নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধিনতার শত সহস্র, লক্ষ কোটি সুফল - কিন্তু একটি মাত্র “কুফল” - দেশের নিতি নির্ধারণে অযোগ্য লোকেরা সব উচ্চাশনে - রাজনিতিতে ও প্রশাসনে - ফলে দেশটি যথাযথভাবে উন্নতিতে আগাতে পারছে না। তারপরেও যে টুকু এগিয়েছে সব টুকু ব্যাক্তি উদ্যোগে - সরকারের ভূ

রুহুলআমিন চৌধুরি

আমার জন্ম ০৬ মে, ১৯৫৬ খৃস্টাব্দ (আমার এস এস সি সনদ, জাতিয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনপত্রে জন্ম তারিখ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ খৃস্টাব্দ - যাকে আমি রাষ্ট্রিয় জন্ম দিন বলি)- বরিশাল উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ খৃস্টাব্দে এস এস সি (বিজ্ঞান) - ১৯৭৫ খৃস্টাব্দে ব্রজমোহন কলেজ , বরিশাল থেকে এইচ এস সি (বিজ্ঞান) - মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পাশ করি - আমি জানুয়ারি, ১৯৭২ খৃস্টাব্দ থেকে জানুয়ারি, ১৯৮৫ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর আসর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সি পি বি) সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলাম - আমি বরিশাল শহরে অনামি লেন, সদর রোডে বড়ো হলেও - আমার নিজের বা বাবার কোনো বাড়ি নেই - আমার দাদার বাড়ি (দাদার বা তার বাবারও কোনো বাড়ি নেই - ওটিও দাদার দাদার বা তারও আগের কোনো পূর্ব পুরুষের) পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার ০১ নং বলদিয়া ইউনিয়নের রাজাবাড়িতে - আমি ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে প্রথম আুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলে যেতে শুরু করি - তৃতীয় শ্রেনিতে - স্কুল থেকে পাক ভারত যুদ্ধ বিরোধি এবং ফাতেমা জিন্নার হেরিকেনের পক্ষে মিছিল করে বরিশাল শহর প্রদক্ষিণ করে হাটু পর্যন্ত ধূলা বালিতে একাকার হয়ে বাসায় ফিরি - সাদা জুতা মোজা প্যান্ট নষ্ট করে - তারপর ১৯৬৯ পাকিস্থান দেশকৃষ্টি বিরোধি আন্দোলন ও ১১ দফা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলনে বরিশালের ততকালিন ছাত্র নেতা শহীদ আলমগির, আ স ম ফিরোজ, মনসুরুল আলম মন্টু, নওশের জাহান, আনোয়ার হোসেন, আনেয়ার জাহিদ, আব্দুল হালিম, কাশি নাথ দত্ত সহ আরো অনেকের সান্নিধ্যে যাবার সৌভাগ্য হয় - ১৯৭০ এর ভয়াল জলোচ্ছাসে উদয়ন স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে আমি \"কাকলি ছাত্র সংঘ\" গড়ে তুলি - আমরা জুতা পালিশ করে, খবরের কাগজ বিক্রি করে, পেয়ারা বিক্রি করে, অর্থ সংগ্রহ করি ও বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে পুরনো জামা কাপড় সংগ্রহ করে ভোলার দুর্গত এলাকায় পাঠাই - ১৯৭১ এর পয়লা মার্চ থেকে মিছিল মিটিং ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিলে মামা ও নানার সাথে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে, স্বরূপকাঠী কলেজ মাঠে জাহাঙ্গির বাহাদুর ও আবু বকর ছিদ্দিকের নেতৃত্বের মুক্তি বাহিনির সাথে সক্রিয় ছিলাম এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে মহসিন ভাইর মুজিব বাহিনি এলে কাটাপিটানিয়া ক্যাম্পে ০৮-১২-১৯৭১ (বরিশাল মুক্ত দিবস) পর্যন্ত সক্রিয় ছিলাম - যেহেতু আমি নিজে কোনো পাকিস্থানি মিলিটারি মারিনি - অতএব মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়া সমিচিন মনে করিনি - আজো করি না - যে সব অমুক্তিযোদ্ধা মিথ্যে সনদ নিয়ো রাষ্ট্রিয় সুবিধা নিচ্ছে - তাদের কারণে অসহায় অসচ্ছল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ মানবেতর জিবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে - সনদ পাবে - চাকুরি পাবে - ভাতা পারে - ছেলে মেয়ে নাতি পুতি সুবিধা পাবে - এমন আশা করে কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযুদ্ধে যায় নি - প্রত্যেকে জিবন বাজি রেখে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে গেছে - সুবিধাবাদি অমুক্তিযোদ্ধারাই ভূয়া সনদ নিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করছে - হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয় নি - তারপরেও লাখ লাখ সনদধারি মুক্তিযোদ্ধা কোথা থেকে এলো ? আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের পর পরই স্বাধিনতা বিরোধিরা (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুরা) সুকৌশলে সনদ নিয়ে, আজ এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে - আসলে সরকারের নিতি নির্ধারণেও কিছু ত্রুটি ছিলো - উচিত ছিলো -“মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান” এই সনদ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া - কিন্তু ভাতা - চাকুরির বয়স বৃদ্ধির সুবিধা - পোষ্যদের চাকুরি প্রদানের সুবিধা - মাসিক ভাতা - এগুলো কেবলমাত্র হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই দেয়া সংগত ছিলো - এখানেও আমলাদের বা নিতি নির্ধারণে স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) বিশাল ভূমিকা রয়েছে বলে আমি মনে করি - দৃঢ় চিত্তে বিশ্বাস করি - না হলে খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও বিতর্কের কারণ কি হোতে পারে ? খেতাব প্রদানের সময় থেকেই স্বাধিনতা বিরোধিদের (স্বাধিনতার পরাজিত শত্রুদের) সক্রিয়তা বুঝতে পারেনি - মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সমর্থকরা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা - কারণ যারা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্থান সরকারের আজ্ঞাবাহক ছিলো সেই সব আমলারাই ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ থেকে বাংলাদেশ সরকারের নিতি নির্ধারক হলেন ? স্বাধিনতার শত সহস্র লক্ষ কোটি ‘সুফল’ আছে - কিন্তু একটি মাত্র ‘কুফল’ - যা আজো জাতিকে পিছু টানছে - প্রতিনিয়ত - তা হোলো “উচ্চাসনে (নিতি নির্ধারণে) অযোগ্যরা (রাজনিতিক ও আমলা) ।। ।। আমি নিজ সামর্থানুসারে চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হত দরিদ্র শিক্ষার্থিদের আর্থি ক সহায়তা করে থাকি । দু’টি এতিমখানাতে ও চার - ছয়টি মসজিদে মৃত মা বাবা ও অকাল প্রায়াত ভাতিজির (স্বপ্নীল) নামে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করি। সকলের দোয় প্রার্থি ।

