অপরিচিতা বুঝতে পেরেছে এপাশে কিসের বায়না দেয়া হয়েছে। অপরিচিতাও ঘুরিয়ে বললো,
- The number you've called is busy now, please don't try again later, thank you...
সাগর জানতো এমন কিছুই রিপ্লাই আসবে।
- চাহিবামাত্রই ইহার বাহককে দিতে বাধিত থাকিবেন।
- সেই লেখা অনুভূতিতে কাজ করে না। সময় হলে ধরা দেবে।
- হা হা হা! আপনিও কম চালাক না অপরিচিতা।
- যেমনটা আপনি
- ঠিক আছে, গ্রাহক এখন অফলাইনে যাচ্ছে। টেক কেয়ার।


- কিরে মামা শুনলাম ডেটিং নাকি সেই চলতেছে? মানে ঘুরাঘুরি আরকি..
আজাদের প্রশ্নটায় শাকিলের মাঝে লজ্জা লজ্জা ভাব চলে এসেছে! প্রসঙ্গ কাটানোর জন্য বললো,
- আজ কলেজে কি পড়াইছে?
শাকিলের এমন প্রশ্নে রাহাত, আজাদ আর সজীব আকাশ থেকে পরলো! তারা ভাবছে কার মুখে কি শুনছি! আজাদ বললো,
- লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী হয়েছো দেখছি! আচ্ছা বলতো, হাইড্রোজেনের যোজনী কত?
শাকিল আর পারছে না উত্তর দিতে। অনেক ভেবে চিন্তে বললো সাত!
- সাত! ওয়াও! জানতাম না তো।
রাহাত হাসতে লাগলো।
সজীব চায়ের কাপটা রেখে বললো করিম চাচা (চাওয়ালা) কে বললো,
- চাচা আপনার জন্য একটা অ্যাসিস্ট্যান্ট পাইছি?
করিম চাচা উৎসাহ নিয়ে বলল, কে?
সজীব শাকিলের কথা বললে করিম চাচা বললেন, "ধুর! ওর মত ছাগলরে দোকানে নিলে লবণের চা দিয়া দিব!! দরকার নাই আমার..."
এত বড় অপমান শাকিলের সহ্য হল না!
- ওই তোরা ভুলে যাবি না আমিও প্লাস পাইছি..
- তোরে প্রশ্নও আমরা দিসি, না হইলে ব্যাডা জুনিয়রদের ক্লাস করতিস!
ব্যস একটু বেশি হয়ে গেল অপমান, শাকিল আড্ডাস্থল ত্যাগ করে অন্যত্র গমণ করিল।
- রাহাত কি খবর আমাদের কাজের? আজাদ বললো।
- চলতেছে, চ্যালেঞ্জ যখন নিছি তখন পূর্ণ করবই।
- হুম এক তীর দুই শিকার আর সবাই মিলে পার্টি!


