নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসঙ্গায়িত

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু!!!!

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

"কূটনৈতিক এবং আমি"

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২





বাসায় ঢুকে ছোট্ট টেবিল ফ্যানটা পায়ের সামনাসামনি রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আমার ক্ষেত্রে অন্তত শরীরের অন্য কোথাও বাতাস না পেলেও সমস্যা নাই কিন্তু পায়ে বাতাস লাগা চাই আমার। পরে ফেসবুকে নিউজফিড দেখা শুরু করলাম। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম পোস্ট। বিশেষ করে ইদানীং কিছু নতুন ভোটার হয়েছে ফেসবুকে, যদি রিলশনে থাকে তাহলে তো দিন রাত কাপল গোল, হ্যাংআউট, বিকজ হি/শি সেইড এই টাইপের পোস্ট দিয়ে রাখে! যাক সেসব কথা, আমি যেই পেজে লেখালেখি করি সেটার স্ট্যাটাস গুলা আমি প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় চেক করি। কে কেমন গল্প দিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন সময় মোবাইলে একটা কল এল! স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি বুয়া কল করেছে! উনার কল দেখে মনে মনে আগেই সন্দেহ করে নিছি উনি আজ আসবেন না এবং নতুন কোনো এক উছিলাকে কারণ হিসাবে দর্শাবেন। রিসিভ করতেই যা ভাবলাম তাই, "মামা আইজ আমি আইতে পারতাম না, উনারা লইয়া আমার ডাক্তারের কাছে যাউন লাগবো। আজকের দিনটা একটু কষ্ট করেন, কাল দুপুরে অবশ্যু আসুম!" আমি "আচ্ছা" বলে কল কেটে দিলাম। কিছু বলার নাই কারণ ছোটবেলায় আমিও স্কুল ফাকি দেয়ার জন্য নানান অজুহাত দেখাতাম যার মধ্যে প্রথমে ছিল অসুস্থতা! যেনতেন অসুখ, খুব সিরিয়াস একটা রোগ আর সেটা হল "পেটব্যথা"!!! এই উছিলায় স্কুলের ক্লাস, কোচিং আর মাঝে মাঝে বাসায় পড়তে বসতাম নাহ। একদিন আব্বু জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল চেকআপের জন্য আর বাসায় ফেরার পর.... থাক বিস্তারিত বললাম না।


