নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষণিকের ভালো লাগা ফুল (প্রেমের ফাঁদে পড়ার গপ্পো)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩১


পাঁচতলা বাসা আর ছাত্রাবাসটার অবস্থান একেবারে মুখোমুখি। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে একটা সরু রাস্তা। টিংটিং শব্দ করে দু-একটা রিক্সা চলাচল করে সে রাস্তা দিয়ে মাঝেমাঝে। ময়মনসিংহের এ জায়গাটার নাম "হাজী বাড়ি মোড়"। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড, এরপর রেলক্রসিং; সেখান থেকে কিছুটা দক্ষিণে।
নিসর্গ দু মাস হলো এখানে এসেছে। এখান থেকেই ত্রিশালে তার যাতায়াত। ত্রিশালে মোটামুটি দু বছর ছিলো, তারপর ময়মনসিংহে চলে আসে। এর মধ্যে অসুস্থতার দরুণ দু মাস বাড়িতে ছিলো। এরপর নতুন বাসায় ওঠে। নওমহল মোড় এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়; মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের পথ। সেখান থেকেই ভার্সিটির বাসে ওঠে।
সেদিন ক্লাস ছিলো না ভার্সিটিতে। দরজাটা একটু ভেজিয়ে দুপুরে খেতে বসেছিলো নিসর্গ। এমন সময় খেয়াল করলো পাশের বাসার একটা কিশোরী মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে খুব সুন্দরী মনে হলো মেয়েটাকে। মেয়েটা থাকে নিচতলায়, নিসর্গের ঘরটার খুব কাছাকাছি। কাচের জানালা; ও ঘরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সবকিছু আবছা আবছা দেখা যায়। নিসর্গ একটু সঙ্কোচ বোধ করলো। তাই দরজাটা পুুরোপুরি ভেজিয়ে দিলো।
দ্বিতীয়দিন সে-ই একই অবস্থা! অলস দুপুর! রোদে খাঁ খাঁ করছে পথঘাট। লোকজনের চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু কম। নিসর্গ যে-ই দরজা ভেজিয়ে দিতে গেলো, দেখলো মেয়েটা একইভাবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। বিষণ্নতায় কেমন আচ্ছন্ন। তার চোখে কী শূন্যতা। এবার আর দরজা বন্ধ করলো না সে।
ভার্সিটিতে খুব একটা ক্লাস হয় না। সপ্তাহে দুচারদিন একরকম গৃহবন্ধিই থাকতে হয় নিসর্গকে। জুনিয়র দুই রুমমেট আছে, তাদের সাথে গল্প-গোজবে সময় কাটে। মন চাইলে মাঝেমধ্যে জয়নুল আবেদিন পার্কে যায়, নয়তো ময়মনসিংহ জংশনে অথবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনকিছু ভালো না লাগলে আয়েশ করে ল্যাপটপে নাটক-সিনেমা দেখে।
মেয়েটাকে দুদিন দেখা গেলো না! অসুখ-বিসুখ হলো কি? কাউকে জিগ্যেস করার তাগিদ অনুভব করলো নিসর্গ! কিন্তু কাকে জিগ্যেস করা যায়? নাফি নামের একটা তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলের সাথে তার পরিচয় আছে, সে তার মায়ের সাথে মেয়েটার পশ্চিম পাশের ঘরে থাকে। ঠিক কোন খবর দিতে পারলো না সে। নতুন এসেছে, ওদের সাথে তেমন সখ্য গড়ে ওঠেনি।
তিন-চারদিন পরের কথা। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেছে নিসর্গ। দেখলো মেয়েটা বাইরে কাপড়চোপড় নাড়ছে। তাকে দেখে হঠাৎ ভেতরে চলে গেলো। দরজার সামনে যুবক মতন একজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা। তার শ্মশ্রুমণ্ডিত চিবুকে বাচ্চাটা হাত বোলাচ্ছিলো। পাশে বয়ষ্ক এক মহিলা দাঁড়ানো, বোধহয় যুবকটার মা। কিছুক্ষণ বাচ্চাটাকে কোলে রেখে যুবক মতন লোকটা কোথায় যেন চলে গেলো। নিসর্গও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
ছাত্রাবাসটার মালিকের নাম কালা মিয়া। বালির ব্যবসা করেন তিনি। তার দুই মেয়ে। দুজনই মুখরা! ছোটজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে আর বড়োজন অষ্টম শ্রেণিতে। বিকেলে দুইবোন বাসার সামনে ফাঁকা জায়গায় খেলা করে। কালা মিয়ার স্ত্রী দুটো ছাত্রাবাসের দেখাশোনা করেন।
এক জায়গায় বেশিদিন মন টেকে না নিসর্গের। দু-চার মাস পরপর বাসা পাল্টানো তার স্বভাব! এখানে পড়ালেখা হচ্ছে না। ভাবছিলো স্থানপরিবর্তন করবে। সে তো আরেক ঝামেলা! তার ওপর জায়গাটার ওপর কেমন মায়া জন্মে গেছে।
এভাবে চারমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। নিসর্গ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো এ বাসাটা সে পরিবর্তন করবে। এর মধ্যে সেনবাড়ি রোডে একচালা একটা বাসা দেখেও ফেললো।
মালিকান ও তার মেয়েকে দুটো বই দেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু বই সংগ্রহে ছিলো না নিসর্গের। বাসা পাল্টানোর দিন কয়েক পর বই নিয়ে মালিকানের সাথে দেখা করতে গেলো। কাজের বুয়ার সাথে দেখা, কথা প্রসঙ্গে সে-ই মেয়েটার কথা জিগ্যেস করলো নিসর্গ। বুয়া এই এলাকায় আছেন বহু বছর, বস্তুত উনার বাড়িই এখানে। তাই সবকিছু তার নখদর্পণে। তিনি মেয়েটাকে চিনতে পারলেন। কিছুক্ষণ হাসলেন তিনি; তারপর বললেন, "মেয়েটা বিবাহিত। একটা বাচ্চাও আছে।"
বুয়ার কথা শুনে নিসর্গ একটা শুকনো হাসি দিলো। এবার একটু গুরুগম্ভীর হলেন বুয়া; জিগ্যেস করলেন, "কোন ব্যাপার আছে, মামা?"
"না, কোন ব্যাপার নেই। এমনিই জানতে চাইলাম। আসি খালা। ভালো থাকবেন।" এই বলেই হাঁটা শুরু করলো নিসর্গ।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: আহা , কিছু মায়া

