নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় বলার মত কিছু এখনো করতে পারি নি। তাই ঘরটা ফাঁকাই। পরিচয় অর্জন করতে পারলে আমি যোগ করে দিব।

রক্তিম দিগন্ত

Life is all about a thrill.

রক্তিম দিগন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অনুবাদ গল্প এবং বিজ্ঞাপনী পোস্ট

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৩

অনেকদিন ব্লগে নেই। অন্যান্য কাজের ফাঁকে সুযোগ হয় না। সত্যি বলতে, সুযোগ পেলে ঢুকতেও মনে থাকে না। না ঢুকতে ঢুকতে বদ-অভ্যাস হয়ে গেছে।
আরো অনেস্টলি বললে, এখন মনে হয় না - বিজ্ঞাপন করা ছাড়া আর ব্লগে ঢুকবোও। নো অফেন্স, পোস্ট দেখে অনেকে এটা ভাবতে পারে - তাই আমিই নিজে থেকে বলে ফেললাম। B-) :D

যাই হোক, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভূমি প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে আমার তৃতীয় অনুবাদ্গ্রন্থ 'দ্য ফোর লিজেন্ডারি কিংডমস'। মূল লেখক ম্যাথিউ রাইলি। বইটি জ্যাক ওয়েস্ট সিরিজের চতুর্থ বই। কারো যদি আগেরগুলো পড়া না থাকে, তাতেও অসুবিধা নেই, সিরিজের প্রতিটি বইয়ের কাহিনীই স্বতন্ত্র। আজ যে অনুবাদ গল্পটি প্রকাশ করবো, সেটি পড়লেই মোটামুটি জ্যাক ওয়েস্টের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে।
অনুবাদে আমার সাথে সাথে মাদিহা মৌও হাত লাগিয়েছে। যেটি অনুবাদকের সাথে আমার করা দ্বিতীয় যৌথ অনুবাদ।

প্রথমে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিই হালকা, তারপর অনুবাদ গল্পে যাবো। ;)

বইয়ের প্রচ্ছদঃ
বইয়ের ব্যাপারে হালকা বর্ণনাঃ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩৭৬
মূল্যঃ ৩৫০
প্রচ্ছদঃ রোমেল রহমান
প্রকাশকঃ ভূমি প্রকাশ


অনলাইন বুকশপ বিবিধতে ছাড় সহ প্রি-অর্ডার চলছে। এই প্রি-অর্ডার চলবে আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রি-অর্ডার মূল্য - ২১০ টাকা
প্রি অর্ডার করতে ভিজিট করুন বিবিধতে। প্রি-অর্ডার লিঙ্কঃ দ্য ফোর লিজেন্ডারি কিংডমস



এবার অনুবাদ গল্পটিতে যাইঃ

নামঃ জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র অ্যান্ড দ্য হিরোজ হেলমেট
মূলঃ ম্যাথিউ রাইলি
অনুবাদঃ মাদিহা মৌ ও রাফায়েত রহমান রাতুল (
মানে এইটাই আমার আসল নাম আর কী)






---------
অধ্যায় এক
---------

দেন্দাউর মন্দির
রাত ৮টা ৩৫, ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪


পাথরের মন্দিরের দেয়ালে নিজের খাড়া মইটা দাঁড় করাচ্ছে জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র। ছাদের ধারে মইটা দাঁড় করাতে করাতে প্রায় রাত নেমে এসেছে চারপাশে।
মই বেয়ে উপরে উঠে বেলে পাথরে তৈরি ২০০০ বছরের পুরোনো ইটটার দিকে তাকালো জ্যাক। ক্ষয়ে যাওয়া জরাজীর্ণ ইটটিকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। এরকম মাত্র আটটা ইটেরই অস্তিত্ব রয়েছে বর্তমানে। সবগুলোই ইটই রয়েছে এই মিশরীয় দেন্দাউর মন্দিরের গেটের ছাদের।
ইটটিকে আরো কাছ থেকে দেখে জ্যাকের হৃদস্পন্দন প্রায় থেমে যাওয়ার অবস্থা। ঈষৎ-হলদেটে পাথরের গায়ে একটা ক্ষুদ্রাকৃতির হুক গেঁথে রয়েছে। উপরের বাম কোণায় থাকা এই শিলালিপিটা ভিত্তি করেই নিজের থিসিস সম্পন্ন করেছিলো জ্যাক।

(মিশরের দক্ষিণ আসওয়ানে অবস্থিত দেন্দাউর মন্দিরের ছবি। ছবিটির উৎসঃ ব্রুকলিন মিউজিয়াম আর্কাইভস।)
জ্যাক এখনো বিশ্বাসও করতে পারছে না কাজটা ও করতে যাচ্ছে। যদি তার ধারণাগুলো সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে আর্কিওলজির জগতে বিখ্যাতদের একজন হিসেবে গণ্য করা হবে তাকে। সেই তুলনায় তার বয়সও খুব কম, সবে মাত্র পঁচিশ চলছে।
পাথরের ইটটার দিকে তাকিয়ে জ্যাক ভাবছে, এটার ভিতরে যদি আসলেই কোনো কিছু খোদাই করা থাকে-
‘আম্মু! আমি বাসায় যেতে চাই!’ কাছাকাছি কোথাও থেকে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে উচ্চাসন থেকে শব্দের দিকে ফিরে তাকালো জ্যাক।
নিউ ইয়র্ক মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টের সেকলার উইংটা খালি করে দেওয়া হচ্ছে। জায়গাটাতে এখন বাচ্চাটাসহ অল্প ক'জন মানুষই অবশিষ্ট আছে। প্রাচীন মিশরীয় দেন্দাউর মন্দিরটা স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সেকলার উইংয়ের মাঝখানে। ১৯৭৮ সালে মিশরীয় সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দেয় এই মন্দির। এই মন্দিরটাকে স্থান করে দেওয়ার জন্যই উঁচু সিলিং এবং কাঁচের দেয়ালের এই বিস্ময়কর জায়গাটা তৈরি করা হয়েছিলো।
৮০০ টন ওজনের মন্দিরের আসল অবস্থান ছিলো আসওয়ানের দক্ষিণে অবস্থিত নীলে। সেখান থেকে মন্দিরটাকে আলাদা আলাদা করে নিউইয়র্কের বর্তমান অবস্থানে পুনঃস্থাপন করতে করতে প্রায় তেরো বছরের মতো সময় ব্যয় হয়েছে।

(মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত বর্তমান মন্দিরের ছবি।)
মেটের এই মন্দিরটা দেখতে আসতে কখনোই ক্লান্তি লাগে না জ্যাকের। অত্যাধুনিক এক কাঠামোর ভিতরে অবস্থিত অতি প্রাচীন আরেকটি কাঠামো সবসময়ই তার মনে একটা আলাদা রোমাঞ্চ তৈরি করে। তবে খুব সম্ভবত বাচ্চাটার হয়তো এসবের প্রতি খুব একটা আগ্রহ নেই।
মুখ গোমড়া করে রাখা ছেলেটার দিকে তাকালো জ্যাক। তার বাবা-মা তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ছেলেটার থামাথামির কোনো লক্ষণই নেই। উপায় নেই দেখে ছেলেটাকে নিয়ে কাঁচের দেয়ালের হল ধরে বেরিয়ে যেতে পা বাড়ালো তারা।
ঘড়িতে সময় দেখে নিলো জ্যাক। রাত আটটা চল্লিশ। নয়টার দিকে মেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে প্রদর্শনীর সময় শেষ হয়ে যায় আটটা পঁয়তাল্লিশে। আর, ঘড়িতে ঐ আটটা পঁয়তাল্লিশ বাজলেই ও নিজের কাজটা করার সুযোগ পাবে।
****
ঐসময়টায় জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র ছিলো পঁচিশ বছরের এক টগবগে যুবক। ঐ বয়সেই বিখ্যাত এক এসএএস সদস্যে পরিণত হয়েছিলো। গালফ ওয়ারের বীরসৈনিক। গালফ যুদ্ধের সময়ই বশরা থেকে সাদ্দাম হোসেনের ব্যক্তিগত ৭৪৭ বিমান চুরি করে পালিয়ে গিয়েছিলো। যা এখনো মিলিটারি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। চুলগুলো ছিলো সোনালী, নীল চোখ, এবং তখনও তার বাম হাতটা অক্ষত ছিলো। আফ্রিকার কানিয়ামানাগা আগ্নেয়গিরিতে হাত হারানো এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ এক বাচ্চাকে বাঁচানোর ঘটনাটা ঘটেছিল আরো পনেরো মাস পর। পরবর্তীতে সে বাচ্চাটার নাম রাখে লিলি।
তবে ১৯৯৪ সালে পৃথিবীর সেরা দশ সৈনিকের একজন হিসেবে পরিচিতি পাবার পর, সবাইকে চমকে দিয়ে সেনাবাহিনী থেকে অনির্দিষ্ঠকালের জন্য ছুটি নিয়ে বসে জ্যাক। ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে প্রফেসর ম্যাক্স টি ইপারের অধীনে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে অধ্যয়নে মনস্থির করে ও। ম্যাক্স টি ইপার একজন বিখ্যাত কানাডিয়ান স্কলার এবং জ্যাকের খুব কাছের বন্ধু।
জ্যাকের মূল আগ্রহ মিশর নিয়ে। ইপারের সাথে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জার্নালে আর্টিকেল লিখেছে। আর্টিকেলগুলো ছিলো আলেক্সান্দ্রিয়ার হারানো জাদুঘরের বিচিত্র অবস্থান, স্ফিংক্স নির্মাণের সঠিক সময়কাল এবং গিজার গ্রেট পিরামিডের উপর থাকা ক্যাপস্টোন নিয়ে।
তবে এবারের নিউইয়র্ক সিটির ভ্রমণটা নতুন কিছু।
জ্যাক, ম্যাক্সের সাথে এখানে এসেছে নামকরা জার্নাল অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজিতে প্রকাশিত তার প্রথম একক আর্টিকেলের স্বপক্ষে প্রমাণ খোঁজার জন্য। জ্যাকের ধারণা দেন্দাউর মন্দিরের এই বিশেষ ইটগুলোর কোনোটার ভিতরে প্রাচীন একটি অস্ত্র লুকায়িত আছে। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুসন্ধানের অনুমতি মেট কর্তৃপক্ষ তাকে আগে দেয়নি। অবশেষে অনেকগুলো চিঠি ও ফোন কলে অনুরোধের পর এখানে অনুসন্ধানের অনুমতি পেয়েছে ওরা।
****
সেকলার উইং থেকে সাধারণ জনতাদের প্রায় সবাইই বেরিয়ে গেছে এখন। জায়গাটা ফাঁকা হতেই জ্যাক এবং ম্যাক্স তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিশ ফুট উঁচু মইয়ের উপর গ্রাউন্ড পেনেট্রেটিং রাডার কিট স্থাপন করছে। (গ্রাউন্ড পেনেট্রেটিং রাডার কিট দিয়ে বস্তুর ভিতর কিছু লুকানো আছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়)
মেট অবশ্য কিছু শর্তের বিনিময়ে তাদেরকে এখানে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটা অনতিক্রমনীয় নির্দেশ হলো তারা এই প্রাচীন জিনিসগুলোকে স্পর্শ করতে পারবে না, বা এগুলোর ভিতর কোনো কিছু প্রবেশ করাতে পারবে না। আরেকটি হলো, তাদেরকে কাজটা করতে হবে প্রদশর্নী শেষ হয়ে যাওয়ার পর, যাতে করে সাধারণ দর্শনার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়। এই জন্যই তাদেরকে এই ক্রিসমাসের আগের সন্ধ্যায় এতো দেরিতে কাজ করতে হচ্ছে।
জিপিআর কিটের সর্বশেষ টুকরোটা জ্যাকের হাতে তুলে দিলো ম্যাক্স। টুকরোটা জায়গামতো স্থাপন করতেই হলের পিছনের অংশে ট্রেঞ্চ কোট পরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোককে চোখে পড়লো জ্যাকের।
ভ্রু কুঁচকে গেল জ্যাকের। ‘হেই, ম্যাক্স, ট্রেঞ্চ কোট পরা লোকটা এখনো এখানে আছে।’
মইয়ের নিচের ধাপে থাকা ম্যাক্স ইপারও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন লোকটার দিকে। ‘তাই তো দেখছি। হয়তো ঐ লোকটাও আমাদের মতোই মিশর নিয়ে আগ্রহী।’
‘অথবা এই মি. ট্রেঞ্চকোট হয়তো মেটের কোনো কর্মকর্তা। আমাদের উপর নজর রাখছে,’ জ্যাক বললো। বিকালে তারা এখানে আসার পর থেকেই ইউনিফর্ম পরা দুই সিকিউরিটি গার্ড তাদের সাথে লেগে আছে। তবে এই লোকটাকে দেখতে সাধারণ সিকিউরিটি গার্ডের মতো মনে হয় না। লোকটা দেখতে অনেকটা সিনিয়র এক্সিকিউটিভের মতো, যে নিজে স্বশরীরের উপস্থিত থেকে তাদের উপর নজর রাখছে। পরিচয় ভালো ভাবে জানা নেই বলেই লোকটাকে মি. ট্রেঞ্চকোট বলে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্যাক।
‘পাওয়ার প্লিজ, ম্যাক্স,’ ছাদের বামদিক থেকে দ্বিতীয় ইটটার উপর জিপিআর কিটের ভিউয়ারটা স্থাপন করতে করতে বললো জ্যাক। এই ইটের ভিতরেই কিছু লুকানো আছে বলে ধারণা ওর। সম্পূর্ণ কাজটা অনেকটা এরকম – জিপিআর থেকে হাই-ফ্রিকুয়েন্সি মাইক্রোওয়েভের পালস নির্গত হবে পাথরে, তারপর ঐ ওয়েভগুলো পাথরের ভিতরে গেঁথে রাখা বস্তুতে গিয়ে আঘাত হানবে এবং ওগুলো একটা প্যাটার্ন তৈরি করবে যেটা থেকে জ্যাক ভিতরের বস্তুটার একটা পরিষ্কার চিত্র কল্পনা করতে পারবে।
যদি সত্যিই ওটার ভিতরে কিছু থেকে থাকে আর কী!
‘পাওয়ার অন,’ দেয়ালের কাছ থেকে হাঁক ছেড়ে বললো ম্যাক্স। ‘করলে এখনই, নয়তো কখনোই নয়। চালু করো যন্ত্রটা।’
‘হ্যাঁ, ঠিক,’ জ্যাক বললো। ‘এখনই, নয়তো কখনোই নয়।’
বলে সুইচটা টিপে দিতেই জিপিআর থেকে রশ্মি নির্গত হলো দুই হাজার বছর পুরোনো বেলেপাথরের ইটটার উপর।
জিপিআর ইউনিট থেকে তীক্ষ্ণ শব্দ ভেসে আসছে। দশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর এর স্ক্রিন রিফ্রেশ হচ্ছে। নাবিকদের রাডারের মতোই, প্রতিবার রিফ্রেশের সাথে সাথে পর্দায় ছবিটা আরো ভালোভাবে ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
জ্যাক পর্দার দিকেই চোখ সাঁটিয়ে রেখেছে যেন। চোখের পলকও ফেলছে না।
পাথরের ইটের আয়তাকৃতির আউটলাইনটা ফুটে উঠেছে পর্দায়। ধীরে ধীরে, প্রতিবার রিফ্রেশের সাথে সাথে ইটের ভিতরে থাকা প্রতিকৃতিও ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
ছবিটা অনেকটা দেখতে ইংরেজি ‘t’ বর্ণের মতো লাগছে। জ্যাক টের পাচ্ছে ছবিটা দেখে তার হৃদস্পন্দনের গতি অনেক বেড়ে গেছে।
‘আরেকটু ক্লিয়ার হও, আরেকটু...’ শ্বাস চেপে ধরে রেখেছে জ্যাক।
জ্যাক তার আর্টিকেলে একটি ধারণার কথা উল্লেখ করে বলেছে ইটগুলোর কোনো একটার ভিতরে একটি চাকু লুকিয়ে আছে। এই চাকুটার মালিক বিখ্যাত মিশরীয় দেবতা ওসিরিস। পরকাল, প্রেতপুরি এবং পুনরুত্থানের বিখ্যাত দেবতা ওসিরিস। অবশ্যই, জ্যাক ওসিরিসকে দেবতা বলে বিবেচনা করে না। ওর মতবাদ হলো, ওসিরিস ছিলো বিখ্যাত এক যোদ্ধা, রাজা এবং একজন মানুষ, যে তার জীবদ্দশায় মহান কিছু কৃতকর্ম করেছে, যার জন্য এখনো তাকে দেবতুল্য একজন হিসেব স্মরণ করা হয়।
ছবিটা আরো ভালোভাবে পরিষ্কার হতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো জ্যাকের। ছবির ‘t’কে দেখতে অনেকটাই চাকুর হাতল এবং ফলার মতো দেখাচ্ছে।
‘ম্যাক্স!’ হাঁক ছেড়ে ডাকলো ও। ‘খুশি হওয়ার জন্য তৈরি হও। আমার মনে হয় আমরা...’
ঠিক ঐ মুহূর্তেই মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টের সবগুলো লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। সেকলার উইং পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ইমার্জেন্সি সাইরেনের তীক্ষ্ণ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে জ্যাক।
----------
অধ্যায় দুই
---------