আপনি জানেন ব্যাচেলর লাইফে সবচেয়ে কষ্টকর কাজ কোনটা? বুয়ার অনুপস্থিতিতে চরম ক্ষুধাযুক্ত পেট নিয়ে রান্নাবান্না করা, আমার মনে হয় এরচেয়ে বেশি কষ্টের কিছু আর নাই। ঠিক আজকেও তাই হয়েছে! ক্লাস করে বাজার নিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় এসে শুনলাম বুয়া আসবেন না! যাই হোক, অতি কষ্টে আরামপ্রিয় শরীরটাকে বিছানা থেকে উঠলাম। ভাববেন নাহ খুব আরামের বিছানা ছিল, কারণ এটা ব্যাচেলর বিছানো, কোনরকম একটা তোষক, চাদর আর দুইটা বালিশ! রান্নাঘরে সবজি কাটতে কাটতে দেখলাম ঘন্টা খানেক অতিবাহিত হয়ে গেছে। আজ কাজ করতে এসে আমার একজনের কথা খুব মনে পরছে। আমার বাসার কাজের মেয়ে! শহরাঞ্চলে প্রায় ৯০শতাংশ ফ্ল্যাট বাসায় ঘরের কাজ করার জন্য বারতি একজন থাকেই। হোক মহিলা কিংবা ছেলে। আমার বাসায় এমন একজন কাজের মেয়েকে আনা হয়েছিল, তখন আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবো। আমার এখনও মনে পরে, সন্ধ্যালগ্নে কয়েক জন মানুষ হারিকেন নিয়ে গ্রামের কাচা রাস্তায় এসেছিল শেষবারের মত তাকে দেখার জন্য। এর কয়েকদিন আগে, কোরবানির ঈদ কাটিয়ে ফেরার পালা এবং শহরের বাসাটা চেঞ্জ করতে হবে এই ভেবে আম্মু আব্বুকে বললো, "পরিচিত কাউকে কাজ করার জন্য বাসায় নিয়ে গিয়ে কেমন হয়?" গ্রামে এমনিই আমাদের বংশের বেশ সুনাম। একনামে ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই চেনে। বাড়ি গেলে আশেপাশের মানুষজন দিয়ে ঘর ভর্তি হয়ে থাকতো শুধু আমাদের পরিবারটাকে এক নজর দেখার জন্য! এসব প্রতিটা গ্রামের ঐতিহ্য বলা যায়। যেদিন রওনা দিব গ্রাম থেকে সেদিন বাসস্ট্যান্ডে ওর মা বাবা এসেছিল। আমি এখানে মেয়েটার নাম উল্লেখ করলাম না। কারণ নাম উল্লেখ করাটা কেমন যেন অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে আমার কাছে। যাই হোক, আম্মু আব্বু তাদের ভরসা দিয়েছেন যে তাদের মেয়েকে নিজের মনে করেই দেখাশুনা করবেন। এসব বলে বিদায় নিলাম আমরা এবং পরের দিন সকালে বাসায় পৌছে গেলাম। সারারাত বাসে কাটিয়ে সবাই মোটামুটি ক্লান্ত। দুপুরের দিকে আম্মু ওকে বাসার সকল রান্নাবান্না এবং কাজকর্ম সম্পর্ক ধারণা দিচ্ছে। কাজকর্ম, থালা বাসন, কাপড় চোপড় ধোয়া ইত্যাদি। প্রথম দিন হালকা কাজ করতে দিলেন। অভাব কি জিনিস সেটা এখন বুঝতে পারি যখন আমরা খাওয়ার টেবিলে বসে ওর খাওয়ার দিকে দেখতাম। সেই খাওয়ার ধরণ এখন চোখে চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। তখন ছোট বয়স, তাই এসব কিছুই বুঝতাম না। মনে মনে বললাম, "খাদক ধরে নিয়ে আসছে একটা!" বাসায় খাবারের অভাব ছিল নাহ। আমরা যা খেয়েছি সেসব তাকেও দিয়েছি। এতটুকু নিশ্চিত ওর খাওয়া আমাদের বাসায় খুব ভাল গেছে। কি কারণে আমি ওকে দেখতে পারতাম না আমি নিজেও জানি না। আমরা মাঝে মাঝে বিটিভিতে সিনেমা দেখার সময় দেখতাম কাজের লোকের সবাই কেমন ব্যবহার করে বিশেষকরে যখন সাবানা বা আলমগীর থাকে। সেসব দৃশ্য দেখে আমারও ইচ্ছা জাগে ওর সাথে ঠিক সেরকমই ব্যবহার করি যেমনটা সিনেমায় করা হয়। আম্মু সবসময় বলতো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার না করার জন্য, আমিও সেটা মানার চেষ্টা করি কিন্তু ঝামেলা হয় আমাদের আশেপাশে যারা ছিল তাদের জন্য! একটা সময় সে বাসার সমস্ত কাজ নিজেই সামাল দিতে পটু হয়ে যায়। সবাই দেখতো আমরা ভাল একটা কাজের মেয়ে পাইছি, অনেক কাজ করে, সারাদিনই কাজ করে আরও কত কি ব্লা ব্লা... এক প্রতিবেশী তো ওকে তাদের বাসায় কাজ করার অফারও দেয় এবং টাকাও দিবে বলে জানিয়ে দেয়! একথা সে সোজা এসে আম্মুকে জানায় এবং এরপর থেকে তাদের সাথে শুরু হয় আমাদের ঝগড়া! সামান্য একটু কারণ নিয়েও প্রতিবেশী দরজা খুলে লাউডস্পিকারের গলায় চলে আসে ঝগড়া করার জন্য! সেই যে ঝগড়া শুরু হইছে সেটা আর থামতো নাহ। কখনও আম্মু প্রতিবেশীর রাগ আমাদের উপর ঝাড়তো। তখনকার শাসনের কথা মনে হলে আমার শরীরের পশম ভয়ে জেগে উঠে! এতকিছুর পরও আম্মু মেয়েটিকে একবারের জন্যে ধমক দেয় নি! একটা শাসনের মধ্যে রেখেছিল ওকে যাতে বাইরের জগৎ সম্পর্কে ধারণা আসে। কিন্তু সমস্যাটা হল আমাকে নিয়ে! ওই যে পাশের প্রতিবেশীর কথা বলেছিলাম তাদের এক ছেলে আছে যে আমার এক ক্লাস ছোট ছিল। ছেলেটা যথেষ্ট না, অতিরিক্ত পরিমাণ ফাজিল ছিল। আর আমি ছিলাম অতিরিক্ত গাধা! তো সেই ছেলেটা কি করতো? আমাকে বারবার বলতো কাজের মেয়ে কথা না শুনলেই মারার জন্য! আমি আজও বুঝতে পারি নি সেই ছোট্ট বয়সে এত ক্রিমিনালি বুদ্ধি মাথায় আসে কিভাবে? তখন ইন্টারনেট, ডিশ এন্টেনা বা কম্পিউটার বর্তমানের মত সহজলভ্য তো ছিল না যে আমি এসবের দোষ দিব! আমিও ওর কথায় ব্রেনওয়াশ হয়ে একসময় হাত তুলেই বসলাম! ব্যস, আর দেরি নাই সাথে সে চলে গেল আম্মুর কাছে, প্রতিবেশী ছেলেটা দৌড় দিয়ে চলে গেল বাসায় আর আমি ছাদে দারিয়ে রইলাম! কিছুক্ষণ পর আম্মু এসে আমাকে ধমকানো শুরু করল আর আমিও বলে দিলাম ওই ছেলেটা বলছে দেখে মারছি! ভাবা যায় কত বোকা ছিলাম আমি? প্রতিবেশী মহিলার মুখে কোন কথাই বাধে না। একবার বের হওয়া শুরু হলে ভাল কি মন্দ কি না বুঝে যা মনে আসে সব বলে দিত! আম্মু শিক্ষিত মহিলা, যার ফলে বুঝেছেন কিভাবে সবকিছু লাইনে আনতে হবে। সেদিন আর কিছু বলল না আমাকে। এর সপ্তাহ খানেক পর আবারও গায়ে তুললাম আর অপরাধ ছিল আমার স্কুল ড্রেস কোথায় রাখছে খুঁজে পায়নি। সে বললো, "আমি রাখলে ভুলি না, তুমি অন্য কোথায় রাখছো সেটা দেখ!" আরেক দফা মেজাজ খারাপ হল আমার! বললাম, "এত্ত বড় সাহস? কথার উপর কথা বলিস?" এই বলে দিলাম আরেকটা! একেবারে বাংলা সিনেমার ডায়ালগ! এবার আর আম্মুর কাছে গেল না। আমি ছাদে এসে দেখি স্কুল ড্রেস দরিতে রাখা! তখন আমার মনে পরল আসলেই আমিই রাখছিলাম! তখনও ওই ছেলের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক কারণ একই স্কুলে পরতাম আমরা। একদিন সন্ধ্যায় খেলাধুলা করে বাসায় আসলাম আর হাত মুখ না ধুয়ে খাটে শুয়ে পরলাম শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য। ততদিনে সে বুঝে গেছে আম্মু অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে না এবং আমি এসে সেটা আরও নোংরা করে ফেলছি দেখে সে চলে গেল আম্মুকে বলতে! এটায় আবারও রাগ উঠে গেল আমার আর সামনে আসতেই আবারও মাইর বসিয়ে দিলাম! আম্মু আওয়াজ পেল, নামাজ পরে আমার সামনে এসে ওকে বললো রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য! আমি দেখলাম আম্মুর হাতে ভাত নাড়িয়ে দেয়ার কাঠি! অতঃপর দরজাটা বন্ধ করে বাকিটা ইতিহাস! প্রায়ই মার খাই আম্মুর হাতে কিন্তু স্পেশাল মার মাঝেমাঝে খাই যেমন সেদিন! একেবারে টানা ১৫মিনিট উত্তম মাধ্যম দিছিল এবং আমার মাথা থেকে সকল প্রকারের দুষ্টু চিন্তাভাবনা দুরে সরে যায়। তার ঘন্টাখানেক পর আম্মু এসে আবারও বুঝালো আমি যা করছি সেটা একদমই ঠিক না এবং হুমকিও দিল বেশি কিছু করলে আব্বুকে বলে দিবে! আব্বু শুক্র শনি দুইদিন বাসায় সময় দিত বাকিদিন গুলাতে অফিস করে আসতে আসতে প্রায় ৯/১০টা বেজে যেত। যার ফলে এসবের কিছুই জানতো না আর আব্বুকে খুব ভয় পেতাম কিন্তু আম্মুর চেয়ে আবার বেশি না। রোজার ঈদে ওকে জামা কাপড়, জুতা এবং টুকিটাকি কসমেটিক্স কিনে দিছিল আব্বু আম্মু। তখন মোবাইল এতটা সহজলভ্য ছিল না। আব্বুর একটা মোবাইল ছিল যেটা বাসায় রেখে যেত আর অফিসের টেলিফোন থেকে বাসায় কল করতো। এই এতদিনের মধ্যে কাজের মেয়েটা কি একবারও ওর মা বাবার সাথে কথা বলছে কিনা আমি জানি না। ভাল খাবার পেয়ে শরীরের ভিটামিনের অভাব আর স্বাস্থ্যও ভাল হতে শুরু করছে! আমি বুঝি নাহ, গ্রাম থেকে কেউ আমাদের বাসায় একমাস মত থাকলে তার চেহারা শরীর পাল্টে মোটাতাজা হয়ে চলে যায় অথচ আমার শরীরের কোনো পরিবর্তন হয় না! আমাদের চুক্তি ছিল ওকে এক বছর রেখে বাড়ি ফেরত পাঠাতে হবে কিন্তু সে যাবে না বলে সাফ না করে দিল! কিছুদিন পর বলে দিল, "আমি আংকেল আন্টির সাথে থাকবো"। তখন আমি বুঝি নি কেন সে তার মা বাবা ভাই বোন ছেড়ে আমাদের সাথে এখানে থাকতে চায়! আমি প্রতিদিনই ওকে মারার জন্য উছিল খুজতাম। ছোট্ট একটা ভুল করলেই মার বসাতাম। বয়সে সে আমার চেয়ে না হলেও তিন বছরের বড়! সাধারণত প্রত্যেকটা মানুষের ধৈর্য্যের একটা সীমা থাকে। আমি একবার মারতাম কিছু বলতো না, ভাবতাম একটু ত্যারামি করবে বা তর্ক করবে এই সুযোগে আবার মারবো কিন্তু সেটা হতো না! ধৈর্য্য পরীক্ষা নিলে ওর ধৈর্য্য হয়তো কেউ পরিমাপ করতে পারবে না। এরমধ্যে সে তার বাড়িতে কথা বলেছে আরও দুই বার এবং তখনও একই নাবোধক উত্তর দিয়েছিল! প্রতিবেশী ছেলেটার সাথে তখনও আমার কথাবার্তা হয় এবং তার কূটনৈতিক বুদ্ধি ছায়ায় আমি দিনের পর দিন ওকে মারতে থাকি।


