নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধিনতার শত সহস্র, লক্ষ কোটি সুফল - কিন্তু একটি মাত্র “কুফল” - দেশের নিতি নির্ধারণে অযোগ্য লোকেরা সব উচ্চাশনে - রাজনিতিতে ও প্রশাসনে - ফলে দেশটি যথাযথভাবে উন্নতিতে আগাতে পারছে না। তারপরেও যে টুকু এগিয়েছে সব টুকু ব্যাক্তি উদ্যোগে - সরকারের ভূ

রুহুলআমিন চৌধুরি

আমার জন্ম ০৬ মে, ১৯৫৬ খৃস্টাব্দ (আমার এস এস সি সনদ, জাতিয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনপত্রে জন্ম তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ - যাকে আমি রাষ্ট্রিয় জন্ম দিন বলি)- বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ খৃস্টাব্দে এস এস সি (বিজ্ঞান) - ১৯৭৫ খৃস্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজ , বরিশাল থেকে এইচ এস সি (বিজ্ঞান) - মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাশ করি - আমি জানুয়ারি, ১৯৭২ খৃস্টাব্দ থেকে জানুয়ারি, ১৯৮৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর আসর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি বি) সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলাম - আমি বরিশাল শহরে অনামি লেন, সদর রোডে বড়ো হলেও - আমার নিজের বা বাবার কোনো বাড়ি নেই - আমার দাদার বাড়ি (দাদার বা তার বাবারও কোনো বাড়ি নেই - ওটিও দাদার দাদার বা তারও আগের কোনো পূর্ব পুরুষের) পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার ০১ নং বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িতে - আমি ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে প্রথম আুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলে যেতে শুরু করি - তৃতীয় শ্রেনিতে - স্কুল থেকে পাক ভারত যুদ্ধ বিরোধি এবং ফাতেমা জিন্নার হেরিকেনের পক্ষে মিছিল করে বরিশাল শহর প্রদক্ষিণ করে হাটু পর্যন্ত ধূলা বালিতে একাকার হয়ে বাসায় ফিরি - সাদা জুতা মোজা প্যান্ট নষ্ট করে - তারপর ১৯৬৯ পাকিস্থান দেশকৃষ্টি বিরোধি আন্দোলন ও ১১ দফা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে বরিশালের ততকালিন ছাত্র নেতা শহীদ আলমগির, আ স ম ফিরোজ, মনসুরুল আলম মন্টু, নওশের জাহান, আনোয়ার হোসেন, আনেয়ার জাহিদ, আব্দুল হালিম, কাশি নাথ দত্ত সহ আরো অনেকের সান্নিধ্যে যাবার সৌভাগ্য হয় - ১৯৭০ এর ভয়াল জলোচ্ছাসে উদয়ন স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে আমি \"কাকলি ছাত্র সংঘ\" গড়ে তুলি - আমরা জুতা পালিশ করে, খবরের কাগজ বিক্রি করে, পেয়ারা বিক্রি করে, অর্থ সংগ্রহ করি ও বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে পুরনো জামা কাপড় সংগ্রহ করে ভোলার দুর্গত এলাকায় পাঠাই - ১৯৭১ এর পয়লা মার্চ থেকে মিছিল মিটিং ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিলে মামা ও নানার সাথে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে, স্বরূপকাঠী কলেজ মাঠে জাহাঙ্গির বাহাদুর ও আবু বকর ছিদ্দিকের নেতৃত্বের মুক্তি বাহিনির সাথে সক্রিয় ছিলাম এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে মহসিন ভাইর মুজিব বাহিনি এলে কাটাপিটানিয়া ক্যাম্পে ০৮-১২-১৯৭১ (বরিশাল মুক্ত দিবস) পর্যন্ত সক্রিয় ছিলাম - যেহেতু আমি নিজে কোনো পাকিস্থানি মিলিটারি মারিনি - অতএব মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া সমিচিন মনে করিনি - আজো করি না - যে সব অমুক্তিযোদ্ধা মিথ্যে সনদ নিয়ো রাষ্ট্রিয় সুবিধা নিচ্ছে - তাদের কারণে অসহায় অসচ্ছল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ মানবেতর জিবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে - সনদ পাবে - চাকুরি পাবে - ভাতা পারে - ছেলে মেয়ে নাতি পুতি সুবিধা পাবে - এমন আশা করে কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযুদ্ধে যায় নি - প্রত্যেকে জিবন বাজি রেখে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে গেছে - সুবিধাবাদি অমুক্তিযোদ্ধারাই ভূয়া সনদ নিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করছে - হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয় নি - তারপরেও লাখ লাখ সনদধারি মুক্তিযোদ্ধা কোথা থেকে এলো ? আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের পর পরই স্বাধিনতা বিরোধিরা (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুরা) সুকৌশলে সনদ নিয়ে, আজ এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে - আসলে সরকারের নিতি নির্ধারণেও কিছু ত্রুটি ছিলো - উচিত ছিলো -“মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান” এই সনদ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া - কিন্তু ভাতা - চাকুরির বয়স বৃদ্ধির সুবিধা - পোষ্যদের চাকুরি প্রদানের সুবিধা - মাসিক ভাতা - এগুলো কেবলমাত্র হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই দেয়া সংগত ছিলো - এখানেও আমলাদের বা নিতি নির্ধারণে স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) বিশাল ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি - দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করি - না