নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

পুলহ

পুলহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

#ছোটগল্পঃ ঠিকানা

২৮ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৪৩


সালেহা মেয়েটা জন্ম থেকেই অভাগী।

আমি আগে যে বাসায় কাজ করতাম, সেখানকার খালা-খালুর বাচ্চা হচ্ছিলো না অনেকদিন। ওনারাই এলাকার এক এতিমখানা থেকে সালেহাকে তুলে এনেছিলো। বাচ্চাটার বয়স কত হবে তখন, দেড় অথবা দুই ! তখন থেকেই মেয়েটাকে আমি চিনি।

আমার মনে আছে- ঐ বয়সেও কি ভীষণ শান্ত ছিলো বাচ্চাটা? ক্ষিধে লাগলেও কাঁদতও না। খালা খালু দু'জনই যেহেতু চাকরি করতেন, তাই এক হিসেবে আমার উপরই ভার ছিলো দিনের বেলাটা সালেহাকে দেখে রাখার। আমি ওকে দুধ বানিয়ে দিতাম, গোসল করাতাম। চোখ বন্ধ করে সালেহা যখন চুকচুক করে ফিডার খেতো, কি মায়া লাগতো আমার বাচ্চাটাকে দেখে ! কি শান্ত, পবিত্র আর স্নিগ্ধ একটা মুখ !

আরেকটু বড় হলে সালেহাকে প্রি-স্কুলে দেওয়ার একটা আয়োজন শুরু হলো। বাসার মোটামুটি কাছেই কিন্ডারগার্টেন ছিলো একটা। খালা প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় সালেহাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে যেতেন, আর আমি নিয়ে আসতাম স্কুল ছুটি হওয়ার পর । হেটে আসতে দুই মিনিটও লাগতো না বাসায়, তারপরো সেদিন স্কুলে কি কি ঘটেছে সব আমার জানা হয়ে যেতো। আমি শুনতাম- টুনু নামের একটা মেয়ের সাথে নাকি খুব ভাব হয়েছে সালেহার। সাকিব নামের ছেলেবাচ্চাটা নাকি অনেক দুষ্টু, আরেক বাচ্চাকে পেন্সিল দিয়ে খোচা দিয়েছে- এসব। মাঝে মাঝে সালেহা আইসক্রিম খেতে চাইতো। এই একটা জিনিসেরই বায়না ধরতে দেখতাম তাকে। এম্নিতে, আমি নিজেও গরীব মানুষ, এ বাসায় কাজ করে আর কতই বা বেতন পাই ! সেখান থেকেই একটু-আধটু জমিয়ে সালেহার জন্য আইসক্রিম কিনে দিতাম। কি যে খুশি হতো মেয়েটা !

খালা খালু দু'জনই ছিলেন মানুষ হিসেবে খুব ভালো। বলতে দ্বিধা নেই, সালেহার যত্নে তারা ত্রুটি রাখেন নি। কিন্তু তারপরো কোথায় যেন একটা ফাক রয়ে গিয়েছিলো, রয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক অবশ্য। পরের সন্তানকে মায়া করা যায়, আদর দেয়া যায়- কিন্তু নিজের আত্মার অংশ ভাবা যায় না। সালেহাও তাই উনাদের আত্মার অংশ হয়ে উঠতে পারে নি কখনো। পালক মেয়ে হয়েই রইলো।

পরিস্থিতি আরো একটু জটিল হয়- যখন বছর দুই পর খালা পোয়াতী হলেন। সালেহার বয়স কতে হবে তখন? সাড়ে চার ? ! একই সাথে আনন্দিত এবং দুঃখিত হবার ঘটনা আমার জীবনে খুব বেশি ঘটে নি, তবে খালার পোয়াতী হওয়াটা ছিলো তেমনই একটা ঘটনা। আমি দুঃখিত হয়েছিলাম সালেহার জীবনের কথা ভেবে, আবার খালা-খালুর আনন্দিত চেহারার দিকে তাকালে ভালোও লাগতো খুব। মানুষের গভীর সুখ আর পুলক দেখার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে ! তার উপর খালা খালু দু'জনই আমার খুব পছন্দের মানুষ, সম্মানিত দম্পতি......

