নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধিনতার শত সহস্র, লক্ষ কোটি সুফল - কিন্তু একটি মাত্র “কুফল” - দেশের নিতি নির্ধারণে অযোগ্য লোকেরা সব উচ্চাশনে - রাজনিতিতে ও প্রশাসনে - ফলে দেশটি যথাযথভাবে উন্নতিতে আগাতে পারছে না। তারপরেও যে টুকু এগিয়েছে সব টুকু ব্যাক্তি উদ্যোগে - সরকারের ভূ

রুহুলআমিন চৌধুরি

আমার জন্ম ০৬ মে, ১৯৫৬ খৃস্টাব্দ (আমার এস এস সি সনদ, জাতিয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনপত্রে জন্ম তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ - যাকে আমি রাষ্ট্রিয় জন্ম দিন বলি)- বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ খৃস্টাব্দে এস এস সি (বিজ্ঞান) - ১৯৭৫ খৃস্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজ , বরিশাল থেকে এইচ এস সি (বিজ্ঞান) - মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাশ করি - আমি জানুয়ারি, ১৯৭২ খৃস্টাব্দ থেকে জানুয়ারি, ১৯৮৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর আসর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি বি) সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলাম - আমি বরিশাল শহরে অনামি লেন, সদর রোডে বড়ো হলেও - আমার নিজের বা বাবার কোনো বাড়ি নেই - আমার দাদার বাড়ি (দাদার বা তার বাবারও কোনো বাড়ি নেই - ওটিও দাদার দাদার বা তারও আগের কোনো পূর্ব পুরুষের) পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার ০১ নং বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িতে - আমি ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে প্রথম আুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলে যেতে শুরু করি - তৃতীয় শ্রেনিতে - স্কুল থেকে পাক ভারত যুদ্ধ বিরোধি এবং ফাতেমা জিন্নার হেরিকেনের পক্ষে মিছিল করে বরিশাল শহর প্রদক্ষিণ করে হাটু পর্যন্ত ধূলা বালিতে একাকার হয়ে বাসায় ফিরি - সাদা জুতা মোজা প্যান্ট নষ্ট করে - তারপর ১৯৬৯ পাকিস্থান দেশকৃষ্টি বিরোধি আন্দোলন ও ১১ দফা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে বরিশালের ততকালিন ছাত্র নেতা শহীদ আলমগির, আ স ম ফিরোজ, মনসুরুল আলম মন্টু, নওশের জাহান, আনোয়ার হোসেন, আনেয়ার জাহিদ, আব্দুল হালিম, কাশি নাথ দত্ত সহ আরো অনেকের সান্নিধ্যে যাবার সৌভাগ্য হয় - ১৯৭০ এর ভয়াল জলোচ্ছাসে উদয়ন স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে আমি \"কাকলি ছাত্র সংঘ\" গড়ে তুলি - আমরা জুতা পালিশ করে, খবরের কাগজ বিক্রি করে, পেয়ারা বিক্রি করে, অর্থ সংগ্রহ করি ও বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে পুরনো জামা কাপড় সংগ্রহ করে ভোলার দুর্গত এলাকায় পাঠাই - ১৯৭১ এর পয়লা মার্চ থেকে মিছিল মিটিং ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিলে মামা ও নানার সাথে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে, স্বরূপকাঠী কলেজ মাঠে জাহাঙ্গির বাহাদুর ও আবু বকর ছিদ্দিকের নেতৃত্বের মুক্তি বাহিনির সাথে সক্রিয় ছিলাম এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে মহসিন ভাইর মুজিব বাহিনি এলে কাটাপিটানিয়া ক্যাম্পে ০৮-১২-১৯৭১ (বরিশাল মুক্ত দিবস) পর্যন্ত সক্রিয় ছিলাম - যেহেতু আমি নিজে কোনো পাকিস্থানি মিলিটারি মারিনি - অতএব মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া সমিচিন মনে করিনি - আজো করি না - যে সব অমুক্তিযোদ্ধা মিথ্যে সনদ নিয়ো রাষ্ট্রিয় সুবিধা নিচ্ছে - তাদের কারণে অসহায় অসচ্ছল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ মানবেতর জিবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে - সনদ পাবে - চাকুরি পাবে - ভাতা পারে - ছেলে মেয়ে নাতি পুতি সুবিধা পাবে - এমন আশা করে কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযুদ্ধে যায় নি - প্রত্যেকে জিবন বাজি রেখে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে গেছে - সুবিধাবাদি অমুক্তিযোদ্ধারাই ভূয়া সনদ নিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করছে - হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয় নি - তারপরেও লাখ লাখ সনদধারি মুক্তিযোদ্ধা কোথা থেকে এলো ? আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের পর পরই স্বাধিনতা বিরোধিরা (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুরা) সুকৌশলে সনদ নিয়ে, আজ এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে - আসলে সরকারের নিতি নির্ধারণেও কিছু ত্রুটি ছিলো - উচিত ছিলো -“মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান” এই সনদ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া - কিন্তু ভাতা - চাকুরির বয়স বৃদ্ধির সুবিধা - পোষ্যদের চাকুরি প্রদানের সুবিধা - মাসিক ভাতা - এগুলো কেবলমাত্র হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই দেয়া সংগত ছিলো - এখানেও আমলাদের বা নিতি নির্ধারণে স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) বিশাল ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি - দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করি - না হলে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও বিতর্কের কারণ কি হোতে পারে ? খেতাব প্রদানের সময় থেকেই স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) সক্রিয়তা বুঝতে পারেনি - মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সমর্থকরা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা - কারণ যারা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্থান সরকারের আজ্ঞাবাহক ছিলো সেই সব আমলারাই ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিতি নির্ধারক হলেন ? স্বাধিনতার শত সহস্র লক্ষ কোটি ‘সুফল’ আছে - কিন্তু একটি মাত্র ‘কুফল’ - যা আজো জাতিকে পিছু টানছে - প্রতিনিয়ত - তা হোলো “উচ্চাসনে (নিতি নির্ধারণে) অযোগ্যরা (রাজনিতিক ও আমলা) ।। ।। আমি নিজ সামর্থানুসারে চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হত দরিদ্র শিক্ষার্থিদের আর্থি ক সহায়তা করে থাকি । দু’টি এতিমখানাতে ও চার - ছয়টি মসজিদে মৃত মা বাবা ও অকাল প্রায়াত ভাতিজির (স্বপ্নীল) নামে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করি। সকলের দোয় প্রার্থি ।

রুহুলআমিন চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণ ঃ মো. শাহজাহান মিয়া, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচয়পত্র নম্বর: ১১৩৩

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২০



আজিজ ভাইয়ের কথা আজও মনে পড়ে

অামার বয়স যখন একুশ বছর চলছিল তখন আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। অামার জন্ম হয় ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে। নথিপত্রে ভুলবশত ১৯৫৪ সাল লেখা হয়েছে। আমার জন্মস্থান কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার বাংগরা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। পিতার নাম মো. কালা মিয়া এবং মাতার নাম ফুলজান বিবি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে আমার বাবা ভাগ্যান্বেষণে