নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেমোপপাদ্য (মধ্যভাগ)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮

প্রথমভাগ


চতুর্থ

পরীক্ষা দিয়ে মন-মেজাজ দুটোই খারাপ হল মাদিহার! মাদিহা কখনো কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পায়নি! সর্বদাই প্রথম স্থান অধিকার করেছে! এইটা ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম পরীক্ষা! এই জায়গায়ও সে তার প্রথম স্থান পাওয়ার রেকর্ডটা অব্যাহত রাখতে চেয়েছিল! কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে পারবে না আর রাখতে! এইবার অন্যকেউই প্রথম হবে! কারন পরীক্ষায় সে ৩ মার্কের একটা প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে নি! কোন ভাবেই মনে করতে পারছিল না উত্তরটা! পরীক্ষা অসম্ভব খারাপ হয়েছে তার! তার ভাবনা এটাই! এর পিছনে দায়ী করছে চিলেকোঠার ভাড়াটিয়া আনিসকে! ঐ ছেলেটা তার নাম ভুল না করলেই সে রাতে রেগে ঘুমাত না, আর উত্তরটাও ভুলতো না! নাম ভুল করে মেজাজ খারাপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তার!

‘মাদিহা! পরীক্ষা কেমন দিলি?’ পরীক্ষার শেষে শেফালী জিজ্ঞেস করলো!
‘ভালো না রে!’ মন খারাপ করা জবাব দিল মাদিহা! ‘৩ মার্ক ছাড়ছি!’
‘প্রশ্ন প্রচন্ড কঠিন হয়েছে! সবাই যে জায়গায় পাশ ফেল নিয়ে টানাটানি সেই জায়গায় তুই তিন মার্কের জন্য মন খারাপ করে বসে আছিস?’
‘কি বলিস তুই? প্রশ্ন তো সোজাই হয়েছে! সব সহজ প্রশ্ন!’
‘তোর কাছে সবই সহজ! তুই তো মানুষ না, সাক্ষাৎ অ্যালিয়েন! এখন বল তোর মত অ্যালিয়েন তিন মার্ক ছাড়লো কি করে?’
‘উত্তরটা মনে হচ্ছিল না কোন মতেই!’ প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল মাদিহা!
‘বলিস কি? তোর উত্তর মনে ছিল না?’ শেফালীর গলায় একই বিষ্ময় আর বিদ্রুপ দুটোই ফুটে উঠল!
‘হুমম! মেজাজ খারাপ ছিল! তাই উত্তরটা মনে করতে পারি নি!’
‘তোর এইটা একটা দোষ! সবসময়ই বাসায় মেজাজ খারাপ করে রাখিস! আবার কি করলো আঙ্কেল?’
‘বাবা না! বাবার ভাড়াটিয়া!’
‘সে আবার কি করলো?’
‘মাহিদা বলেছে!’
‘ইন্নালিল্লাহ্! এরপর ঐ ভাড়াটিয়া কি স্ট্রোক করেছে?’
‘তা তো জানি না! তবে যেভাবে বলেছি, তাতে করলে করতেও পারে!’

আগের রাতের পর এই প্রথম হাসলো মাদিহা! রাতে আনিসকে যেভাবে ভড়কে দিয়েছে ঐ সময়ে আনিসের বোকা বোকা চেহারার কথা মনে করে জোরেই হাসতে লাগল! শেফালীকে ভড়কানোর কথাটা বলতে যাবে এমন সময়ই হাসিটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল তার! রাতে যেভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেটাকে কথা বলেছে সেইভাবে বলা ঠিক হয় নি! এখন কি ভাববে আনিস? তার সম্পর্কে একটা বাজে ধারনা নিয়ে থাকবে সবসময়! নাম ভুল করলে মাদিহার মাথা ঠিক থাকে না ঠিকই, তবে সেও তো বড় হয়েছে! আগে যেভাবে ক্ষেপে যেত এখন সেইভাবে ক্ষেপে যাওয়াটা ঠিক না! বয়সের সাথে সাথে বাইরের মানুষের সাথে রাগ দেখানোটাও একটু কমাতে হবে তার! আর তার নাম বেশিরভাগ মানুষই প্রথমে ভুল করে! এটাতে আস্তে আস্তে সে অভ্যস্তও! তারপরও আনিসকে এতটা মেজাজ দেখানো উচিৎ হয় নি তার! ক্ষমা চাইতে হবে! রাগের মাথায় একটু বেশিই বলে ফেলেছে!

তবে শেফালীর সাথে একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, সেখানেই গেল আগে! শেফালীর বোনের ছেলের জন্মদিন আজ! মাদিহা সুন্দর দেখে একটা স্পোর্টস ঘড়ি উপহার দিল ছেলেটাকে। ছেলেটা ঘড়ি পেয়ে মহাখুশি! একশোবার তাকে বলেছে ‘থ্যাংকু খালামনি!’ একটা ঘড়ি দিলেই যে সে এতবার খালামনি ডাক শুনতে পারবে, সেটা জানা ছিল না! ছেলেটার খালামনি ডাকে মন ভাল হয়ে গেল তার! ছোটখাট অনুষ্ঠান ছিল! সেখানেই সবার সাথে মজা করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলো মাদিহা! মুখে তখন ছেলেটার জন্মদিনের মাখানো কেক শুকিয়ে মুখের চামড়া টানাটানি করছে! কেক খাওয়ার বস্তু! সেটাকে কেন যে না খেয়ে সবাই মুখে মাখে সেটা ভেবে পায় না! রুমে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে আনিসের চিলেকোঠার ঘরে গেল! ঘরটায় তালা ঝুলানো! আনিস কোন কারনে বাইরে গেছে! মাদিহার অস্থির লাগছে! যতক্ষন না আনিসের সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য ক্ষমা চাইবে ততক্ষন অস্থিরতার ভিতরেই থাকবে সে! ছাদে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলো! জ্যোৎস্নার আলো বাড়তে শুরু করেছে! আকাশে আজও অনেক তারা! কিন্তু তারা গুলো তার অস্তিরতা কমাতে পারলো না! ঐযে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এমন ছটফটই করবে! রাতে আনিস আসলে, এসে ক্ষমা চেয়ে নিবে!

কিন্তু রাতে আর আসা হল না তার! আগের রাতে ভালমত ঘুমাতে পারে নি আর সারাদিনে ক্লান্তও ছিল প্রচুর রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো! ভোরে উঠে আর ক্ষমা চাওয়ার কথা মনে রইলো! বাগানে হাটাহাটি করে মন ভাল হয়ে গেল!

পঞ্চম

শুক্রবার! প্রায় ছয়দিন পর আজকে একটু বিশ্রামে আছে আনিস! এই কয়দিনে সারাদিন দৌড়ের উপরই থাকতে হয়েছে তাকে! আজকে শান্তির দিন! এটা সাধারন যেকোন মানুষ হলে তার ক্ষেত্রে একদম সঠিক কথা! কিন্তু আনিসের কাছে আজকের দিনটাই সবচেয়ে বাজে দিন! এই ছয়দিন সে বেশ ভালোই ছিল!

ছয়দিনে সে বেশির ভাগ সময়ই ছিল প্রফেসর হামিদ স্যারের বাসায়! হামিদ স্যার রোবোটিক্সে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন! উনার জ্ঞান ভালো রোবোট নিয়ে! কিভাবে কি করতে হবে, কি কি শিখা লাগবে সবই তিনি বুঝিয়ে দিলেন আনিসকে! হামিদ সাহেব প্রথমে আনিসকে দেখে বিরক্ত হলেও আনিসের আগ্রহ দেখে মহানন্দে ছিলেন! এতদিনে তিনি তার মনমত ছাত্র পেয়েছেন! নাহলে আজকাল ছাত্রদের মাঝে এমন আগ্রহ তিনি খুঁজে পান না! শুরুর দিকে ঝোকের বশে অনেকেই থাকে, কিন্তু এত কিছু জানা লাগবে শুনেই তার সংখ্যা কমে যেতে থাকে! এতদিনে আনিসও রোবট নিয়ে অনেক কিছু শিখেছে! আরো অনেক কিছু বাকি আছে জানার! হামিদ স্যারের খোঁজ পেয়ে সে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে! মনে মনে আরেকবারও রাজনৈতিক নেতাদের ধন্যবাদ দিল! ক্লাস শুরু হলেই ফুল দিবে – পণ করে রাখল! আর অনুরোধ করবে, যাতে তারা এমন বিবাদ করে সবসময় ছুটির ব্যবস্থা করে! তাতে তার রোবট বানানোন শখটা পূরন হয়ে যাবে!

হামিদ স্যার আনিসকে আরো কয়েকজনের ঠিকানা দিয়েছিলেন যারা এই মুহুর্তে রোবট নিয়ে কাজ করছে! আনিস এক এক করে সবার কাছেই গেল! সবাই তার কথা শুনে প্রথমে একটা কথাই বলেছিল, ‘ভাই! তোমার কি মাথার তারে কোন সমস্যা আছে নাকি? আগে তো কোর্স কম্পলিট করো! তারপরে রোবট নিয়ে জানতে আইসো!’ আনিস তারপরও রয়ে যায়! তাদেরকে তাদের বানানো রোবট সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে! প্রথমে তারা আনিসকে দেখে পাগল মনে করলেও তার জ্ঞান-বুদ্ধি আর জানার আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছে! খুশি মনেই তারা তাদের রোবট সম্পর্কে সব বর্ননা দিয়ে গেছে! এতে তারা খুশিও হয়েছে! অন্য সবাই তো ‘রোবটটা কিরকম কাজ করবে?’ ‘এটা কি খেলনা?’ এই ধরনের প্রশ্ন করে গেলেও জানতে চায় নি এটা তৈরি করতে তাদের কতভাবে মাথা ঘামাতে হয়েছে! আনিসই প্রথম যে তাদেরকে তাদের রোবটের যাবতীয় খুটিনাটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে!

আনিস এই ছয়দিনে অনেক কিছুই জেনেছে! এখন তার আরও পড়াশোনা করতে হবে! অনেক সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয়গুলোও ভালভাবে জানতে হবে! বই খুলে এমনই একটা অধ্যায় পড়ছে! সারাদিন যাবৎই পড়ছে! কিছু ইকুয়েশন আছে অধ্যায়টায়! মিলানোর চেষ্টা করছে! কিছু কিছু মিলছে, কিছু কিছু মিলছে না! যেগুলো মিলছে না ওগুলো বেশ ভাবনায় আছে! ভাবছে, হামিদ স্যারের কাছে এইগুলো জানতে আবার যাবে কি না! ভাবনার ছেদ পড়লো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে! বিরক্ত হয়ে মুখ তুলে জানতে চাইলো, ‘কে?’
‘আনিস ভাই! আমি মাদিহা! একটু বাইরে আসবেন?’

