নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃদ্ধাশ্রম

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৪

নতুন কিছু লেখার ইচ্ছা বা সময় কোনটাই পাচ্ছি না। তাই আবারো পুরোনোটা দিয়েই কাজ চালাচ্ছি। দেড় বছর আগের লেখা। তখন শুরু করেছি মাত্রই লেখালেখিটা ভালভাবে। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।

অফিসের অর্থব্যায়ের হিসাবটা কোনমতেই মিলাতে পারছে না আরিফ। ফাইল হাতে নিয়ে পড়ছে আর মাথা চুলকাচ্ছে। যে কোন উপায়েই হোক হিসাবটা মিলাতে হবে।
এমন সময়েই ফোন বেজে উঠল আরিফের। ফোন হাতে কলারের নাম দেখে বিরক্ত হল সে।
তার স্ত্রী শায়লা ফোন করেছে। নিশ্চয় কোন না কোন অযথা বিষয় নিয়ে বকবক শুরু করবে। এমনিতেই কাজের অতিরিক্ত চাপ, তার উপর এই অযথা বকবক যে কারোরই বিরক্ত লাগবে।
অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করল আরিফ। কারন না ধরলে তো আবার এটা নিয়েও বকবক শুরু হবে শায়লার।
‘হ্যা বল কি বলবা?’ দায়সারা ভাবে বলল আরিফ।
‘এমন ভাবে বললা কেন? আমি কি ফোন দিয়ে বিরক্ত করলাম নাকি?’
‘না। বিরক্ত হওয়ার কি আছে?’ এইবার মধুর সুরে বলল।
‘তাহলে ঐভাবে বললা কেন?’
‘কাজের চাপে বলে ফেলেছি। এখন বল কি বলতে ফোন দিলা?’
‘আমি যখনই ফোন দেই তখনই তুমি এইভাবে কথা বল। আমি কি খুব খারাপ নাকি যে আমার সাথে ভাল ভাবে কথা বলা যাবে না?’
‘আরেহ! তা হবে কেন? আচ্ছা বাদ দাও, এই নিয়ে পরে কথা বলব। এখন রাখি কাজের চাপ খুব বেশি।’ অযথা ঝামেলা এড়ানোর জন্য বলল আরিফ। ফোন রেখে দেওয়াই উত্তম হবে এখন।
‘আরেহ! আরেহ! যা বলতে চেয়েছিলাম তাই তো বলা হল না। তোমার মা হুট করে বাসা এসেছেন। আসার পর থেকেই পাগলামী শুরু করে দিয়েছেন।’
মা এসেছে শুনে বেশ অবাক হল আরিফ, ‘মা এসেছে? এই কথাটা আগে বললে কি ক্ষতি হত? আর পাগলামী করছে মানে? তুমি তো মাকে দেখতেই পারো না, মা যাই বলুক ঐটা তোমার কাছে পাগলামীই মনে হয়।’ শেষ কথাটা বলার সময় শায়লার প্রতি ঘৃনা নিয়েই বলল সে।
‘আগে কথা তো পুরাটা শুনবা। মা এসেই বলা শুরু করে দিয়েছেন উনার ছেলে কই! উনার ছেলে কই! অবশ্য আমি বলেছি যে তুমি অফিসে।’
‘এইটাই মায়ের পাগলামী?’ শায়লার কাছ থেকে মায়ের পাগলামীর বিবরনের কথা শুনে শায়লার প্রতি ঘৃনার পরিমান আরো বাড়ল তার।
‘পাগলামী নয়তো কি? তোমাকে এক্ষুনি বাসায় আসতে বলার জন্য ফোন করে ছিলাম, কিন্তু তুমি তো ব্যস্ত। আসতে পারবে না। তোমার আসার আগ পর্যন্ত এই পাগলামী সহ্য করা লাগবে আমাকে।’
আর কোন কথা না বলে সোজা ফোন কেটে দিল আরিফ। মেজাজ গরম হয়ে গেছে তার।
অবশ্য তার মা বাসায় এসেছে ভেবে তার মনটা আবার খুশিতে ভরে উঠল।
দীর্ঘ সাত বছর তার মাকে সে দেখে না। সেই সাত বছর আগে বৃদ্ধাশ্রম নামক খাচায় মাকে রেখে এসেছিল। আসার সময় মায়ের কান্নাভরা মুখটা দেখে এসেছিল। এরপর আর দেখে নি।
একটা খোঁজও নিতে পারে নি সে মায়ের। শুধু কয়েক মাস অন্তর অন্তর আশ্রমে তার মায়ের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছে কুরিয়ার করে।
লে হিসেবে আরিফ তার মায়ের জন্য এইটুকুই করেছে। যদিও সে কখনোই চায় নি তার বৃদ্ধাশ্রমে থাকুক, কিন্তু শায়লার অতি যন্ত্রনায় মাকে শান্তিতে রাখার জন্যই রেখে আসতে হয়েছিল।
তার আর শায়লার বিয়ের তিনমাসও তখন হয় নি, শায়লার চোখে আরিফের মা এক প্রকার বিষ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
আরিফের অনুপস্থিতিতে শায়লা নাকি তার মাকে নির্যাতনও করত। এমন খবর পেয়ে আরিফ শায়লার নামে নারী নির্যাতনের মামলাও করতে চেয়েছিল।
কিন্তু দেশের আইনে নারী নির্যাতন বলতে শুধু স্ত্রী বা অল্প বয়সী মেয়েদের পুরুষ কর্তৃক নির্যাতনই সংজ্ঞায়িত, মাও যে নারী সমাজেরই একজন সেইটা আইন প্রনয়নকারীরা বেমালুল ভুলে গেছে।
আরিফের মামলাটা ধোপে টিকে নি তাই। তাই মাকে শান্তির জন্য রেখে আসতে হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রমে।
এইটা না হয় বুঝা গেল সে কিছু করতে চেয়েছিল মায়ের জন্য কিন্তু করতে পারে নি। কিন্তু সাত বছরে একবারও মাকে দেখতে যায় নি, এইজন্য সে কি অজুহাত দিবে?
