নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমোপপাদ্য (প্রথমভাগ)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

প্রথম

ভোরে ঘুম থেকে ফুলের বাগানে হেটে বেড়ানোটা খুবই পছন্দের মাদিহার! তারউপর এখন কার্তিকের শেষ সময়! কয়দিন পরেই আসছে অগ্রহায়ন! হালকা হালকা কুয়াশা পড়ে রাতে। ভোরে ফুল গাছের পাতায় পাতায় জমা হয়ে থাকে শিশির! সেই শিশির দিয়ে হাত ভেজাতে খুব ভালবাসে মেয়েটা! অপেক্ষায় থাকে বছরের এই সময়টার! হাত দিয়ে পাতা থেকে শিশির সংগ্রহ করে মুখে লাগিয়ে বসে সকালের মিষ্টি রোদে রৌদ্রস্নান করার জন্য!

ঘুম থেকে উঠে ফুলের বাগানে হেটে বেড়ানোর অভ্যাসটা অবশ্য তার সবসময়ই ছিল! এমন কোন দিন বাদ যায় নি যে সে ঘুম থেকে উঠে ফুলের বাগানে তার পদচিহ্ন পড়ে নাই!
অসুস্থ অবস্থায় চলার শক্তি নেই তারপরও হেটে বেড়িয়েছে ফুলের বাগানে! প্রকৃতির বিরূপ অবস্থাও দমিয়ে রাখতে পারে নি তাকে!

একবার খুব ঝড় হচ্ছিল! এই ঝড়ের সময় ঘর থেকে বের হওয়া মানে নিতান্তই পাগলামী! মানুষ ঐ সময়ে খুব জরুরী দরকার থাকলেও ঘাপটি মেরে বসে থাকে ঘরের কোনায়! মাদিহার এইসব ঝড়-ঝাপ্টার তোয়াক্কা নেই! ঘুম থেকে উঠে তার ফুলের বাগানে হেটে হেটে ফুল, ফুল গাছেদের কথা বলা লাগবেই! যেইভাবা সেই কাজ! ছাতা নিয়ে বের হয়ে আসল! ঝড়ের মাঝেও কেউ ছাতা নিয়ে বের হতে পারে – এইটা মেয়েকে যে সরাসরি না দেখেছে সে কখনোই বিশ্বাস করবে না! ঝড়ের বেগটা ঐদিন একটু বেশিই ছিল। মাদিহা যেই বাগানটায় পা দিয়েছে ওমনি জোরালো বাতাসে ফুলের বাগানের পাশে থাকা আম গাছের ডাল উড়ে এসে পড়ল তার গায়ের উপর! ছাতা উড়িয়ে নিয়ে গেল! প্রবল বেগে বৃষ্টির ফোটা লাগতে শুরু করলো তার গায়ে! বৃষ্টিতে ভিজতে এমনিতে অবশ্য খারাপ লাগে না মাদিহার কিন্তু ঐ সময়ে বৃষ্টির এক একটা ফোটাকে মনে হচ্ছিল যেন সাক্ষাৎ বন্দুকের নলা থেকে আগত গুলি! ঐ ফোটার আঘাতেই কখন যে অজ্ঞান হয়ে গেল সে নিজেও জানে না!

জ্ঞান ফেরার পর দেখে নিজের বিছানায় পড়ে আছে! মাথার পাশে তার বাবা মোবারক সাহেব! জ্বরপট্টি দিয়ে মুখ-কপাল মুছে দিচ্ছেন! পায়ে তেল মালিশ করছে দশ-বারো বছর বয়স্কা এক কিশোরী! মেয়েটি সেই ছোট বেলা থেকেই তাদের এখানে আছে! নাম জরি! কিন্তু মাদিহা তাকে আদর করে ডাকে অপ্সরী! কেন ডাকে সেটার তেমন কোন কারন নেই! তবে মেয়েটাকে মাদিহা যখন প্রথম দেখে তখন তাকে কোন এক পরীর মেয়েই মনে হয়েছিল! সেই থেকেই অপ্সরী ডাকা শুরু করেছে জরিকে!
অপ্সরীকে তার পায়ে তেল-মালিশ আর বাবাকে জ্বরপট্টিতে গা মুছে দেওয়া দেখেই বুঝতে পারল নিশ্চয়ই সে অসুস্থ! কিন্তু বুঝতে পারছে না কি হয়েছে! উঠে বসতে চেষ্টা করল! কিন্তু পিঠের ব্যাথায় উঠেও বসতে পারলো না! কুঁকিয়ে উঠলো যন্ত্রনায়! বাবা তাকে আবার শুইয়ে দিলেন! পিঠের ব্যাথাটা জেগে উঠায় তার মনে পড়ল কি হয়েছে! বাগানে হাটছিল ঝড়ের মাঝে, জোরালো বাতাসে ডাল উড়ে এসে আঘাত করলো তার পিঠে, পড়ে গেল, তারপর বুলেট বর্ষন লাগল গায়ে, এরপর সে অজ্ঞান!

ভাবলো বাবা নিশ্চয় খুব ক্ষেপে আছে তার উপর! বাবার চেহারার দিকে তাকালো! রাগ-উদ্বেগ দুটোই সমপরিমানে দেখা যাচ্ছে বাবার চোখে! মাদিহা মুচকি হাসলো! তার বাবাটাও একটা পাগল! সে একটু অসুস্থ হলেই বাবা চিন্তা করে করে ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে যান! এইবারেও নিশ্চয় তাই হবে! তবে এইবার বাবার ব্লাড প্রেসার বাড়ার আগেই তাকে অনেক বকুনী খেতে হবে! এইটাও নিশ্চিত! আর তার বাবার আরেকটা রোগ আছে! বকাটা উনি নিজে থেকে দেওয়া শুরু করবেন না! সেটার শুরু করতে হবে মাদিহাকেই!
‘বাবা!’
‘হ্যা! মা বল!’
‘এত চিন্তা করছো কেন? কিছুই তো হয় নি আমার!’
‘কই চিন্তা করছি?’
‘তোমার চোখ দেখে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে! বেশ উদ্বিগ্ন তুমি আমাকে নিয়ে!’
‘আমার চোখে শুধু দুশ্চিন্তাটাই দেখা যাচ্ছে?’
‘না সাথে আরেকটা কিছু আছে!’
‘কি সেটা বল?’
‘রাগ!’
‘কিসের রাগ ঐটাও বল?’
‘আমার উপরে রাগ!’
‘তোর উপরে রাগ উঠলে কি করি আমি?’
‘আমাকে বকা দিয়ে রাগ কমিয়ে ব্লাড প্রেসার বাড়াও!’

মেয়ের এমন জবাবে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন মোবারক সাহেব! কিছুক্ষন পর হাসতে শুরু করলেন! মেয়ের শেষ কথাটায় উনার যত রাগ ছিল সব উবে গেল! এখন আর একফোটা রাগও নেই! বাবাকে হাসতে দেখে মাদিহাও হাসলো! ‘যাক, এইবার বকুনীটার হাতে থেকে বেঁচে গেলাম!’ মনে মনে বলল!

তবে বাবা তারপরও কিছু বকা দিলেন! সেগুলোকে ঠিক বকা বলা চলে না, সাধারন কথাই বলা যায়! বললেন যে, এই অসুস্থ অবস্থায় কয়দিন সকালে বাগানে না হাটলেও চলবে, পূর্ন বিশ্রামে থাকতে বললেন! আর এই ঝড়-ঝাপ্টা থাকলে যেন কখনোই ঘর থেকে না বের হয়!
কিন্তু মাদিহা কি আর এইসব শুনবে? পরদিন সকালে পিঠের ব্যথা নিয়ে দিন শুরু করলো বাগান ভ্রমন দিয়েই!

আজকেও প্রায় ঘন্টাখানিকের উপর হাটাহাটি ফুলেদের সাথে কথা বলল সে! মনটা বেশ ভালো তার আজকে! তার বাগানে একটা টকটকে লাল গোলাপ ফুটেছে! লাল রঙ এমনিতে তার ভাল লাগেনা! কিন্তু গোলাপের এই টকটকে লালটা তার কাছে বেশ ভালই লাগছে!
গোলাপটাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ও গোলাপ! তোমার রংটা এমন লাল কি করে হলো?’

গোলাপকি আর তার কথার উত্তর দিতে পারবে? নিজের এই বাচ্চাসুলভ আচরনে নিজেই হাসলো মাদিহা! হাসতে হাসতেই ঘরে প্রবেশ করলো!

বসার ঘরে তার বাবাকে দেখলো কার সাথে যেন কথা বলছে! এটা প্রতিদিনের দৃশ্য! বাসার গেটে যেদিন থেকে ‘বাড়ি ভাড়া দেওয়া হইবে’ সাইনবোর্ডটি লাগানো হয়েছে তার পরদিন থেকেই এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে!