বই হাতে নিয়েই দরজা খুলল আনিস! বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো মাদিহার দিকে! নামটা ভালভাবে মনে করার চেষ্টা করছে!
‘জ্বি বলুন ম আকার দ হ্রস ই কার হ আকার! মাদিহা!’
‘ভাইয়া! এভাবে বলতে হবে না! শুধু মাদিহা বললেই চলবে!’
‘জ্বি বলুন মাদিহা!’
‘ভাইয়া! আমি আপনার থেকে ছোট! আমাকে তুমি করে বলবেন! বড়রা কেউ আমাকে আপনি করে ডাকলে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগে!’
‘আচ্ছা বল! কি বলবা?’
‘ভাইয়া! ঐদিন রাতে ঐভাবে কথা বলার জন্য দুঃখিত! স্যরি!’
‘হুমম! আচ্ছা!’
‘মাফ করেছেন তো?’
‘হুমম!’
‘তাহলে ভাইয়া চলেন ছাদে বসে একটু গল্প করি?’
‘না এখন পারব না! এখন পড়ছি!’
‘কি পড়ছেন?’
‘রোবট নিয়ে! পরে গল্প করব! এখন যাই!’

বলে মাদিহার মুখের উপরই দরজা লাগিয়ে দিল আনিস! আবার বসে গেল ইকুয়েশন মেলাতে!

*

মুখের উপর আনিস এইভাবে দরজা লাগিয়ে দিবে ভাবতে পারে নি মাদিহা! হতবাক হয়ে গেল! এই মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সে এতদিন অস্থিরতায় ভুগছিল! একে ‘স্যরি’ না বললেই বরং ভালো হত ভাবল মাদিহা! কারন, এই মানুষটা বোধহয় ভুলেই গেছে সে কেন তাকে স্যরি বলতে এসেছিল!

এইভাবে মাদিহার মুখের উপর কেউ দরজা লাগায়নি কোনদিন! মাদিহার এতে কান্না চলে আসলো! মনে মনে গাল দিতে লাগলো আনিসকে! ‘রোবট নিয়ে পড়ালেখা করে রোবট বানানোর দরকার কি? তুই নিজেই তো একটা রোবট!’

রোবটমানব নিয়ে বেশিক্ষন ভাবল না অবশ্য সে! আকাশের দিকে তাকালো! জ্যোৎস্না নেই! চাদের আলোও অতটা প্রখর না! তবে পরিষ্কার আকাশে তারা গুলো স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে! যদিও তারা গুলোও এতটা জ্বলজ্বল করছে না! তারাগুলোকে দেখে তার মনে হচ্ছে তারাগুলোর মন বোধহয় তারমতই খারাপ আজকে! তাই এমন ম্লান দেখাচ্ছ!

আশ্চর্য তারই বা মন খারাপ হওয়ার কি আছে? সে ই বা কেন মন খারাপ করে আছে?
উত্তরগুলো তার নিজেরও ভাল করে জানা নেই! নিজেও বুঝতে পারছে না তার মন খারাপ করার কারন কি! মন ভালো করার জন্য আকাশের তারাগুলোকে কল্পনা করে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করলো! কিন্তু আজকে সেটাও পারছে না! কারনটা কি? তারাগুলো ম্লান হয়ে আছে সেই কারনে নাকি তার মন আজকে অনেকবেশি খারাপ?

কিছুক্ষন ছাদে থেকে রুমে চলে আসলো! পরের পরীক্ষা আরো কয়েকদিন পরে! পরীক্ষার এত আগে আগে পড়তে ভালো লাগে না মাদিহার! তাই পড়ার বই খাতায় হাত দিলো না! খুঁজে খুঁজে বের করলো তার মায়ের উপহার দেয়া ডায়েরীটাকে! তার মন খুব ভাল বা খুব খারাপ থাকলেই সে ডায়েরীতে লিখে! আজ মন খুব খারাপ তাই ডায়েরীতে লিখবে! এতদিন লিখেছে অন্য কোন না কোন ডায়েরীতে! কিন্তু মায়ের দেয়া ডায়েরীতে সে আজই প্রথম লিখছে!

ষষ্ঠ

তিনমাস হতে চলল প্রায়! শীতের পুরোটা সময় দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেল! যদিও শীতটা খুব যন্ত্রনাদায়ক ছিল! কিন্তু শীতটার জন্য বেশ মায়া লাগছে মাদিহার! আবারো এই শীতের ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা এসবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে অনেকটা সময়! অবশ্য এই তিনমাসেও মাদিহা অপেক্ষা করেছে! কোন আবহাওয়া বা কোন ঋতুর জন্য না, রোবট মানবের সাধারন মানব হওয়ার! অপেক্ষা করেই চলেছে! করেই চলেছে! কেন অপেক্ষা করছে সেটার কারন জানা নেই তার! তবু অপেক্ষা করছে!

তার ভাবতেও অবাক লাগে একটা মানুষ প্রকৃতির এমন সুন্দর দৃশ্য গুলো থেকে কিভাবে বঞ্চিত রাখতে পারে? এত সুন্দর কুয়াশা, কুয়াশার পরের মিষ্টি রোদ, গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু, ঘন কুয়াশার জ্যোৎস্না রাত – এগুলো উপভোগ না করে কিভাবে পড়ে থাকতে পারে এক কাঠখোট্টা রোবট নিয়ে! ভেবে ভেবেই কাহিল হয়ে গেছে! আর ভাবার শক্তি নেই তার!

আনিসকে যখন তার বাবা চিলেকোঠার ঘরটা দিয়েছিল তখন বেশ রেগে উঠেছিল সে! সে ছাদে আগের মত স্বাধীন ভাবে চলতে পারবে না, আনিস তাকে বিরক্ত করতে পারে! এইসব চিন্তা করে এখন নিজেই লজ্জা পায়! যাকে নিয়ে এই কথাগুলো বলেছিল, সেই মানুষটা চিলেকোঠার ঘরে আছে কি নাই সেটাও বুঝা যায় না! যদি কখনও ধড়াম করে উলটে পড়ে তখন মনে হয় যে না মানুষ আছে এই ঘরে! মাদিহা যদি আনিসের ঘরের সামনে গিয়েও বসে থাকে তারপরও মনে হয় না আনিস বুঝতে পারবে যে, তার দরজার মুখেই কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে! এটা তো অনেক দূরের কথা! তাকে তো টেনেও ঘর থেকে বের করা যায় না!

কতবার মাদিহা গিয়ে বলল, ‘আনিস ভাই! আকাশে অনেক তারা! আসেন তারা দেখে দেখে গল্প করি!’
‘আনিস ভাই! অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে আকাশে! চলেন না, চাঁদের নীচে বসে কথা বলি?’
‘আনিস ভাই! ঘন কুয়াশা পড়েছে! চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে!’
‘আনিস ভাই!......’ ‘আনিস ভাই!......’ ‘আনিস ভাই!......’

প্রতিবারই আনিসের একই উত্তর, ‘এখন না! এখন পড়ছি! পরে গল্প করব!’

মাদিহা প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস করতো, ‘কি পড়ছেন?’ এখন আর জিজ্ঞেস করে না! জানেই তো উত্তরটা কি! রোবট নিয়ে পড়ছে।
মনে মনে প্রতিবারই ‘রোবট একটা!’ বলে গালি দিয়ে মন খারাপ করেছে!

আজকে অবশ্য এই পণ করে এসেছে মাদিহা! আনিসকে টেনে হলেও রুম থেকে বের করে চা খেতে খেতে গল্প করবেই! আনিসের সব রোবটগিরির দফারফা করে দিবে!
দরজা খোলাই ছিল! সাহস করে রুমে ঢুকে গেল মাদিহা! রুমে ঢুকে একদম পাথরের মূর্তি হয়ে গেল মাদিহা! আনিস তার সমস্ত আসবাব পত্র গোছগাছ করে ফেলেছে! বিছানা গুটিয়ে নিয়েছে! বই-পত্র সব ট্রাংকের ভিতরে! শুধু বাকি আছে টেবিলের উপর রাখা কম্পিউটারটা গুটানো! ওটাতে দিল আনিস!
‘আনিস ভাই? এসব কি?’ অবাক হওয়া গলায় বলল মাদিহা!
‘হল খুলে ফেলেছে! হলে চলে যেতে হবে! কালকে থেকে ক্লাস!’
‘এইকথা আমাদের কাউকে জানান নি কেন আগে?’
‘মনে ছিল না! এই যে এখন জানালাম!’
‘জানিয়ে ভাল করেছেন!’ ক্ষোভ মিশ্রিত কথাটা বলে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো মাদিহা! কথাটা শুনে খুব মন খারাপ হয়েছে তার! আনিস বাসায় উঠার আগেই বলেছিল সে তিনমাস থাকবে! তিনমাস পরে চলে যাবে! এতে মন খারাপ করার কি আছে? টের পেল তার চোখ দিয়ে ফোটায় ফোটায় পানিও পড়ছে! কাঁদছে সে! কেন কাঁদছে? মাদিহা নিজেও জানে না কাঁদছে কেন! তার এখন কিছু জানার দরকারও নেই! তার এখন যেভাবেই হোক আনিসের যাওয়া আঁটকাতে হবে! চোখ মুছে মোবারক সাহেবের কাছে গেল সে!

‘বাবা!’
‘হ্যা! মা বল! একিরে তোর চোখ লাল কেন? কাঁদিছিলি নাকি? কেউ কিছু বলেছে? কে বলেছে?’
‘তোমার ভাড়াটিয়া…’
‘আনিস? সে তোকে কি বলেছে? ভালো ছেলে মনে করেছিলাম! আমার মেয়েকে কাঁদায়? ওকে বাড়ি থেকে করে ছাড়ব আজকেই!’
‘উফফ! বাবা! কথা না শুনেই হুমকি-ধামকি শুরু! তোমার বের করতে হবে না! আনিস ভাই নিজে থেকেই চলে যাচ্ছেন! আর আমাকেও উনি কিছু বলেন নি!’
‘সে কিরে! কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে কেন?’
‘আমি কিছু জানি না! তোমার ভাড়াটিয়া! তুমিই বুঝো!’
‘কিন্তু তুই কাঁদছিস কেন?’
‘জানি না! তুমি আনিস ভাইয়ের সাথে কথা বলো!’
‘কি বলব?’
‘বাসা থেকে উনি যেতে পারবেন না! এটাই বলবা!’ বাবার মুখের উপর একনাগাড়ে কথা বলেই চলে গেল মাদিহা!