দেখতেও যেতে পারে নি এই শায়লার কারনেই। আরিফ যতবারই মনোনিবেশ করত তার মাকে দেখতে যাবে, ততবারই শায়লার শপিং করার ভূত চাপত মাথায়।
শায়লাকে তো কিছু বলতেও পারে না। কারন কিছু বলতে গেলে ঐ কথিত নারী নির্যাতনের মামলায় পড়তে হবে আরিফকে। তাই, সাত বছরে মায়ের চেহারাটা আর দেখাও হয়নি।
এমনভাবে চলতে চলতেই আরিফের অনূভূতিগুলো কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। তার মা মরে গেছে না বেঁচে আছে সেইটা জানার অনুভূতিও তার হারিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এতবছর পর মা আবার তার বাসায় এসেছে। অনুভূতিগুলো ফিরে আসতে শুরু করল তার একটু একটু করে। কাজের চাপের তোয়াক্কা না করে ছুট লাগাল মাকে দেখার জন্য।
তবে মনে মনে এইটাও ঠিক করে রেখেছে, শায়লা যদি আজ উল্টা-পাল্টা কোনকিছু তার মায়ের সাথে করে তাহলে শায়লার কপালে দুর্গতি আছে।
*
বাসায় এসে খানিকটা অবাক হল মাকে দেখে আরিফ। ইনি অবশ্যই মা, তবে তার মা এই মহিলা না।
সত্তর উর্ধ্ব এক বৃদ্ধা এই মহিলা। চোখে বোধহয় ছানি পড়ে গেছে। চোখে ঠিকমত দেখতে পারেন না। হাতে একটা কাগজ দেখতে পেল আরিফ। ঐ বৃদ্ধা যক্ষের ধনের মত কাগজটাকে ধরে রেখেছেন।
আরিফকে বাসায় আসতে দেখে এগিয়ে আসল শায়লা। এসেই বলা শুরু করল, ‘যাক এলে তাহলে! যাও এখন তোমার মাকে সামলাও।’
শায়লার কথা শুনে আরিফের মাথায় রক্ত উঠে গেল। ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল শায়লার গালে। একটা না, পরপর কয়েকটা। যতক্ষন হাত চলল ততক্ষন মেরেই গেল। ‘তুমি খারাপ তা আমি বিয়ের পরদিনই বুঝে গেছি। কিন্তু এতটা বুঝতে পারি নি। আমার মাকে তুমি দেখতে পেতে না জানি কিন্তু মায়ের চেহারাও যে তুমি ভুলে যাবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। অবশ্য তোমার মত মেয়ের পক্ষে ভোলাটা স্বাভাবিকই। তুমি তো মানুষ না, মানুষের আদলে থাকা সাক্ষাৎ ডাইনি।’
আরিফের আচরনে থতমত খেয়ে গেল শায়লা। হঠাৎ যে আরিফ এতটা রেগে যাবে আগে বুঝতে পারে নি।
আরিফের অনবরত থাপ্পড় খেয়ে মাথায় ঝিম লেগে গেছে। কি বলতে হবে বুঝতে পারছে না। এখন আবার একটু ভয়ও পাচ্ছে কথা বলতে। যদি কথা বললে আবারও তাকে মেরে বসে আরিফ। তারপরও মিনমিনে গলায় বলল, ‘তাহলে ইনি কে?’
‘হবে হয়ত আমারই মত বউ এর হাতের কোন কুলাঙ্গার ছেলের মা।’ খেকিয়ে উঠে বলল আরিফ।
আরিফের গলা শুনে বৃদ্ধা মহিলা হাতড়ে হাতড়ে তাদের রুমে আসলেন। বললেন, ‘কিরে খোকা! আসলি কখন তুই? বউমা না বলল তুই অফিসে?’
বৃদ্ধা মহিলার কথা শুনে আরিফ আর বলতে পারল না যে সে উনার ছেলে না। এমনিতেই বৃদ্ধা মহিলা অনেক দুর্বল – এই কথা শুনলে যে কোন মুহুর্তে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে। তাই বলল, ‘মা তুমি আমার বাসায় এসেছ শুনে কি আর আমি অফিসে থাকতে পারি? হাজার হোক আমার স্থান তো এখনো তোমার কোলেই।’
‘ঢং করিস না খোকা। এসেই তো বউমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলি। যাওয়ার সময়ও তো তোদের এই ঝগড়াই দেখে গেলাম।’ অভিমানী সুরে কথাটা বললেন বৃদ্ধা মহিলা।
‘এই সব ঝগড়ার কথা বাদ দাও তো এখন। অনেকদিন তোমার সাথে গল্প করি না। আজকে আস তোমার সাথে গল্প করি। তোমার সাথে গল্প করাটা এতদিন অনেক মিস করেছি।’ বৃদ্ধা মহিলার অভিমান কাটানোর জন্য বলল আরিফ।
‘এতই যদি মিস করতি তাহলে আমাকে কেন রেখে আসলি ঐ পঁচা জায়গায়? কেন আমাকে কোনদিন দেখতেও গেলি না?’ বৃদ্ধার অভিমান কমেনি, আরো বাড়ছে ক্রমেই। স্বাভাবিক ব্যাপার। অভিমান করবেই।
‘ভুল করেছি মা। তোমাকে রেখে আসা ঠিক হয় নি। অবুঝ ছিলাম আমি তখন। জানই তো তোমার ছেলে সব সময়ই অবুঝ। মাফ করে দাও মা।’ শেষের কথাটা বলতে গিয়ে আরিফের গলা কান্নার তোপে প্রায় আটকে যাচ্ছিল। এই বৃদ্ধাকে হয়ত সে মাফ করে দেওয়ার জন্য সহজেই বলতে পেরেছে – কিন্তু নিজের মাকে তো আর এত সহজে সে কথাটা বলতে পারবে না।
আর সে বলবেই বা কোন মুখে?
‘কাঁদার কি হলরে খোঁকা? ছেলের সব দোষই মা মাফ করে দেয়। তবে এইবার এত সহজে মাফ করব না। একটা শর্তে মাফ করতে পারি।’
‘কি শর্ত মা?’
‘আমাকে আর কখনো ঐ জায়গায় রেখে আসতে পারবি না। ঐ জায়গাটা আমার ভাল লাগে না।’
‘এইটা তোমারই বাসা মা। এইখানে তুমি যা বলবে তাই হবে। দরকার পড়লে তুমি আমাদেরকে যে কোন জায়গায় রেখে আসতে পার।’
