নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাফিব্লগ

রথো রাফি

রথো রাফি লেখালেখি গাণ্ডীব, অনিন্দ্য, শিড়দাঁড়া এবং দ্রষ্টব্যেই । মূলত কবিতা অন্তঃপ্রাণ তবে গদ্যও লিখেছি কিছু। অনুবাদেও আগ্রহ আছে। বই এখনো নাই। জন্ম: দক্ষিণ তারুয়া, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। [email protected]

রথো রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজার কাব্বানি: দুনোমনো লোকজন

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

লজ্জার শেষ দেয়াল পড়লো ধসে

আর খুশি হলাম আমরা...

আর নাচলাম

আর কাপুরুষদের শান্তির গানে ধন্য হলাম আমরা...

কিছুই আর আমাদের সন্ত্রস্ত করবে না।

কিছুই আর লজ্জার কারণ হবে না ।

কারণ অহংকারের শিরাগুলো আমাদের মাঝে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।



ধসে পড়ুক...

পঞ্চাশতম বারের মতো-- আমাদের সতীত্ব...

কোন কাঁপকাঁপি... কিংবা কান্নাকাটি ছাড়াই...

কিংবা রক্তের দৃশ্যে আতঙ্ক ছাড়াই...

দুনোমনোভরা কালের ভেতর প্রবেশ করেছি আমরা...

আর সার বেঁধে দাঁড়িয়েছি, গিলোটিনের সামনে ভেড়ার পালের মতো

আমরা ছুটে গেলাম... আর চেঁচিয়ে উঠলাম...

আর নেমে পড়লাম খুনীর বুটে চুমো খাওয়ার প্রতিযোগিতায়...



পঞ্চাশটা বছর তারা আমাদের শিশুদের ক্ষুধার্ত রেখেছে

আর উপবাসের শেষে, আমাদের দিকে ছুঁড়ে দিলো...

এট্টুক একটা রসুন..



গ্রানাডার পতন হলো

--পঞ্চাশতম বারের মতো--

আরবদের হাত থেকে।

আরবদের হাত থেকে ইতিহাসের পতন হলো।

তেজের স্তম্ভগুলোর পতন হলো... কৌমের শাখাউপাশাগুলোরও...

পতন হলো যতো বীরত্বভরা গানের...

পতন হলো সেভিলের...

পতন হলো আন্তিয়খের...

পতন হলো আম্মোরিয়ার...

আর পতন হলো হিট্টনের, একবারেই লড়াইবিহীন।

মেরীর পতন হলো দ্রোহীদের হাতে

আর কেউ রইলো না সেখানে স্বর্গীয় প্রতীকটিকে বাঁচানোর

আর কোন পৌরুষও রইলো না...

আমাদের শেষ প্রিয়জনের পতন হলো

রোমানদের হাতে, তারপর আর কীসের রক্ষায় লড়ছি আমরা?

একজন রক্ষিতাও নেই আমাদের প্রাসাদে...

কে বানাবে কফি... আর কে দেবে কাম...

তাহলে কীসের রক্ষায় লড়ছি আমরা?



কিছুই অবশিষ্ট নেই আর হাতে...

একটা আন্দুলাসই কেবল হাতে আছে.

তারা চুরি করলো দরজা

আর বেড়াগুলো,

আর স্ত্রীদের, আর শিশুদের,

জলপাই, আর তেল,

আর খোয়াপাথর যতো রাস্তার।

তারা যিশুকে চুরি করেছে, মেরীর শিশুকে,

যখন কিনা সে মায়ের দুধই ছাড়েনি।

তারা আমাদের কাছ থেকে লেবুর স্মৃতিও চুরি করেছে..

আর খোবানি.. আর পুদিনার পাতা,

আর মসজিদের বাতিগুলো..



তারা আমাদের হাতে সার্ডিন মাছের একটা ক্যান ধরিয়ে দিয়েছে

নাম (গাজা)...

একটা শুকনো হাড়, নাম (জেরিকো)

একটা সরাইখানা, নাম প্যালেস্টাইন,

যার ছাদ নেই, আর খিলানও নেই...

তারা হাড্ডিবিহীন একটা শরীর ফেলে গেছে

আর আঙুলবিহীন একটা হাত...



এমনকিছু ধ্বংসাবশেষও অবশিষ্ট নেই যার জন্য কান্নাকাটি করবো

একটা জাতি কীভাবে কাঁদে..

যাদের অশ্রুটুকুও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে??

অসলোতে এই গোপন তোষামুদির পর,

বেরিয়ে এলাম আমরা ফাঁপা হয়ে...

তারা আমাদেরকে গমের দানার চেয়েও ক্ষুদ্র একবিন্দু জন্মভূমি মঞ্জুর করেছে...

