নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনুভূতি গাঁথার সাধনায় মগ্ন।

চঞ্চল হরিণী

এই পৃথিবীর বাইরে কোথাও গিয়ে যদি কিছু লিখা যেতো ; এই অসহ্য মনোবৈকল্য দূর হতো। হে ভাবনা, দয়া করে একটু থামো। আমাকে কিছুটা মুক্তি দাও। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তোমার অবিরাম পদচারণায়। বিচ্ছেদে যাও তুমি। ফুলে ওঠো পিঙ্গল বিভ্রম বেশে। আমাকে মৃত্যু দাও নয়তো চিৎকার করে ওঠার অপরিসীম ক্ষমতা দাও। আমি ক্লান্ত এই অমানিশায়। শান্তির খোঁজে মৃত্যুদূতের পরোয়া করিনা, পরোয়ানা জারি করো। গভীর, গভীর, গভীর। বোহেমিয়ান মন অভ্যস্ত জীবনের শিকল ভেঙ্গে ফেলো।

চঞ্চল হরিণী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মেয়ে ও দুর্নীতি দমন ( ছবির দুর্নীতি বানানটি কি সুন্দর দেখেছেন ! )

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১



রসুলপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে হাকিমের খাস কামরার ভেতরে একজনকে ঘুষ দিতে দেখে রহিম বকশি দুদকের জরুরী নাম্বারে ফোন করে দিলো। আদালত চত্বরেই তার চায়ের দোকান। আজ দোকানের ছেলেটি আসেনি। তাই মুহুরির অর্ডার পেয়ে নিজেই স্যারের কামরায় এক ফ্লাস্ক চা নিয়ে গিয়েছিলো সে। ভেতরে ঢুকতেই দেখে ফেলে বছর পঁচিশ ছাব্বিশের এক তরুণী স্যারের হাতে টাকা দিচ্ছে। কোন খাম নেই একেবারে উন্মুক্ত। সরকারি অফিসে এত টাকা ঘুষ ছাড়া আর কোন দরকারে হতে পারে না। হাকিম মোঃ মন্তাজ চৌধুরী অবশ্য রহিম বকশিকে একটুও পাত্তা দেননি। আর দেবেনই বা কেন, হাকিমকে নিয়ে কিছু বলার সাহস কি এক ক্ষুদ্র চা বিক্রেতার হতে পারে। তাছাড়া রহিমকে আলাদাভাবে চেনেন তিনি, কারণ তার দোকানের চায়ের খুব অন্যরকম স্বাদ, সবাই খুব পছন্দ করে। কত দরকারে রহিমকে ও তার গ্রামের লোকদেরকে তাঁর কাছে ছুটে আসতে হয়। রহিম উপরে উপরে খাতির করে থাকলেও মনে মনে সে এই আদালতের বেশিরভাগ দুর্নীতিবাজ স্যারদের পছন্দ করে না। তার উপর যে মেয়েটি টাকা দিয়েছে তাদের পরিবারের সাথে তার শত্রুতা আছে। তাই আজ এটা দেখেই গত পরশু মায়ের নামে কেনা নতুন সিম থেকে সে কল করে জানিয়ে দিলো খবর। কিছুদন আগেই জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে লোকজন এসেছিলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে। তারা স্থানে স্থানে মিটিং করে নাম্বার দিয়ে গেছে, অনেকগুলো পোস্টারও লাগিয়ে গেছে। কল করে দিয়ে রহিম নিশ্চিন্ত মনে তার দোকানের কাজ করে যেতে লাগলো আর আড়চোখে দেখতে লাগলো রাস্তার দিকে। অফিসের দিকেও চোখ রাখলো মেয়েটি বেরিয়ে যায় কিনা।