আরিফের এই কথাটায় বৃদ্ধা মহিলার মুখে হাসি ফুটে উঠল। জড়িয়ে বুকে টেনে নিল আরিফের। মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠল আরিফের। হোক না সে কারো না কারো মা, কিন্তু মা তো।
‘মা বাসা চিনে আসলে কিভাবে?’ আরিফ জিজ্ঞেস করল বৃদ্ধা মহিলাকে।
‘ঐ জায়গায় থাকতে আর ভাল লাগছিল না। এসে পড়তে চাইছিলাম। ঐখানের সবাইকে বললাম। তারাই এসে দিয়ে গেল।’
‘ঠিকানা জানলে কিভাবে?’
‘তুই তো ঠিকানা লিখে একটা কাগজ দিয়ে এসেছিলি আমার হাতে। এখন ভুলে গেছিস?’ বলে বৃদ্ধা তার হাতে থাকা কাগজটা দেখাল আরিফকে।
কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল বাসার ঠিকানা, রোড নং, এলাকার নাম সবই ঠিক আছে – শুধু উপরে লেখা নামটা তার নয়। নামটা সে বাসাটা যার কাছ থেকে কিনেছিল তার। অবশ্য খুব দুর্দশায় পড়েই বাসাটা বিক্রি করেছিল বৃদ্ধা মহিলার আসল ছেলে।
কারন মাকে কষ্ট দিয়ে তো আর কেউ আরামে থাকতে পারে না। তার বিপদ সবদিক দিয়ে লেগেই থাকে। সেই লোকেরও এমন বিপদে পড়েই তার হাতে গড়া বাসাটা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল।
পরে যট্টুক জানে সড়ক দুর্ঘটনায় সেই লোকটি পুরো পরিবার সহ মারা গেছে। তারমানে এই মহিলার আর আপন বলতে কেউ আর নেই।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আরিফ। এই বৃদ্ধাকে সে নিজের কাছেই রাখবে।
সাথে আরেকটা সিদ্ধান্তও নিল। শায়লার হাত ধরে টান দিয়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠাল।
শায়লা যদিও কিছু বুঝতে পারছে না। তার মাথা এখনো ঘোলাটেই আছে। আরিফকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাচ্ছে না এখন।
‘কোথায় যাচ্ছি জানতে চাইলে না?’ আরিফ নিজে থেকেই বলল শায়লাকে।
শায়লা উত্তর দেওয়া নিয়েও ভয় পাচ্ছে এখন। উত্তর দিলে কি আরিফ আবার রেগেই যায় কিনা! না দিলেও তো রেগে যাবে দেখে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছি?’
না রাগে নি আরিফ। বরং নির্বিকারভাবে উত্তর দিল, ‘গেলেই দেখতে পারবে।’
*
অস্থায়ী ঘরটাই গোছগাছ করছিলেন রাহেলা বেগম। উনি জিনিসপত্রের এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকা পছন্দ করেন না।
উনার গোছগাছের কাজে বাধা পড়ল উনার কাধে কারো হাত পড়ায়।
হাতটা কার উনার বুঝতে কোন অসুবিধা হল না। কিন্তু বুঝেও পিছনে ফিরে তাকালেন না।
সাতটা বছর তিনি অপেক্ষা করেছেন কাধে হাতপড়ার। অপেক্ষায় থেকে অশ্রু ঝড়িয়েছেন। উনার অপেক্ষার আজ অবসান ঘটল। তিনি চাইলেই পারেন পিছন ফিরে হাতের মালিকটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু তিনি তা করলেন না। খানিকটা থমকে গিয়েই তিনি গোছগাছের প্রতিই মনোনিবেশ করলেন আবার।
‘মা! পিছন ফিরে একবার দেখ। না আমাকে দেখতে হবে না। আমিই দেখব শুধু তোমাকে। শুধু একবার পিছনে ফিরে তাকাও।’ বলে উঠল হাতের মালিক। আর পারলেন না রাহেলা বেগম। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেছেন। উনার চোখে কোন সমস্যা নেই – কিন্তু এই মুহুর্তে তিনি ঝাপসাই দেখছেন।
ফিরে তাকালেন। ছেলে আর ছেলের বউকে দেখতে পেলেন। ছেলেকে দেখেও না দেখার ভান করলেন।
এগিয়ে গেলেন ছেলের বউয়ের দিকে। ‘কেমন আছো বউমা? শাশুড়িকে কি একবারো দেখতে ইচ্ছে করল না তোমার?’ বলে ছেলের বউকে বুকে টেনে নিলেন। চোখে অশ্রু এসে গেছে।
এতক্ষন মাথা ঘোলাটে লাগছিল শায়লার। রাহেলা বেগমের জড়িয়ে ধরার পর তার ঘোলাটে ভাবটা কেটে গেল। চোখ দিয়ে তার ফোটায় ফোটায় পানি পড়া শুরু করল।
আরিফ তার সম্পর্কে ঠিকই বলেছিল তার সম্পর্কে। সে আসলেই কোন মানুষ না, মানুষের আকৃতিতে বসবাস করা এক ডাইনি সে। আরিফ কেন তাকে আরো আগে এই থাপ্পড় গুলো দিল না – সেইটা নিয়েই তার আফসোস। আগে দিলে হয়ত এই মমতাময়ী মায়ের আদর মাখা স্পর্শটা সে আরো আগেই পেত।
যে মহিলাকে সে দিনরাত এত অত্যাচার নির্যাতন করত, যেই মহিলার চেহারাই সে ভুলে গিয়েছিল – সেই মহিলা ঠিকই এত বছর পরেও তাকে চিনতে পারল, বুকেও টেনে নিল। এইসব ভেবে এখন একধরনের অপরাধ বোধ কাজ করা শুরু করে দিল শায়লার।
‘মা। আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ গলার সুরে কান্নার ছাপ স্পষ্ট।