মইয়ের উপর থেকে ঘুরে তাকালো জ্যাক। একটা গন্ধ এসে লাগছে তার নাকে। ধোঁয়ার গন্ধ। সে জানে না, গন্ধটা কোথা থেকে আসছে, তবে এটা নিশ্চিত - বাতাসে মিশে আছে গন্ধটা। ‘ধ্যাত্তেরি, এটা নিশ্চয় বাস্তবে ঘটছে না,’ স্বগোতক্তি করে অন্ধকারাচ্ছান্ন হলটার দিকে ফিরে তাকালো জ্যাক। কাজে বাঁধা পড়ার টাইমিংটা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ লাগছে ওর।
না, এটা শুধুই একটা কাকতালীয় ব্যাপার।
লাউডস্পিকার থেকে একটা যান্ত্রিক মহিলার কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। পরিস্থিতির বিবেচনায় কন্ঠস্বরটাকে অতিরিক্ত শান্ত মনে হচ্ছে। ‘ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ, জায়গাটা খালি করা হচ্ছে। প্লিজ, সবাই শান্তভাবে নিকটস্থ এক্সিটগুলো দিয়ে বেরিয়ে যান। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। এই মুহূর্তে আপনাদের সহযোগীতা একান্ত কাম্য।’
অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও মইয়ের উপর থেকে নামতে বাধ্য হলো জ্যাক। নিচে নেমে মিলিত হলো ম্যাক্স ও দুই সিকিউরিটি গার্ডের সাথে।
এক্সিটের দিকে যাওয়ার সময় জ্যাক লক্ষ্য করে দেখলো, ট্রেঞ্চ কোট পরা লোকটাও বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছে।
জ্যাক, ম্যাক্স এবং সিকিউরিটি গার্ড দু'জন মিউজিয়ামের বিশাল করিডোরগুলো পেরিয়ে এসে সম্মুখ দরজার সামনে জমায়েত হওয়া মানুষদের সাথে এসে দাঁড়ালো। মিউজিয়ামে ঘুরতে আসা সর্বশেষ দর্শনাথীরা এবং বিল্ডিং-এ তখনো অবস্থানরত স্টাফ মেম্বাররাই শুধু রয়েছে ভীড়ের মাঝে।
সাইরেনের শব্দটা বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছে।
সম্মুখ দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হেলমেট পরা পাঁচজন দমকল কর্মীকে ভিতরে ঢুকতে দেখলো জ্যাক ও ম্যাক্স। প্রত্যেকের হেলমেটেই FDNY PRECINCT 17 লেখা রয়েছে। ফিফথ এভিনিউয়ের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা লাল অগ্নিনির্বাপক ট্রাক থেকে বেরিয়ে দ্রুত মিউজিয়ামের ভিতর দৌড়ে যাচ্ছে ওরা। গাড়িটার গায়েও ‘17’ লেখা রয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো জ্যাক।
বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। তুষার পড়তে শুরু করেছে ফিফথ এভিনিউয়ে। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের আরো কিছু ফায়ার ব্রিগেডের ট্রাক এসে জড়ো হয়েছে মিউজিয়ামের সামনে।
‘কে বিশ্বাস করবে এটা?’ ম্যাক্সকে উদ্দেশ্য করে বলছে জ্যাক। ‘চাকুটা দেখলাম, আর সাথে সাথেই...’
কয়েক মিনিট পরই মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে এলো পাঁচ দমকলকর্মী। আশ্বাস দেওয়ার ভঙ্গিতে তাদের কমান্ডার হাত উঁচিয়ে বললো, ‘অল রাইট ফ্রেন্ডস। একটা ফিউজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্মোক ডিটেক্টর চালু হয়ে গিয়েছিলো। এখন সব ঠিক আছে।’
বলে তাড়াতাড়ি করে আবারো ‘17’ লেখা ট্রাকটায় গিয়ে উঠে বসলো তারা। ম্যাক্স এবং সিকিউরিটি গার্ড আবার ভিতরের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
জ্যাকও পা বাড়িয়েছে, ঠিক তখনই একটা বাচ্চা ছেলেকে বলতে শুনলো, ‘এটা তো ঠিক মনে হচ্ছে না।’ তার বাবাকে বলছে ছেলেটা।
‘কী ঠিক মনে হচ্ছে না?’ ছেলেটার বাবা জিজ্ঞেস করল।
‘১৭ নম্বর ট্রাক তো মইয়ের ট্রাক, সাধারণ অগ্নিনির্বাপক না,’ ছেলেটা বললো।
কথাটা শুনে ভ্রু-কুঁচকে গেছে জ্যাকের। ‘কী বললে? তুমি কি নিশ্চিত?’
‘আমি দমকল বাহিনীর ট্রাকগুলো পছন্দ করি,’ সাগ্রহে বলতে শুরু করলো ছেলেটা। ‘প্রতিটি কর্মীর হেলমেটেই তাদের ট্রাকের নম্বর লেখা থাকে। যদি কারো হেলমেটে ‘১৭’ লেখা থাকে, তাহলে এর মানে হলো সে ১৭ নম্বর ট্রাকের কর্মী। FDNY 17 খুবই বিখ্যাত ট্রাক, মইয়ের ট্রাক এটা। তবে ওখানে যেটা দাঁড়িয়ে আছে’- ‘১৭’ লেখা গাড়িটার দিকে নির্দেশ করে বললো- ‘ওটা একটা সাধারণ অগ্নিনির্বাপক যান। এটার গায়ে লেখা নম্বরটা ভুল।’
১৭ নম্বর ট্রাকটার দিকে তাকালো জ্যাক। ট্রাকটা আস্তে আস্তে রাস্তা থেকে সরতে শুরু করেছে।
ম্যাক্সের দিকে ফিরে তাকালো জ্যাক। ‘ম্যাক্স, তাড়াতাড়ি ভিতরে যাও। মন্দিরটা চেক করে দেখো। আর সেল ফোনটা চালু রাখবে।’
‘তুমি কী করবে?’ ম্যাক্স জানতে চাইলো।
