নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিখোঁজ (কিশোর থ্রিলার) - পর্ব ২

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৬

১ম পর্ব - Click This Link

৬.

ঘুমুতে ঘুমুতে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল ওদের। আবার অনেক সকাল সকাল উঠতে হল – আসলে উঠতেই হল। রাতে চোরটা হুট করে কিভাবে হয়েছিল – এইটা জানার কৌতুহলে ঘুমিয়ে থাকতে পারে নি।

রাতে চোরটা যে জায়গায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল সেই জায়গাটায় গেল অর্ক আর সাকিব। ক্ষেতের ধারে ধারে দাঁড়িয়ে তেমন একটা বুঝতে পারল না, তাই নেমে পড়ল ধানক্ষেতটায়।
আইল বরাবর হাটছে আর এমন কিছু খুজছে – যাতে চকিতেই বুঝা যায় চোরটার মূহুর্তেই গায়েব হওয়ার রহস্য।
হাটতে হাটতে তারা এসে দাড়াল একটা ঝোপের কাছাকাছি। ধানক্ষেতের ঠিক পাশেই এতবড় একটা ঝোপ কেন – তা মোটেই বোধগম্য হল না তাদের। ঝোপটার একটা পাশে নিচ দিয়ে একটা ফাকা জায়গা দেখতে পেল। ফাকাটা দিয়ে একটা মানুষ সহজেই হামাগুড়ি দিয়ে আসতে বা যেতে পারবে।
তবে ফাকাটা ঠিক আইল বরাবর না। ঐ ফাকাটা দিয়ে যেতে হলে ধানক্ষেতে নামা লাগবেই। আর সাথে হাত পায়ে কিছু কাদামাটি তো বিনামূল্যে লাগবেই।

কিন্তু ফাকাটা কিসের জন্য? আর এই ফাকাটা নিয়েই বা যায় কোথায়? মনে কৌতুহল জড় হল ওদের। শরীরে কাদামাটি লাগার ভয় না করে ঢুকে পড়ল ফাকাটা দিয়ে। আসলে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারে নি ওদের।
ঝোপের ফাকার এপাশটা দিয়ে ঢুকে কিছুটা হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসল ঝোপের অন্যপাশে। বেরিয়ে এসে বেশ অবাক হল।
ঝোপের ঐ ফাকাটা তাদের নিয়ে গেল মেইন রোডে। যে রোডটা দিয়েই আগের রাতে তারা ধাওয়া করেছিল চোরটাকে। ঝোপের ফাকাটা একটা শর্টকাট।
মেইন রোড দিয়ে সরাসরি ওরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে – সেখানে বেশ খানিকটা সময় লাগে। কিন্তু ঝোপের ঐ ফাকাটা ব্যবহার করলে সময়টা অনেক কম লাগে। গ্রামের কৃষকেরা তাদের সুবিধার জন্য এটা করে নিয়েছে। তারা এটা ব্যবহার করে জমিতে ফসল বোপনের সময়। এছাড়া বাকি সময় এটা অকেজোই থাকে।

কিন্তু যে ঝোপের ফাকাটা খুজতে ওদেরই দিনের আলোতে এত সময় লেগে গেল – আর সেইটা রাতের অন্ধকারে চোর কিভাবে এত তাড়াতাড়ি খুজে পেল? চোরটা কি তাহলে গ্রামেরই?
ভাবনাটা পরে নিজেই উড়িয়ে দিল অর্ক। চোরটা গ্রামের কেউ হলে – ছয়দিন যাবৎ শুধু মাত্র এক ব্যাগের পিছনেই সময় নষ্ট করত না। বাড়িতে আরো অনেক কিছুই নেওয়ার মত – নিলে সেগুলোই আগে নিত।

গ্রামের কেউ চোর হিসেবে যাচ্ছে না, তাহলে ধরেই নিতে হয় চোরটা বাইরের কেউ।
কিন্তু বাইরের একটা লোক রাতের অন্ধকারে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে শর্টকাটটা খুজে পেল?
লোকটা কি তাহলে আগেও এই রাস্তা ব্যবহার করেছে?
আর ব্যবহার করে থাকলে কখন করেছে?
সোহা আপুর গায়েব হওয়ার সময় না তো আবার?

এই প্রশ্ন উত্তর জানা অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে ওদের জন্য।

*

বাড়িতে ফিরে আসল তারা।
অর্কের মনে এখন অনেক গুলো প্রশ্নের উদয় হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নগুলোর কোন যুক্তিসঙ্গত উত্তর খুজে পাচ্ছে না। সাকিবের রুমে বসে চুপচাপ ভাবছিল – প্রশ্ন গুলোর আসলে কি উত্তর হতে পারে।

এই মূহুর্তে কেউ অর্ককে দেখে মনে করবে যে – সে আসলেই কোন গোয়েন্দা।
অবশ্য গোয়েন্দাই তো বলা যায় তাকে। সোহা আপুকে খুজতে গিয়ে খুটিনাটি অনেক কিছুই বের করে ফেলেছে সে – যে জায়গায় পুলিশের কাজ হওয়া স্বত্তেও পুলিশ তা পারে নি।
তবে একটা জায়গায় পুলিশের সাথে অর্কের মিলও পাওয়া যায়। পুলিশের মত সেও এখনও খুজে বের করতে পারেনি সোহা আপুকে।

তার মনে জেগে উঠা প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবছিল অর্ক। কিন্তু তার ভাবনায় ছেদ পড়ল সাকিবের মায়ের ডাকে। ভদ্রমহিলা এসে অর্ক কেমন আছে জানতে চাইলেন, সাধারন কুশলাদি বিনিময় করলেন। অর্কও ভদ্রমহিলার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিল।
অর্কের এখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। সে এখানে এসেছে গত সন্ধ্যায় কিন্তু এখন পর্যন্ত সাকিবের মায়ের সাথে সে নিজে থেকে দেখা করেনি। রাগটা আরো বেড়ে গেল – যখন সাকিবের মা নিজে থেকে এসেছেন তার সাথে কথা বলার জন্য।
সাকিবের মা অবশ্য এতে কিছু মনে করেন নি – কারন রমিজ চাচার সুবাদে উনি ভাল করেই জানেন যে, অর্ক আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত দম ফেলার ফুসরতটাও পায় নি। আর উনি নিজেও আগে আসতে পারেন নি – মেয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকার কারনে। রমিজচাচার কাছে উনার মেয়েকে খোজার জন্য অর্কের আপ্রান চেষ্টার কথা শুনে, এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছেন।

সাধারন হালকা কথাই বলছিল অর্ক সাকিবের মায়ের সাথে। কথা প্রসঙ্গে সোহা আপুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথাটা উঠে আসে।

‘আন্টি আপনারা গ্রামে আসলে তো মোটামুটি আমরা সবাই আগে থেকেই জানতে পারতাম, কিন্তু এইবার কিছুই জানতে পারলাম না যে?’ কথাটা বলার পর অর্কের মনে হল, উনিহয়ত তার কথাটাকে অন্যভাবে নিতে পারেন – তাই সাথে সাথেই বলল, ‘না মানে – সাকিব বলছিল সেও নাকি জানতা না ব্যাপারটা।’

‘আসলে বাবা আমি নিজেও জানতাম না যে গ্রামে আসা লাগবে। সোহা হঠাৎ করেই বলল, গ্রামে আসবে। প্রায় জোরই করল আমাকে আসার জন্য – আর আমারও অনেকদিন ধরেই গ্রামে আসার ইচ্ছে করছিল। তবে হুট করে না – সোহার জোরাজুরিতেই হুট করে আসা লাগল। আর মেয়েটাও জানি কয়েকদিন ধরে কেমন কেমন আচরন করছিল।’ বেশ দুঃখের সাথে শেষ কথাটা বললেন তিনি।

‘কেমন কেমন আচরন করছিল?’ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে অর্ক। রহস্যের উত্তেজনায় একটু বেপড়োয়া ভাবেই জিজ্ঞেস করে বসল সে। তার খেয়ালই নেই যে সে কার সাথে কথা বলছে।

ভদ্রমহিলাওবশ্য অর্কের কথা বলার ধরনের দিকে খেয়াল করলেন না, তিনি বলেই যেতে লাগলেন, ’সোহা তো ভার্সিটির পাঠ শেষ করল মাস দুয়েক হল – তা তো বোধ হয় সাকিব বলেছেইতোমাদেরকে। এরপর মাসখানেক বেশ ভালই ছিল। বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করত। মাসখানেক আগে বলল – বান্ধবীদের নিয়ে কক্সবাজার থেকে বেড়িয়ে আসবে। আমাকে বলার পর আর আমি মানা করিনি। অনেকদিন ধরে ঘরেই ছিল আর এই সময়ে এমন কোন জরুরী কাজ নেই যে বেড়াতে গেলে কোন ক্ষতি হয়ে যাবে। এক সপ্তাহের কথা বলে গেল।
একসপ্তাহ পেরিয়ে গেল, সোহা ফেরেনি তখনও। ফিরেনি দেখে তার বান্ধবীদের ফোন করলাম। তারা জানাল যে, তারা কেউই কক্সবাজার যায়নি – এমনকি তারা জানতও না যে, সোহা কক্সবাজার গেছে। সোহা আসল আরো প্রায় তিনদিন পর। দেরী হল কেন আসতে, জিজ্ঞেস করায় বলল – বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে সময় বেশী লেগে গেছে, তাই আসতে পারেনি আগে। একটু আজব লেগেছিল তখন ব্যাপারটা, তারপরও কিছু বলিনি। হতে পারে অন্য কোন বন্ধুদের সাথে গিয়েছিল হয়ত – তাই এতটা ভাবিনি এইটা নিয়ে।
অদ্ভুত আচরনটা শুরু ওখান থেকেই। ঐ বেড়িয়ে আসার পর থেকে গ্রামে আসার আগ পর্যন্ত আর বেরিয়েছিল মাত্র একদিন – সেটাও আবার গ্রামে আসার আগের দিন। বাইরে থেকে এসেই হুট করে জানাল যে গ্রামে আসতে হবে। আর এরপর তো জানোই – এখন সে ই নিখোঁজ হয়ে গেছে।’ একটানা বলে গেলেন তিনি। শেষ কথাটা বলার সময় একটু আবেগিতও হয়ে গেলেন।

কথাগুলো শুনার পর অর্কের মনে হল – তার প্রশ্নগুলোর জবাব সে পেয়ে গেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি না, আরো কিছু জানার বাকি আছে।
‘জি আন্টি! তা তো জানিই। আচ্ছা আন্টি, আপুর গ্রামে আসার পর থেকে নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত কি কি করেছে বলতে পারবেন?’