এক সপ্তাহ পর গ্রামে যাবো কোরবানির ঈদ করতে। আমরা সবাই খুশি কারণ ঈদ করতে যাচ্ছি। বছরের এই এক সপ্তাহ আমরা গ্রামে কাটিয়ে আসি। কিন্তু তাকে দেখলাম তেমন খুশি ছিল না! ততদিনে আমার মার সহ্য করতে করতে এক প্রকার পাথর হয়ে গেছে সে! আম্মুকেও বিচার দেয় না বা তর্কও করে না! কেমন এক পরিবর্তন চলে এসেছিল তার ভিতরে। সেই এক সপ্তাহে আরও অনেকবার খুঁটিনাটি ভুলের জন্যেও মেরেছি ওকে কিন্তু কোনো বিচার দেয় নি আম্মুর কাছে! এরপর দেখতে দেখতে গ্রামে যাওয়ার দিন চলে এল। ব্যাগ পত্র গোছগাছ করার সময় আম্মুকে বললো, "আন্টি ফেরার পথে আমাকে আনবেন তো?" আম্মু নিরব স্বরে বললো, "তোর মা বাপ রাজি হবে না রে।" সে আবার বললো, "আপনের ইচ্ছা নাই?"
আম্মু বললো, "আমাদের ইচ্ছাটা আসল না, তোর মা বাবা রাজি না হলে আমরা যত রাজিই থাকি তোকে আনতে পারতাম না।"
"আপনে শুধু কন আপনে রাজি কিনা? আমি বাড়ি থাকবো না।"
আম্মু বললো, "আচ্ছা আগে যাই, তারপর দেখা যাবে।"