মার্চ মাসের ২৭ তারিখে উনাদের ঘর আলো করে এক পুত্রসন্তান এসেছিলো। খালু ছেলের নাম রেখেছিলেন আকাশ। ছেলের জন্মের দু'বছরের মাথাতেই উনারা সপরিবারে বিদেশ চলে যান। সালেহা পালক মেয়ে বলে তাকে সাথে নেয়াটা সম্ভব হয় নি উনাদের। এ কারণে তারা বিদেশ যাবার পর সালেহার ঠাই হলো আবার এতিমখানায়। মানুষ সাধারণত একবার এতিমখানায় যায়, এই অভাগী গেলো দুইবার ! প্রথম বার যখন সে জন্মেছিলো, দ্বিতীয় বার ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে, তার বয়স যখন ছয়।

সে দিনটার কথা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। আমি আর সালেহা দু'জনই এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম খালাদের বিদায় জানাতে। ফাগুনের অপূর্ব রৌদ্রজ্জ্বল সকাল ছিলো সেটা। এয়ারপোর্টের বহিরগমন টার্মিনাল দিয়ে ভেতরে ঢোকার আগ মুহূর্তে খালা খুব কাঁদলেন। সালেহার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন- "আমি দোয়া করি মা তোমার জন্য, তুমি অনেক বড় হও।" আমাকে বলে গেলেন- সালেহার ভরণপোষন, পড়ালেখার সব দায়দায়িত্ব তাদের। সম্ভব হলে আমি যেনো মাঝে মাঝে মেয়েটার একটু খোজ খবর নেই। তার পড়াশোনা কেমন চলছে, কোন সহযোগিতা লাগবে কি না- এসব বিষয় যেনো তাদের নিয়মিত জানাই...... সালেহাও চোখ ডলছিলো। পরে জিজ্ঞেস করে জানলাম- ওর নাকি বেশি খারাপ লেগেছিলো আকাশের জন্য। আর কখনো আকাশের সাথে খেলতে পারবে না, আর দেখা হবে না ওদের- এইসব কথা চিন্তা করে......

উনারা বিদেশ চলে যাবার পর আমিও সে বাসা থেকে চলে আসি। ঢাকারই একটা গার্মেন্টে কাজ নেই। খালু যাওয়ার আগে আমাকে একটা একাউন্ট খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন, ওখানেই সালেহার জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন। আমিও আমার সুবিধামত টাকাটা প্রেরণ করতাম এতিমখানায়; কখনো বিকাশে, আবার যখন সালেহাকে খুব বেশি দেখতে ইচ্ছা হতো, তখন নিজে গিয়ে। এভাবেই খালাখালু চলে যাবার পরও অনেকদিন সালেহার সাথে যোগাযোগ ছিলো আমার। তবে হঠাৎই বিয়ে হয়ে যাবার পর সালেহার ওখানে যাওয়া-আসা কমে গিয়েছিলো। টানা আট মাসের মধ্যে একদিনও এতিমখানায়া গিয়ে সালেহার সাথে দেখা করে আসতে পারলাম না। এর মধ্যে আবার আমার নিজেরও পেটে সন্তান আসে। তাতেও বিরতি পরে গেলো প্রায় বছর খানেকের।

এমনই পরিস্থিতিতে একদিন এতিমখানা থেকে একটা খবর পেলাম। শুনলাম - সালেহা নাকি হাসপাতালে ভর্তি। ওর ক্যান্সার ধরা পরেছে। ব্যয়বহুল চিকিৎসার পরও মেয়েটাকে বাঁচানো যাবে কি না সন্দেহ, কারণ ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজ চলছে।

আমি খবরটা পাওয়া মাত্রই সেদিন রিকশা করে সালেহাকে দেখার জন্য রওনা হই। এতিমখানা থেকে হাসপাতালের ঠিকানা জোগাড় করে নিয়েছিলাম আগেই। খালা খালুকেও জানানো হলো। উনারা বললেন- চিকিৎসার খরচ টরচ কেমন লাগবে, সে ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে একটু কথা বলে আসতে। সম্ভব হলে উনারা শেষ চেষ্টাটুকু করবেন।

রিকশায় যেতে যেতে কত কথা মনে পড়ছিলো আমার ! পুরানো দিনের কথা.........

কেমন হয়েছে এখন সালেহা? এক দেড় বছর কম সময় তো নয়। আগের মতই শান্তটি আছে তো? ছোটবেলায় আইসক্রিম যেমন পছন্দ করতো, এখনো কি তেমনটা করে? শেষবার যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন দু'টো চকবার নিয়ে গিয়েছিলাম সালেহার ওখানে। কি খুশি যে হয়েছিলো মেয়েটা ! আমার দু'চোখ হঠাত পানিতে ভিজে আসে। আহা, বেচারি সালেহা !!

