নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেবু লিংক https://www.facebook.com/tashfic007

ভবঘুরে যাত্রি

বিনা অনুমতিতে কিংবা লেখকের নাম বিহিন লেখা কপি করবেননা

ভবঘুরে যাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিকার || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:১৮



"ওই কত নিবি?" পাশে এসে বসা লোকটার কথা শুনে উর্মি একটু বাঁকা ভাবে তাকাল। অন্ধকারে ওর থেকে কিছু দূরে একটা পুরুষালি অবয়ব বসে আছে। প্রথমে একটু লোকটার চেহারা দেখার চেষ্টা করলো পিছন থেকে আসা পার্কের সোডিয়াম লাইটের আলোতে বেশি দেখা যায় না। মনে হচ্ছে মুখে মোচ আছে লোকটার। "কিরে কইলিনা কত নিবি" ঊর্মির নিজের প্রতি হাসি পেল কারণ ও জানে শরীর বিক্রি করতে গিয়ে খদ্দের কেমন এটা দেখতে হয়না। টাকা টাই মুল বিষয়। "১০০ আর জায়গা আমার নিতে হইলে ১৫০০" লোকটি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে "শালির ধান্দা করস পার্কে বইসা। আর ভারা চাস ফাইভে-স্টার এর? "ঊর্মি সাথে থাকা ব্যাগ থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে মুখ ভর্তি ধোয়া ছেড়ে "আমি এমনি পোষাইলে কন না পোষাইলে ভাগেন" লোকটা কিছুক্ষণ ওকে দেখে গেলো উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারা, ভারী বুক, চিকণ শরীর। মনে হচ্ছে মুখের থুতনির নিচে তিল আছে। "ঠিকাছে চল" কথাটা শুনেই বুঝতে পারলো নতুন শিকার তৈরি। ঊর্মি হাতের সিগারেট টা থেকে একটা টান দিয়ে ধোয়া ছারতে ছারতে বললো। "খারান বসেন সিগারেট টা শেষ হইয়ালোক।" রমনা পার্কের গেটে ঢুকেই একটু ভিতরে রোড ল্যাম্প থেকে একটু দূরে একটা বেঞ্চিতে বসে আছে মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ এবং সামাজিক ও আর্থিক প্রতিযোগিতায় বেঁচে থাকার জন্য নিজের শরীর কে পণ্য বানিয়ে দেওয়া একজন নারী। বয়স কত হবে? ২৫-২৬। "চলেন উঠেন। আর একটা কথা। কনডম আনছেন?" লোকটি মনে হয় ঊর্মির কথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। "না, যাওয়ার সময় নিয়ে নিমনি।" ঊর্মির মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। "বৃষ্টির মধ্যে নামছে রাস্তায় কিন্তু ছাতা ছাড়া। আবার ভিজা গেলে কইবো শালীর বৃষ্টি পড়ার আর টাইম পাইল না। বোকাচোদার মত তাকায় তাকায় কি দেখেন চলেন! কনডম আছে আমার কাছে। তাই দেড়ি কইরেন না। আমার আবার কাম আছে।"
*
ধানমন্ডি ৮ রবীন্দ্র সরোবরে বসে আছে। ওর মাথায় ভয়ঙ্কর একটা রাতের দৃশ্য ঘুরপাক খাচ্ছে। যেটা ভাবলেও গা শিওরে উঠে । দুপুর বেলা কিছুক্ষণ আগে যখন সকালের নাস্তাঃ রুটি কলা খাচ্ছিল তখনই আজান শুনেই বুঝতে পারে বেলা একটা বাজে প্রায়। মোটামুটি ভালোই রোদ উঠেছে। এখন একটু বাসায় যাওয়া দরকার মোবাইলের চার্জ টাও কম আছে। বাসায় গিয়ে চার্জ টাও দিতে হবে। তার আগে ওর মাকে ফোন দেওয়া লাগবে। কিছু টাকা জমেছে আজকে বিকাশ করতে হবে টাকা গুলো। ওর মেয়ে নীলাকে এই বছর স্কুলে ভর্তি করতে হবে এ বছর তাই মার টাকা গুলো দরকার। এগুলো ভাবতে ভাবতেই-ওখান থেকে উঠে গেল।
*
-হ্যালো মা।
-কেমন আছিস মা আমার?
-আমাগো আবার ভালো থাকা? নীলা কেমন আছে? তোমারে বেশি জালায় নাতো?
-না খুব ভদ্র আমাগো নীলা। তোরে দেখতে চায় খুব। আমার নিজের পরান ডাও কাঁদে।
-আমার কি মনে চায়না? তোমারে না কইছি এসব কথা কইবানা? গঞ্জে গিয়া রফিকের দোকান থেইকা টাকা উঠাইও কিছু টেকা পাঠাইছি।
-তা নাইলে আনলাম। তুমি কি একটু ওর লগে কথা কবি? তোর মনে চায়না? ঢাকায় ও তো নিয়া যাইতে পারস?
-দেখ মা আমি চাইনা আমার ছায়ার কাছে শুদ্ধা ও আসুক। ও জানবো পৃথিবীতে তুমি বাদে ওর আর কেও নাই। আর আমার কাছে আনার কথা কও। আমার আশেপাশের পুরুষেরা মাইয়াগরে মানুষ মনে করেনা। মাইয়াগো ভিতর তারা শুধু চামড়া বাদে আর কিছুই চোখে দেখেনা।