গ্রামে প্রায় এক সপ্তাহ ছিলাম। এই এক সপ্তাহে প্রতিদিন মেয়েটা আসতো আম্মুর সাথে দেখা করার জন্য। প্রত্যেকদিন খোজ খবর নেয়ার জন্য আসতো যেন আপন বাবা মার চেয়ে আমার আম্মু আব্বু তার বেশি আপন হয়ে গেছে! ওর মা বাবা তো প্রথমে ওকে দেখে চিনতেই পারে নি! এই এক বছরে গায়ের উজ্জ্বলতা এবং শরীর স্বাস্থের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। ওর অন্যান্য ভাইবোন দের সাথে দারালে মনে হয় আপন ভাই বোন না এরা! গ্রাম থেকে রওনা দেয়ার মুহূর্তে এলাকার অনেকেই এসেছিল শেষ দেখা করার জন্য কারণ আবার গ্রামবাসী সামনের বছর দেখতে পারবে! দীর্ঘসময়ের একটা পথ এই গ্রামের মানুষের কাছে কেমন যেন মনে হয়! এজন্য হয়তো তারা এমনটা করে। সেদিন অনেকেই এসেছিল দেখা করার জন্য শুধু আসে নি সেই মেয়েটি! ব্যাপারটা কেমন যেন লাগলো আম্মু আব্বুর কাছে। আমরা বাসে উঠার পরপরই অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল আসলো। আম্মু রিসিভ করতেই,
- নেন, রিসিভ হইছে (দোকানদার)
- হ্যালো আন্টি, আপনেরে আমাকে নিয়া যান, আমার এইখানে থাকা হইবো নাহ! ওরা (ওর মা বাবা) আমারে আটকাইছে জানি না যাওয়া পারি!!!
এসব শুনে আম্মু কি বলবে বুঝতে পারছিলেন না! আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল এবং পরে ওকে পরের বছরের আশ্বাস দিল। মেয়েটি আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু নেটওয়ার্কের অভাবে কিছু জানা গেল না। বাসায় ফিরে আমারও প্রথমদিন খারাপ লেগেছিল। কিন্তু এক ঘুম দিয়ে উঠার পর সেসব গায়েব! এরপর প্রত্যেক ঈদে গ্রামে গেলেই ওর সাথে দেখা হতো কিন্তু আমি কোনো কথা বলতাম না। আম্মুর সাথে দেখা করার জন্য আসতো। প্রত্যেক ঈদেই আম্মু ওর হাতে টাকা পয়সা দিত। কেমন যেন এক প্রকারের অজানা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। যতদিন পর্যন্ত আম্মু গ্রামে থাকে ততদিনই সে আসতো। চুলে তেল দিয়ে দেয়া, চুল আড়চিয়ে দেয়াসহ এমন নানান টুকিটাকি কাজ করতো। আশেপাশের মানুষজনও ভাবতো কেন এই মেয়ে বারবার এইদিকে আসে! কি এমন আদর যত্নে রেখেছিল যে এরা আসলেই সে পাগল হয়ে যায়? এভাবেই দুই চার বছর কেটে যায়।