জেলা দুর্নীতি দমন অফিসের জুনিয়র অফিসার রাজন চক্রবর্তী ফোন পেয়ে আর একটুও দেরি করেননি। লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো, অন্য সহকর্মীরা বলেছিলেন লাঞ্চ করে যেতে। কিন্তু তিনি বললেন, ‘লাঞ্চ করলে দেরি হয়ে যাবে, এই মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলা’। তিনি আরও তিনজন এসিস্ট্যান্টকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। রাজন চক্রবর্তী এই অফিসে নতুন জয়েন করেছেন। সদ্য নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ টগবগে অফিসার। খুব কর্তব্যপরায়ণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ তিনি। বুদ্ধিমান এবং প্রখরভাবে আইন মেনে চলেন। তাদের মাইক্রো যখন রসুলপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের সামনে এসে থামলো ততক্ষণে প্রায় ২০মিনিট পেরিয়ে গেছে। অফিসার রাজন একটু চিন্তিত দাতা গ্রহীতা উভয়ে আছে কিনা। না থাকলেও অবশ্য ধরা যাবে, কারণ গত সপ্তাহেই জজ কোর্টের অনুমতি নিয়ে তারা এখানকার প্রতিটা কক্ষে ও বারান্দায় সিসিটিভি লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে। প্রতি সপ্তাহান্তে এগুলো চেক করার কথা। যদিও বিষয়টা যথাযথ মনে হয় না রাজনের। সিসিটিভির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন মনিটরিং এর ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল। তাছাড়া সব দুর্নীতি তো আর অফিসে বসে হয় না। বিভিন্ন জায়গায়, মোবাইলের মাধ্যমে, ক্রেডিট ট্রান্সফার করে কত ভাবে হয়। কত জায়গায় আর পাহারা বসানো যাবে (?)। অফিসার রাজনের মনে হয় তারা অনেক সীমাবদ্ধতা এবং অসহায়ত্বের মধ্যে কাজ করছেন। প্রতিটা মানুষের মনেই আসলে একটা করে দুর্নীতি দমন অফিস থাকা দরকার। এসব ভাবতে ভাবতে রাজন সাহেব সঙ্গী তিনজনকে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের ভেতরে ঢুকলেন। না, কেউ যায়নি। খবরদাতা মোতাবেক লাল ড্রেস পরা তরুণী মেয়েটি হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এখনো বসে আছে কামরায়। হাকিম মোঃ মন্তাজ চৌধুরী কাগজপত্রে একের পর এক সই করে চলেছেন। তাঁর সামনেও চায়ের কাপ। আরও দুজন পেশকার আছে কামরায়।

তরুণ অফিসার রাজনকে মন্তাজ চৌধুরী আগে থেকেই চিনতেন। গত সপ্তাহে দেখেছেন। তাঁকে এভাবে খাস কামরায় ঢুকতে দেখে তিনি বিব্রত হলেন। তরুণী মেয়েটিও উঠে দাঁড়ালো। রাজন সাহেব বললেন, ‘স্যার, কেমন আছেন ? এক সপ্তাহ হল তো তাই ফুটেজ চেক করতে আসলাম’। মন্তাজ চৌধুরী যেন একটু বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ? আর আপনার আসার কি দরকার ছিল, কাউকে পাঠিয়ে দিলেই তো সব ক্যামেরার কার্ডগুলো নিয়ে যেতে পারতো। এভাবে একজন হাকিমের খাস কামরায় ঢোকাটা যে সৌজন্যমূলক নয় তা তো আপনার জানার কথা’। অফিসার রাজন একটু বিব্রত হলেন, কিন্তু পরক্ষণেই দৃঢ় চোখে হাকিম মন্তাজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘স্যার, আমি দুর্নীতি দমনে কাজ করি, আমার আগমন প্রস্থান অন্য সরকারি অফিসারদের মত হবে না, কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে ফোন পেলে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক যাওয়া আমার কাজের সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার এবং এই স্বাধীনতা আমার আছে’। তরুণী মেয়েটি এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিল। এবার বুঝতে পারলো হঠাৎ আসা এই মানুষটির পরিচয়। হাকিম মন্তাজ চৌধুরী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই তরুণীটি সামনে এগিয়ে এসে অফিসার রাজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘স্যার, আমার নাম পরমা। আপনি দুর্নীতির ব্যাপারে মন্তাজ স্যারকে আর কিছু বলার আগে আমি কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে, যদি অনুগ্রহ করতেন’। রাজন সাহেব মন্তাজ চৌধুরীর দিকে তাকালেন। তিনি ‘আপনার ইচ্ছে’ এমন ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। মেয়েটি পাশের চেয়ারে বসলো। পেশকার দুজন হাকিমের নির্দেশে বের হয়ে গেলো। অফিসার রাজনের সাথে আসা অন্য লোকেরাও সোফায় বসলো।

