নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেবু লিংক https://www.facebook.com/tashfic007

ভবঘুরে যাত্রি

বিনা অনুমতিতে কিংবা লেখকের নাম বিহিন লেখা কপি করবেননা

ভবঘুরে যাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবেলায় শেষ দেখা || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:২৬


*
সামনের বোতলে কিছু লিকুইড রাখা। নাঈম অনেক ক্ষণ ধরে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে সেটার দিকে। রুমের ডিম-লাইটের লালচে আলো যেমন পুরো ঘরটাকে মায়াবী করে রেখেছেন তেমনি একটি অতি ভৌতিক অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে মনে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা না প্রতিদিনই তো একই ঘরে থাকে। কিন্তু আজ নাঈমের মনের ভেতর অনুভূতি গুলোকে জরায় গ্রাস করেছে। বলতে গেলে সুখ নামক কিছুই নেই। ওর চেহারা দেখে এমনটাই মনে হতে পারে। কিন্তু ও তো খুব শক্ত একটা মানুষ। এমন যে ওর বাবা যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন ওর বোন এবং মা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। বলা চলে উচ্চবিত্ত একটা পড়িবার হঠাৎ রাস্তায় পড়ে যায়। কিন্তু নাঈম তখন একটুও বিচলিত ছিল না। খুব শক্ত করে সংসারের হাল ধরে। কিন্তু আজকে ও পুরো ভেঙ্গে পড়েছে। মনে হচ্ছে নিঃসঙ্গতা পুরাদস্তুর শিকল পেঁচিয়ে ওকে পেঁচিয়ে ধরেছে।
*
বোতল টা হাতে নিয়ে এক নজরে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ ওর মা বলল "বাবা গেট টা খোলা আছে। আমি ছাদে কাপড় আনতে গেলাম। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। তুই একটু দেখিস ঘরটা।" ও জবাবে শুধু একটু উঁচু আওয়াজে "ঠিকাছে" বলে আবার চুপ হয়ে গেলো। ও অন্য কিছুই ভাবতে পারছেনা। ঘরের দক্ষিণ পাশে রাখা কম্পিউটার থেকে গান বেজে আসছে কানে। ও মেটাল গানের ভক্ত ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু যখন মেটাল ব্যান্ড স্লিপনট স্লো মেলোডি গান "স্নাফ" টা বের করলো। সেদিন থেকেই বলা চলে ও গান্টার পাগল হয়ে গেছে।
*
বাহীরে বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। ও ওর ঘরের ডিম-লাইট টা বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে। বোতল টা এখনো পড়ে আছে ওর স্টাডি টেবিলের ওপর। বোতলের নিচে একটা বই। How TO Kill Your Anger। বাসায় আসার পরের থেকেই বইটা পড়েছে কিন্তু কাজে আসেনি। কিছু কিছু মানুষ এমনই যাদের সচারচর রাগ হয়না কিন্তু যখন হয় তখন শত চেষ্টাও থামাতে পারেনা।
*
বৃষ্টির ফোঁটা গুলো হাল্কা ওর শরীরে এসে পড়ছে। ও হাতটা বাইরে বের করে দিল। যেমন টা মৃদুলা দিত। মৃদুলার সাথে ওদের ভার্সিটি তে যখন প্রথম দেখা হয়। সেদিনও ক্যাম্পাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বাইরে হাত দিয়ে বৃষ্টিতে হাত ভেজাচ্ছিল। খুব মায়াবী লাগছিল ওকে। এমন মেয়ের প্রেমে পড়ে হয়তো মানুষ কবি হতে পারে। অবশ্য ও হয়নি। কারণ ওর কাছে মৃদুলা কে ভাবা বাদে আর কোন কাজই ছিল না। মেয়েটা ওকে সাপোর্ট ও দিয়েছিল প্রচুর। ম্যান্টল এবং ফিজিক্যাল। ওর এখনো মনে আছে মৃদুলাদের বাসার ছাদে ওদের প্রথম চুমু। মেয়েটির জন্য হয়তো সবসময় স্বাভাবিক থাকার সাহস পেয়েছে। কিন্তু আজকে যখন মৃদুলাকে ওর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে রিকশায় ঘুরতে দেখল। এবং জানতে পারলো ওদের ভিতর আবার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তখন থেকেই নাঈমের মনে হচ্ছে এভাবে বেঁচে থাকার মানে হয় না। মৃত্যু টা দরকার।
*