*

মোবারক সাহেব সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। বছর দুয়েক হল অবসর করেছেন চাকরী থেকে। উনার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল একটা দোতলা বাড়ি করবেন, সবাইকে নিয়ে থাকবেন সেই বাড়িতে। বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেতে হয়েছিল! জমানো যা টাকা ছিল একতলা পর্যন্ত তৈরি করতেই তা ফুরিয়ে গেল! মেয়ে মাদিহা আর স্ত্রীকে নিয়ে ঐখানেই বাস করা শুরু করলেন! দোতলা বাড়ি বানানোর স্বপ্নটা সত্যি করেছেন শেষ অবধি! কিন্তু সবাইকে নিয়ে আর থাকা হল না উনার! উনার স্ত্রীকে চলে যেতে হল এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসতে পারে না! স্ত্রীর মৃত্যুর পরই উনিও কেমন যেন খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছেন! তবে রাগ সবসময় করেন না, কিন্তু যখন করেন তখন অবস্থা খারাপ করে ফেলেন!

দোতলা করার পর নিজেরা দোতলায় চলে গেলেন! নীচতলাটা খালিই ছিল! চিন্তা করলেন যেহেতু খালিই আছে তাহলে ঐটাকে ভাড়া দিলেই তো হয়! কয়েকজন মানুষ এই বিশাল শহরে মাথা গোঁজার ঠাইও পাবে, আর কিছু টাকাও আসবে! তবে টাকাটা আসল নয় উনার কাছে, উনার কাছে আসল হল রুচিসম্পন্ন কিছু মানুষ! যেই মানুষগুলো এই বাড়িতে থেকে তাদের মত করেই বাড়িটার যত্ন নিবে, তার মেয়ের সাথে বাগানে গল্প করবে, পরিচর্যা করবে, ঝগড়া-বিবাদ করবে না, অবসরে একটু গল্প করা যাবে – বলা যায় বেশ শান্তশিষ্ট গোছালো একটা পরিবার বা কিছু মানুষ খূঁজছিলেন! টাকাটা যদি উনার কাছে আসল হত তাহলে কত মানুষই এত এল গত একবছরে কারও কাছেই বাড়ি দেন নি!

তবে গত একবছরে তিনি বলতে গেলে বিরক্ত হয়ে গেছেন! প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছে বাড়ি ভাড়া নিতে, কিন্তু কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না! কয়েকজনকে তো পছন্দ করতে না পেরে পারলে ওখানেই মেরে বসেন! মাদিহা ছিল বলে রক্ষা হয়েছে ওদের।
জরির মা যখন সকালে উনাকে খবর দিল, ‘সাহেব! বাড়ি দেখতে আইছে! বইতে কমু?’
শুনে বেশ বিরক্ত হলেন! বললেন, ‘বসতে বল! আর বল একটু অপেক্ষা করতে! চা-নাস্তাও দিস সাথে!’
প্রতিজ্ঞা করলেন এটাই শেষ! আজকেই ঐ সাইনবোর্ড উঠিয়ে ফেলবেন তিনি! ভাড়াটিয়া আসলে আসুক বা না আসুক, প্রতিদিন উনার বিরক্ত হতে হতে আর ভাল লাগছে না!

চা-নাস্তা দেওয়ার কথা অবশ্য জরির মাকে না বলে দিলেও হত! এই বাড়ি থেকে আজ পর্যন্ত কেউ খালি মুখে বের হয়ে যেতে পারে নি! এইটা জরির মা ভালই জানে! মোবারক সাহেব বলার আগেই সে চা-নাস্তা দিয়ে এসেছে বাড়ি দেখতে আসা ছেলেটাকে!

*

সকালে নাস্তা করে বের হয় নি আনিস! খিদেও লেগেছে খুব! বাড়ি ভাড়া করতে এসে যে সকালের নাস্তাটা সে বিনামূল্যে পেয়ে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবে নি! কাজের মহিলাটা খাবার দিয়ে যাওয়ার যেন তার পেটের ক্ষুদাটা আরো বেগবান হয়েছে! প্লেটটায় কয়েকপিস রুটি, জেলির কৌটা, চামচ, ছুরি ছিল! সে মহানন্দে জেলী মাখিয়ে রুটি খাচ্ছে! ভুলেই গেছে সে এখানে বাড়ি ভাড়া করতে এসেছে!

আনিসের খুব ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যায়! বড় হয়েছে এক মামার কাছে! মামা-মামীর কোন সন্তান ছিল না, আনিসকেই তারা সন্তানের মত মানুষ করেছেন! অভাবের সংসার ছিল আনিসের মামার। ছোটখাট একটা চাকরী করতেন! মাইনে খুব একটা বেশি ছিল না! যা পেত তাতে তিনজন মানুষের খুব স্বাচ্ছন্দ্যে চলার মত না! তারপরও আনিসকে কখনো কোন কিছুর অভাব বোধ করতে হয় নি! তারা তাদের সামর্থ্যে যতটা পেরেছেন ততটাই দিয়ে গেছেন আনিসকে! আর আনিসেরও খুব একটা চাহিদা ছিল না! মামা-মামী কিভাবে কত কষ্ট করে তার অভাবপূরনের চেষ্টা করছে, এটাতেই আনিস তৃপ্ত ছিল! সে সবসময়ই চাইতো পড়ালেখা করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে ভাল চাকরী মামা-মামীকে সুখের নিশ্চিন্ত কয়েকটা দিন দিতে! সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল সে! এখনও এগিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু তার মামা-মামীর কেউ ই আর তার পাশে নেই! আনিসের কাছ থেকে সুখের নিশ্চিন্ত কয়েকটা দিন পাওয়ার আগেই পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে!

এক গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান তারা! একই দিনে আনিস হারায় তার জীবনের একমাত্র দুই অভিভাবককে! সাথে হারায় থাকার আশ্রয়ও! মামা থাকতেন একটা বাসা ভাড়া করে! মামা মারা যাওয়ার পর সেই বাসায় থাকার মত ভাড়া দেওয়া আনিসের পক্ষে সম্ভব ছিল না! আর ঐ বাড়িওয়ালাও শুধু চিনতো টাকাটাকেই! মানবতা বলে কোন কিছু ছিল না! মামা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরেই আনিসকে বের করে দেন বাড়ি থেকে!

তবে তার কপালটা ভালোই বলা চলে! যেদিন বাড়িওয়ালা তাকে বাসা থেকে চলে যেতে বলে সেদিনই সে হলেও একটা সিট পেয়ে যায়! এরপর থাকতো সেখানেই! কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে আবার সেই হল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেছে! উড়ো উড়ো খবরে শুনতে পেয়েছে হল পুনরায় খুলতে খুলতে মাসতিনেকের মত সময় লাগবে! সহপাঠিদের সবাই বাড়ি যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠলেও, আনিসের মাথায় বাজ পড়ল! এই তিনমাস সে থাকবে কোথায়? তার তো বাড়িও নেই, নেই কোন আত্নীয়-স্বজনও! শুনেছে তার নাকি দুই-একজন চাচা আছে, কিন্তু তা শোনা পর্যন্তই। কোনদিন ঐ চাচাদের ছায়া দেখা তো দূরের কথা, নামও শুনে নি! এই মুহুর্তেই রাস্তায় হাটতে হাটতে চোখে পড়ল,

‘মাহিদা ভিলা

বাড়ি ভাড়া দেওয়া হইবে!’
সাইনবোর্ডটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আনিস! কিন্তু এইটা ভুলে গেছে যে, সে বাড়ি ভাড়া করলে সেটার ভাড়াই দিবে কিভাবে, আর তারমত একটা ব্যাচেলরের কাছে বাড়ির মালিক ভাড়া দিবে কি না?

খেয়েই চলছে আনিস! কোনদিকে খেয়াল নেই! রুটি সাবার করে পায়ের উপর পা তুলে চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে দেখে মোবারক সাহেব বেশ বিরক্তিভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আনিসের এতক্ষনে মনে পড়ল সে বাড়ি ভাড়া করতে এসেছে আর এই লোকটাই বাড়ির মালিক! থতমত খেয়ে গেল! হাত কাঁপাকাঁপি করছে! চায়ের কাপটা আর সামলে রাখতে পারলো না। কাপটা উলটে দিয়ে পড়লো তার গায়ের সাদা গেঞ্জীটার উপর! সাদা জামায় চায়ের দাগটা চিরতরেই লেগে গেল! আর ধুলেও এটা উঠবে না! অবশ্য সাদা গেঞ্জীতে চা পড়ে একটা সুন্দর ডিজাইনের মতই হয়ে গেছে! মনে হচ্ছে সাদা আকাশে রঙীন মেঘ জমেছে!

মোবারক সাহেব কি করবেন বুঝতে পারলেন না! জরির মাকে ডাকলেন! ‘জরির মা! একটা গামছা নিয়ে আয়!’

গামছা কেন আনতে বলা হল তাকে এইটা জরির মায়ের মাথায় ঢুকলো না! গামছা নিয়ে গিয়ে আনিসের গেঞ্জীতে চায়ের প্রিন্ট দেখে অবশ্য বুঝতে পারলো ঘটনা কি!

