নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা, ছাতাটা সরে গেল

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৯


বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ৩ তারিখ, মংগলবার বাবা না ফেরার দেশে চলে যাবার সময়টায় আমি মন্ট্রিয়েল পিয়েরে ট্রুডো এয়ারপোর্টে।সিভিল এভিয়েশনের ট্রেনিং এ ব্যস্ত ছিলাম । বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় বাবা চলে গেলেন। স্থানীয় সময় রাত ৬টায় খবরটা প্রথমে দেশ থেকে এলো টিপুভাইয়ের কাছে। তখন আমি ভীষন ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। আমার বাসায় বন্ধু মিহির,মিঠু, বিপুল ভাই গল্প করছে।আমি চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছি। এসময় সংগীতশিল্পী জুবায়ের টিপুভাই দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে দু:সংবাদটি দিলেন।
: কাকা,আপনি কি ঠিক আছেন, মানসিক অবস্থা কেমন?
আমি বুঝতে না পেরে বললাম, কেন ভাই, লিটল বিট টায়ার্ড বাট আমি ঠিক আছি।
: আপনার বড়ভাই ফোন দিয়ে জানিয়েছেন আপনার বাবা আর নেই। কিছুক্ষন আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
মুহুর্তেই আমার রুমে পিনপতন নিরবতা নেমে এলো।আমি কথাটা বিশ্বাস করবো কি করবো না কোন বোধশক্তি তখন আমার নেই। কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে গেলাম।আমি টিপুর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে অপেক্ষা করি আরো কিছু শোনার জন্য।
টিপুভাই খুব আবেগপ্রবণ মানুষ।আমার কস্ট কি রকম হতে পারে ভেবে সামনে থেকে দ্রুত চলে যেতে পারলেই যেন বাচেন।সবাই মন খারাপ করে চুপচাপ। নিরবতা ভংগ করে ভেজাকন্ঠে বলি, সেকেন্ড স্ট্রোকের পর বাবা আর উঠতে পারলো না।
বিপুলভাই সান্তনা দিয়ে বলেন, বাসায় কথা বলেন।জানাজা,দাফন কোথায় কি হবে জেনে নেন।
প্রবাসে এসে মিহিরও তার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিল। সেই কস্ট বুকে চেপে কিভাবে দিন কাটিয়েছে তার কিয়দংশ শুনিয়ে আমার কস্টকে হাল্কা করতে চাইলো।
আমার অনাবাসি জীবনের এ বন্ধুরা স্বপ্রনোদিত হয়ে মন্ট্রিয়েল, অটোয়া, টরন্টো ও দেশে আমার বন্ধু স্বজনদের দু:সংবাদটি ফোন, মেসেজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিল। অনেক রাত অবধি সবাই আমাকে ঘিরে বসেছিল কিন্তু তখন আমি তীব্রভাবে চাইছিলাম একটু একা হতে । একা চুপচাপ কাদতে চাই। অনেক রাত হওয়ায় ওদের একরকম জোর করে বিদায় করি।
বন্ধুরা চলে যাবার পর রুমে এসে লাইট অফ করে ঘন্টাখানেক ঝিম মেরে বসেছিলাম।যে কোন মৃত্যুসংবাদে আপনজনরা কেদে বুক ভাসায়।কিন্তু আমি সাথে সাথে কাদতে পারিনি। বাবার চলে যাবার ৩ ঘন্টা পর নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনি।অঝোড় কান্নায় বুক ভিজেছে, বালিশ ভিজেছে।
অনেক রাত জেগে বাসার খবর নিচ্ছিলাম। দেশে বারবারই কয়হা হচ্ছিল বড়ভাইয়ের সাথে। একটবারের জন্য মায়ের সাথে কথা বলার সাহস হয়নি।
আমি জানি মায়ের কি পরিমান কস্ট হচ্ছে। বাবার ফার্স্ট স্ট্রোকের পর গত ৩ টি বছর মা পরম মমতায়,যত্নে বাবাকে আগলে রেখেছিলেন। ফিজিও থেরাপিস্ট, হাউজ ফিজিশিয়ান, দু'জন ফূটফরমায়েশ খাটার লোক থাকার পরও মা নিজেই বাবার সব কিছু করতেন।বাবার জন্য আমাদের দুইভাইয়ের চেয়ে মায়ের কাছে হাহাকার শুন্যতাটা অনেক বেশী। সেই ভয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে পারিনি।
প্রবাস জীবন মানুষকে যে কি নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তা টের পেলাম আবারও।বাবার চলে যাবার ৮ ঘন্টার মধ্যে একটা রাত পার করে ভোরে ছুটতে হয় ট্রেনিংয়ে।মেট্রো এবং বাসে এয়ারপোর্ট যেতে যেতে বারবার চোখ মুছতে হল।এরমাঝে ২/৩ বার দেশে কথা হলো, সব ঠিকঠাক মতন হল কি না, মায়ের অবস্থা এখন কেমন এসব জেনে মন হাল্কা করার চেস্টা করছিলাম।
ট্রেনিংয়ে গিয়ে কেন যেন কলিগ কিংবা অফিসের কাউকে আমার বাবার কথা বলতে পারলাম না। হয়তো আমি চাইনি কেউ আমাকে, ওহো নো! বলুক। কিংবা সমবেদনা দেখাতে গিয়ে বাবার কথা জানতে চেয়ে আমার দু'চোখ অশ্রুসজল করুক।
সারাদিন এয়ারপোর্টে ট্রেনিং শেষে বাসায় ফিরে ভয়ে ভয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম মা কিছুটা সামলে নিয়েছেন।কিন্তু আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনি। দু'দিন যে কাঁদতে পারিনি বুঝতে পেরে মা আমাকে কাঁদতে দেন। মায়ের কাছে কেঁদেছি শিশুদের মতন হাউমাউ করে।
ফোন রাখার আগে মা শুধু বললেন, বাবার জন্য দোয়া করো, পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়াটা বড়। রাব্বি হুমহামা কামা রাব্বায়িনা সাগিরা।
------------
৯.১২.২০১৮
মন্ট্রিয়েল,কুইবেক
কানাডা

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭

নতুন বলেছেন: ভাই... সান্তনায় এই কস্ট কমে না তাই সান্তনা দেতে পারিনা।

বাবা মা বট গাছের মতন... মাথার উপরে একটা ছায়া , সব ঝড় ঝাপটা উপড় থেকে আগলে রাখে... আমাদের জন্য একটা আশ্রয়... মাথার উপরে না থাকলে তখনই বোঝা যায়।

গত ১৭ নভেম্বর আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

মনে হয় হুমায়ুন আহমেদের একটা কবি উপন্নাসে পড়েছিলাম.... '' মায়ের সাথে নাড়ী কাটা হয় কিন্তু আসলে একটা এটা ছিন্ন হয় মা মারা যারার পরে''

বিদেশে কামলা দিলেও মা আছে .... মায়ের সাথে একটা অদৃশ্য নাড়ীর বাধন ঠিক্ই ছিলো। কিন্তু মারা যারা পরে মনে হয়েছে নাড়ী কাটা হয়েছে... :(

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন আবেগময় লেখা।
তবে প্রথম পাতায় একটা লেখা থাকা অবস্থায় আরেকটা লেখা দিবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.