বরাবরের মতই নওশীন সাগরকে দেখলেই বিরক্তিকরভাবে এড়িয়ে যায়। সাগর সেটা খেয়াল করে কিন্তু কিছু বলে না। দিন দিন নওশীনের এমন ভাব সাগরের মধ্যে একপ্রকার ঘৃণার জন্মাদান করলেও সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কারণ তার কথা বলার মত বন্ধুর খুবই অভাব। রাহাত সাগরের কাধে হাত রেখে বললো,
- বন্ধু খুব উদাস মনে হচ্ছে?
সাগর শুধু একটা শুকনা হাসি দিয়ে বললো, কিছুই না, এমনি!
- দিন কাল ভাল যাচ্ছে তো?
- এইতো চলে আরকি।
এমন সময় স্যার বললেন, "এই রাসায়নিক সমীকরণ এর সমাধান কে করতে পারবে?"
সজীব সামনে বসেছিল, বেশ দক্ষতার সাথে স্যারকে বললো সাগর পারবে! সাথে সাথে স্যার ডেকে নিল বোর্ডে! একটা একটা অনু মিলাচ্ছে আর ক্লাসের হাসাহাসি বারছে। সাগর ভাবছে হয়তো সমাধান হয় নি। স্যার তাকাতেই সাগরকে একটা ধমক দিলেন!
- তুমি কি লিখছো পিঠে এসব? হুংকার ছেড়ে বললেন।
সাগর পিঠের দিকে হাত দিতেই একটা কাগজ পেল। লেখা ছিল "আলু স্যার!!!"
রসায়নের সিনিয়র স্যারকে ডিপার্টমেন্টের সবাই আলু স্যার বলে ডাকে! সেই সুবাদে ইন্টারের ছাত্রছাত্রীও তার এই নাম জেনে গেছে। কাগজটা শার্টের সাথে চুয়িংগাম দিয়ে লাগানো ছিল।
- সরি স্যার, আর হবে না।
সরি তে সেদিন কাজ হল না। ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বললেন স্যার।
কাগজটা ফেলে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় রাহাতের কাধে হাত রেখে আরেকটা শুকনা হাসি দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।
নওশীন ব্যাপারটা খেয়াল করেছে তবে সাগরের নির্দোষ দিকটা খেয়াল করে নি। স্যারকে অসম্মান করাটা খেয়াল করেছে।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর সাইকেল স্ট্যান্ডে গিয়ে সাইকেল নিয়ে হাটতে হাটতে মেসের দিকে যাচ্ছে। প্রখর রৌদ্রজ্জ্বল মরিচিকাময় রাস্তায় সাইকেল থাকা সত্ত্বেও এভাবে হেটে যাওয়া নিছক বোকামি।


- কি অবস্থা? কেমন আছেন?
মেসেঞ্জার চালু করতেই অপরিচিতার মেসেজ! মুডটা একটু ভাল হল সাগরের।
- কিছুই না, মাত্র কলেজ থেকে আসলাম, আপনি?
- খেয়ে উঠলাম। খেয়েছেন আপনি?
- নাহ। আধঘন্টা পরে খাবো।
- সেকি! এখনই উঠুন আর এক্ষণি ফ্রেস হয়ে খেয়ে নেন। পেট খালি থাকলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে..
অপরিচিতার একটু একটু শাসনে সাগর মুগ্ধ হয়ে যেত। অনুভব করতে শুরু করলো এসব ছোট ছোট শাসনে কতটা মায়া আর আবেগ লুকিয়ে থাকে। তারপর থেকে অপরিচিতার প্রত্যেকটা কথাই সে মানতে শুরু করে। মনে মনে কতভাবে কত রূপে অপরিচিতার ছবি কত রঙে আকায় তা হয়তো অপরিচিতা জানে না! তবে একটু হলেও অনুভব করার কথা বলে বিশ্বাস করে সাগর। অপরিচিতা আবারও মেসেজ দেয়,
- কি করেন?
সাগর ভেবে পায় না কি বলবে সে। সে তো চব্বিশঘণ্টা শুধু অপরিচিতাকেই ভাবে!
- সত্যটা বলবো নাকি মিথ্যা বলবো?
- আপনি সত্য বললে সেটা আমি সত্য হিসাবেই ধরবো আর মিথ্যা তো মিথ্যাই!
সাগর একটু একটু হাসে। সেটা অপরিচিতা বুঝতে পারে না। তবে তার হাসির সাথে অপরিচিতার হাসির এক অদৃশ্য সংযোগ আছে এটা সে জানে!
সে সাহস জাগিয়ে বলে ফেললো,
- আপনার কথাই ভাবছি
- আচ্ছা!! কি ভাবছেন?
- আমার ভাবনা আমার মাঝেই থাক, কি বলেন?
- আপনার ইচ্ছা। হুহ...
সাগর আবারও একটু হাসল! ছাদে অনেক মশা। তাই একটা কয়েল জ্বালিয়ে পাশে রেখে আবারও মেসেজ করলো,
- আচ্ছা একটা কথা বললে আপনি রাগ করবেন না তো?
- যদি সেটা বাধ্য করে তবে আপনার মেসে গিয়ে আপনাকে মেরে আসতে পারি।
- আচ্ছা থাক, বাদ দেন।
- আরে জোক্স করছিলাম, বলেন
- আসলে আপনার একটা ছবি যদি দিতেন তাহলে...
- তাহলে কি?
- না মানে একটু খু্শি খুশি লাগতো।
খানিক নিরবতা চলতে থাকে উভয় পাশে। সাগর ধরেই নিয়েছে ছবি দিবে না! হঠাতই মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ বেজে উঠে! খুশিতে সাগরের মন বেশ টইটম্বুর হয়ে আছে।
ছবিটায় একনজরে তাকিয়ে আছে সাগর! শুধু মুখটা দেখেই পুরোটা কল্পনা করে নিচ্ছে কেমন হবে সেই অপরিচিতা!! এখানে তো অপ্সরীর মত লাগছে তাকে! না জানি সামনাসামনি কতটা সুন্দর হবে!