রুহুলআমিন চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জাতি তার গৌরবগাঁথার কথা, ঐতিহ্যের কথা ভুলে যায়- সে জাতি স্বীয় অধঃপতন থেকে সহজে পরিত্রাণ পায় না ! যে কোনো জাতির নবজাগরণের জন্যে প্রয়োজন অতীতের গৌরবময় অধ্যায়গুলো থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা গ্রহণ ! বড়ই অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা !

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৯

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান সংগঠক
পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা)

যে জাতি তার গৌরবগাঁথার কথা, ঐতিহ্যের কথা ভুলে যায়- সে জাতি স্বীয় অধঃপতন থেকে সহজে পরিত্রাণ পায় না ! যে কোনো জাতির নবজাগরণের জন্যে প্রয়োজন অতীতের গৌরবময় অধ্যায়গুলো থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা গ্রহণ ! বড়ই অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা !

১৯৫২ র ভাষা আন্দোলনের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন ! সৃষ্টি করেছিলেন ১৯৫৪ র ‘যুক্তফ্রন্ট’ ! সে সব বীরদের ‘ভুলে যাওয়া’ কিন্তু ‘ভুলে যাওয়ার মতো নয়’ এমন একটি নক্ষত্র হচ্ছেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ! এ দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর আগমন অনেকটা ধূমকেতুর মতো ! তিনি আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন এবং চলে গেলেন ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র জীবনের দৈর্ঘ্য ছোটো হতে পারে কিন্তু গভীরতা ও ওজন মোটেও কম নয় !

রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ খৃঃ দাবি দিবস পালন ও ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার ব্যপারে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ! মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অলি আহাদ, আবদুল মতিন, গাজিউল হক প্রমূখ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে মত দেন এবং ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে সর্বাত্মক কাজ করেন !

মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ খৃঃ শহীদদের রক্ত মাখা জামা হাতে তুলে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত লক্ষাধিক মানুষের প্রতিবাদ সভার সভাপতি পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ই প্রথম তাঁর ভাষণে, ‘দাবি না হওয়া পর্র্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান’ ! এই মহান নেতা মাত্র ৩০ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু বরণ করেন ! তাঁর জন্ম হয়েছিলো ১০ ফেব্রুয়ারি, ১০২৬ খৃঃ বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের পেশকার বাড়িতে ! ০৬ এপ্রিল, ১৯৫৬ খৃঃ ঢাকার মিটফোর্র্ড হাসপাতালে দুরারোগ্য সংক্রামক কালব্যধি ‘জার্মান মিজেল’ (ত্বকের নিচে বসন্ত গুটিকা) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন !

আমরা ও আমাদের নতুন প্রজন্ম এই অকাল প্রয়াত মহান যুব নেতার (যুব সূর্র্য) নাম জানি না ! আমরা জানতে চাই আমাদের অতীত নায়কদের সম্পর্কে ! বাবা মা সৎ চরিত্রবান না হলে যেমন সন্তানরা সৎ চরিত্রবান হয় না, ঠিক তেমনি দেশের অতীত নায়ক বা গুণী ব্যাক্তিদের বিজয় গাঁথা না জানলে নতুন প্রজন্ম তার চরিত্র গঠনে দিক নির্দেশনা পাবে না !

১৯৫৩ খৃঃ জুড়ে তৎকালিন পূর্র্ব পাকিস্থান ছিলো মুসলিম লিগ বিরোধি গণ আন্দোলনে উত্তাল ! ঘোষিত রাজনৈতিক দল না হলেও এ গণ আন্দোলনে পূর্র্ব পাকিস্থান যুবলীগের ভূমিকা ও নেতৃত্ব ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ ! সে বছর শেষের দিকে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বরিশাল জেলা যুবলীগের সম্পাদক ও কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত গণতন্ত্রী দলের জেলা অফিসে মুসলিম লিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সক্রিয় কর্মীদের একটি বৈঠক আহ্বান করেন ! প্রথমেই পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এ বৈঠকের উদ্দেশ্য ব্যখ্যা করে বলেছিলেন, ‘যে প্রকারেই হোক মুসলিম লিগকে ১৯৫৪ র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুৎ করতেই হবে ! এ ক্ষেত্রে মুসলিমলিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন’ ! পাক ভারত উপমহাদেশে তখন পর্যন্ত কোনো সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে একটি যৌথ প্লাটফর্র্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’) গঠন করে নির্বাচন করেছে এমন নজির নেই ! তাই উপস্থিত সকলের মনে নানা প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক ! কিন্তু যৌথ প্লাটফর্র্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’)র প্রয়োজনিয়তা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এমন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেন যাতে করে সেখানকার সবাই তাতে একমত পোষণ করতে কোনো দ্বিধা করলেন না ! কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘যুক্তফ্রন্টের’ অন্তর্ভূক্ত করার বিরোধিতা করেন ! শেষ পর্যন্ত সর্র্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, (১) আওয়ামি লিগ, (২) কৃষক শ্রমিক পার্টি, (৩) গণতন্ত্রী দল ও (৪) নেজামে ইসলাম এই ৪ (চার) টি দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে ! এই ৪ (চার) দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে যোগাযোগে করা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ও অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাতের উপর অর্র্পন করা হয় ! যতদূর জানা যায়, ১৯৫৪ এর ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছিলো ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন ও ‘যুক্তফ্রন্ট’এর বিজয়ে তাঁর ভূমিকা ছিলো অন্যতম শীর্র্ষস্থানীয় !

‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র ভুমিকা ছিলো অবিসাংবাদিত ও অনন্য ! একজন যুব নেতা হয়ে তিনি মওলানা ভাষানি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিবুর রহমান, শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক, নেজামে ইসলামের মওলানা আতাহার আলি, গণতন্ত্রি দলের মাহমুদ আলি প্রভৃতি জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় সাধনে অনন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন !

‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) প্রথমে মওলানা ভাষানি, শেখ মুজিবুর রহমান ও আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ! মওলানা ভাষানি ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম থেকেই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক বেশ কিছু শর্র্ত আরোপ করলে এ বিষয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় ! কিন্তু জাগ্রত যুব সমাজ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অচলাবস্থা দূর করার ব্যাপারে দেশব্যাপি জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয় ! এ ব্যাপারে উদ্যোগতাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র নাম শীর্র্ষ স্থানে উল্লেখ করা যায় ! শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক কিছু কিছু শর্র্ত শিথিল করার ব্যাপারে এবং তাঁকে ‘যুক্তফ্রন্ট’র প্রথম সারিতে টেনে আনতে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র ভুমিকা সর্বজনবিদিত ! অনুরোধ উপরোধ থেকে শুরু করে শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক এর পদযুগল জড়িয়ে ধরা পর্র্যন্ত কোনো কিছুই বাদ যায়নি ! এর সাথে রাজনৈতিক যুক্তিতর্র্কতো ছিলোই !