মেয়েটি বলতে শুরু করলো,
স্যার, আমার নাম পরমা আগেই বলেছি। আমার বাবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দু’বছর হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত। আমরা চার বোন, কোন ভাই নেই। আমার পরের দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট বোনটা বাকি। আর আমার একবার বিয়ে হয়েছিলো, ভেঙ্গে গিয়েছে। আমার দাদা তেমন কিছুই বাবার জন্য রেখে যাননি। ভিটেটা ছাড়া কিছু ছিল না। তাই বাবা আমাদের কাউকেই খুব বেশি পড়াতে পারেননি। আমি ছাড়া আর কেউ এসএসসি পাশ করেনি। দু’বছর আগে অবসর নেয়ার পর এককালীন অনেকগুলো টাকা পেয়ে বাবা সেই টাকা দিয়ে কিছু জমি কেনেন। জমিগুলো পত্তন দিয়ে, চাষবাস করে আর পেনশনের টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলছিল। আমার মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন, তাঁর জন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হতো। আর একবছর আগে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। তখন আমি সংসারের হাল ধরি। এতদিন মায়ের অসুস্থতার জন্য ঘরের ভেতরের সব কাজ করতাম। আর তখন থেকে বাবার সব কাজগুলো করা শুরু করলাম। ক্ষেতে গিয়ে চাষবাসের দেখাশোনা, তদারকি, প্রয়োজনীয় কেনাবেচা, পেনশনের টাকা তোলা, এমনকি মাঠে ট্রাক্টরও চালিয়েছি আমি। এভাবেই চলছিলো। বাবা কয়েকবার চেয়েছিলেন তাঁর জমিগুলো আমাদের নামে লিখে দিতে। নানা কারণে দলিলগুলো তুলতে পারছিলাম না। কিন্তু এমন হঠাৎ বিপদ আসবে কে জানতো! মাসখানেক আগে বাবা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। বাবার জবান বন্ধ হয়ে যায়, পরিবারের সবাই প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পড়ে। আমিও অস্থির হয়ে পড়ি ভেতরে কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা থাকে আমার। গত একবছরে মাঠে কাজ করে, বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে বলতে গেলে সম্পূর্ণ পুরুষের জীবন যাপন করে বেশ একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার স্যার। বুঝতে পারি কখন কোন কাজটা করে ফেলা খুব জরুরী। বাবার জবান বন্ধ হলেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি মারা যাননি, তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। আর এই ফাঁকে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে ফেলি। বাবার কেনা জমিগুলোর সাফকবলা দলিল তুলে ফেলি এবং সেগুলো যে তিনি চার মেয়ে ও স্ত্রীর মধ্যে বণ্টন করে দিলেন উকিলকে দিয়ে এমন হেবা দলিল বানিয়ে ফেলি। উকিল সাহেব বাবার এই ইচ্ছেটার কথা অনেক আগে থেকেই জানতেন, কারণ বাবা জবান বন্ধ হবার আগে বেশ কয়েকবারই উনার কছে এসেছিলেন এবং এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু স্যার, হেকিম স্যার তো আর জানেন না বাবার এই ইচ্ছের কথা। তাই তিনি আদালতে বলেন, জবান বন্ধ হওয়া ব্যক্তির সম্পত্তি দানের এমন দলিল করা মুসলিম আইন অনুযায়ী গ্রহণীয় নয়। কিন্তু দেখেন স্যার, বাবা বেঁচে থাকতেই যদি এটা না করা হয় তাহলে পরে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আমাদের বাবার এই সম্পদ আমাদের চাচাতো ভাইদের কাছে চলে যাবে। সামান্য যে একটু জমি আছে এবং আমাদের বসতভিটা এসব যদি আমরা চার বোন এবং মা থাকা সত্ত্বেও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করতে হয় তাহলে আমাদের ভাগে আর কতটুকু থাকবে স্যার? এই পাওয়া আর না পাওয়ায় তো কোন ব্যবধানই থাকবে না। আপন ভাই নেই বলেই এমন আইন, এটা মেনে নিলে আমাদের জীবন বিপন্ন হয় স্যার। তাই আমি পেছনের দরোজা দিয়ে হেকিমের খাস কামরায় ঢুকি। তিনি আমাকে দেখে রেগে যান এবং বলে ওঠেন,