হলে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও বিতর্কের কারণ কি হোতে পারে ? খেতাব প্রদানের সময় থেকেই স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) সক্রিয়তা বুঝতে পারেনি - মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সমর্থকরা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা - কারণ যারা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্থান সরকারের আজ্ঞাবাহক ছিলো সেই সব আমলারাই ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিতি নির্ধারক হলেন ? স্বাধিনতার শত সহস্র লক্ষ কোটি ‘সুফল’ আছে - কিন্তু একটি মাত্র ‘কুফল’ - যা আজো জাতিকে পিছু টানছে - প্রতিনিয়ত - তা হোলো “উচ্চাসনে (নিতি নির্ধারণে) অযোগ্যরা (রাজনিতিক ও আমলা) ।। ।। আমি নিজ সামর্থানুসারে চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হত দরিদ্র শিক্ষার্থিদের আর্থি ক সহায়তা করে থাকি । দু’টি এতিমখানাতে ও চার - ছয়টি মসজিদে মৃত মা বাবা ও অকাল প্রায়াত ভাতিজির (স্বপ্নীল) নামে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করি। সকলের দোয় প্রার্থি ।

রুহুলআমিন চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্ম জিবনি থেকে – (সংক্ষিপ্তাকারে)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১৭

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহাকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে । তাদের ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলার সর্ব দক্ষিণে মধুমতি নদী তিরে । মধুমতি নদী খুলনা ও ফরিদপুর জেলাকে বিভক্ত করেছে ।
টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশ মধ্যবিত্ পরিবার - এতদঅঞ্চলে বেশ নাম ডাক ছিলো । শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়াপত্তন করেন। মোগল আমলের ছোটো ছোটো ইটের দ্বারা তৈরি চকমিলান দালানগুলি প্রমান করে, এক সময় শেখ বংশের সুদিন ছিলো । চার ভিটায় চারটি দালান। প্রবেশের একটি মাত্র দরজা । একটি দালানে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দাদা, এক দালানে তার মামা থাকতেন । এক দালান ভেঙ্গে সাপেদের আশ্রয স্থল হয়েছে । এই সব দালান মেরামতের সামর্থও আজ এবাড়ির কারো নেই । অনেকেই দালানের পাশে টিনের ঘর করে থাকেন ।
শেখ বংশ কি করে সম্পদ হারা হয় তার বিবরণ এরূপ : শেখ কুদরত উল্লাহ ও শেখ একরাম উল্লাহ দুই ভাই । শেখ কুদরত উল্লাহ সংসারি ও ব্যবসায়ি । শেখ একরাম উল্লাহ সরদার - বিচার আচার করতেন । খুলনা জেলার আলাইপুরে “মিস্টার রাইন” নামে এক ইংরেজ সাহেব ‘‘নিল চাষের’’ জন্যে এসে এলাকায় অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করেন। শেখ কুদরত উল্লাহ “মিস্টার রাইন” এর নামে আদালতে মামলা করেন। “মিস্টার রাইন” দোষি প্রমানিত হয় । তাকে জরিমানা করার আদেশ হয়। শেখ কুদরত উল্লাহ “মিস্টার রাইন”কে অপমান করার জন্যে “আধা পয়সা” জরিমানা করেন । এতে ইংরেজকুল খেপে যায় । এই দুই শেখের দুই পুরুষ পর থেকে শেখদের পতন শুরু হয় ।
গোপালগঞ্জে শেখদের প্রতিদ্বন্দি ছিলো কাজি বংশ । তারা পরষ্পর আত্মিয়ও বটে । সেরাজতুল্লা কাজির তিন ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো । তারা সেরাজতুল্লাকে মেরে (খুন করে) শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দাদার চাচা ও রেনুর দাদার বাবা দেউলিয়া ঘোষণা করে কোলকাতা থেকে চলে আসেন। সি আই ডি পাগল বেশে এলাকায় এসে সেই মামলায় প্রমান করেন এবং ছেলে মেয়েদের যাবত জিবন জেল ও শেখরা খালাস পায় ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নানার নাম ছিলো শেখ আব্দুল মজিদ । দাদার নাম ছিলো শেখ আব্দুল হামিদ । ছোটো দাদার নাম শেখ আব্দুর রশিদ । তিনি ইংরেজদের খান সাহেব উপাধি পান।
১৯২০ খৃস্টাব্দে ১৭ মার্চ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম । তার বাবার নাম শেখ লুতফর রহমান এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন । ছোটো দাদা খান সাহেব শেখ আব্দুর রশিদ প্রতিষ্ঠিত এম. ই. স্কুলে তৃতিয় শ্রেনি পর্যন্ত পড়ার পরে চতুর্থ শ্রেনিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়ের সময় বয়স ছিলো ১২ – ১৩ এবং স্ত্রী রেনুর (বঙ্গমাতা) বয়স তিন । বঙ্গমাতা রেনুর ০৫ বছর বয়সে মা মারা যান। ০৭ বছর বয়সে দাদা মারা যান। বঙ্গমাতা রেনুর দাদা আগ্রহেই তাদের শিশুকালে বিয়ে হয় ।
১৯৩৪ খৃস্টাব্দে সপ্তম শ্রেনিতে পড়ার সময় ভীষণ অসুস্থ হন।
১৯৩৬ খৃস্টাব্দে মাদারিপুরে থাকাবস্থায় গ্লুকোমা রোগে আক্রানত হলে চোখের অপারেশন হয় এবং সেই থেকে চশমা পড়া শুরু করেন। এ সময়ে কিছু দিন লেখাপড়া বন্ধ হয় । মাদারিপুরের পূর্ণ দাস তখন ইংরেজিদের আতঙ্ক । স্বদেশি আন্দোলন তখন ঘরে ঘরে । সুভাষ বসুর দলই তখন শক্তিশালি ।
১৯৩৭ খৃস্টাব্দে আবার লেখা পড়া শুরু হলো - গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে । কাজি আব্দুল হামিদ নামে এক এম. এস. সি. শিক্ষক জাতির পিতার ঘরে থাকার ব্যবস্থ হলো । তিনি “মুসলিম সেবা সমিতি” নামে একটি সমিতি করলেন - কাজি আব্দুল হামিদ সভাপতি ও জাতির পিতা শেখ মুজিব সম্পাদক । বাড়ি বাড়ি মুষ্টি চাল তুলে গরিব ছাত্রদের সাহায্য করতেন । কাজি আব্দুল হামিদ যক্ষ্মা রোগে মারা গেলে জাতির পিতা শেখ মুজিব এর দায়িত্ব নেন ।