‘আমরা তো আসলাম প্রায় দুপুরের দিকে। গ্রামে আসার আগ পর্যন্ত সোহা কেমন জানি কটা ভয়ে ভয়ে ছিল, এখানে আসার পর এমন ভয়ে ভয়ে থাকতে দেখিনি। আর সারাদিন তো মর্জিনার সাথেই কাটাল।’ বলেই সাথে সাথে ডাকলেন তিনি।।
মর্জিনা আসার পর জিজ্ঞেস করলেন, ঐদিন সোহা আপু তার সাথে থাকা অবস্থায় কি কি করেছিল। আর অর্ক যা যা জিজ্ঞেস করে তার সঠিক জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে উনার রুমে চলে গেলেন।

‘হুমম! তো বল ঐদিনের ঘটনা।’ ভারিক্কি চালে পাক্কা গোয়েন্দাদের মত মর্জিনাকে জিজ্ঞেস করল অর্ক।

অর্কের জিজ্ঞেস করার ধরনে অবশ্য বেশ ঘাবড়ে গেছে মর্জিনা। সাকিবের মা তাকে আদেশ না দিয়ে গেলে হয়ত এতক্ষনে উঠে দৌড় লাগাত।
অর্ক শেষবার যখন গ্রামে এসেছিল তখন মর্জিনা ছিল না – তাই অর্ককে তেমন ভাল ভাবে চিনে না। আর অর্ক আসার পর থেকে যেভাবে গোয়েন্দাদের মত কাজ করে চলেছে – তা দেখে মর্জিনা তাকে গোয়েন্দাই ভেবে বসেছে।
আর একজন গোয়েন্দার সাথে সামনাসামনি বস কথা বলতে গিয়ে ভয়ে তার আত্না প্রায় উড়েই যাচ্ছে।

অর্ক বুঝতে পেরেছে মর্জিনার ভয় পাওয়ার কারনটা। ভিতরে ভিতরে সে বেশ মজাই পাচ্ছে – কেউ তাকে গোয়েন্দা ভাবছে দেখে।
মর্জিনাকে আরেকটু ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য এইবার আরো জোর গলায় বলার জন্য আদেশ করল।

এমনিতেই ভয়ে কথা বলতে পারছিল না মর্জিনা। তারউপর অর্ক জোর গলায় প্রশ্ন করায় মুখে একদম কুলুপ এঁটে দিল সে।
মহাবিপদে পড়ল অর্ক। সোহা আপুকে খুঁজে বের করার জন্য মর্জিনার কাছ থেকে কিছু কথা জানাটা খুব জরুরী। কিন্তু মর্জিনা তো ভয়ে কথাই বলছে না।
অর্ক বুঝতে পারল – মর্জিনাকে দিয়ে কথা বলানো যাবে না।

‘আপুকে নিয়ে গিয়ে ধানক্ষেতগুলো ঘুরে দেখেছিলে ঐদিন?’ মর্জিনাতো কথা বলবেই না, তাই অর্ক নিজ থেকেই আন্দাজ করে করে প্রশ্ন করছে – যাতে মাথা নাড়িয়ে বা দুলিয়ে হলেও জবাব দেয় সে।
অর্কের প্রশ্নের জবাবে হ্যা-সূচক ভাবে মাথা দোলাল মর্জিনা।

‘ক্ষেতের মধ্যে ঝোপের ভিতর দিয়ে যে রাস্তায় উঠার একটা শর্টকাট আছে ঐটার কথাও বলেছিলে?’
আবারও হ্যা-সূচক ভাবে মাথা দোলাল মর্জিনা।

আপাতত এইটুকুই জানার দরকার ছিল অর্কের। এখন আর মর্জিনাকে জিজ্ঞেস করার মত কিছু নেই। চলে যেতে বলবে – এমন সময়ই প্রশ্নটার উদয় হল তার মনে।

‘আচ্ছা ঐদিন আপুর সাথে তুমি কতক্ষন ছিলে?’ প্রশ্নটা করার পরই বুঝল, এইটার উত্তর সে পাবে না। কারন এইটাতো আর মাথা নাড়িয়ে বা দুলিয়ে উত্তর দেওয়ার মত প্রশ্ন না, মুখে বলতে হবে। আর মর্জিনাতো মুখে কুলুপই এঁটে দিয়েছে।

অর্কের সাথে এতক্ষনের কথায় ভয় পাওয়াটা অনেকটাই কমে গেছে মর্জিনার। আর মুখে কুলুপ এঁটে রইল না। অর্ককে অবাক করে দিয়ে বলে উঠল, ‘সইন্ধা হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার লগে আছিল। এরপরেত্তে আফা রুমের ভিত্রেই আছিল। রাইতের খাওনের আগে আর বাইর অয় নাই।’

শোনার পর শুধু মাথা দোলাল অর্ক। মর্জিনার কাছ থেকে আর কিছুই জানার নেই তার।

‘ভাইজান! আরেকটা কথা কওনের আছিল।’ নিজে থেকেই বলল মর্জিনা।

‘হ্যা বল।’

‘দুফুরে আফারে যহন গেরাম দেহাইতে নিয়া বাইরে গেলাম – তহন আফায় খুশি খুশিই আছিল। সইন্ধার দিকে যহন আবার বাড়িতে ফিরত আইতেছিলাম – তহন আফায় একটা লোকেরে দেইক্ষা লুহায়া গেছিল। এরপরে তাড়াতাড়ি বাড়িত আইয়া রুমে ঢুইক্কা দরজা লাগায়া দিছিল।’

‘লোক? কোন লোক? কেমন লোক?’ অর্কের মনে হচ্ছে মর্জিনার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ন একটা খবর জানতে পেরেছে।

‘কোন লোক জানিনা। আগে কুনুদিন গেরামে দেহি নাই। চিকনা লোক, চুল গুলা কাডার মত খাড়া করা, কানে একক্ষান দুলও লাগানি আছিল।’

‘ঐ লোকটাকে কি এরপরে আর দেখেছো গ্রামের কোথাও?’

‘না পরে আর দেহি নাই। আপ্নেরে ছাড়া আর কাওরে কই নাই এই কথাডা।’
বলার পর চলে গেল মর্জিনা।

অর্কের কাছে সব কিছুই ঘোলাটে লাগছে। অনেকগুলো জট বেধে রয়েছে।
জট গুলো ছুটাতে পারলেই কি খুজে বের করতে পারবে সোহা আপুকে? তা হয়ত সময় গড়ালেই বুঝা যাবে।

৭.

সোহা আপুর রুমে ওরা। অনেকগুলো জট পেঁকে গেছে – ওগুলো নিয়েই আলোচনা করছে।

‘তর কি ধারনা আপু এগুলো দিয়ে কি করে?’ সাদা গুড়ো ভর্তি প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে বলল সাকিব।

‘ধারনা আসলে কিছুই ক্লিয়ার না। একবার মেন হচ্ছে আপু ড্রাগ অ্যাডিক্টেড, আরেকবার……’ পুরোটা বলতে পারল না অর্ক। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাধা দিল সাকিব।

‘কি? আপু ড্রাগ অ্যাডিক্টেড? মোটেই না – আপুকে দেখে কখনো মনে হয় নি এমনটা।’ অর্কের বলা কথাটার প্রতিবাদ করে উঠল সাকিব।

‘আমি নিশ্চিতভাবে কিছু বলিনি। সম্ভাবনার কথা বলছি শুধু। আপু ড্রাগ অ্যাডিক্টেড আমারও কখনও এমনটা মনে হয় নি। অন্তত আপুর আচরন একজন মাদকাসক্তের মত লাগে নি। কিন্তু আপুর ব্যাগে এই ড্রাগসগুলো থাকার আর কোন কারন তো আর দেখতে পারছি না। এগুলো থাকার একমাত্র কারন হতে পারে হয়ত আপু ড্রাগ নেয় নয়ত ড্রাগ ব্যবসার সাথে জড়িত।’

‘ড্রাগ ব্যবসা আর আপু? এগুলো ভাবছিস কি করে তুই?’

‘ভাবার পিছনে অনেকগুলো কারন আছে। আন্টি বলল আপু কিছুদিন আগে বান্ধবীদের সাথে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল এক সপ্তাহের কথা বলে। কিন্তু আসল প্রায় দশদিন পর। আন্টি আপুর বান্ধবীদের খোঁজ নিয়ে দেখলেন, আপুর বান্ধবীদের কেউই কক্সবাজার যায় নি, এমনকি তারা জানতও না যে আপু কক্সবাজার গিয়েছে।’

‘তো এতে আপু ড্রাগ ব্যবসার সাথে জড়িত তা ভাবার কি আছে?’ অর্কের কথাগুলো এখনও বুঝতে পারছেনা সাকিব।

‘ভাল করে বুঝার চেষ্টা কর। আপু বলেছিল বান্ধবীদের সাথে বেড়াতে যাবে, কিন্তু উনার বান্ধবীদের কেউ জানতও না। ঐ বেড়ানোর কথাটা বলে কি আপু আসলেই কোথাও বেড়াতে গিয়েছিল কিনা তা কিন্তু আমরা নিশ্চিত না। এমনও তো হতে পার, আপু কোন গ্যাং-এর সাথে জড়িতে। গ্যাং-এর কোন কাজের জন্যই হয়ত ঐ সময়টায় বেড়ানোর কথা বলে ওদের সাথে যোগ দিয়েছিল।’

সাকিব এখন কিছু কিছু বুঝতে পারছে। অর্ক যা বলছে একদম অযৌক্তিক কিছু বলছে না। ‘কিন্তু আপুর বেড়ানোর মিথ্যা কথা কথা বলার কি দরকার ছিল?’