আকাশে বিদ্যুতের চমকানিতে ওর ঘরটা কেমন আলোকিত হয়ে গেলো। ও একটুর জন্য পিছনে ফিরে দেখতে পারলো লিকুইড ভরা বোতলটা এখনো পড়ে আছে ওখানে। মনে হচ্ছে ওকে বিরতিহীন ভাবে ডেকে চলছে। এমন সময় ওর মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে মৃদুলার ম্যাসেজ "নাঈম আমি তোমাকে তখন খেয়াল করেছিলাম। যদিও আমি চেয়েছিলাম ব্যাপারটা তোমাকে সরাসরি দেখা করে বলি কিন্তু তুমি আগে জেনে গেলে। দেখো তোমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এখন যেমন এভাবে আমার বাসা থেকে মেনে নেবে না। আর আমার পক্ষেও সম্ভব না আর তোমার সাথে থাকা পারলে মাফ করে দিও। বিদায়" ম্যাসেজ টা পড়ে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। ও একটা রিপ্লাই ম্যাসেজ দিলো। "দেখো আমি সব গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। আমাকে আর কিছুদিন সময় দিতে পারতে। তুমিই তো আমাকে সাহস দিয়েছিলে। এখন তুমিই মাঝ পথে চলে যাচ্ছ? থাক ভালো থেকো।" ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে ওর মোবাইলটা অফ করে দিল। আস্তে আস্তে করে হেঁটে বোতলটা হাতে নিয়ে সবটুকু লিকুইড খেয়ে ফেললো এক চুমুকে। ভেতর টা কেমন যেন পুড়ে যাচ্ছে। কম্পিউটারে সেই প্রিয় গান।
You couldn't hate enough to love.
Is that supposed to be enough?
I only wish you weren't my friend.
Then I could hurt you in the end.
I never claimed to be a saint...
Ooh, my own was banished long ago
It took the death of hope to let you go
ওর মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে। ও দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে গেলো।
*
নাঈম শুয়ে আছে ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে। ওর চোখ বন্ধ নিঃশ্বাস অনেক ভারী হয়ে আসছে। ও যখনি ঘরে ঢুকে ওর মাকে বলল "মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার কোলে মাথা রাখি" তখনই উনি বুঝে গিয়েছেন ঘটনা। মেয়েটি অবশেষে চলে গেল তার ছেলেকে ছেড়ে। নাঈমের চোখে পানি দেখে ওর মায়ের চোখও দিয়েও অঝোরে পানি পড়তে শুরু করল।
*
নাঈমের মা ওর মাথায় বিলি করে দিতে দিতে বলল "আজকে আমাকে একটা ওয়াদা করবি। তোকে আমার দোহাই।" নাঈম ওর চোখ বন্ধ করে কাঁপা গলায় বলল "বল মা আমি তোমার কোন কথা ফেলেছি কখনো?" ওর মার চোখ থেকে পানি পড়ে ওর কপালে গিয়ে পড়ল। কিন্তু নাঈমের শরীর অবশ হয়ে আছে। ওর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওর মায়ের চোখ মুছে দিতে পারছে না। "আমাকে ছুঁয়ে ওয়াদা কর। আর কখনো মদ খাবি না। আজকেই শেষ ছিল। আমি তোর কষ্ট জানি। তাই কিছু বললাম না। কিন্তু মা হয়ে কি করে ছেলেকে মাতাল হতে দেখি।" নাঈমের কোন উত্তর পেল না ওর মা। উনি বুঝতে পারলেন উনার ছেলে ঘুমিয়ে গেছে। উনি ওর মাথার নিয়ে বালিশ দিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য উঠলেন। তখন নাঈম পিছন থেকে ডেকে বলল।
"আমি তোমার কথা রাখবো মা। কারন তোমাদের দুজনের জন্যই তো বেঁচে আছি এবং থাকবো।"
*
অবেলায় শেষ দেখা || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:১২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: প্রেমে বুঝি ব্যার্থতায় বেশি। গল্প মোটামুটি ভাল লেগেছে।

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯

ভবঘুরে যাত্রি বলেছেন: এখানে একটা প্রেমে ব্যার্থ হওয়া আর আরেকটি প্রেমে জয় হওয়া কে বুঝানো হয়েছে। ছেলেটি তার ফ্যামিলি তার মায়ের কথা ভেবে বিষ খায়নি। শুধু মদ খেয়েছিল।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: একজন ধোকা দিল আর ওমন সুইসাইড করলো!
ফাউল গল্পো

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭

ভবঘুরে যাত্রি বলেছেন: গল্প না বুঝলে বুঝতে চাওয়া উচিত। না বুঝে উলটা পালটা কমেন্ট করা না। -_-

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.