জ্যাক ইতিমধ্যেই ‘১৭’ লেখা ট্রাকটার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। ‘আমি এখানে থাকবো, তাদের দিকে নজর রাখতে হবে...’
গলার স্বরে উত্তেজনার ছাপটা ধরতে পেরেছে প্রফেসর ম্যাক্স ইপার। তাই জ্যাকের সাথে কোনো তর্ক করলো না।
আর দেরি না করে মিউজিয়ামের দিকে ছুট লাগালো ম্যাক্স। তার সাথে সাথে গার্ড দুজনও যাচ্ছে। ম্যাক্স তখন বেশ তাগড়া জোয়ান, পায়ের গতিও ছিলো বেশি। এক মিনিটের মাঝেই সেকলার উইং-এর মন্দিরের সামনে পৌঁছে গেছে।
প্রথমেই মন্দিরের ছাদের দিকে চোখ চলে গেছে ওর। খুঁতটা দেখতে পেয়েছে।
বাম দিক থেকে দ্বিতীয় ইটটা – জ্যাক যেটা পরীক্ষা করে দেখছিলো – সেটা এখন ভেঙে হাঁ হয়ে আছে। ইটের উপরের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেছে যেন। শাবল বা কুড়াল জাতীয় কিছু একটা দিয়ে ভাঙা হয়েছে ইটটা। দমকলকর্মীদের কুড়ালের মতো কিছু দিয়ে...
তাড়াতাড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে ম্যাক্স বলতে শুরু করলো, ‘জ্যাক, তোমার ইটটা ভেঙে ফেলেছে। তুমি এটার ভিতরে যেটা পেয়েছিলো, সেটা কেউ একজন নিয়ে গেছে।’
****
ফোন কানে ধরে ট্রাকটার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে জ্যাক। ম্যাক্সের কথাগুলো কানে পৌঁছাতেই ঝট করে দমকলবাহিনীর কমান্ডারের দিকে ফিরে তাকালো জ্যাক। কমান্ডারও তাকিয়ে আছে জ্যাকের দিকে। দুইজনই একে অন্যের ভাবনাটা পড়তে পারছে। জ্যাকের চোখাচোখি হতেই কমান্ডার ট্রাকের ড্রাইভারের দিকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘যাও! যাও! যাও!’
রাস্তার সাইড থেকে বেরিয়ে গেছে ট্রাকটা। তুষার-সিক্ত রাস্তার উপর দিয়ে চলতে শুরু করেছে।
ট্রাকটাকে রাস্তা ধরে এগুতে দেখে আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না জ্যাক। দ্রুত পায়ে ট্রাকের পিছু পিছু ছুটতে শুরু করেছে ও।
-------------
অধ্যায় তিন
-------------
রাস্তায় বরফ জমে থাকার কারণে ট্রাকের গতি বাড়াতে পারছে না ড্রাইভার। তারপর উপর রাস্তায় মোড় ঘোরানোর জন্য স্কিড করতে গিয়ে গতি আরো কমে গেছে। যেটার জন্য জ্যাক ট্রাকের সাথে তার দূরত্ব কমিয়ে ফেলতে পেরেছে। মোড়ের কাছে পৌঁছে ট্রাকটার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লো জ্যাক।
কোনো মতে বিশাল লাল ট্রাকের পিছনের বাম্পারটা আঁকড়ে ধরতে পেরেছে জ্যাক। মোড় ঘুরিয়ে ফিফথ এভিনিউয়ের দক্ষিণে পৌঁছাতেই গতি বাড়িয়ে দিলো ড্রাইভার।
চলন্ত গাড়িটা প্রায় টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে জ্যাককে। বরফাবৃত রাস্তার উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই ওকে পায়ে বেশ কয়েকটা আঘাত সহ্য করতে হয়েছে।
একগুচ্ছ ধাতব হোসপাইপের মাথা এবং সুইচ ঝুলে রয়েছে জ্যাকের উপর। সাথে ট্রাকের পিছনের অংশে লেগে রয়েছে সাত-ফুট লম্বা একটা মই। মইটা চলে গেছে ট্রাকের ছাদের দিকে, যেখানে অগ্নিনির্বাপনের আরো সরঞ্জামাদি রাখা আছে।
মইটার আরো কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে ওটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ছাদের উপরে উঠতে শুরু করলো।
মই বেয়ে ছাদের উপর উঠতেই দেখলো দমকলকর্মীর পোশাক পরা এক লোক মুষ্টি পাকিয়ে দৌড়ে আসছে তার দিকে। রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে লোকটা।
লোকটাকে দেখেই বোঝাই যাচ্ছে সে নিউইয়র্ক সিটির দমকলকর্মী নয়, বরং দমকলকর্মীর ছদ্মবেশে থাকা ভয়ঙ্কর কেউ।
ট্রাকের ছাদের কিনারায় উঠতেই জ্যাকের দিকে ঝাপিয়ে পড়লো ছদ্মবেশি লোকটা। ঐ অবস্থায় দাঁড়িয়েই আঘাতটা প্রতিহত করলো জ্যাক। ট্রাকের ছাদে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা লাল আলোয় মরিয়াভাবে লড়াই করে যাচ্ছে দুজন। লড়াইয়ের সময় যেন কোনোভাবেই চলমান ট্রাকের ছাদ থেকে পা হড়কে পড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে জ্যাককে।
একটা জিনিস পরিষ্কার যে জ্যাকের প্রতিপক্ষ লড়াই করতে জানে। জ্যাক একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈনিক। তারপরও তার সাথে সমান তালে লড়াই করছে ছদ্মবেশি লোকটা। তারমানে এটা নিশ্চিত এই লোকটাও একই ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
হঠাৎ করেই আক্রমণকারী ঘুষি মারতে উদ্যত হলো জ্যাককে, তবে ও সময়মত প্রতিহত করে ফেলেছে আঘাতটা। মুষ্টি আঁকড়ে ধরতেই এক মুহূর্তের জন্য লোকটার কবজিতে আঁকা ট্যাটুটা দেখতে পেল জ্যাক।