‘আপুর ভার্সিটির স্টাডি শেষ হয়ে গেছে প্রায় মাস-দুয়েক আগেই। তাই এরপর থেকে উনি বাসায়ই আছেন। ভার্সিটিতে থাকলে হয়ত মিথ্যে কথা বলা বা কারো অনুমতি নিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু উনি বাসায় আছেন। বাসা থেকে না বলে এতদিনের জন্য যাওয়াটা যুক্তিযুক্ত ছিল না। সেই জন্যই হয়ত উনার বেড়াতে যাওয়ার মিথ্যে কথাটা বলতে হয়েছে।’

অর্কের ব্যাখ্যা একদ্ম যুক্তিগত। সাকিবের এখন বিশ্বাসই করতে ইচ্ছে করছে যে, সোহা আপু মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
কিন্তু পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছেও না। সোহা আপু তার বলেই সে মানতে পারছে না।
সোহা আপু জায়গায় অন্য কেউ হলে, সাকিব পুরোপুরিই বিশ্বাস করে ফেলত। কিন্তু অর্কের এই যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যাগুলোকেও সে অবিশ্বাস করতে পারছে না।
‘কিন্তু এইবার যে গেল না বলেই?’ সোহা আপুর গ্রাম থেকে হুট করে নাই হয়ে যাওয়ার কথাটা বলল সাকিব।

‘আমার মনে হচ্ছে এইবার কোন কারনে আপুকে চলে যেতে হয়েছে খুব দ্রুততার সাথে। সেই জন্যেই কাউকে হয়ত এইবার কাউকে না বলেই যেতে হয়েছে।’

‘আপু যে নিজ ইচ্ছায়ই চলে গেছে, তাইবা এত নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলছিস?’

‘আমি তো আগেই বলেছি আমি নিশ্চিতভাবে কিছুই বলছি না – এতক্ষন পর্যন্ত যা যা জানতে পেরেছি, সেগুলো থেকেই জাস্ট আন্দাজ করছি।’

‘তা আর কি কি আন্দাজ করলি?’

‘আমার যেটা মনেহয় আপু গ্রামে এসেছিল আত্নগোপন করতে। আন্টি বলেছিল, ঐ বেড়িয়ে আসার পর থেকে গ্রামে আসার আগ পর্যন্ত আপু বাসা থেকে আর একবারের বেশি বাইরে যায় নি। আর যেদিন গিয়েছিল, সেইদিনই এসে আন্টিকে বলল গ্রামে যাওয়ার জন্য। তারমানে আপু ঐ দশদিন এমন কিছু করেছিলেন যার জন্য উনি বাসা থেকে বেড় হতেই ভয় পাচ্ছিলেন। তারপরও যাওবা একবার বের হয়ছিলেন – কোন কারনে উনার মনে হল, উনি আর বাসায় তেমন নিরাপদ না। তাই উনাকে গ্রামে চলে আসতে হল। এইখানে এসে প্রথমে মোটামুটি ঠিকই ছিল কিন্তু বিকালের দিকে কাউকে দেখে উনার মনে হল উনি গ্রামেও তেমন নিরাপদ না। তাই রাতের বেলা জানালার গ্রিল খুলে গায়েব হয়ে যান – যাতে উনি যে বিপদের আশংকাটা করছিলেন, তা যেন কেটে যায়।’

‘কিসের বিপদ? আর কাকেই বা দেখেছিল?’

‘বিপদটা সম্ভবত আপুর কাছে এমন কিছু আছে, তার জন্যই। আর লোকটা ঐ জিনিসটার পিছনেই আছে। মর্জিনা লোকটার যে বর্ণনা দিল তাতে মনে হচ্ছে কালকের চোরটাই সেই লোক। তুই চোরটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলি – মনে করার চেষ্টা করতো চোরটার কানে দুল দেখতে পেয়েছিলি কিনা?’

ভ্রু-কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করল সাকিব। ‘অন্ধকার ছিল তো ঠিকমত দেখতে পারিনি। ছিল কিনা এখন মনে আসছে না। ছিলই বোধহয়।’

‘শিউর হয়ে বলতে পারলে ভাল হত, তবে সমস্যা নেই তাতে। মর্জিনার বর্ননা অনুযায়ী লোকটা শুকনা, মাথায় খাড়া খাড়া চুল। অন্ধকারে চুল কেমন দেখতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু শুকনা যে তা বুঝা গেছে। আপু যে লোকটাকে সেই লোকটা এই চোরই।’

‘কিন্তু লোকটা খুজছে কি? কিইবা এমন লুকানো আছে আপুর কাছে?’

‘প্রশ্নটার জবাব একমাত্র আপুর কাছেই আছে। আপুকে খুজে বের করতে হবে আগে – তাহলেই বুঝা যাবে।’

‘কিন্তু আপুকে পাব কোথায়?’

‘আপু যদি নিজের ইচ্ছায় এখান থেকে গিয়ে থাকে – তাহলে খুব সম্ভবত তোদের বাসায়ই গেছে। তোদের বাসায় গেলেই পাওয়া যাবে আপুকে।’

‘বাসায়? তোর এইরকম মনে হল কেন?’ সোহা আপু বাসায়ই আছে, অর্কের এই ধরনের কথাটায় বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল সাকিব।

‘মনে হচ্ছে না, আমি শিউর। কারন বাসা থেকেই লুকানোর জন্য গ্রামে এসেছিল। কিন্তু এইখানে এসেও একই সমস্যা। যাদের থেকে লুকিয়ে থাকতে চেয়েছিল – তাদের থেকে লুকিয়ে থাকতে পারল না। তাদের নজরটা ছিল আপুর উপর। আপু তাদের চোখে ধুলো দিয়ে আবার গায়েব হল। যেহেতু ওদের মনযোগ পুরোপুরি আগের জায়গা থেকে সড়ে গিয়েছিল, তাই আপু এইটাকে কাজে লাগিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। আমার হিসাব যদি ভুল না হয় আর আপুর যদি পথে অন্যকোন বিপদ না হয়ে থাকে – তাহলে আপু এখন তোদের বাসাতেই আছে।’ অকাট্য ব্যাখ্যা দিল অর্ক।

‘তাহলে এখন আমাদের করনীয়টা কি? পুলিশের কাছে গিয়ে এসব বলব না কি বাসায় আপুর কাছে যাব? যদি বাসায় গিয়েও আপুকে না পাই?’ তাদের এখন করনীয়টা সম্পর্কে জানতে চাইল সাকিব।

‘পুলিশের কাছে গিয়ে এসব বললে তারা বিশ্বাস করবে না – পাত্তাই দিবে না আমাদের কথার। উলটো হিরোইনের প্যাকেট দেখে উলটা আপুরই বিপদ আরো বাড়াতে পারে। বাসায়ই যাব আমরা এখন। আপুকে না পেলে কি করব জানিনা – তবে এখনই নেগেটিভ কিছু ভাবতে চাচ্ছিনা। আগে গিয়ে দেখি।’ বলে তৈরি হওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল অর্ক। সাথে সাকিবও।

ঘড়ি দেখল অর্ক। দশটা বাজে।
এখন গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়ার কোন ট্রেন নেই। ট্রেন ছাড়বে আরো প্রায় দুই ঘন্টা পর। এখন যেতে হলে বাসে করে যেতে হবে। তাতে অবশ্য সময় কিছুটা বেশি লাগবে।
কিন্তু ট্রেনে করে যেতে চাইলেসময় আরো অনেক বেশি লাগবে। কারন ট্রেন ছাড়বেই আরো দুই ঘন্টা পর আর গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময় তো লাগবেই। তাতে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। এতটা দেরী করতে চাচ্ছে না অর্ক।

সোহা আপুর রুমে ছিল ওরা এতক্ষন। রুম থেকে বের হওয়ার সময় দরজার কাছে এসে থেমে গেল অর্ক। টেবিলের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ভ্রু-কুঁচকে গেল তার।
সাকিবের নজরে পড়ল ব্যাপারটা। ‘কিরে টেবিলের দিকে এইভাবে তাকায়া আছিস কেন?’

‘টেবিলের একটা ড্রয়ার আছে দেখ।’ কাঁপা-কাঁপা গলায় বলল অর্ক।

‘সব টেবিলেই তো ড্রয়ার থাকে। এতে এমন অবাক হওয়ার কি আছে?’ বেশ খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলল সাকিব।

‘বুঝিসনি? চোর এসে সবসময় সোহা আপুর রুমে ঢুকতে চাইত, যখন ঢুকতে পারল – তখন সোহা আপুর ব্যাগে কিছু একটা খুজতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের জন্য পারে নি, চোরকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। ব্যাগ জিনিসটা না পেলে চোর তো চলে যেত না, অন্য কোন জায়গায় খুজতই। আর খোজার জন্য এই রুমে আপাতত আরেকটা জায়গায়ই আছে। এই ড্রয়ারটা। আমাদের নজরটা শুধু চোর আর ব্যাগের উপরই ছিল। তাই আগে মনেই হয় নি ড্রয়ারে কিছু থাকতে পারে। ধুর! আরো আগেই ড্রয়ারটার কথা মনে হওয়া উচিত ছিল – তাহলে হয়ত আপুকে এতদিনে খুজে বের করে ফেলতে পারতাম।’

‘মানে ড্রয়ারেই আপুর লুকানো জিনিসটা আছে – যেটার জন্য চোর এসেছিল?’

