নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিখোঁজ (কিশোর থ্রিলার) - পর্ব ১

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪০

১.

নিশানার দিকে বন্দুকের নলটা তাক করে নিল অর্ক। তার দশম এবং শেষ নিশানা। এইবার তাকে লাগাতেই হবে।
আগের নয়টির মধ্য থেকে একটিও লাগাতে পারেনি।

মাপ-ঝোক, হিসেব নিকেশ করে চেপে দিল বন্দুকের ট্রিগারটি। ঠুস করে একটা শব্দ হল।

শব্দটা হওয়ার পর পরই অর্কের পাশে থাকা রিয়াদ খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
হতাশ হয়ে নিজেকেই গালি দিয়ে উঠল অর্ক। এইবারেও লাগাতে পারে নি। বন্দুকটা ফিরিয়ে দিল তার মালিকের কাছে।

এতক্ষন চলছিল রিয়াদ আর অর্কের বন্দুক দিয়ে বেলুন ফুটানোর চ্যালেঞ্জ।
রিয়াদ চ্যালেঞ্জ করেছিল অর্ক দশটা শটের মধ্য থেকে একটাও বেলুন ফুটাতে পারবে না।
শর্ত ছিল, চ্যালেঞ্জে যে হারবে – সে তাদের পুরো গ্যাংকে শহরের সবচেয়ে দামী রেস্টুরেন্টে ট্রিট দিবে।

যদিও চ্যালেঞ্জে হারার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ছিল রিয়াদেরই। কারন, যতই অনভিজ্ঞ হোকনা কেন – যে কেউ ই দশটার মধ্য থেকে অন্তত একটা তো টার্গেটে লাগাতে পারবেই।
কপালটা ভালই বলতে হবে রিয়াদের। কারন, অর্ক এই বন্দুক দিয়ে বেলুন ফুটানোর খেলায় একটু বেশিই অনভিজ্ঞ। দশটা কেন, বিশতা সুযোগ দিলেও অর্ক পারত কিনা সন্দেহ আছে।
অবশ্য অর্কের দুর্ভাগ্যও বলা যায় এটাকে।

যাই হোক, অতশত না ভেবে রিয়াদের দিকে ফিরল অর্ক। রিয়াদের চোখে মুখে বিদ্রুপের ছাপ দেখেই বুঝতে পারল সেই পরিমানের একটা পঁচানো খেতে হবে তাকে।

কিন্তু পঁচানো খেতে আর কার ভালো লাগে!!!
অর্কেরও ভাল লাগেনা। রিয়াদের কাছ থেকে আসন্ন পঁচানো খাওয়াটা এড়ানোর জন্য তাড়াতাড়ি করে বলল, ‘এখনই যাবি?’

রিয়াদের হাসিহাসি মুখটা উবে গেল। সেই জায়গায় স্থান নিল হতাশা আর বিস্ময়।
হতাশা এই কারনে, সে ভেবেছিল অর্ক হয়ত কাউন্টার করে নিজের পক্ষেই কথা বলবে বা ট্রিট দিতে অস্বীকৃতি জানাবে – আর সেই সুযোগে সে অর্ককে প্রানভরে একটু পঁচিয়ে নিবে।
কারন অর্ককে পঁচানোর সুযোগ খুব কমই পাওয়া পাওয়া যায় – আর যাওবা পাওয়া যায়, অর্ক কি করে যেন সেটা এড়িয়েও যায়।
প্রতিবারই এটা হয়। সেই কারনেই রিয়াদ কিছুটা অবাকও। কিভাবে পারে অর্ক এটা!!!

‘এখন ক্যামনে! পুরা গ্যাং আছি নাকি এখন?’ পালটা প্রশ্ন ছুড়ল রিয়াদ।

অর্কের খেয়াল হল শর্তের কথাটা – পুরো গ্যাংকে ট্রিট দিতে হবে। কিন্তু পুরো গ্যাংটা নাই এখন।

পুরো গ্যাংটা আসলে অর্ক, রিয়াদ আর সাকিব – এই তিনজনকে নিয়েই গড়া।
সবসময় একসাথে ঘোরাফেরা করে, কাজ করতে হলেও একই সাথে করে। কাজটা কঠিন হলে আবার তিনজনে মিলে ভাগ ভাগ করে – করে।
তিনজনের সবসময় একসাথে থাকার কারনেই তারা নিজেদের মাঝে তাদের সার্কেলটাকে গ্যাং বলে ডাকে।

পুরো গ্যাং নেই মানে শুধু সাকিবই নেই। গত তিন-চারদিন যাবৎই সাকিব নেই তাদের মাঝে।
আসলে চ্যালেঞ্জে হেরে যাওয়ায় অর্কের সাকিবের অনুপস্থিতির কথাটা মনে ছিল না।

‘ধুর! মনেছিল না।’ দোষ স্বীকার করে নিল অর্ক।

‘তোর মনেছিল না!!! কি দিনকাল আসলরে ভাউ!’ অবাক হবার ভান করল রিয়াদ।

‘বাদ দে তো! কিন্তু কথা হল, সাকিব আসলে কই তিন-চারদিন যাবৎ?’ রিয়াদের বিদ্রুপাত্নক কথটায় পাত্তা দিল না অর্ক। তার মাথায় এখন ঢুকে গেছে সাকিবের কয়েকদিন যাবৎ অনুপস্থিত থাকার ঘটনাটা।

