নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা একটি ব্যাধি ও অপরাধ

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬

এক ধরনের হতাশাগ্রস্থ মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবনতা সব সময় লক্ষ্য করা গেছে । মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবনতা সেই আদিকাল থেকেই ছিলো । বর্তমান সময় এই সংখ্যা বেড়েছে বলা যায় । মানুষ আত্মহত্যা কেন করে ? এই বিষয়ে যাবার আগে একটু জেনে নেয়া যেতে পারে আত্মহত্যার আভিধানিক অর্থ ।
ইংরেজীতে সুইসাইড শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে আত্মহত্যা ।লাতিন suicidium শব্দ থেকে এর বুৎপত্তি । স্বজাতীয় caedere থেকে, "নিজেকে বধ" করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের মৃত্যুর আয়োেজনের নামই হচ্ছে আত্মহত্যা ।
আত্মহত্যার পিছনে মানুষের মধ্যে নাগরিক ও ব্যক্তি জীবনের হতাশাই কাজ করে বেশী । এছাড়াও বিষণ্নতা, রোগ ব্যাধি, সিজোফ্রেনিয়া, মেন্টাল ডিজঅর্ডারকে দায়ী করা হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রতি আসক্তি এবং ওষুধের অপব্যবহার হিসাবে মানসিকব্যাধিকেও দায়ী করা হয়। আর্থিক অসুবিধা বা সামাজিক সম্পর্কের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই প্রায়ই আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয় ।
আত্মহত্যার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পদ্ধতি দেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় । আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়া কিংবা কীটনাশকপানের বিষক্রিয়ায় মরে যাওয়া এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়া।
বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যারপ্রবনতা মৃত্যুর অন্যতম কারণ । ১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে ৭,১২,০০জন আত্মহত্যা করেন । ২০১৩ সালে আত্মহত্যা করেন ৮,৪২,০০০ জন । আত্মহত্যারপ্রবনতা নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশী ।
বাংলাদেশে গত সাত বছরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ৭৩ হাজার ৩শ ৮৯ জন ব্যক্তি। ডব্লিউএইচও এর পরিসংখ্যান মতে, প্রতিদিন গড়ে আত্মহত্যা করছে ২৮ জন । বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান মতে, প্রতিদিন গড়ে আত্মহত্যা করছে ২৯ জন।
পুলিশ পরিসংখ্যানে আরো বলা হয়েছে, ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ ৭ বছরে দেশে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ৭৩ হাজার ৩শ ৮৯ ব্যক্তি। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৮শ ৫৭ জন গলায় ফাঁসি দিয়ে এবং ৪১ হাজার ৫শ ৩২ জন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে অল্পবয়সী কিশোর, কিশোরী থেকে যুবক, যুবতী, পুরুষ ও মহিলা।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান মতে, ২০০৩ সালে ১০ হাজার ৩শ ৮৩ জন, ২০০৪ সালে ১০ হাজার ১শ ৬৪ জন, ২০০৫ সালে ১০ হাজার ৩শ ৫৭ জন, ২০০৬ সালে ১০ হাজার ৬শ ৮০ জন, ২০০৭ সালে ১১ হাজার ২শ ৫ জন, ২০০৮ সালে ১০ হাজার ৫শ ৯০ জন, ২০০৯ সালে ১০ হাজার ১০ জন আত্মহত্যা করেছে।
পরিসংখ্যানটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে গড়ে ১০ হাজার ৪শ ৮৪ জন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। প্রতিমাসে আত্মহননের সংখ্যা ৪শ ৭৪টি। সেই হিসেবে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গড়ে ২৯ জন করে। পুলিশের তদন্তকারী সূত্রগুলো বলছে, মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে গলায় ফাঁসি দিয়ে এবং গ্রামাঞ্চলগুলোতে বিষপানে মারা যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
একটু গভীরে বিশ্লেষন করে দেখা যায় , পারিবারিক কলহ, সাংসারিক অশান্তি, পরীক্ষায় ব্যর্থতা,প্রেমে ব্যর্থতা, পরকীয়া ও মাদকাসক্তির জের ধরে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া সামান্য মান অভিমানকে কেন্দ্র করেও আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা।
তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ২০০৮-০৯ সালে ৯৭০টি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন বেড়েছে, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে ব্যাপকভাবে। অনেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া, অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারণের কারণে সামাজিক ও পারিবারিক গঞ্ছনা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই আত্মহত্যা করেন। বেশির ভাগ নারী আত্মহত্যা করেছেন গলায় দড়ি দিয়ে, পুরুষেরা কীটনাশক পানে।
আত্মহত্যাকে কোন ধর্মই স্বীকার করে না। এইটা পাপাচার বলেই পবিত্র ধর্মীয়গ্রন্থসমুহে উল্লেখ করা হয়েছে । জীবনের পবিত্র বিশ্বাসকেও আত্মঘাতীরা কলুষিত করেছেন ! যদিও জাপানে সামুরাই যুগে seppuku ব্যর্থতার জন্য অথবা প্রতিবাদের একটি ফর্ম হিসাবে প্রায়শ্চিত্তের জন্য আত্মহত্যাপ্রবনতাকে সম্মান করা হতো। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে সতীপ্রথার যুগে , ব্রিটিশ সরাকারের দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার আগে সতীদাহ বা সহমরনকে বলা যায় আত্মহত্যারই একটি অনুশীলন ! স্বেচ্ছায় বা পরিবার এবং সমাজের চাপে সদ্য বিধবা স্ত্রী ধর্মের নামেই স্বামীর চিতা্য় নিজেকে উতসর্গ করতো।
বেশীরভাগ পাশ্চাত্য দেশে এটা একটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় । তবে বিংশ ও একুশ শতকে দেশে দেশে আত্মবলিদানকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেও দেশপ্রেমিকরা বেছে নিয়েছেন । বিমান ও বোমা হামলায় একটি সামরিক বা সন্ত্রাসী কৌশল হিসেবে আত্মঘাতী পথকেই ব্যবহার করা হয়েছে।
আত্মহত্যা নিয়ে আজ গোটা বিশ্বে উদ্বিগ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ১৫-৪৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো আত্মহত্যা। গত বছর ডব্লিউএইচও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২০ সাল নাগাদ প্রতিবছর সাড়ে ১৫ লাখ মানুষ আত্মঘাতী হবেন। আত্মহত্যার চেষ্টা চালাবেন এরও ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ।
মনোবিজ্ঞানী ও মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে, প্রতিবছর সবচেয়ে কর্মক্ষম বা উৎপাদনশীল বয়সে বহু মানুষ আত্মহত্যা করলেও সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই। এ সমস্যার পরিসর যে এতটা বিস্তৃত, তা নিয়েও খুব বেশি মাথাব্যথা নেই দেশের নীতিনির্ধারকদের। আত্মহত্যার প্রবণতা আছে এমন মানুষের চিকিৎসাসেবার সুযোগও অপর্যাপ্ত।
বেশির ভাগ সময় যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁরা ধারাবাহিকভাবে গুরুতর বিষণ্নতায় ভোগেন। ঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এঁদের বাঁচানো সম্ভব। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.