নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাবনা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪৪

ঘুমে ঢুলছি। ঘুমটা বেশ জ্বালাচ্ছে। চা খাওয়া দরকার। কড়া লিকারের চা।
কিন্তু এতরাতে আমাকে চা বানিয়ে দিবে কে?

কারো আশা করে লাভ নেই। নিজেকেই বানিয়ে নিতে হবে।

রান্নাঘরে খুটুর-মুটুর শব্দ হচ্ছে। চা বানাচ্ছি আমি। চা বানাতে খুটুর-মুটুর শব্দ হবে কেন? কারণ, বিশ্বসেরা রাঁধুনী টমি মিয়ার সাগরেদ কি না আবার আমি!!!

মগভর্তি চা নিয়ে রুমে ফিরে আসলাম। চেয়ারে বসে আয়েশি ভঙ্গিতে চুমুক লাগালাম মগে। অতি আরামেই কি না, চোখটা লেগে গেল একটু সময়ের জন্য। ঝাড়া দিয়ে চোখ খুললাম।

কিন্তু!
এ কী!
রুমে এত অন্ধকার কেন? আমার ডেস্কটপের মনিটরটাই বা গেল কই?

চোখ সয়ে আসল। অন্ধকার না রুমটা, একটা অনুজ্জ্বল সবুজাভ আলো আছে। তবে আলোটা খুবই ক্ষীণ। কিন্তু আসছে কোথা থেকে আলোটা? আমার রুমে তো, সবুজ আলো আসার কোন উৎসই নেই।

মনিটরটা গায়েব।
সেখানে একটা চেয়ার দেখা যাচ্ছে। চেয়ারে বসে আছে কেউ। পূর্ণ বয়স্ক একটা ছেলে।

আলোটা ধীরে ধীরে চোখে সয়ে আসছে। ছেলেটাকে ক্ষীণ আলোতেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। মুখটা একদম শিশুর মত। মুখ থেকে কৈশোরের ছাপটা এখনো যায় নি মনে হচ্ছে। চোখে নিষ্পাপ চাহুনী। কিন্তু কে এই ছেলে?

'কে? কে তুমি?'
'আমাকে চিনো না?'
'না! কে তুমি?'
'আমি একজন কিলার।'
'কিলার?'
'হ্যা! সিরিয়াল কিলার!'
'সিরিয়াল কিলার?'
'হ্যা!'
'সিরিয়াল কিলার তো, সিরিয়ালি দাঁড়িয়ে খুন করতে থাকো না! আমার এখানে কী?'
'কাদেরকে খুন করবো?'
'সিরিয়াল কিলার তুমি আর আমাকে জিজ্ঞেস করছো কাদেরকে খুন করবা? তুমি জানো না?'
'না! জানি না। আমার ভিক্টিম কারা হবে সেটা তো তুমি ঠিক করো নি এখনো।'
'আমি ঠিক করে দিব?'
'হ্যা! তুমি না করলে তো আমি ভিক্টিম খুঁজে পাবো না কোনদিনই।'
'মাথা খারাপ নাকি?'
'না! মাথা একদম ঠিকঠাক। তবে তোমার কারণে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।'
'কেন? আমি কী করেছি?'
'আমার ভিক্টিমদেরকে এখনো ঠিক করছো না। একবার বলছো, তরুণীদেরকে ভিক্টিম করতে - আরেকবার বলছো - বুড়ো কর্মক্ষমহীনদের ভিক্টিম করতে।'
'কী?'
'হ্যা! আরো সমস্যায় রেখেছো তুমি আমাকে।'
'আরো? কী সমস্যায় রেখেছি?'
'আমি কিভাবে খুনগুলো করবো সেটাও ঠিক করে দাও নি! একবার বলছো, চাকু দিয়ে ভিক্টিমদের হার্টটা খুলে নিয়ে যেতে। আরেকবার বলছো, গুলি দিয়ে মাথায় তিনটে ফুটো করে দিতে। আরেকবার বলছো, ভিক্টিমদেরকে কেঁটে টুকরো টূকরো করে দিতে।'
'ভয়ংকর ব্যাপার! এগুলো আমি বলেছি?'
'হ্যা! শুধু বলেছো। সিদ্ধান্ত দাও নি!'