১৯৩৮ খৃস্টাব্দে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রি, আর সোহরাওয়ার্দি শ্রম মন্ত্রি । উভয়েই গোপালগঞ্জে আসবেন – জনসভা হবে – এক্সিবিসন হবে – স্বেচ্ছা সেবক বাহিনি গড়ার দায়িত্ব পড়লো জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের উপর । হিন্দু ছেলেরা থাকতে চাইলে না – কারণ কংগ্রেসের বারণ – এক্সিবিসনে যাতে দোকান না বসে সে চেষ্টাও করা হলো । সভা হলো, এক্সিবিসন উদ্ভোধন হলো । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ভীষণ খুশি হলেন – নোট বুকে নাম ঠিকানা লিখে নিলেন । কোলকাতা গিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি চিঠি দিলেন । কোলকাতা গেলে দেখা করতে বললেন ।
এই সময়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হবার উপক্রম হলো । আব্দুল মালেক নামে এক সহপাঠিকে হিন্দু মহা সভার সভাপতি সুরেন ব্যানার্জির বাড়ি ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে । খবর পেয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের দলবল নিয়ে গিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে এলেন। হিন্দুরা সবাই মিলে শহরের গন্যমান্য সকল মুসলমানকে আসামি করে মামলা দিলো । পুলিশ জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতে সংকোচ করতেছিলো – কিন্তু তিনি পালাতে সম্মত হলেন না । জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা বললেন নিয়ে যান । জিবনের প্রথম সাত দিন জেল খেটে অবশেষে জামিন হলো ।
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির কাছে টেলিগ্রাম করা হোলো এবং কোলকাতায় লোকও পাঠানো হোলো ।
১৯৩৮ খৃস্টাব্দে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান কোলকাতা বেড়াতে যান – দেখা করেন হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির সাথে। ছাত্র নেতা আব্দুল ওয়াসেককে গোপালগঞ্জে আসতে আমন্ত্রণ জানান । হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দিকে অনুরোধ করলেন “মুসলিম লিগ” ও “ছাত্রলিগ” গঠন করার জন্যে । খন্দকার সামসুদ্দিন (এম.এল.এ) হলেন “ছাত্রলিগ” সভাপতি ও জাতির পিতা শেখ মুজিব সম্পাদক । “মুসলিম লিগ ডিফেন্স কমিটির” সম্পাদকও হলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব । এ ভাবেই আস্তে আস্তে রাজনিতিতে প্রবেশ ।
১৯৪১ খৃস্টাব্দে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেট্রিক পরীক্ষা দেন । প্রথম দিন ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে বাংলা পরীক্ষা দেন। বাংলাতে নাম্বার কম পেয়ে দ্বিতিয় বিভাগে মেট্রিক পাশ করে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন । বেকার হোস্টোলে থাকতেন । হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন।
ফরিদপুর জেলা ছাত্র লিগ সম্মেলন । কাজি নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খা অতিথি । ১৪৪ ধারা জারি করা হলো । অবশেষে হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে সম্মেলন হলো । ছাত্রদের মধ্যে দুটি দল হলো । ১৯৪২ খৃস্টাব্দে জাতির পিতা দলাদলি মিমাংসা করে দিলেন । তখন ফরিদপুরে মুসলিম লিগ সভাপতি মোহন মিয়া ও সম্পাদক সালাম খান ।
১৯৪২ খৃস্টাব্দে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ আসবেন প্রাদেশিক মুসলিম লিগ সম্মেলন করতে – সম্মেলন হবে পাবনার সিরাজগঞ্জে । তখনকার ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেনের সাথে সোহরাওয়ার্দির খুব সখ্যতা ছিলো । ছাত্র লিগের দুটি গ্রুপ ছিলো । ওয়াসেক ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ লেগেই থাকতো । ওয়াসেক ১৫ বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ করেও পদ আকড়ে আছে ।
১৯৪৩ খৃস্টাব্দে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হলো । লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেল । সোহরাওয়ার্দির মনোনিত আবুল হাসিম মুসলিম লিগের সম্পাদক হন - খাজা নাজিমুদ্দিনের মনোনিত খুলনার আবুল কাসেমকে পরাজিত করে । এই সময়ে মুসলিম লিগের মধ্যে দুটি গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে । ১৯৪৩ খৃস্টাব্দে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে সোহরাওয়ার্দির নির্দেশে লংগরখানা খোলা হলো । জাতির পিতা শেখ মুজিব দুর্ভিক্ষ পিড়িত মানবতার সেবায় ঝাপিয়ে পরলেন । সারা দিন লংগরখানায় কাজ করতেন কোনো দিন বেকার হোস্টেলে ফিরতেন । কোনো দিন মুসলিম লিগ অফিসের টেবিলে শুয়ে রাত কাটাতেন । ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ মুসলিম লিগ নেতাদের দেখানো এবং সাহায্য আনার জন্যে ফরিদপুর বরিশাল খুলনা যশোর জেলা সমন্বয়ে “দক্ষিণ বাংলা পাকিস্তান কনফারেন্স” আহ্বান করলেন ও সফল করলেন জাতির পিতা ।
১৯৪২ খৃস্টাব্দে শেখ মুজিবের বিয়ের ফুলশয্যা হলো ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবের পিতা বলতেন “ বাবা রাজনিতি করো আপত্তি করবো না। পাকিস্তানের জন্যে সংগ্রাম করছো এ তো সুখের কথা । তবে লেখা পড়া করতে ভুলিও না । লেখা পড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রোখো – “Sincerity of purpose and Honesty of purpose” থাকলে জিবনে পরাজিত হবে না।”