‘আমি ক্যাম্নে জান্মু!!! শালারে তিন-চারদিন যাবৎ কয়েকবার কইরা ফোন করছি – ধরেই নাই। এমনকি পরে ব্যাকও করে নাই।’

‘আমারও একই অবস্থা। আমার ফোনও ধরে নাই।’

‘শালায় কি কোন বিপদেই পড়ল কি না – কে জানে! হইতে পারে কোন ভেজালে আছে – এরলিগাই মনেহয় আমগরে কিছু কয় নাই।’

‘এমন তো আগে কখনো করে নাই সাকিব। কোথাও গেলে তো আমাদেরকে জানিয়ে দিত আগেই। আর বিপদ হলেও তো আমাদেরকেই আগে বলতো।’

‘তা কইছস ঠিক।আমাগরে না জানায়া শালায় কিছুই করে নাই। কিন্তু তিন-চারদিন যাবৎ নিখোঁজ, মানে আমাদের মাঝখানে নাই আরকি – খুব একটা ভাল কিছু মনে হইতাছে না আমার। ওর বাসায় গিয়া খোক নিয়া দেখবি?’

ঘড়ি দেখল অর্ক। হ্যা! যাওয়া যায় সাকিবের বাসায়।
‘হুমমম! চল যাই। বাসায় গিয়ে আগে একটা খোঁজ নিয়ে দেখি। অসুস্থ হয়েও পড়ে থাকতে পারে।’

সাইকেলে চেপে বসল দুজনে। গন্তব্য সাকিবদের বাসা।
কিন্তু সাকিবদের বাসায় গিয়ে একই সাথে হতাশ এবং অবাক হতে হল ওদের।

হতাশ হল – কারন সাকিবের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।
আর অবাক হল – কারন সাকিবদের বাসায় একটা বিশাল তালা ঝুলানো রয়েছে। ওদের বাসার কেউ ই নেই। এমনটা কখনো আগে হয় নি। সাকিবদের ফ্যামিলি কোথাও গেলে – তা তাদের জানিয়েই যেত।

২.

সাকিবের এইভাবে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়াটা বেশ রহস্যময় লাগছে অর্কের কাছে। তাদের তিনজনের যে কেউই কিছু করলে বাকী দুইজনকে জানিয়ে করে তারা।
আর লম্বা সফর বা কোথাও বেড়াতে গেলে তো তিনজন একসাথেই যায়।

যেহেতু সাকিবদের বাসায় তাল ঝুলানো ছিল তারমানে তারা কোথাও বেড়াতেই গেছে – এমনটাই ভাবছে অর্ক। কিন্তু এইভাবে না বল যাওয়াটায় নিজ্র ভাবনা নিজেই উড়িয়ে দিল সে।
তারপর আবার ফোন করলে ধরছেও না – এমনকি পরে ফোন ব্যাকও করছে না।
নাহ, কিছুই বুঝতে পারছে না অর্ক। আবার ফোন করল সাকিবকে।

এতদিন তো ফোন দিলে রিসিভ করত না কিন্তু এখন ফোনই বন্ধ। ফোন কেন বন্ধ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা অর্ক।
বন্ধ নম্বরটাতেই ক্রমাগত ফোন করে চলেছে সে। যদিও জানে, ফোন করে কোন লাভ নেই – তারপরও বেখেয়ালে করেই যাচ্ছে।

হঠাৎ এক সময় মনে পড়ল, সাকিবের এই নম্বরটা বন্ধ থাকলে – অন্য আরেকটা নম্বর খোলা থাকে।
যদিও ঐ নম্বরটা জানে অল্প কয়েকজনই – ওই অল্প কয়েকজনের মধ্যে অর্ক আর রিয়াদও রয়েছে। ঐ নম্বরটাতে ফোন দেওয়ার জন্য মনস্থির করল অর্ক।
কিন্তু ফোন করতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল অর্ক। কারন বিশ্বাস সাকিবকে তার নিজ নম্বর থেকে ফোন করলে – সেইটা সাকিবের ধরার সম্ভবনা কম।

ভেবে কিছু না পেয়ে, ফোন করেই দিল অর্ক। তার ভাবনাটা ঠিকই ছিল। সাকিবের এই নম্বরটাই খোলা।
ফোনটা সাকিব ধরবে না ভেবেছিল সে। কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে ফোনটা ধরল সাকিব। যদিও সেটা একদম শেষ মূহুর্তে - মানে রিং বাজতে বাজতে ফোন কেটে যাবে এমন সময়।

‘কিরে শালা! কই গায়েব হইলি তুই?’ সাকিব ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই বলল অর্ক।

‘গায়েব কই হইলাম! আছিতো।’ স্বাভাবিকভাবেই বলার চেষ্টা করল সাকিব। কিন্তু তারপরও গলার স্বরে কিছু অস্বাভাবিকতা থেকেই গেল তার।

‘কই আছস? এত এত ফোন করলাম ধরলি না, কয়েকদিন যাবৎ তুই কই আছিস কিছুই জানিনা। কিছু বলিসও নাই আগে। এই দিক দিয়ে আমরা যে তোর জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি – সেটা কি তোর মাথায় আছে?’