‘মনে তো হচ্ছে তাই।’ বলে টেবিলে কাছে গিয়ে ড্রয়ারটা খুলে বের আনল অর্ক।
হতাশ হতে হল। ড্রয়ারটায় এমন বিশেষ কিছু নেই। একটা দোমড়ানো কাগজ আর অসংখ্য ময়লা ছিল। অর্ক ভেবেছিল ড্রয়ারে হয়ত মূল্যবান কিছু পাবে – যেটার জন্য সোহা আপুর এত লুকোচুরী খেলতে হচ্ছে।
কিন্তু নেই। প্রচন্ড হতাশায় চুপ করে বসে রইল।

সাকিবও হতাশ হয়েছে। এতক্ষন পর্যন্ত অর্ক যা যা বলছিল সবই ঠিকঠাক ভাবেই মিলে যাচ্ছিল। এবারও ভবেছিল গুরুত্বপূর্ন কিছু একটা পাবে। না পেয়ে হতাশ হয়ে দোমাড়ানো কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে দেখল।
কতগুলো বর্নমালা অগোছালোভাবে লেখা রয়েছে কাগজটায়। অর্থহীন মনে হল তার কাছে।
তারপরও অর্ককে দেখাল কাগজটা।

সাকিবের হাত থেকে কাগজটা নিল অর্ক। দেখে লেখা রয়েছে ‘PURPXBHGZBZFCUBAR
তার কাছেও অর্থহীনই লাগল। হতাশ হয়ে কাগজটা ভাজ করে পকেটে ভেরে রাখল। তারপর বের হয়ে গেল রুম থেকে।
হতাশ হয়ে বসে থাকলে তো হবে না – বরং যে কাজের জন্য বের হতে গিয়ে থেমে গিয়েছিল, সেই কাজটা আগে সম্পন্ন করতে হবে।

৮.

ওরা যখন সাকিবদের বাসায় পৌছাল তখন ঘড়িতে সময় দুপুর তিনটা। বাস দিয়ে আসতে আসতে বেশ সময় লেগে গেছে ওদের।
বাসায় ঢুকে প্রথমেই গেল সোহা আপুর রুমে। সোহা আপু বাসায় এসেছিল কিনা, তার কোন প্রমান এখনো পায় নি। ভালভাবে মনযোগ দিয়ে খুজতে লাগল ওরা।

তারা যখন খুজছিল তাদের অলক্ষ্যে তখন যে আরো দুইজন বাসায় ঢুকে পড়েছে তা বুঝতে পারে নি ওরা।
আসলে ভুলটা ছিল সাকিবেরই। আপুকে বাসায়ই পাওয়া যাবে – ঐটা ভেবে উত্তেজনায় দরজা ভিতর থেকে লাগাতে ভুলে গিয়েছিল।
অর্কের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। উত্তেজনায় দরজা ভিতর থেকে লাগানোর কথা মনেই ছিল না। তাতেই বিপদটা হয়েছে।

মাথা ঘুরিয়ে পরবর্তীতে ঢুকা দুইজনকে দেখে চমকে উঠল অর্ক।
দুইজনের একজনকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে তার। কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না। হুট করে মনে হল তার, এই লোককে ভালভাবে না দেখলেও আগের রাতীকই ধাওয়া করেছিল সে আর সাকিব।
আর মর্জিনার বর্ননা দেওয়া লোকটাও এই লোকটাই। এই লোকটাই চোর। আর হঠাৎ এই লোকটাকেই দেখে সোহা আপু ঘাবড়ে গিয়েছিল।

‘আরে! আপনি তো সেই………’ শেষ করতে পারল না অর্ক। তার আগেই চোখে তারা ভেসে উঠল তার।
পিছন থেকে মাথায় আঘাত করা হয়েছে অর্কের। লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।
চোখের সামনে অর্ককে এভাবে লুটিয়ে পড়তে দেখে প্রতিবাদ করে তেড়ে আসল সাকিব। একই পরিনতি ঘটল তারও।

দুইজনকেই অজ্ঞান করে দেওয়ার পর গ্রামে যে চোর সেজে সোহা আপুর রুমে ঢুকার চেষ্টা করেছিল, সে বলল, ‘পিচ্চি পোলাপাইন! কিন্তু একটূ বেশিই ছোঁক ছোঁক করে।’ সাথে থাকা দ্বিতীয় লোকটাকে আদেশ দিল, ‘দেখতো পকেটে কিছু পাস কিনা?’

দ্বিতীয় লোকটা বেশ কিছুক্ষন যাবৎ চেক করে জানাল – মোবাইল, মানিব্যাগ আর ঘরের চাবি ছাড়া কিছুই নাই ওদের কাছে।

‘তাইলে ঠিকই আছে। কোন সমস্যা হইব না আমগর অপারেশনের। তয় এই দুইডারে বাইরে ছাইড়া রাখাও ঠিক হইব না – বাইরে থাকলে সমস্যা করবার পারে এই দুইডা।’ আশ্বস্ত হল, তার সাথেও চিন্তিতও হল চোর।

‘তাইলে এইডিরে কি করুম?’ জিজ্ঞেস করল দ্বিতীয় লোকটি।

‘খাড়া বসেরে জিগায়ালই।’ বলে তাদের বসকে ফোন দিল। এখানে তাদের কাজ-কর্মের কথা জানাল। অর্ক আর সাকিবের কাছ থেকে যে কিছুই পাওয়া যায়নি সেটাও জানাল।
এদের সাথে কি করবে পরে – তা জানতে চাইল। বসের কথা শুনে হাসি হাসি মুখে দ্বিতীয় লোকটাকে বলল, ‘পুরান গুদামে নিয়া ফালায়া রাখ। আপাতত আমগর মিশন কমপ্লিট হওয়ার আগ পর্যন্ত এই দুইডারে আটকায়া রাখা লাগব। বস অবশ্য এগরে মাঝে-মইদ্দে কিছু ডলা দেওয়ারও অনুমতি দিছে।’

শেষের কথাটা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দ্বিতীয় লোকটি।

৯.

জ্ঞান ফেরার পর অর্ক নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করল। মাথার উপর একটা লাইটা জ্বলছে ঠিকই। কিন্তু আলো এতই কম যে লাইটটাকে নষ্ট বললেও ভুল হবে না।
কিছুক্ষনের মধ্যে অবশ্য ঐ আলোই চোখে সয়ে গেল – আবছা আবছা করে মোটামুটি বেশ ভালই দেখতে পাচ্ছে এখন। রুমের আরেক কোনায় দেখল এখনো পড়ে আছে সাকিব। জ্ঞান ফেরেনি তার।
অর্ক গিয়ে অনেকক্ষন ডাকাডাকি করল সাকিবকে। লাভ হল না, জ্ঞান ফেরেনি সাকিবের। ব্যর্থ হয়ে আবার এসে বসে রইল আগের জায়গাটায়।

পকেটে হাত দিল। যদিও জানে কিছুই থাকবে না – যারা ওদেরকে এখানে এনেছে, তারা সবই কেড়ে রেখে দিবে। তারপরও একটা কাগজ পেয়ে গেল।
গ্রামের বাড়িতে টেবিলের ড্রয়ারে যে কাগজটা পেয়েছিল ঐটাই। অর্থহীন লেখা দেখেই বোধহয় এটাকে নেওয়ার দরকার মনে করেনি তাদেরকে বন্দী করা লোকগুলো। কাগজের লেখাটা আরেকবার পড়ল অর্ক।
PURPXBHGZBZFCUBAR’. এখনো এটাকে অর্থহীন কোন লেখা বা এলোমেলোভাবে কতগুলো বর্নমালাই মনে হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল কাগজের লেখাটার দিকে।
কি মনে হতে পকেটে হাত দিল কলমটার জন্য। কলমটা কেড়ে রাখেনি লোক গুলো। কলমটা নিয়ে লেখা শুরু করল কাগজে।

এরই মধ্যে সাকিবেরও জ্ঞান ফিরল। প্রথম অবস্থায় তারও অর্কের মতই দশা হল। সব অন্ধকার – তারপর আস্তে আস্তে কম পাওয়ারে জ্বলে থাকা লাইটের আলোটা সয়ে গেল চোখে।
চোখে আলো পুরোপুরি সয়ে যাওয়ার পর দেখল, এককোনায় অর্ক আপন মনে বসে কি যেন করছে। কাছে গিয়ে দেখে একটা কাগজে কি কি জানি সব লিখছে।

‘কি করিস তুই?’ অর্ককে জিজ্ঞেস করে তার পাশে বসল সাকিব।

‘খেলছি।’ নির্বিকারভাবে জবাব দিল অর্ক।

‘কি?’ বিষম খেল সাকিব। ‘এখানে বন্দী হয়ে পড়ে আছি, কই বের হওয়ার চিন্তা করবি – তা না করে খেলছিস? তর মাথা কি………’ কথাটা বলে শেষ করতে পারল না সাকিব। তার আগ্বেই আলিশান রুমের দরজাটা খুলে গেল। একটা এসে তাদেরকে বলল দ্রুত বের হয়ে যেতে।
দেরী না করে তারা বেরিয়ে পড়ল। বের হয়ে দেখে দরজার পাশে পড়ে আছে তাদেরকে এখানে এনে আটকে রাখা ঐ দুই লোক।

তাদেরকে যে মুক্ত করেছে, সেই লোকটা এসে বলল, ‘দেরী না করে তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বস।’ আঙুল দিয়ে ইশারা করে গাড়িটা দেখাল।

‘তার আগে এই দুইটার ব্যাবস্থা করা দরকার।’ পড়ে থাকা লোকদুটোর দিকে ইশারা করে বলল অর্ক।

এরপর তিনজনে মিলে ধরাধরি করে ঐ দুই লোককে রুমের ভিতর নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত, পা, মুখ বেধে রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।
গাড়িতে বসে কিছুক্ষন রেস্ট নেওয়ার পর প্রথম মুখ খুলল সাকিব।
‘থ্যাংকস আপনাকে। আপনি না এসে উদ্ধার করলে হয়ত বন্দী অবস্থায়ই কাটাতে হত।’

‘থ্যাংকস দেওয়ার কিছুই নেই। আমার কাজ আমি করেছি।’ হাসিমুখে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল তাদেরকে উদ্ধার করা লোকটি।

‘আপনার কাজ আমাদেরকে উদ্ধার করা? ঠিক বুঝলাম না কথাটা। আর আপনার পরিচয়টাও এখনো দেন নি।’ লোকটার কথায় বেশ অবাক হয়েছে সাকিব।

‘আমি ইন্টিলিজেন্স এজেন্সীর ডিটেকটিভ শরীফ।’ এজেন্সীর আইডি কার্ডটা দেখাল তাদেরকে।

‘আমাদের খুজে পেলেন কি করে এত তাড়াতাড়ি?’ গাড়িতে উঠার পর এই প্রথম মুখ খুলল অর্ক।

‘সোহাকে খোজার জন্য গ্রামে গিয়েছিলাম। তখন………’ শেষ করার আগেইতাকে থামিয়ে দিল অর্ক।

‘আপুকে খুজছিলেন কেন? আপুকি কোন অপরাধের সাথে জড়িত?’