অনেকে তার বাবাকে ভয় দেখাতেন রাজনিতিতে জিবন নষ্ট হবে – জেল খাটতে হবে – তার বাবা বলতেন জেল খাটতে হলে খাটবে – রাজনিতি খারাপ কিছুতো না । তাকে তার বাবা মা বলতেন শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক কিছু না বলার জন্যে । কারণ বাংলার মাটি ও মানুষ তাকে ভালোবেসে ফেলেছে ।
তিনি যতো বার শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে বলতে গেছেন, তততোবারই তিনি বাধার সম্মুখিন হয়েছেন । এমন কি নিজের ইউনিয়নেও বাধা প্রাপ্ত হয়েছেন । পরে অবশ্য সরাসরি তার বিরুদ্ধে বলার অভ্যেস ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
“অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ কনফারেন্সে” যোগদানের জন্যে দিল্লি যাবেন শেখ মুজিবের ভাগ্নে সম্পর্কের মীর আশরাফ উদ্দিন মাখন মিলে। দিল্লি পৌছলে এংলো এরাবিয়ান কলেজ প্রাঙ্গনে পৌছে দিলো স্বেচ্ছা সেবক দল। সম্মেলন চলাকালিন সময়ে শেখ মুজিবের অসুখ দেখা দেয় । হেকিম খলিলুর রহমান তাকে অন্য এক অভিজ্ঞ হেকিমের সাহায্য নিয়ে সুস্থ করে তোলেন । তারপর তাকে নিয়ে দিল্লরি লাল কেল্লা, দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস, কুতুব মিনার, নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ, নতুন দিল্লি দেখেন। ইতোমধ্যে বরিশালের নুরুদ্দিন তার দল (আনোয়ার গ্রুপ) থেকে রাগ করে খালি হাতে চলে আসেন তাদের দু’ জনার সাথে । তাপর তারা তিন জনে একটি টিকেট কিনে চাকরদের বগিতে ভাত না খেয়ে ফল খেয়ে কোলকাতায় আসার বর্ণনাটা বেশ রসাত্মক ।
১৯৪৩ খৃস্টাব্দে ছাত্রলিগের সম্মেলন হবে ঠিক হলো। কিন্তু অনেক হিসাব নিকাস করে কুষ্টিয়ায় প্রাদেশিখ সম্মেলন হলো । ঠিক করা হলো আনোয়ার ও শাহ আজিজ গ্রুপদের কোলকাতায় কাজ করতে দেয়া হবে না। কোলকাতায় মুসলিম ছাত্র লিগ নামে শেখ মুজিবের লোকজনই কাজ করতেন ।
১৯৪৭ খৃস্টব্দ পর্যন্ত আর সম্মেলন হয়নি ।
জাতির পিতা শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজিবনির ৩৪ – ৩৫ পৃষ্ঠায় তখনকার খান বাহাদুর এম.এল.এ. দের টাকা খাওয়ার (ঘুষ নেবার ও বেঈমানি করার) যে বিবরণ তাতে বাঙালির চরিত্র আজ খারাপ না । খারাপ সেই মোগল বৃটিশ আমল থেকে তারই স্বাক্ষ্য বহন করে।
১৯৪৪ - ৪৫ খৃস্টাব্দে কোনো এক দিন শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক জাতির পিতা শেখ মুজিবের কয়েক বন্ধুদের নিমন্ত্রন করেন তার বাসায় – তখন শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক দুখ করে বললেন, আমি কি লিগ ত্যাগ করেছি ? না কি আমাকে মুসলিম লিগ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে ? মুহম্মদ আলি জিন্নাহ শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক এর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ছিলেন । শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক বাঙারিদের জন্যে যা করেছেন তা মুহম্মদ আলি জিন্নাহ কোনো দিন করতে পারবেন না । ছাত্ররা তখন বললো, আপনি মুসলিম লিগে আসলে আমরা আপনার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে থাকবো না। শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক বললেন, ১৯৪০ খৃস্টাব্দে লাহোর প্রস্তাব কে করেছিলো ? মুহম্মদ আলি জিন্নাহকে কে চিনতো ?
জাতির পিতা শেখ মুজিবের অনুরোধে সোহরাওয়ার্দি সাহেব সম্মত হলেন একটি পত্রিকা বের করতে নাম “মিল্লাত”।
১৯৩৭ খৃস্টাব্দে নির্বাচনে খাজা নাজিমুদ্দিন শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক এর কাছে পরাজিত হয়ে রাজনিতি থেকে বিদায় নেবার অবস্থা । তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি কোলকাতা থেকে তার দুটি আসনের একটি ছেড়ে দিয়ে উপনির্বাচনে জিতিয়ে তাকে রাজনিতিতে পুনর্বাসিত করেন । অথচ সেই খাজা নাজিমুদ্দিন আগাগোড়া চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির বিরুদ্ধে ।
১৯৬৪ খৃস্টাব্দে শাহ আজিজুর রহমান আওয়ামি লিগে যোগদান করেন এবং এসেম্বলিতে আওয়ামি লিগ পার্টির নেতা ও বিরোধি দলের ডেপুটি লিডার হন। (পৃষ্ঠা ৪৪: বিষয়টি আমার কাছে সংশয়যুক্ত)
জাতির পিতা শেখ মুজিবের অমর বাণি : আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দু’টি দিক আছে – একটি হলো আমরা ‘মুসলমান’ - আর এটি হলো আমরা ‘বাঙালি’ – “পরশ্রীকাতরতা” আর “বিশ্বাসঘাতকতা” আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে – বোধ হয় দুনিয়ার আর কোনো ভাষাতেই “পরশ্রীকাতর” শব্দটি পাওয়া যাবে না।
১৯৪৬ খৃস্টাব্দে ৭, ৮ ,৯ এপ্রিল দিল্লিতে মুসলিম লিগ পন্থি কেন্দ্রিয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের কনভেনশন ডাকা হলো – কেবলমাত্র বাংলাদেশেই মুসলিম লিগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয় – পাঞ্জাব, সিন্ধু, সিমান্ত প্রদেশে মুসলিম লিগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয়নি । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির নেতৃত্বে বাংলায় সরকার গঠন করা হোলো। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির নির্দেশে দিল্লি যাবার জন্যে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হোলো – সারা পথে থেমে থেমে দিল্লি যেতে আট ঘন্টা বিলম্ব হলো। সারা ভারতের মুসলিমরা খুশিতে “বাংলাকা মুসলমান জিন্দাবাদ”- “পাকিস্থান জিন্দাবাদ” - “মুসলিম লিগ জিন্দাবাদ” – “হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি জিন্দাবাদ”- “মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ জিন্দাবাদ”- লড়কে লেঙ্গে পাকিস্থান” ধ্বনি দিয়ে, ফুল ছিটিয়ে, ফুলের মালা দিয়ে তাদের সম্বর্ধনা দিতে থাকে ।