মোবারক সাহেব হতবিহ্বলের মত তাকিয়ে আছেন। উনার মেয়ে কেন কাঁদছে বুঝতে পারছেন না! আনিস চলে যাচ্ছে দেখেই কি কাঁদছে? ভেবে কুল পাচ্ছেন না কোন! তবে আনিস ছেলেটাকে উনারও ভালো লাগে! ছেলেটা পরিশ্রমী, তার লক্ষ্যের দিকে বেশ অটুট! ছেলেটাকে যেতে দিতে তারও মন সায় দিচ্ছে না! যদিও ভাড়াটিয়া, কিন্তু আনিসকে কোনদিন ভাড়াটিয়ার নজরে দেখেন নি তিনি! নিজেদের সাথে খাইয়েছেন! তাদের পরিবারের একজনই ভাবতে শুরু করেছিলেন! সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় ভাবছে কিভাবে আঁটকানো যাবে আনিসকে! বেশিদিন না, আর অল্প কয়টা দিন থেকে যাওয়ার কথা বলবেন ভাবছেন!
আনিসের রুমে ঢুকে দেখলেন ছেলেটা সব গোছগাছ করে ফেলেছে! হয়তো বের হয়ে যাবে এখনই! কিভাবে কি বলবেন বুঝতে পারছেন না!
‘বাবা আনিস!’

ট্রাংকে তালা লাগানোয় ব্যস্ত ছিল আনিস! মোবারক সাহেব যে পিছে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা বুঝতে পারে নি সে! ডাক শুনে পিছনে তাকালো! ‘চাচা! বসেন!’
‘তুমি নাকি চলে যাচ্ছ শুনলাম!’
‘জ্বি চাচা! হল খুলেছে! কালকে থেকে ক্লাস শুরু! যেতেই হবে!’
‘না বলেই চলে যাচ্ছো?’
‘মনে ছিল না চাচা! তবে না বলে যেতাম না, যাওয়ার আগে আপনাকে বলে যেতাম! আর চাচা…’ বলে আনিস মোবারক সাহেবের হাতে একটা হলদে খাম ধরিয়ে দিল!
‘এটা কি?’
‘বলেছিলেন না, খামে করে যাই দিব তাই ভাড়া হিসেবে নিবেন? তিনমাসে তো কিছুই দেই নি! আজকে দিলাম! তিনমাসেরটা একসাথে!’
‘এটার দরকার ছিল না কোন! তোমাকে ছেলে হিসেবেই দেখি আমি! ছেলে রুমে থাকলে কি তার কাছ থেকে টাকা নিতাম?’
‘তা নিতেন না, কিন্তু…’
‘কোন কিন্তু নেই! এটা তোমার কাছেই রাখো! আর বাবার বয়সী হিসেবে একটা অনুরোধ করি?’
‘চাচা এভাবে বলছেন কেন? অনুরোধ না আদেশ করেন!’
‘আজকে যেয়ো না! দুইটা দিন এখান থেকেই ক্লাস করো! শুক্রবার আসতেছে সামনে শুক্রবারেই যেয়ো!’
‘কিন্তু চাচা! ক্লাস যে…’
‘এতদিন থাকলে যেহেতু আর দুইটা দিন থাকলে কি খুব অসুবিধা হবে?’
‘না চাচা! কোন অসুবিধাই হবে না! আমি শুক্রবারেই যাবো!’

সপ্তম

অনেকদিন পর ক্লাস! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই তৈরি হয়ে নিল আনিস। বেশ লম্বা একটা ছুটি পেয়েছিল সে। ছুটিটা তার জন্য বেশ উপভোগ্যও ছিল। পড়ার চাপে তার প্রিয় বিষয় রোবট নিয়ে আলাদা করে ভাবার সুযোগ পাচ্ছিল না! এই অনাকাঙ্খিত ছুটিটা তাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে! মনে মনে আরো একবার রাজনৈতিক নেতাদের ধন্যবাদ জানালো! তাদেরকে ফুল দেওয়ার কথাটাও ভুলে নি সে! ভাবছে, ফুল দিয়ে সাথে বলবে তারা যাতে তাদের অস্থিরতা জারি রাখে! এতে আবারও বন্ধ পাওয়া যাবে! ক্লাস নিয়মিত হতে থাকলে আর রোবট নিয়ে পড়তে পারবে না। রোবট নিয়ে আনিসের এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে! আরেকবার রোবট নিয়ে ভালো করে পড়ার সুযোগ পেতে অনেক দেরী। এতদিন অপেক্ষা করতে চায় না সে!

যেইভাবা সেই কাজ! চা দিয়ে রঙিন মেঘ বানানো সাদা গেঞ্জীটা পড়ে নিল! যদিও মেঘ গুলো এখন আর রঙিন নেই! কেমন যেন কালচে বর্নের হয়ে গেছে! তবে চা দিয়ে অনাকাঙ্খিত ভাবে তৈরি এই আল্পনাটা গেঞ্জীতে বেশ ভালোই মানিয়েছে! তার চেহারার সাথেও ভালোই মিলে! ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে নিলো কয়েক গোছা! ফুল কিনে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা করলো!

তাকে ফুল হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল তার পরিচিতদের বেশির ভাগেরা! আনিসের হাতে ফুল আর অমাবস্যার রাতের আলোকিত চাঁদ দুটো সমান কথা! যে পড়া আর রোবট ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না, কোন দরকার না লাগলে মেয়েদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না সে আজ ফুল নিয়ে! পরিচিতদের মাঝে তাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়ে গেল। কাকে দিবে সে ফুলটা? ফুল যেহেতু এনেছে, তাহলে নিশ্চয় কোন মেয়েকে দেওয়ার জন্যই এনেছে! কে সেই ভাগ্যবান বা দুর্ভাগ্যবান মেয়ে? অনেকেই ভাবছে তিনমাসের ছুটিতে কেউ আনিসের ব্রেইনওয়াশ করেছে কিনা! পৃথিবীতে অষ্টম আশ্চর্য এর ভোটিং হলে তারা সকলেই নির্দ্বিধায় এই ঘটনাটাকেই বাছাই করবে!

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আনিসের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হল রঞ্জু! কাছের বলতে হলে একই রুমে থাকে তারা! এইখান থেকেই টুকটাক একটা বন্ধুত্ব শুরু হয়েছে তাদের! আনিসের সম্পর্কে বলতে গেলে রঞ্জুই ভাল জানে। আনিসকে এতদিন দেখতে দেখতে আনিসের কিছুই আর এখন রঞ্জুকে অবাক করতে পারে না। সে জানে, আনিস কিছুটা পাগল টাইপের! পাগল টাইপ বলতে একদম বদ্ধ পাগল না, তবে আনিসের মাথা কাজ করে সাধারনদের থেকে একটু ব্যতিক্রম ভাবে! সেই রঞ্জুও আনিসের হাতে ফুল দেখে হা করে উঠলো! দৌড়ে গেল আনিসের কাছে!
‘দোস্ত! তোর হাতে এইসব কি?’ অনেকদিন পর আনিসের সাথে দেখা তার! প্রথমে জিজ্ঞেস করবে যে ‘কেমন আছিস?’ ‘ছুটি কেমন কাটাইলি’ এইসব! কিন্তু তার মাথায় এখন আর এইসব কিছুই আসছে না!
‘ফুল চিনিস না? এগুলো ফুল!’
‘ফুল তো চিনিই!’
‘চিনলে শুধু শুধু জিজ্ঞেস করছিস কেন?’
‘না মানে এগুলো সত্যিই ফুল কিনা সেটা জানার জন্য! এগুলো কি আসলেই ফুল?’
‘কি আবোল-তাবোল জিজ্ঞেস করছিস? ফুল আবার নকল হয় নাকি?’
‘হয়তো! প্লাস্টিকের ফুল তো নকল ফুলই! তোর হাতের গুলোকে অবশ্য প্লাস্টিক মনে হচ্ছে না!’
‘আসল ফুলই রে এগুলো!’
‘সত্যিই আসল ফুল এগুলো? নাকি কোন প্রকার রোবট জাতীয় ফুল?’
‘রোবট জাতীয় ফুল হতে যাবে কেন? এগুলো একদম জেনুইন ফুল!’
‘তোর হাতে ফুল!! আচ্ছা যাই হোক, ফুল গুলো কার জন্য? কোন মেয়ের প্রেমে পড়লি?’
‘প্রেমে পড়তে যাবো কেন? প্রেমে পড়লেই কি ফুল থাকে নাকি মানুষের হাতে?’
‘না! তা না! কার জন্য?’
‘কার জন্য তার তো নাম জানি না!’
‘কইস কি তুই? নাম না জেনেই প্রেমে পড়ছিস?’
‘ধুর! প্রেমে পড়ছি কে বলল? আচ্ছা, আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা জানি কে?’

আনিসের এই কথা শুনে রঞ্জুর চোখ যতটুক পারে বড় হয়ে গেল! আরেকটু বড় হলেই, চোখের কোটর থেকে চোখ দুটি গড়িয়ে পড়বে এমন অবস্থা! রঞ্জু তার জীবদ্দশায় এতটা অবাক কোনদিনই হয় নি! আনিস প্রেমে পড়েছে কি না জানে না সে! যদি পড়েও, কার প্রেমে পড়েছে আনিস তার নামও জানে না! ফুল দিতে এসেছে, কিন্তু একা দিতে মনে হয় সাহস পাচ্ছে না! তাই নেতাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছে। রঞ্জু বুঝতেই পারছে না, এটা কি আসলেই তার রুমমেট আনিস নাকি সে তিনমাসে তার মত দেখতে কোন রোবট বানিয়ে কোন প্রোগ্রাম ঢেলে ঐটাকে ক্যাম্পাসে পাঠিয়েছে? ঘটনা কি ঐটা পরে জানলেও হবে, আগে তার এইটা জানতে হবে তার সামনে থাকা মানুষ বা বস্তু যাই হোক, ঐটা কি আনিস নাকি তার রোবট? কিভাবে জানবে! রোবটের কোন অনূভূতি নেই! আঘাত করলেও রোবটের কোন ব্যাথা লাগে না! মারবে নাকি ঠাটিয়ে এক চড়! বেশিক্ষন ভাবলো না রঞ্জু! মাথায় আসতেই ধাম করে এক ঘুষি বসিয়ে দিল আনিসের নাকে! আনিস উলটে গিয়ে পড়লো, নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে তার! রক্ত দেখে রঞ্জু নিশ্চিত হল, এটা আনিসই! আনিসের হাতেই ফুল! পৃথিবীতে মাঝে মাঝেই আজগুবি দৃশ্য দেখা যায়!

‘মারলি কেন?’ রুমাল দিয়ে নাকের রক্ত মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করল আনিস!
রঞ্জুর কাছে কোন জবাব নেই! কি বলবে কেন মেরেছে! তাড়াহুড়ো করে বলল, ‘আমি তো আস্তেই মারছি! ক্যাম্পাসে আইসা নেতার নাম জানতে চাস? নেতার কোন সাগরেদকে জিজ্ঞেস করলে তো এতক্ষনে হাসপাতালে থাকতি!’
‘আল্লাহ্ বাঁচাইলো! এখন বল, নেতার নাম কি?’
‘বজলু! বজলু ভাই! বজলু ভাইকে খুঁজতেছিস কেন?’
‘দরকার আছে! ভাইকে পাব কোথায়?’
‘ক্যান্টিনে দেখতে পারিস! কি দরকার?’
‘সাথে চল! নিজেই দেখবি!’