‘নিন! মুছে নিন চা টুকু! শরীরের মিষ্টি জাতীয় কিছু লেগে থাকলে একটু চামড়া টানটান করা শুরু করবে!’ গামছাটা আনিসের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন মোবারক সাহেব! আনিসও গামছাটা নিয়ে শরীর মোছা শুরু করল!

মোবারক সাহেব এই ফাকে পর্যবেক্ষন করছেন আনিসের! বাইশ-তেইশ বছর বয়স হবে ছেলেটার! একটা কাঠিও বোধহয় ছেলেটার থেকে মোটা হবে! মাথায় ঝাকরা কোকড়া চুল! মুখটা শুকনা! শুকনা মুখের সাথে বড়বড় চুল গুলো ঠিক মানাচ্ছে না! পড়নের কাপড়-চোপড় দেখে মনে হয় ছেলেটা হয়তো খুব অপরিষ্কার নয়তো নিজের প্রতি অমনোযোগী! জিন্স প্যান্টে ময়লা লেগে আছে জায়গায় জায়গায়, অনেকদিন ধোয়া হয় না! সাদা গেঞ্জীটা মনে হয় নতুন কিনেছে, এই জন্যই বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে! নিজের প্রতি অমনোযোগী এটা বুঝা যায় ছেলেটার স্বাস্থ্য দেখলেই! অন্য কিছু নিয়ে পড়ে থাকে নিশ্চয়! অন্য কিছু কি হতে পারে? নিশ্চয় কোন মেয়ের চিন্তায় ডুবে থাকে ভাবলেন মোবারক সাহেব! সেই মেয়েকে হয়তো গোপনে বিয়ে করেছে, তাই বাড়ি ভাড়া করতে এসেছে! এটা ভেবে বেশ বিরক্ত হলেন মোবারক সাহেব! আজই সাইনবোর্ডটা খুলে ফেলবেন মনস্থির করলেন!

আনিসের শরীর মোছা শেষ দেখে প্রশ্ন করা শুরু করলেন তিনি!
‘নাম?’
‘জ্বি আনিস!’
‘জ্বি আনিস নাম?’
‘না! শুধু আনিস!’
‘ভালো নাম?’
‘জ্বি! আনিসুর রহমান!’
‘হুম! কি করা হয়?’
‘জ্বি পড়ালেখা!’
‘আপনার কি প্রত্যেক শব্দের আগে জ্বি লাগানোর অভ্যাস আছে নাকি?’
‘জ্বি না! চাচা, আমাকে তুমি করে বলবেন! আপনি আমার বাবার বয়সী। আপনি করে ডাকলে অস্বস্তি লাগে!’
‘হুম! কথার আগে থেকে এখন জ্বি শব্দটা বাদ দাও!’
‘জ্বি আচ্ছা!’
‘কই পড়ালেখা করো?’
‘জ্বি চাচা! বুয়েটে! তৃতীয় বর্ষ!’
‘বুয়েটে পড়ো! তাহলে বাসা ভাড়া করতে এসেছো কেন?’
‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় হল বন্ধ!’
‘তাহলে বাড়ি চলে যাচ্ছো না কেন?’
‘আমার বাড়ি নেই!’
‘বাড়ি নেই মানে?’
‘বাবা-মা ছোট থাকতেই মারা গেছেন! মামার কাছে বড় হয়েছি! মামা-মামীও কয়েকবছর হল মারা গেছেন!’

আনিসের কথা শুনে নিজের উপরই বিরক্ত হলেন মোবারক সাহেব! মানুষ সম্পর্কে না জেনেই অন্য কিছু ভেবে ফেলাটা ইদানিং উনার বদঅভ্যাসে পরিনত হয়েছে! এইটাকে ঠিক করতে হবে! ছেলেটার কথা শুনেও বেশ খারাপ লাগছে উনার! থাকার কোন জায়গায়ই নেই ছেলেটার। ভাড়া দিবেন এই ছেলেটাকেই চিন্তাভাবনা করলেন!
‘বাড়ি ভাড়া কয়দিনের জন্য নিতে চাচ্ছো?’
‘হল পুনরায় চালু হতে মাসতিনেক! আপাতত ঐ সময় টুকুই! একটা রিসার্চ করছি তো – সেই জন্যেই বাসা খুজছি! নাহলে এদিক-সেদিক ঘুরে ঘুরে সময়টা কাটিয়ে দিতাম!’
‘এদিক-সেদিক ঘুরে ঘুরে মানে? তোমাদের এই যুগের ছেলেরা খালি এই চিন্তাই করে! দেশটা রসাতলে যাচ্ছে এইজন্যই!’
‘জ্বি চাচা!’
‘এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি না করে এইখানে থেকেই রিসার্চ সম্পূর্ন করো!’

কথাগুলো মোবারক সাহেব এমনভাবে বলছেন যেন নিজের ছেলেকেই বলছেন! কে বলবে এই ছেলেটার সাথে তার পরিচয় মাত্র দশ মিনিটের! প্রায় ঘন্টাখানেক ছেলেটার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করলেন! কথা বলতে বলতে সময়ের কথা ভুলেই গেলেন! আর আনিসও তার রিসার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার মত লোক পেয়ে আগ্রহে বলতে শুরু করলো! ভদ্রলোক তার রিসার্চের কথা বেশ মনযোগ দিয়ে শুনছে দেখে বেশ ভাল লাগলো তার! এরমাঝেই আরেকপ্রস্থ চায়ের পর্ব চলল! উঠতে যাবে এমন সময় –
‘শোন যেই বাসাটা আমি ভাড়া দিতে চাচ্ছিলাম সেইটা তোমার তুলনায় অনেক বড়! তারচেয়ে তুমি বরং চিলেকোঠার ফাকা ঘরটাতেই উঠো!’
‘জ্বি চাচা!’
‘আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব! কবে আসতেছো তুমি?’
‘কালই আসি?’
‘তোমার যখন ইচ্ছা! চাইলে আজকেই উঠে পড়ো!’
‘চেষ্টা করব! চাচা, ভাড়া কত দিতে হবে মাসে তা কিন্তু বলেন নি?’
‘ভাড়া নিয়ে পরে কথা বলি নাহয়! আগে তোমার মালসামানা নিয়ে উঠো।’

কথা বলতে বলতে মেইনগেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন আনিসকে! দারোয়ানকে বললেন সাইনবোর্ডটা খুলে দূরে ফেলে দিতে! অনেক বিরক্ত করেছে এই সাইনবোর্ডটা! এটাকে তিনি যেন আর না দেখেন! আর এমনিতেও বাড়ি ভাড়া হয়ে গেছে!
দারোয়ান মনিবের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো!

দ্বিতীয়

মাদিহা বসার ঘরে গিয়ে দেখে বাবা বেশ উৎফুল্ল মেজাজে রয়েছেন! চোখে বেশ খুশি খুশি ভাব!
‘বাবা! তোমাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে?’
‘হ্যারে মা! উটকো ঝামেলাটাকে দূর করে দিয়েছি আজ!’
‘কোন ঝামেলা?’
‘ঐ যে সাইনবোর্ডটা! জ্বালিয়ে মেরেছে! আজকে দারোয়ানকে বলে ওটা গায়েব করে দিয়েছি! হাহাহা!’
‘ভাড়াটিয়ে কি পেলে কোন?’
‘হ্যা! একটা ছেলে এসেছিল! ওকেই দিলাম! চিলেকোঠার ঘরটা!’
‘চিলেকোঠা?’
‘হ্যা! ঐটাই তো দিলাম! কোন সমস্যা নাকি? এমন আৎকে উঠলি কেন?’
‘আমার ছাদে যাওয়াটা তাহলে বন্ধ হয়ে গেল!’
‘কেন? বন্ধ হবে কেন? তুই তোর মত ছাদে যাবি।’
‘হ্যা! ছাদে যাব! আর তার পাশের ঘর থেকে ছেলেটা আমাকে দেখবে! ভাল হয়েছে তো!’
‘মেজাজ খারাপ করছিস কেন? ছেলেটাকে কিন্তু আমার বেশ ভালোই মনে হয়েছে! সারাক্ষন পড়াশোনা নিয়েই থাকে! এখন কি যেন একটা রোবট বানানো নিয়ে আছে! তোর কোন সমস্যাই হবে না!’
‘বুঝেছি! থাক আর বলা লাগবে না কিছু! আমাকে না জিজ্ঞেস করেই সব করে ফেলেছো?’
‘রাগছিস কেন? এখন কি না করে দিব?’
‘নাহ! এখন আর না করা লাগবে না! বলে যখন দিয়েছো, তখন আসুক আগে! আর শোন আমার আজকে আসতে দেরী হবে!’
‘কেন?’
‘সামনে পরীক্ষা! কোন পড়াই গোছানো হয় নি! ক্লাসের পরে শেফালীর কাছ থেকে সব গুছিয়ে আনতে আনতে দেরী হয়ে যাবে!’
‘আচ্ছা যা! বেশি দেরী করিস না!’

