নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন

নেই তো কোন পরিচয়

আহা রুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভদ্রলোকের কী হবে (আষাঢ়ে গল্প)

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪৮




জগাই দাশ পাতা-পাত্তি গোটাতে ব্যস্ত! সকাল থেকেই আমাশয় রোগীর মত পেট মোচড় দিচ্ছে আকাশের। এই কমে আসে তো ছোটে পাগলা বাতাস—কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। মাথার ওপরের পলিথিনের ছাওনির মাঝে মাঝে জলের থল থলে পেট। হাঁপিয়ে উঠেছিল জগাই।

একটা ভাঙ্গা ছাতা মাথায় করে আধ-ভেজা মুরগির মত দৌড়ে এসে দাঁড়ায় কুঞ্জ পদ। ‘আঁ, আছস তাইলে? আমি ভাবলাম এই গাতরের মধ্যে তোরে পাই কি না!’
‘ভাগ্যের জোরে পাইলি। যাইতাছি গা—একটা কামও পাই নাই। বউ কইছিল ডাইল, পিঁয়াজ নিবার, একটা ফুটা পয়সাও নাই...’
‘আমারে কামডা কইরা দে, তারপর চল যাই বাজারে?’
জগাই যন্ত্রপাতি গোছানো বাদ রেখে কুঞ্জের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কাজে না কি বউয়ের তাড়া খেয়ে বৃষ্টির ভেতরে গ্যাঁজাতে এসেছে।
‘ফাও প্যাঁচালের হাউস নাই, জ্বর জ্বর লাগতাছে। তুই বাড়িত যা। আমিও যামু গা।’
‘নারে কামেই আইছি।’ ব্যাগের ভেতর থেকে একটা বোতল আর একটা লোহার খণ্ড বের করে কুঞ্জ।
‘শরীলডা গরম করি দুই জনে—দেখ! তুই আগুন জ্বালা, এইডা পোড়া দে। পড়ে কইতাছি। ’
বোতলটা দেখে জগাইয়ের চোখ দুটো চিক চিক করে ওঠে।
‘এই স্যাঁতসেঁতা পচা গাতরে ভালই হয়!’
আগুন জ্বালাতে জগাইয়ের শীত ছুটে ঘাম বেরোয়। পাথর কয়লা ঢালার গর্তটায় কাদা কাদা হয়ে উঠেছে, বাড়ি যাবে বলে সে ওদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি।
হাপরে টান খেয়ে এতক্ষণ শুধু ধোঁয়া হচ্ছিল। এবার চড়চড় করে কাল কয়লা লাল গনগনে আগুনের শিখা হিসহিসিয়ে ওঠে। জগাই লৌহ খণ্ডটা আগুনে ফেলে আলগোছে মুখভর্তি বসন্তের দাগের মত ছিটপড়া দুটো চায়ের কাপ বের করে একটি টিন থেকে।


‘তা বন্ধু, তোমার এত কী দরকার পড়ল, মেঘের দিনে... কামার বাঞ্চতের কাছে?’
‘শালার বউ কয়দিন ধইরা খালি ঘ্যান ঘ্যান করে, বটি বানায়া দেও...’
‘শালার বউ? কবে আইছে?’
‘ধুস শ্-শ্-শা-লা! শালার কুইঞ্জা শালার বউ...মিনতি রানি...আমার হাউড়ির বেটি! শালি আজ কয় যে, যদি বটি না বানায়া নেই—আমারে কাইটা কুত্তা দিয়া মুতাইব! না কী জানি কইল?’
‘তাইলে বটি বানাইস না, তোরে কাইটতেও পারব না হি হি হি....’
‘হি হি হি... বুদ্ধির কথা! বটি বানাইস না। আমারে একখান হাতুড় বানায়া দে...’
‘হাতুড় দিয়া কী করবি?’
‘শালা আর কইস না! কয়দিন ধইরা গুঁড়া কিরমি রাইতে খুব ডিউটি দেয়... বাঞ্চতরা ডিউটি দেওয়া শুরু করলেই শালা গো মাথায় হাতুড়ের বাড়ি দিয়া থেঁতলায়া দিমু!’
‘খাড়া তাইলে একটা চিমটাও বানায়া দিতাছি।’


