নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বড় গল্প: দাগ অথবা কাজল (কিস্তি— ১২তম)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০০



২৭

দিপু গলা বাড়িয়ে নীলার উদ্দেশ্যে বলল, ‘মঙ্গল ভাই বাজারে যাচ্ছেন। বাজার কী কী আনতে হবে।’
সন্ধ্যায় কতজন আসতে পারে। সে বিষয়ে নীলা দিপুর সঙ্গে আগেই অনুমান করেছে। নীলা ওপাশ থেকে উত্তর করল, লিস্ট তো আছেই আর তার বড় ভাই আছেন, যা করার সে-ই করবে। বিষয়টা তার ওপরই ছেড়ে দিতে চায়। শুধু রান্নাটা নীলা করবে। একটু রসিকতা করে বলল, যদি মঙ্গল ভাই ফাইন না করেন। মঙ্গল চায়ের কাপ ধুতে যাচ্ছিল। নীলা নিষেধ করে বলল, ‘ওসব আমি করছি আপনি বাজারে যান বেলা হয়ে গেছে।’

নীলা মোড়াটা দিপুর সামনে এনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘কেমন করে কী হল... ভাবতে কেমন লাগছে!’
খানিক সময় আঁচল নিয়ে নীলা খেলতে লাগল। লাজুক মুখে রাঙা আভা ছড়িয়ে। তারপর উঠে গিয়ে জানালার গ্রিলে পিঠ ঠেকিয়ে, ঘাড়ের ওপর দিয়ে দু-হাতে গ্রিল ধরে মাথা নিচের দিকে এলিয়ে দিল, চিবুক বুকের সাথে লেগে রইল। দিপুর কাছে লাগল ঠিক ক্রুশ-বিদ্ধ যেন, তাই অবাক হয়ে দেখতে লাগল। ডান পায়ের আঙ্গুলে নীলা ছোট ছোট বৃত্ত আঁকতে লাগল মেঝেতে— গম্ভীর হয়ে রইল।

জীবনের অনেক কিছুই হয়ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, ঘটনা চক্রে সেই ঘটনায়, আমরা অভিনয় করি মাত্র। পৃথিবীর বহু বড় বড় ঘটনা, মানুষ ঘটিয়েছে আবেগ তাড়িত হয়ে এবং হঠাৎ করে। পৃথিবীর ছোট-বড় সব ঘটনাই ঘটতে থাকে, তার আপন গতিতে আমরা তাতে শুধু বিভিন্নভাবে অংশ নিতে পারি। কিন্তু ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। গত পরশুরটিই ধরা যাক-না। এই ঘটনায় কাকে দায়ী করা যায়। প্রথমেই বেশির ভাগ, আঙ্গুল তুলবে নীলার দিকে। কিন্তু দিপু যদি অসুস্থ না হত, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। আবার সুমির সমস্যা, বাবার বাড়ি চলে যাওয়া, নীলাকে গালাগাল বা দিপুর প্রতি নীলার দুর্বলতা কোনটা কারণ? আবার যদি ধরে নেই, সবগুলোর মিলিত ফলই এটা ঘটিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এতগুলো কারণকে সমন্বয় ঘটাল কে, তাকে দায়ী না করে, আমরা একক ব্যক্তিকে দায়ী করতে যাই কেন। এটা কি আমাদের দেখার সীমাবদ্ধতা, না অন্যকে বলির পাঁঠা বানিয়ে, নিজেকে উন্নত-শ্রেণির একজন হিসেবে জাহির করার প্রয়াস।

২৮

‘নীলা তোমার ভাইকে মেহেদি আনতে বলো। তোমার হাতে পরিয়ে দেব।’
‘বুড়োকালে ভীমরতি?’ নীলা ছোট্ট করে দিপুর ঊরুতে চড় বসাল।
‘উঁহু কাচা পিরিতি...’
দু-জনেই প্রাণ খুলে হাসতে লাগল। নীলার চোখে-মুখে দুষ্টুমি আর লজ্জার ছায়া ফেলল, তাতে ওর মুখটা হয়ে উঠল অসম্ভব রকমের সুন্দর, যা দেখে দিপু বোকার মতো তাকিয়ে, হাসতে লাগল হা করে।

নীলা উঠে গেছে কিছুক্ষণ। দিপুর ঘোর কাটেনি এখনও। প্রেমে পড়লে মানুষ হয়ত এমনই হয়। দিবা-স্বপ্নে মজে থাকে, অকারণে হাসে, লাল হয়, আর আনন্দ পায়। দিপুর মনটা কিসে যেন ভরে উঠল তা বুঝল না, শুধু শখ চাপল— তখনই গ্রামের টইটম্বুর নদীর জলে একটা লম্বা সাঁতারে ভেসে যায়।
‘নী-লা-?’
‘রান্না-ঘরে; গুছিয়ে আসছি। বাড়ি মাথায় তুলতে হবে না, এই হল বলে।’
‘মঙ্গল ভাই ফোন করেছেন, দই আনবে?’
‘আনতে বলো, সাথে কয়েক পদের ফল, আর ক্রিম আনতে বলো।’