১৯৪০ খৃস্টাব্দের লাহোর প্রস্তাব পাশ করে তা আইন সভা পরিবর্তন করতে পারে কি না ? মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে লাহোর প্রস্তাব পাঠের অনুরোধ জানান, কারণ তিনিই বাংলার এবং মুসলিম লিগের একমাত্র প্রধানমন্ত্রি । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির বক্তৃতার পরে বিভিন্ন প্রদেশের বিশ পচিশ জন নেতা বক্তৃতা করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে পাশ হবার পরে লিয়াকত আলি খান একটি শপথনামা পেশ করেন এবং সকল মুসলিম লিগ আইন সভার সদস্যদের তিনি স্বাক্ষর নেন।
অন্যান্য সহকর্মিদের কোলকাতার উদ্দেশ্যে বিদায় করিয়ে দিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী সহ আট দশ জন তারা দিল্লির লাল কেল্লা, কুতুব মিনার, জামে মসজিদ, আগ্রার তাজমহল ও আগ্রার সম্রাট শাহজাহানের কির্তি ও আজমির খাজা বাবার দরগার প্রভৃতি দেখার জন্যে থেকে গেলেন। আজমিরের দরগাহর এলাহি কান্ড দেখে জাতির পিতা শেখ মুজিব অভিভূত – সেখানে ঢোল বাদ্য গান বাজনা চলে – আগ্রার ইতমতউদৌলা বেগম নুরজাহানের পিতার কবর, দেওয়ানি আম, মতি মসজিদ, মছি ভবন, নাগিনা মসজিদ, দেওয়ানি খাস, জেসমিন টাওয়ার, শীশ মহল, প্রভৃতি ঘুরে দেখলেন। পরের দিন গেলেন ফতেহপুর সিক্রি ও সেকেন্দ্রা দেখা । আট বর্গ মাইল নিয়ে ফতেহপুর সিক্রি বাদশাহ আকবরের রাজপ্রাসাদ ও দুর্গ – যার মধ্যে দুই হাজার নয় শত ঘর ছিলো । এখানে আকবর বাদশাহ রাজধানি করেছিলেন । অবশেষে গেলেন তানসেনের বাড়ি দেখতে । তানসেনের বাড়ি প্রাসাদের বাইরে পাহাড়ের উপরে – ছোট্ট একটি বাড়ি - দেখে পছন্দ হোলো না জাতির পিতা শেখ মুজিবের ।
দিল্লি থেকে ফেরার পথে ট্রেনের কামরায় সঠিকভাবে উঠতে না পেরে প্রথম শ্রেনির দরজায় দাড়িয়ে দুই বন্ধু এক স্টেশন এসে যখন নির্দিষ্ট কামরায় ঢুকলেন তখন দেখেন সকলের সকল মালামাল ঠিক আছে কেবল জাতির পিতা শেখ মুজিবের স্যুটকেসটি নেই । জামা কাপড় সব হারালেন । কলেজের বেতনও এক বছরের বাকি – সব মিলিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বড়ো অংকের টাকা আনতে হবে । বাবা একটু অসন্তুষ্ট হলেন – বললেন, বিদেশে বেশি জামা কাপড় নেয়া উচিত নয় ও সাবধানে থাকতে হয় । টাকা দিয়ে বললেন, ভালোভাবে বি. এ. পাশ করতে হবে । এতো দিন পাকিস্থান আনার আন্দোলন করেছে বলে কিছু বলিনি। কলেজে গিয়ে ক্লাসে যাওয়া শুরু করাতে বন্ধুরা ও শিক্ষকরা রসিকতা করে বলতো, কি ক্লাসে আসার সময় হোলো ? ক্যাবিনেট মিশন তখর ভারতে । কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের সাথে বৈঠক করে ।
১৯৪৬ খৃস্টাব্দে ২৯ জুলাই মুহম্মদ আলি জিন্নাহ অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের সভা ডাকলেন বোম্বেতে ।
মুহম্মদ আলি জিন্নাহ ১৬ আগস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ ঘোষণা করলেন। জিন্নাহ দেখাতে চাইলেন ভারতবর্ষের দশ কোটি মুসলমান পাকিস্থান আদায় করতে বদ্ধপরিকর । কোনো বাধাই তারা মানতে নারাজ । কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা `প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ (‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’) - তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকলেন । এই দিনটি পালন করার জন্যে ছাত্র নেতাদের ডাক পড়লো – বলা হোলো পাড়ায় পাড়ায় এমনকি হিন্দু পাড়ায়ও প্রচার করতে হবে যে, আমাদের এ সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্দে নয় – আমাদের এ সংগ্রাম বৃটিশের বিরুদ্ধে। আসুন আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই দিবসটি পালন করি । ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু নেতা মুসলিম লিগ অফিসে এলেন একত্রে এই দিনটি উৎযাপনের জন্যে । কিন্তু কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতাদের কাছে টিকতে পারলেন না। তার বুঝালেন এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি শান্তিপূর্ণ ভাবে দিবসটি পালনের আহ্বান জানান – কারণ কোনো গন্ডগোল হলে মুসলিম লিগের দোষ হবে। কারণ বাংলার প্রধানমন্ত্রি ও সরকার মুসলিম লিগের।
তিনি ১৬ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করলেন। এতে ওরা আরো ক্ষেপে গেলো।