- কিছু বলছেন না যে?
নওশীনের অল্পস্বল্প রাগ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মেসেঞ্জারের টুংটাং আওয়াজ শুনতে পেল।
- কিভাবে তারিফ করবো বুঝতে পারছি না, তবে আমার দ্বারা এই নুরানি চেহারার তারিফ সম্ভব হবে না!
- পাম দিতে হবে না। হুহ..
- আরে না, সত্যি বলছি আমি যেমনটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে হাজার গুণ বেশি আপনি!
নওশীন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে। বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ গিয়ে বা বালিশ জরিয়ে ধরে একটু একটু হাসছে। আবারও মেসেজ দিল,
- কি করেন?
-সেই একই, আপনাকে নিয়ে ভাবছি!
আবারও নিরবতা নওশীনের মাঝে! কোনো টপিক খুঁজে পাচ্ছে না বলার মত।
- আচ্ছা বাস্তবেই এটা কি আপনি?
- সন্দেহ হচ্ছে?
- একটু একটু হচ্ছে। আসলে ভাবি নি তো।
- ঠিক আছে ভাবুন তাহলে, টেক কেয়ার, বাই এবং শুভ রাত্রি যদিও এখন শেষ রাত।
একটু একটু করে নওশীন অপরিচিতর প্রতি দূর্বল হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। নাটক সিনেমার মত সেও পন করে নিয়েছে মনের কথা তাকে কখনও জানাবে না। সে যে খুব বাজে ভাবে মুখ থুবড়ে প্রেমে পরেছে!


