নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেবু লিংক https://www.facebook.com/tashfic007

ভবঘুরে যাত্রি

বিনা অনুমতিতে কিংবা লেখকের নাম বিহিন লেখা কপি করবেননা

ভবঘুরে যাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়তি

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬



-অনেকদিন কেটে গেল তাই না? (সীমান্ত মলিনের হাত বুকে চেপে ধরে বলল।)
-শুনো রাত অনেক হইছে এত রাতে ছাদে থাকতে নেই। চলো ঘরে যাই।
-না এখন না পড়ে যাবো। আচ্ছা তোমার আনন্দের কথা কথা মনে আছে? ঐ
যে তোমার খালাতো ভাই।
-কিজে বলনা তুমি আমার ভাই আর আমার মনে থাকবেনা? আমার ভাই বলতে তো ও একাই ছিল অমন ভাইয়ের জন্য আমি নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম। আর ওর জন্যই তো তোমার সাথে আমার বিয়েটা হয়।
হিমেল বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে মলিনের চুল, আকাশের চাঁদটা অভিমানী বউ এর মত অর্ধেক মুখ ঢেকে আছে। সীমান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
পুরনো দিনগুলোর ভাবনায় ডুবে গেল।
*
-দোস্ত কালকের বিয়েতে তোর সাথে যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম ওর নাম কিরে?
-তুই কি মলিনের কথা বলছিস?
-আরে ক্যাটরিনা কায়েফ এর মত দেখতে?
-ওর কথা ভুলে গেলেই ভালো। আমার আপন বোন থাকলেও হয়তোবা ওকে এত ভালবাসতাম না।
-দোস্ত তুই তো জানিস আমি কেমন? জীবনে কখনো প্রেম ও করিনি। আর বাসার থেকেও মেয়ে দেখছে। আর যদি আমাদের সম্পর্ক টা আত্মীয়তায় পূর্ণ
সমস্যা তো দেখছিনা।
-এটা হলে ঠিক আছে। মেয়েটা অনেক বেশি বেচারি। ছোটবেলায় বাবা মারা যায়। কিন্তু তুই যদি পারিবারিক ভাবে আগাস তাহলে আমার কোন সমস্যা
নাই এবং তুই নিজেও তো আমার ভাইএর মতো তাইনা?
-দুলাভাই বলার অভ্যাস কর। তোর ছোট বোন হইছে তো কি হইছে তুই আমাকে দুলাভাই ডাকবি। হাহা
এটা বলেই সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে ওদের আড্ডা চলতে থাকে। বলতে গেলে ওদের আড্ডা প্রধান বিষয় হয়ে দাড়ায় মলিন। একদিন সীমান্ত সাহস করে আনন্দকে বলেই ফেলে "দোস্ত একদিন মলিনের সাথে ভালোভাবে পরিচয় করিয়ে দে না?" অবশ্য আনন্দ প্রথমে মানা করে কিন্তু পরে ধানমন্ডির একটা কফি-শপে ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়। এর পর মাঝে মাঝেই দেখা। অবশেষে বিষয়টি গিয়ে গড়ায় মলিনের বাসায়।
*
সেদিনকার কথা সীমান্ত আজো ভুলেনি। কি সুন্দরমত হঠাৎ ওদের বাসায় এসে আনন্দ হাজির। এসেই বলে "জানিস আমি মলিনের বাসায় সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি, আমি খালাকে বলেছি তোর কথা। প্রথমে অবশ্য ভেবেছিলো মলিন তোর সাথে প্রেম করে তাই আমি সাফাই গাইছি। কিন্তু পড়ে আমি ভালোভাবে বোঝানোর পরে খালা বুঝতে পারে এই তোদের মাঝে যে সম্পর্ক গড়ে উঠছে এর মূল হর্তা কর্তা আমি নিজেই। আর খালা অনেক আগের থেকেই আমার মুখে তোর অনেক কথা শুনেছে। ছেলে হিসেবে তোকে তার অপছন্দ নেই। কিন্তু যাই হবে সব কিছু পারিবারিক ভাবে। এবার বন্ধু তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে চলো এখনই বাকিটা আমি দেখছি" যদিও তখনো সীমান্ত আর মলিনের সম্পর্ক স্রেফ বন্ধুত্ব। আনন্দের এসব ব্যাপার গুলো সীমান্ত কে বরাবরের মতনই নতুন করে