১৯৪৬ খৃস্টাব্দে ১৫ আগস্ট কে কোথায় থাকবে ? সব ঠিক হয়ে গেলো – ১৬ আগস্ট গড়ের মাঠে সভা হবে । সকল এলাকা থেকে শোভাযাত্রা করে লোক আসবে গড়ের মাঠে। জাতির পিতা শেখ মুজিবের উপর দায়িত্ব পড়লো ইসলামিয়া কলেজে জমায়েত করে মাঠে যাবার । সকালে তিনি ও নুরুদ্দিন সাইকেলে করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম লিগের পতাকা উড়িয়ে এলেন। কেউ বাধা দেয় নি- তবে পরেন তা নামিয়ে ছিড়ে ফেলেছে শুনেছেন। আর যদি আধা ঘন্টা পরে বৌবাজার হয়ে আসতেন তবে তাদের লাশ আর খুজে পাওয়া যেতো না। নুরুদ্দিন জাতির পিতা শেখ মুজিবকে ইসলামিয়া কলেজে রেখে মুসলিম লিগ অফিসে চলে গেল। বেকার হোস্টেলে মাত্র কয়েকজন ছাত্র এসেছে। হল রুম খুলে চেয়ার টেবিল সাজাতে বলা হোলো । কয়েকজন মুসলিম ছাত্রী মুন্নুজান হোস্টেল থেকে ইসলামিয় কলেজে এসেছে । কয়েক মিনিট পরেই কয়েকজন ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় এসে পৌছালো। কারো পিঠে ছুরি মারা হয়েছে। কারো মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে । ছাত্রীরা তাদের সেবা করছে । শাড়ি কেটে, ওড়না ছিড়ে ব্যান্ডেজ করে এক ডাক্তারের বাসায় পাঠানো হোলো । খবর এলো ওয়েলিংটন স্কোয়ারে মসজিদে হিন্দুরা হামলা করেছে । তারা ইসলামিয়া কলেজের দিকে আসছে । ছাত্রীদের কাছে কয়েকজন রেখে ৪০ -৫০ জন নিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিব ধর্মতলার দিকে অগ্রসর হলেন । কয়েকজন মুসলমান তাদের পাশে এসে দাড়ালো এবং ইট পাটকেল ও লাঠিছোটা সংগ্রহ করে দিলো । ইতোমধ্যে একটি বিরাট মিছিল এস পৌছাতে হিন্দুরা সরে যেতে বাধ্য হয় । পুলিশ এসে কাদানে গ্যাস ছেড়ে চলে যায় । দফায় দফায় দাঙ্গা হতে থাকে । এ পরিস্থিতির জন্যে মুসলমানরা মোটেই প্রস্থুত ছিলো না। সকলে গড়ের মাঠের দিকে রওয়ানা হলেন। সভায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি বক্তৃতা করলেন । সকলকে সাবধানে থাকতে বললেন। কালিঘাট, ভবানিপুর, হ্যারিসন রোড, বড়ো বাজার সকল স্থানে মিছিলে হামলা হয়েছে । মুসলিম লিগ অফিসে লোকেলোকারণ্য । কোলকাতা সিটি মুসলিম লিগ অফিসেরও একই অবস্থা । বহু জখম লোক এসেছে তাদের পাঠাতে হবে মেডিকেল কলেজে, ক্যাম্বেল ও ইসলামিক হাসপাতালে। মিনিটে মিনিটে ফোন আসছে আমাদের বাচান । আমরা আটকে আছি – রাতেই আমাদের ছেলে মেয়েদের শেষ করে ফেলবে। কয়েকজন লোক বসিয়ে দেয়া হোলো টেলিফোন নাম্বার ও ঠিকানা লিখে রাখার জন্যে। মুসলিম লিগ অফিস, ইসলামিয়া কলেজ, কোলকাতা মাদ্রাসা, বেকার হোস্টেল, ইলিয়ট হোস্টেল রিফিউজি ক্যাম্প হয়ে গেছে । জাতির পিতা শেখ মুজিব নিজেও খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন । ছয় ভাই বোনের পাচ জনই তখন কোলকাতায় । একমাত্র ভাই শেখ নাসের মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে এসেছে । কোনো বোনের বাসায় নেই । কোলকাতা শহরে তখন শুধু মরা মানুষের লাশ পড়ে আছে । মহল্লার পর মহল্লা আগুনে পুড়ে গেছে । মানুষের উপর মানুষ এমন অত্যাচার করতে পারে ? ভাবতেও গা শিওরে ওঠে । ইসলামিয়া কলেজ, বেকার হোস্টেল, ইলিয়ট হোস্টেলের চাল আটা ফুরিয়ে গেছে । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির কাছে গেলেন – তিনি বললেন, নবাবজাদা নসরুল্লাহকে ভার দেয়া হয়েছে তার সাথে দেখা করতে – ছুটলেন তার কাছে – সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে – চাল আছে কিন্তু গাড়ি নেই । একটা ঠোলা নিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিব, নুরুদ্দিন ও নুরুল হুদা তিন জনে ঠেলে চাল নিয়ে এলেন । ফায়ার ব্রিগেডের একটা গাড়ি সংগ্রহ করে কারমাইকেল হোস্টেলেও চাল পৌছালেন । এ সময় বহু হিন্দু মুসলমানদের বাচাতে গিয়ে মরেছেন । বহু মুসলমান হিন্দুদের বাচাতে গিয়ে জিবন দিয়েছেন । বহু ফোন এসেছে হিন্দুদের আমাদের আশ্রয়ে মুসলমানদের নিয়ে বাচান – নইলে আমাদেরকেও মেরে ফেলবে ।
কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ হতে না হতেই শুরু হয়েছে নোয়াখালিতে - হিন্দুদের উপর মুসলমানদের আক্রমন। ঢাকায়তো দাঙ্গা লেগেই আছে । এর প্রতিক্রিয়ায় বিহারে ভয়াবহ দাঙ্গা । প্ল্যান করে মুসলমানদের হত্যা করা হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরুর তিন দিন পরে পাটনার উদ্দ্যেশে রওনা দিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিব পাটনায় পৌছে ভয়াবহ দৃশ্য দেখে রিতিমতো ভয় লাগতে লাগলো । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি বলেছেন, ট্রেন ভরে রিফিউজিদের আসানসোলে পাঠালে বাংলার সরকার তাদের দায়িত্ব নেবে । জনাব আকমল (আই.সি.এস) বিশ্বাস করতে চাইলেন না । তাকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ফোন নাম্বার দিয়ে কথা বলার জন্যে বলা হোলো । সে দিন থেকেই আসানসোলে লোক পাঠানো শুরু হোলো । প্রথম ক্যাম্প খোলা হোলো ‘নিগাহ’ নামে এক গুদামে । সেখানে হাজার খানেক মানুষের সংস্থান হোলো । পরে পাকুন্দিয়া ক্যাম্প – সেখানে প্রায় দশ হাজার লোকের সংস্থান হবে। জাতির পিতা শেখ মুজিব সে ক্যাম্পের নাম দিয়েছিলেন “হিজরতগঞ্জ” । জাতির পিতা শেখ মুজিবের সাথে সর্বক্ষন কাজ করতেন সহপাঠি মওলানা ওয়াহেদ – শাহজাদপুরের পির সাহেব। তাদের থাকা খাওয়ার কোনোই ব্যবস্থা ছিলো না। মুহাজেরদের যা খাওয়াতেন তা ই খেয়ে নিতেন । ছয় সাত দিন পরে বাংলা সরকার সলিমুল্লাহ ফাহমিকে নিয়োগ দিলেন । জাতির পিতা শেখ মুজিব সলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে পরামর্শ করে মোহাজেরদের থেকে সুপারিনটেনএডন্ট, সহকারি সুপারিনটেনএডন্ট, রেশন ইন চার্জ, দারোয়ান ও অন্যান্য কর্মচারি নিয়োগ করলেন । এক জায়গায় রান্না সম্ভব হচ্ছে না বিধায় প্রত্যেক পরিবারকে রেশন কার্ড করে চাল, ডাল, লাকড়ি, পেয়াজ, মরিচ প্রভৃতি সাত দিনের দেয়া হোতো – এক দিন পর পর মাংশ দেয়া হোতো । মোহাজেররা খুব খুশি হলো । ময়রা ও মাধাইগঞ্জেও ক্যাম্প খোলা হলো – প্রায় দশ হাজার লোকে সেখানেও থাকতো। এই সময় বিহার থেকে জাফর ইমাম এলেন বাংলার সরকার কেমন রেখেছেন ? মোহাজেরদের দেখতে – তিনি ব্যবস্থাপনা দেখে খুব খুশি হলেন ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহকর্মিদের ভীষণ প্রশংসা করলেন। অনেক শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারের মোজাহের ছিলেন। আসানসোলে সব সংকুলান না হওয়াতে বিষ্ণুপুর, অন্ডাল, বর্ধমানেও মোজাহের পাঠানো হোলো। দেড় মাস অনাহারে, অনিদ্রায়, জাতির পিতা শেখ মুজিব ভীষণ অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।