‘তুমি কোন অপরাধ কর নি মা। সব মেয়েই চায় তার নিজের সংসারটাকে নিজের মত সাজাতে। তুমিও তাই চেয়েছিলে। আর মায়ের কাছে সন্তানের কোন অপরাধ থাকতে পারে না।’ হেসে জবাব দিলেন রাহেলা বেগম। যদিও উনার হাসিটা যে সত্যিকার না তা স্পষ্টই বুঝা যায়।
শায়লার সাথে এতক্ষন কথা বললেও আরিফের দিকে ফিরেও তাকান নি তিনি। উনার সমস্ত রাগটা আরিফের উপরই।
উনাকে এইখানে রেখে যাওয়ার জন্য না, উনাকে এখানে রেখে যাওয়ার পর যে উনাকে একবারও দেখতে আসেন নি – রাগটা সেই জন্যই।
রাগতস্বরেই আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কতক্ষন থাকবি তোরা এইখানে? চা-নাস্তা খেয়ে যাওয়ার সময় হবে তোদের?’
‘মা! চা-নাস্তা অবশ্যই খাব। তবে এইখানে না। বাসায় গিয়ে।’
‘ও আচ্ছা! আমি ভাবলাম হয়তো মায়ের হাতের চা টা অন্তত খাবি। কিন্তু বাসায় গিয়েই যদি খেতে চাস তাহলে তো আর আমার কিছু বলার নেই।’
‘কে বলল তোমার হাতের চা খাব না। তোমার হাতের চা ই খাব। তবে বাসায় গিয়ে তুমি চা তৈরি করে খাওয়াবে।’
‘নাহ! আমি তোর বাসায় আর যাব না। আমি এইখানেই ভাল আছি।’
‘মা! চল না! বড় একটা বাসা আছে আমার। কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাসাটা খালি খালি লাগে। তোমার জন্যই তো আমি এই বড় বাসাটা কিনেছি।’ মিথ্যে বলে নি আরিফ। মায়ের জন্যই সে বাসাটা কিনেছে, তার মায়ের নামেই।
কিন্তু এতদিন শায়লার ভয়ে মাকে ঐ বাসায় নিয়ে যাওয়ার সাহস সে পায় নি। আজ পেয়েছে। আজ সে নিয়েই ছাড়বে তার মাকে ঐ বাসায়।
রাহেলা বেগম প্রচন্ড আত্ন-অভিমানী মহিলা। আত্ন-সম্মান বোধটাও অনেক উনার। তিনি যাবেন না বলে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাহলে উনাকে কোনমতেই নেওয়া যাবে না।
যদিও উনার মন চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনার ছেলের বাসাটায় গিয়ে থাকতে, ছেলেকে প্রতিদিন অফিসে যেতে দেখতে, ছেলের বউকে সংসারের কাজকর্ম করতে দেখতে – তারপরও তিনি যাবেন না। কারন ছেলের বাসায় গেলেই আবার সেই পুরোনো ঝামেলা শুরু হবে, উনার ছেলে এইসব দেখে কষ্ট পেলেও কিছু বলতে পারবে না, একাকী নীরবে কাঁদবে।
ছেলের ঐ নীরবে কান্না তিনি সহ্য করতে পারবেন না। তাই যাবেনও না তিনি।
আরিফ অনেক জোরাজুরি করল মাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। মায়ের জেদের কথা তার ভালই জানা। সে জানে মা একবার কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে আর সেটা পরিবর্তন করানো যায় না।
তারপরও শেষবারের মত বলল, ‘মা! বাসায় গিয়ে আমি তোমাকে আমার চেহারাও আর দেখাব না। কিন্তু তোমার নাতিটা কি দাদীর মুখে গল্প না শুনেই বড় হবে? তুমি কি চাও তা হোক?’
নাতির কথা শুনে চকিতে ঘুরে দাড়ালেন রাহেলা বেগম। রেগে গিয়ে বললেন, ‘তোর ছেলে হয়েছে সেই কথাও কি তর আমাকে জানানোর কথা মনে থাকে না?’
‘মনে তো ছিলই মা।’ এইটুক বলে শায়লার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বলল, ‘এতদিন একটা ভীতির বলয়ে ছিলাম। সেই জন্যেই মনে থাকলেও তোমাকে জানাতে পারি নি। ক্ষমা করে দিও।’
‘তোর কোন ক্ষমা নাই। তোকে কোনদিন ক্ষমাও করব না। এখন আর বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি আমাকে বাসায় নিয়ে চল। আমার ছেলের ছেলেকে দেখার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না আমি।’ বলে রাহেলা বেগম নিজেই সবার আগে বের হয়ে আসলেন আশ্রম থেকে।
আর কোনদিন ফিরবেনও না এই স্থানে। বাকী জীবনটা নাতির সাথে রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প করেই কাটিয়ে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।
আরিফ বৃদ্ধা মহিলার হাতে থাকা কাগজটা হাতে নিয়ে একবার হাসল। এই কাগজটাই তাকে পরিপূর্ন ছেলের কাজ করতে সাহায্য করেছে। কাকতালীয় ঘটনাই হোক আর যাই হোক এই কাগজটাই তার মাকে আবার কাছে টেনে আনতে সাহায্য করেছে, তার স্ত্রীকে পরিবর্তন হতে বাধ্য করেছে – সর্বোপরি, ফিরিয়ে দিয়েছে তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া প্রশান্তিকে।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৪