২৯

মঙ্গল বাজার থেকে ফিরলে দু-জনে কাজে লেগে গেল। পিন্টুকে ডেকে পাঠানোয় উপস্থিত, হাঁপাতে হাঁপাতে— রান্না-ঘরের দরজায়।
‘দিদি ভাল আছিস?’
নীলা পিঁড়িতে বসে বাজারগুলো আলাদা করে রাখছিল। হাতে একটা শসা নিয়ে ডানপাশ ফিরে, দিপুকে দেখতে পেয়ে হেসে ফেলল। মাথাটা কাত করে, এক পলকের জন্য চোখ দু-টো বন্ধ করে মৃদু হাসল। অর্থাৎ খুব ভাল।
‘আয় এদিকে আয়, খাবি?’ হাতের শসাটা দেখিয়ে বলল।
পিন্টু দিদির কাছে বসে কিছু না বলে ও-ও কাজে হাত চালাল।
‘মা কখন আসবে রে?’
‘রাতে আসতে বলেছিস না? সন্ধ্যার দিকে আসবে, বলেছে।’
‘সন্ধ্যার আগে এলে ভাল হত না? রাতে আসতে বলছি তো অন্যদের...’
এক মুহূর্ত কেটে গেল। নীলা ঝুঁকে থাকায়, চুল এসে মুখটাকে ঢেকে দিল। বামদিকে মুখ ঘুড়িয়ে, চোখের ওপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে আড়চোখে তাকাল।
‘এই পিন্টু, তোরা আমার ওপর সবাই রাগ করেছিস, না?’
‘বাবা-মা বেশি কথা বলেনি, জানি না। আমি রাগ করিনি।’
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ, সত্যি।’
‘কেন রে?’
‘তোকে আমি খুব ভালবাসি।’
‘ভালবাসলে বুঝি রাগ করা যায় না?’
পিন্টুর মাথা কোলের মধ্যে টেনে নিল নীলা। গালে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘আমিও তোকে খুব ভালবাসি রে, খুব!’ পিন্টুর গাল টিপে দিল।
পিন্টু গদগদ হয়ে বলল, ‘দিদি তুই না থাকলে বাড়ি খালি খালি লাগে।’
‘তোর দুলাভাই একটু সুস্থ হলেই তোদের বাড়িতে বেড়াতে যাব।’
পিন্টু বড়বড় চোখ করে বলল, ‘ও-টা তোর বাড়ি নয়!?’
নীলা পিন্টুকে আবার একটা চুমু দিয়ে, দু-হাতে মুখটা উঁচু করে, পিন্টুর চোখে চোখ রেখে লজ্জা মেশানো হাসি হাসি মুখ করে বলল, ‘বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই মেয়েদের বাড়ি হয়ে যায়।’
কিছু না বলে দিদির মুখপানে তাকিয়ে রইল, যেন কথাটা বুঝতে পারেনি, তাই বোঝার চেষ্টা করছে।
চাকা ঘুরিয়ে দিপু এদিকটায় চলে এসেছে। কপালের অর্ধেকটা চুল এসে ঢেকে দিয়েছে। মধ্যম উন্নত-নাসার ওপর কাল ফ্রেমের মেটাল-চশমা— ভেতর থেকে যখন চোখ দু-টো তাকাল; সে-দৃষ্টিকে মনে হল— শীতের বিকেলের সূর্য-রশ্মি বেড়ার ফাঁক গলিয়ে আসছে। মুখে হাসির ছায়া...
‘আরে আমার শালাবাবু যে, কখন?’
‘ক-খ-ন।’ পিন্টু জবাব দেয়।
‘আর কিছু পেলে না, শসা দিলে?’ নীলার দিকে তাকিয়ে বলল। নীলা হাসল।
‘আপনি ভাল আছেন দিপু ভাই?’
‘উঁহু, বোনের বরকে দুলাভাই বলতে হয়।’
‘আপনাকে দুলাভাই মনে হয় না।’
‘কী মনে হয়?’
‘দিপু ভাই।’
‘হা-হা-হা ভালই বলেছ...’
নীলাও হেসে ওঠে। পিন্টু দু-জনের দেখাদেখি হাসতে থাকে।