একটা ক্রুশবিদ্ধ করা মাছের ট্যাটু।
ওটা দেখে চমকে গেছে জ্যাক। এই চিহ্নটা ও চেনে। তবে এই লোকটার হাতে এই ট্যাটুর অর্থটা বোধগম্য হচ্ছে না ওর কাছে। এটা ক্যাথলিক চার্চের বিখ্যাত গুপ্তসঙ্ঘ ওপুস দেই-এর চিহ্ন। কিন্তু এক প্রাচীন মিশরীয় মন্দিরের সাথে ওপুস দেই বা ক্যাথলিক চার্চের সম্পর্কটা কী?
ঠিক পরের মুহূর্তেই হেলমেটের সামনের অংশ দিয়ে জ্যাকের মাথায় আঘাত করতে চাইলো আক্রমণকারী... অথবা বলা যায় করার চেষ্টা করেছিল।
জ্যাক শেষ মুহূর্তে মাথা নিচু করে ফেলায় আঘাতটা আর লাগেনি। ‘এটা ব্যবহার করলে ফেয়ার ফাইট হবে না, হারামজাদা। তোকে আরেকবার এই কাজটা করার সুযোগ দিতে চাই না।’
হাত বাড়িয়ে লোকটার মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে আনলো জ্যাক। ঠিক সেই মুহূর্তেই, লোকটাও তার কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে এনেছে।
পিস্তলটা দেখতেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো জ্যাকের। চমক সামলে নিয়ে চোখের পলকে পাশে ঝাঁপিয়ে পড়লো। হেলমেটের ফিতাটা আঁকড়ে ধরে পাশে পড়ে থাকা কোনো একটা কিছুতে হ্যাঁচকা টান দিতেই দুইজনই পড়ে গেলো চলন্ত ট্রাকের উপর থেকে এবং আছড়ে পড়লো ফিফথ এভিনিউয়ের উপর।
আক্রমণকারী হেলমেট ছাড়া থাকায় ধাক্কার প্রতিক্রিয়াটা সামলে নিতে পারেনি। পড়ার সাথে সাথেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে হয়েছে লোকটার।
তবে জ্যাকের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি।
ছাদে ও যে বস্তুটা আঁকড়ে ধরেছিল সেটা ছিলো ফায়ারহোসের একটা পাইপ। এর মানে হলো রাস্তায় পড়ে যেতেই পাইপটা নলের মতো লম্বা হয়ে গেছে। যেটা এখন জ্যাককে ট্রাকের পেছনে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বরফ জমে থাকার কারণে ভয়ঙ্করভাবে টেনে নেওয়ার ফলেও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে না জ্যাকের।
পড়ার সময় হেলমেটের ফিতাটা ধরে রাখার কারণে হেলমেটটাও এখন তার সাথেই রয়েছে। হোস পাইপ এবং তার হাতের মুঠির মাঝখানে রয়েছে হেলমেটের ফিতাটা। হেলমেটটা সরাতে হলে হোসপাইপ ছাড়তে হবে। কিন্তু হোসপাইপ ছাড়ার মতো সাহস পাচ্ছে না জ্যাক। তাই হেলমেটটাও তার সাথে সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকসেকেন্ড পরে হঠাৎ করেই ট্রাকের সাইরেনের শব্দটা থেমে যেতে শুনলো জ্যাক। ট্রাকটা ফিফথ এভিনিউয়ের বাম দিকে মোড় নিচ্ছে। মোড় নেওয়ার কারণে রাস্তায় বেশ কয়েকটা ডিগবাজি খেতে হলো জ্যাককে।
অবশেষে ডিগবাজি থামার পর কোনো রকমে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে পাশের ফুটপাতের দিকে ঝাঁপ দিলো ও। রাস্তার উপর শুয়ে জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে। খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। রাস্তায় ডিগবাজি খাওয়ার সময় বেশ কয়েকবারই ট্যাক্সির নিচে পড়তে গিয়েছিল। কোনোরকমে উবু হয়ে বুকে ভর করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নকল দমকলকর্মীদের ট্রাকটা পাশের রাস্তা মানে ফিফটিয়েথ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে আছে। ছদ্মবেশি দমকলকর্মীরাও এক এক করে ট্রাক থেকে বেরিয়ে পুরোনো দালানের পিছনে থাকা সরুগলিতে মিলিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখলো, হাতে করে দেন্দাউর মন্দির থেকে আনা ইটের ভাঙা অংশটা নিয়ে যাচ্ছে।
পুরোনো দালানটার দিকে আরো ভালো করে তাকালো জ্যাক। বিল্ডিংটায় শিং-এর মতো দুটো বেলটাওয়ার রয়েছে। আর নব্য-গথিক প্রবেশদ্বারটা নিউইয়র্ক সিটির অন্যান্য অত্যাধুনিক কাঁচ এবং স্টিলের দালানগুলোর তুলনায় একদম বেমানান।
সেইন্ট প্যাট্রিক ক্যাথেড্রাল।
এটা নিউইয়র্ক সিটির প্রধান ক্যাথলিক চার্চ এবং এর নের্তৃত্বে রয়েছে আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর চার ক্যাথলিক পাদ্রির একজন।
গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাটি থেকে নিজেকে টেনে তুললো জ্যাক। আরো একবার পুরোনো দালানটার দিকে তাকিয়ে ছুট লাগালো সরু গলি ধরে পালিয়ে যেতে থাকা ‘দমকলকর্মী’দের পিছনে।