কোলকাতায় ফিরে আসেন মন্ত্রি মোহাম্মদ আলি ও এ এফ এম আব্দুর রহমানদের সাথে। ট্রপিক্যাল স্কুল অব মেডিসিনের ইউরোপিয়ান ওয়ার্ডে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির উদ্যোগে ভর্তি করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি প্রতিদিন টেলিফোনে অবস্থা জানতেন। সে কারণে প্রিন্সিপাল প্রতিদিন দেখতে আসতেন। (সেই মোহাজের বিহারিরাই ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির পিতার বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি জঘণ্য কর্মকান্ড চালিয়েছে – এ জন্যেই মোহাজের বিহারিদের বিহারবাসিরা তাড়িয়েছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস) ।
সুস্থ্য হয়ে বি. এ. পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে বাল্যবন্ধু শেখ সাহাদাত হোসেনের কাছে চলে গেলেন। পরীক্ষার সময় এসে ছোটো বোন ও ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব সেরনিয়াবতের বাসায় উঠলেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলঅতুন্নেছাও এসে হাজির হলেন । তার ধারনা পরীক্ষার সময় তিনি কাছে থাকলে পরীক্ষা ভালো হবে । বি.এ. পাশ করলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব।
১৯৪৬ খৃস্টাব্দের শেষের দিকে রাজনৈতিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। বৃটিশ সরকার যে কোনো ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বদ্ধ পরিকর ।
১৯৪৭ খৃস্টাব্দের জুন মাসে ঘোষনা করা হোলো ভারতবর্ষ ভাগ হবে । কংগ্রেস ভারতবর্ষ ভাগ করতে রাজি এই জন্যে যে, বাংলাদেশ ও পাঞ্জাব ভাগ হবে । আসামের সিলেট জেলা ছাড়া আর কিছুই পাকিস্থনের ভাগে আসবে না । বাংলাদেশের কোলকাতা ও তার আশপাশের জেলাগুলোও ভারতবর্ষে থাকবে । মওলানা আকরাম খা ও মুসলিম লিগ নেতারা বাংলাদেশের ভাগের বিরুদ্ধে তিব্র প্রতিবাদ করলেন । বর্ধমান না পেতে পারি । কিন্তু কোলকাতা কেন পাবো না ? কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা তাদের পক্ষে জনমত গড়তে শুরু করলেন । মুসলিম লিগও সভা সমাবেশ করতে লাগলেন । কিন্তু তারা জানতেন না যে কেন্দ্রিয় মুসলিম লিগ এই ভাগ মেনে নিয়েছে । বাংলাদেশের মুসলিম লিগ নেতারা জানতেন আসাম ও বাংলাদেশ পাকিস্থানে থাকবে। বাংলা সরকারের অর্থ মন্ত্রি মোহাম্মদ আলি ঘোষণা দিলেন কোলকাত হবে পাকিস্থানের রাজধানি । এই সময়ে মুসলিম লিগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশিম এবং কংগ্রেসের শরত বসু ও কিরণ শংকর রায় আলোচনা করেন যে বাংলাকে ভাগ না করে কোনো ফর্মূলা বের করা যায় কি না ? তারা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, বংলাদেশ একটি পৃথক রাষ্ট্র হবে এবং পৃথক গণপরিষদ থাকবে । তারাই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ পাকিস্থানের সাথে থাকবে ? নাকি ভারতবর্ষের সাথে থাকবে ? না কি স্বাধিন থাকবে ? এই ফর্মুলা নিয়ে শরত বসু দিল্লি গেলে বল্লভ বাই প্যাটেল বললেন, শরত বাবু পাগলামি ছাড়েন কোলকাতা আমাদের চাই ।
১৯৪৭ খৃস্টাব্দের ২২ এপ্রিল খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যুক্ত বাংলা’ হলে হিন্দু মুসলমান উভয়েরই মঙ্গল হবে । মুসলিম লিগের সভাপতি হিসেবে মওলানা আকরাম খা ঘোষণা করেছিলন, আমার রক্তের উপর দিয়ে বাংলাদেশ ভাগ হবে । আমার জিবন থাকতে বাংলাদেশ ভাগ করতে দেবো না । সমস্ত বাংলাদেশই পাকিস্থানে যাবে ।
পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনিতির শুরু হয়। বিশেষ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতোটুকু পাকিস্থানের ভাগে পায় তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচ, সীমান্ত প্রদেশের চেয়ে অধিক জনসংখ্যা বাংলায় । অতএব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রি হতে চাওয়াটা যৌক্তিক । তাই তাকেই প্রথমে আঘাত করতে হবে । পাঞ্জাব ভাগ হলো - নবাব মামদোত পূর্ব পাঞ্জাবের লোক হয়েও পশ্চিম পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রি হলেন । লিয়াকত আলি ভারতবর্ষের লোক হয়েও পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রি হলেন । অথচ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি পশ্চিম বঙ্গের লোক হওয়াতে আবার তাকে নির্বাচন করতে বলা হলো । যেখানে সমগ্র বাংলাদেশের এম.এল.এ. রা তাকে প্রধানমন্ত্রি বানিয়েছেন এবং ক্ষমতায় আছেন । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি তখন রাষ্ট্র চালাবেন ? না কি মুসলমানদের জীবন বাচাবেন ? না কি নির্বাচন করবেন ?