‘সোহার সম্পর্কে দেখি কিছুই জাননা তোমরা। সোহা অপরাধী হতে যাবে কেন? সে আমার মতই একজন গোয়েন্দা। ইন্টিলিজেন্স এজেন্সীর বেস্টদের একজন।’ অর্কের ভুলটা ভাঙিয়ে দিল শরীফ।

খবরটা হজম করতে দুইজনেরই বেশ কষ্ট হল। সোহা আপু গোয়েন্দা? আর তারা এত কাছে থেকেও তা জানতে পারল না। শরীফ দুইজনের মুখ দেখে বুঝল, তারা দুইজনই যথেষ্ট অবাক হয়েছে কথাটা শুনে।

‘কিন্তু আপুর ব্যাগে যে ড্রাগসের প্যাকেট পেলাম?’ পিছনের সিটে থাকা সাকিব বলে উঠল।

‘সোহা একটি মিশনে ছিল। সেই মিশনের সফলতার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়েছে সোহাকে। এমনকি যোগ দিতে হয়েছে ভয়ানক মাদক ব্যবসার সাথেও।’

‘কিসের মিশন? পুরোটা খুলে বলবেন?’ আগ্রহভর কন্ঠে জানতে চাইল অর্ক।

‘শুরু থেকেই বলি। আমাদের দেশে মাদকাসক্ত মানুষের পরিমান তো নেহায়াত কম না – তা তো বোধহয় জানোই। এই কারনে অনেক পরিবার নষ্ট হয়েছে – অনেক মানুষ তার সর্বস্ব হারিয়েছে। কিন্তু দোষটা তো আর মাদকাসক্তদের না। তাদের দোষ যে একদমই নেই তা বলছি না – তাদের দোষটা হল এই মাদকের পিছনে প্রচুর নষ্ট করা, এই মাদকের উপর তাদের আসক্তি জন্মানোটা। কিন্তু তাদের এই আসক্তিটা জন্মানোর পিছনে সবচেয়ে বড় প্রভাবটা হল যারা তাদের নিয়মিত মাদক দ্রব্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে তাদের। তারা যোগান না দিলেই তো মাদকাসক্ত মানুষের পরিমানটা কমে যাবে। মানে হল, মাদকাসক্ত মানুষের পরিমান কমাতে হলে, তাদের যারা মাদক দ্রব্য সাপ্লাই দেয় তাদের সংখ্যা কমাতে হবে। এটাই আমাদের মিশনটা। মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে আইনের হাতে আনতে হবে। যদিও প্রতিনিয়তই কিছু ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়ছে – কিন্তু রাঘব-বোয়ালরা সব রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরেই। ছোটখাট চুনোপুটি ধরলেই হবে না – ধরতে হবে বড় বড় ব্যবসায়ীদের। তাদেরকে ধরতে পারলেই ছোটখাট ব্যবসায়ীরা আর থাকবে না। এই জন্যই দুইজন ডিটেকটিভ সোহা আর রাকিবকে মাদক ব্যবসায় নামাই আমরা – যাতে জিরে বড়দের নজরে আসে। বড়দের নজরে পড়তে খুব বেশি দেরী হয় নি তাদের। এই সোর্স ঐ সোর্স করে তাদের খবর ঠিকই পৌছে যায় বড়দের কানে। সোহা আর রাকিবকে তাদের দলে টেনে নেয়। তারা দুইজন গ্যাং-এর ভিতর থেকে সব খবরাখবর দিতে থাকে আমাদের কাছে। বড় বড় প্রায় সব মাদক ব্যবসায়ীদেরই আমরা চিহ্নিত করে পারি। কিন্তু তাতেও তো লাভ নেই, কারন প্রমান ছাড়া ওদের ধরা যাবে না। উলটো তারা আরো সাবধানে থেকে ব্যবসা চালাবে, এর মাঝে জানতে পারলাম – ব্যবসায়ী অনেক অনেক থাকলেও তাদের গ্যাং একটাই। মাদকদ্রব্য গুলো বাইরে থেকে খুব নিন্মমূল্যেই এই দেশে আসে গ্যাং-এর মাঝে। এইখান থেকে ভাগাভাগি করে নিয়ে ব্যবসায়ীরা আলাদা আলাদা গ্যাং-এর প্রিটেন্ড করে, যাতে করে পুলিশ একজনকে ধরলেও গ্যাং-এর কোন ক্ষতি করতে না পারে। তারা সবাই একত্রিত হয় বছরে মাত্র দুইবার কি একবার। তখনই তারা মাদকদ্রব্য গুলো হাতে পায়। এইসব খবর সোহাই জানিয়েছে। সোহা তাদের গ্যাং-এর সাথে আছে প্রায় মাসচারেক হল। কয়েকদিন আগে সব গ্যাং মেম্বারদেরকে তারা ডেকে পাঠিয়েছিল তাদের গোপন আস্তানায়। সোহা আর রাকিবও তখন তাদের সাথে ছিল। গোপন আস্তানার ঐ মিটিং এ জানানো হয় খুব শীঘ্রই সব বড় ব্যবসায়ীরা একসাথে হচ্ছে। এক্সেক্ট ডেটটা এই মাসের ২৬ তারিখ। ঐদিন বাইরে থেকে সব ধরনের মাদকদ্রব্য দেশে আসবে। দেশে থাকা বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে কিছু সরাসরি, কিছু অন্যান্য জিনিসের ভিতরে করে এই দেশে ঢুকবে। গ্যাং-এর সব মেম্বারদেরকে আলাদা আলাদা ভাবে ডেকে তাদের ঐদিন কোথায় থাকতে হবে আর কোন জিনিসটা থেকে মাদক সংগ্রহ করতে হবে বলে দেওয়া হয়। আমাদের দুইজন তাদের ভিতর থাকার ফলে আমরা দুইটা পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু দুটো জেনে তো আর লাভ হবে না – অপর পয়েন্টগুলোতে ঠিকই ওরা কাজ করতে পারবে আর অপরাধীরা থেকে যাবে ধরা ছোয়ার বাইরেই। এইটা যাতে না হয় – সেই জন্য ডিটেকটিভ রাকিব তাদের ফুল প্ল্যানটা কম্পিউটার থেকে সুযোগ পেয়ে কপি করে রেখে দেয়। গোপনেই কাজটা করেছিল – কিন্তু তারপরও কিভাবে জানি একজন দেখে ফেলে রাকিবের প্ল্যান কপি করাটা। ওরা ততক্ষন পর্যন্ত জানত না যে সোহাও রাকিবের সাথেই আছে। সে প্রকাশও করে নি। ঐদিকে প্ল্যানটা বাগিয়ে নেওয়ার জন্য রাকিবের পিছনে লোক লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাকিব আমাদের কাছে পারে নি, প্ল্যানটাও পাঠাতে পারে নি – আসলে সুযোগই পায়নি সে। সুযোগ পেয়ে একদিন সে ওটা সোহার কাছে দিয়ে দেয় - যেহেতু সোহাকে ওরা তখনও চিনতে পারে নি, তাই সোহাকে দেওয়াটাই নিরাপদ ভেবেছে। কিন্তু সমস্যাটা বাধে তখনই, সোহা ওদের নজরে পড়ে যায়। সোহা কোনরকমে ওদের চোখ এড়িয়ে প্ল্যানটা নিয়ে বাসায় আসে।’ গাড়ি চালাতে চালাতে একদমে কথাগুলো বলে থামল শরীফ।

‘গ্রামে গেল কেন তাহলে আপু?’ শরীফ থামতেই জিজ্ঞেস করল অর্ক।

‘ওটা আসলে আমারই প্ল্যান ছিল। ওরা বাসায় ঢুকে কিছু করবেনা জানতাম কিন্তু প্ল্যানটা আমাদের কাছে পৌছানোটা খুবই দরকারী ছিল। তাই ওকে গ্রামে যাওয়ার আইডিয়া দিল। যাতে রেল স্টেশনে ভীড়ের মাঝে দিয়ে প্ল্যানটা আমার হাতে পৌছিয়ে দিতে পারে। কিন্তু টাইমিং মিসের কারনে আর সেটা হয় নি। ঐ দিকে গ্যাং-এর লোকেরা পিছু নিয়ে স্টেশন পর্যন্ত পৌছে যায়। ভীড়ের মধ্যে ওদের চোখে ফাকি দিয়ে ট্রেনে উঠে গ্রামে চলে যায়। পরিকল্পনা করা হল – ডিটেকটিভ এজেন্সীর কেউ গিয়ে গ্রাম থেকে প্ল্যানটা নিয়ে আসবে। এইটা অবশ্য পরে বাতিল করতে হল, কারন গ্যাং-এর লোকেরা ততক্ষনে গ্রামেও পৌছে গেছে। সোহা আমাকে জানাল, প্ল্যানটা সে লুকিয়ে রেখেছে – সময়মত সে জানিয়ে দিবে কি করতে হবে। এর কিছুক্ষন পর সে জানাল, সে নিজেই নিয়ে আসছে প্ল্যানটা। এরপর শুধু অপেক্ষায় রইলাম। প্রায় ছয়দিন কেটে গেল, সোহার কোন খোঁজ নেই। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। ট্র্যাক করে ওর মোবাইলটা গ্রামেই পেলাম। ২৬ তারিখে ওদের ডিল। আর আজ ২৩ তারিখ। এখনও তাদের প্ল্যানটা পাই নি। ওদের প্ল্যানটা দেখে আমাদেরও সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে হবে। না পেরে আজ সকালে চলেই গেলাম গ্রামে। গিয়ে তোমাদের কথা শুনলাম।’

‘কিন্তু আপনি জানলেন কি করে আমাদের এখানে এনে বন্ধী করা হয়েছে?’ প্রশ্ন তুলল সাকিব।

