নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্পঃ কঙ্কাল রহস্য (সিআইডি ট্রল ভার্সণ)

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:৪৮

ডাস্টবিনের পাশে এসে থমকে দাঁড়ালো ফ্রেডরিকস। কিছু একটা নজরে পড়েছে তার। ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধময় ডাস্টবিনটার দিকে ফিরে তাকালো।
উহু! দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কিছুই চোখে পড়ছে না। কিন্তু সে কিছু দেখেছে নিশ্চিত। খতিয়ে দেখতে হবে ব্যাপারটা। হাতে থাকা ব্যাগটাকে রাস্তার পাশে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে ডাস্টবিনের ময়লাগুলো কাঠি দিয়ে নেড়ে দেখা শুরু করল।
হ্যা! পেয়ে গেছে। পেয়ে গেছে। একটা খুলি। মাথার খুলি। এটাই তার নজরে পড়েছিল।
একজন সিআইডি অফিসার সে। খুলিটা পাওয়া মাত্রই সে ফোন করে ব্যাপারটা জানালো তার বসকে। এসিপি প্র্যাদ্যুমান তার বস। বিশ্বের বাঘা ইনভেস্টিগেটরদের একজন।
‘এসিপি স্যার!’ ফোন দিয়েই জরুরী কন্ঠে বলে উঠলো ফ্রেডরিকস।
‘হ্যা! ফ্রেডি বল?’ স্বাভাবিক সুরেই বলল এসিপি প্র্যাদ্যুমান। ফ্রেডরিকসকে ডিপার্টমেন্টের সবাই সংক্ষেপে ফ্রেডি ডাকে।
‘স্যার একটা জিনিস পাইছি?’
‘কী জিনিস?’ খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ পেল না এসিপির কন্ঠে।
‘একটা খুলি!’ যেন বোমা ফাটিয়েছে, এমন ভাবে বলল ফ্রেডি।
‘কিহহহহ!!!!! খুলি?’ চেয়ারে বসা থেকে উলটে পড়ে গেল এসিপি। আসলেই বোমা ফেটেছে।
‘হ্যা স্যার।’
‘ব্যুরোতে নিয়ে আসো খুলিটা।’
‘ক্যাম্নে আনুম স্যার? হাতে কইরা খুলি নিয়া আসতে গেলে রাস্তায় মাইনশের জেরার মুখে পড়ুম।’
খুবই যুক্তি সংগত কথা বলেছে ফ্রেডি। আসলেই হাতে করে রাস্তা দিয়ে খুলিটা নিয়ে অনেক মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে তাকে। কেউ কেউ হয়ত খুলি দেখেও জিজ্ঞেস করবে, ‘ভাই এইডা কী?’ আবার কেউ কেউ জিজ্ঞেস করবে, ‘এইডা কার মাথা?’ আরো নানান টাইপ প্রশ্ন।
এসিপিও ভেবে একটু চিন্তায় পড়ে গেল। কি সমাধান এটার!
‘আচ্ছা তুমি কই এখন?’ জিজ্ঞেস করল এসিপি।
‘আমি তো ম্যাকডোনাল্ডসের বাইরে ডাস্টবিনের কাছে স্যার!’
‘ঐখানে কী করো?’
‘খিদা লাগছিল। পিজ্জা নিতে আইছিলাম।’
‘অ! পিজ্জা কিসে করে নিয়ে আসবা?’
‘একটা ব্যাগে কইরা।’
‘এক কাজ করো ব্যাগে করে খুলিটা নিয়ে এসো।’
‘তাইলে পিজ্জা?’
‘পিজ্জারে গুলি মাইরা ডাস্টবিনে ফালা। আগে খুলি লইয়া ব্যুরোত আয়।’
এসিপির চেঁচানোতে ভড়কে গেল ফ্রেডি। পেটে ক্ষুধা, আর ঐদিকে চাকরী। একহাতে পিজ্জার ব্যাগ, আরেকহাতে খুলি। কি আর করার, চাকরীর বাঁচানোর জন্য পিস্তল বের করে পিজ্জায় গুলি করে ডাস্টবিনেই ফেলে দিল। হাজার হোক এসিপির নির্দেশ।