বাবা তাকে না বলেই চিলেকোঠার ঘরটা দিয়ে দেওয়ায় বেশ রেগে আছে মাদিহা! গভীর রাতে ছাদে গিয়ে আকাশ দেখাটা খুব পছন্দের তার! এখন চিলেকোঠায় ছেলেটা থাকলে স্বস্তিতে আর ছাদে যেতে পারবে না! এই ভেবেই রেগে আছে সে!

বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো! কয়েকটা পথ থাকলেও সে সব রিকশাওয়ালাকেই বলে একটা রাস্তা দিয়েই নিয়ে যেতে! একটু ঘুরে যেতে হয় – এরজন্য সে ভাড়াও বেশিই দেয়! এই পথ দিয়ে তার যাওয়ার কারন এই পথেই অনেকগুলো বাচ্চাদের স্কুল রয়েছে! স্কুলের বাইরেই অপেক্ষা করছে বাচ্চাদের মায়েরা! স্কুল ছুটির টাইমটাও ঐসময়ই! বাচ্চারা স্কুল থেকে বের হয়ে আসছে, আর তাদের মায়েরা খুব আদর করে বাচ্চাদেরকে কোলে তুলে নিচ্ছে, কোন কোন মা আবার বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাচ্চাকে – এইদৃশ্যগুলো দেখতে ভালো লাগে মাদিহার! নিজের বাচ্চাকালটার কথা মনে পড়ে যায় তার! তার মাও এইভাবেই তাকে স্কুল ছুটির পর জড়িয়ে ধরতো, কোলে তুলে নিত – এইসব মনে করে চোখ ভেজায়! বড় হওয়ার পরও মায়ের কাছ থেকে এমন আদরই পেয়েছে! বয়স যতই বেড়েছে তার, মায়ের তার প্রতি আদরটাও সেই হারেই বেড়েছে! এখন হয়তো আরও বাড়তো আদরটা কিন্তু সেইটা পাওয়ার আর সৌভাগ্য নেই তার! অনেক আগেই যে ঐ আদরটা পাওয়া থেমে গেছে তার! এইসব মনে করে প্রতিদিনই রিকশায় উঠে কাঁদে মাদিহা! তখন অন্যান্য বাচ্চাদের জায়গায় চিন্তা করে নিজেকে, আর ঐ মায়েদের জায়গায় কল্পনা করে নিজের মাকে! এইভাবে কল্পনায় প্রতিনিয়তই মায়ের আদরটা নিয়ে যাচ্ছে সে! আর এই আদরটা কল্পনায় নিতে হচ্ছে দেখে প্রতিনিয়তই কষ্ট পাচ্ছে! সে চাইলেই পারে এইসব দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকতে, কষ্টটাকে ভুলে থাকতে! কিন্তু চায় না! ‘মায়ের কথা মনে করে কষ্ট পাব না? তো কার কথা চিন্তা করে কষ্ট পাব?’ এই কথাটাই তার মনে বাজে সবসময়!

কল্পনার জগৎ থেকে ফিরলো যখন রিকশাওয়ালা ভার্সিটিতে পৌছে তাকে ভাড়া দেওয়ার কথা বলল! প্রতিদিনই এই ঘটনা ঘটে! আজও ব্যতিক্রম হল না!

তার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষন আগেই! এমনিতে দেরী করে না কখনোই! কিন্তু আজ তার বাবার সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরীটা হয়ে গেছে! এমনিতেই ক্লাসে দেরী করে এসেছে তারউপর বাবার সাথে তার কি কথা হয়েছে ঐটা মনে পড়ে মাথায় রাগ চড়ে গেল তার! ক্লাসের পুরোটা সময়ই মেজাজ খারাপ করে বসে রইলো!

ক্লাস শেষে শেফালীর কাছ থেকে পরীক্ষার পড়া বুঝে নিতে লাগলো! শেফালী বুঝাচ্ছে আর সে হু হু করে তাল দিয়ে যাচ্ছে! শেফালীর মাদিহার আচরনের পরিবর্তনটা চোখে পড়লো! পড়া বুঝানো শেষ করে মাদিহাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হইছে রে তোর?’
‘কিছু না!’
‘আঙ্কেলের সাথে ঝগড়া হইছে আবার?’
‘বাবার কথা আর কি বলব? পুরো অদ্ভুত একটা মানুষ!’
‘কি করছে আবার?’
‘কি করবে আবার? বাড়ি ভাড়া দেওয়ার একটা ভূত চেপেছে বলেছিলাম না?’
‘হ্যা? বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন নাকি শেষ পর্যন্ত?’
‘হ্যা দিছে!’
‘এতে এত রাগ করার কি হলো?’
‘তোকে তো আগেই বলেছি বাসায় অন্য কোন মানুষ এসে থাকবে, আমার বাগানের ফুল ছিড়বে, পা দিয়ে বাগানের মাটি মাড়িয়ে দিবে এইসব আমার ভালো লাগে না! তারপরও বাবার ভাড়াটিয়ে বাছাইয়ের ধরন ভাল লাগায় রাজি হয়েছিলাম! ওরকম কাউকে দিলেও হত! শেষমেশ দিয়েছে এক ব্যাচেলর ছেলেকে!’
‘ব্যাচেলর ছেলে কেন?’
‘ছেলেটার কথা শুনে নাকি বাবার খুব ভাল লেগেছে! ছেলেটা নাকি খুবই ভালো! ইত্যাদি! ইত্যাদি! তাও দিয়েছে চিলেকোঠায়!’
‘ছেলে ভাল হলে খারাপের কি আছে? আর চিলেকোঠায় হলেই বা সমস্যা কি?’
‘তুই বুঝতে পারছিস না এখনো? ঐ ছেলে চিলেকোঠায় থাকলে ছাদে যাব কিভাবে? আর আমার অভ্যাস তো জানিসই যখন মন চায় তখনই ছাদে যাই! রাত-বিরাত কিচ্ছু খেয়াল করি না! ঐ ছেলে থাকলে রাতের বেলা কি আর ছাদে উঠতে পারব?’
‘উঠতে পারবি না কেন? তোর ছাদে তুই যাবি, আর ঐ ছেলে থাকবে চিলেকোঠার ঘরে! তাতে অসুবিধা কি?’
‘ঐ ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আর তাতে কি আমি অস্বস্তি বোধ করব না?’
‘ঐ ছেলে তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে তারই বা গ্যারান্টি কি? এত ভাবছিস কেন? সাধারন ভাবে নে না! ভাব দেখে মনে হচ্ছে ঐ ছেলে তোর প্রেমে পড়েই গেছে!’
‘ধুর! ধুর! কি বলিস এসব?’
‘তোর এমন অস্বাভাবিক আচরনে সেরকমই লাগছে! আর খুব বেশি অস্বস্তি লাগলে নীচতলা তো খালিই আছে ঐখানে চলে যেতে বলবি!’

তাই তো! এই কথাটা আগে মাথায় আসে নি মাদিহার! সমস্যা হলে তো সমাধান আছেই! শুধু শুধু বেশি ভেবে ফেলেছে! আর শেফালীর কথাও ঠিক! ঐ ছেলেকে নিয়ে এত ভাবছে কেন সে আগেই?
‘ধুর! আজকাল অযথা ভাবনা বেশি করি! অযথা ভাবাভাবি কমাতে হবে!’ নিজেকেই মনে মনে বকা লাগালো মাদিহা!

তৃতীয়

সময় মতই পরদিন সন্ধ্যায় আনিস তার সব সম্পদ নিয়ে হাজির হলো। সম্পদ বলতে ট্রাঙ্কভর্তি তার বই-খাতা-যন্ত্রপাতি! ছোট একটা ব্যাগে কাপড়-চোপড়! আর একটা কম্পিউটার! এগুলো নিয়ে উঠলো চিলেকোঠার ঘরটায়! তার সাথে এগুলো নিতে সাহায্য করলো দারোয়ান আর মোবারক সাহেব! ছেলেটার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি! আগের দিন ছেলেটার সাথে কথা বলে বেশ লেগেছে উনার!

ঘরটাকে খারাপ লাগল না আনিসের! চিলেকোঠা শুনে মনে করেছিল বেশ ছোটখাটো ঘুপচি কোন ঘর হবে! কিন্তু এখানে এসে দেখল তার ধারনা সম্পুর্ন ভুল! বেশ বড়সড় একটা ঘর! আরামেই থাকতে পারবে সে! সাথেই খোলা ছাদ! জ্যোৎস্না রাতে মুক্ত মনে পড়তেও পারবে সে! যে রিসার্চ করছে, সেটা নিয়ে অনেক ভাবাভাবির দরকার! ভাবাভাবি করার জন্য ঐ পরিবেশটা শতভাগ ঠিক! বাতাস চলাচলেও কোন সমস্যা নেই! দমবন্ধ অবস্থা মনে হবে না কখনো! শুধু সমস্যা একটাই! শীত একটু বেশি লাগবে! আর এই শীতের সময়টাই তাকে থাকতে হবে! তবে এটা নিয়ে মোটেই বিচলিত হল না আনিস! বরং বেশ আনন্দিত হল! পড়তে পড়তে মাথা গরম উপক্রম হলেও এই জায়গায় মাথা ঠান্ডাই থাকবে! তাতে তার পড়তে সুবিধা হবে!

