নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার সর্বসত্ত্ব লেখক দ্বারা সংরক্ষিত।

রাবেয়া রব্বানি

মানুষের ভীড়ে মানুষ হয়ে গেছি বারবার।

রাবেয়া রব্বানি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলাই। পর্ব ১

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৮




-আপনার বুকে ওটা কিসের দাগ?
-একজন নিয়ম ভাঙ্গা মানুষের প্রতি প্রকৃতির প্রতিশোধ। বলতে পারেন একটা মোটাসোটা শেকল।
-মানে।
-ওপেন হার্ট সার্জারী।
-প্রতিশোধ বলতে?একটু খুলে বলবেন কি?

ইমরান সাহেব হয়ত কথা ঘুরাবার জন্য প্রশ্নটা এড়িয়ে আমাকে পালটা প্রশ্ন করলেন,
-আপনি এখানে থাকছেন নাকি আরো কিছুদিন?
-হ্যা এইতো আর পাঁচদিন। আসলে বছরে একটা ছুটিতে যেতেই হয়। না হলে নিজেকেই চা বাগানের একটা পাহাড় মনে হয়।হা হা!
-বাহ বেশ সুখে আছেন।
-সুখি ঠিক না তবে আপনার মত বলতে গেলে বলতে পারেন, দুই তৃতীয়াংশ জীবন সরিসৃপের মত কাটানো এক মানুষকে শেষ জীবনে প্রকৃতির দেয়া একটু উপহার।
-বাহ আপনি দেখছি আমার উলটো পিঠ।সব কিছুরই নাকি উলটো প্রতিবিম্ব থাকে। তাহলে আপনি আমার সেই উলটো প্রতিবিম্ব।আজ আমি বিস্মিত এবং একি সাথে মুগ্ধ।

ইমরান সাহেব এবার ঘুরে বসে আমার দিকে চকচকে কৌতুহলে তাকিয়ে আছেন। দৃশ্যটা কেমন দ্রুত পালটে গেল। আমি এখানে বিষয় হতে আসিনি এসেছি বিষয় সম্পর্কে জানতে।আমি আবার আমার উদ্দেশ্যের খেই ধরতে চাইলাম,
-শুনেছি আপনার ছবির এক্সিবিশান বেশ ভালো চলত। হঠাৎ ছবি আঁকা ছেড়ে দিলেন যে?
-ইচ্ছে করে ছেড়ে দিয়েছি কে বলল? এখন চিন্তা থাকে রোজগারের, টাকার। এই ইন্টেনশানে ছবি আঁকা হয় না বইমেলার প্রচ্ছদ হয় ।
তাছাড়া আরো কারন আছে যেমন সিগারেট খেতে পারিনা,অখন্ড সময় নেই,বিভিন্ন ট্রিক্স করে টাকা কামাই করতে হচ্ছে।ছবি আঁকা জেনে কি লাভ হয়েছে এখন বুঝতে পারছি না।
মান আরাফা মুঝে হ্যায় আব হাসেলী,ইস সব যাতাহে জাহেলী বু আলি।
-মানে?
-মানে একটা উর্দু শের।

উনি শেরটার অর্থ পরিস্কার করলেন না এবং মুখে ঘুরিয়ে জানালার বাইরে দেখতে লাগলেন। আমি আমার প্রশ্ন করা আপাতত বন্ধ রাখলাম। হেয়ালী দিয়ে কথা বললে যত প্রশ্ন করা হয় বক্তার বক্তব্য তত জটিল হয়।

লেখালেখি করার কাজে আমাকে অন্যের কথা শুনতে হয়, বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনতে হয়। অভিজ্ঞতা থেকেই বেশ কিছু কৌশল আমি অবলম্বন করি যেমন এখন চুপ হয়ে গেলাম। আমার হাতে কোন নোটবুক নেই। টেপ রেকর্ড ও নেই। মস্তিস্কের অখন্ড মনোযোগই ভরসা। তাছাড়া এগুলো ব্যক্তিগত আলাপকে ব্যাহত আর কৃত্রিম করে।এক্ষেত্রে বক্তার সাথে একজন সহমর্মী বন্ধুর মতই ব্যবহার করতে হয়,গল্প খোজা লেখক নয়।
আমি ইমরান সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি খাটের উপর জানালা বরাবর পা মেলে বসে আছেন। তার দৃষ্টি আকাশে উড়ন্ত একটি ঘুড়ির পিছু পিছু। আমার অভ্যাস তার বসার ভঙ্গী আর শারীরিক গঠন আর একবার পড়ে নিল। খালি গা, ফর্সা স্থুল শরীর কোকড়ানো চুল ঝুটি করা,হাতে একটা রুপালী রঙের ব্রেসলেট। এক কানে ছোট্ট একটি দুল।বয়স জানামতে পঞ্চান্ন-ছাপান্ন।তিনি বুকের কাটা জায়গাটা বরাবর হাত বুলাচ্ছেন।