-কি ব্যাপার, আপনি এই দরোজা দিয়ে এভাবে ঢুকেছেন কেন ?
-স্যার, পেছনের দরোজা দিয়ে মানুষ কখন আসে, কেন আসে তা কি জানেন না।
-কি বলতে চান ?
-স্যার, আমার বাবার হেবা দলিলটা...।।
-আদালতেই তো বলেছি, জবান বন্ধ ব্যাক্তির এমন দলিল গ্রাহ্য করা আইন বিরুদ্ধ।
-স্যার, আপনার একজন পেশকার আমার কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন এই কাজের জন্য।
-আপনি এখনই এই মুহূর্তে আমার কামরা থেকে বেরিয়ে যাবেন, নয়তো পুলিশ ডাকবো।
-স্যার, আপনি কি এই কামরায় প্লেনে চড়ে আসেন, নাকি গাড়িতে চড়ে, নাকি পায়ে হেঁটে?
-মানে কি, প্লেনে আসবো কেন? কি বলবেন পরিষ্কার করে বলে, আপনি এখান থেকে চলে যান।
-স্যার, যদি আপনি পায়ে হেঁটে এই কামরায় প্রবেশ করেন তাহলে সেই পা দুটোকে অক্ষত রাখতে এই দলিলে সই করে দিন। তাছাড়া বিবেকের কাছেও আপনি প্রশ্নবিদ্ধ থাকবেন যদি আপনার এই একটা স্বাক্ষর না করার কারণে আমরা চার বোন ও আমাদের মায়ের জীবন বিপন্ন হয়।

পরমা এই পর্যন্ত বলে থামে। লম্বা করে দম নেয়। এতক্ষণ একদম স্থির হয়ে সবাই কথাগুলো শুনছিল। যেন নড়তে চড়তে ভুলে গিয়েছিলো । এবার সবাই গতিশীল হয়। চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয়। কিন্তু চায়ে চুমুক দেবার আগে সবাই পানি পান করে নেয়। যেন ঠিক একইরকম অনুভূতি হচ্ছে সবগুলো প্রাণে। অফিসার রাজনও চায়ে চুমুক দিলেন কিন্তু তিনি যেন একটু বেশি স্থির হয়ে গেছেন। পরমা আবারও বলতে শুরু করে, আমার এই কথার পর হেকিম স্যার আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এরপর দলিলে সই করে দিতে সম্মত হন। কিন্তু স্যার, হেকিম স্যার যেটা ভরা মজলিশে ‘না’ বলে রায় দিয়েছেন সেটা খাস কামরায় ‘হ্যাঁ’ করতে হলে তো আরও কিছু বিষয় লাগে। পিপি, পেশকার, সেরেস্তা অনেকের কাছেই তো ‘না’ রায়টা গিয়েছে, শুধু তাদেরকে একটু আপ্যায়নের জন্য আর আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খরচের জন্য আমি স্যারের হাতে সাকুল্যে বারো হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলাম। এবার বলুন স্যার, হেকিম মন্তাজ চৌধুরী এবং আমি কি খুব অন্যায় করেছি? খুব ঘৃণিত দুর্নীতি করেছি?