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র পদচারনা দেখে শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এই ছেলেটি কে ? কোথা থেকে নমিনেশন চায় ? এক তো নমিনেশন দিতেই হবে’ ! তিনি ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি এতো খাটাখাটি করছো, বলো তুমি কোথা থেক নমিনেশন চাও ? আমি তোমাকে নমিনেশন দেব এবং আমি তোমার নির্র্বাচনি এলাকায় বার বার যাবো’ ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বললেন, ‘এবার আমি নির্র্বাচন করবো না! আপনারা ‘যুক্তফ্রন্ট’র ঐক্য বজায় রেখে মুসলিম লিগকে পরাজিত করুন ! আমরা আপনাদের জেতাবার জন্যে কাজ করে যাবো ! পরবর্তীকালে দেখা যাবে কোথায় নির্র্বাচন করবো !

পূর্র্ব বাংলায় তখন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার জয়যাত্রা চলছে (১৯৫০-৫৪) ! এ সময় একদিন চার জেলার চার যুবলীগ নেতা সহ কারকুনবাড়ি লেনে মাওলানা ভাষানির বাড়িতে বসে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) কে বললেন, ‘শোন ইমাদুল্লাহ ! তুমি আওয়ামি লিগ নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না ! হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, আতাউর রহমান ও শেখ মুজিবুর রহমান আমর পাশেই আছে ! ‘যুক্তফ্রন্ট’র ঐক্য বজায় রাখার জন্য তোমাকেই নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে ! যুবনেতাদের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্র্ভর করছে ! ক্ষমতায় যাবার নেশা তোমাকে যেন মত্ত না করে’ ! মাওলানা ভাষানির দু’পায়ে সালাম করে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বললেন, ‘হুজুর, আমার নীতি আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ ক্ষমতায় গেলে আমি ক্ষমতার বাইরে থেকে চাবুক হিসেবে ঘুরে বেড়াব ! কেউ নীতি বিচ্যুৎ হলে আমার চাবুক সেখানে কাজ করবে ! আমার সাথে থাকবে প্রগতিশীল যুব সমাজ ! আপনি আমাদের দোয়া করবেন’! ‘যুক্তফ্রন্ট’র নির্র্বাচনি প্রচারনার সময় শহরে গ্রামে গঞ্জে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) চাবুকের প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে ভুলতেন না !

মনি সিং, খোকা রায়, বরুণ রায়, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল হক, আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), গাজিউল হক, অলি আহাদ, মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখের সাথে তাঁর কেবল রাজনৈতিক নয় ব্যক্তি সম্পর্কও ছিলো খুব গভীর ! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলো আন্তরিক বন্ধুত্ব ! রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে ছিলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) মওলানা ভাষানির ছিলেন স্নেহধন্য ! মওলানা ভাষানি প্রয়ই তাঁকে বলতেন, ‘ইমাদুল্লাহ, ক্ষমায় যে দল বা যে ব্যক্তি যাক না কেন তুমি কিন্তু সে দিকে হাত বাড়াবে না ! তুমি থাকবে আমার সাথে ! মনে রাখবে ক্ষমতার স্বাদ রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম থেকে প্রায়শই দুরে সরিয়ে নিয়ে যায়’ !

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বলতেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্বর বিষবাষ্পে ভারত পাকিস্থান আচ্ছন্ন ! জনগনের মুক্তি সুদুর পরহত ! বৃটিশ বিরোধি সংগ্রমের চেয়ে অনেক অনেক বড়ো এবং দীর্র্ঘ স্থায়ি রক্তক্ষয়ি সংগ্রাম আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ! অনেক স্তর পার হতে হবে ! কোনো স্তরই সহজ সরল নয় ! বৃটিশ সরকার ভারত পাকিস্থানের জনগনের মধ্যে ধর্মীয় সামপ্রদায়িকতার ও বিভেদ নীতির যে বীজ বপন করে গেছে সে বীজ এখন শক্ত গাছ হয়ে চতুর্দিকে ডালপালা ছড়াচ্ছে ! এ থেকে মুক্ত হতে কয়েক দশক কেন শতাব্দি কালও লেগে যেতে পার’! তিনি একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থাটাকে কল্পনা করেছিলেন !

২৭ ও ২৮ মার্র্চ, ১৯৫১ খৃঃ ১৪ দফা দাবি নিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি ছাড়া পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের প্রথম সভাপতি হন মাহমুদ আলি, সহ সভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহা, সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মতিন ও রুহুল আমিন, ঐ বছরই ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫১ বার্ষিক সম্মেলনে মোহাম্মদ তোয়াহা সভাপতি, অলি আহাদ সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ও মোহাম্মদ সুলতান ! ১৯৫২ খৃঃ যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহা, সহ সভাপতি অলি আহাদ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) !