*

খুলিটিকে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে অভিজিৎ। সিআইডির সিনিয়র ইন্সপেক্টরদের একজন সে। খুলিটির সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হচ্ছে। ‘এতসুন্দর খুলিও মানুষের হতে পারে!’ মনে মনে এই কথাটাই ভাবছে সে। অহ! তার সম্পর্কে একটা কথা তো বলাই হয় নি, সে তুখোড় গোয়েন্দা হলেও – বেশ রোমান্টিক। এই মুহুর্তে খুলিটি কোন সুন্দর নারীর চিন্তা করে রোমান্টকি হয়ে গেছে। দুইহাতে খুলিটাকে ধরে চোখ বন্ধ করে বুকে আগলে রেখেছে। স্বপ্নে খুলিটার সাথে নেঁচে নেঁচে গান গাচ্ছে। সে আর খুলি। খুলি আর সে।
‘ভাইসাব! খুলির সাথে নাচানাচি বন্ধ হইলে একটু তদন্ত কি করা যাবে?’
কথাটা শুনেই স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরলো অভিজিৎ। দেখে দায়া হাসিমুখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো অভিজিৎ। খুলিটিকে সুন্দর করে আবার টেবিলে রেখে দিল।
দায়া দেখা শুরু করল এবার খুলিটিকে। সে সিআইডির আরেক সিনিয়র ইন্সপেক্টর। স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ্। বেশ লম্বা চওড়া। গায়ে অসুরের শক্তি। দরজা ভাঙার এক্সপার্ট। তার জন্য দরজার তালা খুলতে চাবি লাগে না। তার এক লাথিই যথেষ্ট। সর্বক্ষনই দরজা ভাঙার অপেক্ষায় থাকে। তবে এই মুহুর্তে খুলিটিকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। কার খুলি এটা! ডাস্টবিনে শুধু খুলিটিই রেখে গেছে! দেহের বাকিটুক কোথায়?
বেশিক্ষন চিন্তা করতে পারলো না। এসিপি এসে পড়েছে। হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এগিয়ে আসছে। তার এই হাত ঘোরানোর মানে সে চিন্তায় করছে এমন কিছু না। তার শাওয়ারের ঝর্নার নবটা নষ্ট অনেকদিন ধরেই। ঠিক করাবে করাবে বলেও আর করানো হচ্ছে না। একটু শক্ত নব হওয়ায় বেশ ঘুরাতে হয়, সেই থেকেই নব ঘোরানোর স্টাইলটা তারই স্টাইল হয়ে গেছে। কথা বলা, খাওয়া, আসামী ধরা, তদন্ত করা – সব কাজেই নব ঘুরানোর মত হাত ঘোরায়। এমনকি ঘুমানোর পরও।
‘দায়া! এইটা কিসের খুলি?’ জিজ্ঞেস করল এসিপি।
‘স্যার মানুষের!’ উত্তর দিল ফ্রেডি। সেও এসেছে একটু আগেই।
‘এইডা তো হারামজাদা আমিও জানি।’ রেগে গেল এসিপি।
‘তাইলে জিগাইলেন ক্যা?’ ফ্রেডির জিজ্ঞেস করল।
ফ্রেডির প্রশ্নের পাত্তা দিল না। আসলে পাত্তা দিতে গেলে নিজেই ধরা খাবে। এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তার।
‘এর এই অবস্থা হইলো ক্যাম্নে?’ আবার জিজ্ঞেস করলো এসিপি।
‘মরার পরে হাড্ডির উপর মাংস শুকায়া।’ উত্তর দিয়েই আবার চুপ হয়ে গেল ফ্রেডি।
‘এর বাকি অংশ কই?’
‘খোঁজা লাগবে স্যার।’ উত্তর দিল অভিজিৎ।
‘খোঁজ লাগাও। ঐ ডাস্টবিনের আশেপাশেই বাকি অংশ আছে। আমি ডিমন শিউর।’ আত্নপ্রত্যয়ী শোনাল এসিপির গলা।
‘জি স্যার।’
‘কিন্তু এই খুলি কার? কে মারছে তাকে?’ চিন্তিত ভাবে বলল এসিপি।
‘এই খুলি কার তা তো জানি না। তবে কে মারছে তা মনে হয় জানি!’ এসিপির আসার পর এই প্রথমবার মুখ খুলল দায়া!
‘কে????’ বাকি তিনজন সমস্বরে জানতে চাইলো।
‘খুনি!’ বেশ আস্তে ধীরে সময় নিয়ে জবাবটা দিল দায়া।