তরুণ অফিসার রাজন তাঁর জীবনের প্রথম কেসে এমন হতবুদ্ধিকর অবস্থার সম্মুখীন হবে কস্মিনেও ভাবেনি। কোথায় ভেবেছিলো জীবনের প্রথম কেসেই হাতেনাতে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ধরতে যাচ্ছে, তাও একজন ম্যাজিস্ট্রেট, যেটা হলে চতুর্দিক থেকে প্রশংসা ও সাহসের জন্য বাহবা পেতো সেখানে নিজেই কেমন স্তব্ধ হয়ে গেলো। রাজনের একটুও মনে হচ্ছে না যে মেয়েটি কোন অন্যায় করেছে। ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মন্তাজ চৌধুরীর দুর্নীতিটাকেও উল্টো নীতিপূর্ণ কাজ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মনের কথা বা আবেগ দিয়ে আইন চলে না। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কিছু ক্ষমতা তো অফিসার রাজন চক্রবর্তীর আছে। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে মন্তাজ চৌধুরীর সাথে করমর্দন করে এবং পরমাকে শুভকামনা জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন। সঙ্গী তিনজন তাঁকে অনুসরণ করলো। ফেরার পুরোটা সময় তিনি আইন, নিয়ম, নীতি, দুর্নীতি এসব নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন।

ওদিকে রহিম বকশি তাঁর চাচাতো বোন পরমাকে হাসিমুখে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে ফ্যলফ্যাল করে সেদিকে চেয়ে থাকলো। আর মনে মনে ভাবলো, সালা কারে কি কমু, দুর্নীতিদমন অফিসার নিজেই ঘুষখোরের বাচ্চা !

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: দুর্নীতি আমাদের শরীরের একটা অংশ যার কারনে ওটা না করলে আমাদের শরীর ম্যাচ ম্যাচ করে।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০২

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: হাহাহা। সকালের চায়ের মত হয়ে গেছে মনে হয় :D । তবে এই গল্পের দুর্নীতিটা কিন্তু প্রশ্ন রেখে যায় মনে।
প্রথম মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ঠ্যঠা মফিজ ভাই। বেশ কিছুদিন পরে দেখলাম আপনাকে। শুভেচ্ছা নেবেন :)

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮

বলেছেন: এপিক

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৪

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: একটি মাত্র শব্দ শক্তিশালী মন্তব্য করে গেলো। অসংখ্য ধন্যবাদ, ল ভাই। শুভকামনা।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: কখনো খিদে পেটে নিয়ে লিখতে বসতে হয় না। ক্ষুধার্ত মানুষের লেখার মধ্যে ক্ষুধাভাব চলে আসে। সে খিদে যে-কোনো খিদেই হোক না কেন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৮

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: ঠিক বলেছেন, ক্ষুধার্ত মানুষের লেখায় ক্ষুধাভাব চলে আসে। সে খিদে যে-কোন খিদেই হোক না কেন ।
আচ্ছা, বাক্যটা কি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, রাজীব ভাই।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: দুর্নীতি বাংলাদেশের চলমান সমস্যা।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৪

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: জী ভাই। বাংলাদেশে অসংখ্য চলমান সমস্যার মধ্যে প্রধানতম সমস্যা এটি। পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ, মাহমুদুর রহমান ভাই।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩০

আহমেদ জী এস বলেছেন: চঞ্চল হরিণী ,



রাজনের মতো পাঠককেও হতবাক করে দিলেন । স্যাটায়ার কিন্তু দুর্নীতির অপর পিঠটাকেও দেখিয়ে দিলেন যেখানে মানবিকতার ‌একটা প্রশ্ন কখনও কখনও বড় হয়ে ওঠে দুর্নীতির সহজ সরল সূত্র ছাপিয়ে ।
পরমা পরম নিষ্ঠার সাথেই দেখিয়ে গেলো দুর্নীতি সব সময় দুর্নীতিই নয় তা ব্যতিক্রমী ভাবে নীতিও বটে । এধরনের সমস্যা দারুন ভাবে সামলেছেন রাজনের ভেতর দিয়ে । হ্যাঁ...সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা রাজনের আছে এবং রাজন বুঝিয়ে দিয়েছে আইনের জন্যে মানুষ নয় , মানুষের জন্যেই আইন ।

ভালো লেখা ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: হতবাক আমিও বহুবার হই ! আমাদের আইনগুলোতে এত অস্বচ্ছতা আছে যে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন আইন রক্ষাকারীদের বারবার হতে হয়। কত বিচিত্র ঘটনা যে ঘটতে পারে সমাজ সংসারে !