‘তোমরা শহরে আসছো শুনে সাথে সাথেই আমিও রওনা দেই। তোমাদের এক চোরের পিছনে ধাওয়া করার শুনেই মনে হল, তোমরা বিপদে পড়তে পারো। সাবধান করতে ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু সাকিবের ফোন বন্ধ, আর তোমার ফোন থেকে নো আন্সার আসছিল।’ অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল শরীফ।
‘দ্রত আসার জন্য শর্টকাট নিলাম। এখানে যখন আসলাম তখন দেখি সাকিবদের গেট থেকে নাম্বার-প্লেট বিহীন একটা গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। যা আশংকা করছিলাম, তাই হল। ঐ গাড়িটার পিছু নিয়েই, এই জায়গাটা চিনলাম।’

‘তারপর সুযোগ বুঝে বের করে আনলেন আমাদের।’ হাসিমুখে বলল অর্ক।

‘হুমমম!’ শরীফও হাসল, তবে তার হাসিতে তেমন প্রান নেই। ‘মিশনটা সফল হল না, তবে তোমাদেরকে অন্তত উদ্ধার করতে পারলাম। আপাতত সফলতার খাতায় এইটুকুই যুক্ত হল।’

‘মিশনটা এখনো সফল হয় নি, তবে হয়ে যাবে।’ রহস্যময় গলায় বলল অর্ক।

‘কিভাবে হবে? প্ল্যানটাই তো এখনো হাতে পাই নি আমরা। প্ল্যান ছাড়া মিশন সাকসেসফুল করা অসম্ভব।’ মাথা নাড়ল শরীফ।

‘আমি জানি প্ল্যানটা কোথায় আছে।’
অর্কের কথা শুনে আচমকা গাড়ি থামিয়ে দিল শরীফ। বিশ্বাস করতে পারছেনা যেন অর্কের কথা। উত্তেজিত গলায় বলল, ‘কোথায়?’

‘আন্টির মোবাইলে।’

‘কে বলল তোমাকে?’

‘সোহা আপু!’

‘সোহা আপু তোকে কখন বলল? আপুকেই বা পেলি কোথায় তুই?’ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করল সাকিব।

‘আপু সরাসরি বলে নি আমাকে।’ বলে পকেট থেকে দোমড়ানো কাগজটা বের করল অর্ক। সাকিবের দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘তবে এটায় লিখে দিয়ে গেছে।’

সাকিব নেওয়ার আগেই কাগজটা কেড়ে নিল শরীফ। কাগজটা দেখে হাসিমুখে বলল, ‘ক্লেভার বয়! এই কোডওয়ার্ডের লেখাটা বুঝলে কিভাবে?’

‘সেই কথা পরে হবে – আগে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালান। গ্রামে আন্টির যেতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।’ শরীফকে তাগাদা দিল অর্ক।

*

দ্রুতই গাড়ি চালাল শরীফ। তবে গ্রামে গেল না, সাকিবদের পাশের বাসায় গেল।
আসলে শরীফ গ্রামে গিয়ে সব কথা বলার পর আর ছেলেরা বিপদে পড়তে পারে শুনে সাকিবের মা আর গ্রামে থাকতে পারে নি। চলে এসেছে শরীফের সাথে।
সাকিবদের বাসায় বিপদ হতে পারে আশংকায় উনাকে শরীফ উনার প্রতিবেশির বাসায় রেখে এসেছিল।

ওখানে পৌছেই প্রথমে সাকিবের মায়ের মোবাইলটা নিয়ে চেক করল অর্ক। মোবাইল্র সাথে বাইরে কোন কিছু সাটা নেই – থাকবেও না যে এমনটাই আশা করেছিল সে।
মোবাইলের ব্যাটারী খুলে আলগা করল। আন্টির মোবাইল ডুয়েল সিম সাপোর্টেড হলেও উনি সবসময় একটা সিমই ইউজ করেন। সিমের অন্য স্লটটা সবসময় খালিই পড়ে থাকে।
ঐ খালি স্লটটাকেই লুকানোর জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেছে সোহা আপু। খালি স্লটে রেখে গিয়েছে একটা মেমোরি চিপ।
চিপটা মোবাইল থেকে বের করে এনে শরীফের হাতে দিল সে।

শরীফ চিপটা নিয়ে রিডারের সাহায্যে কম্পিউটারে লাগিয়ে দেখল – হ্যা এইটাই সেই প্ল্যান।

‘তোমার একটা বড়সড় পুরষ্কার পাওনা রইল। তোমার জন্যই প্রায় ব্যর্থ হয়ে যাওয়া মিশনটা এখন সফলতার পথে।’ হেসে অর্কের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল শরীফ।

‘মিশনটা সাকসেসফুল হলেই তা আমার পুরষ্কার হবে। আর ও হ্যা, সেই সাথে আমাদের গোয়েন্দা আপুরও সুস্থ ভাবে ফিরে আসাটা আমার পুরষ্কার বলে গন্য হবে।’ অর্কও হাসিমুখে শরীফকে তার পুরষ্কারগুলো কি হতে হবে, তা জানিয়ে দিল।

১০.

পনের-ষোল দিন পর।

রিয়াদের সাথে চ্যালেঞ্জের শর্তের কথা ভুলেনি অর্ক। শর্ত অনুযায়ী শহরের সবচেয়ে বড় আর এক্সপেনসিভ রেস্টুরেন্টেই নিয়ে এসেছে ওর পুরো গ্যাংকে। মানে রিয়াদ আর সাকিবকে।
সাথে আরো দুইজনকেও আমন্ত্রন করেছিল অর্ক। সোহা আপু আর সদ্যই ওদের ভাইয়া হওয়া শরীফ ভাইয়াকে। কাজের চাপে ওরা কেউই আসতে পারে নি।

মেনু কার্ডটা রিয়াদের দিকে ঠেলে দিয়ে অর্ক বলল, ‘কি খাবি অর্ডার কর।’

‘আরে! রাখ তোর অর্ডার। আগে কাহিনী ক। সোহা আপু গায়েব হইছিল কেন?’ তেতে উঠে বলল রিয়াদ। এত বড় একটা অ্যাডভেঞ্চার সে মিস করেছে শুধু বেড়াতে যাওয়ার কারনে – তাই নিজের উপ্রও কিছুটা ক্ষেপে রয়েছে।

‘সাকিব তোকে বলে নাই কিছুই?’ পালটা প্রশ্ন করল অর্ক।

‘সাকিব নিজে জানলে তো কইব?’ রাগ রাগ গলায় বলল সাকিব নিজেই। ‘আপু আমাকে কিছুই বলে নাই, যা বলার তোকেই বলছে।’

জবাবে শুধু মিটিমিটি হাসছে অর্ক। দুই বন্ধুর কৌতুহলে ভরা মুখ দুটো দেখতে খুব ভাল লাগছে তার।

‘বলিস না ক্যান? আর আপুরে পাওয়াই বা গেল কই?’ অধৈর্য্য হয়ে বলল রিয়াদ।

‘খালি তো বললি মিশন সাকসেসফুল। আর কিছুই তো বলিস নাই। অনেক প্রশ্ন জমা হইছে। এখন এই গুলোর উত্তর দে।’ রিয়াদের সাথে যোগ দিল সাকিবও।

‘আরে থামরে বাপ! আস্তে আস্তে বলছি সবই।’ এইটুক বলে ওয়েটারের দিকে ফিরে তিনটা কোকের অর্ডার করল অর্ক। ‘গায়েব না, সোহা আপু আসলে তার পিছনে লেগে থাকা লোকদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। সাথে নিয়েছিল তাদের প্ল্যানটা, এজেন্সীর লোকদের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য।’

‘কিন্তু প্ল্যান তো ওরা পায় নাই – তাইলে সোহা আপুর প্ল্যান নিয়ে বের হইয়া লাভ কি হইল?’ প্রতিবাদ করে উঠল রিয়াদ।

‘পুরোটা শোন আগে। আপু আসলে দুইটা উদ্দেশ্য নিয়ে বের হয়েছিল। প্রথমটা ছিল, গ্যাং-এর লোকদের চোখকে চোখকে ফাকি দিয়ে অ্যাজেন্সীতে প্ল্যানটা পৌছে দেওয়ার। কিন্তু আপু নিজেও জানত এইটা সম্ভব না। গ্যাং=এর লোকদের হাতে ধরা পড়তেই হবে। হলও তাই। আপু ধরা পড়লে প্ল্যানসহ। প্ল্যানসহ বেরোনোর বড় উদ্দেশ্যটা ছিল এটাই। যাতে ধরা পড়লেও, গ্যাং-এর লোকেরা বুঝে যে – প্ল্যানটা এখনো অ্যাজেন্সীর কাছে পৌছায় নাই। তাতে নিশ্চিন্ত হয়ে তারা এই প্ল্যানেই কাজ করে যাবে, প্ল্যানটা বদলাবে না।’

‘কিন্তু প্ল্যানটা তো পাওয়া গেল আন্টির মোবাইলে – তাহলে আপু নিয়ে বের হলটা কি?’

‘এই জায়গায় আপু একটা ট্রিকস ব্যবহার করেছে। আপু যে ধরা পড়বে, তা আপু জানত আগে থেকেই – কিন্তু প্ল্যানটাও তো পৌছাতে হবে অ্যাজেন্সীতে। তাই আপু প্ল্যানটার আগে থেকেই কপি করে রেখেছিল। একটা নিয়ে বের হল, আরেকটা লুকিয়ে রাখল আন্টির মোবাইলে।’

‘কিন্তু আপু কিভাবে আগেই বুঝল যে, মোবাইল থেকে প্ল্যানটা অ্যাজেন্সীর লোকের হাতে পৌছাবেই?’