সপরিবারে সিলেট আসেন এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের বগাইয়া গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। ১৯৭১-এর ২৮ বা ২৯ মার্চ তারিখে পাক-সেনারা সিলেট পুলিশলাইন ও আখালিয়া ইপিআর ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা করে। এই ঘটনা আমার যুবক মনে দারুণভাবে দাগ কাটে। আমি যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করি। আমরা ৬ জন সমবয়সী বন্ধু ৩০ মার্চ তামাবিল বর্ডার দিয়ে ভারতের ডাউকি ক্যাম্পে উপস্থিত হই। সেখানে ২-৩ দিন অবস্থানের পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে আমরা ৩৫ জন যুবক মেঘালয় রাজ্যের ইকো-ওয়ান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে আমরা ৭ নম্বর ব্যাচে ১ মাস ৩ দিন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রথমে আমরা ক্যাপ্টেন মোত্তালিবের অধীনে ছিলাম। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন মেজর মীর শওকত আলী। তিনি ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ভারতে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতেন ভারতীয় গুর্খা সৈন্যরা। সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিন।
ইকো-ওয়ান ক্যাম্পে আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ করার মাস দেড়েক পর তখন সম্ভবত জুন মাসের ২০ বা ২১ তারিখ হবে, আমাদের ক্যাম্পের নিকটবর্তী একটা সমতল ভূমিতে ভারতীয় একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করলো। এই হেলিকপ্টারে রাশিয়ার তৈরী অনেক অস্ত্র এবং বেশকিছু রসদপত্র আমাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসলেন ভারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কয়েকজন ভারতীয় সেনা অফিসার। আমরা প্রশিক্ষক মহোদয়ের নিকট জিজ্ঞাসা করে জানলাম মন্ত্রী মহোদয়ের নাম ড. ত্রিগুণা সেন। মন্ত্রী মহোদয়ের পাশে পাশে কালো ইউনিফর্ম পরা ও কোমরে ০.৪৪ ক্যালিবারের রিভলবার ঝোলানো আরেকজন বাঙালি জোয়ান ভদ্রলোককে হেঁটে আসতে দেখলাম। তাঁকে আমার কাছে চেনা চেনা মনে হলো। তিনি দেখতে মাঝারি উচ্চতার সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। আমি আমার সহযোদ্ধা বসু মিয়াসহ কয়েকজন সাহস করে তাঁর কাছে গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘স্যার আপনার বাড়ি কি সিলেটে? ‘ তিনি কোমল কণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘হাঁ সিলেটে। বিয়ানীবাজার থানার আলীনগর ইউনিয়নে। গ্রামের নাম কাদিমলিক।’ তাঁর সুমধুর ভরাট কণ্ঠ আমাদেরকে অভিভূত করলো। সাহস করে তাঁর নামটিও জেনে নিলাম। নাম আজিজ আহমদ চৌধুরী ওরফে আনা মিঞা। তিনি আরো জানালেন যে, মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়িও ছিল সিলেটের জকিগঞ্জ থানায় এবং তিনি ভারত সরকারের নিয়োজিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রধান তত্ত্বাবধায়ক। এসব শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হলাম। আজিজ চৌধুরী আমাদেরকে আশ্বাস দিলেন যে, যে-কোনো সময় যে-কোনো প্রয়োজনে তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। তিনি কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে মন্ত্রী ড. ত্রিগুণা সেনের অধীনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সহকারী অস্ত্রশস্ত্র ও রেশন সাপ্লাই অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি তাঁর কলকাতার অফিসের ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর আমার হাতে দিলেন। সেদিন তাঁর কারণেই আমরা রাশিয়ার