‘আসলে একটু ঝামেলায় ছিলাম তো তাই ফোন ধরতে পারি নাই।’

‘আচ্ছা মানলাম ঝামেলায় ছিলি। তো এখন ফোন বন্ধই বা করে রাখছিস কেন?’

‘ঐ ঝামেলার জন্যই। আসলে কথা বলতেই ইচ্ছে করে না এখন কারো সাথে, তারউপর আবার তোরা ফোন দিচ্ছিল নিয়মিতই – তাই ফোন অফ রেখেছিলাম। যাতে তোরা কেন – কেউই ফোন করতে না পারে। কিন্তু লাভ আর হল কই – তুই তো ঠিকই খুজে খুজে ফোন করলিই।’

‘আচ্ছা বুঝলাম। এখন কি ঝামেলা মিটেছে?’

‘ঝামেলা…… থাক বাদ দেন!’

‘বাদ দিব মানে? কি হইছে খুলে বল তো?’

‘থাক না।’

‘থাকনে মানে? বল কি হইছে? কিসের ঝামেলা? আর তুই আছিসই বা কই এই কয়দিন যাবৎ?’

‘আমি আমাদের গ্রামের বাড়িতে। ঝামেলাটা আসলে গ্রামেই ঘটেছে।’

‘হুমমম! খুলে বল সব।’

‘ঐ যে বললি না আমার গায়েব হওয়ার কথা – আসলে আমি গায়েব হই নাই, তবে এই গায়েব হওয়াটাই ঝামেলা।’

‘মানে বুঝলাম না তর কথার।’

‘গ্রামে এসে বড় আপু গায়েব হয়ে গেছে। প্রায়দিন চারদিন হয়ে গেল – এখনও খুজে পাওয়া যায়নি। এটাই ঝামেলাটা।’

‘গায়েব হয়ে গেছে মানে? কবে, কিভাবে?’

‘চারদিন আগে। ঐদিন ভোর থেকেই নিখোঁজ আপু। পুলিশে জানানো হয়েছে। তার চারদিন যাবৎ খুঁজল। আর বাংলাদেশের পুলিশ কেমন তো জানিসই – চারদিন ধরে খুজে না পেয়ে এখন খোজাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর বলেছ, আপু কোথাও বড়াত গেছে হয়ত, বাড়িতে জানানো যাবে না এমন কোন জায়গায়। তাই না বলেই চলে গেছে। কয়েকদিন পর নিজে থেকেই আবার ফিরে আসবে।’

‘অদ্ভুত পুলিশ দেখা যায়। না পেরে মনগড়া কিছু একটা বলে দিল আরকি। তা চারদিন আগের ঘটনা – আমাদেরকে আগে জানালি না কেন কিছু? কিছুটা তো কাজে আসলে আসতেও পারতাম আমরা।’

‘বলিনি আসলে বুঝতেই পারি নি যে তোদের বলা দরকার ছিল। আর তারপর এটাও ভাবছিলাম – তোদের বললে যদি আবার তোরা কোন ঝামেলায় পড়িস – এই জন্যই বলিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোদেরকে আগে জানালে হয়ত ভাল হত। কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারতি।’

‘পারতাম মানে, জান লাগিয়ে চেষ্টা করতাম। তবে আগে না জানিয়ে ভুল করেছিস ঠিকই, তারপরও এখন জানিয়ে খুব একটা দেরীও করিস নি। কাল দুপুরের ট্রেনেই রওনা দিচ্ছি, বিকালের মাঝেই তোর সাথে দেখা হচ্ছে। আর ভাবিস না বেশি – আপুকে খুঁজে বের করবই।’ শেষের কথাটা অর্ক বেশ জোর গলায়ই বলল, যাতে সাকিবের দুঃশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কেটে যায়।

জোর গলায় তো অর্ক বলল ঠিকই, কিন্তু সে নিজেও জানে – একটা নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুজে বের করা এত সোজা কাজ না।
অনেক সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের গিয়ে ঝানু গোয়েন্দারও হাস-ফাঁস করতে হয়। আর সে তো সেই তুলনায় জাস্ট একটা বাচ্চাই।

যাই হোক খুজে পাক আর নাই পাক, চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই। পুলিশ যে জায়গায় আগেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করে খুজে পায়নি – সেই জায়গায় তারা খুজলেই যে পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
তারপরও, চেষ্টা করে দেখা যাক কি হয়। ভাগ্য সহায় থাকলে হয়ত পেয়েও যেত পারে তারা।

রিয়াদকে ফোন দিয়ে সাকিবের বোনের গায়েব হওয়া সম্পর্কে সব বলল অর্ক। নিজেরাই একবার খঁহে দেখার চেষ্টা করবে সেই কথাও বলল।
তবে হতাশ হতে হল অর্ককে। সাকিবদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খোজার কাজটা আপাতত একারই করতে অর্কের। কারন, রিয়াদ তিন-চারদিনের জন্য বাবা-মায়ের সাথে শহরের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছে।
তবে, তিন-চারদিন পর থেকে অবশ্য পাওয়া যাবে রিয়াদকে।

৩.

