নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাফিব্লগ

রথো রাফি

রথো রাফি লেখালেখি গাণ্ডীব, অনিন্দ্য, শিড়দাঁড়া এবং দ্রষ্টব্যেই । মূলত কবিতা অন্তঃপ্রাণ তবে গদ্যও লিখেছি কিছু। অনুবাদেও আগ্রহ আছে। বই এখনো নাই। জন্ম: দক্ষিণ তারুয়া, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। [email protected]

রথো রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডরেকে ওয়ালকট: মধুকর ডঙ্গিা

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৪০

১.

বিদায়, কারেনেজ





অলস আগস্টে, যেসময়ে সাগর প্রশান্ত

আর বাদামী দ্বীপের পাতারা জড়ো হয় তীরে তীরে

এই ক্যারিবিয়ার, নিভিয়ে দিলাম বাতি আমি

মারিয়া কনসেপসিয়নের স্বপ্নহীন মুখের উপরে

নাবিক হিসেবে উঠে যেতে মধুকর ডিঙার ।

ইয়ার্ডের বাইরে ধূসর হয়ে এলো সকাল,

দাঁড়িয়ে আমি পাথর যেনো আর কিছুই নড়েচড়ে না

শুধু হিমসাগর জুড়ে গ্যালভানাইজের মতো কুচি কুচি ঢেউ

আর আকাশের ছাদে পেরেক সাটার নক্ষত্র-ছির্দ্র,

যতোক্ষণ না বাতাস গাছগুলোকে জ্বালাতন করা শুর করে।

যখন ঢাল বেয়ে নামছিলাম, ইয়ার্ড ঝাড়ু দিয়ে চলা

আমার রুক্ষ প্রতিবেশিনীর পাশ দিয়ে গেলাম, আর কাছ ঘেঁষে বললাম তাকে:

“ধীরে ঝাট দে, রাক্ষসী কোথাকার, গভীর নয় রে ঘুম তার।”

শুয়রনিটা এমনকরে তাকালো আমি যেনো মৃত-লোক একটা ।

টেক্সি-ছোটার রাস্তাটায়, পার্কের আলো জ্বলছে তখনো।

ড্রাইভার আমার ব্যাগটা চেয়ে দেখলো এক পলক:

“এইবার, স্যাবাইন, মনে হচ্ছে চলেই যাচ্ছো একেবারে!”

গাধাটাকে কোন উত্তরই দিলাম না, আমি শুধু উঠে

বসলাম পেছনের সিটে আর দেখতে লাগলাম লাভেন্টাইনের উপরে

আকাশ জ্বলছে, ওই জোব্বার মতো রক্তলাল

যার মাঝে ফেলে এসেছি যাকে সেই নারীটি তখনও ঘুমিয়ে চলেছে

আর আমি পেছন-আয়নায় তাকালাম আর দেখতে পেলাম

ঠিক আমার মতোই একটা লোক, আর সেই মানুষটা কাঁদছে

বাড়িঘরের টানে, পথঘাট, পুরো ওই চুদানী দ্বীপটার জন্য।



সমস্ত ঘুমন্ত বস্তুর উপরে যিশুর করুণা ঝরুক!

রাইটসন রোডের পচাঁগলা কুকুরটা থেকে শুরু করে

যখন আমিও ছিলাম কুত্তা একটা এই রাস্তাঘাটে সে-দিন অবধি;