তৈরি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র যেমন: এসএলআর, ব্রেনগান, এসএমজি, এমনকি একে-৪৭ রাইফেল পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পেলাম। এসবের ব্যবহার ও মেরামত পদ্ধতিও তিনি আমাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন। মন্ত্রী মহোদয়ও আমাদের প্রতি বিশেষ অনুকম্পা দেখিয়েছিলেন আজিজ চৌধুরীর বদৌলতে। আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত রসদপত্রও পেলাম। আজিজ আহমদ চৌধুরী যাবার বেলায় আমাকে স্নেহের সুরে বললেন, ‘শাহজাহান মিয়া, আমাকে স্যার না ডেকে আজিজ ভাই বলে ডাকলে খুশি হবো।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, তা-ই হবে।’ সেদিন থেকে আমরা তাঁকে আজিজ ভাই বলেই ডাকতাম। তাঁরা আমাদের সাথে প্রায় ঘন্টাখানেক অবস্থান করে নানাবিধ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে পুনরায় হেলিকপ্টারে করে চলে গেলেন। তার দু’একদিন পর আমরা এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা ডাউকি বিএসএফ ক্যাম্পে এসে উপস্থিত হই। সেখানে আমরা বাংলাদেশ থেকে আগমনকারী বাঙালি ইপিআর ও পুলিশের সাথে একত্রিত হই। আমাদেরকে ভারতীয় ক্যাপ্টেন রাও বলেন, ‘পাকিস্তানিরা আমাদের সীমান্তের চেকপোস্ট দখল করে ফেলেছে।’ আমরা সেদিনই মেজর মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে এফএফ ও এমএফ মিলে ১৮ জনের একটি দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে রাত অনুমান ১২ টায় তামাবিল চেকপোস্টে পাক-সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হই। অনেক্ষণ যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানিরা সেখানে প্রায় ৩০০ জন ছিল। তন্মধ্যে দু’শতাধিক ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং বাদবাকিরা সিলেটের দিকে পালিয়ে যায়। আমরা তাদের ফেলে যাওয়া অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ লাভ করি। আমাদের মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধা সামান্য আহত হয়। বাকি সবাই আমরা আল্লাহর রহমতে অক্ষত থাকি। আমরা ডাউকি ক্যাম্পে ফিরে যাই।
মাস তিনেক পর খুব সম্ভব ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় ছাতকে অবস্থানরত ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিন কিছু সৈন্য চেয়ে পাঠান ডাউকি ক্যাম্পে মেজর মীর শওকত আলীর কাছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা শ’দেড়েক মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ছাতকের টেংরাটিলায় যাই এবং অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে মেজর মীর শওকত আলী ও ক্যাপ্টেন হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সেখানে ১৭ দিন পাকিস্তানিদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ করি। পাক-সেনারা যুদ্ধে পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে আমরা পুনরায় ডাউকি ক্যাম্পে ফিরে আসি। ৪-৫ দিন পর সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলীর নির্দেশে আমরা প্রায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বাংলাদেশের জাফলংয়ে প্রবেশ করে সানকিভাঙ্গা বাজারে ক্যাম্প স্থাপন করি। ইত্যবসরে নভেম্বরের ২৮ তারিখ সকালের দিকে ডাউকি ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ ভাই গোয়াইনঘাট এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাক-সেনাদের বিভিন্ন ঘাঁটি চিহ্নিত করা একটি ম্যাপ এবং আলীরগাঁও ইউনিয়নের বারহাল মাদ্রাসায় অবস্থানরত পাকশত্রুর একটি শক্ত ঘাঁটি আক্রমণের জন্য একটি নির্দেশনা আমাদের