বিকালে পৌছানোর কথা ছিল অর্কের, কিন্তু গ্রামে পৌছতে পৌছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল তার। দোষটা অবশ্য তার না, ট্রেনের লেট করানেই আসতে দেরী হয়েছে তার।
সাকিবকে স্টেশনেই দেখতে পেল অর্ক।
স্টেশন থেকে থেকে সাকিবদের বাড়িটা অবশ্য খুব দূরে না – তাই হেটেই চলল দুই বন্ধু মিলে।
এর আগেও সাকিবের সাথে এই গ্রামে কয়েকবার এসেছে অর্ক। তাই গ্রামের রাস্তাঘাট সম্পর্কে অর্কের মোটামুটি ভালই জানা আছে।

‘আচ্ছা ঘটনাটা শুরু থেকে খুলে বল তো?’ রাস্তা দিয়ে হেট যেতে যেতে সাকিবকে জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘ঘটনাটা আসলে কোথা থেকে শুরু তা আমি জানি না সঠিক। যেইটুক জানি বলছি। আম্মু আর আপু হুত করেই গ্রামে আসল। আর তারা আসার পরদিন সকাল বেলা ফোন পেলাম যে আপুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তড়িঘড়ি করে ছুটলাম। এসে পুলিশের কাছে আপুর গায়েব হওয়াটা নিয়ে রিপোর্ট করলাম। যদিও গ্রামের অধিকাংশই মানা করেছিল পুলিশে জানাতে, কারন একেতো পুলিশে কারো তেমন কোন ভরসা নেই আর আমাদের বাড়িতেও আগে কখনো পুলিশের পা পড়ে নি। এখন পুলিশ আমাদের আমাদের বাড়িতে আসলে আমাদের জন্য তা নাকি খারাপ হবে – এমনটাই বলাবলি করছিল ওরা। যাই হোক, তাদের কথার পাত্তা না দিয়ে পুলিশকে জানালাম। আর তার পরের খবর তো জানিসই – পাঁচদিন হয়ে গেল এখনো আপুকে খুজে বের করতে পারেনি ওরা। আর না পেয়ে এখন উলটাপালটা কথা বলা শুরু করেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর, পুলিশ যা বলছে আপু কিন্তু মোটেও এরকম না। তুই তো চিনিসই আপুকে।’ একদমে বলে গেল সাকিব।

সোহা আপু মানে সাকিবের বোন কেমন তা ভাল করেই জানে অর্ক। পুলিশ যা বলছে তার সাথে সোহা আপুকে কোন ভাবেই মিলানো যায় না।

‘তা জানি। কিন্তু হুট করে গ্রামে আসল মানে – এটা ঠিক বুঝলাম না।’ উত্তরটা দিল অর্ক, সেটার সাথে একটা প্রশ্নও জুড়ে দিল সাকিবের উদ্দেশ্যে।

‘তুই তো জানিসই, আমাদের গ্রামে আসে মানে আগে থেকেই গ্রামে আসার একটা বিশাল প্রস্তুতি নেওয়া। আমাদের আয়োজন দেখে আশেপাশের প্রতিবেশীরা বুঝতে পারত যে, আমরা গ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর এইবার প্রতিবেশীরা তো দূরে থাক, আমি নিজেও আম্মু আর আপুর ব্যাগ নিয়ে বের হবার আগ পর্যন্ত জানতাম না। বেশ অবাক লাগছিল ব্যাপারটা আমার তখনই।’

‘হুমমম! বেশ অবাক হওয়ার মতই ঘটনা। আপু যেদিন নিখোঁজ হল – ঐদিনই আমাদেরকে ব্যাপারটা জানালি না কেন?’

‘আসলে সকালে ফোনে আপুর নিখোঁজ হওয়ার কথাটা শোনার পর আর কিছু ভাবার তেমন মানসিকতা ছিল না। তাড়াতাড়ি করে এলাম এখানে, তাই তোদ্র কিছু জানাতেও পারিনি। আর তোরা যখন ফোন দিচ্ছিলি, তখন আসলে পুলিশের কথায় আর আপুকে খুজে না পাওয়ায় এতই আপেস্ট ছিলাম যে, কারো সাথে কথা বলতেই ইচ্ছে করছিল না। তাই ফোন অফ ক্অরে রেখেছিলাম। এখন তো আসলিই, চেহশটা করে দেখ আপুকে খূজে বের করতে পারিস কিনা।’

‘ভাবিস না, সাধ্যমত…………’ কথা শেষ করতে পারল না অর্ক। সাকিবদের বাড়ির কাছাকাছি সে কোলাহলের শব্দ শুনে থেমে গেল।

সাকিব আর অর্ক দুজনেই দৌড়ে পৌছাল বাড়িতে।
সাকিবকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই দৌড়ে আসল গালে আধা-পাকা দাড়িওয়ালা এক লোক। অর্কও চিনে এই লোকটাকে। সাকিবদের গ্রামের জমি-জমার দেখাশুনা করে এই লোক। সাকিবদের বাড়িতেই থাক।
লোকটাকে তারা রমিজ চাচা নামেই ডাকে।

‘আবার চুর আইছিলো। এইবারেও নিবার পারে নাই কিছুই। তুমার বইনের ঘরেই আবার ঢুকতে চাইছিল। ঢুকার আগেই মর্জিনা দেইখা ফালাইছিল – চিল্লায়া আমগরে ডাক দিল। আমরা আইতেই চুর দৌড়ায়া গেছেগা।’ সাকিবকে এই জটলা বাধার কারনটা ব্যাখ্যা করে দিল রমিজচাচা।