মোবারক সাহেব হেসে বললেন, ‘ঘর পছন্দ হয়েছে তো?’
‘জ্বি চাচা! আমি এমন ঘরই খুঁজছিলাম!’
‘তাহলে তো হলই! এবার গোছগাছ করে নাও সব!’
‘জ্বি চাচা! চাচা, ভাড়ার কথাটা কিন্তু এখনো ঠিক করা হয় নাই!’
‘এখনো ভাড়া নিয়েই পড়ে আছো? তবে হ্যা কথা ঠিক! আমাদের ভাড়া নিয়ে আলোচনায় বসা দরকার!’
‘চাচা আলোচনাটা এখনই সেড়ে ফেলি?’
‘হুমম! যেহেতু বাড়ির মালিক আমি ভাড়া ছাড়া তো বাসা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না! কত করে দিবা মাসে?’
‘আপনি যা বলবেন!’
‘আমি যা বলব তাই দিলেই কি হবে? একটু দর কষাকষি করলে ভাল হত না! বাড়ির মালিকেরা সাধারনত এই ধরনের কাজ করে! আমি এই অভিজ্ঞতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকি কিভাবে? হাহাহা!’
‘তা যা বলেছেন!’ মোবারকের সাহেবের কথায় আনিসও হাসলো!
‘তোমার টাকার উৎস কি? মানে বললা যে তোমার কোন আত্নীয়স্বজন নেই, পড়ালেখাও করছো – খরচ চালাও কিভাবে?’
‘পড়ালেখার জন্য মামা ব্যাংকে কিছু রেখে গিয়েছিলেন, ওগুলো দিয়েই চলছে! আর নিজ খরচ চালানোর জন্য দুটো বাচ্চাকে পড়াই! ওতেই হয়ে যায়!’
‘ঐ তোমার নিজ খরচ চালানোর পর যা বাঁচে সেটাই একটা খামে করে দিয়ে দিয়ো!’
‘চাচা! তাতে তো আপনার ভাড়া খুবই কম হয়ে যাবে!’
‘শোন বাবা! আমি টাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দেই নাই! টাকা না দিলেও আমার কোন সমস্যা নেই! তোমাকে ভাল লেগেছে তাই ভাড়া দিয়েছি! টাকার জন্য হলে তো কবেই বাড়ি ভাড়া দিয়ে দিতাম! আর তোমাকে দেখে যা বুঝলাম, তোমার কাছ থেকে কিছু না নিলে তুমি নিজেই তাতে অস্বস্তি বোধ করবে! ঐ অস্বস্তি কাটানোর জন্য খামে করে যা দিবে তাই সই!’
‘জ্বি আচ্ছা চাচা!’
‘এখন গোছগাছ করে নাও! রাতে আমাদের সাথে খাবে!’

বলে মোবারক সাহেব চলে গেলেন! আনিস মন দিলো গোছানোতে! ট্রাঙ্ক খুলে বই-খাতা গুলো নামিয়ে একপাশে রাখলো! তোষকটা নিয়ে পাতলো আরেক পাশে! রুমে একটা টেবিল আগে থেকেই ছিল! তাতে সুবিধা হল আনিসের! কম্পিউটারটা রাখলো টেবিলের উপর! টেবিলটাও বেশ বড়! কম্পিউটার রাখার পরও বেশ জায়গা আছে টেবিলটায়! পড়তে সুবিধা হবে তার! এখন একটা চেয়ার হলে ভাল হত! চেয়ারটা মোবারকের সাহেবের কাছে চাইবে চিন্তা করলো আনিস! ভদ্রলোকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ সে! এই যুগেও যে এইরকম আন্তরিক লোক আছে, তা মোবারক সাহেবকে না দেখলে সে জানতেও পারতো না! সব গোছগাছ করা শেষ এমন সময় দরজায় একটা কিশোরী মেয়েকে দেখতে পেল আনিস! বয়স দশ-বারো বছরের মত হবে!

‘ভাইজান! চাচায় খাইতে ডাকছে আপনারে!’ মিষ্টি সুরে বলল মেয়েটি!
‘ভিতরে আসো! আমার গোছগাছ তো এখনও একটু বাকি! একটু বসো একসাথে যাই!’
‘আচ্ছা!’
‘নাম কি তোমার?’
‘সবাই ডাকে জরি! আপায় ডাকে অপ্সরী!’ অপ্সরী উচ্চারনটা জরি ভালভাবে করতে পারে না! সে বলে ‘অফসরী’।
‘দুইটা নামই তো সুন্দর! চল জরি আমার কাজ শেষ! এইবার একসাথে নীচে যাই!’

*

আনিস নীচে নেমে দেখে মোবারক সাহেব তার অপেক্ষাতেই বসে ছিলেন! টেবিলে খাবার সাজানো! অনেকগুলো পদ করা হয়েছে! মুরগী, গরু, খাসী তিন জাতের মাংস, কয়েক রকমের শাক, বড়া, মাছের তরকারী আরো অনেক কিছুই! টেবিলের খাবার দেখেই পেট ভরে গেল আনিসের! খেতে পারবে কিনা বুঝতে পারছে না!
জরির মা প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে!
‘আমার মেয়েটার পরীক্ষা! পড়ছে! নাহলে সে ই খাবার বেড়ে দিত!’ কৈফিয়তের ভঙ্গিতে হেসে বললেন মোবারক সাহেব! আনিসও হাসল! খাওয়া শুরু করল! খেতে খেতে গল্প করছে দুজনে!

‘বাবা তোমার রোবট বানানো কতদূর এগুলো?’
‘চাচা! এখনো শুরুই করিনি! একে তো পড়ার চাপ, তারউপর রোবট নিয়েও বিস্তর পড়ালেখার বাকি আছে! তবে আঙ্কেল শীঘ্রই শুরু করব আশা করছি!’
‘ইনশাল্লাহ্! ক্লাস শুরু হতে কত দেরী তোমার?’
‘এখন পর্যন্ত তো তিনমাস বলেছে! সঠিক জানি না। তবে রাজনীতি আমি পছন্দ না করলেও, রাজনীতির কারনে এই অপ্রত্যাশিত ছুটিটা পেয়ে আমার ভালই হয়েছে!’
‘কিভাবে?’
‘অন্যান্য পড়ার চাপে রোবট নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে পারছিলাম না! এখন পড়ার চাপটা নেই রোবট নিয়ে ইচ্ছামত গবেষনা চালিয়ে যেতে পারবো!’
‘মাঝে মাঝে মন্দের মাঝেও ভাল কিছু হয়ে যায়! যেমন তোমার হল!’
‘তা যা বলেছেন চাচা! আমার মাথায় এখন রোবটই ঘোরাঘুরি করছে! বন্ধটা না পেলে পাগলই হয়ে যেতাম হয়ত! পড়াতেও ঠিকমত মন দিতে পারছিলাম না, রোবট নিয়ে মাথা ঘাটাতে পারছিলাম না! খুবই বাজে একটা অবস্থায় ছিলাম! রাজনৈতিক নেতাদের কারনে এইযাত্রায় পাগল হওয়ার হাত থেকে মুক্তি পেলাম!’
‘হাহাহা!’
‘ভাবছি আবার ক্লাস শুরু হলে রাজনৈতিক নেতাদের ফুল উপহার দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে আসব!’

আনিসের কথায় মোবারক সাহেব হোহো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন! মোবারক সাহেবও বেশ কিছু কথা বললেন যা শুনে আনিসও না হেসে পারলো না! হাসাহাসিতে ঠাসা রাতের খাবারটা দারুন কাটলো দুইজনেরই! মোবারক সাহেব বেশির ভাগ সময়ই মাদিহার সাথে খেতে বসলেও খাওয়ার টেবিলটা থাকে শোকাচ্ছন্ন! মাদিহা পারে না খাবার টেবিল থেকে তার অনুপস্থিতিটা মেনে নিতে, মোবারক সাহেবও পারেন না মেনে নিতে! নীরবে নিঃশব্দে কতগুলো গৎবাধা কথায় খাওয়া শেষ হয় তাদের! গৎবাধা কথাগুলো থাকে ‘বাবা! আরেকটু ভাত দেই?’ ‘কিছুই তো খেলি না তুই! এইভাবে না খেয়ে খেয়ে তো শুকিয়ে যাবি রে মা!’ বেশ কয়েকবার জরির মাকে ডাকা হয়! এইটাই হল তাদের বাবা-মেয়ের খাওয়ার সময়ের পরিবেশ! এমন না যে তারা কেউ ই চায় না যে পরিবেশটা ভালো হোক, কিন্তু কেউ ই পারছে না! মাদিহা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করছে খাওয়ার সময় যেন মরা মরা ভাবটা না থাকে, কিন্তু পারে নি! মোবারক সাহেবও ব্যর্থ এই জায়গায়! বাবা-মেয়ে দুজনেই মাতিয়ে রাখতে পারে তাদের চারপাশটা কিন্তু এই জায়গায় পারে না কেউ ই! কারন, এই জায়গাটা মাতিয়ে রাখার দায়িত্বটা যে ছিল একমাত্র মাদিহার মায়েরই!