-এই বুড়ি মা ডার কথা একটু ভাব? আমারো তো তোরে দেখতে ইচ্ছা করে?
-আমুনে মা। শেষ দিকে একবার চিরদিনের লেইগা আমুনে। এখন রাখি তুমি মনে কইরা টাকা টা উঠাইয়া নিও।
-তোর রোগের অবস্থা কি ডাক্তার কি কইছে? ওর মা কথা শেষ করতে করতেই ফোন রেখে দিল ঊর্মি।
*
ঘরে একটা মাত্র ড্রেসিং টেবিল একটা খাট আরেকটা আলনা বাদে আর কিছু নেই ওর। একটা সাধারণ বড় টিন-সেট বাসায় একটা ঘর। পর্দা গুলো সব সময় নামানো থাকে। ও কিছুক্ষণ আগে গোসল করে এসেছে। জামা বদলানোর সময় ওর চোখ আয়নার দিকে পড়ল। হটাত ওর চোখ দুটো থেমে যায় ওর নগ্ন বুকের উপর। কিছু মানুষ রুপী পশুর দল খুবলে খুবলে খেয়েছিল সেদিন। কিন্তু শিপন কে ও আসলেই ভালোবাসতো। মা বাবার অমতেই ঢাকায় পালিয়ে আসে শিপন এর সাথে। প্রথম ৩-৪ মাস এই জায়গা থেকে ওই জায়গা করতে করতে কেটে যায় ওদের। শিপন শুধু বলতো একটা ভালো কাজ পেলে বিয়ে করবে। এ বলেই শারীরিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে ছিল ওরা দুজন। কিন্তু ৫ মাস পরে জানতে পারে ঊর্মির কোল জুরে আসবে নোতুন শিশু। আর ওটা শিপন জানতেই ঘটে বিপত্তি। বিয়ে করে খালার বাসার নাম করে ওকে বেঁচে দেয় বেশ্যা পল্লীতে। প্রথম দিকে তিন দিন শিপন আসেনা। ঊর্মি অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। অপেক্ষায় থাকে। খালাকে জিজ্ঞাস করার পরে খালাও কিছু বলেনা। এমনকি ওকে ঘর থেকেও বের হতে দেয় না। কেঁদে কেঁদেই কেটে যায় তিন টা দিন। অবশেষে ওর রুমে আগমন হয় এক অপরিচিতের। এভাবে আসতে থাকে একেক পড় এক। আর তখন থেকেই ওরে নিশি কন্যার জীবন শুরু। যদিও কিছুদিন পরেই ও পালাতে সক্ষম হয়। ঢাকায় যেহেতু ওর পরিচিত কেউ নাই। তাই আর কোথাও না গিয়ে সোজা নিজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে অন্য বিপদ। একবার ঊর্মি শুনেছিল বিপদ রা অনেক গুলো ভাইবোন। যার জীবনে যাবে এক সাথেই যাবে সিরিয়াল ধরে। ও যেদিন পালিয়ে যায় তার কিছুদিন পরেই ওর বাবা ওকে নিয়ে চিন্তা করে করে এক পর্যায় স্ট্রোক করে চলে যান না ফেরার দেশে। বলা চলে ও গ্রামে গিয়ে আরো বেশি ভেঙে পড়ে। একবার চিন্তা করে ওর পেটের বাচ্চা টাকে নষ্ট করে দিবে। কিন্তু পরে ভাবে বাচ্চার তো দোষ নেই। দোষ ওর নিজের বিশ্বাসের এবং একজন পুরুষের। পুরুষ জাতির যারা মেয়েদের শুধু পণ্য মনে করে।
*
এভাবে দিন চলে যায়। ওর ঘরে জন্ম নেয় একটি ফুট ফুটে মেয়ে। কিন্তু সাথে নিয়ে আসে দারিদ্র্যের সব থেকে ভয়ানক রূপ। ও দিকবিদিক কিছু খুঁজে না পেয়ে নীলাকে গ্রামে রেখে চলে আসে আবার ঢাকায়। কিন্তু এখানে এসে আবার পরিচয় হয় পুরুষের সেই বীভৎস মানসিকতা সাথে। সবার শুধু ওর শরীরের উপর লোভ। এবং অবশেষে ও নিজেকে ভাসিয়ে দেয় স্রোতের সাথে। চলে যায় নিশি-কন্যার দেশে। নিজে নষ্ট হয়েছে কিন্তু নিজের মেয়েকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই ওর লক্ষ।
*
কিন্তু এবারো মনে হয় ভাগ্য মুখ তুলে তাকায় না। ওর শরীরে প্রবেশ করে এক ভয়ানক রোগ। "যদি আরো কারে তুমি চাহো যদি আরো ফিরে নাহি আসো" হটাত ওরে মোবাইল ফোন বেজে উঠে। ফোন করেছে ওর দালাল জব্বার। আজকে রাতে একটা ভালো ক্লাইন্ট পেয়েছে সেটা জানানোর জন্যই। ও উঠে গেল টেবিল থেকে। টেবিলের এক পাশে কিছু প্যাকেট করা কনডমের প্যাকেট। ও খুব সুন্দর করে এগুলোকে তৈরি করে রাখে যাতে করে সঙ্গম করার সময় দুজন ধাতু একটু হলেও মিশে। আর তাতেও কাজ না হলে ও জানে কি করে পুরুষ দের কনডম ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হয়। নিজের মরণ ব্যাধি টা কি করে তাদের শরীরে ঢুকাতে হয়। (ওর মুখে এখন একটি অ-প্রাকৃতিক হাসি)
(সমাপ্ত)
*
শিকার || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||
প্রথম প্রকাশ ( Swapna স্বপ্ন বৈশাখ সংখ্যা-১৪২৪ )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.