‘আবারো???’ বিস্ময়ের সাথে বলল সাকিব।
‘গত চার-পাঁচদিনে এই নিয়ে বেশকয়েকবার এসেছে চোরটা। প্রত্যেকবারই সোহা আপুর রুমে ঢোকার চেষ্টা করছে। কি আছে এমন ঐ রুমটায় যে ঐটার জন্য সবসময় চোরর ঐ রুমই টার্গেট করা লাগে?’ প্রশ্নটা কাকে করল জানে না সাকিব। নিজেকেই করল মনে হয়।

‘চার-পাঁচদিন যাবৎ চোর আসা শুরু করেছে!’ ‘চার-পাঁচদিন যাবৎ সোহা আপু গায়েব!’ ‘চোর সবসসময়ই সোহা আপুর রুমে ঢোকার চেষ্টা করে!’ অর্কের কাছে মনে হচ্ছে – ঘটনাগুলো একটার সাথ আরেকটা সংযুক্ত।

‘আচ্ছা চোর আসলে ঠিক কবে থেকে আসা শুরু করেছে?’ জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘আপু যেদিন থেকে গায়েব হল, সেদিন রাত থেকেই।’ জবাব দিল সাকিব।

‘তার আগে কি আসে নি আর?’ আবার জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘না এর আগে শেষবার চুর আইছিল পরায় ছয়-সাত মাস আগে।’ অর্কের প্রশ্নের জবাব দিল এইবার রমিজ চাচা।

‘শিওরতো এই ছয়মাসে আর চোর আসেনি?’

‘হ শিওর! ঐদিন চুর ধইরা পুলিশে দিছিলাম আর এর পরেত্তে সবসময় কুত্তা দুইডা রাইতে ছাইড়া রাখা অয়। কেউ আইলেই ঘেউ ঘেউ কইরা দুনিয়া আওলায়া দেওয়ার ট্রেইনিং দেওয়া আছে ঐডির। কোনদিন এইরাম ঘেউ ঘেউ করে নাই কুত্তাডি।’

‘আচ্ছা মানলাম, কুকুর ঘেউ ঘেউ করে নি আগে কখনো – তাই চোর আসেনি বলছেন। তাহলে এই তিন-চারদিন যাবৎ যে চোর আসা শুরু করেছে এই কয়দিন কি কুকুর ঘেউ ঘেউ করেছিল?’ রমিজ চাচার কুকুরের ঘেউ ঘেউ এর সাথে চোর আসার থিউরি শুনে বিরক্ত হয়ে কথাটা বলল অর্ক।

‘হ ঘেউ ঘেউ করছিল।’ কুকুরগুলোর দিকে তাকিয়ে বেশ গর্বের সহিত বলল রমিজ চাচা।

অর্কের সাথে রমিজ চাচার কথা বলার কোন মানেই বুঝতে পারছে না সাকিব।
দুইজন হঠাৎ করে কেন কুকুরের ঘেউ ঘেউ নিয়ে বিশ্লষন করল, তা নিয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে অর্ককে বলল, ‘তুই আসার পর থেকে কুকুর পড়লি কেন?’

অর্ক আসলে কুকুর নিয়ে পড়েনি, সে জানতে চেয়েছিল চোর কি শুধু চার-পাঁচদিন আগেই আসা শুরু করেছিল – নাকি নিয়মিতই চোর আসে সেইটা।
কিন্তু ভারিক্কির স্টাইলে গোয়েন্দাদের মত কথা বলতে গিয়ে – খেই হারিয়েফেলেছিল আর কথাবার্তা চলে গিয়েছিল কুকুরের ঘেউ ঘেউ এর দিকে।

‘বাদ দে।’ সাকিবের থেকে ছুটে আসা প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল। ‘চোর কেন বারবার সোহা আপুর রুমেই আসে জানতে চাইলি না?’

‘হ্যা। কোন কারন বলতে পারবি আসার?’

‘কারনতো জানিনা। তবে কারনটা জানা যাবে আজরাতেই।’ রহস্যময় কন্ঠে বলল অর্ক। ‘তবে তার জন্য একটা কাজ করতে হবে।’ রমিজ চাচার দিকে তাকিয়ে বলল এটা।

‘কি কাজ?’ আগ্রহভর নয়নে তাকিয়ে জানতে চাইল রমিজ চাচা।

‘কুকুরগুলোর ঘেউ ঘেউ বন্ধ রাখতে হবে রাতে।’ হেসে রমিজ চাচাকে কাজটা কি জানিয়ে দিল অর্ক।

৪.

‘তুই শিওর তো এতে কাজ হবে?’ খাটের তলা থেকে অর্ককে জিজ্ঞেস করল সাকিব। অর্ক নিজেও খাটের তলায়ই।

‘কাজ হবে কিনা – তা সঠিক বলতে পারব না। তবে দেখতে চাই কি হয় আসলে।’
সাকিব ঠিক বুঝতে পারল না অর্ক কি বলেছে। তবে কথা আর না বাড়িয়ে চুপচাপ খাটের তলায় বসে রইল।

অর্ক আর সাকিব দুজনই এখন সোহা আপুর গ্রামের বাড়ির রুমের খাটের তলায়। অপেক্ষায় রয়েছে চোরের আসার জন্য।
চোরকে শুধু আটকানোর জন্য না, দেখতে চায় চোর এই রুম থেকে কি নেওয়ার জন্য এতবার হানা করেছে। তাতেই বুঝা যাবে, সোহা আপুর গায়েব হওয়ার সাথে চোর আসার কোন সম্পর্ক আছে কিনা!