বনমহুয়া বলেছেন: দুঃখজনক কিন্তু শায়লাকে মারামারি পছন্দ্ হলো না। :(

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: যাদের দোষ থাকে তাদেরকে এক-আধটা থাপ্পড় দেওয়াটায় তো খারাপ কিছুই নেই। ইট ক্যান হ্যাপেন ফর আইদার ওয়ান অফ দেম।

আর মাঝে মাঝে একটা-দুইটা স্ল্যাপ ভাল কাজেও লাগে। সেইটাই তো বলা হল। এতে তো অফেন্ডেড ফিল করার কিছুই দেখছি না।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০১

বনমহুয়া বলেছেন: তাইলে এর পরেরবার শায়লাকে দিয়ে আরিফকে থাপ্পড় দিতে ভুইলেন না।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৬

গেম চেঞ্জার বলেছেন: হালকা মাত্রার খাপছাড়া লাগলো। সবমিলিয়ে সুখানুভূতিই আছে। ভাল্লাগছে +

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আমার কাছে পড়েও বেশ খাপছাড়া লাগছে এখন। তবে সেই বাচ্চা কালের লেখা তো - খাপছাড়া থাকাই ভাল ছিল। ভুল থেকেই তো শিখবো।

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৭

গেম চেঞ্জার বলেছেন: রক্তিম ভাই। মজা লন। =p~

http://www.somewhereinblog.net/blog/rajpaira/30084724


http://www.somewhereinblog.net/blog/tanvirahmedodesk/30084683#c11141138

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ব্লগে কমেডিয়ান মাইনশের সংখ্যা বাইড়া গেছে ভাই!
হেরা এইডারেও ফেসবুক বানানোর তালে আছে।