অনেকদিন পর আনিসও বেশ তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়েছে! একা একা খেতে খেতে অভ্যস্ত জীবনে আজকের দিনটা তাকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে মামা-মামীর সাথে খাওয়ার কথাটা!

খাওয়া শেষে আনিস বলল, ‘চাচা! আপনার মেয়ে যে খেল না?’
‘ওর পরীক্ষা কালকে! পরীক্ষার রাতে মেয়েটা কেমন জানি পাগলের মত হয়ে যায়! খাওয়া-দাওয়া ভুলে শুধু পড়া! এইসময় খাওয়ার কথা বলতে গেলেও বিপদ! ভীষন রেগে যায়!’
‘তাহলে কি না খেয়েই থাকে নাকি?’
‘নাহ! না খেয়ে থাকে না! পড়ার ফাঁকে যখন ইচ্ছা করে খেতে তখনই খায়!’

জরির মাকে ডেকে বললেন, ‘জরির মা! মাদিহাকে খেতে বলেছো?’
‘চাচাজানের নাকি মাথা নষ্ট হয়া গেছে নাকি? এখন খাওনের কতা কইতে যামু আফারে?’
‘জরিকে পাঠা তাহলে?’
‘আফনে কি ছোডু মাইয়াডারে বকা খাওয়াইতে চাইন নাকি? জানেন না – এই টাইমে আফার মাথা গরম থাকে!’
‘জরিকে মাদিহা অনেক আদর করে! ওকে বকা দিবে না! এককাজ কর, ডাকতে হবে না! জরিকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দে ওর রুমে!’
‘আইচ্ছা! আফনে যহন কইতাছুইন তহন পাডাইতাছি!... ঐ জরি? জরি?’

জরির মা তার মেয়েকে ডাকতে লাগলো! আনিস অবাক হয়ে ভাবছে, এই মহিলার কি নিজের কোন নাম নেই? দারোয়ান, মোবারক সাহেব সবাইকেই দেখল মহিলাকে জরির মা ডাকতে! নাম জরির মা যখন, তাহলে মেয়ে হওয়ার পর থেকেই তাকে এই নামে ডাকা হচ্ছে! নাকি সেই বাচ্চাকাল থেকেই এই মহিলার নাম জরির মা? কি আজব ব্যাপার একটা! এই মহিলা ছোট বেলায় যখন খেলতে বের হত, তখনও কি সবাই ওকে জরির মা ই ডাকতো নাকি? মোবারক সাহেবের ডাকে জরির মায়ের নাম বিশ্লেষন থেকে বাস্তবে ফিরে আসলো আবার! ভদ্রলোককে বিদায় দিয়ে উপরে যাওয়ার সময় আবার ভাবা শুরু করলো জরির মা নাম নিয়ে! ভেবে কোন কুল কিনারা না পেয়ে আবার রোবট নিয়ে চিন্তা করা শুরু করলো!

খুঁজে খুঁজে বের করলো রোবটের উপর লেখা একটা বই! এই বইটাতে বিস্তারিত ভাবে বর্ননা দেওয়া আছে রোবট সম্পর্কে! কিভাবে বানাতে হবে, কিভাবে কাজ করাতে হবে, বানাতে হলে কি কি বিষয়ে ভাল জ্ঞান থাকা আবশ্যক ইত্যাদি ইত্যাদি! অন্য যে কেউ এই বই পড়লে কিছুক্ষনের মধ্যেই বিরক্ত হয়ে যাবে! কিন্তু আনিস বেশ তৃপ্তি সহকারেই পড়ছে! পড়তে পড়তে কম্পিউটারের সামনে গিয়ে বসলো! বইয়ে কিছু এক্সারসাইজ দেওয়া আছে, ইকুয়েশন মিলিয়ে সলভ করতে হবে! লেগে গেল সমাধান করা নিয়ে! কোনভাবেই মিলাতে পারছে না! অনেকক্ষন চেষ্টা করলো, কিন্তু না কোন কূল-কিনারা পেল না! অনেকরাতও হয়ে গেছে ঐদিকে! মেজাজ খারাপ করে কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমাতে গেল! লাইটের সুইচটা আবার তার বিছানার উলটো দিকে! লাইট বন্ধ করে বিছানার দিকে ফিরার সময়ে চেয়ারের পায়ার সাথে হোঁচট খেয়ে উলটে গেল!

*

মাদিহার মাথা দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে! সত্যি সত্যি না! কিন্তু মাদিহার মনে হচ্ছে সত্যিই বুঝি তার মাথা দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে! তার মাথার ভেতর আগুন লেগে গেছে প্রায়! পড়তে পড়তে কোনদিকে খেয়াল নেই তার! ঘড়িতে দেখল রাত দুইটা! ‘আর মাত্র আট ঘন্টা পরে পরীক্ষা!’ বলে ঘড়িটা ছুড়ে ফেলে দিল! এই ঘড়িটাই যত নষ্টের মূল! কত কষ্ট করে সব পড়া আত্নস্থ করলো, আর ঘড়িতে সময় দেখেই মনে হল সে কিছুই পড়ে নি! আবার পড়া শুরু করলো! টেবিল থেকে নতুন খাতা আনতে গিয়ে দেখে খাবার রাখা আছে! কে রেখে গেল খাবার? কিছুই মনে করতে পারছে না! ভূতুড়ে ব্যাপার মনে হচ্ছে তার! সে তো কাউকে রুমে আসতে দেখে নি! তাহলে আসলো কোত্থেকে?

যেখান থেকেই আসুক অনেক খিদে পেয়েছিল মাদিহার! খেয়ে নিল তাড়াহুড়ো করে! খেতে খেতেও খাতার পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়ছিল সে! খাওয়ার পর পেট যখন শান্ত হল, তখন মাথাটাও একটু ঠান্ডা হল! মনে পড়লো জরি খাবার গুলো দিয়ে গিয়েছিল! পরীক্ষার আগের দিন যে সে পাগলপ্রায় এটা বাড়ির সবাই জানে! মাথা ঠান্ডা হওয়াতে মনে পড়লো তার সব পড়াই পড়া হয়েছে! শুধু শুধু মাথা গরম করলে সব ভুলে যেতে পারে! বইপত্র গুছিয়ে, বিছানা রেডি করে রওনা দিল ছাদের উদ্দেশ্যে! ছাদে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে এসে সরাসরি ঘুম! পরীক্ষার আগের রাতে মাদিহার রুটিন এটাই! সাথে সকালের রুটিনেরও একটু পরিবর্তন হয়! বাগানে এক ঘন্টার জায়গায় হাটে মাত্র পনেরো মিনিট!

ছাদে আসার পর মাথা গরম অনেকটাই চলে গেল মাদিহার! এখন আর কোন দুশ্চিন্তা লাগছে না তার! একটু একটু কুয়াশা পড়ছে, বেশ ঠান্ডা পরিবেশ! শীত শীত লাগছে! আকাশে বড়সড় গোল একটা চাঁদ, পরিষ্কার আকাশে তারাদের মেলা বসেছে যেন! মুক্তোর মত ফুটে আছে মনে হচ্ছে! সুন্দর এই আকাশের দিকে মাদিহার মন পুরোপুরি ভাল হয়ে গেল! তারাগুলো দিয়ে সাজিয়ে এটা-ওটা কল্পনা করার চেষ্টা করছে! ছোটবেলায়ও এইকাজটাই করতো সে! এতে তার মন ভালো থাকে! কোন সময় তারা দিয়ে দৈত্য বানায়, কোন সময় জ্বলজ্বল করা কোন আলিশান প্রাসাদ, যখন যেটা মনে আসতো ঐটাই কল্পনা করে নিত আকাশের তারাগুলোকে নিয়ে! বড় হয়েও এইকাজটা ছাড়তে পারে নি! এইযে এখন তৈরি করে নিয়েছে একটি উজ্জ্বল ফুলের বাগান! যেই বাগানের সব ফুল সাদা, ফুলের প্রতিটি পাঁপড়ি থেকে আলোকছটা আসছে! এই সুন্দর আকাশ ছেড়ে ঘরে যেতে ইচ্ছে করলো না মাদিহার! ছাদে একটা ইজি চেয়ার আছে, ঐটাতেই হেলান দিয়ে ঘুমাবে চিন্তা করল! হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাবে এমন সময়ই কিছু পড়ার শব্দে চমকে উঠলো!