কাছে পাঠান। এই ম্যাপের তথ্যমতে আমাদের প্লাটুন কমান্ডার দারোগা হাবিবুর রহমান পরিকল্পনা করেন যে, গোয়াইনঘাট থানার আলীরগাঁও ইউনিয়নের বারহাল মাদ্রাসার পূর্বদিকে অবস্থিত আটলিহাই ব্রিজটি ধ্বংস করতে হবে। এতে করে মাদ্রাসায় অবস্থানরত পাক-সেনাদের পালাবার পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে এবং আমরা তাদেরকে সহজে পরাস্ত করতে পারবো। এই অপারেশনে আজিজ ভাই বেশ কয়েকজন মিত্রবাহিনীর সদস্যসহ প্রায় ২০-২৫ জন যোদ্ধার একটি প্লাটুন নিয়ে আমাদের সাথে শামিল হন বিকালের দিকে। কালবিলম্ব না করে আমরা ঐদিনই রাত অনুমান ২ টার দিকে প্রায় ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি প্লাটুন মূলত আজিজ ভাইয়ের নেতৃত্বে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে বারহাল মাদ্রাসা অভিমুখে রওয়ানা দেই। আজিজ ভাই মুক্তিবাহিনীর হাবিলদার মোশাররফ হোসেনসহ মিত্রবাহিনীর ৯-১০ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরপথে বারহাল মাদ্রাসার নিকটবর্তী এক সুবিধাজনক স্থানে কাট-অফ পার্টি হিসেবে অবস্থান নেন। রুস্তুমপুরের লামাবাজার থেকে ১৫-২০ জনের আরেকটি প্লাটুন হান্নান মিয়ার নেতৃত্বে এসে আজিজ ভাইয়ের দলের সাথে মিলিত হয়ে সেখানেই অবস্থান নেয়। অপরদিকে, আমরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা অ্যাকশন পার্টি হিসেবে প্লাটুন কমান্ডার দারোগা হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে আটলিহাই ব্রিজটি ধ্বংসের জন্য এগিয়ে যাই। আমাদের থেকে ৪০-৫০ গজ পিছনে ১০-১২ জন মিত্রসেনার একটি স্কোয়াড কভারিং পার্টি হিসেবে আসছিল। আমরা ব্রিজের পাশে গিয়ে সেখানে পাহারারত দু’জন রাজাকারকে গ্রেফতার করি। এরপর ডিনামাইট দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেই। আজিজ ভাইয়ের দেওয়া ম্যাপে এই ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে চিহ্নিত ছিল যা ধ্বংস করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। যাইহোক, আমাদের গাইড হিসেবে একজন স্থানীয় লোক ছিল। সেই লোকটি যে মূলত পাকিস্তানিদের পক্ষে চর হিসেবে কাজ করছিল, তা আমরা মোটেও টের পাইনি। গ্রেফতারকৃত রাজাকার দু’জন আমার দায়িত্বে ছিল। আমার বেখেয়ালে হাত ফসকে ওরা ছুটে পালানোর চেষ্টা করলে একজনকে আমি সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করি। রাতের গভীর অন্ধকার থাকায় অপরজন এই সুযোগে পালিয়ে যায়। আমরা আটলিহাই ব্রিজ ধ্বংস করে বারহাল মাদ্রাসায় আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার মুহূর্তে ঐ বিশ্বাসঘাতক চরটি জানালো যে, বারহাল মাদ্রাসায় অবস্থানরত পাক-সেনারা অন্যত্র চলে গেছে। তাই আমরা আজিজ ভাইদের ফিরে আসার সংবাদ পাঠিয়ে আমরাও সানকিভাঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে আসছিলাম। রাতের অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এই সুযোগে চরটি আমাদের ৩০ জনকে নিয়ে ভুল পথে রওয়ানা হয়। আমরা বারহাল গ্রামের কাদির মৌলভীর দিঘির পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা ধরে উত্তর দিকে এগুচ্ছিলাম। সেই রাস্তায় একটি বাঁশের সাঁকো ছিল। সেখানে ঐ পাক-সেনারা যে অ্যামবুশ করে বসেছিল, তা আমরা মোটেও টের পাইনি। বিশ্বাসঘাতক ঐ চরটি আমাদেরকে পাক-সেনাদের সেই অ্যামবুশের মুখে ফেলে পালিয়ে যায়। শত্রুরা সাঁকো থেকে আমাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। রাতের আঁধারে আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। জীবন বাজি রেখে আমরা পাল্টা গুলি চালাই। এদিকে আমাদের গোলাগুলির শব্দ অনুধাবন করে আজিজ ভাইও তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে বারহাল মাদ্রাসার নিকটবর্তী অবস্থান ত্যাগ করে আমাদের সাথে শামিল হন। শত্রুর সাথে আমাদের প্রায় দুই ঘন্টা ধরে যুদ্ধ চলে। আল্লাহর মেহেরবানিতে প্রায় ৩০-৩৫ জন পাকশত্রু নিহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। আমাদের ১০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হয়। তন্মধ্যে ৩ জন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য এবং ৭ জন মুক্তিবাহিনীর সদস্য। মুক্তিবাহিনীর শহীদরা হলেন:
১. প্লাটুন কমান্ডার দারোগা হাবিবুর রহমান (সম্ভবত
নোয়াখালি জেলার লোক)
২. আবদুল মালেক, পিতা: মৃত আবদুর রহমান
গ্রাম: খলিলপুর, ডাক ও থানা: দেবীদ্বার, কুমিল্লা
(অস্থায়ীভাবে বগাইয়া বসতি)
৩. আবদুল জলিল, পিতা: মৃত রমিজ মিয়া
গ্রাম: আসামপাড়া(নয়াগাঙের পাড়)
ডাকঘর: জাফলং চা-বাগান
থানা/উপজেলা: গোয়াইনঘাট, সিলেট
৪. আব্বাস উদ্দিন, পিতা: মৃত কালাচান্দ গাজী
গ্রাম: আসামপাড়া(নয়াগাঙের পাড়),
ডাকঘর: জাফলং চা-বাগান
থানা/উপজেলা: গোয়াইনঘাট, সিলেট
৫. আবদুল গফুর, পিতা: মৃত আজমল আলী
গ্রাম: হাতাইন, ডাক ও থানা: গোয়াইনঘাট,
সিলেট
৬. মাহমদ আলী, পিতা: মৃত রহমত আলী
গ্রাম: আসামপাড়া(মগপাড়া)
ডাকঘর: জাফলং চা-বাগান
থানা/উপজেলা: গোয়াইনঘাট, সিলেট
৭. মিজানুর রহমান, পিতা: মৃত শফিকুর রহমান
গ্রাম: তিতগুলি হাওর,
ডাকঘর: জাফলং চা-বাগান
থানা/উপজেলা: গোয়াইনঘাট, সিলেট
এই ১০ জন সহযোদ্ধা বীর শহীদকে স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে কাদির মৌলভীর দিঘির পশ্চিম-উত্তর কোণে সমাহিত করা হয়। এই যুদ্ধে আমি আহত হই। ঘটনাটা ঘটেছিল এভাবে যে, যুদ্ধ করতে করতে আমাদের রাইফেলে আর কোনো গুলি অবশিষ্ট নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ একজন পাক-সেনা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। সে আমাকে ‘মুজিব কা কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। আমার মাথায় খুন চেপে যায়। আমি তৎক্ষণাৎ আমার হাতের রাইফেলের বেয়োনেটটি তার বুকে বিদ্ধ করি। সে মারা যায়। তার এই অপমৃত্যু দেখে অন্য একজন পাক-সেনা তার পিছন থেকে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে আমি আহত হই। গুলিটি আমার ডান উরু দিয়ে ঢুকে পুরুষাঙ্গ ছুঁয়ে বাম উরু দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার পেছন থেকে ঐ পাকশত্রুটির মাথা লক্ষ্য করে ০.৪৪ ক্যালিবারের একটি পিস্তল থেকে কে একজন পরপর তিনটি গুলি ছুঁড়লেন। শত্রুটি সাথে সাথে মারা গেল। গভীর অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করা যাচ্ছিল না। আমাকে দু’তিনজন সহযোদ্ধা অন্যত্র সরিয়ে নিল। আমি জ্ঞান হারানোর একটু আগেই আমার কানেকানে একজন বললেন:
“আমি তোমাদের আজিজ ভাই। তোমার আঘাতকারীকে শেষ করে দিলাম। আমরা বিজয়ী হয়েছি। আমি চলে যাচ্ছি। তোমাকে শিলং হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিন্তা করো না, তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”
বলেই আজিজ ভাই বিদ্যুতের মতো উধাও হয়ে গেলেন। আমিও জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। কীভাবে কখন যে আজিজ ভাই আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তা আজও আমার কাছে বিস্ময় লাগে।