ধীরে ধীরে বুঝতে শিখি আসলে যা করেছি সেটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ হয়েছে। একটু একটু বুঝতে শুরু করলাম কি পরিমাণ অন্যায় করছিলাম আমি। এসব অনুভূতি আসলো যখন আমি বাসা ছেড়ে মেসে থাকা শুরু করলাম। ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই শহরে আমি একা। আত্মীয়স্বজন আছে তবে অনেক দুরে। এখানে এসে মাঝে মাঝে স্থানীয় বড় ভাই টাইপের ছেলেদের পৃষ্ঠপোষকতা অনিচ্ছাসত্ত্বেও করা লাগে যা আমার নিজের কাছে খুব বেমানান মনে হয়। গেল মাসে টাকা ধার নেয়া নিয়ে ভার্সিটি জুনিয়র স্বানীয় ছেলের সাথে বিশাল দ্বন্দ্ব লেগেছিল! পরে এইসব এলাকার ভাইদের শরণাপন্ন হতে হয় এবং শেষে দেখা যায় যে পরিমাণ টাকা আমি পেতাম তার বেশি তাদের পিছনে খরচ হয়ে গেছে! জীবনে এভাবেই সবাই শিক্ষাদীক্ষা পেয়ে থাকে। এই জন্য মাঝে মাঝে তার কথা মনে পরে। ভাবছি যা করছি সেটার জন্য মাফ চাবো কিনা। আবার মনে হচ্ছে কোনো দরকার নেই এসবের, যেমন যাচ্ছে যাক! কাউকে বলতেও পারছি না এর সমাধান কিভাবে করা যায়। মান সম্মানের বিষয় আমার। শেষমেশ ভেবে নিলাম গ্রামে গেলে দেখা হলে সরি বলে দিব ঝামেলা শেষ!