*

ম্যাকডোনাল্ডসের পাশের ঐ ডাস্টবিনটায় আসলো তারা। এসিপি আসে নি। কি যেন একটা জরুরী কাজে গেছে। দায়া, অভিজিৎ আর ফ্রেডি এসেছে। আগের দিন ফ্রেডি খুলিটা পেয়ে আর বেশি ঘাটাঘাটি করে নি। আজ তিনজন মিলে ঘাটাঘাটি শুরু করেছে। প্রায় আধাঘন্টা কেটে গেছে। পাওয়ার মধ্যে শুধু ঘাটাঘাটি করার কারণে তেষ্টাই পেয়েছে তাদের। ফ্রেডি দোকানে গেল সেভেনআপ আনতে। সেভেনআপ খেয়ে তেষ্টা মিটিয়ে আবার ঘাটাঘাটি শুরু করলো তারা। অনেকক্ষন ঘাটাঘাটি করেও কিছুই পেল না ওরা।
তবে হতাশ হয় নি। আশে পাশের অন্যান্য ডাস্টবিনগুলোতেও খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনজন মিলে ছড়িয়ে পড়েছে ডাস্টবিন ঘাটার কাজে। কিছুই পাচ্ছে না। অনেকক্ষন পরে প্রথম ডাস্টবিনের থেকে অনেকদূরের একটা ডাস্টবিনে ফ্রেডি পেল দেহের বাকি অংশ।
‘স্যার!’ জোরে ডাক দিল দায়া আর অভিজিৎকে। ‘পাইছি!’
দৌড়ে এল ওরা। দেহের বাকি অংশ পাওয়ায় অনেক শান্তি পেয়েছে। দেহটা সহ ফ্রেডিকে পাঠালো ফরেনসিক ল্যাবে ডাক্তার সালনুকের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানাতে পারবে খুনটা আসলে কিভাবে করা হয়েছে।
ঐদিকে দায়া আর অভিজিৎ আরেক চিন্তায় পড়েছে। লাশের পুরো অংশটাই জায়গায়, আর খুলিটা আরেক জায়গায়! কিভাবে সম্ভব?
জটিল হচ্ছে রহস্যটা আস্তে আস্তে!
ডাক্তার সালনুকেই এখন ভরসা। সে কিছু জানাতে পারলেই তদন্তে এগুতো পারবে তারা।