কলেজের প্রথম ক্লাসে লেট করে ফেলেছে নওশীন! কারণ তো একই, রাত জেগে মেসেজিং!
-ম্যাম আসতে পারি?
ম্যাডাম চশমাটা একটু নাকের সাথে ঠেসে নিয়ে দেখলো!
- কে তুমি?
ম্যামের এই প্রশ্নে সারা ক্লাসে হাসির রোল পরে গেল!
- ক্লাস সাইলেন্ট...
- সরি ম্যাম, রিক্সা পেতে লেট হয়ে গেছে!
- ঠিক আছে, এসো।
ক্লাসে ঢুকেই একদম শেষ দিকে বসলো। চোখ ভাঙা ঘুম আসছে নওশীনের। ভাবছে পরের ক্লাস করে চলে যাবে। বামে তাকিয়ে দেখে সাগর ঘুমে ঝিমাচ্ছে! রাহাত তো লো বেঞ্চে ব্যাগকে বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়েই পরেছে! ভাগ্যিস ম্যাডাম পিছনে আসে না, না হলে আজ পিছন সারির অবস্থা খারাপ ছিল। একসময় ম্যামের ক্লাস শেষ হল। হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন শুরু হল। দেখতে দেখতে ঝুম বৃষ্টি! নওশীন বাইরে এসে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে নিল। পদার্থবিজ্ঞান ক্লাস সম্ভবত হবে না। ক্লাসে বসে বিরক্ত হওয়ার চেয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখা ভাল। সাগর বাইরে এসে দেখে নওশীন বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজাচ্ছে! আশেপাশে দারানোর মত জায়গা নেই। বাধ্য হয়েই নওশীনের পাশে দারালো সাগর। আসলে কিছু একটা বলার জন্য এসেছে সে কিন্তু বলা হচ্ছে না। একটু দম নিয়ে ডাকলো,
- নওশীন!
এতক্ষণে নওশীনের ধ্যান ভাঙলো! একটু ইতস্ততবোধ করলো সে।
- কিছু বলবে?
- হুম,
- কি?
- আসলে যা হয়েছে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে হয় নি।
- কোনগুলো?
সাগর জানে নওশীন সবই জানে তবুও সে না জানার ভাব করছে!
- আমি জানি তুমি সবই জানো কিন্তু অভিনয় করতেছ।
নওশীন শুনে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।
- আমি ইচ্ছে করে কল করি নি তোমার নাম্বারে। বিশ্বাস কর, প্লিজ।
- আচ্ছা, বুঝেছি, মানলাম। হয়েছে?
সাগর কিছুক্ষণ নওশীনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এক অসীম সততা সাগরের চোখে মুখে ভাসমান কিন্তু বুঝাতে পারছে না।
- ধন্যবাদ।
এই বলে ক্লাসে চলে গেল! দারালো সেখানে। এরপর থেকে নওশীনের সামনে সাগর আসে না। একটু চোখাচোখি হলে অন্যদিকে চলে যায়। নওশীন যেন তাকে দেখতে না পারে সে জন্য হিসাব করে এমন বেঞ্চে বসে যেখান থেকে তাকে ভালভাবে দেখা যাবে না। নওশীন ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে কিন্তু আমল করে নি। দিন দিন সাগর পিছন থেকে পিছনের বেঞ্চের ছাত্রতে পরিণত হল। বাসায় এসব কিছুই জানায় না। মাঝে দুইবার ওর আব্বু এসে দেখে গেছে তাকে। পরীক্ষার সময় মোটামুটি মানের রেজাল্ট করে খুশি থাকে। রসায়ন নোটের জন্য লাইব্রেরীতে ভীড় লেগে আছে! শত শত ছেলেমেয়ে একই নোটের পিছনে লেগে আছে। নওশীন ভীড় দেখে ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না। অথচ তিনদিন ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা! অপেক্ষায় আছে কখন ভীড় কমবে।
- এই ভীড় শেষ হবে না, আর শেষ হলে নোট পাওয়া যাবে না।
সাগরের কথায় নওশীনের চেহারায় একাকিভাব বিরাজ করছে। একটা নোট দিয়ে বললো,
- এখনও তিন দিন আছে পরীক্ষার। আমার হাতে একদিনও ছিল না।
এতদিনে নওশীন সাগরের দিকে একটু তাকালো। সাগর আবারও বললো,
- ভিতর থেকেই বুঝতে পারি তুমি কি নিয়ে ভাবছিলে তাই জোর যবরদস্তি করে একটা বারতি নোট নিয়ে এলাম। নাও এটা।
নোট নিয়ে ধন্যবাদ দিতে যাবে তখনই সাগর বললো,
-আর আমি সরি, আবারও তোমার সামনে এসে পরেছি! বাই, টেক কেয়ার...
নওশীনের হঠাৎ সেই অপরিচিতর কথা মনে পরলো! অপরিচিতর কণ্ঠ না শুনলেও একটু ভেবে নেয়া যায় কেমন হবে তার আওয়াজ। "বাই, টেক কেয়ার" কথাটা নওশীন মনে মনে যেভাবে উচ্চারণ করে অপরিচিত কে মেসেজে লিখতো ঠিক সেরকম ভাবেই সাগর আজ তাকে সেই কথাটা বললো।


(চলবে.....)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


খুব মনযোগ সহকারে পড়লাম; এখন পরীক্ষা দিতে চাই

১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নাই, যা ইচ্ছা উত্তর দিন ;)

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


উত্তর হলো, পাঠকেরা আপনার নির্দেশের জন্য বসে নেই; লেখা ভালো হলে মনোযোগ দিয়ে পড়েন, ব্লা ব্লা হলে কেহ মনোযোগ দেন না।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:১১

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এবং কষ্ট করে পড়ার জন্যও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.