চোর যাতে আসেই, তার জন্য সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছে অর্ক।
চোরের সবচেয়ে বড় বাধা কুকুর দুটো। সেই কুকুর দুটোকে আটকে রাখা হয়েছে খোয়াড়ে।
চোরের যাতে রুমের ভিতর ঢুকতে কোন অসুবিধা না হয়, সেই জন্য সোহা আপুর রুমের দরজাও খোলা রাখা হয়েছে।

কোন কারনে চোর যদি তাদের বাড়ির উপর নজর রেখে থাকে – তাহলে তো বুঝে যাবে যে, দুইজন মানুষ ঘরের ভিতর তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তাহলে চোর আর ঐদিন ঐ ঘরমুখো হবে না।
এমনটা যাতে না ভাবে, সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছে অর্ক।
চোর যদি নজর রেখে থাকে, তাহলে দেখতে পাবে - অনেকগুলো লোক ঘরের ভিতর ঢুকেছিল আর কিছুক্ষন পর আবার সবাই বেরিয়ে গেছে।
আদতে, সবাই বের হয়ে যায় নি – লোকগুলোর মধ্য থেকে সাকিব আর অর্ক রয়ে যায় রুমে। কিন্তু বাইরে থেকে কেউ নজর রেখে থাকলে মনে করবে সবাই বেরিয়ে গেছে।

চোর যাতে আসেই, সেই ফাঁদ পাতা শেষ – এখন শুধু চোরের আগমনে অপেক্ষা।

বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না। খাটের তলা থেকে দরজার কপাট নড়ার কড়কড় শব্দটা শুনতে পেল তারা। এরপর টর্চের আলো দেখতে পেল। যে ই রুমে ঢুকেছে সে টর্চ দিয়ে রুমের চারপাশটা দেখ নিচ্ছে।
রুমে ঢুকা লোকটা বাড়ির কেউ হলে এভাবে টর্চ দিয়ে রুম দেখত না -=রুমে থাকা লাইটটাই জ্বালিয়ে নিত। তারমানে রুমে এখন তাদের বাড়ির কেউ না, তাদের কাঙ্খিত চোরই এসে উপস্থিত হয়েছে – এটা বুঝতে কোন অসুবিধা হল না ওদের।

চোর রুমে ঢুকে প্রথমেই সোহা আপুর ব্যাগটা নিয়ে টেবিলে রাখল। খুলে দেখতে যাবে এমনসময়ই ঘটে গেল কতগুলো অদ্ভুত ঘটনা।
হঠাৎ করেই লেগে গেল রুমের দরজাটা, বাইরে থেকে কেউ তালা দিয়েছে স্পষ্ট শুনতে পেল – আর সাথে সাথেই খাটের তলা থেকে বেরিয়ে আসল দুই কিশোর।
ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বেচারা চোর!

বাইরে থেকে আসলে দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে রমিজ চাচা। অর্কেরই প্ল্যান ছিল এটা। চোরকে একা ঘরে আটকানোর জন্য।
চোরের হাতে টর্চ থাকায় সে তাদেরকে দেখছে ভাল ভাবেই কিন্তু, তারা দেখতে পাচ্ছে না চোরটাকে।

‘সাকিব! লাইটটা জ্বলা। চোরের চেহারাটা ভাল করে দেখি একবার।’

সাকিব তাড়াহুড়ো করে লাইটা জ্বালাতে গিয়ে কিছু একটায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল।
শব্দ শুনে অর্ক বলল, ‘তাড়াহুড়োর কিছু নেই। চোর ঘরে বন্দিই আছে – আস্তে ধীরে যা তুই।’

তারপরও যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি গিয়ে লাইটটা জ্বালাল সাকিব। কিন্তু একি চোর কই? রুমে তো শুধু অর্কই।
বিছানার ঠিক পাশের জানালার গ্রিলটা পড়ে আছে বিছানায়। ব্যাগটাও নেই।

‘সাকিব দৌড় লাগা। ব্যাটাকে আজকে ধরতেই হবে।’ বলে অর্ক নিজেও থেমে থাকল না।
ভাঙা জানালাটা দিয়েই রুম থেকে বের হয়ে দৌড় লাগাল অর্ক। অর্কের দেখাদেখি সাকিবও দৌড় লাগাল।

চোরটা তাদের থেকে বেশ কিছুটা দূরেই রয়েছে। দৌড়ে অর্ক খুব একটা ভাল না, তাই চোর আর তার মাঝে দূরত্বটা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু সাকিব অর্কের থেকে ভাল দৌড়ায় – তাই অর্কের পরে দৌড় শুরু করেও সাকিব অর্ককে পিছনে ফেলে দিল কিছু সময়ের মধ্যেই।
সাকিব আর চোরের মাঝের দূরত্বটাও এখন আর খুব বেশি না। আরেকটু দ্রুত দৌড়ালেই সাকিব চোরটাকে ধরে ফেলতে পারবে।

