নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাফিব্লগ

রথো রাফি

রথো রাফি লেখালেখি গাণ্ডীব, অনিন্দ্য, শিড়দাঁড়া এবং দ্রষ্টব্যেই । মূলত কবিতা অন্তঃপ্রাণ তবে গদ্যও লিখেছি কিছু। অনুবাদেও আগ্রহ আছে। বই এখনো নাই। জন্ম: দক্ষিণ তারুয়া, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। [email protected]

রথো রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহরে চাষের গল্প

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৪২

মাঝে মাঝেই একটা লোককে দেখি টবের গাছের একমাত্র চালকুমড়াটিকে যত্ন নিতে। কুমড়োটি এরইমধ্যে বিশাল হয়ে ওঠেছে। মাথার উপরে চালকুমড়োটাকে স্থাপন করে, একটা রশি দিয়ে এর গা জড়িয়ে শিকে বানিয়ে, তারপর মাচার বাঁশের সাথে শিকেটা ঝুলিয়ে দিচ্ছে লোকটা, দেখতে পেলাম একদিন। আর আজকে আবার শেকেটা খুলে একেটু ঢিলে করে দিয়েছে। কারণ এরই মধ্যে কুমড়োটা আরো একটু বড়ো হয়েছে। সবসময়েই দুপুর রোদে সে একাজটা করে থাকে। আর চালকুমড়োটার দিকে চেয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর এ গায়ে হাত বুলোয়। কুমড়োটা অনেক বড়ো এটা যেমন খুশির, তেমনি আশংকার। কারণ ডাঁটি ছিড়ে কুমড়োটি পড়ে যেতে পারে। আমি ভাবলাম। কিন্তু লোকটা গাছটার মালিক নয়, মালি, আর মালিকদের কখনোই দেখিনা গাছটাকে দেখেতে আসতে। দুপুর রোদে কুমেড়োটার দিকে লোকটি তাকিয়ে থাকে, আমি দেখতে পাই। ঢাকা শহরে ছাদের উপরে চালকুমড়ো চাষ... মালি আর মালিকের নস্টালিজয়ার একটা নমুনা। আমারও কি একটু নস্টালজিয়া নয়- এ বিষয়টা ঘিরে সময় ব্যয় করা, বেশ দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে! গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না, ছোট সময়ের সবজিবাগানে পানি দেওয়া, দাদার সাথে ক্ষেতে হাল দিতে যাওয়া, মইয়ের উপরে চড়তে গিয়ে উল্টে পড়া, কান্নাকাটি এসবই কি একটু একটু মনে পড়ে। মনে পড়ে কি তাদেরও?... যেনো তিন দিক থেকে আসা তিন ধরনের তিনজন মিলে বানিয়ে রেখেছি একটি রোদভরা দুপুর আর স্মৃতিপুরের বর্তমানতা!-- একজন মালিক, একজন মালি, আর একজন দর্শক-- এই ঢাকা শহরে...। যারা হয়তো নিরুপায় না-হলে কোনদিনই আর ফিরে যাবে না গ্রামে, ক্ষেতের আলে, হালের লাঙ্গল পাঁজন, মই, গরু নিয়ে.... ঢাকা শহরেই ঢাকা পড়ে থাকবে, আর একদিন হাওয়া হয়ে যাবে! আমরা তিনজন একে অপরেকে সবসময়েই দেখি পথে ঘাটে, চায়ের দোকানে বেশ কবছর, কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলি না, বলা হয় না। মৌসুম এলেই দেখি লোকটা ছাদে নতুন টব রাখছে, মাটি বানাচ্ছে, বীজ পুঁতে দিচ্ছে, বাঁশ আনছে, রশি পাকাচ্ছে, মাচা বানাচ্ছে, রোদে ঘামছে। কয়টা চালকুমড়ো ধরে এতো ধ্যানজ্ঞানের বিনিময়ে? তা আর কটা হবে, একটা কি দুটো! তারপর একদিন দেখি, লোকটা মানে মালিটা নীরবে চালকুমমড়োটার গায়ে হাত বুলাচ্ছে, দুপুর রোদের নিচে ওই নির্জন ছাদে। আর মালিককে কখনোই ছাদে উঠে আসতে দেখি না, কখনো গাছটাকে বা কুমড়োটাকে দেখতে আসে না সে। আর আমি ভাবি, যখন কুমড়োটা পেড়ে নেওয়া হয়, ঘরের ভেতরে কুমড়োটাকে দেখে মালিক কী ভাবে, তার গ্রামের কথা কি ভাবে, বা মালিকটির বউ কী ভাবে? নিজের ছাদে ফলানো কুমড়ো নিয়ে তাদের কি একটু বেশি আনন্দ হয় না? একটা অনুচ্চারিত উৎসব কি মৃদুভাবে হাওয়া দেয় সেদিনের ডাইনিং টেবিলে? মহিলা কি অন্য কাউকে ডেকে আনে নিজের বাড়িতে, নিজেদের ফলানো কুমড়োর তরকারি চেখে দেখতে, কিংবা 'আরে ‌‌ভাবি, আজকে তো আমাদের ছাদের কুমড়োটাকেই কুরবানি করে দিলাম, বেশ অন্যরকম!' বলে নাকি পাড়ার অন্যকোন মহিলাকে কল করে? কতটা অন্যরকম, যতোটা দূরত্ব সেই দূরের মাঠের থেকে ওই ছাদের, আর এই ঢাকা শহরের ফ্ল্যাটগুলোর!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.