মনে পড়লো চিলেকোঠার ঘরটাতে এখন একজন বাসিন্দা আছে! এতক্ষন বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল। কথাটা মনে পড়তেই বিরক্ত হল! বাবার উপর প্রচন্ড রাগ লাগলো তার! এত এত জায়গা থাকতে চিলেকোঠাতেই কেন থাকতে দিতে হবে? মেজাজ খারাপ করে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় আবারো কিছু পড়ার শব্দ শুনলো! আর একটা মৃদু চিৎকার ‘আঁউচ!’। কি ঘটেছে বুঝতে দেরী হল না! অন্ধকার রুমটার দিকে তাকালো মাদিহা! রাগ লাগলো! ‘চোখে দেখতে পারে না ঠিকমত, তাহলে ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছে কেন? আলো জ্বালিয়ে রাখলেই তো পারে!’

রুমটায় গিয়ে প্রথমে লাইট জ্বালালো মাদিহা! আলো জ্বলে উঠার পর যে দৃশ্য দেখলো তাতে পেট ফেটে হাসি আসলো তার! ঘরের মাঝখানে ছেলেটা পড়ে আছে, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই খাতা, আর ছেলেটার বুকের উপর চেয়ারটা উলটে রয়েছে! হাসি চেপে রেখে ছেলেটার বুকের উপর থেকে চেয়ারটা সড়িয়ে দিল মাদিহা! এরপর নিজে থেকেই উঠে দাড়ালো ছেলেটা!
মুখে বোকা বোকা হাসি এনে বলল, ‘থ্যাংকস!’
‘আপনাকেও থ্যাংকস!’ তিক্ত স্বরে বলল মাদিহা!
‘আমাকেও কেন?’
‘আপনার ধুপুস করে পড়ার শব্দ না শুনলে রাতটা আমি ছাদেই ঘুমাতাম! আমার রাতের সুন্দর দৃশ্য দেখে ঘুমানোটা ভন্ডুল করার জন্যই থ্যাংকস!’

আনিস মাদিহার কথাটা কানেও তুলল না মনে হল! সে তার বোকা বোকা হাসি মুখেই রাখলো! হয়তো বুঝতে পারে নি যে মাদিহা এখন তাকে একটা সুক্ষ খোঁচা দিয়েছে!
‘আমি আপনাদের নতুন ভাড়াটে! আনিস!’
‘জানি আমি! আর নতুন ভাড়াটে না আপনি!’
‘তাহলে?’
‘আপনিই প্রথম ভাড়াটে!’
‘ও!’
‘আলো না থাকলে চোখে দেখেন না, তাহলে লাইট বন্ধ করে রাখেন কেন?’
‘ঘুমানোর জন্য বন্ধ করেছিলাম! কিন্তু বিছানাটা দূরে থাকায় লাইট বন্ধ করে আর ফিরে যেতে পারি নি!’
‘ঘরের মাঝখানে বই খাতা এইভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে তো পড়বেনই! এগুলো গুছিয়ে রাখেন!’
‘গুছিয়েই তো রেখেছিলাম! কিন্তু মাঝখানে যে কিভাবে এল?’
‘হাত পা গজিয়েছিল হয়তো! আপনাকে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল বইখাতারা! অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে এদের কম যন্ত্রনা দেন না! প্রতিশোধ নিয়েছে হয়তো আপনাকে ফেলে দিয়ে!’
‘হাহাহা!’
‘এখন হাহাহা করে না হেসে ঘুমান! রাত অনেক হয়েছে! আর দয়াকরে লাইট জ্বালিয়েই ঘুমান! নাহলে আবার পড়বেন!’
‘জ্বি আচ্ছা!’
‘আমার পরিচয়ই তো দিলাম না! আমি…’
‘জানি! আপনি মাহিদা! চাচা আপনার কথা বলেছে! আপনাকে অনেক আদর করে আপনার বাবা! তাইতো বাড়ির নামও রেখেছে মাহিদা ভিলা!’
‘কি???’ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো মাদিহা!
‘আপনি মাহিদা! চাচা আপনার কথা বলেছে! আপনাকে অনেক আদর করে আপনার বাবা! তাইতো বাড়ির নামও রেখেছে মাহিদা ভিলা!’
‘কি বললেন????’ চোখ জ্বলছে রাগে!
‘আপনি মাহিদা! চাচা আপনার কথা বলেছে! আপনাকে অনেক আদর করে আপনার বাবা! তাইতো বাড়ির নামও রেখেছে মাহিদা ভিলা!’ একই কথা তিনবার বলায় বেশ বিরক্ত হল আনিস! মেয়েটার কানের সমস্যা আছে এটাতো আগে বুঝা যায় নি! এতক্ষন তো ঠিকই ছিল!
‘কি বললেন??’
‘আপনি মাহি…’ বলতে গিয়েও থেমে গেল আনিস! ‘কিছু মনে করবেন না। আপনার কি কানে সমস্যা আছে?’
‘কানে সমস্যা আমার না! আপনার! বাবা আমার মাহিদা বলেছিল?’ তেড়ে উঠে জিজ্ঞেস করলো মাদিহা!
‘হ্যা! উনি তো বললেন, আমার মেয়ে মাহিদা…’
‘থামুন! আপনার শুধু কানেই সমস্যা না! চোখেও আছে নিশ্চয়! গেটের বাইরে বড় করে কি লেখা আছে পড়ে দেখেছিলেন?’
‘হ্যা! মাহিদা ভিলা!’
‘উফফ খোদা!’ বিরক্ত হল মাদিহা! ‘চোখ-কান দুটোরই চিকিৎসা করান!’
‘কেন?’
‘কারন আপনি কানেও শুনেন না! চোখেও দেখেন না!’
‘কে বলল আপনাকে এসব?’
‘কেউ বলে নাই! আর হ্যা, নিশ্চিত থাকুন বাবা আপনাকে আমার মাহিদা বলে নাই! আর গেটের বাইরেও মাহিদা ভিলা লেখা নেই!’
‘তাহলে কি আছে?’
‘নিজেই দেখে নিবেন!’
‘কি বিপদ? ভালভাবেই তো কথা বলছিলেন! নাম বলতেই এত রেগে গেলেন কেন?’
‘কারন আমার নাম মাদিহা! মাহিদা না!’ খেঁকিয়ে উঠে বলল মাদিহা!

আনিস মাদিহার চিৎকারে স্তব্ধ হয়ে গেল! নিজে এমন একটা ভুল করবে এটা ভাবে নি! আর ভুল করলেই যে কেউ এতটা ক্ষেপে যেতে পারে সেটাও সে জানতো না! একটা নামই তো ভুল করেছে মাত্র!
‘কি মনে থাকবে নাকি সহজ করে বলব?’ আনিসকে চুপ থাকতে দেখে আবার জিজ্ঞেস করল মাদিহা!
আনিস ঠিকমত শুনে নি কথাটি! শুধু সহজ করে কথাটাই কানে এসেছে! ‘জ্বি? সহজ করে?’
‘হ্যা সহজ করেই বলছি! ম আকার দ হ্রস ই কার হ আকার! মাদিহা! এখন সহজ হয়েছে? না লিখে দিয়ে যাব?’
‘না লিখতে হবে না! মনে থাকবে?’
‘মনে থাকলে বলুন কি নাম আমার?’
‘ম আকার দ হ্রস ই কার হ আকার! মাদিহা!’
‘হ্যা এইনামেই ডাকবেন! এখন ঘুমাতে যান!’

বলে ওখান থেকে চলে আসল মাদিহা! মেজাজ পুরোপুরি গরম এখন! কেউ তার নাম ভুল করে মাহিদা বললে আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারে না! রেগে গিয়ে কি যে বলে সে নিজেও মনে রাখতে পারে না! বেশির ভাগ মানুষই তাকে প্রথমে মাহিদা নামেই ডাকে! আর সে এতই রাগে যে, তাকে কেউ ক্ষেপানোর জন্যও পরবর্তীতে মাহিদা ডাকে না! নাম ভুল করে ডাকলে সে শুধু ক্ষেপেই না, এতই ক্ষেপে যে খুনও করে ফেলতে পারে ঐ মুহুর্তে!

পরদিন পরীক্ষা! মাথা গরম হয়ে আছে! ঘুম আসছে না! তারপরও জোর করে ঘুমালো! জোর করে না ঘুমালে পরীক্ষার আগে তার মাথা ঠান্ডা হবে না!

*
*
*


মধ্যভাগ
শেষভাগ

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১০

প্রামানিক বলেছেন: প্রথম হলাম। চা দেন।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এইরাইতে চা কই পাই কন তো দেখি?

আফাসম্প্রদায় হইলেও এক কথা আছিল, ভ্রাতা সম্প্রদায় তো জানেনই - চা চায়াই খায়। B-))
দাঁড়ান কোন আফারে পাইলে দুই কাপ ছিনায়া একটা আপনেরে দিমু।

মাগার বাই, পাঁচ মিনিটে পাঁচ হাজার শব্দ পড়লেন কেমনে? মাথায়ই ঢুকতেছে না। /:)

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮

বনমহুয়া বলেছেন: জরী আর আনিস এই নায়ক নায়িকা নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের এক অসাধারন উপন্যাস পড়েছিলাম। বইটার নাম মনে আসছেনা। যেখানে আনিস যুদ্ধে না কিসে যেন পা হারায়। চিলেকোঠার ঘরে থাকে। জরীর সাথে তার মন দেওয়া নেওয়া হয়। কিন্তু একসময় জরীর বিয়ে হয়ে যায়। এই অযোগ্য ছেলের কথা যেমনই জরী বলতে পারেনা তেমনি পারেনা আনিসও তার কথা কাউকে বলতে। এই গল্পও কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের নাটক হয়ে গেছে রক্তিমভাই।


তবে ভাবতেসি এত এত বড় বড় লেখা লিখেন কোন সময়? আপনার কয়টা হাত, কয়টা চোখ আর কয়টা মাথা?