দৌড়াতে দৌড়াতে একটা সময় সাকিব চোরের একদ্ম কাছাকাছি পৌছে গেল। কাছে গিয়ে প্রথমেই চোরের হাতে থাকা সোহা আপুর ব্যাগটা খপ করে ধরে ফেলল।
চোরটাকেও প্রায় ধরেই ফেলেছিল কিন্তু ঝাড়া দিয়ে সাকিবকে ফেলে আবারো দৌড় লাগায় চোরটা।

পেছনে থাকা অর্ক সবই দেখছে। প্রানপনে চেষ্টা করছে দৌড়ে ওদের কাছাকাছি যাওয়ার।

সাকিবকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে দেওয়ায়, সাকিব আর চোরের মধ্যকার দূরত্বটা আবার বেড়ে গেলে। সাকিব যতক্ষনে উঠে আবার দৌড় শুরু করল, চোরটা ততক্ষনে বাঁক নিয়ে অন্যপথে চলে গেছে।
আর অর্ক যখন বাঁক নিয়ে পথটায় গেল, তখন দেখে যে সাকিব ব্যাগটা নিয়ে পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। চোরটা হাওয়া।

‘ধরতে পারলিই না আর?’ হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘না! বাঁকটা নিয়ে এই পথে এসে আর খুজেই পেলাম না ব্যাটাকে। একদম হাওয়া হয়ে গেছে।’ তিক্তকন্ঠে বলল সাকিব।

‘হাওয়া হল কই?’ এইবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘আমি কি করে বলব? চারিদিকে তো শুধু ধানক্ষেতই। কোন জায়গাও তো নেই লুকানোর। নাকি ধানের চারার গোড়ায় ঘাপটি মেরে আছে – কে জানে? খুজে দেখব?’

‘না থাক বাদ দে।’ চোরের দিকে আর এখন আগ্রহ নেই অর্কের। সাকিবের হাতের ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চোর ধরা না গেলেও আসল জিনিসটা তো ঠিকই আমাদের দখলে চলে এসেছে। চোরের যদি টার্গেট এই ব্যাগটাই হয় – তাহলে সে এটা নেওয়ার জন্য আবার আসবে। কিন্তু এর আগে আমাদের ব্যাগটা চেক করে দেখতে হবে।’

৫.

বাড়ি ফিরে এসেছে সাকিব আর অর্ক। রমিজচাচাকে দিয়ে সোহা আপুর রুমের তালা খুলাল।
একটু আগে যা যা ঘটেছে, রমিজ চাচাকে সব খুলে বলল। সবশোনার পর অবাক হয়ে অর্কের দিকে তাকিয়ে রইল রমিজ চাচা। মনে মনে বলছে, ‘পোলার তো দেখি ম্যালা বুদ্ধি। এমন টেকনিক করল চোর পরায় হাতের ভিত্রেই আয়া পড়ছিল। নাহ, এই পোলায় চেষ্টা করলে সোহা আম্মারে খুইজ্জা বাইর করতে পারব।’

‘চাচা! কুকুরগুলোকে এখন ছেড়ে দেন। পাহাড়া দিক। এখন আর চোরের আশা করে লাভ নেই। আজকে আর ব্যাটা আসবেনা এই পথে।’ রমিজ চাচাকে কথাগুলো বলে সাকিবকে নিয়ে সোহা আপুর রুমের দিকে পা বাড়াল অর্ক।

রমিজ চাচাও অর্কের নির্দেশমত কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিয়ে ঘুমোতে চলে গেল। আর মনে মনে তো অর্কের প্রশংসা করছেই।

রুমে এসে বিছানার উপর রেখে ব্যাগটা খুলল অর্ক। ব্যাগের ভিতরে থাকা সব কিছুই বাইরে বের করে ফেলেছে। ব্যাগ থেকে পেল – কিছু কাপড়-চোপড় আর টুথব্রাশ টুথপেস্ট।
এমন আকর্ষনীয় কিছু পেলনা – যেটার চোর এতটা উদগ্রীব।

অর্ক ভেবেছিল ব্যাগ থেকে চমকে দেওয়ার মত কিছু একটা পাবে। প্রায় বিশ্বাসই ছিল বলা যায়।
কিন্তু কিছুই না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘুষি মারল ব্যাগের উপর।

আশ্চর্যজনক ঘটনাটা ঘটল তখনই। ঠুস করে কিছু একটা ফাটার শব্দ এল ব্যাগের ভিতর থেকে। শব্দটা শুনে অবাক হয়েছে দুজনই।
তারা দুজনে মিলেই তো একটু আগে চেক করেছিল পুরো ব্যাগটা – কিছুই ছিল না ব্যাগে। যা ছিল সবই বের করে ফেলেছিল।
তাহলে ফাটলটা কি?

