নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় গল্প: দাগ অথবা কাজল (কিস্তি — ৩য়)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩





চুপচাপ হাঁটতে অস্বস্তি লাগছিল। তাই নীরবতা ভাঙ্গলেন— ‘কী বুঝলে নীলার বাবা?’
‘কিছু অভিজ্ঞতা হল— বাইরে থেকে দেখলে অনেক কিছুই মনে হয়, কে-উ ভাল নেই! ছেলেটি খুব দুঃখী ... একা ...!’
দরজার কাছে চলে এসেছেন তারা— সারাদিনের গরম-ভাব কমে এসেছে, ঝিরঝির বাতাস। নক করতেই দরজা খুলে গেল। মা বললেন, ‘কী রে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলি নাকি?’
‘নয় তো কী? সেই যে গিয়েছ, আসার আর নাম নেই! প্রায় পৌনে দশটা...’ এই বলে ঘড়ির দিকে তাকাল নীলা ।
‘একটু দেরিই হয়ে গেল, কখনও তো যাওয়া হয় না।’
‘এবার হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে এসো।’
‘এক ফাঁকে তুই দেখে আসিস, তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিল।’
‘কেমন দেখলে?’ গ্লাসে পানি ঢালতে জিজ্ঞেস করল।
‘একটু অসুস্থই, একা একা চলতে পারে না।’
‘কী-ই বলো!’ নীলা ভ্রু কুঁচকে কাজ থামিয়ে, মার মুখ বরাবর হা করে তাকিয়ে থাকল।
‘হঠাৎ করে! ... দেখি কাল এক ফাঁকে দেখে আসব।’ আবার টেবিল সাজানোয় মন দেয় নীলা। ‘মা— পটল ভাজলাম, আর আম-ডাল, দুপুরে তুমি যা করেছ এই তো...’
বাবা চেয়ার টেনে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কী রে মা পিন্টুর স্যার আসেনি?’
‘হ্যাঁ, এসেছিল।’
‘বাইরে বাতি দিসনি যে? কতবার বলেছি, সান্ধ্যবাতি জ্বালতে। এর আগেও তো ছেলেটা অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পায়ের আঙ্গুল ছিলে ফেলেছিল!’ বিরক্তি ঝেরে মুখ হাঁড়ি করে রইলেন।
‘বাবা বাল্বটা কেটে গিয়েছে।’ ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় নীলা।
‘আনাসনি কেন? যাই আমিই নিয়ে আসি...’
উঠতে গেলেন তিনি। স্ত্রী বাধা দিলেন— ‘কী শুরু করলে তুমি...’
নীলা মিনমিনে গলায় বলল, ‘পিন্টু যেতে চেয়েছিল, রাত হয়েছে তাই নিষেধ করেছিলাম।’
বাবা চোখ ঘুরিয়ে দেয়ালের টিকটিকির মশা ধরা দেখতে লাগলেন।
‘আম পেলি কোথায়?’
‘পিন্টু এনেছে। ওর কোন বন্ধু দু-টো আম দিয়েছিল। জানো মা পিন্টু আজ কী করেছে!’
প্লেটের পানি ঝরিয়ে ধোঁয়া-ওঠা ভাত বাড়ে আর বাবার দিকে তাকায়— বলবে কি না। মা সপ্রশ্নে তাকায় নীলার মুখে।
‘পড়া শেষের দিকে, পিন্টুকে ডাক দিলাম, চা নিয়ে যেতে। ও, সেখান থেকে চিৎকার করে বলে— আম কেটে দিতে। ওর স্যার বলল, “এত তাড়াতাড়ি আম?” ও বলে কি “তাড়াতাড়িই স্যার।” ওর দুষ্টুমি বুঝতে আমার দেরি হল না। তাই নিজেই চা-বিস্কিট নিয়ে গেলাম। আর বললাম যে— “কাঁচা আম এনেছে পিন্টু।” আর পাজিটা তখন বলে— “কাঁচা আম কি মানুষ খায় না? কাঁচা আমড়া, আপেল, আখ যদি কেটে দিতে পারো, আমে দোষ কোথায়? যাও আম কেটে আনো।” আমি তো লজ্জায় মরি— আম তখন চুলোয় ডালে সেদ্ধ হচ্ছে।’ মা-মেয়ের কথার শুরুতে বাবা রুমে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ঘটনার আকর্ষণে ফিরে এসেছিলেন।
‘কশে একটা থাপ্পড় বসাতে পারলি না! দিন দিন ওর বাঁদরামি বেড়েই চলেছে— কী বিপদেই না ফেলেছিল সেদিন!’
শফিক সাহেব এক পলক মা-মেয়েকে দেখে কড়া-কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করেছিল, লক্ষ্মীছাড়াটা?’
‘সেদিন পড়ার ফাঁকে এল পানি খেতে— রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে বলে— “আজ কী দিয়ে ভাত খাব?” বললাম—“ডাল আর আলু-ভর্তা— তোকে না হয় একটা ডিম ভেজে দেব।” কিছু না বলে চলে গেল। অনেক সময় হয়ে গেল, ওর টিচারের সাথে নানা গল্প-গুজব করছে দেখে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে তোর স্যার এখনও যায়নি?” পিন্টু যা জবাবে বলল— মাথায় আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।’
শফিক সাহেব ঢোক গিললেন, যেন ভয় পেয়েছেন, শেষে প্রশ্ন করলেন, ‘পাজিটা কী করল?’
‘ওর টিচারকে নাকি বলেছে— “আমি রাতে তাকে খেয়ে যেতে বলেছি।” শেষে আর কী... ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করলাম।’
বাবার মুখ রাগে কুঁচকে গেল। এক মুহূর্ত সকলে চুপ, নীলা টেবিল সাজাতে সাজাতে বলল, ‘একদিনের কথা তো তোমায় বলিনি মা। চা নিয়ে গেলে, পিন্টু আমাকে বলে— দিদি এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? স্যার তো তোমার দিকে তাকাবেনই না, স্যারের একজন আছে— নিউ মার্কেটে দেখেছিলাম— তাই না স্যার?”
‘বদমাশটার কান ধরে নিয়ে আয়, কিছু উত্তম-মধ্যম দেই, আমার তো সন্দেহই হচ্ছে ওটা আমার সন্তান কি না।’
‘বাবা মুখ সামলে কথা বলো ...’
মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে রইলেন শফিক সাহেব।
‘পিন্টু কোথায়?’
‘ছাদে।’
‘রাত করে ছাদে কী? ডাক দে— আচ্ছা আমগুলো চুরি করে আনেনি তো?’
‘না, তা করেনি।’