‘আসলে এই ক্ষেত্রেও ট্রিকস খাটিয়েছে আপু। আপু হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়ায় পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হবে। আর পুলিশ খুঁজতে গিয়ে ব্যাগ-ট্যাগ চেক করে ড্রাগস পেলে সেটার খবর ইন্টিলিজেন্স অ্যাজেন্সী পর্যন্ত যাবেই। আর সোহা আপুর নাম শুনলেই আসল ঘটনাটা বুঝে যেত। তখন এসে মেসেজের মাধ্যমে খুজে বেরতে পারত প্ল্যানটা। আপুর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পিছনে কারন ছিল এটাই। কিন্তু পুলিশ হতাশ করল। পুলিশ ব্যাগ চেক করার ইচ্ছাই পোষন করে নি। অবশ্য তাতে সমস্যা হয় নি। পুলিশের হয়ে কাজটা আমরা করে দিয়েছিলাম। তাতেই আপুর গায়েব হয়ে স্ব-ইচ্ছায় ধরা দেওয়ার দানটা কাজে লেগে গেছে।’

‘আচ্ছা বুঝলাম সবই – কিন্তু ওরা প্ল্যান সহ আপুকে পাওয়ার পরও তাদের লোককে চোর হিসাবে কেন পাঠাল?’ প্রশ্নটা আসলে সেই শুরু থেকেই সাকিবের।

‘তারা আসলে নিশ্চিত হতে চাইছিল যে, সোহা আপু প্ল্যানটা কি আর কোন জায়গায় রেখে গিয়েছে কিনা তার সম্পর্কে। সোহা আপু ইন্টেলিজেন্স অ্যাজেন্সীর গোয়েন্দা, যেকোন কিছুই করে আসতে পারে – তারা সোহা আপুকে প্ল্যানসহ হাতে-নাতে ধরার পরও বিশ্বাস করতে পারছিল না। তাই চোর হিসেবে খোঁজ নিতে পাঠিয়েছিল তাদের লোককে। তাদের কাজটা ঠিকটাকই ছিল। কেউ ই চোরের আসার সাথে সোহা পাউর গায়েব হওয়ার সম্পর্ক খুঁজতে যাবে না। সবই ঠিক ছিল, শুধু ঝামেলা………’ অর্ককে থামিয়ে দিল রিয়াদ।

‘ঝামেলাটা ছিল আচমকা গোয়েন্দাগিরির ভূত চেপে বসা অর্ক।’ হেসে অর্কের অসমাপ্ত কথাটা শেষ করে দিল রিয়াদ। রিয়াদের কথাটা শুনার পর হাসা শুরু করল বাকি দুইজনও।
‘আচ্ছা সবই ঠিক ছিল – তাহলে তোদেরকে কেন আটকাতে গেল?’ হাসি থামিয়ে আবার জিজ্ঞেস করল রিয়াদ।

‘এইটা আসলে আমিও ঠিক বুঝিনি। তবে শরীফ ভাইয়া বলল যে, ডিলের আগমুহুর্তে আমরা তাদের জন্য খুবই বিপদজনক হয়ে পড়েছিলাম। তাই আটকাতে হয়েছে আমাদেরকে। ডিল কম্পলিট হওয়ার আগপর্যন্ত আমাদের আটকে রাখার চিন্তাই ছিল তাদের।’

‘কিন্তু তোরা তো ঠিকই এস্কেপ করলি। তাতে তাদের কোন অসুবিধা হল না?’

‘তারা তো জানেই নি যে আমরা বের হয়ে গেছি। তারা আমাদের উপর নজর রাখার জন্য আমার বেল্টে একটা ট্র্যাকার রেখে দিয়েছিল, আর দুই লোককে আমাদের পাহাড়ার জন্য রেখেছিল। আমি বের হওয়ার আগে অবশ্য ট্র্যাকারটা ওদের লোকের পকেটেই রেখে দিয়ে এসেছিলাম। তাই তারা বুঝেই নি যে, আমরা আর ওখানে নেই।’

‘শালা তর বুদ্ধিও! চরম খলে দেখাইছস গ্যাং-ওলাগ্র সাথে।’ আবারও হেসে বলল রিয়াদ। ‘আচ্ছা আরেকটা কথা। যে প্ল্যান নিয়া এতকিছু – গোয়েন্দাদের হাতেও পড়ল প্ল্যান। তারপরও ঐ প্ল্যান পাল্টাইলো না ক্যান তারা?’

‘আসলে তাদের এই প্ল্যানিংটা অনেকদিন যাবৎই করা ছিল। খুব বড়সড় কোন বিপদে না পড়লে তাদের প্ল্যান চেঞ্জ করা কোন ইচ্ছা ছিল না। প্ল্যানটা গোয়েন্দাদের হাতে পড়লেও – গোয়েন্দাদের তারা নজরবন্দী করে ফেলতে পেরেছিল। যার ফলে গোয়েন্দারা প্ল্যান নিজের কাছে নিয়েও কিছু করতে পারছিল না। বড় কোন বিপদের সৃষ্টি হয়নি। পরে তো গোয়েন্দাদের তারা বন্দীই করে ফেলল, এইটুকও নিশ্চিত হল প্ল্যান এখনও সুরক্ষিত আছে। সেই জন্যেই প্ল্যান চেঞ্জ করেনি তারা।’

‘শেষ একটা প্রশ্ন। তুই ঐ কাগজের লেখাটা থেকে কিভাবে বুঝলি যে, প্ল্যানটা আম্মুর মোবাইলে আছে?’ জানতে চাইল সাকিব।

‘আসলে প্রথমে যখন দেখেছিলাম কাগজটা – তখন লেখাগুলো আমার কাছেও অর্থহীনই মনে হয়েছিল। বন্দী থাকা অবস্থায়, বের হওয়ারও কোন রাস্তা ছিল না তাই কোন কাজ না পেয়ে কাগজটা নিয়ে এমনিই দেখছিলাম। লেখাগুলো হঠাৎঅই মনে হল, এইটা কোন গোপন মেসেজ না তো? সাইফার টাইপ কিছু।’

‘কি ফার টাইপ?’ বুঝতে না পেরে জানতে চাইল রিয়াদ।

‘সাইফার।’ জবাব দিল অর্ক।

‘এইটা কি জিনিস!’ দুইজনই সমস্বরে জানতে চাইল এইবার।

হালকা শ্রাগ করল অর্ক। এখন আবার তার সাইফার সম্পর্কে জ্ঞান ঝাড়তে হবে। যদিও জ্ঞান ঝাড়তে তার খারাপ লাগে না। ‘ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পর্কে তো কিছু জানিস বোধহয়?’ বলে দুই বন্ধুর দিকে তাকাল অর্ক। মাথা নাড়ল ওরা। ‘না জানলেও এইটার নাম তো শুনেছিস?’ এইবার মাথা ঝাকাল ওরা, হ্যা নাম শুনেছে ক্রিপ্টোগ্রাফির। ‘আচ্ছা যাই হোক, শুরু থেকেই বলি – ক্রিপ্টোগ্রাফি হল তথ্যগুপ্তি বিদ্যা। এই ক্রিপ্টোগ্রাফিরই একটা অংশ হল সাইফার। সাইফার হল মূলত কিছু নির্দিষ্ট অ্যালগরিদমের ব্যবহারে একটা মেসেজ। মেসেজটা এনক্রিপ্টেড থাকে যাতে নির্দিষ্ট কেউ বা যাকে মেসেজটা দেওয়া হচ্ছে সে ছাড়া অন্যকেউ না বুঝতে পারে।’

এইটুক পর্যন্ত বলে থামল অর্ক। দুই বন্ধুর দিকে তাকাল। সে এতক্ষন যা বলেছে তা ওরা মাথায় ঢুকানোর চেষ্টা করছে। ওদের বুঝার জন্য একটু সময় দিল অর্ক। তারপর আবার বলা শুরু করল।
‘তো যা বলছিলাম। কাগজটা হাত নিয়ে কিছুক্ষন ভাবার পর বুঝলাম এটাও এনক্রিপ্টেড একটা মেসেজ। আসলে কাগজে যেটা লেখাছিল সেটা ছিল সাইফার টেক্সট। এটাকে ডিক্রিপ্ট করার পর যেটা পাওয়া যায় ওটাকে বলে প্লেইন টেক্সট। আবার সাইফার অনেক রকমের আছে। এইটা কোন ধরনের সাইফার তা বুঝার চেষ্টা করছিলাম। অনেক ধরনের সাইফারের মধ্যে রয়েছে – এনিগমা সাইফার, হিল সাইফার, সাবস্টিটিউশন সাইফার, অ্যাফাইন সাইফার, ব্লোফিশ সাইফার, সিজার সাইফার, বেকন্স সাইফার, ভিজিনিয়ার সাইফার, বুক সাইফার আরও অনেকগুলো। তবে এগুলোই হল প্রচলিত সাইফার। ধরে নিয়েছিলাম, সোহা আপু যদি সাইফারটা তৈরি করে থাকে তাহলে অনেক কম সময়ই পেয়েছিল এটা তৈরি করার জন্য। ঐটা আসলে ছিল আমার প্রাথমিক ধারনা। তাই কঠিনগুলো বাদ দিলাম। কারন একেতো এগুলো তৈরি করতে বেশ টাইম লাগে আর আমি নিজেও তেমন ভাল করে জানিনা ঐগুলো সম্পর্কে।

