নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেবু লিংক https://www.facebook.com/tashfic007

ভবঘুরে যাত্রি

বিনা অনুমতিতে কিংবা লেখকের নাম বিহিন লেখা কপি করবেননা

ভবঘুরে যাত্রি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেয়াল || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৯



দেয়াল || তাসফিক হোসাইন রেইযা ||
*
দেয়াল গুলো অদ্ভুত। অনেক স্মৃতি জমিয়ে রাখে নিজের শরীরে। শৈশব কৈশোর কত অনুভূতি বন্দী হয়ে থাকে চার দেয়ালের মাঝে। রুহির কাছে তার সামনের দেয়াল টাও তেমনি। সেখানে ঝুলছে রুহি এবং অদিতের ছবি। ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছে এইতো সেদিনকার। এটা অদিতের সাথে পরিচয় হওয়ার পরে রুহির দ্বিতীয় জন্মদিন। রুহির একমাত্র প্রিয় বন্ধু ছিল অদিত। অবশ্য অদিতের অনুভূতি কিঞ্চিৎ ভিন্ন ছিল একটু আলাদা। প্রিয় বন্ধুর থেকেও অনেকটা বেশি। কিন্তু সেটা ভালোবাসা ছিল কিনা এটা অদিত নিশ্চিত ছিলনা। একি ক্লাসে পড়ার সুবাদেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু। প্রতিদিন ক্যান্টিনে আড্ডা লাইব্রেরিতে গ্রুপ স্টাডি। এভাবেই তাদের দিন কেটে যেত। এমনকি রুহির সাথে তার প্রেমিকের পরিচয়ও হয় অদিত এর মাধ্যমে। ছেলেটা ছিল অদিতের স্কুল জীবনের বন্ধু। ফেসবুকে অদিতের আইডির একটা পোস্টের কমেন্টে তাদের পরিচয়। আর সেই পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে ভালোবাসায়।
একদিন সকালে ক্লাস শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের একটা মাঠের উপর রুহি এবং অদিত বসে ছিল। হটাত রুহির ফোন বেজে উঠে। রুহি প্রথমে কয়েকবার ফোন কেটে দেয়। ওর বাড়বার ফোন কেটে দেওয়া দেখে অদিত জিজ্ঞেস করে।
-কি হইছে ফোন কেটে দিচ্ছিস কেন কোণ সমস্যা? কে ফোন দিয়েছে?
-আরে বলিসনা এলাকার এক ছেলে। আগে শুধু এলাকায় ডিস্টার্ব করতো। সেদিন কার কাছে যেন নাম্বার পাইছে তারপর থেকে ফোনেও ডিস্টার্ব করা শুরু করছে।
-কি তোকে ডিস্টার্ব করে? দেহ তো নাম্বার টা।
-বাদ্দেতো। এগুলা মেয়েদের সইতেই হয়। আমি এর থেকেও বড় সমস্যায় আছি।
-কি?
-তোর ওই বন্ধু আছেনা সজল? ও তো আমাকে প্রপোজ করেছে। আমারও যদিও ছেলেটাকে ভালো লাগে কিন্তু কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছিনা।
-হ্যাঁ বলতে পারিস। ছেলেটি ভালো আমার জানা মতে।
-যাহ-তো তুইওনা।
-হ্যাঁ আমিতো আমিই।
*
সময় খুব দ্রুত চলে। ঘড়ির কাটা সময় দেখায় কিন্তু কোণ এক সময় সেটা থেমে যায় ব্যাটারির কারণে। কিন্তু মূল সময়ের কোণ ব্যাটারি নেই। সে তার নিজের মতো চলতে থাকে। টেনে হিছড়ে তার সাথে আমাদের জীবন টাকেও নিয়ে যায়। রুহির সাথে সজলের সম্পর্কও আগাতে থাকে সময়ের সাথে। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের পড়ে মাঝে মাঝে ক্লাস ফাকি দিয়ে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এক সময় রুহি নিজেও বুঝতে পারে তার মাঝেও একটি ভালোবাসা নামক পাখির জন্ম হয়েছে যে কিনা পুরো দমে ডানা ঝাপটানো শুরু করে দিয়েছে। রুহিও পাখিটাকে আটকে রাখেনি ছেড়ে দেয় মুক্ত গগণে যেটা উড়তে উড়তে একটা উত্তর হয়ে থেমে যায় সজলের সামনে। ভালোবাসা।
এভাবে চলতে থাকে অনেক দিন তাদের দুজনার সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এদিকে অদিত যেন রুহির জীবনের বইয়ের পাতা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে ক্রমশ। এতে অদিতের কোণ সমস্যা হয়না যদিও কারণ দুজনকেই সে অনেক ভালোবাসে। তার কাছে বন্ধুত্ব শব্দটাই হয়তো মূল। একদিন অদিত রুহির ফোন পায়।
-কিরে কেমন আছিস রুহি। সজল কে পেয়ে তো মহারানীর এখন আর সময়ই হয়না।
-ধুর যত আজেবাজে কথা। কিছু সমস্যায় আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম সজলকে বলবো কিন্তু পড়ে ভাবলাম তোকে বলাটাই ঠিক হবে।
-কি সমস্যা বল?