****
সরু গলির মোড়টা ঘুরতেই জমে গেলো জ্যাক। সামনের দৃশ্যটা তাকে বেশ চমকে দিয়েছে। দেখলো নকল পাঁচজন দমকলকর্মীর দিকে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল তাক করে রেখেছে একটা লোক। তার চোখের সামনেই এক এক করে চারজনকে মেরে ফেলেছে লোকটা। তুষারশুভ্র মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ওরা, কপালের ফুটো দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে সাদা বরফের উপর। তবে লোকটার হত্যাযজ্ঞ থেমে যায়নি। এখন পিস্তল তাক করে রেখেছে নকল দমকলকর্মীর নেতার মাথার দিকে।
হাতে কোনো অস্ত্র নেই বলে সামনে এগুনোর সাহস পেলো না জ্যাক। একটা ময়লার ঝুঁড়ির পিছনে গিয়ে লুকালো ও। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে লোকটাকে নকল নেতার কাছ থেকে ইটের টুকরোটা নিতে দেখলো জ্যাক।
এতদূর থেকেও ভাঙ্গা ইটের ভিতরে গেঁথে থাকা প্রাচীন চাকুর হাতলটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে জ্যাক।
ওসিরিসের চাকু।
এরপর লোকটা নকল দমকলবাহিনীর কমান্ডারকে যা বলতে শুনলো তাতে একটু বেশিই চমকে গেছে জ্যাক। ‘এটা তোমার সম্পদ নয় যে তুমি রেখে দেবে। এটা আমার প্রভুর সম্পত্তি। কী-ব্লেড ব্যবহারের সময় এখনো হয়নি।’
এরপর কেবল গুলির একটা ক্ষীণ শব্দ শোনা গেলো। নকল কমান্ডারের মাথার পিছনের দিকটা উড়ে গেছে বুলেটের আঘাতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে মাথা থেকে। একমুহূর্ত স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর ধপ করে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেলো লোকটা, মনে হচ্ছে যেন অদৃশ্য সুতা দিয়ে কেউ তাকে সামনের দিকে হ্যাঁচকা টান দিয়েছে।
দমকলবাহিনীর সবাইকে মেরে ফেলার পর এক হাতে দেন্দাউর মন্দিরের ভাঙ্গা ইট এবং অন্য হাতে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা নিয়ে সরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো লোকটা। আলোক রশ্মির নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় জ্যাক লোকটার মুখটা দেখতে পেলো।
লোকটাকে চিনতে পেরেছে সে। মিউজিয়ামের সেই ট্রেঞ্চ কোট পরা লোকটা। মি. ট্রেঞ্চকোট। সেকলার উইং-এ বিকাল থেকে জ্যাক এবং ম্যাক্সের উপর নজর রাখছিল সে।
সরু গলি থেকে বেরিয়ে এলো জ্যাক। লোকটা যেন তাকে দেখতে না পারে, সে জন্য ফিফথ এভিনিউ পেরিয়ে একটা মদের দোকানে ঢুকে পড়লো।
দূরে বসে রাস্তার অন্যপাশ থেকে এগিয়ে আসা মি. ট্রেঞ্চকোটের দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাক। প্রাচীন ইটের ভাঙ্গা টুকরোটা কোটের আড়ালে লুকিয়ে নিয়ে ক্যাথেড্রালের পাশের রাস্তাটা ধরে হেঁটে যাচ্ছে লোকটা।
জ্যাক ভালো করে তাকিয়ে দেখছে লোকটাকে। তার মধ্যে এমন কিছু একটা আছে যেটা এর আগে শুধুমাত্র এক ধরনের মানুষের মধ্যেই দেখেছে ও। গুপ্তঘাতক!
জ্যাক ওয়েস্টের অনেক গুণই রয়েছে। সে একাধারে অসাধারণ সৈনিক, ভালো যোদ্ধা এবং ভালো ইতিহাসবীদ। তবে কোনো ভালো অস্ত্র ছাড়া ট্রেঞ্চকোট পরা ঘাতকের সাথে লড়াইয়ে নামার সাহস পাচ্ছে না।
হাঁটতে হাঁটতে হুট করেই দাঁড়িয়ে গেলো মি. ট্রেঞ্চকোট। রাস্তার দুইপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার, তারপর একটা ক্যাব ভাড়া করে হারিয়ে গেলো নিউইয়র্ক শহরের ভিড়ের মধ্যে।
ক্যাবে করে লোকটাকে হারিয়ে যেতে দেখলো জ্যাক। এছাড়া তার কিছুই করার ছিলো না।
মদের দোকান থেকে ফিফথ এভিনিউয়ের ফুটপাতে বেরিয়ে এলো জ্যাক। চোখ নিচু করে শীতের ঠান্ডা রাতে প্রশস্ত রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতেই হুট করেই তার চোখ পড়লো নিজের ডান হাতে ধরে থাকা বস্তুটার উপর।
এখনো শক্ত করে রেখেছে জিনিসটা। জ্যাক এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। নকল দমকলকর্মীদের সাথে লড়াইয়ের সময় একজনের মাথা থেকে একটা হেলমেট খুলে নিয়েছিলো। এখনো হাতে রয়ে গেছে FDNY PRECINCT 17 লেখা হেলমেটটি। তার জীবনের সবচেয়ে বাজে সন্ধ্যাগুলোর স্মৃতিস্মারক।
****
জ্যাক কখনো ওসিরিসের সেই চাকুটার কথা ভুলে যায়নি বা গুপ্তঘাতকের বলা কী-ব্লেড শব্দটাও ভুলে যায়নি। ঐ সন্ধ্যায় পাওয়া হেলমেটটাও পরবর্তীতে অনেকগুলো বছর বিভিন্ন অভিযানে ব্যবহার করেছে ও। কখনো ব্যবহার করেছে পাথরের আঘাত থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য, কখনো করেছে গুপ্ত-ফাঁদ থেকে রক্ষার জন্য... এবং এটা সবসময়ই একটা কথা মনে করিয়ে দেয় যে - পৃথিবীর প্রত্যেকেই কিন্তু দেখতে যেরকম কাজে সেরকম নয়।