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুম! মানুষের গোটা জীবনটাই মায়ার খেলায় আচ্ছন্ন!

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



কিছু সময় আছে, মন অন্যকে বুঝতে চায়

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সেটাই। উদাসী সে সময়!

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২২

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছু ঘটে।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অবশ্যই। মানবজীবন বড় বৈচিত্র্যময়।

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
দরজার সামনে যুবক মতন একজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা। এখানেই বোঝা যায় এ বাচ্চাটা ঐ মেয়েটার, আর যুবকটা ওর স্বামী। এ অংশটা এডিট করলে গল্পটা আরো রহস্যময় হয়ে উঠতে পারে।

তারপরও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। ভালো লেগেছে।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গঠনমূলক মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। দেখছি পরিবর্তন করা যায় কি না।

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৬

সুমন কর বলেছেন: আহা রে !! ;) ৪ নং মন্তব্যটি দেখে নিয়েন।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মাথায় রেখেছি; পরবর্তীতে পরিবর্তন করে দেবো।

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন, "এ বাচ্চাটা ঐ মেয়েটার, আর যুবকটা ওর স্বামী। এ অংশটা এডিট করলে গল্পটা আরো রহস্যময় হয়ে উঠতে পারে। "

-সবচেয়ে সহজ, সরলভাবে লেখা গল্প, কবিতা ও উপন্যাস মানুষ মনে রাখেন; রহস্য মহস্য ইতয়্যাদি অপ্রয়োজনীয়; শেষে, আমাদের ব্লগার ওমেরার "টুইস্ট"এর মতো হয়ে যাবে, যা ন্যাকামী মাত্র।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: :)

৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৩

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো গল্প পড়ে.....

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা অফুরান। ভালো থাকুন নিরন্তর!

৮| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫১

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: কত কী মনে পড়ে গেল!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জীবনে চলার পথে কত ঘটনাই না ঘটে!

৯| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০১

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা নিরন্তর।

১০| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৩

আখেনাটেন বলেছেন: কিছু অাক্ষেপ কি রয়ে গেল?


অস্পষ্ট মনোবেদনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ভালোলেগেছে।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আশা-নিরাশার দোলাচলেই মানবজীবন সারা!

১১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৭

ওমেরা বলেছেন: গল্পটা সুন্দর আছে ।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৪০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুকরিয়া।

১২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

নীলপরি বলেছেন: ছোটোগল্প লেখা বেশ কঠিন । আপনি সে কাজটা খুব ভালোভাবে করেছেন । গল্প ভালো লাগলো । ++

শুভকামনা ।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৪২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চেষ্টা করছি লিখতে!

১৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১২

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: বিখ্যাত একজন লেখককে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, অাপনি লেখেন কার জন্য ? উনি উত্তর করেছিলেন, নিজের জন্য। তারপরের প্রশ্ন ছিলো, তাহলে পাঠক গুরুত্বপুর্ন নয় ? উত্তর ছিলো, পাঠকের কথা মাথায় রাখলে আমার লেখা তার গন্তব্যে পৌঁছায় না।

আমি উনার সাথে একমত। লিখবেন নিজের ভাল লাগার জন্য, নিজের জন্য। পাঠকের স্থান এখানে থাকার সুযোগ নাই। বিখ্যাত সব লেখাই লেখকের অন্তর্জগতের বোধ থেকে উঠে এসেছে। পাঠক সেখানে গৌণ।

ক্যারি অন...................

০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৭:৪৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দুটো বিষয়ই মাথায় রাখছি। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.