নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্বা যখন জেলে ছিলেন

০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:২৪

আব্বাকে যেদিন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, সেদিন আমি ত্রিশালে। রাজিব ফোন করে আমাকে ঘটনাটা জানায়। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। আব্বা আধ-পাগলা ধরনের মানুষ। আমার জানামতে কখনও কারও ক্ষতি করেননি। সুতরাং, কারও সাথে তাঁর শত্রুতা থাকার কথা নয়। হঠাৎ এমন কী ঘটল!

আম্মাকে ফোন দিয়ে কী হয়েছে জানতে চাইলাম। আম্মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, "তুই চিন্তা করিস না, তোর মামা আনতে গেছে; আজই ছাড়া পাবে!"

আমি আব্বা-আম্মার একমাত্র ছেলে। কষ্ট লাগবে; এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে এমন কোনো সন্তান নেই, যে মা-বাবার দুর্দিনে অস্থির হয় না। বুঝলাম, আমার কাছে অনেক কিছুই গোপন করেছেন আম্মা। অবশ্য পরে আমি সবকিছু জানতে পেরেছিলাম।

দাদার সাত ছেলে। সবাই বড় এবং বিবাহিত। তাঁদের সন্তানাদি আছে। এক ভিটাতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় আমি যখন খুব ছোট, দাদার বাড়ি হতে একটু দূরে আমাদের নতুন বাড়ি বানানো হয়। প্রায় রাস্তার পাশেই এর অবস্থান। দাদার বাড়ির পূর্ব পাশে একটা বাড়ি আছে, যেটাকে পূরবাড়ি বলা হয়। ঘটনা সে বাড়ি ঘিরেই।

এ বাড়িতে পাঁচটা পরিবার। রফিকুল, নজরুল, শরিয়তউল্লাহ, বাদশা এবং আরিফ সপরিবারে থাকে। প্রত্যেকের দু-তিনজন করে ছেলে মেয়ে। রফিকুল আর নজরুল দুই ভাই। জমি-জমা নিয়ে চাচা শরিয়তউল্লাহ্‌'র সাথে বিরোধ। সেদিন হঠাৎ চতুর্মুখী ঝগড়া বেঁধে গেল। পুরুষ-মহিলা পরস্পর পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রফিকুল আর নজরুল এক পক্ষে, অন্যপক্ষে শরিয়তউল্লাহ ও আরিফ। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে রফিকুলের বউ বেশি আঘাত পেলেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রফিকুল আর নজরুলের পরিবার। তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। অথচ তাদের দোষ সামান্যই ছিল। রফিকুল শুধু পুরোনো জমিটা মাপতে গিয়েছিলেন। শরিয়তউল্লাহ আর আরিফ গিয়ে তাকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। নজরুল ভাইকে বাঁচাতে ছুটে যান।

এলাকাবাসী ছুটে আসায় রফিকুলেরা বেঁচে যান। বিকেলে নালিশ বসে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসেন, আসেন রাজনৈতিক নেতারাও। শরিয়তউল্লাহ্‌'র সাথে তাদের বেশ ঘনিষ্ঠতা। কোনো কিছু যাচাই-বাচাই না করে রফিকুল-নজরুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আব্বা তীর্যক ভাষায় এর প্রতিবাদ জানান। কারণ, আব্বা-ই লোকজন নিয়ে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি আগেই অবগত ছিলেন। তিনি জানতেন কে প্রকৃত দোষী। তাই এই অন্যায়-অবিচার তিনি মানতে পারেননি।

নেতারা একটা বিশেষ দলের। আমি কোনো দলকে দোষ দিই না। ব্যক্তির দোষ দলকে দেওয়া ঠিকও না। কারণ, একই দলের সবাই খারাপ হন না। অবশ্য মাঝে মাঝে ব্যক্তির দোষ দলের ওপরও বর্তায়। সে অন্যকথা।

রফিকুল-নজরুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আব্বাকেও আসামি করা হয়। আরও আসামি করা হয় নজরুলের ছেলে শিমুলকে, যে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কিছুদিন পরে-ই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

আব্বা প্রায় এক সপ্তাহ কারাগারে ছিলেন। আমাদের বেশ সমস্যা হয়েছিল তাঁকে ছাড়াতে। কারণ, আমাদের গোষ্ঠিতে কেউ কখনোও মামলা- মোকদ্দমায় জড়ায়নি। আইন-কানুন, মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অতি সামান্য। বাস্তব জ্ঞান বলতে গেলে নে-ই। কোর্ট-কাচারি, উকিল- মোক্তার আর বিচারক সম্পর্কে যা জেনেছি; তা ঐ বিটিভির বাংলা সিনেমা দেখেই।

আমার এক মামা আর দুই চাচা ব্যাপারটা সামলান। আমি যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, এই ভয়ে আম্মা আমাকে আব্বার সঙ্গে দেখা করতে দেননি।