-আরে আমাদের এলাকার ওই বখাটে ছেলেটা আছেনা? ও কিছুদিন ধরে অনেক বেশিই জ্বালাতন করছে। মাঝে মাঝে রাস্তা আটকিয়ে দাঁড়ায় থাকে।
-তুই আংকেল কে বলিসনি?
-না। বাবাকে বললে দেখা যাবে শুধু শুধু চিন্তা করবে। পরে ভয়ে না আবার আমার ভার্সিটি যাওয়াই বন্ধ করে দেয়।
-আচ্ছা রাখ আমি দেখতেছি।
-ধন্যবাদ দোস্ত।
অদিত তার নিজের মত করে সমস্যাটা ঠিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু রুহির সাথে ওর আগের মত কিছুই ঠিক হয়না। এই শুধু মাঝে মাঝে ভার্সিটি তে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় এই যা।
*
দেয়াল মানুষের কত কথাই না নিস্তব্ধ শুনে যায় নীরবে। দেখে মানুষের অনুভূতির মৃত্যু, হাসি আনন্দ সব। ঢাকায় অদিত একটা ফ্লাট নিয়ে থাকে একা। শুধু একটা বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়। ওর বাবা মা থাকে দেশের বাইরে। আর সাধারণ দিনের মত একা ঘড়ে বসে দেয়ালে আঁকা ছবিগুলো দেখছিল। ওর বেডরুমের সবগুলো দেয়ালই যেন আস্ত একটা ক্যানভাস। ও হটাত খেয়াল করলো রুহি ওর ঘড়ে এসে হাজির। মেয়েটিকে আজ অপরূপ লাগছে। আকাশী রঙের শাড়ি, কপালে লাল টিপ। দেবীদের এমনই লাগে বুঝি।
-কিরে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? আগে কক্ষনো আমাকে দেখিসনি নাকি?
-তোকে অনেক সুন্দর লাগছে কাহিনী বলতো। থাক আগে বস। আমি কিছু নিয়ে আসি।
-থাক কিছু আনতে হবেনা। আমি চলে যাবো। অনেক কাজ আছে। তুই এটা ধর ( একটি কার্ড অদিতের দিকে এগিয়ে দিল রুহি)
-এটা কিসের কার্ড।
-খুলেই দেখ।
-তুই বিয়ে করছিস? মানে তুই আর সজল বিয়ে করছিস? আর আমাকে আজকে জানালি?