পারলে দেখবেন, কয়দিন পরে পোষ্ট দিতেছে - চ্যাট করতে পারতেছে না ব্লগে, কেন এমন হচ্ছে? :-B

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:২৯

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: এরকম যাদের বউ তাদের চড় প্রথমেই মারা উচিত।
তাহলেই বউ ঠিক থাকে।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: নিজের ব্যক্তিত্বের উপর অটুট থাকলে কেউ ই মাথায় চেপে বসতে পারে না। আরিফের এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বই ছিল, শায়লা তাই চেপে বসতে পেরেছিল। আর আরিফ যখন ব্যক্তিত্ব পেল, তখন শায়লার জন্য এক থাপ্পড়ই যথেষ্ট।

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মা-বাবার যত ভুলই থাকুক, তাদের জাজমেন্টের ভার সন্তান করতে পারে না। মা-বাবাকে সম্মানের স্থানেই রাখতে হয়।
শায়লার তো অপরাধ আছেই,তার চেয়েও বেশি অপরাধ আরিফের। কারণ বৌয়ের ভয়ে ভালো মন্দের জ্ঞান সে হারিয়েছে যা সন্তান হিসেবে করা ঠিক না।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এটা ঠিক বলেছেন। মা-বাবা সবসময়ই উপরে থাকে।

এখানে শায়লা শুধু একটা মাধ্যম, অপরাধী কিন্তু আরিফই। বর্তমানে এরকম আরিফ অনেক আছে। সেজন্যেই বৃদ্ধাশ্রমগুলো এখনো আমাদের দেশে বহাল তবিয়াতেই আছে।

৭| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩

জুন বলেছেন: গল্পটা পড়লাম রক্তিম দিগন্ত। দুই মা নিয়ে কেমন জানি কনফিউসড হয়ে গেলাম। এখন কি আরিফ দুই মা নিয়েই আছে বাসায়? আর কিছু মেয়েদের দেখি শাশুড়িকে পাগল আখ্যা দেয়াটা মনে হয় সবচেয়ে সুবিধাজনক তাদের কাছে। স্কুলে আর পার্কে হাটতে গেলে বাচ্চা বাচ্চা মহিলা গার্জিয়ানদের কথা কানে ভেসে আসে। তাদের গল্পের প্রধান বিষয়বস্ত তাদের ছেলেপুলেদের মেধা,তাদের টিচার,স্কুল, আর শাশুড়িকে কি করে ঢিট করে রাখা যায় সে বিষয়ে একে অপরকে পরামর্শ বিতরন । এত বিশ্রি লাগে শুনতে।
বর্তমান সমাজ নিয়ে সাবলীল লেখা।
+

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: দুই মা কে কনফিউশনটা রেখেছি আসলে কে কেমন মানসিকতার সেটা বুঝার জন্য। এটা পাঠকের মানসিকতার উপর ছাড়া। যদি ভাল মানসিকতার হয়, তাহলে দুই মাকেই সে রাখবে। আর যদি খারাপ এবং লোক দেখানো ভাল মানসিকতা হয়, তাহলে নিজের মাকে রেখে বাকিজনকে বের করে দিবে।

সত্যিকার অর্থে আপু, মেয়েদেরকে পুরোপুরি দোষটা দেওয়া যায় না। দোষটা ছেলেদেরই বেশি থাকে। তারা যদি তাদের ব্যক্তিত্বটা ঠিকমত ফোঁটাতে পারতো, তাহলে মেয়েরা বেশি পরিমাণে কর্তৃত্বেও যেতে পারতো না - তাদের অধিকারও কোনটা ক্ষুণ্ণ হত না।
ব্যক্তিত্ব নেই দেখেই মেয়েরা বেশি বেশি করে তাদের অভাবের কথা বলতে পারে 'দুর্বলই তো, বেশি চাইলেই বা সে কী আর এমন করতে পারবে? থাকবে তো আমাকে নিয়েই' এমনটা ভাবতে পারে।

আমার মনে হয়, ছেলেরা আরেকটু কেয়ারফুল ও নিজেদের প্রতি সচেতন হলেই এসব এড়ানো সম্ভব।

৮| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৩

মিথুন আহমেদ বলেছেন: শায়লার মত মেয়েদের এরকম ভিটামিন মাঝে মাঝে প্রাপ্য । কিন্তু প্রচলিত নারী নির্যাতন মামলার গ্যাড়াকলে পড়ার ভয়ে অনেকে এই ভিটামিন প্রয়োগ করতে পারে না। ফলে সংসার জীবনে অনেক পুরুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: পুরুষদের মানসিকভাবে বিপর্যয় করানোর পিছনে দায়ী অনেকাংশেই শায়লার প্রতিবিম্বের মত নারীরাই। একটা থাপ্পড়ে নিশ্চয় নারী নির্যাতন মামলায় পড়তে হয় না। কিন্তু পুরুষদের বর্তমান যুগে একটা থাপ্পড়ই আবার পুরুষদেরকে একটা মানসিক নির্যাতনের মাঝে ফেলে দেয়। যার ফলে সবকিছুই উলট-পালট হয়ে যায়।

৯| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: সমাজের প্রতিচ্ছবিই তো আঁকেন লেখকরা!!