আপনি দুটি দারুণ উক্তি করেছেন যা সবসময় কোট করার মত-

"দুর্নীতি সব সময় দুর্নীতিই নয় তা ব্যতিক্রমী ভাবে নীতিও বটে "।

"আইনের জন্যে মানুষ নয় , মানুষের জন্যেই আইন" ।

প্রথমটা হয়তো আপেক্ষিক, কিন্তু পরেরটা চিরন্তন। অথচ উল্টোই চলছে অনেক বেশি। সবাই যেন ভুলতে বসেছে সমাজের সব কার্যকারণগুলো।

গঠনমূলক এই মন্তব্য করার জন্য আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ হলাম, আহমেদ জী এস ভাই। ভালো থাকুন। শুভকামনা।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: রহিম যে পরমার চাচাতো ভাই - এটা শেষে প্রকাশ করে গল্পটাকে আরো উপভোগ্য করে দিলেন...

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪০

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, বিচার মানি। আপনার কাছে উপভোগ্য লেগেছে জেনে আমার সত্যিই ভালো লাগছে। অবশেষে একটা গল্প তো আপনার ভালো লাগলো :)
ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা নিন।

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪০

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
নাহ, দুর্নীতি আমাদের বন্ধু। আপনি যত আমাদের সমাজের সাথে পরিচিত হবেন আপনাকে আপনার অজান্তেই ঘৃণার শ্লোগান দিতে দিতে তাকে বন্ধু করে নিতে হবে।

গল্প ভাল হয়েছে।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫০

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আমরা এমনভাবে সমাজের সকল সেক্টরে পেঁচিয়েছি যে তাকে অবলম্বন না করে টিকে থাকাই সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের হাত পায়ের সাথে সাথে প্রতিটা আঙ্গুল এমনকি আঙ্গুলের গিঁটগুলোও আলাদা আলাদা শিকলে আটকানো। একটু দুর্নীতি হলে একটা গিঁট খোলে এই অবস্থা। তাই সামান্য মুক্ত হবার জন্যও তাকে বন্ধু বানাতে এদেশের মানুষ বাধ্য হয়ে যায়। তা নয়তো একেবারেই জড়বস্তু হয়ে
বসে থাকতে হবে।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সৈয়দ ইসলাম ভাই। শুভকামনা।

৮| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপু সারাদিন বাচ্চাকে নিয়ে আই ডি হসপিটলে কেটেছে। ইচ্ছা ছিল পোস্টটি পড়ার। কিন্তু শরীর আর দিচ্ছে না। আগামীকাল ভালো করে পড়ে কমেন্ট করবো।

শুভেচ্ছা আপু আপনাকে ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আপনার এই আন্তরিকতার জন্য অনেক আবেগাপ্লুত ধন্যবাদ, পদাতিক ভাই। আমি তিনদিন আর ব্লগেই আসতে পারিনি ব্যস্ততার কারণে। হসপিটাল শুনে একটু উদ্বিগ্ন হলাম । আপনার বাবাই/মামনি সুস্থ আছে তো? জানাবেন প্লীজ। শুভকামনা রইলো আপনার ও পরিবারের সবার জন্য।

৯| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬

রাকু হাসান বলেছেন: ঘুষও খাইবা ,আবার কিছু বলতে গেলে সৌজন্যবোধ ও শেখাবা এ কেমন কথা! X((
শরমা মেয়েটার অনেক সাহস ,এতগুলো কথা ,একটানা এত সুন্দর করে বললো :|| । সে আবার ট্রাক্টার ও চালাইছে :( । বাহ চমৎকার :-B । রাজেনের মাধ্যমে পুরো দুদকের অসহায়ত্ব দেখলাম । তবে মানবিক রাজন কে দেখে ভাল লাগলো খুব । আমি কিন্তু প্রথম থেকেই রাজন হতে চেয়েছিলুম এ গল্পে :#) । ভাবছিলাম রাজনের জন্য কেউ থাকবে ;) ,আবারও হতাশ আমি #:-S
শরমা খুব ভালো ভাবে সামাল দিল । এতটুক গল্পে প্রত্যকটি চরিত্র খুব জীবন্ত । তোমার অনেক গল্প চাই । ছড়ার কথা ভুলে গেলে নাকি ! মিস করি ।