*

হাত ঘুরানো অব্যাহত আছে এসিপির। হাত ঘুরাতে ঘুরাতেই তার সিআইডি টিম নিয়ে ঢুকলো ফরেনসিক ল্যাবে। ফ্রেডি ডাক্তার সালনুকেকে লাশটা দিয়ে গেছে প্রায় আটঘন্টা। এতক্ষনে সালনুকে নিশ্চয় লাশের ইতিবৃত্তান্ত সব বের করে ফেলেছে। ভাবল এসিপি। ডাক্তার এই লোকটার অগাধ বিশ্বাস এসিপির। তারা ভাল বন্ধুও।
ল্যাবে ঢুকে দেখে লাস্যময়ী এক নারী একটা বিকারে কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। সালনুকে বসে আছে কম্পিউটারে ঐপাশে। লাশটাকে রাখা হয়েছে একটা চৌবাচ্চার মধ্যে পানিতে। কালো জাতীয় কোন ক্যামিকেলে ডুবানো।
‘সালনুকে ক, কি জানতে পারছস?’ এসিপি জিজ্ঞেস করলো ডাক্তারকে।
কম্পিউটারের সামনের চেয়ারটা থেকে উঠে তাদের কাছে আসলো সালনুকে।
‘বস! অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা জানতে পারলাম!’
‘কী?’ আগ্রহভরে জানতে চাইলো এসিপি ও তার দল।
‘এইটা একটা কঙ্কাল। খুলিটাও এই কঙ্কালেরই।’
‘আরে এইডাতো আমরা জানিই। আর নতুন কি জানছস ঐডা ক।’ অধৈর্য্য হল এসিপি।
‘নতুন কিছুই না বস!’ নিরাশ গলায় বলল সালনুকে।
চৌবাচ্চার ভিতর থাকা রাসায়নিকটার দিকে ইঙ্গিত করল এসিপি।
‘এই যে ক্যামিকেলে ডুবায়া রাখছস – এইডা দিয়া কি জানছস?’
‘এইডা ক্যামিকেল না বস!’
‘তাইলে কী এইডা?’
‘এইডা ডাস্টবিনের ময়লা। কঙ্কালডারে ধুইছি পানি দিয়া। ধোয়ার পরে পানি এরাম কালা হয়া গেছে।’ জানালো সালনুকেকে।
মেজাজ গরম করে হাত ঘুরাতে শুরু করল এসিপি প্র্যাদ্যুমান। তেতে গিয়ে সে কিছু বলার আগেই ক্ষেপে উঠলো অভিজিৎ। ডাক্তার আর তার মাঝে একটূ তিক্ততা লেগেই থাকে সব কেসেই।
‘ডাক্তার সাব! আপনে সবসময়ই এমন হতাশ করেন আমাদের।’ এরপর ঘুরলো লাস্যময়ী নারীর দিকে। মুখে বত্রিশ দন্ত বিকশিত হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘তারিকাজি আমাদের হতাশ করবেন না নিশ্চয়?’
এই লাস্যময়ী নারী মানে তারিকা সালনুকের অ্যাসিস্টেন্ট। আবার অভিজিৎ-এর স্বপ্নের নায়িকাও। অভিজিৎ-এর হাসির জবাবে সেও হাসলো।
‘আমি কোন কিছু বলতে পারবো না। ডাক্তার সালনুকেই সব করছে। আমি শুধু ডিএনএ টেস্টের জন্য একটু হেল্প করেছি।’
‘ডিএনএ টেস্ট?’ কথাটা কেড়ে নিল দায়া। ‘রিপোর্ট আসছে?’ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
‘নাহ! কালকের আগে পাওয়া যাবে না। কম্পিউটার হ্যাং মারছে।’ জবাব দিল সালনুকে।
‘কালকে সকালের মাঝে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট জানাবি আমাদের! নাহলে তর ডাক্তারি…………’ শাসিয়ে দিল এসিপি।