সালেহা আমাকে দেখেই খুব খুশি হয়ে উঠলো। অনেকখানি শুকিয়ে গেছে সে, বোঝা যায় ছোট্ট শরীরের ওপর দিয়ে ভালোই ধকল যাচ্ছে তার। ক্লাস থ্রি/ ফোর পড়ুয়া একটা বাচ্চা আর কতই বা নিতে পারে লাস্ট স্টেজ ক্যান্সারের অত্যাচার। ডাক্তারও বললো সে কথা। দ্রুত নাকি খারাপ হচ্ছে সালেহার শরীর। এখনই চিকিৎসা শুরু করলে হয়তো মৃত্যু প্রক্রিয়াটাকে আরো একটু দেরী করানো যাবে। তা না হলে...... ইত্যাদি।

আমি ঐদিন রাতেই ডাক্তারের কথাগুলো সব খালাকে জানালাম। বললাম- চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ লাখ টাকা লাগবে, আর সেটাও শুরু করতে হবে দ্রুত। আমাদের হাতে সময় একেবারে নেই।

টাকার অংক শুনে খালা দীর্ঘসময় চুপ করে রইলেন। তারপর ক্লান্ত গলায় বললেন- "রুপালি, তোমাকে কিছু কথা বলবো এখন। খুব মন দিয়ে শুনবে, কেমন......?

আমরা সালেহাকে পালক নিয়ে আসার আগে ওর ব্যাপারে একটু খোজখবর করেছিলাম। মেয়েটার বাবা কে, তা আমরা জানি না, তবে তার মায়ের খোজ আমার কাছে আছে। ইন ফ্যাক্ট- ঐ মহিলার সাথে আমার কথাও হয়েছিলো একদিন। উনি একসময় সালেহার ভরণপোষণ খরচও দিতে চেয়েছিলেন আমাদের, আমরা নেই নি। মনে আছে- তার এ প্রস্তাব শুনে আমি যাচ্ছেতাই একটা ব্যবহার করলাম মহিলার সাথে। রাগারাগি করে ফোন রেখে দিলাম......

রুপালি, সালেহা মেয়েটা নিষ্পাপ। কিন্তু ও যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে এসেছে, সেটা বৈধ কিছু ছিলো না। ঐ মহিলা আর তার কথিত প্রেমিকের পাপের ফসল হিসেবেই সালেহার জন্ম হয়। অবশ্য সালেহার ভাগ্যটা এই একটা দিকে ভালো বলতে হবে !এসব ক্ষেত্রে কত বাচ্চাকে তো জীবন পাবার আগেই মারা যেতে দেখি। কত কত এবরশনের ঘটনা আমরা শুনি ! সে যাই হোক- পেটে বাচ্চা চলে আসার খবর শুনে সালেহার মায়ের সে কথিত প্রেমিক পালিয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, তুলি (সালেহার আসল মায়ের নাম) তার পেটের বাচ্চাটাকে নষ্ট করে নি। মেয়েটার পরিবার কঠোর গোপনীয়তার সাথে বাচ্চার ডেলিভারি করিয়ে সাথে সাথে বাচ্চাকে এতিমখানায় দিয়ে আসে। ওখানেই তুলির সাথে সালেহার সম্পর্কের সমাপ্তি......

এরপর সামাজিক কারণেই- না তুলির পরিবার, না তুলি নিজে- সালেহার সাথে যোগাযোগ রেখেছে। কিন্তু এতো দীর্ঘ সময় পর- আমরা যখন সালেহাকে দত্তক নিয়ে আসি- তখন তুলি কিভাবে কিভাবে যেনো সালেহার খোজ বের করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। মানুষকে বোঝা বড় দায় রুপালি ! যে মেয়ে জন্মের পর এতো বছর তার মেয়ের কোন খোজ রাখে নি, সে সালেহাকে এক নজর একটু দেখতে চাইলো। বললো- বাবা মারা যাবার পর অনেক সম্পত্তির নাকি মালিক হয়েছে সে। এখন তাই সালেহার ভরণপোষণের খরচ দিতে চায়- ইত্যাদি...... আমি তার মুখেই সালেহার জীবনকাহিনী শুনে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম ফোনে। প্রায় গালাগালি করেই ফোনটা রেখে দিলাম। বলেছিলাম- "যে মেয়ের জীবন এতো নোংরা, আমি চাই না তার সামান্যতম কোন কন্ট্রিবিউশনও সালেহার জীবনে থাকুক। আমাদের কাছে সালেহা বাবা-মা'র হৃদয় নিংড়ানো আদর না পেলেও অভিভাবকের স্নেহ-শাসনেই বড় হবে।"

আমি ওপাশে খালার কথা শুনতে শুনতে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। মনের ভেতরে আলোড়ন চলছিলো আমার, সেটা যে ঠিক কেমন অনুভূতি তা ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। না দুঃখ, না ক্রোধ না বিহবলতা, শুধু ভোতা এক ধরণের অস্থিরতা যেন......