আমন্ত্রনটা একমুহুর্তও দেরী না করে লুফে নিল রঞ্জু!

*

ক্লাস চলছে! খুবই গুরুত্বপূর্ন ক্লাস! সবাই মনোযোগ দিয়ে শিক্ষকের কথা শুনছে! কারন এই ক্লাসগুলো এখনই না বুঝলে পরে আর বুঝিয়ে দেওয়ার কেউ থাকবে না! কারন বিষয়টা এমনিতেই কঠিন, তারপর যিনি পড়াচ্ছেন উনাকে আরেকবার পেতে পেতে ঐ বিষয়ের আর কোন দরকার থাকবে না! সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে, কিন্তু একজনের কোন মনোযোগই নেই ক্লাসে! সে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে খোলা প্রাঙ্গনটায়! চোখে ভাসছে অনেক স্বপ্ন, আবার মাঝে মাঝে করছে টলটল, ঠোঁটে জমা হচ্ছে অভিমানী অনেক কথা! সে ভাবছে কারো কথা! সবার মাঝখানে থেকেও সে উদাসীনী!

এই উদাসীনীর নাম মাদিহা! সে কেন উদাস নয়নে খোলা প্রাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে আছে, সেটা নিজেও জানে না! কেন তার চোখ একসময় টলমল করছে বা কেন চোখে অনেক স্বপ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটাও জানে না! এমনকি এটাও জানে না যে, কার জন্য তার ঠোঁটে অভিমানী কথা গুলো জমা হচ্ছে!

এইভাবে উদাসী মনে বসেই ছিল ক্লাসরুমে! ক্লাস যে আরো অনেক আগেই শেষ, ক্লাসে যে সে ছাড়া এখন আর অন্য কেউ নেই সেটা বুঝতেই পারছে না! সে আছে এখন কল্পনার জগতে! বিচরন করছে! কল্পনার জগতে কোন সময় তার চোখ উজ্জল হচ্ছে, কোন সময় বিমর্ষ, কোন সময় ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটছে, কোন সময় দুঃখ! হয়তো কল্পনায়ই থাকতো সে! কল্পনা থেকে তাকে বাস্তবে ফিরে আসতে হল শেফালীর ডাকে!

শেফালী গত বেশ কয়েকদিন থেকেই দেখছে মাদিহা আগের থেকে কেমন যেন একটু বদলে গেচ্ছে! বেশ অদ্ভুতই লাগছে তার কাছে ব্যাপারটা! কয়েকদিন ধরে কোন ক্লাসেই মাদিহার কোন মনোযোগ নেই! সারাক্ষন কি যেন একটা নিয়ে কল্পনায় পড়ে থাকে দেখছে! কোন কিছুরই খেয়াল নেই! এই যে সে এতক্ষন ধরে মাদিহার পাশেই দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু মাদিহা টেরই পায় নি! উলটো সে দেখল মাদিহা একা একাই হাসছে, আরেকবার একা একাই মন খারাপ করছে!
‘মাদিহা! তোর কি হইছেরে?’
‘কই কি হবে? কিছুই হয় নাই। আমি ঠিক আছি!’
‘ঠিক আছিস না বেঠিক আছিস সেটা তো জানতে চাই নাই! ঠিক নাই কেন তুই?’
‘কে বলল ঠিক নাই? আমি ঠিক আছি!’

ক্লাসের দিকে চোখ পড়ল মাদিহার! সে আর শেফালী ছাড়া ক্লাসে কেউ নাই! অবাক হল, সবাই গেল কই?
‘কি রে শেফালী? ক্লাসের সবাই কই?’
‘ক্লাসের সবাই কই জানতে চাস? ঘড়িটা দেখতো, কয়টা বাজে?’

ঘড়ি থেকে চোখ কপালে উঠলো মাদিহার! সাড়ে চারটা বাজে!
‘সাড়ে চারটা!!!’
‘ক্লাস শেষ হয়েছে আরো দেড় ঘন্টা আগে! এতক্ষন কি কেউ ক্লাসে বসে থাকবে?’
‘না!’
‘তুই বসে আছিস কেন তাহলে?’
‘জানি না!’
‘ক্লাসে তোর মনোযোগ ছিল না দেখলাম! কই হারায়া ছিলি?’
‘জানি না!’
‘কি হইছে রে?’
‘জানি না! জানি না! কিচ্ছু জানি না!’

বলে ব্যাগটা হাতে নিয়ে প্রায় দৌড়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসল মাদিহা! তার সাথে সাথে শেফালীও বের হয়ে আসল! মাদিহার মনটা খারাপ! এতক্ষনের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তার জানা হয়ে গেছে! উত্তরঃ আনিস ভাই!
হাটতে গিয়েও থমকে গেল মাদিহা! নিজের ভিতরে জমে থাকা কথাগুলো অসহ্য যন্ত্রনা দিচ্ছে তাকে! কথাগুলো কাউকে বলতে পারল ভাল হত তার! শেফালীকে বলবে কিনা ভাবছে!
‘কাল আনিস ভাই চলে যাবে!’ ভাবতে ভাবতে কখন যে মুখে ফসকে কথাটা বের হয়ে গেল বুঝতে পারে নি মাদিহা! বলে নিজেই জিভ কাটলো! শেফালী কথাটা শুনলে আরো নানান ধরনের প্রশ্ন করবে! অবশ্য আস্তেই বলেছে সে, শেফালী শুনতে পায় নি এমনটা ধরে নিল সে! কিন্তু শেফালী শুনেছে কথাটা!
‘আনিস ভাই কে? আগে তো কখনো বলিস নি! আর কোথা থেকেই বা চলে যাবে?’
‘আনিস ভাইয়ের কথা বলি নি তোকে? বলেছি তো! অহ, তোকে কখনো নাম বলি নি! চিলেকোঠার ভাড়াটিয়া!’
‘ভাড়াটিয়া তো চলেই যাবে! চিরকাল কি আর ভাড়াটিয়াই থাকবে না কি?’
‘না তা না! কিন্তু…’
‘কিন্তু কি?... প্রেমে পড়েছিস নাকি ঐ রোবটটার?‘
‘জানি না!’ কথাটা বলার সময় মাদিহার মুখে একটা মুচকী হাসির দেখা পাওয়া গেল! লজ্জা পেলে যেমন মুচকি হাসে! মাদিহাও একটু একটু মুচকি হাসছে!
‘জানি না মানে কি? অহ! এইজন্যেই তো বলি তুই কই হারায় থাকিস! খুলে বল তো সব!’

মাদিহা সবই খুলে বলল শেফালীকে! শেফালী মনোযোগ সহকারে মাদিহার প্রতিটা কথা শুনলো! মাদিহারও কথা গুলো বলে নিজেকে হালকা মনে হল!
‘এখন তুই কি করবি ভাবলি?’ সব শোনার পর মাদিহাকে জিজ্ঞেস করল শেফালী!
‘জানি না! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না কি করব!’
‘আঙ্কেলের কথায় তো দুইদিন থাকতে রাজি হল! আরেকবার আঙ্কেল দিয়ে থাকতে বলাবি?’
‘বাবাকে বললে বাবা আবার কি না কি ভেবে বসে! আর বাবাকে বলবই বা কিভাবে?’
‘তাহলে তো কিছুই করার নেই! তবে একটা কাজ করতে পারিস!’
‘কি কাজ?’ অতি উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো মাদিহা!
‘আনিস ভাই তো কাল যাবে! তোর হাতে এখনো কিছুটা সময় আছে! এই সময়ের মাঝে তুই তোর কথা গুলো বলে দে!’
‘কি বলিস? কিভাবে বলব?’
‘বলে দে! না বললে, শুধু শুধু কল্পনাতেই ভেসে বেড়াবি! উনাকে বললে উনি তো হ্যা না কিছু একটা বলবেন! চিন্তা করে দেখ! আজকে না বলতে পারলে কিন্তু আর কখনোই আনিসভাইকে পাবি না, কথাগুলো বলতেও পারবি না!’

মুখের এক বিচিত্র ভঙ্গি করল মাদিহা! হাসিও না, মন খারাপও না! বিভ্রান্তিমূলক এক ভঙ্গি! শেফালীর বলা পথটাকেই তার ঠিক মনে হল! কিন্তু ভয় লাগছে, সে কি বলতে পারবে? আর সব শুনে যদি আনিসভাই রোবটিক উত্তর দেয়, সেই উত্তর কি মেনে নিতে পারবে মাদিহা?

অষ্টম

বিকালের শেষ সময়! আকাশের সূর্যটা লাল হয়ে যাচ্ছে! জানান দিচ্ছে, আজকের দিনের জন্য আমার দরকার ফুরিয়ে এসেছে! আবার দেখা হবে কাল! এইভাবে লাল বর্নের হয়ে অস্ত যাচ্ছি! এরকম লাল বর্ন নিয়েই কাল আবার ফিরব! ততক্ষন পর্যন্ত উপভোগ করো অন্ধকারটাকে, আমার আলোয় আলোকিত হওয়া চাঁদটাকে আর আমার আকাশে উজ্জল হয়ে জ্বলে থাকা নক্ষত্র গুলোকে!

লাল সূর্যটাকে দেখার সময় মাদিহার মনে হল, সূর্যটা হয়তো এইভাবেই বলছে! রিকশা দিয়ে আসার সময় মাদিহা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে! শেফালীর বলা কাজটাই সে করবে! পরিনাম যাই হোক, সে করবেই! আজকের পর আনিসকে সে আর কাছে পাবে না! জানে না এরপর আর কখনো আনিসের সাথে তার দেখা হবে কি না! চলে গেলে সারাজীবন এই কথাগুলো না বলতে পারার কষ্ট পেয়ে যাবে! এরচেয়ে ভাল আজই বলবে!

বাসায় পৌছুতে পৌছুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল মাদিহার! সারাদিন বাসার বাইরে ছিল! ধুলোবালিতে শরীর একাকার! এই অবস্থায় আনিসের কাছে যাওয়াটা সমীচিন মনে হচ্ছে না মাদিহার! আনিস তো আজ আছেই, নিজের মাঝখানের অস্থিরতা কমিয়ে স্থির হয়ে যেতে হবে তাকে! স্থির না থাকলে কথা গুলো বলতে পারবে না সে! বললেও গুলিয়ে ফেলতে পারে! গোসল করতে প্রায় ঘন্টাদুয়েক সময় নিল! ঝর্নার পানির ফোয়াড়ার নীচে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবছিল কথা গুলো কিভাবে সাজিয়ে বলবে! গোসল শেষ করে চটপট কিছু খেয়ে নিল! এরপর একটু সাজগোজ করার চিন্তা করল! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ভালমত আঁচড়ে নিল, চোখে লাগাল মোটা করে কাজল! মাদিহার সাজগোজ এইপর্যন্তই! চোখে মোটা করে কাজল লাগানো ছাড়া তার কোন সাজগোজ নেই!