*

ম্যাকডোনাল্ডসের আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে তারা। খুনিটা যেহেতু খুলিটা এইখানে ফেলেছে, তারমানে আশেপাশের কারো না কারো নজরে তো পড়েছেই। কাকে জিজ্ঞেস করবে? কাউকেই তো মনে হচ্ছে না এখানে খুব বেশি সময় কাটায়।
একটা দোকান দেখে এগিয়ে গেল তারা। আপাতত এই দোকানটাকেই তাদের তথ্য পাওয়ার বড় জায়গা মনে হচ্ছে। দোকানীকে নিজেদের পরিচয় দিল। দোকানী ঘাবড়ে গেলেও তাদের সব প্রশ্নের উত্তরই ঠিকমত দিয়েছে। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারে নি। খুনিকে খুলিটা ফেলতে দেখে নি সে।
‘স্যার! আমি সত্যি কইতাছি, আমি খুলি ফালতে কাউরে দেখি নাই। যদি দেখতাম তাইলে খুনিরে কইতাম।’
‘কি বলতা খুনিকে?’
‘ভাই! এইনে খুলি ফালায়েন না। অন্য কোন জায়গাত ফালান গিয়া।’
আর কিছু জানতে পারলো না ওরা। ধরে নিল খুনি সবার অগোচরেই কাজটা করেছে। কাউকে জিজ্ঞেস করেই লাভ হবে না।
চলে যেতে লাগছিল, এই মুহুর্তে অভিজিৎ কারো গায়ে বেঁধে উলটে পড়ে গেল। রাস্তায় বসে ভিক্ষা করা এক ভিক্ষুকের পাও মারিয়ে দিল। উঠে ঠিক হয়ে, ফকিরকে বলল, ‘রাস্তার মাঝখানে বসছো ক্যান? সাইডে বইতে পারো না?’
‘সাইডে তো ডাস্টবিন! ক্যাম্নে বসমু?’
‘হ বুঝছি? বাড়ি কই?’
‘বাড়ি নাই! এইনেই থাকি!’
এখানেই থাকে শুনে একটু শিহরিত হল দায়া। নিশ্চয় খুনিটাকে দেখেছে সে। যদিও আশা কম, ভিক্ষুকতো তখন ঘুমিয়েও থাকতে পারে। যেহেতু, খুনি – সে তো আর দিনেদুপুরে সবার সামনে কাজটা করে নি।
‘এইখানে কি কাউকে এই ডাস্টবিনে কিছু ফেলে যেতে দেখেছো?’
‘স্যার! ডাস্টবিনে তো সবাই ই ময়লা ফালায়া যায়। আপ্নে কিয়ের কথা কইতাছেন?’
‘এই ধরো, খুলি?’
‘খুলি?’ চমকে উঠল ভিক্ষুকটা।
তার চমক দায়া-অভিজিৎ দুইজনের চোখেই ধরা পড়ল। ‘কি? দেখছো?’
‘হ স্যার! চাইর-পাচ দিন আগে এক লোকে ফুটবলের মত মাথাডা ডাস্টবিনে ফালায়া গেছে।’
‘লোকটাকে চিনো?’
‘না!’
‘ঐদিন কি কথা হইছিল তোমার সাথে লোকটার?’
‘হ আমারে টাকা দিছিলো কয়ডা। হেই সময় ঐডির সাথে এইডাও পইড়া গেছিল তার পকেট থেইকা।’ বলে তার ঝুলি থেকে একটা ব্যাজ বের করে দেখালো।
ব্যাজটা হাতে নিল দায়া। একটা স্কুলের ব্যাজ। স্কুলটা দূরে না। এখান থেকে কাছেই। ভিক্ষুককে টাকা দিয়ে তারা বিদায় নিল।
স্কুলের ব্যাজ দিয়েই কিভাবে খুনীকে খুঁজবে সেটা বুঝতে পারলো না প্রথমে। পরে চিন্তা করলো, ম্যাকডোনাল্ডসের ঐ এলাকার আশে পাশে এই স্কুলের যতজন থাকে তাদেরই কেউ খুনি হবে হয়ত। স্কুলের সাথে জড়িত ঐ এলাকায় থাকা সবার ঠিকানা নিল তারা।
একটা ঠিকানা খুব অবাক করলো তাদের। যেই ডাস্টবিনে কঙ্কালের বাকি অংশ পেয়েছিল, ঐটার ঠিক পাশের বাসায়ই থাকে স্কুলের এক শিক্ষক। ঐ বাসাটাতেই গেল প্রথমে। এছাড়া ঐ এলাকায় খুন করার মত বয়সী কেউ নেইও। সবই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। এই একজনকেই সন্দেহ করা যায়।
বাসাটায় গিয়ে দরজায় নক করবে, এমন সময় অভিজিৎ বলল, ‘ভিতরে ভয়ানক খুনী। নক করলে সতর্ক হয়ে যেতে পারে। এরচেয়ে দরজা ভেঙে দাও। আমি পিস্তল নিয়ে তৈরি আছি।’

দায়া এইটাই চাইছিল। মনে মনে খুশি হয়ে এক লাথিতে দরজা ভেঙে দিল। উদ্যত পিস্তলে ঢুকল দুইজনে। বাড়ির নিবাসী তাদের দেখে উলটো দিকে দৌড় দিল। লাভ হল না। ধরে ফেলল দায়া।
সামনে এনে বাম গালে কষে এক থাপ্পড় দিল!
ঠাসসসসসস!