অদ্ভুত ঘটনা। সিরিয়াল কিলার আমার সামনে বসে আছে। না এটা অদ্ভুত না। কিন্তু যা বলছে - সেটাকে তো ভূত-অদ্ভূত সব ধরণের ঘটনাই মনে হচ্ছে। কিলার মানুষ। কোনরকমে ঠান্ডা করে ভাগাতে পারলেই হয়।

কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেয়েছি মনে হল। তাকাতেই চমকে উঠলাম।
মধ্যবয়স্ক এক অচেনা লোক। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা।

'আপনি?'
'হ্যা! আমি।'
'আপনি কে?'
'আমি হামিদ মির্জা।'
'হামিদ মির্জা? এই নামে কাউকে তো আমি চিনি না।'
'আমি লেখক হামিদ মির্জা।'
'এই নামের কোন লেখককেও আমি চিনি না।'
'চিনছো না? তুমিই তো আমাকে লেখক বানিয়েছো।'
'আমি? আমি লেখক বানিয়েছি?'
'হ্যা! তুমি বানিয়েছো।'
'কিভাবে? লিখেন আপনি, লেখক তো নিজে থেকেই হয়েছেন। আমি কিভাবে বানালাম? আপনার লেখাগুলো কি আমি লিখে দিয়েছি?'
'না। ওগুলো আমিই লিখেছি। আর আমাকে দিয়ে লিখিয়েছো তুমি।'
'আমি লিখিয়েছি? আপনি লেখক, এইসব কী ধরণের অযৌক্তিক কথা বলছেন?'
'অযৌক্তিক কিছু বলছি না। তুমি আমাকে বানিয়েছো। আর আমি লেখাগুলোকে লিখেছি। সেই হিসেবে তুমিই আমাকে দিয়ে লিখিয়েছো।'
'বুঝলাম না।'
'আচ্ছা! বুঝাচ্ছি। তুমি...'
'বাদ দেন। আপনাকে এখন দুঃশ্চিন্তায় দেখাচ্ছে কেন? এইটাও কি আমিই দিয়েছি আপনাকে?'
'হ্যা!'
'অদ্ভুত! আপনার সবই তো দেখি আমারই দেওয়া। তা দুঃশ্চিন্তাটা দিলাম কিভাবে?'
'আমাকে এখন রাইটার্স ব্লকে রেখেছো। লিখতে দিচ্ছো না।'
'লিখতে দিচ্ছি না? এইটাই সমস্যা? যান, সমাধান দিচ্ছি। লিখেন গিয়ে। ব্লক থেকে মুক্ত করলাম আপনাকে।'
'এইভাবে তো সমাধান হবে না।'
'তাহলে কিভাবে সমাধান হবে?'
'আমি কী লিখবো? সেটা নিয়েও তোমাকে ভাবতে হবে।'
'লিখবেন আপনি আর ভাবব আমি?'
'হ্যা! তুমি না ভাবলে তো আমি লিখতে পারব না।'

আজব কান্ড!!!
এই হামিদ মির্জা নামের এই লেখকটা এইসব কী বলছে?

সিরিয়াল কিলারটার দিকে মনে হল। সামনের দিকে তাকালাম। দরজার দিকে নজরটা আঁটকে গেল। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব একটা সুন্দর না। কে জানে সুন্দরই হয়তো, সবুজ বাতিতে চোখে পড়ছে না। তবে, মুখের হাসিটা অনেক সুন্দর। হাসিটা যে কোন বর্ণের উজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল আলোতেও সুন্দরই দেখাবে। আস্তে আস্তে কাছে আসছে মেয়েটা। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। চোখে দুঃশ্চিন্তা, কিন্তু মুখে হাসি। কি অদ্ভুত কম্বিনেশন! দুঃশ্চিন্তার সাথে সুন্দর হাসি।