ভয়-লজ্জা-অস্বস্তি নিয়ে রুম থেকে বের হল মাদিহা! সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় আবারো সেই পুরোনো চিন্তা করা শুরু করল। ‘বলাটা কি ঠিক হবে?’ ভেবে নিজেই নিজেকে বকা লাগালো! এত আয়োজন করে এসে এখন না বলাটাই বরং ঠিক হবে না! চিলেকোঠার ঘরটার সামনে গিয়েও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো! দরজায় কড়া নাড়ার শক্তিটাও মনে হচ্ছে তার হাতে নেই! কয়েকবার হাত উঠিয়েও আবার নামিয়ে ফেলল! শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব অস্বস্তিকে দূরে সড়িয়ে দিয়ে দরজায় কড়া নাড়লো!

‘কে?’ আনিসের গলায় বিরক্তির ছাপ বুঝতে পারলো মাদিহা! নিশ্চয় বইয়ের মাঝে ডুবে ছিল! বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার সময় আনিসকে কেউ ডাকলে সে বিরক্ত হয় সেটা জানে! এখন অবশ্য সে আনিসের বিরক্ত হওয়া নিয়ে ভাবছে না!
‘আনিস ভাই! আমি মাদিহা!’
‘আসছি!’ আনিসের উঠে আসার শব্দ পাওয়া গেল! মাদিহার হাত-পা ভয়ে কাঁপছে! দরজার ওপাশের মানুষটা বেরিয়ে আসলে কি হবে? এমন না যে মানুষটাকে সে আগে কখনও দেখে নি। বহুবার দেখেছে! কিন্তু আজকে কেমন জানি অন্যরকম লাগছে তার কাছে!

একটা বই হাতে নিয়ে দরজা খুলে দাড়ালো আনিস! ‘বল?’
‘কেমন আছেন?’
‘ভাল! তুমি?’
‘জানি না! কাল তাহলে চলেই যাবেন?’
‘হ্যা চলে যেতে হবে! ক্লাস শুরু হয়ে গেছে!’
‘হ্যা! ক্লাস শুরু হয়েছে! চলে তো যেতেই হবে! সব গোছগাছ শেষ আপনার?’
‘না! কালকে দিনে করব!’
‘আনিস ভাই! আপনাকে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম! আপনার কি একটু শোনার সময় হবে?’
‘পড়ছি তো আমি! রোব…’ আনিসকে থামিয়ে দিল মাদিহা! এই কথাটা আজকে সে শুনতে চায় না!
‘পড়েন তো প্রতিদিনই! আর কথাটা বলেই আমি চলে যাব! আপনার পড়ার ক্ষতি হবে না!’
‘ক্ষতি হবে না? তাহলে বল!’
‘বাবা যখন আপনাকে এই চিলেকোঠার ঘরটা ভাড়া দিয়েছিল খুব ক্ষেপে গিয়েছিলাম আমি! কারন, চিলেকোঠায় কেউ থাকলে ছাদে আসতে অস্বস্তি লাগবে আমার! আর যদি মানুষটা হয় যুবক একটা ছেলে – তাহলে কেমন অস্বস্তি লাগতে পারে সেটা আপনিই ভাবুন! আপনার কথা শোনার পর আপনাকে নিয়ে নানান কিছু ভেবে রেখেছিলাম! ছেলেরা সাধারনত যেমন হয় আর কি, ঐরকমই ভেবেছিলাম! ভেবেছিলাম, ছাদে আসলে হয়তো আপনি নানান ছুতো নিয়ে আমার সাথে গল্প করতে আসবেন, বিরক্ত করবেন, একটা সময় বলবেন আমার প্রেমে পড়েছেন! কিন্তু আপনাকে দেখার পর এই তিনটা মাসে আপনাকে আমার ভাবনার সাথে মিলাতে পারি নি! সম্পূর্ন উল্টো আপনি! যেভাবে যা ঘটবে ভেবেছিলাম, ঘটনাগুলো ঘটলেও ঘটেছে ভিন্ন ভাবে! আনিস ভাই, শুনছেন আমার কথা?’

আনিস মন দিয়েই মাদিহার কথা শুনছে! কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না! তাই কোন কথা না বলে চুপচাপ শুনছে! মাদিহার বলা একবারে শেষ হলে তার কিছু প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো জিজ্ঞেস করবে! ‘হু!’
‘বুঝতে পারছেন না নিশ্চয়? সমস্যা নেই! আমি কথাগুলো বলে চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষন ভাবলেই বুঝবেন! তো যা বলছিলাম! ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু উলটোভাবে! প্রেমের পড়া ঘটনাও ঘটেছে, এটাও উলটো ভাবে! ধুর! ছাতা! কি যা তা বলছি! ভূমিকা না করে সরাসরি বলেই দেই! আনিসভাই, আমি আপনার………’

কথাটা বলতে পারলো না মাদিহা। কারন রিকশাওয়ালার ডাকে তার দিবাস্বপ্নটা উবে গেছে!
‘আফা! আফনের বাসাত মুন অয় আয়া পড়ছি! ভাড়াডা দেইন!’

রিকশাওয়ালার উপর প্রচন্ড রাগ হল মাদিহার! মেজাজটাই ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে! কত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল! পুরোটাই ভন্ডুল করে দিল! ভাড়াটা আর দুই সেকেন্ড পরে চাইলেই বা কি হত তার! ব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটালো! থম থম পায়ে হেটে চলল! মেজাজ পুরো গরম হয়ে আছে তার! তার সামনে এখন যে পড়বে তার সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল! বসার ঘুরে ঢুকেই দেখে সোফায় এক ছেলে বসে আছে! পাশে তার বাবা! আনিস এখনো গিয়ে সাড়ে নাই! বাবা কি আবার নতুন ভাড়াটিয়া যোগাড় করে ফেলেছে? আবারো কি চিলেকোঠার ঘরই ভাড়া দিবে নাকি? দুই দুগুনে চার হয়ে, মাদিহার মেজাজ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেল! পাশের সোফায় চোখ পড়তেই থমকে গেল! হাত=পায়ে প্লাস্টার করা কেউ শুয়ে আছে! মুখে অসংখ্য ব্যান্ডেজ! চেহারা দেখে বুঝার উপায় নেই এইটা কে! মাথার কোঁকড়া চুলের দিকে নজর যেতেই বুঝে ফেলল এইটা আনিস! বেধম মার খেয়ে হাত-পা ভেঙে পড়ে আছে! এমন মার কে মারলো এই সাধাসিধা রোবট লোকটাকে – এইটাই মাথায় ঢুকছে মাদিহার!

‘মা! পরিচয় করিয়ে দেই! এ হল…’ রঞ্জুর পরিচয়টা মোবারক সাহেব দিতে চাইলেন! দেওয়ার আগেই মাদিহা থামিয়ে দিল তাঁকে!
‘পরিচয় পরে! আনিস ভাইয়ের এই অবস্থা হল কি করে?’
‘মার খেয়ে!’ রঞ্জু জবাব দিল!
‘মার খেয়ে তো আমিও বুঝতে পারছি! কিন্তু কে মারলো? কেনই বা মারলো?’
‘সেইটা একটা বিরাট ইতিহাস!’
‘ইতিহাস ছাড়ুন! কি হয়েছে ভেঙে বলুন!’ চোখ গরম করে রঞ্জুর দিকে তাকালো মাদিহা!

মোবারক সাহেব পাশ থেকে চোখে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন, ‘বলে দাও! নাহলে তোমারও এই অবস্থা হতে পারে! সেইটাও এক ইতিহাস হয়ে যাবে!’ রঞ্জু ঢোক গিলল! বলা শুরু করলো!

*

অনেকদিন ক্যাম্পাস খুলল আজ! হল আগেই খুলেছিল! সবার সাথে হলে দেখা হয় নি! ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ করছিলাম সবার সাথে! গল্প-গুজব করছিলাম! হঠাৎ একটা গুঞ্জন শুনলাম! আনিস নাকি হাতে করে ক্যাম্পাসে ফুল নিয়ে এসেছে! গুঞ্জনটাকে গুজবই ভাবছিলাম! আনিসের হাতে ফুল ব্যাপারটা চিন্তা করাই কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিল নিজের কাছে!

সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম তখন যখন দেখি আনিসের হাতে সত্যিই ফুল! প্রথমে ভাবলাম ফুল গুলো হয়তো প্লাস্টিকের! ফুলদিয়ে হয়তো কোন রোবটের কাজ করছে, কাজের চাপে হাতে করে ফুল নিয়েই চলে এসেছে! কাছে গিয়ে দেখি ফুল গুলো সত্যিকারের! চিন্তা করলাম, হয়তো আসল ফুল নিয়েই কাজ করছে! নাহলে ফুল দিয়ে আনিসের আর কাজ কি? যখন জানলাম, কাউকে দেওয়ার জন্য ফুল এনেছে – তখন সত্যি কথা বলতে আমার মুখটা বোয়াল মাছের মত হা হয়ে গিয়েছিল!

এইটা কি সত্যিই আনিস না কি কোন তার মত দেখতে কোন রোবট? এটা যাচাই করার জন্য ব্যাটার নাকে এক ঘুষি বসিয়ে দিলাম! নাক দিয়ে রক্ত পড়ার নিশ্চিত হলাম এইটা সত্যিই আনিস! সকাল থেকে ধাক্কাই খেয়ে যাচ্ছিলাম একের পর এক! নতুন ধাক্কাটা ছিল আনিস বজলু ভাইকে খুঁজছে! বজলু ভাই খুব ভয়ানক ক্যাডার! সবাই ভয় পায় বজলু ভাইকে! রাজনৈতিক নেতা হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে! আনিসের বজলু ভাইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক খুঁজে পেলাম না! বজলু ভাইকে খোঁজার মত একটাই কারন হতে পারে, আনিস হয়তো কোন মেয়ের প্রেমে-টেমে পড়ছে! ঐ মেয়েকে সরাসরি ফুল দিতে ভয় পাচ্ছে, তাই বজলু ভাইকে সাথে নিয়ে গিয়ে ফুল দিবে!

নিয়ে গেলাম বজলু ভাইয়ের কাছে! বজলু তখন ক্যান্টিনে তার চেলা-প্যালাদের নিয়ে মিটিং-এ ব্যস্ত ছিল! অনেকদিন পর ক্যাম্পাস খুলেছে! তারা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কলা-কৌশল নিয়ে আলাপ করছিল। এর মাঝখানে হঠাৎ করেই আনিস বজলু ভাইয়ের সামনে গিয়ে হাতে ফুল গুলো দিয়ে দিল! আমি হা করে দেখছিলাম! আনিস বজলু ভাইকে দেওয়ার জন্য ফুল নিয়ে এসেছে! ভাবছিলাম, রোবট রোবট করতে করতে……… আমি কি ভাবছিলাম সেটা না হয় না ই শুনলেন!

