নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আড্ডা নেই, প্রাণ খুলে হাসি ঠাট্টাও নেই, ট্রোল ট্রোল অার ট্রোল রাত গভীর হয়, ফেসবুক নিভে যায়, কবিতা থামে না

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৮

হুতোম থাকলে ঠিক বলতেন, ‘এই অনেক হয়েছে, ফেসবুক।’ অবশ্য কে বলছে? নিজে প্রতিদিন ফেসবুক খুলে এটা ওটা ‘লাইক’ দেই, ছবি পোস্ট করি আর হাবিজাবি লিখি। ফেসবুক বন্ধুও বিস্তর। খেয়াল করেছি, তাঁরা ছবিতে বেশি ‘লাইক’ দেন, লেখায় কম। অনেকেই ‘অনবদ্য’, ‘অসাধারণ’ ইত্যাদি বিশেষণ বা ‘আপনার মতো অমুক হয় না’ গোছের বাক্য লেখেন। সত্যি বলছি, বেশ লাগে। প্রশংসা শুনতে কে না চায়? আমার আবার বদভ্যাস হল বেশিক্ষণ ‘ট্রোল’ সহ্য করতে না পারা। অনেকে স্ট্যাটাসে গালিগালাজ করেন। কিন্তু যখন দেখি তা মাত্রা ছাড়াচ্ছে বা কিছুই নয়, অহেতুক ব্যক্তিগত ঝোঁক কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে, ঝট করে আনফ্রেন্ড করে দিই। এর একটা কারণ খুব বেশি ঝগড়াঝাঁটি আমার দ্বারা হয় না, সুস্থ বিতর্ক ভাল লাগে কিন্তু কারও নিজস্ব পরিসরে নাক গলানোকে অপছন্দ করি। কারো কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে আমার হাজারটা ভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু ফেসবুকে তার সাথে অহেতুক তর্কে জড়াই না। আমার নানাবিধ দুর্বলতার মধ্যে এটাও আছে যে যাকে একবার বন্ধুর তালিকা থেকে সরিয়ে দিলাম তার প্রতি রাগ পুষে না রাখা।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর সূত্রে আজকাল যা খুশি চলছে। রাজনৈতিক গালিগালাজ তো একপ্রকার ধরাছোঁয়ার মধ্যে রাখা যায়। এই মাধ্যমগুলিতে নীচতা অতিক্রম করেও কিছু চমৎকার বিতর্কের পরিসর তৈরি করা সম্ভব। আত্মপ্রকাশের উন্মুক্ত ময়দানে স্বরোপিত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব নিজস্ব তর্কশীলতার ক্ষমতা। বিতর্কে অংশ না নিয়েও ‘একা একা’ কেউ চমৎকার কবিতা বা গল্পও লিখতে পারেন। জোকস লিখে মজাও করতে পারেন। ভাল লাগে এ সব। বস্তুত এই পরিসরে এ সবের সুযোগ এতটাই বেশি এবং প্রযুক্তির কল্যাণে এত অভিনব যে মাঝে মধ্যে তাক লেগে যায়।
কিন্তু ফেসবুকের সূত্রে খুন, ধর্ষণ, অশ্লীল ভিডিয়ো, শ্লীলতাহানি, আত্মহত্যা ইত্যাদি বাড়ছে তখন কস্টই লাগে।’
সব কিছু কেমন টেকনিকাল ভাষা। অভিভাবক আর বন্ধুদের ভাষার মধ্যে প্রযুক্তির স্বচ্ছন্দ অনুপ্রবেশ। এত প্রযুক্তির ধাপ পেরিয়ে, ঠাট বজায় রেখে প্রকৃত বন্ধুত্ব হয় কি? অভিভাবকও কি পারেন তাঁর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে? মোবাইল বা প্রোফাইল লক করে দিলেই তো হল। পাসওয়ার্ড জানা না থাকলে? নেই মা, বাবার আগের সেই বকুনি, ‘আজ ফিরতে এত দেরি হল কেন?’— এ যুগে অচল। যখনই বাড়ি ফিরি, ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড-এর হাতছানি তো আছেই।
আসলে বন্ধুত্বের ধারণাটাই ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে। আগে মনে করা হত, তোমার অসময়ে যে তোমার পাশে আছে সে-ই বন্ধু। সে উৎসবেও থাকবে। ফেসবুকের কমেন্ট আর লাইক কখনও সেই জায়গা নিতে পারে না। যদিও সেখানে বন্ধুর সংখ্যা বাস্তবের তুলনায় বেশি। এক এক জনের এতটাই বেশি যে, তাঁরা গর্ব করে বলেন, ‘আমার এত বেশি বন্ধু যে একটা প্রোফাইলে হচ্ছে না, আর একটা খুলেছি।’ শুনলে হাসি পেয়ে যায় বটে, কিন্তু এটা দম্ভোক্তি নয়, অসহায়ত্ব। বাস্তবের হাসি-কান্না, ঝগড়া আবার গলাগলি থেকে এই ব্যক্তি সরে গেছেন অনেকটা। স্মৃতি এঁকে জ্বালায় না। প্রাক-ফেসবুক দুনিয়ায় ইনি কিছু খুঁজে পান না। প্রযুক্তি নির্ভর কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়িয়ে অলীক বন্ধুত্বকে নিয়তই সাদরে বরণ করে নেন।
বন্ধুত্বের বন্ধন অবশ্যই বয়স নিরপেক্ষ। সমবয়সিদের সখ্য যেমন থাকে, প্রতিযোগিতাও থাকে। একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার মধ্যে সেই প্রবণতা ধরা পড়ে। শুধু নিজেকে দেখানো নয়, অন্য সমবয়সি বন্ধুদের তুলনায় আমি কতটা এগিয়েছি তা জাহির করার চেষ্টাও থাকে। তা দোষের কিছু নয়। কারও ক্ষতি তো হচ্ছে না তাতে!