"রুপালি..." খালার কথা শুনে আমার অন্যমনস্কতা ভাঙ্গে- "আমার ধারণা এখন দ্রুততম সময়ে সালেহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার একমাত্র উপায় হলো- তার আসল মায়ের সাথে কথা বলা। আমি দেখি- কালকের মধ্যেই ওকে সালেহার অসুস্থতার খবরটা জানাবো। দেখি- সে কি বলে......"

এটুকু বলেই খালা সেদিনের মত ফোনটা রেখে দিলেন। আমিও বসে রইলাম স্তব্ধ হয়ে। তাৎক্ষণিক কি বলবো, কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

নাহ, অনেক কাজ এখন আমাদের সামনে !

**

(সালেহা)

সোমবার রুপালি আপু বলে গেলো- আমার মা'কে নাকি খুজে পাওয়া গেছে। মা নাকি হারিয়ে গিয়েছিলো আগে, এখন কিভাবে খুজে পেয়েছে ! আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম "বাবাকে খুজে পায় নি আপু?" আমার এই কথা শুনে আপু কেঁদে ফেললো কেন জানি। কাউকে কাঁদতে দেখলে আমার এমন খারাপ লাগে......

আপু বললো- মা নাকি একদিন আমাকে দেখতে আসবে। আমার অসুস্থতার খবর পেয়ে মায়ের নাকি অনেক মন খারাপ। এটা শোনার পর থেকেই আমার খুব চিন্তা লাগছে আসলে ! কি বলবো আমি মাকে? আমি কি শুরুতেই মা ডাকবো? একটু লজ্জা লজ্জাও লাগছে কেমন ! আমি তো আগে কখনো কাউকে মা ডাকি নি। খালাকে মাঝে মাঝে ডাকতে খুব ইচ্ছা করতো, বিশেষ করে যখন খাইয়ে দিতো আমাকে। কিন্তু ডাকা আর হয় নি। আমিও রুপালি আপুর মত উনাদের খালা-খালুই ডেকেছি। আচ্ছা, মা ডাকতে কেমন লাগে মানুষের?

খালা আমাকে প্রজাপতি আঁকা শিখিয়েছিলো। আমি চিন্তা করছি আমার মা'র জন্য একটা প্রজাপতি এঁকে রাখবো। রুপালি আপুকে বললেই কাগজ, পেন্সিল আর নীল রঙ এনে দেবে......

ওহ কবে আসবে মা? ইশ, কেউ যদি আমার বাবাকেও খুঁজে বের করে ফেলতো?

**

শেষ কথাঃ

সালেহা মারা গেলো এক আশ্বিন মাসের বিকেলে।

তুলি সালেহার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিলো। মাসের ২৮ তারিখে ছিলো সালেহার সিঙ্গাপুর যাবার ফ্লাইট। ওখানেই একটা হাসপাতালে ক্যান্সার ট্রিটমেন্টের জন্য পাঠানোর কথা ছিলো তাকে। কিন্তু এর দিন পাঁচেক আগেই সালেহার অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়। কাকতালীয়ভাবে, তুলিরও সালেহাকে দেখতে যাবার কথা ছিলো ঐদিনই। রুপালি এসে তুলিকে নিয়ে রওনা হলো...

যতক্ষণে তারা হাসপাতালে গিয়ে পৌচেছে, ততক্ষণে সালেহা সংজ্ঞাহীন; চোখ বন্ধ করে অসহায়ের মত পরে ছিলো। ডাক্তার-নার্সেরা সব ছোটাছুটি করছে ব্যস্তপায়ে। সালেহার ছোট্ট মুখটুকু অক্সিজেন মাস্কে ঢেকে নিয়ে যাচ্ছে ভেতরে। এমন সময় হঠাত খুব অল্প সময়ের জন্য সালেহার জ্ঞান ফিরে এলো। সে অবাক চোখে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো- তারই মত, হুবহু একই রকম চেহারার ঐ মেয়েটা ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। ওটাই যে তার মা- এ কথা বুঝতে আর অসুবিধা হলো না সালেহার। সে তার ছোট্ট মুঠোটাকে মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে আলতোভাবে......