*

ব্যুরোতে!
দায়ার হাতে বাম গালে থাপ্পড় খেয়ে ডান চোখ কালো হয়ে গেছে লোকটির। বাম গালে ডান চোখ কালো করার টেকনিকটা একমাত্র দায়াই ভাল জানে। কিভাবে করে সে এই কাজটা! আজ পর্যন্ত বুঝতে পারে নি কেউ।
লোকটার সামনে টেবিলে একটা খুলি, আর খুলি বিহীন কঙ্কাল রাখা।
এসিপি লোকটাকে বলল, ‘বাতাও।’
লোকটা কিছু বলা শুরু করার আগেই দৌড়ে আসলো ডাক্তার সালনুকে। হাতে টেস্টের রিপোর্ট।
‘বস! ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পাইছি।’
‘রিপোর্ট কি বলে?’
‘বস! বোম ফাটানো খবর এইটা!’ উত্তেজিত হয়ে বলল সালনুকে।
‘ফাটা তাড়াতাড়ি।’ এসিপিকেও উত্তেজনা ধরেছে।
‘বস! কঙ্কালটা…’ সবার উৎসুক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখে নিল একবার। ‘…… প্লাস্টিকের।’
‘কি!!!!’ বিষ্ময়ে ফেটে পড়ল সবাই। যেই লোকটাকে ধরে এনেছে সে বাদে।
‘আমি কিছু বলব!’ কাতর কন্ঠে জানতে চাইলো লোকটি।
‘হ্যা বলেন!’ তুমি থেকে আপনিতে চলে গেছে এসিপি। ‘প্লাস্টিকের কঙ্কাল এভাবে টূকরো করে দুটো ডাস্টবিনে ফেলার মানে কী? প্লাস্টিকের কঙ্কাল ফেলা দোষের না, কিন্তু দুই সিআইডি অফিসার দেখে দৌড়ে পালাতে চাইলেন কেন?’
‘আরে মিয়া! আপ্নের ঘরের দরজা ভাইঙা যদি কেউ ঘরে পিস্তল নিয়া ঢুকে তাইলে কি আপ্নে দৌড় না দিয়া খাড়ায়া খাড়ায়া তামাশা দেখবেন?’ তেতে উঠলো লোকটি। ‘আমি স্কুলের শিক্ষক। কঙ্কালটা স্কুলের। বাসায় একটু দরকারে আনছিলাম। পুরান জিনিস, হাত দিতেই খুলি আলগা হয়ে গেছিল। সাথে বুকের কয়ডা হাড্ডি, পাওয়ের হাড্ডিও হারায়া গেছিল। ডাক্তার কি কঙ্কাল দেইখা এইডা বুঝে নাই? কঙ্কাল প্লাস্টিকের এইডা বুঝতে ডিএনএ টেস্ট লাগে?’ সালনুকের দিকে তাকিয়ে বলল লোকটি।
আমতা আমতা করছে সালনুকে। কী বলবে?
‘আর প্লাস্টিকের কঙ্কালের ডিএনএ টেস্টই বা করলো ক্যাম্নে? আমি তো অইডাই বুঝতেছি না।’ বলে গেল লোকটি।
ব্যুরোর পুরোটা নীরব হয়ে গেছে। থমকে গেছে সবাই।
‘তাহলে দুই ডাস্টবিনের ব্যাপারটা?’ জিজ্ঞেস করলো এসিপি।
‘আরে মিয়া! খুলি ফালাইতে ভুইল্লা গেছিলাম। যখন মনে হইছে, তখন ফালায়া দিছি। ব্যাগেই ছিল – ম্যাকডোনাল্ডসে খাইতে গেছিলাম। তখন মনে হইছিল। ফালায়া দিছি। এইরাম ঝামেলা হইবো জানলে আমি সিআইডিরে আগে জানায়াই ফালাইতাম। আর দানবটায় খায় কী? এক থাপ্পড়ে চাপার হাড্ডি গুড়া কইরালছে।’
এরপর আর লোকটাকে আঁটকে রাখে নি তারা। তাকে পৌছে দেওয়ার জন্য সাথে যায় ফ্রেডি।
লোকটা চলে যেতেই এসিপি আবার হাত ঘুরানো শুরু করলো।
‘ইসকা মাতলাব সামঝা দায়া?’
‘ক্যায়া স্যার?’
‘কেস সলভড হো গ্যায়া!’

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৫

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: হাহাহা মজা পাইসি ;)

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আগের গল্পে দুঃখ পেয়েছিলেন।

এটায় কিন্তু কোন দুঃখই নাই। মজাই মজা শুধু। হাহাহা।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪২

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার রম্য গল্প। শেষ তিনটে বাক্য গল্পটাকে রসোত্তীর্ণ করেছে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ধন্যবাদ!!

শেষ তিনটা বাক্যতো আসলে সিআইডি ট্রলিং-এর ইতিহাসেরই অংশ। তাদেরকে ট্রল করতে গেলে এই তিন বাক্য না থাকলে তো ট্রল করে মজাই পাওয়া যাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.