ক্ষতি শুধু নিজের। কত পড়ার ছিল, কত কিছু দেখার জন্য পড়ে আছে , এখনো দেখা হয়নি বিশ্বের অপর্যাপ্ত সৌন্দর্য, অশ্রুত রয়ে গেল কত না সংগীত। এখন আর ‘বাদল রাতে’ কেউ ‘আমিও একাকী, তুমিও একাকী’ থাকে না। ফেসবুক নড়াচড়া করে। অথচ ওই অনাবিল সঙ্গহীনতাই পরম সৃষ্টির পাথেয়। বাস্তবের যন্ত্রণা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডকে ছাপিয়ে যায়। ‘প্রকৃত সত্য সর্বদাই কল্পলোকের চাইতে অধিকতর আশ্চর্যজনক।’
সমবয়সি বন্ধুরা আমার পাশে সর্বদাই দাঁড়িয়েছে। কঠোর দুঃখের দিনে, আনন্দে আবার ফেসবুকেও। তাদের প্রত্যেককে আমি অত্যন্ত ভালবাসি।
কিন্তু অসমবয়সি বন্ধুত্ব ? তাঁরা যদি নিকটাত্মীয় হন তবুও আত্মীয়তা নয়, ‘বন্ধুত্ব’। যেমন ছিল আমার বেশ ক’জন নিকটাত্মীয়। যাঁদের সঙ্গে জগতের সব কিছু নিয়ে প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়া ছিল আমাদের বিশেষ আনন্দের কাজ।আমার এক ফুপাতো বোন আছে ,যার সাথে দেখা হয় কালেভদ্রে।কিন্তু ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সে আমার মন খারাপ সময়ে অসংখ্য জোকস পাঠিয়ে মন ভাল করে দিয়েছে। আরেক ভাই ,অনেক ছোট কিন্তু তার সাথে সুচিত্রা-উত্তম ,ববিতা-রাজ্জাক, হালের পরী মনি-শাকিব, মান্না-হেমন্ত,রুনা- বন্যা, সাকিব-তামিম-মাশরাফি , ক্রিকেট-ফুটবল— কী ছিল না আমাদের আড্ডার বিষয়!
আরেক পাড়াতো বড় ভাই চিনিয়েছিলেন রবীন্দ্রসাহিত্যের ভুবন। যে কোনও ভাল বই পেলেই হাতে করে উপহার দিতেন । এঁদের সঙ্গে কোনও দিন কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। আজও নেই। ফেসবুকহীন জগতে এঁরা আমাদের শৈশব-কৈশোর-যৌবনকে ঋদ্ধ করেছিলেন। বেশির ভাগই চলে গেছেন। তবু স্মৃতিতে অমলিন। আজকের প্রজন্ম দেখে যে কেউ আড্ডা মারে না, খেলে না। এমনকী প্রাণ খুলে হাসি ঠাট্টাও করে না। তাই কেবল ট্রোল, ট্রোল এবং ট্রোল।
অথচ আজও ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’। ক্লান্ত শরীর ‘জীবনের লেনদেন’-এর হিসেব চায়। ফেসবুক নড়াচড়া করি। আচমকা ফোন বেজে ওঠে।
: ‘কেমন আছ রনি? ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?’
রাত গভীরে আমার এক পরিচিতার ফোন। তার পুত্র খ্যাতনামা ব্যবসায়ী হলেও যাঁর ফেসবুকে কোনও আগ্রহ নেই। আগ্রহ কেবল সাহিত্যে। আমার এই পরিচিতা গৃহবধূ হলেও তাঁর পড়াশোনার ব্যাপ্তি আমাকে স্তম্ভিত করে দেয়। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কবিতার লাইন তুলে আমার পরীক্ষা নেন। বেশির ভাগ সময়েই ফেল করি। আমিও পাল্টা চেনা কবিতার লাইন আওড়াই । তিনি মুহুর্তেই উত্তর দেন ।কি অদ্ভুত তার স্মৃতিশক্তি ।
রাত গভীর হয়। আমি ফেসবুক লগ আউট করে শুধু ফোনে অনেক কথা বলি। তিনি চমতকার কবিতা আবৃত্তি করেন। আমাদের অসমবয়েসী বন্ধুত্ব ,দুজনের কথা আর কবিতা থামে না।
রাত গড়িয়ে যায় ,পূবের আকাশ যখন লালাভ বর্ন ধারন করে তখনও কবিতা থামে না।
আহা কি চমতকার না আমাদের রাতগুলি !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.