তুলি দেখে- সালেহার হাতে দুমড়ানো এক দলা কাগজ। মায়ের জন্য প্রজাপতিটা এঁকে শেষ করতে পারে নি সে। একটা ডানায় নীল রঙ করা বাকি রয়ে গিয়েছিলো, তখনই শরীরটা হঠাত খারাপ হলো। তুলি কাগজসহ নিজের মেয়ের হাতটাকে শক্ত করে ধরলো! কিন্তু ধরে রাখতে চাইলেই কি আর ধরে রাখা যায় ! ওপারের ডাক যখন আসে, তখন শত ভালোবাসা, তীব্র আবেগ দিয়েও কাউকে আটকে রাখতে পারে না মানুষ। আর তুলি তো সেখানে ব্যর্থ এক মা......

এর আগেও সালেহা একবার তুলির জীবন থেকে হারিয়েছিলো, আরেকবার হারালো। এবারে চিরদিনের মতই !

মৃত্যুর আগে আগে সালেহার বারবার মনে হচ্ছিলো- ইশ। আর যদি অল্প কিছু সময় পাওয়া যেতো ! পরম যত্নে সে যদি রঙে রঙে ভরিয়ে দিতে পারতো প্রজাপতির অন্য পাখাটাকেও !

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:০১

শায়মা বলেছেন: সালেহা! :(


কতদিন পর আসলে ভাইয়া....

২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

পুলহ বলেছেন: ভালো আছেন আপু আশা রাখি।
জ্বি, নানা কারণে ব্লগে ঢোকা হয় না। তবে প্রায়ই খুব মিস করি প্ল্যাটফর্মটাকে, এখানকার মানুষজনদের।
পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা !

২| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: পুরোটা পড়লাম।

সালেহার জন্য খারাপ লাগলো।

খালার কথাটা বর্তমান সমাজে অনেকটাই সত্যি, তুলির মত কয়জন এ রকম সাহস দেখায়। সে দিক থেকে সালেহার ভাগ্য ভালো।

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭

পুলহ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। শুভকামনা !

৩| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩

খাঁজা বাবা বলেছেন: মন খারাপ করা গল্প

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

পুলহ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা !

৪| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: এমন গল্প পড়ে ভারাক্রান্ত না হয়ে পারা যায় না। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে!
আমি জীবনে কিছু কিছু শিশুকে দেখেছি, আল্লাহতা'লা যেন তাদেরকে জগতের সব বুঝ দিয়ে পাঠিয়েছেন। মাত্র ৪/৫ বয়স থেকেই ওরা ওদের শিশুশুলভ প্রবণতা ও দুরন্তপনাগুলোকে বুকের মাঝে চেপে রেখে অস্বাভাবিকভাবে শান্ত শিষ্ট, অনুগত ও নিরীহ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। অথচ শিশুদের সহজাত চাঞ্চল্য, অনুসন্ধিৎসা, স্পর্শকাতরতা কিন্তু ওদের মধ্যেও থাকে, ওরা সেগুলোকে সুতীক্ষ্ণ আইকিউ এর কারণে বুঝে যায় কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ওরা যখন একলা থাকে, তখন ওরা ওদের সেসব অনুভূতি নিয়ে খেলা করে। এসব বুদ্ধিমান শিশুদেরকে অবশ্য স্রষ্টা সাধারণতঃ বেশীদিনের আয়ু দিয়ে পাঠান না। কিছুদিন এ পৃথিবীতে বনসাঁই হয়ে বেঁচে থেকে ওরা একদিন বেহেস্তের বুলবুলি হয়ে উড়ে যায় অনন্তপানে। যারা পর্যাপ্ত আয়ু পায়, তারা আজীবন যথাসম্ভব শুভ্র, নিষ্কলুষ, নিরীহ জীবন যাপন করে যায়।

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

পুলহ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা জেনে ঋদ্ধ হলাম। পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন স্যার।
শুভকামনা !

৫| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: বড় মর্মান্তিক।

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭

পুলহ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা !

৬| ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বর্তমান সমাজে সালেহার অভাব নাই। মানবতার অভাব আছে । অসাধারণ লেখা

২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮

পুলহ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । শুভকামনা জানবেন !

৭| ২৮ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

জুন বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেল পুলহ। বড় করুন গল্প।
+

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:২২

পুলহ বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন জুন আপু। শুভকামনা !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.