চারজন যে যার মতো খেয়ে যাচ্ছে। কোন কথা হচ্ছে না। হঠাৎ পিন্টু বলল, ‘বাবা তোমার স্যার ভুল করলে তুমি কী করো?’
শফিক সাহেব কোন রকমে রাগ চেপে জবাব দিলেন, ‘আমি হয়ত বলি—এভাবে করলে কেমন হয় স্যার?’
পিন্টু এক ঢোক পানি খেয়ে বলল, ‘কালকের ক্লাসে আমিও তোমার মতো ঘুরিয়ে বলব... স্যার অল্পকে স্বল্প বলে।’
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিন্টুর ডান গালে সজোরে একটা চড় বসালেন শফিক সাহেব। পিন্টু টাল সামলাতে না পেরে চেয়ারসহ মেঝেয় পড়ে গেল। ভাতের থালা চরকির মতো ঘুরতে লাগল। সারা মেঝে ভাত-তরকারিতে মাখামাখি হয়ে গেল।



ঘড়িতে দেড়টা, চারদিকে কোন সাড়া নেই। হঠাৎ টুংটাং শব্দ, আর মৃদু ভাঙ্গা কথাগুলো যেন বনের গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠছে। শফিক সাহেব চোখ মেললেন— ঠোঁটে তর্জনী-মধ্যমা, যেন-বা নিজেকে সতর্ক করছেন— সাবধান কোনও কথা নয়। ধীরে উঠলেন, চপ্পলে পা গলিয়ে মাছ-চোরা বেড়ালের মতো, সন্তর্পণে দরজা ফাঁক করে, ডাইনিং-টেবিলে উঁকি দিলেন। পিন্টুর মুখে ভাত— নীলা খাইয়ে দিচ্ছে। টুকটাক কথা হচ্ছে— যেগুলো ঘাস-কাটা-কাস্তের শব্দেও হারিয়ে যাবে নির্ঘাত।
শফিক সাহেব একটা চেয়ার টেনে বসলেন। নীলা একবার তাকিয়ে ভাত মাখায় মন দেয়। পিন্টুর চোখ দুটো আটকে রইল থালার মধ্যে। ততক্ষণে পিঠের বাঁ-পাশে দুটো চোখ গজিয়ে উঠেছে। সেই কচি চোখ দিয়ে বাবাকে অনবরত দেখতে লাগল। আর বাবাকে তার মনে হল— পড়া মুখস্থ না-করা ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির মতো।
তিনটি মানুষ বাকহীন— অনন্তকাল; ঘড়ির কাঁটা পথ ভুলে বোকা দারোয়ানের মতো। বৈদ্যুতিক পাখাটি অযথাই হাওয়ায় সাঁতার কেটে যায়।

‘তোর শিক্ষক ভুল কিছু বলেননি, অতি অল্পকে স্বল্প বলে। অল্পের সাথে সু যোগ করলে স্বল্প হয়।’
পিন্টুর কোনও সাড়া নেই। নীলা পিন্টুর মুখে খাবার পুরে দিল।
‘আচ্ছা পিন্টু— দেখ বোনটি তোকে কত আদর করে— অথচ এত জ্বালাতন করিস কেন?’
এবার সেই মহাবিস্ফোরণ— ওঙ্কারে জেগে উঠল সমগ্র বিশ্ব।
‘আদর করে বলেই তো জ্বালাতন করি, তুমি আদর করো না, তাই তোমায় জ্বালাতনও করি না।’
‘আদর করি না মানে?’ চোখে-মুখে বিস্ময়— ‘তোর কেন মনে হল যে, তোকে আদর করি না!’
পিন্টু এক ঢোক পানি খেয়ে, বোনের দিকে হা করল। শফিক সাহেব কিছুক্ষণ পিন্টুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন, শেষে ডানে-বায়ে তাকিয়ে নীলাকে একবার দেখলেন এবং আস্তে করে উঠে চলে গেলেন, পরাজিত সৈনিকের মতো।
পিন্টু দিদিকে চোখ মারল আর হাসল, ঠোঁট বাঁকিয়ে। নীলা ঠোঁটে আঙ্গুল ছোঁয়াল— ‘শ্ শ্ শ্’

কিস্তি-২য়

কিস্তি -১ম

কিস্তি - ৪র্থ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

খুব সুন্দর হয়েছে। ঘরোয়া আমেজ! খুব ভাল লাগা!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০০

আহা রুবন বলেছেন: এত কষ্ট করে মন্তব্য করলেন? সামু গতি পাক। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.