আমি উনাকে সময় দেই,একপাশে দেয়ালে ঝুলানো বেশ বড় একটি পেইন্টিং এ চোখ বুলাতে থাকি।মোবাইলটা হাতে নিয়ে মিস কল চেক করি।পকেটের সিগারেটের প্যাকেটে কয়েকবার হাত বুলিয়ে ফিরে আসি।আচমকা আমার মুখ ফসকে বেড়িয়েই আসে,
-সিগারেট কি একেবারেই খান না? আমি কি একটা সিগারেট খেতে পারি।
-অবশ্যই।

এবার তিনি একটু হাসলেন। আমি সিগারেট ধরানোর আগেই হঠাৎ তার স্ত্রী কিছু নাশতা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।শ্যামলা মত শুকনা আর লম্বা এক মহিলা। কুশল বিনিময় করে তিনি সেগুলো আমার সামনে রাখলেন আর সেদ্ধ সবজীর বাটিটা ইমরান সাহেবের সামনে। ইমরান সাহেব হাতে ইশারা করে সবজীর বাটিটা আমাকে দেখালেন।
-এই দেখুন এই বেস্বাদ জিনিস খেয়ে বেচে আছি।
উনার স্ত্রী কিছুটা কৌতুহল নিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলেন।
-ভাইকে তো ঠিক চিনলাম না।
ইমরান সাহেব কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললেন,
-ও তোমার সাথে তো উনাকে পরিচিত করিয়ে দেই নি।উনি জহীরের ভায়রা।এখানে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন।
উনার স্ত্রী তাতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে বললেন,
জহীর…। মানে কোন জহীর?
-আরে এই এই মহল্লার।
-ওহ জহীর ভাইএর ভায়রা। ও আচ্ছা আচ্ছা।তা ভাই এমনিতে থাকেন কোথায়?
-আমি আসলে চাকুরীসূত্রে সিলেটে থাকি।একটা টি এস্টেটে আছি।ওখানে আত্মীয় পরিজন নাই বলতে।বছরে একবার তাই পরিবার নিয়ে বেড়োতেই হয়।
-তা বেশ।কেমন লাগছে নারায়নগঞ্জ?
-খারাপ না।পুরোনো শহর।প্রচুর মানুষ।এখানের শহীদ মিনারের আড্ডায় ই ইমরান ভাইএর সাথে পরিচয়।উনার সঙ্গ খুব ভালো লেগে গেল। তাই আপনাদের বিরক্ত করতে চলে এলাম।
ইমরান সাহেব হেসে বললেন,
-রেনু উনি কিন্তু একজন লেখক।তার মোটামুটি লেখক পরিচিতি আছে।

এবার উনার স্ত্রীর মুখে খুব নির্মল আর সহজ হাসি দেখতে পেলাম। যেন লেখক জাতিটা উনার স্বজন। ভদ্রমহিলার বোধহয় আর কৌতুহল নেই। উনি আমাদের চা নাশতা খেতে বলে চলে গেলেন।
আমি এবার চা টা শেষ করে সিগারেট ধরালাম।লম্বা লম্বা টানে সিগারেটটা দ্রুত শেষ করলাম।ভেতরে ভেতরে কিছুটা অস্থির বোধ করছি। উনি কি নিজের কথা বলতে চাইছেন না? কিন্তু এমন একটা চরিত্রের মুখিমুখি বসে আমার লেখক স্বত্তা এখন বেশ লোভী। আমি আবার সেই দূর্ভেদ্য দেয়ালে একটা বড়সড় ঢিল ছুড়তে উদ্যত হই।
-আচ্ছা আপনার নিশ্চয়ই নিজের পেইন্টিং এর কালেকশান আছে বাসায়। আমি কি দেখতে পারি?
-অবশ্যই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: চালিয়ে যান +++

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩২

রাবেয়া রব্বানি বলেছেন: ভালো থাকুন। ধন্যবাদ হাসান ভাই

২| ২২ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটার বাকি অংশ দেখতে পারলে ভাল লাগত আরো। কবে ধন্যবাদ
সুন্দর গল্পটির জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.