কিছু একটা পেতে যাচ্ছে – এই উদ্যোম নিয়ে আবার খোঁজা শুরু করল ওরা। এইবার আরো খুটিয়ে খুটিয়ে খুজছে।
খুঁজে পেল অবশেষে। ব্যাগের বড় পার্টটার ভিতরে একদম নিচের দিকে একটা জিপার রয়েছে। ছোট একটা গুপ্ত পকেটের মত। ভাল করে না খুজলে আর আগে থেকে জানা না থাকলে কারো পক্ষে খুজে পাওয়া সম্ভব না এই পকেটটা।

জিপারটা খুলে পকেটে হাত ঢুকাল অর্ক। ছড়িয়ে থাকা গুড়োর মত কিছু হাতে লাগল। হাত আরেকটু ভিতরে ঢুকাতেই স্পর্শ পেল দুইটা প্যাকেটের। বের করে আনল ঐগুলো।
তার হাতে সাদা সাদা গুড়ো লেগে রয়েছে আর সাথে আছে সাদা সাদা গুড়ো ভরা আরো দুইটা প্যাকেট। এই প্যাকেটগুলোরই একটা ফেটেছিল তার ঘুষিতে আর হাতে ঐগুলোই লেগে রয়েছে।

‘এইগুলো কি?’ প্যাকেট গুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সাকিব।

উত্তর দিল না অর্ক। আসলে সে নিজেই জানেনা এগুলো কি। দেখতে অনেকটা আটার মতই মনে হচ্ছে প্যাকেটের গুড়ো গুলোকে।

‘কি জানি! দেখে তো আটা আটাই লাগছে।’ অনেকক্ষন পরে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে উত্তর দিল অর্ক।

‘আটা!!!’ শুনে বিস্মিত হল সাকিব। ‘আপু আটা দিয়ে কি করবে? আর আটা ব্যাগের গোপন পকেটেই বা রাখবে কেন?’

‘বুঝতে পারছি না।’ মাথা নাড়ল অর্ক।
হাতে লেগে থাকা আটার মত সাদা গুড়োগুলো মুখে নিয়ে জিভে লাগাল। উহুমম – স্বাদ মোটেই আটার মত না। আসলে কোন স্বাদই নেই এইটার। একদম বিদঘুটে। এইটার স্বাদ যে আসলে কিসের মত কিছুই বুঝে উঠতে পারল না অর্ক।
‘এইটা যে কি কিছুই বুঝতে পারছি না – স্বাদটাও বিদঘুটে। ব্যাগের গোপন পকেটে যেহেতু রেখেছে – তার মানে অবশ্যই এটা অন্য কিছু। কিন্তু আটা না।’ বলল অর্ক।

‘অন্য কিছু মানে?’

‘শিওর না আমি। তবে মনে হচ্ছে এটা ড্রাগস জাতীয় কিছু। হিরোইন বা কোকেন হতে পারে।’

এটা শুনে অর্কের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সাকিব। ড্রাগস! তাও আবার সোহা আপুর ব্যাগে! মানতেই পারছে না।
‘কি বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তো তোর?’

‘আমি তো বললামই আমি নিশ্চিত না – তবে এমন কিছুই হতে পারে। সাধারন কোনকিছু হলে তো আর ব্যাগের গোপন পকেটে লুকিয়ে রাখত না।’ সাকিব যাতে তার কথায় ভুল না বুঝে তাই ভেঙে বলল অর্ক। ‘আর……’ বলতে গিয়ে থেমে গেল সে।

‘আর কি?’ অর্ককে থামতে দেখে জিজ্ঞেস করল সাকিব।

সাকিবের প্রশ্ন যেন শুনতেই পায়নি অর্ক। তার নজর এখন গ্রিল ভাঙা জানালাটার দিকে।

‘কিরে জানালার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?’ অর্ককে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল সাকিব।

‘নাহ। ভাবছি, চোর জানালার গ্রিল খুলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। কিন্তু এইটা মিলাতে পারছি না চোরটা এত তাড়াতাড়ি গ্রিল খুলল কিভাবে?’

‘এত তাড়াতাড়ি মানে?’

‘তুই যখন লাইট জ্বালাতে গেলি – তখন একবার পড়ে গিয়েছিলি। তাই তোর লাইট জ্বালাতে দেরী হয়েছিল – কিন্তু এতটা না যে, চোর এর ফাকে অন্ধকারের মাঝে জানালার মজবুত গ্রিল খুলে ফেলতে পারবে।’


‘কি বলছিস কিছুই বুঝতে………’ বলতে গিয়ে থেমে গেল সাকিব। অর্ক কি বলতে চাচ্ছে বুঝে গেছে সে। ‘গ্রিলটা আগে থেকেই খোলা ছিল। পরে জাস্ট আলগা করে বসিয়ে রেখেছিল?’

‘সেরকমই কিছু মনে হচ্ছে। তারপরও আগে চেক করে দেখি।’ বলে অর্ক নিজেই এগিয়ে গেল চেক করতে।

চেক করে দেখল – গ্রিলের জানালার সাথে আটকে থাকার নাটগুলোর একটাও নেই। আগে থেকেই খোলা ছিল গ্রিলটা। খুলে পরে শুধু বসিয়ে রেখেছিল।
কিন্তু কে খুলেছে এটা? সোহা আপু নাকি চোরটা?

নাহ! চোরটার চান্স নেই আগে থেকে এসে গ্রিলটা খুলে রাখার। কারন, রমিজ চাচার মত লোক থাকার পরেও বাইরে থেকে কারো এসে গ্রিল খোলার সাধ্যিও নেই। আর তারউপর গ্রিলটা খোলা বেশ সময় সাধ্য ব্যাপার।

বাকী থাকল সোহা আপু।
হ্যা! একমাত্র সোহা আপুর কাছেই পর্যাপ্ত সময় ছিল গ্রিলটা খোলার।
কিন্তু আপু খুললেই কেন খুলেছে?

উত্তরটা জানা নেই দুজনের কারোরই


(পরের পর্বে সামপ্য)
পরের পর্ব - Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.