এগুলোর মধ্যে বেকন্স সাইফার প্রথমেই বাদ। কারন বেকন্স সাইফার বাইনারী সংখ্যার মাধ্যমে হয় আর এই মেসেজটায় বাইনারী কোন সংখ্যাই ছিল না।
তারপর ব্লোফিশ সাইফার আর হিল সাইফারও বাদ দেওয়া যায়। কারন এগুলো তৈরি করতে বেশ ম্যাথমেটিকাল ইকুয়েশনের দরকার হয়। আর অনেক সময়ও লাগে। আপুর হাতে এতটা সময় ছিল না।
বুক সাইফারের নাম শুনেই মনেহয় বুঝতে পারছিস এটার সাথে বই রিলেটেড, আসলেও তাই। বুক সাইফার আসলে কোন নির্দিষ্ট বই থেকে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বেছে নিয়ে কি হিসেবে তৈরি করা হয়। কিন্তু একেতো আপুর কাছে কোন বই ই ছিল না তার উপর মেসেজে কোন বইয়ের কথা উল্লেখও ছিল না, যদি না যার কাছে এই মেসেজটা যাবে তার আগে থেকেই জানা থাকে। ধরে নিলাম নেই। আর থাকলেও এটা বুক সাইফার হওয়ার কোন সম্ভাবনাও ছিল না, কারন আপুর কাছে কোন বই ছিল না।
এনিগমা সাইফারও বাদ। কারন এনিগমা সাইফারে কী দেওয়া থাকে, ঐ কী গুলো দেখে দেখে মূল মেসেজটা উদ্ধার করা হয়। এখানে কোন কী নেই।
আমি চিন্তা করছিলাম, আপু যেহেতু স্বল্প সময়ে সাইফারটা তৈরি করেছে তাহলে কোন সহজ ওয়েতেউ তৈরি করেছে। যেটা করতে আপুর সময় কম লেগেছে। সহজ সাইফার গুলোর মধ্যে অন্যতম হল সাবস্টিটিউশন সাইফার। মানে একটা ওয়ার্ডকে আরেকটা ওয়ার্ডের সাথে রিপ্লেস করে দেওয়া আর পুরো মেসেজেই ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডের রিপ্লেসের দূরত্বটা একই থাকে। কিন্তু তারপরও সাবস্টিটিউশন সাইফারে কী দেওয়া থাকে – যে মূল ওয়ার্ড থেকে ঠিক কতটা দূরের ওয়ার্ড ইউজ করা হয়েছে মেসেজটায়।
যেমন ধর, A কে আমরা রিপ্লেস করলাম E দিয়ে। তাহলে দূরত্বটা কত দাড়াল চার। ঐ চারটা মেসেজের সাথে লেখা থাকে নয়ত যাকে মেসেজটা দিচ্ছে সে আগে থেকেই কী টা জানে। প্রথমেই বলেছি, আমি ধরে নিয়েছিলাম কী টা কেউ জানে না। তাহলে মেসেজের অর্থটা বের করা হবে কিভাবে?’

‘আসলেই তো, কোনটার সাথেই যেহেতু মিলছে না তাহলে এটার অর্থ বের হবে কিভাবে?’ অর্কের সাথে তাল দিয়ে বলল রিয়াদ।

আসলে সাবস্টিটিউশন সাইফারের অনেকগুলো ভাগ আছে। তার মধ্যে অন্যতম সহজ একটা হল ROT13. এই ROT13 মেথডে একটা বর্ন তার ১৩ নং পরের বর্নের সাথে রিপ্লেস করা হয়। ROT13 এর পূর্নরূপ হল Rotate by 13 places. এই মেথডে A রিপ্লেস হয় ১৩তম বর্ন পরে থাকা N এর সাথে, B হয় O এর সাথে, C হয় P এর সাথে। এভাবে যেতে যেতে M হয় Z এর সাথে রিপ্লেস। এরপর আসে N. N কার সাথে রিপ্লেস হবে সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু আগেই তো বলা হয়েছে যে, A রিপ্লেস হয় N এর সাথে, আর N এর ক্ষেত্রে ঘটে ঠিক তার উল্টোটা। মানে N হয় A এর সাথে রিপ্লেস। এভাবেই একটা বর্ন তার ১৩টা বর্ন পরেরটার সাথে বদলি হয়। এই মেথডের মেসেজে কী দেওয়া থাকে না। আমি এটাই ইউজ করলাম কাগজে থাকা সাইফার টেক্সটি ডিক্রিপ্ট করার জন্য।

মেসেজে লেখাছিল, ‘PURPXBHGZBZFCUBAR

ROT13 মেথড খাটিয়ে মেসেজের বর্নগুলোকে রিপ্লেস করে দিলাম। তখন লেখাটা হল এরকম। ‘CHECKOUTMOMSPHONE’ পরে স্পেস গুলো জায়গামত বসাতেই বুঝে গেলাম মেসেজে কি বলা হয়েছে।’ কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে কখন যে কাগজ কলম নিয়ে সাইফার সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া শুরু করে দিয়ে তা নিজেও বুঝতে পারে নি অর্ক। অর্কের বিশাল বক্তব্য শেষ হওয়ার প্র চুপ মেরে রইল সাকিব আর রিয়াদ। কাগজের লেখাগুলো আসলে বুঝতে চেষ্টা করছে ROT13 সাইফারের ব্যাপারটা।

‘কিন্তু এইটা তো একদমই সোজা। যে কেউই ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। এটা কেন ইউজ করতে গেল আপু?’ ROT13 সাইফারটা বুঝে উঠার পর বলল সাকিব।

‘সোজা কিন্তু ভেঙে মেসেজটা উদ্ধার করা বেশ কঠিন কাজ। যে সাইফার সম্পর্কে মোটামুটি জানে সে পারবে একটু ভাবলেই, কিন্তু যে একদমই জানে না, তার জন্য এটা অর্থহীন কিছু বর্নমালা ছাড়া কিছুই মনে হবে না। তুইও তো প্রথমে দেখেছিলি – তুই কি বুঝতে পেরেছিলি এটা একটা মেসেজ? তুই কেন আমিও তো প্রথমে বুঝি নাই। তারপরও বলতেই হবে ROT13 সোজাই। আপুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি কেন এইটা ব্যবহার করতে গেলেন। উনি জানালেন যে, সাইফার সম্পর্কে জানার পর ROT13 দিয়েই প্রথম সাইফার কোড ভেঙেছিলেন। যদিও কোডটা সাজিয়ে দিয়েছিল শরীফ ভাইয়াই। তাই শরীফ ভাইয়া যাতে সহজেই বুঝতে পারে মেসেজটা, সেই জন্যেই উনি এই সাইফারটা ব্যবহার করেছেন।’

‘তুই ক্যাম্নে জানলি এত কিছু সাইফার সম্পর্কে?’ তাদের এতদিনের অ্যাডভেঞ্চার আর রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে মোটামুটি সব কিছুই জানা শেষ। তাই এখন আস্তে আস্তে তাদের নিজেদের আলাপে ফিরছে।

‘এক থ্রিলার গল্পে সাইফার ওয়ার্ডটা পড়েছিলাম – সাইফার দিয়েই কেস সলভ করেছিল এক গোয়েন্দা। পরে নেটে ঘাটাঘাটি করে আরো কিছু জেনেছি।’

‘ভাইরে! তুই আসলেই জিনিয়াস একটা।’ অর্কের প্রশংসা না করে থাকতে পারল না রিয়াদ।
‘আসলেই রে! যেমনে যেমনে কাজ করেছিস – তাতে তো মাঝে মাঝে মনেই হয়েছে যে তুই আসলেই কোন গোয়েন্দা। তুই গোয়েন্দাগিরিতে নামলে ভাল নাম করা গোয়েন্দা হইতে পারবি।’ রিয়াদের সাথে অর্কের প্রশংসায় যোগ দিল সাকিবও।

বন্ধুদের কাছ থেকে এরকম সরাসরি প্রশংসায় লজ্জা পেয়ে গেল অর্ক। লজ্জায় এড়ানোর জন্য জোর গলায় বলল, ‘দেখ আসলাম খাওয়ার জন্য। আর সেই কখন থেকে তোদের সাথে বকবক করে চলেছি।’ ওয়েটারের দিকে ফিরে বলল, ‘ঐ মিয়া! সেই কখন তিনটা কোক অর্ডার করলছিলাম; কোক কই?’

অর্ককে এমনভাবে বলতে দেখে হেসে দিল বাকি দুইজন। তাদের সেই হাসির সাথে যোগ দিল অর্কও।

---X---

[অনেক আগের কাঁচা হাতের লিখা। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। একটা ফ্রেন্ডের অনুরোধে ঢেকি গিলেছিলাম। তিন গোয়েন্দার অনুসরণ করে লিখেছে, লেখাটায় তার ছাপ তাই বেশি।]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: অসাধারন। একদমে পড়ে ফেললাম। আগের পর্ব থেকেও এটা ভালো হয়েছে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এটা ফিনিশিং তো। ফিনিশিং ভালো হওয়াটাই তো স্বাভাবিক! :-B

ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য। আমি তো ভেবেছিলাম, এটা কেউ পড়বেই না।

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৯

দিগন্ত জর্জ বলেছেন: আপনার চিন্তা আর জ্ঞানের গভীরতার প্রশংসা না করে পারছি না। প্রতিটা লাইনেই থ্রিলড হচ্ছিলাম। এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। ব্লগে এসে প্রথমেই আপনার প্রোফাইল ভিজিট করে একটা লেখা পড়াটা নেশার মত হয়ে গেছে। আপনার লেখা পড়ার পর প্রথম পাতায় যাই। একে একে আপনার সবগুলো লেখাই পড়া প্রায় শেষ। আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। অসম্ভব ভালো লাগলো। শুভকামনা আপনার জন্য।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এইটা তো আমার জন্য অনেক বড় এক পাওয়া। লিখতে যে পারি - আমি এরকমটাও মনে করিনি কখনো। সেই দিক থেকে আপনার মত ফ্যান পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপারই। যারা লেখালেখি করে - তাদের একটা ড্রিমই থাকে এইটা।

নতুন লেখা একটা লিখেছি। তবে সেটা অনলাইনে মনে হয়না প্রকাশ করা হবে।

ইনশাল্লাহ চেষ্টা করব নতুন কোন লেখা প্রকাশ করতে। সামনে পরীক্ষার জন্য লেখা একটু কমিয়ে দিয়েছি।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০

দিগন্ত জর্জ বলেছেন: সামনে পরীক্ষার জন্য লেখা একটু কমিয়ে দিয়েছি। । ভালো একটা ডিসিশান। আসন্ন পরীক্ষার জন্য শুভকামনা। মোটিভ-এর শেষ পর্বের অপেক্ষায় আছি, এটা আবারো মনে করিয়ে দিলাম। পরীক্ষার পর সময় সুযোগ হলে প্রকাশ কইরেন।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: মোটিভটা নিয়ে আসলে অনেক প্ল্যানই ছিল। তেমন কোন আকর্ষণীয় কিছুই নেই গল্পটায় - শুধু ফ্যাক্টস অ্যান্ড লজিক দিয়েই লিখা হচ্ছে। সেই জন্যই আঁটকে গেছি।
পরীক্ষা না থাকলে ঐটা নিয়ে ভেবে শেষ করে ফেলতাম।

ধন্যবাদ আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি সত্যি কথা যেটা - ভুলেই গিয়েছিলাম ঐটার কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.