[[ক্যাথলিক চার্চের সাথে প্রাচীন মিশরের সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্তারিত সেভেন এনশিয়েন্ট ওয়ান্ডার্স বইটিতে। দ্য ফোর লিজেন্ডারি কিংডমস বইটিতে পুরো ব্যাখ্যার সারাংশও রয়েছে।]]


দ্য ফোর লিজেন্ডারি কিংডমস বইয়ের কাহিনী প্রিভিউঃ
সাত প্রাচীন আশ্চর্য, ছয় পবিত্র পাথর, পাঁচ মহান যোদ্ধা'র অভিযান শেষে জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। কিন্তু চাইলেই কি আর সবকিছু স্বাভাবিক থাকে?
সবকিছু অস্বাভাবিক হওয়ার আগে শেষ যে বিষয়টা জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র মনে করতে পারছে তা হচ্ছে সে তার পরিবারের কজনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান মরুভূমিতে থাকা একটা টপ-সিক্রেট ঘাঁটিতে গিয়েছিল।
আর এরপর, এখন সে যেন জেগে উঠেছে এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে। তাকে একটা খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। খেলাটি কয়েক ধাপের প্রাণঘাতী চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে নকশা করা হয়েছে একটি প্রাচীন আচার পূর্ণ করার জন্য। একবার চ্যালেঞ্জে নামিয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে ফেরারও কোনো উপায় নেই।
পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করতেই জ্যাককে মৃত্যু কূপ সমতুল্য ধাঁধায় অংশ নিতে হবে, লড়াই করতে হবে হিংস্র আততায়ীর সাথে এবং মুখোমুখি হতে হবে অকল্পনীয় বীভৎসের, সাথে আরো এমন কিছু চ্যালেঞ্জ যেগুলো তাঁর মানসিক সহ্যসীমার চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে।
তবে এতো কিছুর পরও খেলায় চূড়ান্ত জয় পাওয়াটা অসম্ভবই। শুধুমাত্র ‘সঠিক ইতিহাস জানা বিদ্বান’ই জিততে পারবে এই খেলাটা।
গ্রিক মিথ, বিজ্ঞানী নিউটনের ভবিষৎবাণী, প্রেতপুরী, বীরত্ব, কাপুরুষতা, নৃশংসতা, মৃত্যু - সবকিছু মিলিয়ে ম্যাথিউ রাইলির চমৎকার এক টেকনো থ্রিলার জ্যাক ওয়েস্ট জুনিয়র সিরিজের চতুর্থ বই : দ্য ফোর লেজেন্ডারি কিংডমস।