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সহযোদ্ধা সত্য কিরণ আদিত্য (সত্যদা) স্বজন হারানোর বেদনায় প্রলেপ দিতে নেত্রকোনায় গড়ে তুলেছিলেন ‘ইমাদুল্লাহ পাঠশালা’ ও ইমাদুল্লাহ স্মৃতি পাঠাগার’ ! কিছুদিন পরই (১৯৫৮) সামরিক সরকার পাঠাগার ও পাঠশালা ভেঙ্গে দেয় ! তার (সত্যদা) আক্ষেপ, ‘আজ সুদিন এসেছে কিন্তু সুযোগ নেই ! ব্যধিতে আমার মৃত্যূ হয়নি, কিন্তু দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে ! আমার প্রত্যয়েরও নির্বাসন’ ! (সত্য কিরণ আদিত্য বর্র্তমানে ভারতে বসবাসরত)!

তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও স্বজনদের মন্তব্য, ‘তিনি ছিলেন খাপখোলা তলোয়ারের মতো’ ! ‘এমন মেধাবী ছেলে জীবনে কম দেখেছি’! ‘এরকম বিদ্যুতের ঝলকের মতো ছেলে কম দেখেছি’ ! ‘ Friend, Philosopher & Guide’ ! ‘সে ছিলো একজন সাহসি, আদর্র্শবান এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ’ ! ‘তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বে আরাম আয়েস বলে কিছু ছিলো না’ ! ‘যেটুকু কাজ করেছে সবটাই ছিলো দেশ ও জনগনের জন্যে এবং এটাই ছিলো তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য’ ! ‘তার সাথে পরিচিত হবার এবং নিবিড় সান্নিধ্য লাভের সুযোগ নিঃসন্দেহে আমার জীবনের এক পরম পাওয়া’ ! ‘আমার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম পথ প্রদর্র্শক হিসেবে তিনি আজও আমার স্মৃতিতে অম্লান’ ! ‘দুনিয়াটাকে বদলাতে গেলে যে চরিত্র যে মানসিক দৃঢ়তা ও যোগ্যতা লাগে মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) তার প্রত্যেকটি ধারণ করতেন’ ! ‘আমি যদি কারো নিশান বহণ করে থাকি সে মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) নিশান’! ‘তিনি ছিলেন পুরো ৬ (ছয়) ফুট লম্বা সুন্দর সুদর্র্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারি’ ! Tall, well built, fumed & cultured’. Where the dark is deepest the light is brightest- এই প্রবাদ বাক্য সত্য প্রমানিত হয়েছিলো অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) জীবনে’ ! ‘তিনি জানতেন যে রাজনীতি তিনি করতে যাচ্ছেন সেখানে আছে দুঃখ কষ্ট জীবন সংগ্রাম আর মৃত্যুর হাতছানি ! যেনে শুনে বিষপান করার মতো ! তবু এই দুঃসহসিক যুবক থেমে থাকেনি তাঁর আদর্শের পথ পরিক্রমায়’ !

কেন শেষ বারের মতো একবার দেখার সুযোগ দেয়া হলোনা ? যে দুজন মানুষ ইমাদুল্লাহ (লালা) র কাছে সব চেয়ে প্রিয় ও প্রধান ছিলো ! তার মা ও স্ত্রী ! তাদেরকে বাদ দিয়ে ইমাদুল্লাহ (লালা) র কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত কারা নিয়েছিলো ? ইমাদুল্লাহ (লালা) র কাছে শেষ বিদায় নেয়ার সুযোগ যারা দিলো না তারা ক্ষমার অযোগ্য - তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের কাছে আজ ৫০ বছর পরেও ! এই সমাজে আজো প্রতিদিন গুরুত্বপূর্র্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মা মেয়ে এবং স্ত্রীকে বাদ দিয়ে ! এর পরিবর্র্তন কবে হবে ?

( সূত্রঃ কমরেড মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ স্মারক গ্রন্থ, প্রকাশকঃ নুরজাহান বেগম, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, মুক্তি ভবন, ২. কমরেড মনি সিংহ সড়ক, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ )


(রুহুল আমিন চৌধুরী), চৌধুরীবাড়ি, রাজাবাড়ি, স্বরূপকাঠী, পিরোজপুর-৮৫২২| মুঠোফোন : 017 11 33 40 80 | ০১৬ ১১ ৩৩ ৪০ ৮০ ।
Type : Nikosh, E-mail : [email protected], facebook : [email protected].

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.