সিলেটের গণভোটে হাজার হাজার কর্মি পাঠালেন । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির বন্ধু দানবীর রায়বাহাদুর রনদা প্রসাদ সাহা (R.P.Saha) কয়েকখানা লঞ্চ পাঠিয়েছিলেন পাকিস্থানের পক্ষে মুসলিম লিগের কর্মিদের প্রচর কাজের জন্যে – তিনি শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্থানেই থেকে যান (মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে পাকিস্থানি হানদারবাহিনি ও এ দেশিয় দালাল রাতাকে হত্যা করে) – মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল, কুমুদিনি কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস গার্লস হাই স্কুল তার দানেই টিকে আছে।
খাজা নাজিমুদ্দিন ষড়যন্ত্রের রাজনিতির মাধ্যমে বাংলাদেশের নেতা নির্বাচিত হলেন – হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে পশ্চিম বাংলার লোক বলে – তিনি জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করবেন প্রভৃতি অপপ্রচার চালিয়ে - খাজা নাজিমুদ্দিন হয়েই ঘোষণা করলেন ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানি এবং দলবল নিয়ে চলে এলেন ঢাকায় । পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানদের ও মুসলিম লিগ নেতা কর্মিদের কথা একবার চিন্তাও করলেন না। কোলকাতার যে সব যিনিষপত্র ভাগে পাবার কথা তাও তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না । কর্মচারিরা ঝগড়া বিবাধ করে যা যা ট্রেনে ও স্টিমারে তুলে আনতে পারলেন তাই আনলেন । বৃটিশ সরকার তখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না যে, কোলকাতা পাকিষ্থানের থাকবে না কি বাংলাদেশে যাবে ? নাকি ফ্রি শহর হিসেবে থাকবে ? দাজিলিং বাংলার পাওয়ার কথা ছিলো – তাও খাজা নাজিমুদ্দিনের ষড়যন্ত্রের রাজনিতির ঘোষনা ও চলে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশের হাত ছাড়া হয়ে গেলো । সুযোগ পেয়ে মাইন্ট ব্যাটেন যশোর জেলার বনগা জংশন এবং নদিয়া জেলায় মুসলমান বেশি হওয়া সত্বেও কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট এবং পুরো মুর্শিদাবাদ জেলা ভারতকে দিয়ে দিলেন । মালদহ জেলার অর্ধেক – দিনাজপুরের বালুঘাট মহাকুমা কেটে দিলেন যাতে জলপাইগুড়ি ও দাজিংলিং ভারত পায় । সিলেটে গণবোটে জিতেও করিমগঞ্জ মহাকুমা ভারতকে দিয়ে দিলো । নেতারা নেতৃত্ব দিতে ভুল করলে জনগণকে খেসারত দিতে হয়। পূর্ব বঙ্গের টাকায় কোলকাতা নগরি গড়ে তুলে সেই কোলকাতার দাবি চেড়ে চলে আসে খাজা নাজিমুদ্দিন । কোলকাতা পাকিস।তানে থাকলে বাংলাদেশে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ কোলকাতাকে পাকিস্তানের রাজধানি বানাতে দাবি করবে এই ভয়ে তারা ছেড়ে দেয় ।
পাকিস্তান প্রতিষ্টিত হলে জাতির পিতা ঢাকায় চলে আসেন । রাস্তা ঘাট ভালো চেনেন না। ১৫০ মোগলটুলি মুসলিম লিগ অফিসেই ওঠেন । শামসুল হক ও শওকত মিয়া নামক পুরনো কর্মি সেখানে থাকেন । শামসুল হক মুসলিম লিগের সম্মেলন ডেকেছেন । শোনা গেল সরকার সেটা ভালো ভাবে নেয় নি । কনফারেন্স ভেঙ্গে দেবারও পরিকল্পনা করছে । জাতির পিতা শেখ মুজিব শামসুল হককে বললেন, এরা এতো তাড়াতাড়ি আমাদের ভুলে গেলো ? শামসুল হক বললেন, এইতো দুনিয়া । সাম্রদায়িক দাঙ্গা নিরসনের জন্যে একটি যুব সংগঠণ গঠনের উদ্যোগ নিলেন ।
এই সময়ে জাতির পিতা শেখ মুজিব কয়েক দিনের জন্যে কোলকাতা গেলেন – তাদের হোটেলটি বিক্রি বা বদল করা যায় কি না দেখতে । গিয়ে দেখেন তার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বিক্রি করে ফেলেছেন । হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দি পূর্ব পাঞ্জাব, জয়পুর, আলোয়ার, দিল্লি ঘুরে কোলকাতা আসলেন। সর্বত্র ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা । তিনিই একমাত্র মুসলিম নেতা সাহস করে এ সব অঞ্চলে ঘুরে এসেছেন । জাতির পিতা শেখ মুজিবকে দেখে খুব খুশি হলেন ও বললেন পূর্ব বঙ্গের মুসলমানরা সভ্য ও ভদ্র – সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করছে না । কিন্তু সমস্যা হিন্দুরা ভারতে চলে যাচ্ছে – তারা এলে সমস্যা হবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দি ঠিক করলেন তিনি পূর্ব বঙ্গে যাবেন এবং কয়েকটি সভা করবেন যাতে হিন্দুরা দেশ ছেড়ে না যায় । তিনি খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছেই থাকলেন । বরিশালে সভা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বরিশালে সভা শেষ হবার আগেই শুনলেন, তার পিতা ভিষণ অসুষ্থ্য মরনাপন্ন । তিনি সভাস্থল থেকেই চলে গেলেন গোপালগঞ্জ। পিতা সুস্থ্য হলে জাতির পিতা শেখ মুজিব চলে গেলেন ঢাকায় । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন আইন পড়ার জন্যে, বই পত্রও কিনলেন। ইতোমধ্যে অরাজনৈতিক যুব সংগঠন নিয়ে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্নদের সাথে মনোমালিন্যতা দেখা দিলো । যুব সংগঠনের সাথে মুসলিম লিগের সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা করে দিলেন। ১৫০ মোগলটুলি অফিস থেকে পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে । সেই মুসলিম লিগ অফিসকে এখন মুসলিম লিগ সরকার গোযেন্দা নজরদারিতে রাখছে – কেবলমাত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারর্দির ভক্ত হবার অপরাধে। পাকিস্থান স্বাধিন হবার পরে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র লিগে’র নাম ‘নিখিল পূর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্র লিগ’ রাখা হলো । সেক্রেটারি সেই শাহ আজিজুর রহমানই রইলেন । তারা ঢাকায় সম্মেলন না করে অন্য কোথাও সম্মেলন করে অরাজনৈতিক অছাত্রদের দিয়ে কমিটি বানালেন । জাতির পিতা শেখ মুজিব অনেক ছাত্র নেতার সাথে আলাপ আলোচনা করে ঐকমথ্যে পৌছালেন যে, একটি প্রতিষ্ঠান করা দরকার । ১৯৪৮ খৃস্টাব্দে ০৪ জানুয়ারি ফজলূল হক হলের সভা কক্ষে নঈমুদ্দিনকে কনভেনর করে ‘পূর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্র লিগ’ প্রতিষ্ঠিত হলো। এক মাসের মধ্যেই সব জেলা কমিটি গঠিত হয়ে গেলো।
(চলবে - )
(বন্ধনির মধ্যের লেখাসমূহ সংকলকের মন্তব্য)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২৮

মহা সমন্বয় বলেছেন: 'তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম'
মোর পতাকার লাল সূর্য সম
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী !:#P

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪২

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও মানুষের মধ্যে তিনি সবার শীর্ষে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.