যারা পোস্টটি পড়েছেন, আশা করছি ভালো লাগলে আমার অনুবাদ বইটিও পড়বেন। :)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভালো হয়েছে।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
:)

২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯

ধ্রুবক আলো বলেছেন: কেমন আছেন ভাই?

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
চলছে ভাই। :)
আপনার কী অবস্থা?

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম পরে পড়ে মন্তব্য করবো।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
:)

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৬

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:




আপনাকে অনেকদিন পর দেখছি । যদিও আমিও অনেকদিন ছিলাম না তবে গত কিছুদিন আছি ! আপনি কেমন আছেন ?

অনুবাদে সময়ের ব্যয় হয় অনেক । পড়ে ভাল লাগলো, থ্রিলিং ।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:১৯

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
এইতো ভাই চলছে। লেখালেখিতে আসলে যথেষ্টই সময় যায়। এছাড়াও আগের মতো ব্লগে এসে প্রতি পোস্ট পড়ার সুযোগ এখন আর পাই না।
তবুও আসার চেষ্টা করবো এখন থেকে মাঝে মাঝে।

ধন্যবাদ। :)

আপনার কী অবস্থা?

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১৪

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: সময়ের অভাবে পুরোটা পড়তে পারলাম না। আপনার অনুবাদের হাত খারাপ না। কয়েক লাইনেই কিছু অসঙ্গতি দেখলাম- সবগুলোই ইটই (সবগুলো ইটই), স্বগৌরবে (সগৌরবে) ইত্যাদি।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:২৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
বানান তো আসলে প্রকাশনীই ঠিক করেছে। তাই বানান ভুলের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী অনেক বানানই ভুল হয়েছে। স্বগৌরব বানানটা পরিপূর্ণ শুদ্ধ না হলেও লেখা যায়। :)
আর কাজটা স্বল্প সময়ে করতে হয়েছে, তাই কিছু টাইপোর ভুল রয়েই গেছে।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.