তবে বুঝে গেছি, এই মেয়ের দুঃশ্চিন্তার কারণও হয়তো আমিই। আগের দুইজনের সাথে কথা বলে তো এটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

'বল! তোমার দুঃশ্চিন্তার কারণ কী?'
'আপনি।'
'এটা তো জানা কথাই। অজানা কিছু বল?'
'আপনি খুব খারাপ।'
'হ্যা জানি এটাও। সিরিয়াল কিলার আর লেখককে যে দুঃশ্চিন্তায় রাখে সে কখনো ভাল হতে পারে না। আরো নতুন কিছু বল?'
'আপনি আমাকে একটা ছেলের পিছনে ঘুরাচ্ছেন কেন? সেটাও আবার এমন ছেলে যে আমাকে পাত্তাই দেয় না।'
'বল কী? যে কাজ পৃথিবীর অসাধ্য কাজগুলোর একটা, সেটা আমি করিয়ে ফেলেছি? আসলেই খারাপ কাজ করে ফেলেছি।'
'হ্যা!'
'কিন্তু করে যখন ফেলেছি, এখন তো আর এটাকে ফেরানো যাবে না। তোমাকে ঐ ছেলেটার পিছনে ঘুরতেই হবে।'
'আমি ঘুরব। তবে, ছেলেটার আমাকে পাত্তা দিতে হবে।'
'আচ্ছা আমি বলে দিব ছেলেটাকে। নাম কী ছেলেটার?'
'নাম জানান নি আপনি আমাকে।'
'নাম না জেনেই ঘুরছো? বেশ বেশ।'
'হ্যা! আপনার দোষ এটা।'
'দোষ মানছি। তা তোমার নাম কী? ছেলেটাকে পেলে তো তোমার নামটা বলতে হবে।'
'আমার নামটা আপনি জানেন। আপনিই দিয়েছিলেন আমাকে নামটা।'

অ্যাম আই ইন অ্যা সেল অফ পাবনা মেন্টাল হসপিটাল?
মনে তো হচ্ছে। নাহলে, এইসব উদ্ভট মানুষ কোথা থেকে আসছে? তাদের কথাবার্তার আগামাথাও কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ করেই ঘরে দমকা হাওয়া আসা শুরু করেছে। শীতের রাতে দমকা হাওয়া?
কাঁপুনিময় অবস্থা!

কাঁপতে কাঁপতে যা দেখলাম, তাতে আমার কাঁপুনি একদম থেমে গেল। কুন্ডলী পাঁকিয়ে একগুচ্ছ বাতাস এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
এটা দেখে কাঁপুনিই পাওয়ার কথা। তবে, বীজগণিতের মাইনাসে মাইনাসে প্লাস সূত্রের মত, শীতের কাঁপুনি আর ভয়ের কাঁপুনিতে পুরো স্থির হয়ে গেছি।

কুন্ডলীটা থামতে দেখলাম, এক বিরাট আকৃতির দৈত্য। ঐটাও দুঃশ্চিন্তায় আছে। আমার কা
কী মানুষ আমি! দৈত্যকে পর্যন্ত দুঃশ্চিন্তায় রেখেছি।

'দৈত্য মশাই! আপনার সাথে কী করছি আমি?'
'প্রভু! আপনি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু কোন কাজ প্রদান করেন নাই।'
'কী কাজ করতে চাস তুই?'
'প্রভু! আপনার যাহা বলিবেন তাহাই।'
'যা বলব তাই করবি?'
'জ্বে আজ্ঞে প্রভু!'
'দাঁড়া তোরে কাজ দিতেছি।'

কী কাজ দেওয়া যায় দৈত্যকে। ভাবছি।
ভাবনার মাঝেই ব্যাঘাত ঘটাল মাঝারি গড়নের একটা লোক। এখন আর অদ্ভুত লাগছে না লোকটাকে দেখে। রাতভর তো একই ব্যাপারই দেখছি।

