নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রুদ্র রাফি

কিছু ই জানি না

রুদ্র রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঁচার গল্প

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:১০

আমি তখনও মরিনি ,

যখন আমার গায়ে কালো কালো দাগ ফুটেছিলো,

বেল্টের আঘাতে

,জয় বাংলা, আমার বাংলা, মাতৃভাষা বাংলা বলার অপরাধে,

ব্যাটনের মুখ ব্যাদান করা পেরেকের ডগাগুলো,

বর্বর পাকসেনাদের মতই তীব্র যন্ত্রনা দিয়ে আমার শরীরে অনুপ্রবেশ করছিলো ,

ঠিক পাকি জানোয়ার গুলোর মতো ,

যেমনটা তারা ঢুকেছিলো সোনার বাংলাতে।



আমি মরে গেছি যেদিন বাবা হাট করে ফিরতে গিয়ে,হারালো,

আর তো ফিরলোনা,

আমি মরে গেছি।



সেদিন যখন দিদিভাই কাঁদতে কাঁদতে বললো ,

মা বাবা বাড়ি ফেরে না কেন ?লাল ফিতে ফুরোবে ফুরোবে করছে ,

ঝুমকি বলেছে বেড়াতে নেবে না মামা বাড়ি,



মা বলেছিলো এই ফিরলো বলে, দূরের হাটে গেছে,

আর কটাদিন, ভরা শ্রাবনে বড়গাঙে ফিরল বলে,

আর কটা দিন,মা,



আমি মরে গেছি, মুছে গেছি দিদির চোখের জলে বেঁচে থাকা লাল ফিতের স্বপ্নে।



যেদিন বাবা বড় গাঙ দিয়ে এলো ,

মৃত্তিকার লাল ফিতে কারা যেন পেটে বসিয়ে দিয়েছিলো ,

শুধু মাংস পঁচে লালটুকু সাদা হয়ে গলছিলো ,

মা চুপ করে তাকিয়ে বলেছিলো ,

মারে ,

তোর বাবা এসেছে ,লাল ফিতে বোধহয় পায়নি, তাই দেরি করেছে ,

তুই ঘুমো বিকেলে ডাকবো ,এখন বাবা জিরোবে।



তারপর শত বিকেলে খুজেও যখন বাবা আসত না ,

সেই প্রতিটা বিকেলে আমি মরে গেছি, পঁচে গেছি মৃত্তিকার(দিদিভাই) চোখের জলে ।



অমানুষ গুলো যখন মৃত্তিকাকে মৃত্তিকায় মিশিয়ে দেওয়ার আগে,

একাত্তরের সে রাতে নিংড়ে খাচ্ছে হায়েনার মত ,

বর্বর রাজাকার আর পাকসেনারা মিলে



আমি খুঁটিতে হেলাম দিয়ে অবাক হয়ে মৃত্তিকার কান্না শুনছিলাম ,

হাতদুটো পিছে বাঁধা পড়ে ,



দাদা , দাদা, দাদা,

মা,

ওদের বলোনা ছেড়ে দিতে ,আমি মরে যাচ্ছিগো,

দাদা তুই মার না এদের,

ছাড়িয়ে নিয়ে যা তোর পায়ে পড়ি আমাকে ,



আমি মরে গিয়েছিলাম তাই বোধহয় অসাড় হয়ে পড়েছিলাাম,

আমার লক্ষি দিদিভাই, অভিমান করে চলো গেলে সেই রাতে,

শুল্কাদ্বাদশীর রাতের চাঁদের কাছে।





ওরা যখন বলেছিলো, কি মিয়া,

কইবানি বাঙাল গুলার নাম, মুজিবের সেনার নাম ,

ওরা যারা পাটবন দিয়া, কালভার্ট ভাইঙ্গা গুলি ছোড়ে ,



কি মিয়া কইবানি।



আমার দেহে যত কালো দাগ জমছিলো ,

মায়ের যতফোটা রক্ত উঠোনে জমছিলো ,

আমার মাঝে নতুন কে যেন বেঁচে উঠছিলো প্রতিটি রক্তফোঁটার বিনিময়ে।



যখন আস্তে আস্তে পাটবনের ছেলে গুলো গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলো ,

অমানুষগুলো একই ভাবে কাতরাতে কাঁতরাতে মরল,



আমার দিদিভাই, মায়ের সাথে মাটির দেশে ঘুমালো ,

আমার ঘর মুছে গেলো, দেশজুড়ে ঘর বাধলাম, সেদিন ,

কাঁধে হাত আর স্টেনগান পাশাপাশি তুলে নিয়েছিলাম।

আমি বেঁচে উঠছিলাম ,আমি বেঁচেউঠছিলাম।



আমি বেঁচে উঠছিলাম ,যখন ,

প্রতিটা গুলি পাকিজানোয়ারগুলোর মাংস ছেদে হৃৎপিন্ড কিংবা দেহে বিঁধছিলো ,

আমি বেঁচে উঠছিলাম,

আমি বেঁচে উঠছিলাম ওদের অন্তিম চিৎকার আর গড়িয়ে পড়া রক্ত বিন্দুতে,

আমি মত্ত হলাম উল্লাসে।



আমি বেচে উঠলাম,

জয় বাংলা, জয় বাংলা চিৎকারে ,



অবশেষে আমি বেঁচে ফিরলাম একবাংলা আমাকে নিয়ে।



আমি বেঁচে উঠলাম বাংলার মাটি, লাল সবুজ পতাকা আর জয় বাংলা চিৎকার নিয়ে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

আলম দীপ্র বলেছেন: সুন্দর কবিতা ।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:১৭

রুদ্র রাফি বলেছেন: অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:২২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা ।

৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

রুদ্র রাফি বলেছেন: জ্বি। আপনি ঠিক বলেছেন। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.