যদি এই দ্বীপকে ভালবাসা আমার জন্য ভার হয়ে থাকে,

তবে এই অনিয়মের বাইরে উড়াল দিতে চায় হৃদয় আমার,

তবে তাদের বিশাল বাড়িঘর, দামী গাড়ি, সময়ের সুবিধাবাদিতা দিয়ে

তাদের কুলি, কালা-মানুষ, সিরিয় আর ফরাসি ক্রিওলদের দিয়ে

আমার আত্মাকে বিষিয়ে ফেলেছিলো তারা,

তা-ই তাদেরকেই দিয়ে গেলাম এ দ্বীপ আর ছেড়ে গেলাম তাদের কোলাহল--

সাগরস্নান সেরে, সড়ক ধরে চলে গেলাম।

মনোস থেকে নাসাউ সমস্ত আমি সমস্ত দ্বীপই চিনিজানি,

সাগর-সবুজ চোখের এক মরচে-মাথা নাবিক

যাকে তারা স্যাবাইন নামে ডাকে, খুবই সুলভ এক নাম

যেকোন লাল নিগারের, আর আমি, স্যাবাইন, দেখলাম সে-সময়টা

যখন সাম্রাজ্যের এসব বস্তিভিটা ছিলো স্বর্গরাজ্য।

আমি তো নেহাত-এক লাল নিগার ভালবাসে যে সাগর,

আর আছে আমার যথাযথ এক উপনিবেশীক শিক্ষা,

আমার মাঝে আছে পুর্তগিজ, নিগ্রো আর আছে ইংরেজ

হয় কেউ নই আমি, না-হয় আমিই বরং একটা জাতি।



কিন্তু মারিয়া কনসেপসিয়ন ছিলো আমার সমস্ত চেতনা জুড়ে

সাগরের ঢেউয়ের উঠা-নামা দেখতে দেখতে

ডরিসের পাশে বন্দরে যখন, পালভরা ডিঙা আর ইয়াটগুলো

সূর্যের তুলির আঘাতে সতেজভাবে আঁকা

প্রতিটা ঝিলিকের সাথে গেয়ে উঠছিলো তার নাম;

আমি জানতাম যখন কালো-চুলের সন্ধ্যা পড়বে তার

উজ্জ্বল রেশমের জামা সূর্যাস্তে, আর, সমুদ্র ভাজ করে,

তার নক্ষত্র-উপচানো হাসির চাদরের নিচে লাজুকভাবে এগোয়,

কোনও স্থিরতা নেই সেখানে, কোন বিস্মরণ নেই।

কবরখানায় পায়চারী করা শোকাকুলজনকে পুনরুজ্জীবনের

গল্প বলার মতো, তারা মৃতদেরকেই ফিরে চায়,

তাই নিজেকে নিয়ে হাসি যখন নোঙরের দড়াদড়ি

খুলে যায় আর মধুকর ডিঙাটি সাগরের দিকে ভেসে যায়:

‘লাভ নেই বারবার সাগরের মাছের প্রাচুর্যের কথা পেড়ে। চাই না

আর, সেরাফের ওই কামগন্ধহীন আলোয় সে সাজুগুজু থাক।

মারমোসেট বানরের মতো ওই বাদামী-গোল চোখগুলো চাই, আর

যে দিন আবার আমি পিঠে ঠেস দিয়ে বসতে ও হাসতে পারবো,

চাই ওই নখগুলো রবিবারের সন্ধ্যাগুলোতে যারা আমার ঘামে ভেজা

পিঠে সুসরসুরি দিতো, একটা কাকড়া যেমন সিক্ত বালিতে।”

যখন কাজ করতাম আমি, দেখতাম একের পর এক ঢেউ আসছে

মাস্তুল পেরিয়ে যা সাগরকে রেশম-কাপড়ের মতো চিরে ফেলে

মায়ের দুধের কসম, আজকে রাতের চুলা থেকে উড়ে আসবে

যে নক্ষত্রগুলো তাদের কসম, বিশ্বেস করো সবাই,

আমি ভালবাসতাম তাদের, আমার শিশু, আমার স্ত্রী

আমার ঘর; ভালবাসতাম কবিরা যেমন ভালবাসে কবিতাকে

যা তাদেরকেই খুন করে ফেলে, সমুদ্র যেমন ডুবিয়ে মারে সমুদ্রচারীকে।



কোন-না-কোন নিঃসঙ্গ সৈকত থেকে তোমরা কি কখনো চেয়ে দেখেছো

আর দেখেছো কি অনেক দূরে একটি মধুকর ডিঙ্গা? যাইহোক, যখন আমি এই কবিতা লিখি, প্রতিটা বাগধারা লবনে ভিজে চপচপে হয়ে যায়;

আমিও প্রতিটা লাইন টেনে যাই আর এই মাস্তুলে

পালের দড়িদড়ার মতোই বাধি আঁটোসাঁটো করে; সরল কথায়

আমার সাদামাটা ভাষা হয়ে উঠে এই বাতাস,

আর মধুকর ডিঙার সব পাল হয়ে ওঠে খাতার পৃষ্ঠাগুলো।

তবে আমাকে বলতে দিন, এ কাজকারবার কিভাবে-বা শুরু হলো।



(প্রথম অংশ : খসড়া)





















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.