বজলু ভাই নিজেও বিরাট অবাক হয়েছিল! ক্যাম্পাসের ইতিহাসে আমি বজলু ভাইকে প্রথম অবাক হতে দেখলাম! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে? আমারে ফুলই বা দিলা ক্যারে?’
আনিসের জবাব, ‘ধন্যবাদ বজলু ভাই! আমি আনিস! আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্যই ফুল দিলাম!’

বজলু ভাই একটু খুশি হইলেন! ‘বল ভাই! তোমার জন্য কি করতে পারি? ধন্যবাদ সবাই দিছে আমারে। কেউ সিগারেট খাওয়ায়া, কেউ চা খাওয়ায়া। ফুল দিয়া এই তুমি প্রথম দিলা! বল কি আবদার তোমার?’
আনিস যে জবাব দিল তাতে আমি সহ ক্যান্টিনে যারা ছিল সবাই পাক্কা দুই মিনিট কোন কথা বলে নাই! জবাবটা ছিল, ‘ভাই! আপনারা মারামারি, অস্থিরতা শুরু করেন আবার! তাতে আমি ছুটি পাব! ছুটি পেলে কৃতজ্ঞ থাকব আপনার প্রতি!’

‘কি কইলি তুই?’ বজলু ভাই ই প্রথম স্তব্ধতাটা দূর করলেন!
‘মারামারি, অস্থিরতা আবার শুরু করতে বলছি ভাই! কিন্তু আমাকে তুই করে বলছেন কেন?’
‘তরে আর কি কমু তাইলে? মাথার স্ক্রু কি সব গেছে তোর? এমনিই তো পিছায়া রইছি অনেক! আমরা চিন্তা করতাছি ক্যামনে তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ করায়া পরীক্ষা দেওয়া যায় ঐটা নিয়া! আর তুই আমাদের মারামারি করতে কস?’
‘ভাই! বুঝছেন না কেন? আমার ছুটির অনেক দরকার!’
‘কি করবি তুই ছুটি দিয়া?’
‘রোবট নিয়ে পড়ালেখা করছি ভাই! ক্লাস থাকলে রোবটে মন বসাতে পারি না! আগের ছুটিটার জন্য ফুল দিলাম আপনাকে! ঐ ছুটিটাতে রোবট নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি! এইবার পেলে পুরোপুরিই জেনে যাব!’
‘রোবট? রোবটের লাইগা তুই ছুটি চাস?’
‘জ্বি ভাই!’
‘ঐ তরা এই রোবটটারে সাইজ দিয়া ছুটিতে পাঠায়া দে তো! মাথাটা পুরা হট কইরা দিছে!’

উনার বলতে দেরী হল কিন্তু উনার চেলা-প্যালাদের লাঠিশোঠা নিয়ে উঠতে দেরী হল না! আমি আনিসকে বাঁচানোর জন্য ভিড় ঠেলে এগুলাম! অনেক ভিড় ছিল! প্রায় বিশজন-পঁচিশজন মিলে পিটিয়েছে! দুই মিনিটের মাঝখানেই এই হাল! আমি যেয়ে কোনরকমে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচালাম! বজলু ভাইয়ের হাত-পায়ে ধরে শান্ত করলাম!

বজলু ভাই আনিসকে শাসিয়ে দিয়েছে, সুস্থ হওয়ার পর ক্যাম্পাসে যাতে সাবধানে যায়! আর হল? হলে যাতে ভার্সিটি পড়াকালে কোনদিনই না উঠে! উঠলে আবার এই দশা করে দিবে!

এই হল ঘটনা!

*

সব শোনার পর মাদিহা খুশি হল! সব না, একটা কথা শোনার পর মাদিহা খুশি হল! বজলু ভাইকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করলো তারও! বজলু ভাইয়ের মার খেয়ে আনিস আর মাস দুই-এক তাদের বাসা ছেড়ে যেতে পারবে না! আর হলে কোনদিনই না যাওয়ার হুমকি দিয়ে আরো ভাল করেছে! আনিসকে পাশ করার আগ পর্যন্ত এইখানেই থাকতে হবে! এইটা নিয়ে কিছুই করার নেই আনিসের! তবে আনিসের বেগতিক অবস্থা দেখে মনটা অনেক বেশি খারাপ হল মাদিহার! এত মার মানুষ মারে কিভাবে? এখন আবার তার বজলু ভাইকে গিয়ে পিটাতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু সবই পরে হবে, আগে আনিসের সেবা-শুশ্রূসা করা দরকার! মাদিহা নিজেই দায়িত্বটা নিয়ে নিল আনিসের সেবা করার!
জরির মাকে ডেকে বলল, আনিসের সমস্ত জিনিসপত্র চিলেকোঠা থেকে তাদের বাসার ফাঁকা রুমটায় সড়িয়ে নিতে! আর রুমটা পরিষ্কার করে রাখতে! আনিস যতদিন সুস্থ না হবে ততদিন ঐখানেই থাকবে সে!
মোবারক সাহেবও তাই চিন্তা করছিলেন! তাদের সাথে থাকলে আনিসের অসুবিধা কম হবে!

‘আচ্ছা! আপনি বুঝলেন কি করে আনিস ভাই এখানে থাকে? তিনি কি আগে বলেছিলেন?’ মাদিহা কিছুটা অবাক হয়েই রঞ্জুকে জিজ্ঞেস করল!
‘না সে বলেনি কিছুই!’
‘তাহলে?’
‘তার পকেটে সবসময়ই একটা কাগজে সে যেখানে সেটার ঠিকানা লেখা থাকে! আনিসের ব্রেইন মারাত্নক শার্প! তার অন্য সব কাজের থেকে এই কাজটাই আমার বেশি ভাল লাগে! লিখে রাখছিল দেখেই তাকে এখানে নিরাপদে রেখে যেতে পারছি! নাহলে কয়েকদিন হয়তো কাটাতে হয়তো রাস্তায় নাহলে হাসপাতালের বারান্দায়! হলে তো আর যাওয়া যাবে না!’
‘কাগজে ঠিকানা লিখা ছিল?’
‘হ্যা!’ বলে রঞ্জু কাগজটা মাদিহাকে দিল!

কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল মাদিহা! আনিসের হাতের লেখাকে সুন্দর বলা যাবে না, তবে বেশ পরিষ্কার! কয়েকটা বাক্য লিখা কাগজটাতে। তাতে কোন কাটাকাটি নেই! বাক্যগুলো চমৎকার লাগল মাদিহার!

লেখা ছিলঃ
‘মানুষের মৃত্যু একটা রহস্য! সেটা কেউই ভেদ করতে পারে নি! কখন কার ভাগ্যে মৃত্যু আসবে কেউ জানে না! সেটা বাড়িতেও হতে পারে, রাস্তাঘাটেও হতে পারে! আবার মানুষের চলতে গেলে দুর্ঘটনাও ঘটে! এটাও ভাগ্যের উপর নির্ভর করে! কখন ঘটবে কেউ ই বলতে পারে না! সেটা বাড়িতেও ঘটতে পারে, রাস্তাঘাটেও ঘটতে পারে! আমিও মানুষ! রাস্তাঘাটে আমাকে চলাফেরা করতেই হয়! আমার ভাগ্যেও মৃত্যু বা দুর্ঘটনা আছে! যদিও কখনও রাস্তায় আমাকে পড়ে থাকতে দেখেন, তাহলে সহৃদয়বানরা দয়া করে আমাকে নিন্মের ঠিকানায় পৌছে দিবেন!’

দুইটা ঠিকানা দেওয়া! একটা আনিসের হলের! আরেকটা মাদিহাদের বাসার! ঠিকানাটা দেখে তার চোখ ধ্বক করে জ্বলে উঠলেও পরমূরহুর্তে হাসি এসে গেল! এটাও একটা বিরল ঘটনা! মাদিহা এই প্রথম তার নামের বানানে ভুল দেখে রাগ করলো না! ঠিকানাটায় লেখা ছিল, ‘মাহিদা ভিলা!.........!’

নবম

আনিসের পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় তিনমাস লেগে গেল! অবশ্য সেটাকেও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া বলে না! বজলু ভাইয়ের সাগরেদরা আসলেই মারাত্নক পিটুনী দিয়েছিল তাকে! ডাক্তারের ভবিষ্যদ্বানী ছিল আনিসের পুরোপুরি ঠিক হওয়া সম্ভবই না! যদি হয়ও অনেক সময় লাগবে। হাত-পা তো ভেঙেছেই, সেই সাথে মাথাতেও ভালই চোট লেগেছে! হাত-পা সাড়লেও মাথার চোট সাড়তে বেশ সময় লাগবে! মাথার উপর যাতে আনিস বেশি চাপ না দেয় সেই সতর্কতাও দিয়েছিল ডাক্তার!

সেই তুলনায় তিনমাসে যেইটুক সুস্থ হয়েছে তা ডাক্তারের ভাষায় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতির বলে আখ্যায়িত হয়েছে! পুরোটা কৃতিত্বই মাদিহার! সে যেভাবে যত্ন করেছে, সেই ভাবে একটা মৃত ব্যক্তিরও জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল! প্রথম একমাস আনিসকে কোন বই ই ধরতে দেয় নি সে! আনিস বারবার চেয়েছে, কিন্তু পায় নি! বই হাতে নিলেই মাথার উপর চাপ পড়বে, আর এতে আনিসের অসুস্থতা বাড়বেই! তাই কোন বই ই দেয় নি! আনিসের পরীক্ষা ছিল সামনে আর ক্লাসে যেতে পারছিল না, তাই না পেরে পরে বই দিয়েছে পড়ার জন্য! কিন্তু খুব বেশিক্ষন পড়তে দেয় নি! পরীক্ষা খারাপ হোক, আনিস সুস্থ হতে পারলেই হল! মাঝে মাঝে রঞ্জুকে তাদের বাসায় ডাকিয়ে এনেছে আনিসকে পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য! এইভাবেই তিনটা মাস মাদিহার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে আনিস আবার ক্যাম্পাসে যেতে পারছে আজ!

সুস্থ হয়েই আনিসের চিন্তা আবার রোবট নিয়ে! বই গুলো কই গেল একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে! মাদিহা শুধু হাসে উত্তরে! লোকটা মরতে মরতে বাঁচল, তাকে একটা মানুষ এত সেবা করলো, তাকে কোন ধন্যবাদ না দিয়ে বা বেঁচে আছে ঐটার শুকরিয়া আদায় না করে প্রথমেই লেগে গেছে রোবট নিয়ে! মানুষটা আসলেই রোবট! আগে হলে মাদিহা রেগে যেত, এখন আর রাগে না! অভ্যস্ত হয়ে গেছে আনিসকে দেখতে দেখতে!