*খুঁজছি তবে পাইনি । প্রকাশক কে জানি ? বলছে কয়েকদিন পর যেতে ,রেখে দিবে ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আমি প্রশ্ন রেখেছি সব দুর্নীতিই কি আসলে দুর্নীতি ? আহমেদ জী এস ভাই তার সুন্দর উত্তর দিয়ে গেছেন।

আমিও চাই তুমি রাজনের মতই মানবিক হও :)। তুমি যে রাজন হইতে চাইবে এবং মনে মনে কাউকে খুঁজবা এইটা আমি জানতাম ;) । কথা হইলো, মেয়ের নাম পরমা, তুমি কি শরমে বানায় দিলা শরমা :P

ছড়া তো আছেই। কিন্তু ব্লগে পোস্ট করছি না আর কি। দাঁড়াও তোমাকে একটা ছড়া উৎসর্গ করবো।
প্রকাশক - ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন্স, সম্পাদক- মুম রহমান। খুঁজে পেলে জানিও।

১০| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২

মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: দুর্নীতি রে!!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩১

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: জী ভাই, দুর্নীতি ! আমরা বন্দী। আমার ব্লগে স্বাগতম, মেহেদী হাসান হাসিব। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪০

রাকু হাসান বলেছেন: ভালো আছিস বোন :-<

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: তিনদিন পর আজকে লগইন করার টাইম পেলাম :-< । ভালো তো আছি শারীরিকভাবে। পারিবারিকভাবে ঝামেলায় ছিলাম। বাসা ভর্তি মানুষ ছিল আর আমার মামীর ছোট ভাই রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলো :(

১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভসন্ধ্যা আপু,

আপনার ' দূর্নীতি ' গল্পটি পড়ে আমিও দুর্নীতিতে ডুবে গেছি। রহিম বকসি যদি আমাকেও ধরতো তবে আমার অফিসার রাজনের মত অবস্থা হত। আমরা আবেগপ্রবণ, মানবিকতাকে বিপন্ন হতে দেখে আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারিনা । যদিনা সেটা আমাদের বড় ধরনের কোনও ক্ষতির কারন না হয়। যেকারনে তরুন অফিসার হয়তো প্রথম জীবনে দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করবেন না বলে হাতেনাতে দুর্নীতিবাজ ধরবেন বলে অপারেশনে এসেছিলেন। কিন্তু পড়লেন আইন ও মানবিকতার যাঁতাকলে।

যে বিবেকে অফিসার দুর্নীতিদমনের শপথ নিয়েছিলেন, সেই বিবেকের কাছে তাই মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে বোঝালেন, বিবেক সবচেয়ে বড়। গল্পটার মেসেজও সেটাই দেশ কাল প্রশাসন , বিবেক সর্বাগ্রগন্য।


আপু, শ্রন্থন ( আমার পুত্র) এখন ভালো আছে। রেভিস ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটা স্কিনের মধ্যে দেওয়াই সেদিন প্রচন্ড কান্নাকাটি, ব্যাথা ও ফেরার পথে বার দুয়েক বমি করেছিল। বাড়ি এসে অবশ্য আর বমি করেনি । পরেরদিনও গায়ে প্রচন্ড ব্যাথা ছিল। আজ দ্বিতীয় ডোজ ছিল। এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। আগামীকাল জ্বর আসে কিনা জানিনা । পরের ডোজটি সামনের সোমবারে।

সবশেষে অফুরান শুভকামনা প্রিয়আপুকে।


১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৯

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আবার এসে চমৎকার এই বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় পদাতিক ভাই।

"যে বিবেকে অফিসার দুর্নীতিদমনের শপথ নিয়েছিলেন, সেই বিবেকের কাছে তাই মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে বোঝালেন, বিবেক সবচেয়ে বড়"। আপনার এই বাক্যটি সেরা। পড়ে আমি মুগ্ধ। একরাশ ভালোলাগা ও ধন্যবাদ।

পুত্রের নামটি যথেষ্টই কঠিন কিন্তু সুন্দর :) । আশা করি শ্রন্থন সুস্থ থাকবে। অনেক অনেক ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে। শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.