তবে লোকটা অন্যদের থেকে একটু আলাদা। যথেষ্ট বুদ্ধিমানও মনে হচ্ছে। অন্য সবার চোখে দুঃশ্চিন্তার ছাপটা দেখলেও এই লোকটার চোখে নাই। যাই হোক, এই লোকটার সাথে তাহলে আমি কোন অন্যায় করি নি।

'অন্য সবার মত আপনাকে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত না দেখে বেশ ভাল লাগল। কিন্তু একটা প্রশ্নও জাগলো?'
'কী প্রশ্ন?'
'আপনি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত নন কেন?'
'আমাকে আপনি ঐভাবেই তৈরি করেছেন। দুঃশ্চিন্তা না করার মত করে।'
'আপনাকেও আমি তৈরি করেছি? তা আপনি কে?'
'আমি গোয়েন্দা। সকল রহস্যের সমাধান করার জন্য তৈরি করেছেন আমাকে।'
'গোয়েন্দা?'
'হ্যা! ডিটেকটিভ......। নাম রাখেন নি এখনও।'
'নাম রাখি নাই?'
'হ্যা!'
'আপনিও দুঃশ্চিন্তায় আছেন?'
'হ্যা!'
'কেন?'
'আমাকে রহস্য সমাধানের জন্য তৈরি করেছেন। কিন্তু কোন রহস্যই দেন নি এখনো।'
'রহস্য চান?'
'হ্যা!'
'সবাই বলছে, আমি নাকি তাদের তৈরি করেছি। কিন্তু কিভাবে? এই রহস্য উদঘাটন করুন!'
'এটা তো সহজ ব্যাপার।'
'তাই? বলেন তো, এর রহস্যটা কী?'
'এদের সবাকেই আপনি তৈরি করেছেন। আপনার মস্তিষ্কের ভিতরে। এক এক কোণায় কোণায় এদের সৃষ্টি।'
'আমার মস্তিষ্কে?'
'হ্যা! এরা সবাই আপনার সৃষ্ট চরিত্র। আপনি এদেরকে নিয়ে ভাবেন। এইভাবেই ওদের সৃষ্টি।'

গোয়েন্দার কথাটা আজব লাগছে পুরোপুরি।
সবাইকে আমি সৃষ্টি করেছি? আমার মস্তিষ্কের কোণে কোণে এদের উৎপত্তি?

যত্তসব পাগুলে প্রলাপ!

হাতে তখনো চা ভর্তি মগটা। অনেক সময় কেটে গেলে চা এখনও গরমই আছে। মাথার ভিতরটা ঘোলাটে লাগছে। ঘোলাটে ভাবটা দূর করার জন্য চুমুক দিলাম মগে।

চুমুক দেওয়ার সাথে সাথেই সব গায়েব। সামনে আবার মনিটর। ঘরের আলোও ফিরে এসেছে।

আমি তাকিয়ে আছি মগভর্তি চায়ের দিকে।
এরপর থেকে কড়া লিকারের চা বানালেও চাপাতা আরেকটু কম দিতে হবে।

বিঃদ্রঃ লেখাটা গত শীতের লেখা। তখন বেশ কিছু ক্যারেক্টার নিয়ে ভাবছিলাম। মাঝে মাঝেই ক্যারেক্টারগুলোর ভাবনা এসে মাথায় হাজির হত। সেটা থেকে এক ভোরে এই লেখার জন্ম।
খুব ভাল কিছু না। কিন্তু যারা লেখালেখি করেন, তাদের জন্য এভাবে ভাবাটা মজারও হতে পারে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২২

বনমহুয়া বলেছেন: ভালৈ ভ্রান্তিতে আছেন দেখা যায়।

আপনার জন্য কষ্ট করে আমার নেক্সট পার্ট লিখলাম।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:১১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ভ্রান্তিই জীবন - ভ্রান্তিই মরণ...

দাঁড়ান এক্ষুণি পড়ছি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.