প্রার্থণা করি, সুন্দর হোক সমাজ।

অনেক ভালো থাকবেন ভাই।

অনিঃশেষ শুভকামনা।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৮

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, সুন্দর এই মন্তব্যটি করার জন্য।

১০| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। :)

১১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৬

বনমহুয়া বলেছেন: রক্তিমভাই

আমিও আজ শায়লা আরিফকে নিয়ে লিখছি। আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে। কিন্তু বউকে মারা ধরা লাইক করলাম না। বউ পিটানো কোনো ব্যাক্তিত্বের বা কৃতিত্বের লক্ষন না। আপনি আমার কমেন্ট পছন্দ করেন নাই বুঝছি। তবুও আপনার লেখাটা পড়েই এই লেখাটা মাথায় এলো। হাফ ক্রেডিট আপনারে দিলাম। আর এমন বউ শ্বাসুড়ির দ্বন্দ ও মনস্তত্ব তো অনেকখানেই দেখা যায়।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: বউ পেটানো ব্যক্তিত্ব বা কৃতিত্বের কিছু সেটা আমিও বলিনি। তবে সবার আগে নিজের মা। নিজের মায়ের জন্য লাশ ফেলে দিলেও কেউ খারাপ বলবে না।

বউশ্বাশুড়ির দ্বন্দ্ব সবখানেই আছে, তাই বলে কিন্তু এটা ঠিক কোন কাজ নয়। বউ শ্বাশুড়ির দ্বন্দ্বে ৯০ ভাগ সময়েই বউয়ের দোষটাই থাকে। এটা ব্যক্তিগত অভীক্ষার ফল।

সেইক্ষেত্রে আমি মনে করি, একটা থাপ্পড় খুব বড় একটা ফ্যাক্ট নয়। আমি আমার মায়ের জন্য যে কোন কিছু করতেই রাজি, যত যাই হোক - মা আমার কাছে সবার আগে। আমার প্রতিটা গল্পই আমার মাকে ডেডিকেট করা। কারণ, আমাকে অক্ষর-জ্ঞান আম্মুই শিখিয়েছে। তাই আমি লিখতে পারছি।

এরকম সব মা ই করে।

আর সব বউ না, কিছু কিছু বউ থাকে যারা এই মা কেই সরিয়ে দিতে চায়। তো, তাদেরকে তো বুঝিয়ে বললেও লাভ নেই - সেইক্ষেত্রে একটা-দুইটা থাপ্পড় তাদের প্রাপ্যই।

আর একটা কথা, আমার বাবা যদি আমার মাকে পেটায় - সেইক্ষেত্রে আমার বাবা কিন্তু কখনোই আমার কাছে হিরো হয়ে যাবে না। এটা নির্ভর করছে মানসিকতা ও সময়ের উপরে।

আপনার গল্পটি অবশ্যই পড়ে দেখব। হাফ-ক্রেডিটের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার হাফ-ক্রেডিটটাই লাইফে পাওয়া প্রথম ক্রেডিট আমার। বিশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: অপছন্দ বা পছন্দ না - আমি সবার ব্যক্তিগত ভিউকেই সম্মান করি। আমারটার সাথে না মিললে, হয়তো কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে - তাই জবাব দেই নি।

গল্পের থাপ্পড় দেওয়ার অংশটা আমার এক ফ্রেন্ডের অনুরোধেই দিয়েছি। সে নিজেও মেয়ে, তার যখন মনে হয়েছে- তাই দিয়েই দিয়েছি।

১২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৪

বনমহুয়া বলেছেন: চলেন কুরুক্ষেত্র করি। :)

কুরুক্ষেত্র শেষে সব ভুলে গেলেই চলবে।:)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: গতকাল থেকে আসলে কুরুক্ষেত্রে থাকতে থাকতে ব্লগে এসে কুরুক্ষেত্র করতে ইচ্ছে করছিল না। তাই সুন্দর করে স্কিপ করে গিয়েছি।

ব্লগে আর যাই করি, কুরুক্ষেত্র বানাবো না আমি। অন্তত একটা জায়গায় নীট অ্যাণ্ড ক্লিন থাকবো। গল্পটা ভালই লাগলো আপনার। এইটার উলটো।

১৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৭

বনমহুয়া বলেছেন: কোন কুরুক্ষেত্রে ছিলেন? পাণ্ডব আর কৌরবের মাঝে কোন দলে ছিলেন ?