৩০

‘পিন্টু তোমার দিদির কাছে থাকলে, কাজ করতে হবে। তার চেয়ে চলো— দু-জনে দাবা খেলি।’
‘আমি তো দিদিকে সাহায্য করতেই এসেছি।’
‘তুই যা, দরকার হলে ডাকব।’

নীলা আর মঙ্গল রান্নাঘরের এমন অবস্থা করেছে— যেন ঝড় বয়ে গেছে। দু-জনেরই রান্নার অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু এমন ঘটা করে এতজনের কখনও করা হয়নি। তাই কাজের কোনও ধারাবাহিকতা থাকল না। এদিকে নীলা দরদর করে ঘামতে থাকায়, মঙ্গল টেবিল-ফ্যান এনে ছেড়ে দিল । পেঁয়াজ-রসুনের খোসা উড়তে লাগল সারা ঘর ভরে। মুরগি কাটতে মঙ্গল হাত কেটে, নীলার রোগী হল। সে-ও রোগীকে হালকা বকুনি আর উপদেশ দিল। সেবা পেয়ে মঙ্গল কিছু সময় ভিআইপি থাকল। বকুনি খেল দিপুও— বটির এক পা ছোট বলে।
পিন্টু উঁকি দিয়ে বলল, ‘পুরো বাড়ি ঘ্রাণে ভাসছে, দু-টো মুরগির ঠ্যাং হবে? তোমার সোয়ামি চাচ্ছে।’ (পিন্টু দিদিকে তুই বলে, মাঝে-মধ্যে, প্রধানত বাইরের লোকের সামনে তুমি বলে।)
‘দাঁড়া।’
নীলা দু-টো কষানো মুরগির রান একটা বাটিতে উঠিয়ে দিল। সঙ্গে দিল কয়েকটি পেঁয়াজ টুকরো।
(দিপুর পছন্দগুলো নীলা বুঝতে শুরু করেছে।)
‘খেয়ে এসে, পেঁয়াজ ছিলে দিবি।’

৩১

সন্ধ্যার পর নীলার মা-বাবা এলেন। ছবিকাকি, সোহেল, তার মা, এল একটু পরে। ভাড়াটিয়ার বউ শেলি, নীলাকে সাহায্য করছে বিকেল থেকেই। দিপু ওপরের ড্রইং-রুমে বসে, নতুন শ্বশুরের সঙ্গে গল্প করছে। রফিক সাহেব ফোন করে জানতে চাইলেন, বাড়ির সঠিক অবস্থান— খুঁজে পাচ্ছেন না। (এদিকে এখনও নাম্বারগুলো এলোমেলো।) মঙ্গল বেড়িয়ে গেল, অতিথি ধরে আনতে। ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই ছাব্বিশজন হয়ে গেল।
‘শৈলেশটার হল কী! হ্যালো তুই কোথায়?’
‘তোর বাসার সামনে— চোর পেটানো দেখছি।’
‘ওসব দেখার সময় এটা?’
‘অসুবিধা কী? তেল খরচটা যদি তুলতে পারি।’
রাগ করে দিপু লাইন কেটে দিয়ে খোলা জানালায় তাকাল।
দিপুকে কালচে-নীল পাঞ্জাবিতে আরও বেশি রোগা দেখাচ্ছে। সোফার এক কোণে বসে, আগত অতিথিদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে মেতে উঠল। কখনও বেশ উৎফুল্ল, আবার কখনও গম্ভীর দেখাচ্ছে। কথা বলার সময় আদমগ্রন্থি এতটাই নড়াচড়া করছে যে, তাকে অনেক দুরের কেউ, আর ভূতুড়ে লাগছে।

[link|http://www.somewhereinblog.net/blog/rubon/30170441|কিস্তি - ১১তম।

কিস্তি - ১৩তম

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
এবারের পর্ব পড়েও ভালো লেগেছে ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৪

আহা রুবন বলেছেন: শুভ কামনা রইল।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


গতি বেশ শ্লথ; আমি উপন্যাস বা বড় গল্প পড়ছি না দীর্ঘ সময় ধরে, হয়তো সেই কারণে মনে হচ্ছে! আরো বেগবান করা সম্ভব?

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

আহা রুবন বলেছেন: ‌আমার ধারণা অনলাইনে আমারা বইয়ের চেয়ে বেশ দ্রুত পড়ি। এবং ছোট লেখাই চাই। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রতিবারে বই হাতে নিলে অন্তত চার/পাঁচ হাজার শব্দ পড়ে ফেলি। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে একটানা ১৫০০ শব্দের বেশি হলেই মন বিক্ষিপ্ত হতে শুরু করে। তাই প্রতি পর্বে শব্দ হাজারের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করি। ফলে গতি শ্লথ মনে হতে পারে। আমি ভুলও হতে পারি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.