আহত অজ্ঞান অবস্থায় সাথীরা আমাকে ঐদিনই অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর ভারতের শিলং হাসপাতালে সার্জিক্যাল-১-এ ভর্তি করে। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর ১৩ ডিসেম্বর আমাকে সার্জিক্যাল-৩-এ স্থানান্তর করা হয়। তারিখটা স্পষ্ট মনে আছে ১৪ ডিসেম্বর, হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, হঠাৎ দেখি আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছেন আজিজ ভাই। হাতে নানা রকমের ফলমূল রয়েছে। তাঁকে দেখে আমার মনে হলো যেন আমার মাায়ের পেটের বড় ভাই এসেছেন আমাকে দেখতে। আমি চেষ্টা করলাম বিছানা থেকে নেমে তাঁর পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু আমাকে তিনি জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘#শাহজাহান মিয়া চিন্তা করো না, তুমি অচিরেই সুস্থ হয়ে যাবে, মন্ত্রী মহোদয় তোমার আহত হওয়ার কথা শুনেছন, তোমার জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেদিন তোমার আহতকারী শত্রুটিকে হত্যা করতে পেরে আমি গর্বিত। তোমার ঝরে পড়া রক্ত বৃথা যাবে না, আর দেরি নয়– অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হয়ে যাবে। তুমি সুস্থ হয়ে যখন ফিরবে তখন স্বাধীন মাতৃভূমিতেই তোমার পা পড়বে ইনশাল্লাহ্।#’
এইরকম অনেক কথা তিনি বললেন, যা এখন মনে করতে পারছি না। সেদিন আজিজ ভাইয়ের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে আনন্দের ঝর্ণাধারা গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি অনেক্ষণ আমার শিয়রের পাশে বসেছিলেন। শেষে যাবার বেলায় বলে গেলেন, ‘#আবার দেখতে আসবো, তবে একা নয় - প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও মন্ত্রী ড. ত্রিগুণা সেনকে সাথে নিয়ে।#’
হ্যাঁ, আজিজ ভাই তাঁর কথা রেখেছিলেন। আজ তা ভাবলে আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হয়ে গেছে– এ খবরটি হাসপাতালের বেডে শুয়েই জেনেছিলাম। সম্ভবত জানুয়ারির ১৮ তারিখ হবে। নিত্যদিনের মতো হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। ভাবছি আর আনন্দে কাঁদছি। আজিজ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল যে, আমি সুস্থ হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমির মাটিতে পা রাখবো। কী নিরেট সত্য কথাটা সেদিন তিনি বলে গিয়েছিলেন। সময় অনুমান বিকাল ৫ টা বা ৬ টা হবে। হঠাৎ হাসপাতালের সামনে উঠোনে একটা হেলিকপ্টার নামলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আসার কথা আগে থেকেই আমাদেরকে বলেছিলেন।
হেলিকপ্টার দেখে নিশ্চিত হলাম, এইতো বোধহয় প্রধানমন্ত্রী এসে পড়লেন। সত্যিই তাই। হেলিকপ্টার থেকে নেমে এলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্রী ড. ত্রিগুণা সেন, কয়েকজন ভারতীয় সেনা অফিসার আর আমাদের সেই প্রিয় মুখ আজিজ ভাই।
আমার শয্যাটি ছিল সার্জিক্যাল-৩-এ ঢোকার পথে প্রথমেই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ওয়ার্ডে ঢুকেই প্রথমে আমার শয্যাপাশে এসে আমাকে প্রণাম জানালেন এবং করমর্দন করলেন। আর আজিজ ভাই তো আছেনই। আমার মনটা খুশিতে ভরে গেল। আজিজ ভাইয়ের প্রচেষ্টাতেই আজ ভারতীয় সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের মতো সাধারণ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গাভাঙ্গা বাংলায় আমাদের সবার সাথে কথা বলেছিলেন। আমাকে বিশেষ মর্যাদা তিনি দিয়েছিলেন আমার সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা শুনে এবং অনেক উপহারসামগ্রিও তিনি নিজহাতে আমাকে দিয়েছিলেন। সেদিন সাংবাদিকরা ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আমার একটি ঐতিহাসিক ছবিও তুলেছিল, যে-ছবিতে সবার সাথে আজিজ ভাইও ছিলেন। এই ঐতিহাসিক ছবির একটি কপি আমিও পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বিদায়বেলায় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বলে