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ছিল একজায়গায়। কাছের মানুষগুলো শেষ মুহুর্তে বেইমানী করে দল পালটে ফেলায় রেগে ছিলাম অনেকটা। তখনই গল্পটা পোষ্ট করি মাথা ঠান্ডা করার জন্য।

১৪| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: গল্পটা ভাল লাগল তবে শায়লাকে মারামারিটা একটু দুঃখজনক মনে হল । অবশ্য যাদের দোষ থাকে তাদেরকে এক-আধটু শাসন করাই যায় মামুলি থাপ্পড় দেওয়াটা আমাদের সমাজে পারিবারিক পর্যায়ে এখনো ততটা খারাপ বিবেচনা করা হয়না অনেক সময় ঘটনা ক্রমে এরকম হয়েই যায় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা মাত্রার খাপছাড়া অনুভুত হলেও গল্পটিতে বেশ সুখানুভূতিই আছে। গল্পটি পাঠে মনে হল নিজের ব্যক্তিত্বের উপর অটুট থাকলে কেওই মাথায় চেপে বসতে পারে না। শায়লার উপর আরিফের ব্যক্তিত্বের প্রাবল্যতা যখন আসল, তখন শায়লার জন্য এক থাপ্পড়ই যথেষ্ট বলে মনে হল । তবে সব কিছুর উপরে মা বাবার ভুমিকাটা কিন্তু অনেক গুরুত্ব পুর্ণ । দুই মায়ের আখ্যানটিও পারিবারিক দ্বিধা দন্ধ্য সৃজনে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় এটিও উঠে এসেছে গল্পটিতে সুন্দরভাবে । বর্তমান সমাজ নিয়ে সাবলীল লেখা। যদিও দুই মা কে নিয়ে কিছুটা কনফিউশন রয়ে গেছে আসলে কে কেমন মানসিকতার সেটা বুঝা বেশ কস্টকর । অবশ্য এটা সঠিকভাবে অনুধাবন করা পাঠকের নিজস্ব মানসিকতার বিষয় । তবে এটা সত্য যে পুরুষদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যয় করানোর পিছনে দায়ী অনেকাংশেই শায়লার মত নারীরাই। যাহোক সমাজের প্রতিচ্ছবিই সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে গল্পটিতে ।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
এইটা তো সেই বাচ্চা আমলের লেখা। লেখালেখির শাখায় তখন আমি এক কচি খোকা মাত্র।
এই লেখা নিজে পড়ে একশো দুইটা ভুল পেলাম এখন। =p~

তবে শায়লাকে মারামারিটা একটু দুঃখজনক মনে হল ।
একটা থাপ্পড়কে মারধরের আওতায় ফেলা যায় না। তবুও, থাপ্পড়কে অপমানসূচক ধরা হয়। লাথি, কিল, ঘুষিতে ব্যথা বেশি হলেও - সেটায় অপমানজনক কিছু নেই। কিন্তু থাপ্পড়ের তাৎপর্যই আলাদা। তবে, এটাকে খুব বিরলও বলা যায় না। পরিস্থিতির বিবেচনায় মাঝে এটুক অপমান করতে হতেই পারে। এখানে, গল্পের পরিস্থিতি বিবেচনায় এটাকে আনা হয়েছে।

সব কিছুর উপরে মা বাবার ভুমিকাটা কিন্তু অনেক গুরুত্ব পুর্ণ ।
মা-বাবার ভূমিকা তো গুরুত্বপূর্ণই হবে। তারা না থাকলে তো আমরাই থাকতাম না।

যদিও দুই মা কে নিয়ে কিছুটা কনফিউশন রয়ে গেছে আসলে কে কেমন মানসিকতার সেটা বুঝা বেশ কস্টকর ।
সাধারণ মানুষ বিবেচনা করলে মানসিকতা নিয়ে বুঝতে চাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু, ঐ সাধারণ মানুষটা যখন মা, তখন সমগ্র মা জাতির মানসিকতা একটাই। সেটা হল সন্তানের সাথে থাকা পুরোটা সময়। হোক সে যে মা ই।
এটাকে সত্যিই পাঠকদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। জুন আপুর মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে লিখেছিলাম এটা সম্পর্কে।

এটা সত্য যে পুরুষদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যয় করানোর পিছনে দায়ী অনেকাংশেই শায়লার মত নারীরাই।
একটা সময় আমারও তাই মনে হত। কিন্তু এইক্ষেত্রে আমি দোষ দিব মা-বাবাকেই। তারা সন্তানদেরকে বেশি বিশ্বাস করে ফেলে। হ্যাঁ, সন্তানই তাদের একমাত্র আস্থা। কিন্তু, এটা যখন একটা সন্তান বুঝে যায় তখন আর তার মাঝে মা-বাবা নিয়ে আলাদা ভাবনা থাকে না। জানেই তো, বাবা-মা তার উপর নির্ভরশীল হওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু, মা-বাবা তো আর চাইলেই তাদের এই ধারণা বদলাতে পারবে না। ভালবাসার ধারণা তো আর বদলানো যায় না। সেইক্ষেত্রে, দ্বিতীয়ত দোষটা পড়ে সন্তানের উপরই। তারা যদি সুশিক্ষিত না হয়ে স্বশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে তাহলেই এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সবশেষে, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। এই গল্প তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি।

১৫| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ প্রতি উত্তরের জন্য । ।এলিখাটি আপনাকে অনুসরণ করতে গিয়ে পড়েছি । আমি কাওকে অনুসরণ করলে তার লিখাগুলি যতটুকু পারা যায় পাঠ করি ও মন্তব্যের ঘরে দুএক কথা লিখি ।
শুভেচ্ছা রইল ।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: সমস্যা নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.