এক সপ্তাহ পর আব্বাকে যখন দেখি, আমার খুব কান্না পেয়েছিল। আব্বা সাতজন ভাইকে বড় করেছেন। দু'জন বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। কখনও নিজের উন্নয়নের কথা ভাবেননি। পাড়া-প্রতিবেশী আব্বার সমবয়সি অনেকেই এখন অনেক টাকা-পয়সার মালিক। অথচ আব্বা যেমন ছিলেন, তেমনি আছেন। তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুধু বয়স বেড়েছে আর কিছুই বাড়েনি। আমি আব্বাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম।

২রা মে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ
ময়মনসিংহ।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ৯:২৫

বকুল০৮ বলেছেন: হৃদয় ছোঁয়া লেখা। খোদা আপনাদের পরিবারের মঙ্গল করুক!

০৩ রা মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩১

কল্লোল পথিক বলেছেন:




আল্লাহ আপনার বাবা ও আপনার পরিবারের সহায় হোক।
এই কামনা করি।

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন । শুভ কামনা সতত!

৩| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:




যাক, অল্পতে সেরে গিয়েছিল; মন খারাপ করবেন না, আপনাদের এলাকার লোকগুলোর দয়ামায়া কম, ওরা প্রায়ই মারামারি করে; আর কিছু লোক আছে ব্রাম্মণবাড়িয়ার নবী নগরে , সাক্ষাৎ নেকড়ে।

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:২২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো!

৪| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: বাবা দিবসে শেয়ার করলেন!! :( খারাপ লাগলো। :(

২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:২১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা সমব্যথী হওয়ায়!

৫| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:৪০

মহা সমন্বয় বলেছেন: ওহহহ কি আর বলব, খুব খারাপ লাগল :( প্রথম যারা থানা পুলিশের মোকাবেলা করে বিভিন্ন ভাবে তারা খুব নাজেহাল হয়।
বুঝতে পারছি উক্ত সময়ে আপনার এবং আপনার পরিবারের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। :(
আমাদের দেশে মামলা মোকাদ্দামার ৯০% ই হয় এই জমি জমা নিয়ে। অথচ মানুষ মরলে জয়গা লাগে মাত্র ৬ ফুঁট।

২০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমাদের দেশে মামলা মোকাদ্দামার ৯০% ই হয় এই জমি জমা নিয়ে। অথচ মানুষ মরলে জয়গা লাগে মাত্র ৬ ফুট।" মানুষ কি এসব ভাবে?

৬| ২০ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:১১

কালনী নদী বলেছেন: very sorry to hear that bro!
may Allah safe other good peoples like your father before victimized of same kinda issue and suffer.

that was an dangerous fight.
i pray - Allah always with your family.

২০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: থ্যাঙ্কস, ব্রাদার!

৭| ২০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৫৩

নীলপরি বলেছেন: ইশ সকালবেলা মনটা খারাপ করে দিলেন । তবে শেষে সব ঠিক হয়েছিল এটাই ভালো কথা ।

২০ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভাবছিলাম নীলপরি কষ্টের কাহিনী শোনে উড়াল দিলো নাকি! ভালো, ফিরেছে!

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এ নিদারুণ বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জেনে ব্যথিত বোধ করছি। বাংলাদেশে নিরীহ লোকদের উপর এমন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মাঝে মাঝে বিপদ নেমে আসে। আর এ দেশে থানা পুলিশ করার অভিজ্ঞতা যে কতটা বেদনাদায়ক, তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারে।
যাক, তবু অল্পের উপর দিয়েই আপনাদের সে বিপদ কেটে গিয়েছিল জেনে স্বস্তি বোধ করছি।
শুভেচ্ছা রইলো। ভালো থাকুন, সব সময়।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সত্যি বলতে কি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমরা! এতো সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতা । তেমন কিছু হয়নি অবশ্য, হাজার পঞ্চাশেক অর্থ গচ্ছা গিয়েছিলো আর কী!

আপনার সহানুভূতিশীল মন্তব্যে প্রীত হলাম । ভালো থাকুন সবসময় ।

৯| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: হাজার পঞ্চাশেক অর্থ গচ্ছা আর বাবার সাত দিনের জন্য জেলখানায় অবস্থান, নেহায়েত কম তো নয় সাধু! অবশ্য, তবুও মন্দের ভালো!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মন্দের ভালো অর্থেই বুঝিয়েছি আর কী! আব্বাকে এক সপ্তাহেই ফেরত পাবো এটা ভাবতেই পারিনি; যেহেতু আইন-আদালত সম্পর্কে ধারণা ছিলোনা আমাদের!
অহহো, পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগাড়যন্ত্র করা অাসলেই কষ্টসাধ্য ছিলো । আব্বাকে পাওয়ার আনন্দের কাছে ওটা তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিলো অবশ্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.