অবাক করে। ছেলেটা ওর সব কয়টা সমস্যা কে তুলি বাজিয়ে উড়িয়ে দেয়।
*
ধানমন্ডি কলাবাগান হোয়াইট প্লেস কমিউনিটি সেন্টারে সীমান্ত এবং মলিনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময়ও সব থেকে বেশি আনন্দ করে আনন্দ নিজেই। এর পর কেটে যায় সীমান্ত এবং মলিনের কয়েকটা বছর। বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে পরিণত হতে সময় তো লাগবেই। বলতে গেলে বিয়ের এক থেকে দের বছর পরেই ওদের দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। সীমান্তের বাবা ফিরোজ সাহেবের যেন মলিন তার নিজের মেয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এবং মলিন ও বাবা না থাকার দুঃখ প্রায় ভুলেই যায়। খুব জাদুকরী এবং মমতা মাখা সম্পর্ক চলতে থাকে ওদের। আর সীমান্ত যখনই ওর বর্তমানের শুখি পড়িবারটা দেখে তখনই নিজের অজান্তেই আনন্দের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায় ডুবে যায়। যেন আল্লাহ মনে হচ্ছে আনন্দকে সীমান্তের জীবনে জলজ্যান্ত ফেরেশতা হিসাবে পাঠিয়েছে। মলিনের দিন সীমান্ত এর ঘরে সারাদিন কাটে শ্বশুর শাশুড়ির আদর যত্নে। এবং রাতগুলো যায় সীমান্তের সাথে এক মাতাল উন্মাদনায়।।
*
দেখতে দেখতে আরো একটা বছর চলে যায়। একদিন রাতে সীমান্ত বাসায় এসে দেখে মলিন ঘুমিয়ে গেছে। ওর বাবা মা ওকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। কিন্তু সীমান্ত মলিনের খাটের কাছে যাওয়ার পরেই মলিন উঠে যায়। বলে "তোমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। মাথা ব্যথা ছিল বলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে একটা খবর দেওয়ার ছিল" মলিনের কাছ থেকে খবরটা শোনার পড়ে ওর মনে হচ্ছিল। জগতের সব থেকে সুন্দর খবর। আর এই খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে আনন্দকে ফোন দিল। "দোস্ত তুই মামা হতে চলেছিস। মলিন বাচ্চা কনসিভ করেছে"
*
দুঃখের সংবাদ কত তাড়াতাড়ি ছড়ায় জানি না। কিন্তু আমার দেখা মতে সুখের খবর খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যায়। আর যেখানে মিষ্টি মুখে কথা থাকে ওইটা তো আরো তাড়াতাড়ি ছড়ায়। তেমনই অদের নবাগত শিশু আসার খবর বাতাসের সাথে ছড়িয়ে গেলো। কিছুদিন খুব উৎসবমুখর ভাবে গেল সীমান্ত দের বাসা। অবশ্য ২-৩ মাস পরেই পারিবারিক রীতি অনুযায়ী মলিন কে ভালোভাবে দেখা শোনার জন্য তার মায়ের কাছে রেখে এলো। অবশ্য কিছুদিন পরপরই মলিনের শ্বশুর শাশুড়ি যায় মলিন কে দেখে আসতে।
*
কিন্তু কিছুদিন পরেই অফিসের একটা কাজে কয়েক মাসের জন্য সীমান্ত কে দেশের বাইরে যেতে হয়। তাই সীমান্ত আনন্দকে ফোন দিয়ে জানায় বিষয়টা বলে।
"দোস্ত আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু তাও না গেলেও হচ্ছেনা। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি চলে আসবো" আনন্দও তার সবসময়ের মত হাসিখুশি মুখে জানালো "চিন্তা করিস না ও তোর বউ হবার আগে আমার বোন। আর আমি আমার বোনের খেয়াল ভালোভাবে রাখবো" অবশ্য সীমান্ত ও জানে আনন্দের কাছে এগুলো বলা শুধু ফর্মালিটি বাদে আর কিছুই নয়।