একটা জন্মভূমি, আমরা পানিছাড়াই যাকে গিলে ফেলতে পারি

এসপিরিনের একটা বড়ির মতো!!...

পঞ্চাশ বছর পর...

আমরা এখন বসে আছি, একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের ওপর।

হাজার হাজার কুত্তার মতোই... কোনো আশ্রয় নেই আমাদের!!...



পঞ্চাশটা বছর পর...

বসবাসের জন্য একটা জন্মভূমি পেলাম না আমরা

মরিচিকাটুকু ছাড়া।



এ কোনো স্বীকৃতি নয়...

যে স্বীকৃতি, ড্যাগারের মতো, আমাদের ভেতরে ঢুকে পড়ে...

এতো ধর্ষণমাত্র!!...



এই দুনোমনো কোন কাজে আসে?

কোন কাজে আসে এই দুনোমনো?

যখন কিনা জনগণের সচেতনতা বড়ো জীবন্ত

বোমার ফিউজের মতোই...

অসলোর সমস্ত সাক্ষর মিলিয়েও

একদানা সরিষার সমান হবে না!!...



সবুজ শান্তির কী-স্বপ্নই না দেখতাম আমরা।

আর একটা সাদা শুকপক্ষ চাঁদের।

আর এক নীল সাগরের।

আর ছড়ানো পালের...

আর আচমকা দেখতে পেলাম আমাদের

একটা গোবর গাদায়!!...



কারা জিগ্যেস করবে তাদের

কাপুরুষদের শান্তি সম্পর্কে??



তেজি আর সামর্থবানদের শান্তির কথা নয়।

কারা জিগ্যেস করবে তাদের??

কিস্তিতে বেঁচে দেওয়া শান্তির কথা,

কিস্তিতে ভাড়া খাটানোর কথা...

আর লেনদেন...

আর ব্যাবসায়ী... আর শোষণকারী সম্পর্কে?

কারা জিগ্যেস করবে তাদের?

মৃতদের শান্তি সম্পর্কে...

তারা স্তব্ধ করে দিয়েছে পথঘাট...

আর সমস্ত প্রশ্নকে খুন করেছে...

আর সমস্ত প্রশ্নকারীকে...



আর আমরা প্রেমহীন বিয়েতে বাধ্য হলাম...

সেই মহিলাকে যে একদিন আমাদের শিশুদের খেয়ে ফেলেছিলো...

আর আমাদের কলজে চিবিয়েছিলো...

তাকেই নিয়ে গেলাম আমরা হানিমুনে।

আর পান করলাম আমরা... আর নাচলাম...

আর স্মরণ করলাম সমস্তকিছু যা প্রেমের কবিতাতেই ধরে রাখি আমরা।

তারপর আমরা দুর্ভাগ্যের ফেরে জন্মদিলাম পঙ্গু শিশুদের

ব্যাঙের শরীর পেলো তারা ...

আর আমরা দুঃখের ফুটপাতে নিক্ষিপ্ত হলাম

আলিঙ্গনের কোন দেশ ছাড়াই...

কিংবা কোন শিশু!!

কোন আরবই ছিলো না ওই বিয়েতে নাচার জন্য

কিংবা কোন আরবীয় খাবার।

কিংবা কোন আরবী গান

কিংবা কোন আরবীয় লজ্জা

দেশের সন্তানেরা বিয়ের প্রদর্শনী থেকে ছিলো দূরে



অর্ধেক যৌতুক ছিলো ডলারেই...

ডলারেই ছিলো হীরের আংটিটা...

আদালতের কেরানির ফি-টাও ছিলো ডলারেই

আর বিয়ের কেকটাতো ছিলো আমেরিকারই পাঠানো উপহার...

আর বিয়ের গদি, আর ফুল, আর প্রদীপ

আর মেরিনে’র বাজনা

সব সবই ছিলো আমেরিকায় তৈরি।



শেষ হলো বিয়ে... আনন্দের মাঝে ছিলো না প্যালেস্টাইন ।

কিন্তু নিজের ছবিটি দেখতে পেলো সে সমস্ত চ্যানেলেই...

আর দেখতে পেলো তার চোখের জল সাগরের ঢেউগুলো সেলাই করছে...

শিকাগোর দিকে... আর জার্সি... আর মায়ামির দিকে

জবাই করা পাখির মতোই চেঁচাচ্ছিলো সে তখন

এই বিয়ে আমার বিয়ে নয়

এই জামা আমার জামা নয়...

এই লজ্জা আমার লজ্জা নয়...

আমেরিকা... কখ্খনোই না

আমেরিকা... কখ্খনোই না

আমেরিকা... কখ্খনোই না





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.