মাদিহা নিজে গিয়ে আনিসকে ক্যাম্পাসে দিয়ে আসলো! সবাই এই দৃশ্য দেখে আগের বারের মতই অবাক হয়েছে! আগের বার হাতে ছিল ফুল, এবার সাথে পুরো ফুল বাগানটাই! রঞ্জুর হাতে আনিসকে তুলে দিয়ে নিজের ভার্সিটির দিকে রওনা করল মাদিহা! যাওয়ার পথে আনিসকে নিয়ে অনেক অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখল! ক্লাসে গিয়ে আবারও ক্লাসে মন দিতে পারলো না! কল্পনায় দেখছে আনিসকে! কল্পনাতেই ডুবে ছিল! হঠাৎ কারো ডাক শুনলো!

‘এই মেয়ে? ক্লাসে বসে কোন দুনিয়াতে ঘুরাঘুরি করো?’ গলার সুরটা মাদিহার অনেক পরিচিত। সুরের মালিকের দিকে না তাকিয়েও বুঝে ফেলল!
‘আনিস ভাই! আপনি এখানে কি করছেন?’ যেন অবাক হয়েছে এমন একটা ভাব ধরলো মাদিহা!
‘কেন? তুমি আমাকে আমার ক্যাম্পাসে দিয়ে আসতে পারলে আমি তোমাকে নিতে তোমার ক্যাম্পাসে আসতে পারবো না?’
‘তা পারবেন না কেন? কোনদিন তো আসেন না, তাই বললাম!’
‘তুমিও তো আগে কোনদিন আমার ক্যাম্পাসে যাও নি!’
‘হয়েছে! আপনার রোবটিক মার্কা কথা আর বলতে হবে না! এখন চলেন বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে!’ বলে মাদিহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসল! সাথে আনিসও! খোলা মাঠটা দিয়ে হাটছে দুইজনই! পাশাপাশি! মাদিহার কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে! অস্বস্তি তো আছেই, তবে অস্বস্তিকে সড়িয়ে দিলে পুরোটাই সুখের অনুভূতি!

‘আচ্ছা! ক্লাস শেষে তো আমরা প্রতিদিনই বাসায় যাই! তুমিও যাও, আমিও যাই! এটাই তো আমাদের রূটিন!’ আনিস জিজ্ঞেস করলো!
‘হ্যা! এটাই তো রুটিন!’
‘তাহলে চল! আজকে আমরা রুটিনটা ভঙ্গ করি। রুটিনে চলতে চলতে বিরক্ত লাগছে!’
‘রুটিন ভেঙ্গে কি করবেন? আর আপনার বাসায় যেতেই হবে! একটু পর আপনার ওষুধ খাওয়ার সময়!’
‘বাদ দাও তো! একদিন না খেলে কিছু হবে না?’
‘কি?’ চোখমুখ পাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল মাদিহা! রেগে গেছে!
‘আহারে বাবা! রাগছো কেন? কোন ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নিব নাহয়? এখন চল!’
‘কোথায় যাবেন?’
‘ঘুরতে?’
‘কোথায় ঘুরতে যাবেন?’
‘তা তো জানি না! চল ঐটাও ঘুরতে ঘুরতে ঠিক করে ফেলি!’

আনিসের কথায় হেসে ফেলল মাদিহা! সবসময় বলত ‘রোবট একটা!’ এখন বলছে ‘পাগল একটা!’ আস্তেই বলল। কিন্তু কথাটা আনিসের কানে চলে গেল!
‘পাগল বললে মনে হল আমাকে?’
‘কই না তো!’
‘শুনলাম যে?’
‘আপনি তো রোবট! কানে সেন্সরে সমস্যা হয়েছে! ভাল করে প্রোগ্রামিং করে ঠিক করে নিয়েন কানটা!’

দুইজনেই হাসল! রিকশা উঠবে! আনিস রিকশা ঠিক করছে! ‘মামা! যাবা?’
‘কোথাই যাইবেন?’
‘তোমার যেখানে ইচ্ছা হয় নিয়ে যাও!’

রিকশাওয়ালা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো! কিছুই বুঝছে না! মাদিহাও কিছুই বুঝছে না! তার ‘রোবট’ আনিস ভাইয়ের আজকে কি হল হুট করে? এত রোমান্টিক? সে স্বপ্ন দেখছে না তো?
শুনেছে স্বপ্নে থাকলে নিজের শরীরে কোন আঘাত টের পাওয়া যায় না! সে চিমটি কাটলো হাতে! ব্যাথা লাগে না! আবারো চিমটি কাটলো! নাহ! এইবারও ব্যাথা লাগে না! আবারও চিমটি কাটলো! এইবার অনেক জোরে!
‘আউ! কিরে মাদিহা! আমাকে চিমটি কাটছিস কেন?’ বিরক্তস্বরে বলে উঠল শেফালী। লজ্জা পেয়ে গেল মাদিহা! আবারও কল্পনায় ডুবে গিয়েছিল! আর এইবারও খুব বাজে ভাবে বাস্তবে ফিরে আসতে হল!

নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে! কিন্তু পারছে না! বারবার হারাচ্ছে কল্পনার রাজ্যে! আরো দুর্বল হচ্ছে আনিসের উপর! বেশি দুর্বল হওয়াটা ঠিক না! এতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা প্রবল! এটা ভালোই জানে মাদিহা! কিন্তু জানলেও কাজে লাগাতে পারছে না!

এইভাবেই কয়েকদিন আনিসকে ক্যাম্পাসে পৌছে দেয়! ক্যাম্পাস থেকে একসাথে বাসায় আসে! ঐ সময়গুলোতে মাদিহা চায় আনিসের সাথে অনেক অনেক কথা বলতে! দুইজন মিলে বকবক করতে করতে বাসায় ফিরতে, কিন্তু পারে না! আর আনিস, মাদিহার দেওয়া ‘রোবট’ খেতাবের সম্মান রক্ষার্থে রোবট হয়েই বসে থাকে!

এর মধ্যে আনিস আরো অনেক সুস্থ হয়ে গেছে! সে ফিরে যেতে চায় তার চিলেকোঠার ঘরে! কিন্তু মাদিহা যেতে দেয় না! বলে ‘আরো সুস্থ হোন, পরে যাবেন!’ শেষে অনেক জোরাজুরি করে ফিরে গেছে চিলেকোঠার ঘরে!

দশম

বর্ষাকালের প্রায় শেষ পর্যায়! তবে বৃষ্টি এখনো কমে নি! গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি প্রায় প্রতিদিনই পড়ছে! এই বৃষ্টিতে ভিজেই ঠান্ডা লেগে গেছে আনিসের! এখন অবশ্য কিছুটা ভাল হয়েছে! গায়ের তাপমাত্রা দুইদিন আগের তুলনায় অনেক কমে নেমে এসেছে! কাশিটা একটু রয়ে গেছে! আরেকদিন লাগবে হয়তো ভাল হতে!

আনিসের মনটা আজকে অনেক খারাপ! প্রায় বহুবছর পর তার মনটা আজকে খারাপ! শরীর খারাপ গেছে এতদিন, কিন্তু মন কখনোই খারাপ হয় নি! এর আগে অবশ্য ভাল ছিল কি না সেটা আনিস বলতে পারবে না! কারন, মন নিয়ে সে কখনো ভাবে নি! গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিটা তার বিরক্ত লাগে, কিন্তু আজকে কেন জানি এই বৃষ্টিটায় তার ভিজতে ইচ্ছা করছে! শরীরে জ্বর নিয়েও কাকডাকা ভোরে ঘর থেকে ছাদে চলে আসল ভিজার জন্য! গায়ে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ছে আর একটু একটু করে কেঁপে উঠছে!

চিন্তা করছে আগের রাতে বলা মাদিহার কথা গুলো নিয়ে! মেয়েটা তার সম্পর্কে ভুল কিছু বলে নি!

রাতে আনিসের জ্বর কমেছে কিনা দেখতে এসেছিল মাদিহা! জ্বর কমে যাওয়ায় খুশি হয়ে মাদিহা বলেছিল, ‘চলেন আনিস ভাই! একটু সুস্থ যেহেতু হলেনই আজকে সারারাত দুজনে মিলে গল্প করি!’
‘এখন পড়ছি! পরে গল্প করব!’
‘আনিস ভাই! সবসময়ই তো পড়েন! আজকে না হয় না ই পড়লেন!’
‘উহুম! রোবট নিয়ে পড়ছি! বিরক্ত করো না!’

এরপরই রেগে যায় মাদিহা! অনেকগুলো কথা বলে রেগে গিয়ে! ‘আনিস ভাই! রোবট নিয়ে পড়তে পড়তে যে আপনিই রোবট হয়ে যাচ্ছেন সেটা কি বুঝতে পারছেন? একটা মানুষ কখনো এরকম হতে পারে না! আপনি যদি সত্যিই মানুষ হতেন তাহলে আপনার একটা মনও থাকতো! মন থাকলে মনটা খারাপও হত, ভালও হত! মন থাকলে আপনি বুঝতে পারতেন সব কিছুই! একটা মেয়ে প্রায়ই আসে আপনার সাথে গল্প করতে, একদিনও করেন না, মেয়েটা কষ্ট পেয়েও প্রায়ই আসে একই আবদার নিয়ে! কেন আসে বলতে পারবেন? কিভাবে বলবেন, আপনি তো রোবট! মেয়েটা আপনি বাড়ি থেকে চলে যাবেন শুনে কাঁদে, কেঁদে কেঁদে লজ্জার মাথা খেয়ে তার বাবাকে গিয়ে বলে আপনাকে আটকাতে! কিসের টানে আপনাকে আটকাতে পারেন বলতে পারবেন? আপনি অসুস্থ ছিলেন! মেয়েটা কোনদিক বিবেচনা না করে, সবার কথাকে মাটি চাপা দিয়ে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত আপনার সেবা করেই গেছে! কিসের মায়ায় সেবা করছে বলতে পারবেন? না আপনি পারবেন না! কারন আপনি রোবট! আর মেয়েটা মেয়েটা বললেও আপনি বুঝতে পারবেন না! আপনাকে তাও ভেঙে বলতে হবে! রোবটরা উপমা দিয়ে কথা বুঝে না! মেয়েটা কে জানেন? আমিই সেই মেয়ে! আপনাকে খুব বিরক্ত করেছি! দুঃখিত তার জন্য! আর কখনো করব না!’
বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় মাদিহা!

এরপর থেকেই আনিস ভাবা শুরু করেছে! তার কি আসলেই মন নেই? সে কি আসলেই রোবট? ভোরের একটু আগেই বুঝতে পারলো মাদিহার কথায় তার কষ্ট লেগেছে। কিছু একটা খারাপ হয়েছে! কি খারাপ হয়েছে? সেইটা বোধহয় মনই!

ছাদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজার সময় নীচের ফুল বাগানে দেখল কেউ একজন বৃষ্টিতে হেটে হেটে ফুলেদের সাথে কথা বলছে! মেয়েটা কে বুঝতে দেরী হল না তার! মাদিহা! মোবারক সাহেবের কাছে অনেকবারই মাদিহার এই সকালে বাগানে হাটার কথা শুনেছে, কিন্তু আজই প্রথম! আনিস আজ প্রথমবারের মতে মাদিহার চেহারা ভাল করে দেখার চেষ্টা করল। মেয়েটার মুখ গোলগাল, নাকটা কিছুটা ভোঁতা কিন্তু চেহারাটা অনেক মিষ্টি! আগে যতবার দেখেছে সেগুলো মনে করার চেষ্টা করল আনিস! মেয়েটা চোখে যখন মোটা করে কাজল দেয় তখন দেখতে সত্যিই অপূর্ব লাগে! তবে মেয়েটার হাসিটা সবচাইতে সুন্দর হাসি! এরচেয়ে সুন্দর হাসি সে কখনো দেখে নি! কথাটা তার আগেও মনে হয়েছে কিন্তু কখনও বলে নি! মেয়েটার হাসিটা একটু অদ্ভুত রকমের! মানুষের মন খারাপ থাকলে ঠোঁট দুটো নীচের দিকে বাঁকায়! আর এই মেয়েটা ঠোঁট দুটো নীচের দিকে বাঁকা করেই অপূর্ব একটা হাসি দেয়! একটা ব্যতিক্রমী সুন্দর হাসি! পৃথিবীতে তো কতরকমের প্রতিযোগীতাই হয়! হাসির যদি কোন প্রতিযোগীতা হত তাহলে এই মেয়েটাই জয়ী হত!

কি সব ভাবছে সে এসব? তার মধ্যে যে রোবট স্বত্তা ছিল সেটাই তো ভাল ছিল। কারো জন্য ভাবত না, কিছু নিয়ে ভাবত না! শুধু ভাবত রোবট নিয়ে! সে এখন ভাবছে একটা মেয়ের কথা নিয়ে, মেয়েটার হাসি নিয়ে! মেয়েটা তাকে যে কথাগুলো বলেছে সেগুলো ভুল ছিল না! তবে সেগুলো সত্য শুধু তার উপরের খোলসটার জন্য! খোলসটার নীচে যে আছে, তার জন্য মিথ্যা কথা! সে তো কখনোই ভুলতে পারবে না মাদিহার সেই সেবা করার কথা! তাকে ঐভাবে কেউ কোনদিন যত্ন করে নি, কোনদিন করবেও না – এটা আনিস ভালই জানে! কিন্তু সে যে তার লক্ষ্যে অটুট! তার লক্ষ্যে যে তাকে পৌছুতেই হবে। ঐ সেবা করার কথা, ঐ হাসির কথা যদি সে মনে আগলে রাখে তাহলে তার লক্ষ্য থেকে সে বিচ্যুত হতে পারে! সে হয়তো হবে কোন একদিন বড় কেউ। কিন্ত এখন তো সে কেউ ই নয়! শুধু একজন সংগ্রামী! এই সংগ্রামীর হাতে মোবারক সাহেব নিশ্চয় তার মেয়েকে সংগ্রাম করতে তুলে দিবেন না! না দিলে কি হবে? এই যে তার যে লুকায়িত একটা মন আছে, সেটা খারাপ হবে। আর খারাপ হলে ঠকতে হবে তাকেই!

এই অবস্থায় কি করা যায়? দুইটা রাস্তা আছে হাতে তার! একটা মনকে সায় দেওয়া, আরেকটা রোবটের হাত ধরে চলে যাওয়া! সিদ্ধান্ত নিল সে! রোবটের হাতটা ধরেই চলে যাবে সে! আজই এই বাড়ি এই চিলেকোঠা ছেড়ে চলে যাবে সে! হলেই উঠবে! বজলু ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি নিশ্চয় ক্ষমা করবেন! আর এই বাড়ি থেকে যাওয়ার জন্য একটা উপযুক্ত কারনও লাগবে!

ভেবে নিল মোবারক সাহেবকে কি বলবে সে! নীচে নেমে দেখে ভদ্রলোক বসার ঘরেই ছিলেন! পত্রিকা পড়ছিলেন!
‘চাচা! আমি আজকে চলে যাচ্ছি!’ প্রায় বোমা ফাটানোর মত করেই বলল আনিস! মাদিহা প্রাতঃভ্রমন শেষ বাবার জন্য চা নিয়ে আসছিল! কথাটা শুনেই চায়ের কাপটা মাটিতে পড়ে কয়েক টুকরো হয়ে গেল! সে চলে গেল ভিতরে!
‘হঠাৎ কিছু না বলেই?’ মোবারক সাহেবও অবাক হলেন!
‘চাচা! দুইমাস পর পরীক্ষা! ফাইনাল পরীক্ষা! দুইটা মাস ভাল করে পড়তে হবে! হল ছাড়া গতি নেই পড়ার!’
‘কেন এখানেও তো পড়া যায়।’
‘তা যায়! তবে, অনেক ক্লাস মিস গেছে তো, ওগুলোর পড়া সংগ্রহ করার জন্য খাটতে হবে! ডান-বাম তাকানোর সময় নেই! এখানে থাকলে যাওয়া-আসায় যে সময়টা যাবে তাতে পড়া শেষ করতে পারব না! আর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় ভাল করে আসার রেকর্ডটা শেষে ভেঙে যাক, সেটাও চাই না!’
‘কিন্তু তোমার যে, হলে যাওয়া নিষেধ ছিল?’
‘বজলু ভাইয়ের কাছেও এইভাবে বলেছি! উনিও মাফ করলেন! অনুমতি দিলেন! আগের সব কিছু ভুলে গেছেন উনি!’
‘তাহলে তো হলই! তা কখন যাচ্ছো বাবা?’
‘এই তো দুপুরেই!’
‘ঠিক আছে যাও! মন দিয়ে পড়ো! পরীক্ষা ভাল করে দাও! আর সময়সুযোগ পেলে এই বুড়ো মানুষটাকে একটু দেখতে এসো!’ শেষ কথাটা বলার সময় একপ্রকার জোর করেই হাসলেন মোবারক সাহেব! ছেলেটার উপর একধরনের মায়া চলে এসেছে! মনটা সায় দিচ্ছে না ছেলেটা যেতে দিতে! কিন্তু সত্য তো মেনে নিতেই হবে!

খুব দ্রুতই গোছগাছ করে নিল আনিস! খারাপ লাগছে তার যেতে! মিথ্যা বলায় আরো বেশি খারাপ লাগছে! পরীক্ষা তার দুই মাস পরে ঠিকই কিন্তু পড়া তার শেষ অনেক আগেই! বের হবে, এমন সময়ই চিলেকোঠার ঘরের দরজায় মাদিহা এসে দাড়ালো! হাতে একটা ডায়েরী! কোন কথা বলল না, প্রতিদিনের মত ‘আনিস ভাই’ বা ‘রোবট’ও বলল না! ডায়েরীটা আনিসের হাতে দিয়ে আবার চলে গেল!

*

পরীক্ষা শেষের কয়েকদিন পরই আনিসের কপাল বলতে গেলে খুলেই গেল! প্রফেসর হামিদের সাহায্য বাইরের একটা দেশে রোবট নিয়ে পড়ার জন্য স্কলারশীপ পেয়ে গেল সে! তার সারাজীবনের ইচ্ছাটা পূরন হল! সাথে একটা প্রকৌশলী হিসেবে একটা ফার্মেও চাকরী পেয়ে গেল! প্রফেসর হামিদ আনিসের আরো উজ্জল ভবিষ্যতের কামনা করে বিদায় দিলেন!

*
*
*


শেষ ভাগ

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

কিরমানী লিটন বলেছেন: অনেক দীর্ঘ লিখা,পরে পুরোটা পড়ে মন্তব্য, এখন শুধু শুভলামনা ...

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আসলেই বেশি দীর্ঘ। এইজন্যই এইটার পাঠক নাই।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১০

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: ভাই আমি প্রত্যক্ষ ভাবে ৬ বছর আর পরোক্ষ ভাবে ৯ বছর ধরে ব্লগে আছি, এই প্রথম এত দীর্ঘ কোন লেখা পড়লাম, আসলেই দুর্দান্ত লিখেছেন।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এতবড় লেখা আমিও যে ৪ বছরে ধরে আছি, তখনও দেখি নাই। দিতে দিতে আসলে কত বড় হয়েছে সেইটাও খেয়াল করিনি। পোষ্টের পর দেখলাম অনেক বড় হয়ে গেছে। সেই জন্যই তো সাইজ দেখে মানুষ ভেগে গেছে সব। :(

ধন্যবাদ আপনাকে। শেষটুক আঁটকে রেখেছি। ঐটা দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না, মানুষ পড়বে না ভেবে। আপনার মন্তব্যের জোরে ঐটা দিয়ে দেওয়ার আশা রাখছি।

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

প্রামানিক বলেছেন: বড় লেখাগুলো দুই ভাগে দিলে ভাল হয়। অনেক সময় সময়ের অভাবে বড় লেখা পড়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। তবে লেখা ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: এটা আসলে ছোট করার সুযোগই কম ছিল। তবে এরপর থেকে ছোট করে দেওয়ার ট্রাই করব।

ধন্যবাদ।

৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পড়লাম| রীতিমত উপন্যাসিকা! তবে আপনার হাত চমৎকার| পাঠককে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট| সামুতে কিছু ব্লগার শুধু মন্তব্য করার জন্যই মন্তব্য করে| তাদের জন্য এ পোস্ট নয়|
ভাল লেগেছে| একটা বুদ্ধি দেই, যেহেতু বড় হচ্ছে লেখাগুলো, পাঠক যাতে নেটছাড়াও পড়তে পারে, এজন্য একটা গল্প সংকলন করুন নিজের| সেটার পিডিএফ করে আপ করুন| যারা এখন ব্যস্ত, পরে পড়তে পারবে

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: রাখাল ভাই! আপনার মন্তব্যে আমি সপ্তম আকাশে উড়াল দিলাম।

লিখতে গেলে ঐটা কিভাবে কিভাবে যেন বড় হয়েই যায়।
এইগুলো প্রথমে নেটে এইভাবেই ছাড়ব। তারপর কয়েকটা জমলে পিডিএফ বানাবো।

আশাটা অবশ্য আরো বড়। মলাটের ভিতরে আশা। একটা লিখছি। শেষ করতে পারলে আশা করি বইমেলার পর বা বৈশাখের দিকে বের হতে পারে। যদি প্রকাশক ভাইসাবের পছন্দ হয় আর কী!

বড় দেওয়াতে ভালই হয়েছে। কারা কারা সত্যিকারের পাঠক সেইটা রিভিল করা গেছে।

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। :)
দুয়া কইরেন যেন বইয়ের পাতায় লেখাগুলো আনতে পারি।

৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনার হাত উর্বর বলেছিলাম| তাই বলে এতোটা ভাবিনি

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৬

বাংলার ফেসবুক বলেছেন: এক নজর শুধু বুলিয়ে দেখলাম থীম ভাল আছে। চালিয়ে যান ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবেন। শুভ কামণা রইল।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: থিমটা আসলে মাঝে নেইও। প্রথমটায় পাবেন থিম। সাধারণত থিমটা প্রথমেই বুঝা যায়।

ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.