গেলেন, আমরা সুস্থ হলে যেন বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে পাঠানো হয়। এর দু’দিন পর সম্ভবত ২০ জানুয়ারি আমাদের ৩৫ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে একটা ভারতীয় বড় অ্যাম্বুলেন্সে করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের কথা, প্রধানমন্ত্রীর সাথে তোলা সেই ঐতিহাসিক ছবিটি দেশে ফেরার পর কোথায় যে হারিয়ে ফেলেছি, আর খুঁজে পাইনি। ছবিটি আজ থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করা যেত।
যাইহোক, আমি বাড়ি ফিরে এলাম। অনেক চেষ্টা করলাম আজিজ ভাইয়ের দেখা করবো বলে। সংবাদ নিয়ে জানলাম যে, তিনি বগুড়ায় থাকেন।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তিনি আমার খোঁজ নিয়ে একবার গোয়াইনঘাট এসেছিলেন।
শিলং হাসপাতালে থাকতে তাঁকে আমার বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম।
তিনি ডায়েরিতে তা লিখে রেখেছিলেন। সেই ঠিকানার ভিত্তিতে তিনি অনেক খুঁজে আমার দেখা পেলেন। আমি তাঁকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
তাঁকে কাদির মৌলভীর দিঘির পাড়ে সমাহিত আমাদের সহযোদ্ধা সেই ১০ জন শহীদের সমাধি দেখাতে নিয়ে গেলাম। তিনি জেয়ারত করলেন। শেষে বললেন, ‘বর্তমানে দেশে স্বৈরশাসন চলছে।
যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার কখনো ক্ষমতায় আসে তবে এই শহীদদের সমাধিতে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হবে ইনশাল্লাহ। আমি জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো।’
শুনেছি ১৯৯১ সালের ৬ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা আজিজ ভাই মারা গেছেন।
অনেক সরকার এসেছে কিন্তু আজও আজিজ ভাইয়ের সেই কথা– কাদির মৌলভীর দিঘির পাড়ের সেই ১০ জন বীর শহীদের নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণেরর কথা কোনো সরকারই বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়নি।
বর্তমান সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী সরকার। আমাদের আকুল আবেদন– গোয়াইনঘাটের কাদির মৌলভীর দিঘির পাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত ১০ জন বীর শহীদের স্মৃতিতে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক।
তা হলে শান্তি পাবে শহীদের আত্মারা, শান্তি পাবে মুক্তিযোদ্ধা আজিজ ভাইয়ের মতো নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিকের আত্মাটিও।
মুক্তিযোদ্ধা #আজিজ_আহমদ_চৌধুরী আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। তাঁর মতো দেশপ্রেমিকের বড়ই অভাব আজ আমাদের দেশে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অনন্য অবদান আমাদের বিজয়ের দুর্গম পথকে করেছিল সুগম। তাঁর কোমল কণ্ঠের অমিয় বাণীগুলো আজও মনে পড়ে।
মনে পড়ে– তাঁরই প্রচেষ্টায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও মন্ত্রী ড. ত্রিগুণা সেনের আমাদেরকে শিলং হাসপাতালে দেখতে আসার কথা।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আজিজ ভাইয়ের অসাধারণ অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, চির অম্লান হয়ে থাকবে তাঁর জ্যোতির্ময় নামটা।
আল্লাহ তাঁকে স্বর্গবাসী করুন– এই কামনা করি।
#স্মৃতিচারণ
মো. শাহজাহান মিয়া, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচয়পত্র নম্বর: ১১৩৩
রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ১৪৭৪, তারিখ: ০১.০৭.২০১০
মুক্তিবার্তা নম্বর: ০৫০১১১০৩০৪
ভোটার নম্বর: ৯১-৪১-৭৩-০৬৩
গেজট নম্বর: ১৮৯

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.