নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশ্চয় বিভক্তি ভেঙ্গে বিশ্বাসের বিন্যাস দেশপ্রেম কে বিন্যস্ত করবে নগরের আনাচে কানাচে।গুমোট বাতাসে শীতের ক্লান্তি বসন্তের জানান দেবেই।

স্বর যন্ত্র

প্রজ্জলনের অনির্বাণ অগ্নিশিখা আমি, শুধু সাদা আগুন, পুড়লে ফোসকা পড়েনা, ধোঁয়াও ওড়েনা..তাই নৈতিকতার স্বপক্ষে ফিরে যাই বারে বারে।

স্বর যন্ত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবতার অবনমন,নৈতিকতার বিসর্জন.।.।.।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৪

২০০৬/৭ সালের দিককার কথা,আমি তখন কলাবাগান, ডলফিন গলিতে থাকতাম।সারাদিন কাজের ব্যাস্ততায় কিভাবে যে সময় পার হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।তারপরও এতো ব্যাস্ততার ফাঁকে যখন সময় পেতাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে যেতাম রবীন্দ্র সরোবর কিংবা ৮ নম্বর ব্রিজের ওখানে।এমনই এক বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখি অনেক মানুষের ভিড়,নারী নির্যাতন রোধ কিংবা নারীপুরুষ বৈষম্য দূর প্রসঙ্গে কোনও একটা আলোচনা অনুষ্ঠান।আলোচনা শেষে লাইভ গান গাইবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস।মহা আনন্দে আমি আর আমার বন্ধু রাজু অন্য বন্ধুদের ফোন দিয়ে আসতে বললাম।কিন্তু কনসার্ট এ এতো বেশি ভিড় ছিল যে দাঁড়ানোর জন্য কোনও জায়গা খুজে পাছছিলাম না।কোনও রকমে একদম ভিড়ের শেষে দাড়িয়ে গান শোনার চেষ্টা করছিলাম।২ টা গান শেষ হওয়ার পর হটাত দেখলাম ভিড়ের ঠিক সামনের দিকে কিসের যেন একটা জটলা,এবং জটলা টা ধিরে ধিরে উপরের দিকে আসছে।একটু ভাল করে খেয়াল করার পর বুঝতে পারলাম, এক জোড়া আদিবাসি তরুন তরুনী কিছু বখাটের আক্রমন থেকে বাঁচার আপ্রান চেষ্টা করছে।এবং সেখান থেকে কোনও রকম বের হয়ে আসার অনর্থক চেষ্টা দেখে বুকের মাঝে কেমন যেন হু হু করে উঠলো।খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আশেপাশের মানুষ গুলো মহা আনন্দে এই দৃশ্য দেখছে আর হাসিতে ফেটে পড়ছে।আর যে যেখান থেকে পারছে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিছছে কোনও ভাবে যদি মেয়েটার শরীর টা স্পর্শ করতে পারে ভাবটা এমন যে মেয়েটার শরীর স্পর্শ করতে পারলেই তার জীবন টা ধন্য হয়ে যাবে।যদিও মানুষ রুপী এই জানোয়ারের সংখ্যা খুব বেশী ছিলনা,হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র।আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে অপেক্ষা করছিলাম কোনও ভাবে যদি এই হায়েনাগুলর হাত থেকে ছেলে মেয়ে দুটোকে উদ্ধার করা যায়।তরুন তরুনী যুগল যখন ভিড়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছল,ততক্ষন যা হবার তা হয়ে গেছে।ছেলেটি ঘেমে নেয়ে একাকার আর মেয়েটি ভয়ে,বিভীষিকায় তটস্থ।চোখে মুখে রাজ্যের আতংক,ঘ্রীনা সেই সাথে বিরক্তিও।লজ্জা ও অপারাধ বোধে কিছু বলতে পারছিলামনা, আস্তে করে সুধু জানতে চাইলাম আপনারা ঠিক আছেনতো?অপর দিক থেকে নির্বাক চাহনি ছাড়া কোনও উত্তর পেলামনা,উত্তর আশাও করিনি।নিজেকে খুব অথর্ব মনে হচ্ছিল সেদিন।পাবলিক প্লেসে এতোবড় একটা অশ্লীল ঘটনা ঘটল অথচ কিছুই করতে পারলামনা।শুধু ভাবছিলাম এই দু পেয়ে জন্তুগুলো কি কোনও মায়ের সন্তান?এরা কি এতোটাই অশিক্ষা,কুশিক্ষায় আচ্ছন্ন যে কোমল পানীয় ভার্জিন এর বোতল দেখলেও শ্লীলতাহানীর কামনা জেগে উঠে?আদিবাসীদের ব্যাপারে কে কি মত পোষণ করে আমি জানিনা, আমি শুধু এটুকু অনুধাবন করি, যে এরা বাংলাদেশ নামক ভু খণ্ডের মাঝে জন্মগ্রহণ করেছে,এরা বাংলাদেশের নাগরিক।অন্য সকল সাধারন নাগরিকের মত এরাও এদেশের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার রাখে, অন্য সবার মত এদের দেশের যে কোনও প্রান্তে স্বাধীন ভাবে চলাচল করার অধিকার রাখে।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আদিবাসি ও সমতলের মানুষের মধ্যকার বৈষম্য প্রকটভাবে চোখে পড়ার মত, যা মোটেও কাম্য নয়।একবার এক পলিটিক্যাল বড় ভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম আচ্ছা ভাই আমরা শিক্ষায়, সমৃদ্ধিতে এতটা এগিয়ে গিয়েছি, কিন্তু তারপরও বাঙ্গালী ও আদিবাসীদের মাঝে এখনও এতো বেশী বৈষম্য কেন?তিনি বলেছিলেন বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন আমেরিকা, ব্রিটেন এখনও পর্যন্ত তাদের দেশের উপজাতিদের কে মুল নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তাহলে আমরা কেন দেব?তার এই মন্তব্য শুনে শুধু হাসিই পাইনি ,করুনাও হয়েছিলো।এরাই হয়তো আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে।খারাপ লাগে যখন দেখি বিপুল চাকমাদের মত মানুষ অধিকার রক্ষার আন্দলনের কারনে অন্তরীন থাকে।মায়ের মৃত্যুর পর ও হাতকড়া পরে শেষ দেখা দেখতে হয়।২০১০ সালের দিকে একটি এনজিওর ইভেন্ট এর কাজ করেছিলাম, আমার সাথে তখন ২০/২৫ জনের এক ঝাঁক টগবগে তরুন/তরুনী কাজ করেছিল।সবাই খুব প্রানবন্ত ও দক্ষতার সাথে কাজ করেছিল।কাজতা যেহেতু খুব অ্যাডভেঞ্চারাস ও লাভজনক ছিল সবাই খুব চেষ্টা করত বেশী বেশী কাজ পাওয়ার জন্য।অনেকেই খুব অনুরধ করত কাজ দেওয়ার জন্য।তাদের মাঝে একটি ছেলে ছিল নাম অর্ণব ত্রিপুরা,ছেলেটি গ্রামীন ফোনের মডেল ছিল, এই ছেলেটাকে সবচেয়ে বেশী কাজ দিয়েছিলাম,এটা দেখে অন্য ছেলে মেয়েরা একদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আছছা ভাইয়া আপনি অর্ণব কে এতো বেশী কাজ দেন কেন?উত্তরে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম “ঋণ শোধ করছি”।
বিঃদ্রঃ ওই ঘটনার পর থেকে আজ অবধি আর কখনও লাইভ কনসার্টে যাইনি আমি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.