*
কাজ করতে করতে অনেকগুলো মাস দেখতে দেখতে কেটে গেল। প্রতিদিনই সময় পেলে দেশে ফোন দিয়ে খবর নেয় সীমান্ত। আনন্দের বাসা মলিনদের বাসার কাছে থাকার কারণে ওর চিন্তা কম কারণ হঠাৎ বাচ্চা হওয়ার পেইন উঠলে সীমান্ত জানে আনন্দ দরকার হলে নিজের জীবন দিতেও পিছপা হবে না। অফিসের কেবিনে বসে বসে সীমান্ত এগুলো ভাবছিল। এমন সময় ওর মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বাংলাদেশ থেকে ফোন।
"হ্যালো কে?"
"আমি তোর মারে সীমান্ত"
"কি হয়েছে মা তুমি কাঁদছো কেন? হয়েছে কি?"
"মলিনের পেইন উঠে ছিল। তোর শাশুড়ির শরীর খারাপ দেখে আনন্দ নিজেই মলিনকে ওর গাড়িতে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হয় আর"
"আর কি মা বলো আর কি?"
"ওরা দুইজন এক্সিডেন্ট করে। এখন দুজনই হাসপাতালে। ডাক্তার বলেছে মলিন এবং ওর পেটের বাচ্চা আপাতত ভালো আছে। কিন্তু আনন্দের অবস্থা আশংকাজনক।"
*
সীমান্ত মলিনের হাতটা চেপে ধরে বলল
-বাতাসটা অনেক ঠাণ্ডা তাই না?
-হুম এর জন্য রাতের বেলা অন্ধকারে ছাদে বসে থাকতে আমার অনেক ভাললাগে। আচ্ছা তুমি আমাকে আর আনন্দ ভাইকে অনেক ভালোবাসতা বলেই কি আমাদের মেয়ের নাম আলিন রেখেছ?
-ভালবাসতাম না ভালোবাসি, সারাজীবন বাসব।মলিনের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সীমান্ত অপলক তাকিয়ে আছে যেন মলিনের চুলের জাদুতে হারিয়ে যাচ্ছে। ওর হুশ ফিরল আনন্দের ফোন পেয়ে।
-কেমন আছিস?
-ভালো দোস্ত।
-আলিন কি করে?
-ঘরে ঘুম পারিয়ে এসেছি আম্মা আব্বার কাছে।
-তুই কোথায়? এবং কি করিস? মন খারাপ?
-ছাদে বসে আছি দোস্ত একা একা। হে মন খারাপ রে মলিনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমার হাত ধরে চাঁদের আলোতে রাতভর ছাদে বসে থাকা ওর অনেক পছন্দ ছিল। (মলিন শব্দ টা উচ্চারণ করতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো সীমান্ত)
-দোস্ত আমি তুই আমাকে ক্ষমা করতে পারিসনি তাইনা? হয়তোবা সেদিন আমি আর একটু সতর্ক থাকলে মলিন বেছে থাকতো।
-না দোস্ত তোর দোষ নেই। তুই না থাকলে হয়তো আলিনের মুখ কখনই দেখলাম না। থাক আমি এখন রাখিরে।
এটা বলে ফোন রেখেদিল সীমান্ত। পাশে তাকিয়ে মলিনকে খুঁজছে খুব চেষ্টা করছে কিছুখণ আগের মতই ওর মস্তিষ্ক যদি আবার মলিনকে ডেকে আনতে পারতো। নিজে নিজেই একটা কবিতা গুনগুনিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি হতে থাকে,
এক ফুট, দুই ফুট, তিন ফিট।
সামনে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি দুজনার বারবার
কিন্তু দেয়াল নিজেকে বড় করে নিচ্ছে ক্রমাগত,
চার ফুট, পাঁচ ফুট, ছয় ফুট।
তুমি তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে ওঠো , বাড়িয়ে দাও হাত,
প্রকৌশলী এসে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গতে চায় দেয়াল
কিন্তু আমার! চতুর্দিকে ঘিরে আসে অন্ধকার,
কিন্তু দেয়াল বেড়ে যাচ্ছে অনবরত।
কান্নায় ভেসে যায় তোমার ঠোঁট, চিবুক, স্তন যুগল
আমি হেসে উড়িয়ে দেই, অন্ধকার জাপটে ফেলে আমায়,
হারিয়ে যাও তুমি, বিদায় বন্ধু বিদায়।
*
নিয়তি । তাসফিক হোসাইন রেইযা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.