কোরবান ঈদের দিন, নামাজ শেষ করে সমাজের দিকে রওনা হলাম আমি আর আমার কাজিন(ছেলে)। এমন সময় একটা বাড়ি দেখিয়ে বললো, "দেখ তো বাড়িটার কথা মনে কিনা?"
আমি বললাম, "গ্রামে আসিই দুইবার, কিভাবে মনে রাখবো?"
- এই বাড়ির মেয়ে তোদের বাসায় গেছিল কাজ করার জন্য!!
তখন মনে পরল এই বাড়িটা সেই মেয়েটির!
- সেই মেয়েটা মারা গেছে!
আমি অবাক হয়ে গেলাম কথাটা শুনে! এজন্যেই তাহলে এই ঈদে চারদিন চলে যাওয়ার পরও মেয়েটা আম্মুর সাথে দেখা করতে আসেনি! আমি বললাম, "কিভাবে? অসুখবিসুখ নাকি?"
- শিওর জানি না, কেউ বলে অসুখ আবার কেউ বলে প্রেম করে আত্মহত্যা বা বিষ খেয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি!
- আম্মু জানে?
হয়তো বা..
আরও দুই একজনের কাছে শুনলাম, কেউ বলতে পারে না কিভাবে বা কেন মৃত্যু হয়েছে! পাড়ার মহিলাদের কথা, "ওত কি জানি বাপু, মইরা গেছে কাহিনী ওইখানেই শ্যাষ, ওগোর গুষ্টির কেউ কিছু না বলতে চাইলে জুর কইরা লাভ নাই" কেমন যেন খারাপ লাগা শুরু হল কিছুদিন! কিছু করতে গেলেই ওর মৃত্যুর কথা মাথায় আসে! কেন মরল কে দায়ি এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। আমি বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না বা আগ্রহ দেখাচ্ছি না। কারণ গ্রামের মাতব্বররা এর অন্য অর্থ নতুন করে সাজিয়ে গোটা সমাজে ঢাকঢোল পিটিয়ে রটিয়ে বেড়াবে! তবে কাছের একজনের জবানবন্দিতে একজনকে সন্দেহ করছি। এসব ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকে বেশি এবং আমি নিশ্চিত এই গ্রামের সবচেয়ে বিত্তশালী পরিবারের ছেলেই এরসাথে জড়িত! পাঠকগণ, এই ভাববেন না যে প্রতিশোধ নিব, এসব এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। টাকা দিয়েই সবকিছু হয় আজকাল। টাকা দিলেই কেস উঠিয়ে নেয়া যায় কিন্তু টাকা দিয়ে কাউকে ফিরিয়ে আনা যায় না। এটা আসলে গল্প বলবো কিনা বুঝতে পারছি না, এমনকি কি বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না। যেটাই হোক এতক্ষণ যা পরলেন সবটাই বাস্তব। এজন্যেই কারও নাম প্রকাশ করলাম না। এই লেখাটা সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি। সেই সাথে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা এই লেখাটি কষ্ট করে পড়েছেন। ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: বেচেলার লাইফ টা আসলেই খুব কষ্টের।
বিশেষ করে যারা স্বল্প আয়ের- তাদের কোষ্টের সীমা নাই।

ভালো লিখেছেন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৯

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩১

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। একই লেখা ফেসবুকে দিলাম আর ভয়ে কমেন্ট পড়তে যাই নি। একেক জনের মন্তব্য দেখে বুঝলাম যা বুঝাতে চাইছি তারা এসবের কিছুই বুঝে নাই।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩২

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: ভাল লাগলো।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩১

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.