-কোণ দিক দিয়ে কিভাবে যে কি হয়ে গেলো আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারিনি। ওর বাবা ওর আর আমার ব্যাপারে জেনে। কিভাবে যে সব পাকা করে দিল বুঝলামই না। এখন ব্যঙ্গ এর মত মুখ না ফুলিয়ে ঠিকঠাক হ। আমার বিয়ের কাজ সব কিন্তু তোরই করা লাগবে।
*
মানুষের জীবনে বিয়ে বিষয় টা অনেক আনন্দের হয়ে থাকে মূলত। অনেক জল্পনা কল্পনা ঘিরে থাকে এই বিষয়টি। সবাই চায় এটাকে স্মরণীয় করে তুলতে। কিন্তু রুহির বিয়ে সব জল্পনা কল্পনার মধ্যে পানি মেরে দেয় অন্ধকার গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলে। মুখে কাপড় পেঁচানো ছেলের হাতে থাকা একটি কাচের বোতল থেকে কিছু তরল ছিটকে পরে রুহির মুখে। সাথে সাথেই ঝলসে যায় একটি পাশ। গগন বিদারক চিৎকার করতে থাকে রুহি। পৃথিবী যেন সেখানেই শেষ। কিন্তু শেষ হয় কোথায়? শেষ হয়ে যায় শুধু সম্পর্ক। হ্যাঁ সজল রুহিকে বিয়ে করতে মানা করে দেয়। কারণ সজল ভালোবেসেছিল একটি সুন্দরী রমণীকে। যাকে অনেক মানুষ কামনা করে। যেখানে রুহিকে তখন সবাই দয়ার নজরেই দেখে কিন্তু অদিত তার বন্ধুত্বতে কোণ দয়া ছিলনা ছিল ভালোবাসা। আর তাই বোধহয় রুহির শত মানা করার পরেও অদিত বিয়ে করে নেয় রুহিকে। আর সময়ের সাথে দেখতে দেখতে তারা দুজন কখন তুই থেকে তুমি তে চলে যায় কেওই বুঝতে পারেনা। রুহি মূলত তখনই বুঝতে পারে ভালোবাসা বহুজাতিক। সেটা শুধু যে জীবনে একবারই হবে কথাটা ঠিক না। দ্বিতীয়বার ও হতে পারে। যা সে বুঝেছে অদিত কে ভালোবেসে।
*
অদিত এর বাসায় একটা ঘর ছিল যেখানে ওর বিভিন্ন বই এবং ডায়েরির স্তূপ। রুহি কখনই বই পরতোনা। তাই কক্ষনো সেই ঘড়ে যাওয়াও হয়নি। এমনকি ঘরটিও থাকতো সবসময় তালা দেওয়া। অদিতের কাছে একবার কারণ জানতে চাওয়া হলে সে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু একদিন রুহি ঘরের চাবিটা ঠিকই বের করে ফেলে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে থাকে অদিতের ছোট কালের জীবন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে কিন্তু একদিন একটি পাতায় আটকে যায় চোখ।
*
রুহি দেয়ালের অদিত আর তার ছবিটাকে নামিয়ে একটু মুছে আবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে। হঠাৎ তার মনে হয় অদিত বেডরুম থেকে তাকে ডাকছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে অদিতের ওষুধের সময় হয়ে গেছে। বেশি না হয়তো আর কিছুদিন।
রুহি ওষুধ টা নিয়ে অদিতের ঘড়ে অদিতের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি রুক্ষ এবং মলিন একটি চেহারার হাড্ডিসার মানুষ শুয়ে আছে রুহির সামনে। শ্বাস নেওয়ার জন্য বুক ওঠানামা না করলে ঠিক বুঝার উপায় নেই মানুষটা জীবিত না মৃত। রুহি আদর করে অদিতের মাথার নিচে হাত দিয়ে ওকে উঠে বসতে সাহায্য করে এবং ওষুধটা খাইয়ে আবার শুইয়ে দেয় বিছানায়। কিছুক্ষণ আবার অদিতের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে পাশে রাখা ড্রেসিং টেবিলের দিকে নিজের অর্ধেক ঝলসে যাওয়া চেহারার দিকে তাকায়। তার বারবার মনে পরে ডাইরিতে অদিতের পড়া সেই লাইন। “সজল যে শুধু রুহির চেহারাকেই ভালোবাসে তা আমি রুহিকে বুঝিয়ে দিবো। খুব কষ্টে পেয়েছি বোতলটা। যার কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট রুহির চেহারা নষ্ট করতে”।
হঠাৎ আদিত এর গোঙানি শুনে বাস্তবে ফিরে আসে রুহি। ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে “এই তো বাবু আর কয়েকটা দিন” এটা বলার পরেই রুহির ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে একটি অতি-প্রাকৃতিক হাঁসি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.