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ফলো করিতো। আর এইটা হুমায়ুন আহমদের জন্মদিনের সময় গত বছর লিখেছিলাম। এইজন্য আরো বেশি বেশি এনেছি। তবে আপনি যেই গল্প বা নাটকের কথা বলতেছেন তা আমি দেখি নাই।

আনিস হল আজ রবিবার নাটকের নায়ক। কঙ্কা আর তিতলী তার প্রেমে পড়ে। চিলেকোঠায় থাকতো সেই আনিস।

আমি লিখলে বড়ই লেখি। একমাসে সব লেখি, বাকি বারো মাস ঐটি বাইরে ছাড়ি। এইটাই থিউরি আমার।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৪

উল্টা দূরবীন বলেছেন: বনমহুয়া দিদির সাথে সহমত। অনেক লেখা কাগজের কারাগারেই যাবজ্জীবন বন্দী হয়ে আছে। কিছুতেই কি বোর্ডে উঠে আসতে চাইছে না। আপনার মত যদি কম্পোজ করে ফেলতে পারতাম!!

প্রেমোপপাদ্য ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় ভাগ পোস্টকরলে একটা মিসকল দিয়েন।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: কি-বোর্ডের প্রতি মায়া ত্যাগ করিয়া ধরিয়া ফেলেন। লেখা কোন ব্যাপারই না। :-B

আপনার নাম্বার আগেরটাই আছে তো? ঐটা থাকলে মিসকল দিবার পারুম বইলা মনে হয় না। /:) =p~

৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৭

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: ভালো লাগলো, তয় আরও ছোড গল্প দিলে আমি খুশি হই। ;)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ছোড গপ্প তো লেখবার পারিনা, মেট। কী করুম! :(

জ্যাক স্প্যারো আর নাবিক সিনবাদ তো ভাই ভাই। পানির মধ্যে ভাসতে ভাসতে এইটা কনসিডার কইরালাইন। B-)) :D

৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩২

বনমহুয়া বলেছেন: দূরবীনভাই আপনি জানেননা রক্তিমভাই মানুষ না। উনি রোবোট। আপনার রোবোট হয়ে কাজ নেই। আপনি মানুষ থাকুন।


রক্তিমভাই সেই গল্পের নাম আমার মনে পড়ছে না তবে সেখানে আনিস আর জরী ছিলো। আনিস সম্ভবত আর্মীতে ছিলো যেখানে সে পা হারায়। একজন সফল দেশপ্রেমী অনেক যোগ্য একজন মানুষ ছিলো সে জরীর জন্য। কিন্তু তার ভাগ্য একদিন তাকে এতটাই দূর্ভাগা করে তোলে যে জরীর বিয়েতে বাঁধা দিতে পারেনা সে। এত আমাদের চিরাচরিত পরিবার ও সমাজেরই গল্প। তবে সেটা এতই অসাধারণ ছিলো যে যে কেউ না কেঁদে পারবেনা। আমি নামটা খুঁজে পেলে আপনাকে জানাবো।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: জলজ্যান্ত রক্তে টগবগ করা মানুষটারে রোবট বানায়া ফালাইলেন? খাড়ান, আপনেরেও কোন গপ্পে মাইরা ফালায়া ঐডার শোধ নেওয়া লাগবো। জরুরী হয়া গেছে।

ঐ গল্পের কথা আমি জানিনা। পড়িও নাই। পড়লে অবশ্যই এই নামদুটো ব্যবহার করতাম না। আনিস নামটা ব্যবহার করেছি কারণ সহজ ও রুচিশীল দেখে। অন্য কোন নামে এইটা পাইনি। আমি আবার চরিত্রের নামকরণে বেশ কাঁচা।
আর আনিসের বিবরণটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। অর্ধেক লেখার পর মনে হল - আজ রবিবারের সাথে মিল আছে। তখন আর বদলানো সম্ভব ছিল না। তাই ওভাবেই রেখে দিয়েছি। অবশ্য পাঠকদের কাছে এইটাকে কপি মনে হলে - এইটা নগদের উপরে ডাস্টবিনে।

হুমায়ুন আহমেদ অত্যন্ত প্রিয় লেখক আমার। থ্রিলার বিহীন কোন গল্প লিখলে উনার ছাপটা কিভাবে কিভাবে যেন এসেই পড়ে লেখায়। এইটা নিয়ে কাজ করছি। এবং কাজ করে থ্রিলারেই পড়ে আছি, অন্য কোন জনরার লেখা লিখতেই ইচ্ছা করেনা।

গল্প পড়ে আল্লাহ্‌র রহমতে কাঁদি নাই কখনো। তবে কৃষ্ণপক্ষ পড়ে মন খারাপ হয়েছিল।

৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

উল্টা দূরবীন বলেছেন: হ ভাই। লম্বর আগেরটাই আছে। কিন্তুক কেস খাইছে। ঢাকা মেট্রো ং ৪২০৪২০

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ৪২০৪২০ তো আমার নিজেরও নাম্বার। কল দিলে তো ঢুকবোই না ভাই। :(

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: মিসকল দিছিলাম ভাই। গেছিলো?

৭| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৩

পার্থিব পার্থ বলেছেন: মাদিহা হুমায়ুন আহমেদের নায়িকার মতই। হুমায়ুন আহমেদের নায়ক চরিত্রগুলো হয় একটু সহজ সরল টাইপ। আর নায়িকাগুলো অনেকটা জলও টানে, আগুনও টানে টাইপ। তাকে মাথায় রেখেই মনে হয় গল্পটা লিখেছেন।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: নাহ! নায়িকাকে কারো সাথেই মিলাই নাই। নায়িকাকে তার সাথেই মিলিয়েছি। সে যেইরকম সেইটার বর্ণনাও দিয়েছি।
তবে এইটা ঠিক, সে নিজে আবার গল্পের ক্যারেক্টারের মত।

সবমিলিয়ে, মিলে গেছে। কিন্তু মিলাই নি।

৮| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

পার্থিব পার্থ বলেছেন: ব্যাপার না! অবচেতন মন বলে একটা জিনিস আছে। সেই অবচেতন মনের খেলায় না মিলাতে চাইলেও অনেক কিছু মিলে যায়। গল্পের ক্যারেক্টার হচ্ছে অর্ধেক রমণী তুমি অর্ধেক কল্পনা টাইপ! কিছুটা বাস্তব থাকবে, কিছুটা কল্পনা।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এইটা না চাইতেই আসার মত হয়ে গেছে মে বি। এই ক্যারেক্টারটাই মেইন তো, এইটাকে স্বকীয়ই রেখেছি। তবে মিল পেলে সেটা একেক পাঠকের ব্যাপার। ধন্যবাদ।

৯| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ স্যারের প্রায় সব বই এর নাম, চরিত্র , গল্প আমার মুখস্ত। বনমহুয়া আর আপনার কমেন্টে যে আনিস এবং জরীর বইটির কথা এসেছে সে বই এর নাম নির্বাসন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি অসাধারণ বই। বইটি সকলের পড়া উচিৎ। দেশপ্রেমিক একটি ছেলের স্বপ্ন এবং প্রেম হারাবার গল্প। সহ্য করা কঠিন তার কষ্টকে।

আপনার লেখাটি ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আপনার নিকটাই প্রমাণ করছে, হুমায়ুন আহমেদ পিডিয়া আপনিই। :)
ধন্যবাদ নামটা বলে দেওয়ার জন্য। ঐটা পড়া থাকলে ঐ গল্পের আসল দুই চরিত্রের নাম অবশ্যই আমার লেখায় আনতাম না। অজানায় হয়ে গেছে এইটা।

ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়ার জন্যও। :)

১০| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কাল পড়ে বলব কেমন লেগেছে

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: অকা ভাই! :)

ট্রিপল কমেন্ট হয়ে গেছে অবশ্য। :D

১১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কাল পড়ে বলব কেমন লেগেছে

১২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কাল পড়ে বলব কেমন লেগেছে

১৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

প্রামানিক বলেছেন: রাইতে পড়ি নাই ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে হেডিং পইড়াই চা চাইছি। এখন পড়া শেষ করলাম। চমৎকার লেখা, খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: খাইছে! তাইলে তো আপনারে চা দেওয়া এখন অবশ্যই কর্তব্য হয়া গেছে। কিন্তু এখনও চা শূন্যই আমি। :(

আপনারে ধন্যবাদ। :)

পরের পর্বগুলো আপনার পড়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.