ডাক্তার ভারিক্কি মুখে সব দেখে বললেন ‘কুঞ্জ বাবু আপনার স্ত্রী আমাকে খুব করে অনুরোধ করেছেন—আপনি যেন মদ খাওয়াটা ছেড়ে দেন। আমিও তাই বলি। এসব ছাই-পাশ পান করে কী লাভ? সুস্থ হয়ে উঠলে এসব বাদ দিয়ে মন দিয়ে কাজ করবেন। প্রত্যেক নারীই সুন্দর একটা সংসার চায়।’
‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব। আর আমারে যেন সে মাপ কইরা দেয়।’ সে স্ত্রীর দিকে না তাকিয়ে বলল।
‘ঠিক আছে আমি তাকে বুঝিয়ে বলব। কুঞ্জ বাবু বলেন তো এমন হল কী করে? আমার কিছুতেই মাথায় আসছে না, ওখানটা এভাবে ঝলসে গেল কীভাবে?’
‘আর বইলেন না ডাক্তার সাহেব... সেই দিন আমি আর আমার বন্ধু জগাই একটু বোতল নিয়া বসছিলাম। বৃষ্টির ঠান্ডা দিন খুব সখ হইছিল... মনে হয় ভালই নেশা হইছিল। হঠাৎ আমার বিড়ির নেশা উঠল। পকেটে হাত ঢুকায়া দেখি একটা বিড়ি আছে। এত টানাটানি করি বাইর হয় না। শেষে প্যান্ট খুইলা দেখি পকেটে বিড়ি নাই—বিড়ি গিয়া ঢুকছে জাইঙ্গার ভিতরে। জাইঙ্গার ভিতর থেইকা বিড়ি বাইর কইরা জগাইরে কইলাম নে ধরা। জগাই ম্যাচ খুঁইজা পাইল না। পরে আমার হাতুড় বানাইবার যে লোহাডা আগুনে দিছে, সেইডা কী দিয়া জানি চেঙ্গি দিয়া ধইরা বিড়ির মাথায় ধরল।’
‘তার পর...!’
‘তারপর আর কী! জ্ঞান ফিরা দেখি যে বউ বাতাস পারতাছে...’
ফিস ফিস করে বলল। ‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব আমার ভদ্রলোকটা কি আবার ঠিক হইব?’
‘আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। ভাল কথা, ওটাকে ভদ্রলোক বললেন কেন? এমন বিশেষণ প্রথম শুনলাম।’
জগাই যেন লজ্জা পেল। লজ্জা মেশানো মুখে বলল ‘মেয়ে মানুষ আছে, শুইনলে লজ্জা পাইব কেমনে কই...ওই যে ভদ্র মহিলা দেখলে ভদ্রতা কইরা বসা থেইকা খাড়ায়া... আমরা তাই ওইডারে ভদ্রলোক কই...’

*গাতর=বৃষ্টি
ছবি: গুগল থেকে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৭

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: গল্পটা ভালোই লাগলো ।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:২৭

আহা রুবন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৪:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভালো, এসব মানুষের জীবন বড়ই কস্টকর; এরা কোনভাবে টিকে থাকে।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩

আহা রুবন বলেছেন: শত কষ্টের মধ্যেও তারা আনন্দ খুঁজতে কত রকম চেষ্টা করে। এটিই মানুষের ধর্ম।

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:০০

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: মোটামুটি লেগেছে।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৭

আহা রুবন বলেছেন: মোটামুটি লেগেছে জেনে বেশ মোটা ধন্যবাদ।

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪৫

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: কোন পেশা খারাপ না, সব পেশার লোক সমাজ গঠনের ভুমিকা রাখে ; কারো সন্মান এই সমাজে একটু বেশি আবার, কারো কম । এই তো আমাদের জীবন প্রবাহ । সুন্দর লিখেছেন ভাই ।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫১

আহা রুবন বলেছেন: এই তো আমাদের জীবন প্রবাহ । ঠিক তাই। সবাই আনন্দ করুক, তবে নেশার ঘোরে পুরুষাঙ্গকে বিড়ি মনে করে আগুন ধরাতে গিয়ে ছ্যাকা খাক তা কিন্তু চাই না। :P অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার বক্তব্যকে আরেকটু সহজ করতে হবে, হয়তো; আমার কাছে কঠিন মনে হয়েছে।

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৪

আহা রুবন বলেছেন: আপনার মত মানুষের কাছে কঠিন!? যার মন্তব্যগুলো হয় রসাত্বক, দারুণ বুদ্ধিদিপ্ত, ইঙ্গিতময় ! কী বলব বুঝতে পারছি না।

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প লিখেছেন।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

আহা রুবন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.